#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#পর্বঃ১০
#Mst_Liza
আজ বাড়িটা কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেছে।কেউ আর আগের মতো করে হাসছে না।ঠিক মতো কথাও বলছে না মায়ার সাথে।মায়ারও ভালো লাগছে না সকলের এভাবে শুকনো মুখ করে বসে থাকা।মনে মনে ভাবছে তাহলে কি ভুল করলাম মাহিরকে তারিয়ে? নাহ একটুও না যা করেছি বেশ করেছি! এটারই প্রয়োজন ছিলো।একই ছাদের নিচে ওই বাদরটার সাথে কিছুতেই আমি থাকতে পারতাম না।তাছাড়াও বাবার শরীরটা এখন ভালো না।এই অবস্থায় যদি বলি এই মাহিরের সাথে আমি থাকতে চায় না তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।তাই আমাকে বাবার সুস্থ হওয়া অবদি অপেক্ষা করতে হবে।আর মাহিরও তো স্নিগ্ধাকে ভালোবাসে।ওদেরকে এক করে ফেলতে পারলেই হলো।তারপর আমি চলে যাবো এবাড়ি থেকে।
ওদিকে মাহির গিয়ে তার বন্ধু আবিরের বাড়িতে উঠেছে। এতো তারাতাড়ি একটা বাসা ঠিক করাও খুব কস্টের।তাই আবির রাস্তায় মাহিরকে দেখতে পেয়ে অনেক জোড় করাই মাহির আর না করতে পারে নি। চলে এসেছে আবিরের সাথে।
আবিরঃ দোস্ত আমার বাড়িটা খুব ছোট তুই এখানে থাকতে পারবি তো?
মাহিরঃ আরে কেন পারবো না।তুই যদি পারিস তাহলে আমিও পারবো।
আবির একটা মুচকি হাসি দিয়ে মাহিরের সুটকেস থেকে কাপড়গুলো বের করে আলমারিতে গোছাতে থাকে।
মাহিরঃ রাখ আমি করে নেবো।
আবিরঃ হুমমম। একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো মাহির?
কাপড়গুলো গোছাতে গোছাতে বলে আবির।
মাহিরঃ কি?
আবিরঃ বিয়ের একদিন পর এভাবে বউ রেখে বাড়ি ছেড়ে চলে আসলি। এটা কি ভালো হলো?
মাহির কোনো কথা বলে না। মনে মনে ভাবে এই সবকিছু মায়ার জন্য হয়েছে।কিছুতেই মায়াকে ক্ষমা করা যাবে না।
আবির ঝাঁকিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করে মাহিরের কাছে।মাহির কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না।
এমন সময় স্নিগ্ধার ফোন আসে যার জন্য মাহির আবিরের কথাটা এড়িয়ে বাইরে গিয়ে স্নিগ্ধার ফোনটা রিসিভ করে।
ঘড়ির কাটায়,,
রাত তিনটা ছুঁই ছুঁই,,,
বিছানায় শুয়ে চোখটা বন্ধ করে রেডিওতে অনুভবকে শুনছে মায়া।কিন্তু আজ আর ডায়েরী লিখছে না।শুধুই শুনে যাচ্ছে আর অনুভবের প্রত্যেকটা কথায় বারবার মাহিরকে অনুভব করছে।মায়ার কেমন যেন নিস্তব্ধ লাগছে রুমটা।মায়া কালও এইসময়ে রুমটার মধ্য মাহিরের সাথে অনেক ঝগড়া করেছে আর আজ মাহির নেই।ভাবতেও কেমন লাগে! মায়া নিজেই নিজেকে বলছে, না মায়া এটা মায়া নয় অনুতাপ।সত্যিই ভুল করে ফেলেছিস তুই।
ঠিক সেই সময়ে মায়ার কানের হেডফোনটার ওপাশ থেকে একটা কথা বলে ওঠে।
মন খারাপ থাকলে তাই করো যেটা করলে তুমি ভালো থাকো।
মায়া শোয়া ছেড়ে উঠে বসে।আর ভাবে, অনুভবের কথায় লজিক আছে। সত্যিই বাদরটার সাথে একটু বেশি বারাবাড়ি করে ফেলেছি! না যানি কোথায় আছে! কিছু খেয়েছে কিনা! একটু ফোন করে দেখি!
মায়া বারবার ডায়েল কলে গিয়ে মাহিরের ফোন নাম্বার উঠাচ্ছে আর কাটছে। ভাবছে ফোনটা করবে কিনা! অনেক ভেবে এইবার সাহস করে মাহিরকে কল দেয়। আর মাহির কলটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই কেটে দেয়। মাহিরের এমনভাবে কলটা কেটে দেওয়াতে মায়া রেগে ফোনটা দূরে ছুড়ে মারে।
মায়াঃ এতো বড় সাহস! আমার কল কেটে দেয়?
ঠিক করেছি ছেঁচড়াটাকে বিদায় করে। যা ফোন করবো না থাক তুই তোর মতোন।
কিছুক্ষণ পর মাহির মায়াকে কলব্যাক করে।মায়া মাহিরের কল দেখে রেগে কেটে দেয়। তারপর নিজেই কল করে।
মাহিরঃ হ্যালো। কলটা কেটে দিয়ে আবার ব্যাক করার কি ছিলো?
মায়াঃ শোধ তুললাম!
মাহিরঃ কিসের শোধ?
মায়াঃ একবার আপনি আমার কল কাটছেন একবার আমি কাটছি শোধ বাদ!
মাহিরঃ তুমি কি কখনো শুধরাবে না!
মায়াঃ নাহ! শুধরাবো না।
মাহিরঃ ফোন কেন করেছো?
মায়াঃ আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই!
মাহিরঃ মানে?
মায়াঃ মানে কিছু না কোথায় আছেন এখন?
মাহিরঃ ও এইজন্য! কোথায় আছি। কতোটা খারাপ আছি সেটা জানার জন্য ফোন করেছো? আমি খারাপ থাকলেই তুমি খুশি তাই না? তাহলে শোনো সত্যিই আমি ভালো নেই। আমার মা-বাবা, বোন, মামা-মামী যাদেরকে ছেড়ে আমি কখনো থাকিনি। আজ তোমার জন্য আমার তাদের থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। শুধু তোমার জন্য। তোমাকে কক্ষনো ক্ষমা করবো না আমি কক্ষনো না।
কথাগুলো বলেই কলটা কেটে দেয় মাহির।মায়া হ্যালো হ্যালো করে দেখে কলটাই কেটে গেছে।তখন নিজেরই খারাপ লাগতে থাকে। ভাবে সত্যিই ঠিক করি নি মাহিরের সাথে।
সকালে হসপিটাল থেকে ফোন আসে।সেজন্য খাবার নিয়ে মায়া হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয়। কারণ সাহেদ খান (মায়ার পালিত বাবা) খুব অসুস্থ হয়ে পরেছে।এখন হসপিটালে আছে।মায়া খবরটা পাওয়ার পর আর দেরি করে না। ছুটে আসে কিন্তু কোনো মতেই সাহেদ খানের সাথে মুফতি খান(সাহেদ খানের স্ত্রী) দেখা করতে দেয় না মায়াকে।
,
,
,
,
চলবে,,,