#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#পর্বঃ১১
#Mst_Liza
মায়া অনেক চেস্টা করেও তার বাবার সাথে দেখা করতে পারে না।মায়া মুফতির কাছে অনেক অনুরোধ করে কিন্তু মুফতি কিছু শুনতেই চায় না।শুধু একটা কথায় বলে যায়।
মুফতিঃ তুই এখান থেকে চলে যা মায়া।আজ তোর জন্য তোর বাবার এই অবস্থা হয়েছে।মানুষটা সারাক্ষণ শুধু তোকে নিয়ে চিন্তা করে।আর তুই কি তোর বাবার কথা একটুও ভাবিস? আমারই ভুল পর কখনো আপন হয় না।
মায়াঃ মা প্লিজ! এভাবে আর বলো না। আমার সত্যিই খুব কস্ট হচ্ছে এখন।
মুফতিঃ কস্ট হচ্ছে তোর? তাহলে এমনটা কেন করলি তুই? একটা দিনই তো হয়েছে বিয়ে করেছিস আর এর মধ্যে স্বামীকে তারই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলি?
মায়া এতোক্ষণে বুঝতে পারলো মুফতি কেন তার সাথে এমন ব্যবহার করছে।আবার মনে মনে ভাবছে মা কিভাবে জানলো ওবাড়ির খবর? এমন সময়ে মায়ার বাবার কেবিন থেকে মাহির বেড়িয়ে আসে।মাহির আর মায়া মুখোমুখি হতেই মাহির নিজের চোখদুটো নিচের দিকে নামিয়ে নেয়।আর এদিকে মুফতিও মায়াকে চলে যেতে বলছে বারবার।
মাহিরকে দেখে মায়াও জেদ ধরেছে এবার।সে কোনো মতেই তার বাবাকে না দেখে হসপিটাল থেকে যাবে না।কিছুক্ষণ পর মাহিরকে নিরব দেখে সন্দেহ পেয়ে মাহিরের হাত ধরে টেনে একটু দূরে নিয়ে আসে মায়া।
মায়াঃ কি করেছেন আপনি?
মাহির নিশ্চুপ হয়ে আছে কোনো কথা বলছে না।মায়া মাহিরকে ঝাকিয়ে জিজ্ঞাসা করতে থাকে।
মায়াঃ বলেন কি করেছেন? যার জন্য আমার বাবার এই অবস্থা।
মাহিরঃ মায়া আসলে আমি…
মায়া মাহিরের কলারটা টেনে ধরে,
মায়াঃ বলবেন আপনি?
মাহির নিজের কলারটি মায়ার হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়।তারপর বলতে শুরু করে।
মাহিরঃ আমি এমন কিছু হোক সেটা চায়নি মায়া।আমিতো শুধু তোমার বাবা-মাকে বোঝাতে গিয়েছিলাম।
মায়াঃ কি বোঝাতে গিয়েছিলেন ওদেরকে?
মাহিরঃ তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো আর তার সাথেই তোমাকে আমার বাড়ি থেকে এনে বিয়ে দিয়ে দিতে।তাছাড়াও তোমার জন্য আমি আমার পরিবার থেকে দূরে থাকতে পারবো না।আমি তোমাকে বিয়ে করেছিলাম সেটাও আমার পরিবারের সাথে থাকবো বলে।আর এই কারণেই আমি আমার মামার আদেশ অমান্য করি নি।বিয়ে করে নিয়েছি।কিন্তু বিশ্বাস করো মায়া আমি চাই নি তোমার বাবা এতোটা অসুস্থ হয়ে পরুক।
মাহিরের কথাগুলো বলা শেষ হতেই মায়া মাহিরকে এক ধাক্কায় দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
মায়াঃ একটা ছেঁচড়া, অসহ্যকর খারাপ লোক কোথাকার! আপনার সাহস কি করে হলো এমনটা করার? আপনাকে আমি মেরেই ফেলবো।মায়া মাহিরের বুকে আর হাতের কব্জিতে চার-পাঁচটা কিল বসিয়ে দেয়।নাহ এভাবে আপনার শিক্ষা হবে না আপনাকে তো আমি…
মায়া মাহিরকে ছেড়ে দিয়ে আসেপাশে তাকিয়ে ঘুরে কিছু একটা খুঁজতে থাকে।তারপর সামনে তাকিয়ে এক বালতি চুন দেখতে পাই।মনে হয় হসপিটালের দেয়ালের কাজ চলছে।মায়া বালতিটা উঠিয়েই মাহিরের দিকে বালতি ভর্তি চুন ছুড়ে মারে।এমন সময় স্নিগ্ধা মাহিরকে দেখে এগিয়ে আসে।আর চুন এসে স্নিগ্ধার উপরে পরে।
স্নিগ্ধার সারা শরীরে চুন লেগে একদম ভূতের ন্যায় দেখতে লাগছে।হাটতে গেলেও ভেজা মেঝেতে পিছলে পিছলে পরছে।রাগে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকায় স্নিগ্ধা।
স্নিগ্ধাঃ হে ইউ! তোমার সাহস কি করে হয় আমার উপর এসব ছুড়বার?
মায়ার দিকে আঙুল তুলে কথাটি বলে স্নিগ্ধা।আর মায়া স্নিগ্ধার মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিনিয়ে বিনিয়ে দেখে।পড়নের সট কার্ট স্কার্ট আর চোখের ব্লাক এন্ড হোয়াইট সানগ্লাসটা সাদা ধবধবে হয়ে আছে।মায়া স্নিগ্ধার চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে মুছে দিয়ে আবার চোখে পরিয়ে দেয়।পিছনে তাকিয়ে দেখে লেয়ারকাট চুলের উঁচু করে বাঁধা ঝুঁটির থেকে টপটপ করে চুনের পানি ঝরছে।
স্নিগ্ধা এমন অবস্থায় পাসে মাহিরের দিকে আগাতে গিয়ে পরে যায় আর মাহির স্নিগ্ধাকে ধরে বসে। মাহির আর স্নিগ্ধাকে এতো কাছাকাছি দেখে মায়ার রাগ আরও চরম স্তরে পৌঁছায়।একটানে স্নিগ্ধাকে মাহিরের থেকে দূরে নিয়ে আসে মায়া।
মায়াঃ তেঁতুল গাছের প্রেত্নী, শেওড়া গাছের ভূত।যার তার উপরে এসে পরে যেতে ভালো লাগে বুঝি?
তারপর মাহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
আর আপনিও যাকে তাকে জড়িয়ে ধরেন কেন? আপনি না স্নিগ্ধাকে ভালোবাসেন?
স্নিগ্ধাঃ উফফ্ অসহ্য! এসব পাগল কে ঢুকায় হসপিটালে? জান কে ওওও?
মাহিরের দিকে তাকায় স্নিগ্ধা।
মায়া আরও কিছু বলতে যাবে মাহির চিৎকার করে মায়াকে জোড়ে এক ধমক দেয়।
মাহিরঃ চুপপপপপপপপ!
মাহিরের ধমকে মায়া কেঁপে ওঠে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
মায়াঃ ভয় পাই নি!
তারপর স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে,
এই মেয়ে তুমি যানো ও স্নিগ্ধাকে ভালোবাসে?
মাহির মায়াকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।তারপর স্নিগ্ধার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে।
মাহিরঃ ও-ই স্নিগ্ধা! আমার গালফ্রেন্ড।
মাহিরের মুখে কথাটা শুনে মায়া এবার চুপ হয়ে যায়।
মাহিরঃ তোমার কি সত্যিই বুদ্ধি নেয় কোনো? যখন যা মনে আসে তখন তাই করো! ওদিকে তোমার বাবার এই অবস্থা আর এখানে এসব করে চলেছো! ভালোবাসো না তোমার বাবাকে তুমি? যত্তসব পাগল আমার কপালেই জুটেছিল। অনুশোচনা করছিলাম যে ভুল করেছি। আমার জন্য তোমার বাবার এই অবস্থা হয়েছে ভেবে। ভাবছিলাম তোমাকে কি জবাব দেবো।আর এক তুমি।সত্যি বলতে তোমার কোনো মনই নেই।যখন যা ইচ্ছা তাই করে যাও।
মাহির কথাগুলো বলছে আর মায়া নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে থেকে শুনছে।মায়ার চোখের কোণে যে পানি জমে গেছে মাহিরের ধমকগুলো শুনে সেদিকে মাহিরের খেয়াল নেই। মাহির মায়ার হাতটা ধরে টানতে টানতে হসপিটালের গেটের কাছে নিয়ে আসে।তারপর এক ধাক্কায় মায়াকে হসপিটাল থেকে বাইরে বের করে দেয়।
মাহিরঃ তোমার বাবাকে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই যাও এখান থেকে।
,
,
,
,
চলবে,,,,