#তি_আমো
পর্ব ৩৪
লিখা- Sidratul Muntaz
ছাদে ঠান্ডা বাতাস। পতপত করে উড়ছে আমার গায়ের ওরনা, চুল, আরও উড়ছে ঈশানের গায়ের টি-শার্ট। আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি,তাকিয়ে আছি দূরে। ঈশান আমার পাশে, তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে। সে একটা প্রশ্ন করেছে। যার উত্তর আমি এখনও দেইনি। ঈশান প্রশ্নটা আবার করল,” আমি কি কোনো অপরাধ করেছি? কথা বলো, তারিন!”
আমি ঈশানের দিকে রক্তিম দৃষ্টিতে চেয়ে বললাম,” আমাকে এভাবে জোর করে তুলে এনে আপনি ঠিক করেননি। কাজটা আমার একদম পছন্দ হয়নি।”
ঈশান নিচু হয়ে আমার মুখের কাছে এসে কড়া গলায় বলল,” এর আগে তুমি যেটা করছিলে সেটাও তো আমার পছন্দ হচ্ছিল না। আর এখন যেটা করছো সেটাও পছন্দ হচ্ছে না। যতক্ষণ তোমার কাজ আমার পছন্দ না হবে, ততক্ষণ আমিও তোমার অপছন্দের কাজ করেই যাব।”
আমি ক্রোধ নিয়ে চেয়ে রইলাম। দাঁত কিড়মিড় করছে। ঈশান নরম হয়ে আমার মুখটা আঁজলায় নিয়ে অতি মোলায়েম স্বরে বলল,”তোমার কি হয়েছে? কেন এতো মনখারাপ?”
ঈশানের চোখের দৃষ্টি মায়া মায়া। কিছুক্ষণ তার ওই মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার দরুণ আমার চোখ দিয়ে হঠাৎই অভিমানের অশ্রু নামল। ঈশান হতভম্ব হয়ে গেল। আঙুলের ডগা দিয়ে আমার চোখের অশ্রু ছুঁয়ে বলল,” কাঁদছ কেন? হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
ঈশানের সেই মায়াভরা দৃষ্টিতে এবার ভয়ংকর অস্থিরতা যোগ হলো। আমি শান্তভাবে চোখের জল মুছতে মুছতে বললাম,” আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না, যে আপনি লন্ডন চলে যাচ্ছেন!”
ঈশানের দৃষ্টিতে বিস্ময় খেলে গেল। কিছুক্ষণ চুপ মেরে থেকে আনম্র হাসল সে। আমার একটু কাছে এসে আদুরে কণ্ঠে বলল,” এজন্য তুমি কাঁদছ? হায়রে! এতো বোকা কেন? তুমি অনুমতি না দিলে লন্ডন তো দূর, আমি এই ছাদ থেকেও নিচে নামব না। সারাক্ষণ তোমার সামনে বসে থাকব। যতক্ষণ তুমি চাইবে! যতদিন চাইবে! ওকে?”
ঈশানের কথায় চোয়াল ঝুলে গেল আমার। খানিক রেগে বললাম,” উফ, আমি লন্ডন যেতে নিষেধ করছি না। আপনি আমার কথা কেন বুঝতে পারছেন না? আপনি লন্ডনে থাকেন নাকি বাংলাদেশে?”
ঈশান সরল মুখে বলল,” এখন বাংলাদেশেই তো আছি।”
আমি চোখ বড় করে দাঁত খিঁচে জানতে চাইলাম,” পারমানেন্টলি কোথায় থাকেন?”
এবার যেন ঈশানের সম্বিৎ ফিরল। হালকা গলায় বলল,” ওহ, লন্ডনেই!”
আমি এবার হাত উঠিয়ে বললাম,” তাহলে এই কথাটা আমি কেন জানি না?”
ঈশান খুব বিস্মিত হয়ে বলল,” তুমি জানতে না? তুমি যে জানতে না এটা তো আমিও জানতাম না!”
আমি রাগে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি। আঙুল উঠিয়ে বজ্রকণ্ঠে বললাম,” আমার সাথে একদম ফাজলামি করবেন না। মোহনা আন্টি বলেছেন আপনি লন্ডনের হলওয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট! অথচ আমাকে কি বলেছেন? আপনি নাকি স্কলারশিপ নিয়ে কানাডা চলে যাবেন? তাও আমার বিয়ের শোকে! আমার ভাইয়াকেও তো এই কথা বলে আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছিলেন। এখন আবার মিথ্যা বলছেন কেন? এমন একটা ভাব করছেন যেন আপনি আমাকে সব জানিয়েছেন আর আমিই মনে রাখিনি! আপনি তো আসলে অনেক কিছুই মিথ্যা বলেছেন। আপনি একটা আস্তো মিথ্যুক!”
ঈশান হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আমার কথা গিলছিল। যেই আমি থামলাম ওমনি সে বলল,” ও….”
আমি ক্ষেপে উঠে বললাম,” ও মানে কি?”
ঈশান ঠোঁট টিপে চিন্তা করার ভঙ্গিতে কার্নিশের দেয়াল চেপে ধরল। মাথা নেড়ে বলল,” আসলেই এখানে একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে।”
আমি তার কাছে এগিয়ে গেলাম। দরাজ কণ্ঠে বললাম,” কি মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং? ক্লিয়ার করুন।”
ঈশান ঝট করে আমার দিকে চেয়ে বলল,” শোনো তারিন, আগেই রেগে যেও না। আমার ব্যাখ্যাটা তোমার বোঝা উচিৎ। নাহলে কিন্তু প্রবলেম। হুট করে রেগে যাওয়া কোনোকিছুর সমাধান নয়। মানুষকে এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দিতে হয়!”
” আমি আপনার কাছে এক্সপ্লেনেশনই চাইছি। আপনি বলুন, প্লিজ।”
ঈশান এবার চুপ করে কিছু একটা ভাবতে লাগল। আমি জহুরী চোখে বললাম,” খবরদার, আমাকে এক্সকিউজ দিয়ে ভোলানোর একদম চেষ্টা করবেন না। যা সত্যি তাই বলুন। অন্যায় করে থাকলে স্বীকার করুন।”
ঈশান ভ্রু কুচকে খানিক বিরক্তি নিয়ে বলল,” বিশ্বাসই করো না আমাকে। ধ্যাত!”
” আগে আপনি আমাকে বোঝান যে কোনো মিথ্যা বলেননি! তারপরে বিশ্বাস!”
ঈশান মাথা নিচু করে বলল,” আমি মিথ্যা বলেছি।”
আমার চোখে সাথে সাথে আগুন জ্বলে উঠল। ঈশান কাঁচুমাচু হয়ে বলল,” আগে পুরো কথাটা শোনো! লেট মি এক্সপ্লেইন!”
আমি চুপ করলাম। ঈশান আবারও আগের মতো মাথা নিচু করে বলল,” তুমিও আমাকে মিথ্যা বলেছ।”
এবার আমার সত্যি রাগ উঠে গেল,” আমি কখন মিথ্যা বললাম?”
ঈশান কঠিন দৃষ্টিতে চেয়ে কিছুটা ধমকের স্বরে বলল,” বলোনি? তুমি মিথ্যা বলোনি আমাকে সেদিন?”
” কোনদিন?”
” ওইতো, তোমার বিয়ের ব্যাপারে। তোমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এই পুরো ঘটনাটাই তো মিথ্যা ছিল৷ শুধু তুমি একা তো মিথ্যা বলোনি। তোমার ভাই, মা, দাদী শুদ্ধো সবাইকে নিয়ে একসাথে মিথ্যা বলেছ।”
ঈশানের কথায় আমি এমনভাবে থতমত খেলাম যে তৎক্ষণাৎ কোনো শব্দই খুঁজে পেলাম না জবাব দেওয়ার মতো। ঈশান আমার নীরবতার সুযোগ নিয়ে আরও বলল,” যখন তোমার বিয়ের খবর শুনলাম তখন আমার কি অবস্থা হয়েছিল, জানো? সেটা তো প্রথমে। কিন্তু দুইমিনিট পরেই বুঝে গেছি তোমার দাদী মিথ্যা বলছে। তাঁর কথা এলোমেলো হয়ে গেছিল। তিনি আমার চোখের দিকেও তাকাননি। আর তুমিও বার-বার বিয়ের কথা উঠিয়ে আমাকে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছিলে।”
আমি হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম৷ হাসি আটকে অপরাধী স্বরে প্রশ্ন করলাম,” আপনি তাহলে সব বুঝেছেন?”
ঈশান ভ্রু নাচিয়ে বলল,” বুঝব না কেন? আমি কি তোমার ভাইয়ের মতো মাথামোটা? সামনে দাঁড়িয়ে কেউ একগাঁদা মিথ্যা বলবে আর আমি কিছুই বুঝব না!”
” এখানে আমার ভাইয়া কোথ থেকে এলো?” আমি তেতে উঠলাম। ঈশান প্রশমিত কণ্ঠে বলল,” আচ্ছা, স্যরি। যাইহোক..”
” যাইহোক না… আমি মিথ্যা বলেছি সেটার কারণ ছিল৷ কিন্তু আপনি কেন মিথ্যা বললেন? এর পেছনে কি কারণ?”
” তুমি যে কারণে মিথ্যা বলেছো আমিও সেই একই কারণে মিথ্যা বলেছি।”
আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চাইলাম,” এর মানে?”
” তুমি মিথ্যা বলেছো যাতে আমি তোমার বিয়ে ভেঙে নিজে তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেই।”
এই কথা শুনে আমি লজ্জায় জীভ বের করে অন্যদিকে তাকালাম। ঈশান একটু ঝুঁকে বলল,” আর আমি মিথ্যা বলেছি কেন জানো?”
আমি তাকালাম উত্তর শোনার জন্য। ঈশান স্পষ্ট করে বলল,” যাতে তুমি বুঝতে পারো যে তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসো!”
এবার আমি একটু চমকালাম। বিহ্বল কণ্ঠে বললাম,” মানে? এটার সাথে ওইটার কি সম্পর্ক? ”
” শোনো, আমি যখন তোমার ভার্সিটি এসে বললাম যে আমি কানাডা চলে যাচ্ছি আর কখনও ফিরব না তখন তুমি কষ্ট পেয়েছ না? অবাক হয়েছ না? তারপর আমি তোমাকে না জানিয়ে তোমার বাড়ি থেকেও চলে গেলাম। তুমি আরও কষ্ট পেলে। রাতে নাক টানতে টানতে আমাকে ফোন করে আসতে বললে। তোমার পুরো মাথা খারাপ হয়ে গেল! এর থেকেই বোঝা যায়, তুমি অনেক আগেই আমাকে ভালোবেসেছো৷ কিন্তু সেটা রিয়েলাইজ করেছো আমি চলে যাওয়ার পর। যদি আমি মিথ্যা না বলতাম, তোমাকে ছেড়ে না যেতাম, তাহলে কি এতো সহজে তোমাকে পেতাম?”
আমার মুখ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘হা’ হয়ে গেল। ‘চোরের উপর বাটপারি’ প্রবাদটা অনেক শুনেছিলাম। আজ তো হাতে-নাতে প্রমাণ পেলাম। আমি বিস্ময়ের সুরে বললাম,” আপনি তো শুধু মিথ্যুক না, একটা আস্তো চিটারও। চিটিং করেছেন আমার সাথে।”
ঈশান পকেটে হাত গুজে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে বলল” একটু চিটিং করে যদি কারো থেকে ভালোবাসার কথা আদায় করা যায় তাহলে সেই চিটিংয়ে দোষ নেই।”
” এই কথা কোন মহামানব বলেছে?”
” মহামানব তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। এত্তো হ্যান্ডসাম একটা মহামানব। তোমার পছন্দ হচ্ছে না?”
আমি রাগে আহত-নিহত হয়ে যাচ্ছিলাম। আমার মেয়েলী আত্ম অহংকার ভেঙে-চুরে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। ঈশান এতোবড় প্ল্যান করে আমাকে পটিয়ে ফেলল আর আমি ঘূণাক্ষরেও টের পেলাম না! ক্রোধে, ক্ষোভে ঈশানকে ধাক্কা মেরে বললাম,” আমার সাইকোলজি নিয়ে এতোবড় ছেরখানি? আপনি এটা কিভাবে করতে পারলেন? জানেন আপনি চলে যাওয়ার পর আমার কত কষ্ট হয়েছিল? আপনি ইচ্ছে করে আমাকে কষ্ট দিয়েছেন! আমি আপনাকে ছাড়ব না।”
ঈশান আমার দুই হাত চেপে ধরে বলল,” সব কষ্ট শোধ করে দিব আমার মিষ্টি হাসি! কিন্তু তুমিও আমাকে কম কষ্ট দাওনি। তোমার বিয়ের কথা শুনে তো হার্ট এটাক করতে নিয়েছিলাম।”
” কিন্তু আপনি তো মিথ্যা ধরে ফেলেছিলেন।”
” এজন্যই তো কষ্ট হচ্ছিল। তুমি আমাকে মিথ্যা বলছ এটা কি কষ্টের ব্যাপার না?”
আমি ঈশানের টি-শার্ট খামচে বললাম,” যদি সেদিন আপনার উপর রাগ করে আমি সত্যি বিয়ে করে ফেলতাম?”
ঈশান আমার মুঠো থেকে টি-শার্ট ছাড়িয়ে অন্যদিকে চাইল। তীক্ষ্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে উচ্চারণ করল,” তুমি এটা করতে না৷ আমি জানতাম।”
” কিভাবে জানতেন?”
” কারণ তুমি আমাকে ভালোবাসো। অন্য কাউকে কিভাবে বিয়ে করবে?”
আমি বড় নিশ্বাস ছেড়ে বললাম,” এটা আপনি কিভাবে বুঝলেন? আমি তো কখনও বলিনি?”
ঈশান ভ্রু কুচকাল, ” বলার প্রয়োজন আছে নাকি? আমি এমনিই বুঝি৷ তুমি আমাকে প্রথম দিনই মেনে নিয়েছ। সাফিনের এংগেজমেন্টের দিন থেকেই।”
আমি হতবাক হলাম,” কিভাবে?”
” তুমি তো প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলে অন্ধকারে আমি তোমাকে কিস করেছি। আমার চুলের সাথে আটকে ছিল তোমার দুল। তোমার যদি আমাকে ধরা খাওয়ানোর ইচ্ছে থাকতো তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে দেখাতে। তোমার বাড়িতে যখন আমি গিয়েছিলাম, তুমি আমাকে বের করে দিতে পারতে৷ রাস্তায় যখন আমি তোমাকে বিরক্ত করতাম, তুমি আমাকে থাপ্পড় মারতে পারতে। আমার চিঠি কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারতে৷ আমি যে তোমাকে পায়েলসহ চিরকুট দিয়েছিলাম সেটা তুমি ওখানেই ফেলে চলে আসতে পারতে। যদি ভালো না বাসতে, তাহলে তুমি এগুলোই করতে। কিন্তু আমাকে ভালোবাসো বলেই তুমি আমাকে কারো সামনে অপমান করোনি। আমি হাজারবার তোমাকে বিরক্ত করেছি। তুমি চাইলেই পারতে আমার মুখোশ খুলে দিতে৷ কিন্তু তোমার মস্তিষ্ক সেটা চাইলেও মন কখনও সায় দেয়নি। তাই তুমি আমার সমস্ত অত্যাচার মেনে নিয়েছ। উপরে রাগ দেখালেও মন থেকে আমাকে ঘৃণা করোনি।”
আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। ঈশান একদম ভুল কিছু বলেনি। সে যা যা বলছে, আমার অনুভূতি ঠিক তেমনই ছিল। সে আমাকে বিরক্ত করলে আমি আদতে বিরক্ত হতামই না। বরং আমার ভালো লাগতো। কিন্তু এটা আমি বুঝতে পেরেছি যখন ঈশান আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করে দিল। যখন কানাডা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সেদিন ভার্সিটিতে নিহাকে জড়িয়ে ধরে কি অঝোর ধারায় কেঁদেছিলাম আমি! এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ঈশান আমার মানসিকতা নিয়ে রীতিমতো ছেলে-খেলা করেছে। আমি রাগে কটমট করে বললাম,
” আমার আপনাকে সেদিন রাতে ফোন করা একদম উচিৎ হয়নি। সত্যি সত্যি একটা বিয়ে করে নিলে ভালো হতো।”
ঈশান চওড়া গলায় হুমকি দিল,” এতো সহজ? একদম তুলে নিয়ে আসতাম!”
” ঈশ, মগের মূল্লুক?”
” অবশ্যই না। আমার ভালোবাসা কোনো মগের মূল্লুক না। এজন্যই তুলে আনতাম।”
আমি না চাইতেও হেসে ফেললাম। ঈশানও হাসছে। ঠিক এই মুহূর্তে আমার সমস্ত বিষণ্ণতা, খারাপ লাগা, অস্থিরতা উধাও হয়ে গেছে৷ মনজুড়ে বিরাজ করছে নরম এক শান্তি।
আমি একটু পর বললাম,” আচ্ছা, আপনার তো মিথ্যা বলার কোনো দরকার ছিল না। আপনি লন্ডনে থাকেন আর লন্ডনে ফিরে যাচ্ছেন এটুকু বললেই হতো। সত্যিও বলা হতো আবার আপনার কাজও হয়ে যেতো।”
” আরেহ, সত্যি বলার চেয়ে মিথ্যা বলে সিমপ্যাথি আদায় করা বেশি সহজ। তুমি এসব বুঝবে না। মেয়েরা সত্যি কথার চেয়ে মিথ্যা বেশি বিশ্বাস করে।”
” ও আচ্ছা।”
আমি মাথা নাড়লাম। তারপর চট করেই ঈশানের কথার মূল অর্থ ধরতে পেরে সাথে সাথে তীব্র কণ্ঠে চিৎকার করলাম,”এই কি বললেন? মেয়েরা মিথ্যা বিশ্বাস করে? সত্যি বিশ্বাস করে না? আর কয়টা মিথ্যা বলেছেন আপনি? তার মানে এই পর্যন্ত যা যা বলেছেন সবই মিথ্যা ছিল?”
” সব মিথ্যা হবে কেন? কিছু কিছু সত্যি ছিল।”
আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,” এর মানে বাকিগুলো মিথ্যা ছিল? ”
ঈশান বিভ্রান্ত হয়ে বলল,” আরে আমি বলতে চাইছি কিছুই মিথ্যা না। শুধু কানাডার স্কলারশিপের ব্যাপারটাই মিথ্যা ছিল। সিমপ্যাথির জন্য বলেছিলাম৷ এতো সন্দেহ করো কেনো?”
আমি অন্যদিকে চেয়ে অভিমানী কণ্ঠে বললাম,” যাইহোক, মিথ্যা বলেছেন এটাই আসল কথা। কিন্তু আমার খুব আফসোস হচ্ছে।”
” কি নিয়ে আফসোস?”
” যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হলো আমি জানিই না সে কই থাকে, কি করে! সব আজকে মাত্র জানলাম। সকালে যদি গন্ডগোলটা না বাঁধতো তাহলে আমরা এখান থেকে চলে যেতাম আর হয়তো এতোক্ষণে আমাদের বিয়েও হয়ে যেতো। ভাবুন তো, তখনও আমি জানতাম না যে আপনি লন্ডনে থাকেন, সেখানে পড়াশুনা করেন। মানে আপনার সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই থাকতো না।”
ঈশান ধীরপায়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি হালকা পিছিয়ে গেলাম। ঈশান নিচু হয়ে আমার চিবুক স্পর্শ করে বলল,” আমার সম্পর্কে তোমার যতটুকু ধারণা আছে, বিয়ের জন্য সেটাই কি যথেষ্ট না? আমি তোমাকে মারাত্মক ভালোবাসি। এর বাইরে আর কিছু জানার প্রয়োজন কি আছে তারিন?”
ঈশানের দৃষ্টি গাঢ়, অতি মায়াময়, মোহময়। আমার চোখ টলমল হলো। দুই পাশে মাথা নেড়ে আমি বললাম,” একদম না!”
তারপর কিছুটা রাগ নিয়ে বললাম,” যাইহোক, আপনি আমাকে মিথ্যা বলেছেন, আমার সাথে চিটিং করেছেন। তাই আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।”
ঈশান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,” ওকে। তুমি যদি আমাকে শাস্তি দিয়ে শান্তি পাও, তাহলে দিতে পারো।”
” শাস্তি হলো আপনি আমার সাথে একদম কথা বলবেন না।”
ঈশান মুখে হাত দিয়ে মৃদু হাসল। আমি ক্রোধানলে জ্বলে উঠলাম,” হাসছেন কেন?”
” আমি তোমার সাথে কথা না বললে তো আমার শাস্তি হলো না। এটা তোমারই শাস্তি হয়ে গেল।”
আমি কোমরে হাতে গুজে বললাম,” আচ্ছা, তাই নাকি? ঠিকাছে, দেখা যাক! কে কতক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারে!”
” আমি তো কথা বলতে চাইবোই। তুমি না বললে…”
আমি দরাজ কণ্ঠে বললাম,” আমি কিছুতেই বলব না আপনার সাথে কথা।”
ঈশান অতি সহজভাবে মেনে নিয়ে বলল,” আচ্ছা।”
আমি রাগে গজগজ করে ছাদ থেকে নেমে আসছিলাম। ঈশান আমাকে থামালও না। আমি একবার ভাবলাম, পেছনে তাকাবো। কিন্তু তাকালাম না। কারণ জানি, ঈশান এখন আমার দিকেই চেয়ে আছে।
সকালে হুট করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, আজরাতের ট্রেনে সবাই সিলেট যাবে। নিহার শ্বশুরবাড়ি তথা স্বামীর বাড়ি। কারণ শ্বশুর-শাশুড়ী তো বেঁচে নেই। বৌভাতও নাকি সিলেটেই হবে। সকালে পরিকল্পনা হলো আর রাতের মধ্যেই ব্যবস্থা হয়ে গেল। একদম পিকনিকের মতো আমেজ। আমি তখনও ঈশানের সঙ্গে কথা বলছি না। কিন্তু সে মাঝে মাঝে আমাকে মানানোর খুব চেষ্টা করছে। কোনোকিছুতেই আমার মন গলছে না। দেখা যাক, ঈশান আরও কত কি করতে পারে আমার জন্য!
চলবে#তি_আমো
পর্ব ৩৫
লিখা- Sidratul Muntaz
বাসে উঠে ঈশান এক আজব কান্ড করল! শীতের রাত। সবাই মিলে যেতে গোটা একটি বাস রিজার্ভ করা হয়েছে। বরফশীতল ঠান্ডা পানি বিক্রি করছিল এক ফেরিওয়ালা। বাস থেকে মাথা বের করে আমি বললাম,” এই শীতের রাতে কে খাবে আপনার ঠান্ডা পানি? পারলে গরম পানির ব্যবস্থা করুন। আমরা সবাই কিনব।”
আমার কথায় নিহারা হেসে উঠল। ফেরিওয়ালা আমাদের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকাল। বুড়ি আমার পাশে বসল। খিটমিট করে বলল,” জানলা খুলা ক্যা? লাগা জলদি! শীতে শইল কাঁপতাছে।”
আমি জানালা টেনে বন্ধ করে বললাম,” বাস এখনও ছাড়েনি, তাতেই এই অবস্থা? বাস ছাড়ার পর কি করবে?”
বুড়ি ফোকলা হাসি দিয়ে বলল,” কি আর করমু? আমার এই শালটা গায়ে দিয়া ঘুমায় যামু!”
আমি অবাক হলাম,” আরে এই শালটা তো..”
শালটা হাতে নিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে দেখতে লাগলাম৷ বুড়ি ধমক দিল,” দে আমার জিনিস। ভাজ খুলিস না। তোর জিনিস আমি ধরি? তুই গপ কইরা আমার জিনিস লইয়া ফালাস ক্যান? ইডি কুন খাইচ্চত?”
“ওরে বাবা! থাক ধরব না যাও।”
শালটা অবশ্য ভীষণ সুন্দর। এই শালটাই ঈশান বুড়িকে উপহার দিয়েছিল যেদিন সে আমাদের বাড়িতে ভাড়া নিল। সন্ধ্যায়ই গিয়ে সবার জন্য এতোকিছু শপিং করে এনেছিল।
নিহা ফিসফিস করে বলল,” ঈশান ভাই তোকে পেছনে তাকাতে বলেছে।”
আমি সামনে চেয়ে বললাম,” পেছনে কিছু নেই। আমার ফোকাস সামনের দিকে। কারণ আমরা যাচ্ছি সিলেট। আর সিলেট পেছনে তাকিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”
নিহা কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল,” আরে পাগল, ঈশান ভাইয়া পেছনে বসেছে। এজন্য তোকে বলেছে পেছনে তাকিয়ে তার দিকে একটু দেখতে।”
আমি পরিষ্কার কণ্ঠে জানালাম,”এই ভরা বাসে মুরব্বিদের উপেক্ষা করে পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে একটু করে দেখার কোনো মানে হয় না। তাকে আমি অনেক দেখেছি। এখন আমি শুধু দেখব সিলেটের চা বাগান। কখন বাস ছাড়বে?”
নিহা হেসে ফেলে বলল,” তারু তুই কি মজা করছিস? ঈশান ভাইয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি তোর?”
আমি নির্বিকার হয়ে বললাম,” এখনও হয়নি। তবে হতে পারে। যদি উনি আমার কাছে ক্ষমা না চায়।”
” কিসের জন্য ক্ষমা চাইবে?”
” উনি আমাকে অনেক মিথ্যা বলেছে। সেজন্য ক্ষমা চাইবে।”
নিহা বার্তাবাহকের দায়িত্ব পালন করে ঈশানের নিকট আমার বার্তা পৌঁছে দিল। এই হৈচৈ এর মাঝেও আমিও স্পষ্ট করে শুনতে পেলাম, নিহা পেছনে গিয়ে ঈশানকে বলছে,” ঈশান ভাই, আপনি নাকি তারুর সাথে মিথ্যা বলেছেন? সেজন্য ক্ষমা চাইতে হবে। নাহলে ও আপনার দিকে তাকাবেও না আর কথাও বলবে না।”
ঈশান কি বলেছিল তা আমি শুনতে পেলাম না। একটু পর নিহা একটা চিরকুট নিয়ে হাজির হলো। সবাইকে সাক্ষী রেখেই চিরকুট আমার হাতে তুলে দিল। আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তখন। এমনি এমনি নিহাকে গাঁধী ডাকি না। চিরকুট একটা ব্যক্তিগত জিনিস। দিতে হয় লুকিয়ে। তা না করে সে দিল ঘোষণা করে,” তারু, তারু,নে। ঈশান ভাইয়া তোর জন্য চিরকুট পাঠিয়েছে।”
নিহার এই কথায় সাড়া পড়ে গেল বাস জুড়ে। নীরা, আনিকা, সামিয়ারা ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল। ছেলেরা হাসাহাসি শুরু করল। রিফাত ভাই মজা নিতে বলল,” বাসে উঠতে না উঠতেই শুরু? নিহা, এদের দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে দে না! তোর কষ্ট কম হবে। ”
নিহা মুখ টিপে হাসল৷ আমি লজ্জায় চিরকুট মুঠোয় নিয়ে মাথা নিচু করলাম। পেছনে মা রুবা আন্টিদের সাথে বসেছিল। সেও নিশ্চয়ই শুনছে এসব। ইশ! রিমা আগ বাড়িয়ে ছুটে এলো,” দেখি, দেখি ঈশান ভাই পেছন থেকে সামনে কি এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করল?”
রিমার কথায় হেসে উঠল সব পরিচিত যাত্রীরা। আমি অসহায় চোখে চাইলাম। নিহা ধমক দিয়ে বলল,” এইসব ব্যক্তিগত জিনিস দেখতে নেই।”
রেহেনা বলল,” এতো ব্যক্তিগত হলে তোমাদের গোপন রাখা উচিৎ ছিল। যেহেতু আমরা জেনেই ফেলেছি, সেহেতু আমাদের চিরকুটের লেখাও দেখতে দিতে হবে। দোষ তোমাদের। আমাদের আগ্রহ জাগালে কেন?”
রেহেনার কথায় সবাই উৎসাহিত হলো। সাফিন ভাই প্রতিবাদ করে বলল,” আরে ধূর, বাদ দাও তোমরা। তারু এমনিই লজ্জা পাচ্ছে। কি দরকার?”
রিফাত ভাই ফোড়ন কাটতে বলল,” বুঝি মামা। ঈশান তো তোমার দলেরই লোক৷ এজন্য ওকে বাঁচাতে চাইছ। কিন্তু তা হবে না। আমরা যারা সিঙ্গেল আছি, তারা সবাই দেখব এই চিরকুটে কি আছে! তোমাদের প্রেমে কত মধু! এটা আমাদের সিঙ্গেলগত অধিকার। তবে তারু তুমি দেখাতে না চাইলে থাক। আমরা বুঝে নিব অত্যন্ত ব্যক্তিগত জিনিস। যা দেখানো একেবারে অসম্ভব।”
ব্যাপারটা এবার নেগেটিভ দিকে চলে যাচ্ছে। সবাই মুখ টিপে এমনভাবে হাসছে যে আমি লজ্জায় বলে ফেললাম,” আচ্ছা, দেখুন।”
আমার কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু চিরকুটের উপর সবার হামলে পড়তে দেরি হলো না। চূড়ান্ত লজ্জায় আমার তখন মাথা কাটা যাওয়ার উপক্রম। রিফাত ভাই সব ছেলে-মেয়েদের কাছে এনে পরিষ্কার কণ্ঠে পড়লেন,
” এই মিষ্টি হাসি, একবার আমার দিকে তাকাও না, প্লিজ! সকাল থেকে মাথা ঘুরছে, চোখে ঝাপসা দেখছি। মনে হচ্ছে আমার লো স্যুগার হয়ে গেছে। কারণ তুমি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছো। সকাল থেকে প্রচন্ডভাবে আমি মিষ্টির অভাববোধ করছি। সেই অভাবে এখন আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমাকে সুস্থ করতে সিরাজগঞ্জের পানতোয়া, ধানসিঁড়ির দই কিংবা কুমিল্লার রসমলাই লাগবে না। শুধু তোমার একটা মিষ্টি হাসিই যথেষ্ট। কারণ তোমার মিষ্টি হাসি, আমি সবথেকে ভালোবাসি।”
সবাই চিৎকার করতে লাগল চিরকুট পড়ে। না জানি কি ভাবছে! ঈশানের প্রতি অনেক মেজাজ খারাপ হলো। এতো ঢং কেন তার লেখায়? আমি তীব্র লজ্জায় চোখে হাত দিয়ে বসে রইলাম। রিফাত ভাইয়েরা গিয়ে ঈশানকে ধরল। ঈশান গম্ভীরমুখে বলল,” এতো হাসির কিছু নেই। গুগল থেকে কপি পেস্ট করেছি।”
” ও আচ্ছা।গুগলের কোন সাইটে আছে এমন লেখা?”
সিয়াম ভাই টিটকিরি মারল,” হ্যাঁ, আমাদেরও একটু দেখা!”
এসব নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করতে করতেই বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেল। নিহা ঈশানের কাছে একগাদা ধমক খেয়ে আমার কাছে এসেও ধমক খেল। তারপর সে নির্বাসন নিয়ে সাফিন ভাইয়ের কাছে চলে গেল। সিদ্ধান্ত নিল এখন থেকে সে আমাদের আর সাহায্য করবে না। আমি অবশ্য এতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তার বিপদে ফেলার মতো সাহায্যের কোনো প্রয়োজন নেই আমার। বাস অন্ধকার হয়ে যাওয়ার পর ঈশান খুব ঝামেলা শুরু করল। পা দিয়ে আমাকে খোচা মারতে লাগল আর বলল তার সাথে পেছনে যেতে। আমি চোখ বড় করে চাইলাম৷ ঈশান বলল,” শুধু কথা বলব। খারাপ কিছু না। এভাবে তাকাচ্ছ কেন?”
” আমি আপনার কথাই শুনব না।” ফিসফিস করে এই কথা বলেই আমি মেয়েদের পাশ থেকে উঠে বুড়ির পাশে বসে পড়লাম। ঈশানকে শায়েস্তা করার জন্যই। বুড়ি তখন ঘুমাচ্ছে। তার নাক ডাকার শব্দেই বিরক্ত হয়ে নীরাদের সাথে পেছনে বসতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ঈশানের যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে আবার সামনে ফিরে আসতে হলো। বুড়ি তীক্ষ্ণ শব্দে নাক ডেকে চলেছে। আমি কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে বসলাম। জেটসিন ডোনা লামা নামের একটি কিউট পিচ্চি মেয়ে এসেছে সারেগামাপাতে। তার গান শুনতে ইদানিং আমার অনেক ভালো লাগছে। এভাবে অনেক সময় পেরিয়ে গেল। চঞ্চল পরিবেশ ঝিমিয়ে পড়েছে। কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ জানালায় বাইরের দৃশ্য মনোযোগ দিয়ে দেখছে, কেউ বা বই পড়ছে। আবার কেউ ডুবে আছে মোবাইলে। পরিবেশ এখন সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ। এই নিস্তব্ধতার সুযোগ নিয়েই ঈশান ঠিক আমার আর বুড়ির বামপাশের সিটে এসে বসল। সেই সিটে সামিয়া বসেছিল। ঈশান সামিয়াকে উঠিয়ে নিজে বসল। তারপর আমাকে ফিসফিস করে ডাকতে লাগল। কিন্তু আমার কানে তখন ইয়ার ফোন। ঈশানের ডাক বাসের সবাই শুনে ফেলবে তাও আমি শুনব না। আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে বাস। একটু পর পর বিরাট ঝাঁকি সামলাতে হচ্ছে। আমি তাও চোখ বন্ধ করে গান শোনায় মগ্ন। ঈশান কাছে এসে হাত বাড়াল আমার ইয়ার ফোন খোলার জন্য। সে যখন ইয়ার ফোন টেনে খুলল, আমি সাথে সাথেই টের পেলাম না। সে আমার কানে কিছু বলতে এলো আর তখনি বাস খুব জোরে ঝাঁকি খেল। ঈশানের ঠোঁট এসে ধাক্কা লাগল আমার গালে। উদ্ভট একটা শব্দ সৃষ্টি হলো। আমি চিৎকার করে উঠলাম। বুড়ি হড়বড় করে জেগে উঠল। ঈশান বাতাসের গতিতে তার জায়গায় গিয়ে বসে পড়ল। বুড়ি আশেপাশে তাকাতে লাগল। আমি চুপচাপ বুড়ির দিকে চেয়ে রইলাম। বুড়ি কিছু না বুঝে বেকুব হয়ে রইল।
মোহনা আন্টি সামনের সিটের ডানপাশে ছিলেন। আমার চিৎকার তিনিও শুনেছেন। তাই প্রশ্ন করলেন ,” তারিন, তুমি চিৎকার করেছ নাকি?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,” হ্যাঁ। বাইরে কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছি।”
” ও।”
নীরা বিষয়টা বুঝল। তাই মজা নিতে জিজ্ঞেস করল,” কি দেখেছ তারু?”
আমি দাঁত খিঁচে বললাম,” একটা খাটাশ দেখেছি!”
নীরা চাপা হেসে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল ” ইউ আর সো লাকি! ঈশান ভাইয়া তোমাকে মানানোর জন্য কত চেষ্টা করছে। এভাবে কেউ রাগ ভাঙায় না। প্লিজ, মেনে যাও।”
আমি শান্ত স্বরে বললাম,” আচ্ছা, মানব।”
” ঈশান ভাইয়ের মতো বয়ফ্রেন্ড ঘরে ঘরে হোক।”
আমি মিনমিন করে বললাম,” তওবা, তওবা, এমন বয়ফ্রেন্ড শত্রুরও না হোক!”
চলবে