তুমি আছো তুমি রবে পর্ব -২০

#তুমি_আছো_তুমি_রবে ( উপন্যাস)
#পর্বঃ২০ #রেহানা_পুতুল
শীতল কন্ঠে বলল ঝিনুক, আপনার এত প্রগাঢ় ভালোবাসা আমার জন্য। আমি আপনার কাছে এতটাই প্রিয়। তাই মনে হলো কোন এক কুয়াশা ভেজা ভোরে, কিংবা অবসন্ন কোন বিকেলে, নয়তো বা কোন ব্যস্ততম দুপুরে আমি হারিয়ে যাব আপনার জীবন থেকে।

আরশাদ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। ঝিনুককে টেনে তুলে বসালো। বলল, বিছানার উপরে দাঁড়াও একটু।

আশ্চর্য! এখন রাত কত গভীর। দাঁড়াব কেন? ঘুমাবনা? বলেই দাঁড়ালো ঝিনুক।

আরশাদ দুহাত দিয়ে ঝিনুকের কোমর জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। কোলে তুলে নিলো।

ঝিনুক থতমত খেয়ে, আমি কি ছোট বাচ্চা? উঃ নামিয়ে দেন বলছি।

আরশাদ ঝিনুককে কোমরের পিছন থেকে টান মেরে নিজের বুকের সাথে মিশে ফেলল যতটা সম্ভব। চুপ । কোন কথা বলবেনা। একদম পিষে ফেলব। ফালতু কথা বলে আমাকে হার্ট করার জন্য এটা শাস্তি দিলাম তোমাকে। কে কখন কার আগে পৃথিবী থেকে বিদায় তা একমাত্র তিনিই জানেন।

ঝিনুকের বুকের সাথে লেপ্টে আছে আরশাদের চিবুক ও দুঠোঁট। চোখ বুঁজে নিঃশ্বাস টেনে আরশাদ বলল আহ! কি মাতোয়ারা সুবাস।

ঝিনুক মুগ্ধ চোখে বিবশ হয়ে দেখছে আরশাদকে। আপ্লুত স্বরে জিজ্ঞেস করলো কিসের সুবাস?

শত পুষ্পের মনকাড়া সুবাসে পাগল হওয়ার দশা তোমার প্রেমিকের। ঝিনুকের বুকের উপর ঠোঁট ঘষতে লাগলো আরশাদ।

ঝিনুক লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। দুহাত দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে ফেলল। এভাবে থেকেই বলল, কি অসভ্যমি হচ্ছে এসব। এতসময় কোলে নিয়ে আছেন। ওজন লাগছেনা?

ওহ নো! তুমিতো রেশমী সুতোর মতো হালকা। তুলতুলে রসগোল্লার মতো স্পঞ্জি। জিভে দিলেই ফুরুৎ করে মিলিয়ে যাবে। এবার কোল থেকে নামিয়ে দিল।

ঝিনুক উঃ করে বলল ব্যথা পেয়েছি । এগুলো মানুষের হাত না লোহার খাম্বা। এমন করে খিঁচিয়ে ধরে কেউ?

কেউ না ধরুক। আমি ধরি। কজ আমার মতো করে কেউ ভালোবাসতে পারেনা। আরশাদ নিজের পুরো শরীর দিয়ে ঝিনুকের কমনীয় শরীরটাকে আবৃত করে ফেলল। মজা পাচ্ছো এবার? আর বলবা খাম্বার মতো আমার হাত? বানরের মতো আমার পা?

আহু! প্লিজ সরুন আমার উপর থেকে। হাঁসফাস লাগছে। কামড় দিব নইলে।

আরশাদ তবুও উঠে গেলনা। ঝিনুকের দুঠোঁটের উপর নিজের ঠোঁট দুটো আলতো করে ছোঁয়ালো। বলল,

একা রুমে আসছে আমাকে দাঁতের বাহাদুরি দেখাতে। দাঁত বত্রিশটা শুধু তোমার একার নেই। আমার ও আছে রাক্ষসী বউ। এমন স্থানে কামড়ে দিব। যেন লজ্জায় আমি ছাড়া কাউকেই না দেখাতে পারো।

ঝিনুক বুকের উপর থেকে ওড়নাটা টেনে লজ্জায় রক্তিম হওয়া মুখখানিকে ঢেকে ফেলল।

আরশাদ একটানেই ওড়নাটা নিয়ে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। দুহাত দিয়ে ঝিনুকের দুগাল চেপে ধরলো। ঝিনুক নড়াচড়া ও করতে পারছেনা। নেশাভরা চোখ দুটোকে ঝিনুকের চোখে রাখলো।
বলল, গায়ে এত বস্র থাকলে উসখুস ত লাগবেই। রাতে বউরা বুঝি এত পর্দা করে বিছানায় ঘুমাতে যায়?

ঝিনুক কিছুই বলতে পারছেনা। তার বুক উঠানামা করছে অনবরত। আরশাদ তা টের পাচ্ছে। বলছে, তোমার বুকের ভিতরের হৃৎস্পন্দন আমাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এই রাত তোমার আমার। তুমি আমার খেলার পুতুল। ইচ্ছেমতো খেলব তোমার সাথে। বাধা দিয়ে এই ফকিরকে অভুক্ত রাখবে? নাকি পূর্ণ সাপোর্ট দিয়ে আমাকে এক সমুদ্র আনন্দ দিবে?

ঝিনুক বলল আমার এসব ভালোলাগেনা৷ পঁচা কাজ। বাজে কাজ এসব।

আরশাদ সুখ সুখ গলায়,বুঝেছি ভদ্রতার কোন বালাই নেই। আমি একাই খেলব রাম সাম যদু মধু। সামথিং ইজ বেটার দেন নাথিং। ও হ্যাঁ মহারানী শুনুন। এসব পঁচা কাজই তাবৎ পৃথিবীর সমস্ত পুরুষেরা মহানন্দে করে যায়। ভাবখানা কি। কচি খুকি বিয়ে করেছি মনে হয়। ধোয়া আমটিও খেতে পারেনা। ঝিনুক শুনে মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে শুধু।

সকালে উঠেই ঝিনুক ছাদে চলে গেলো। ভিতর থেকে ছাদের দরজা বন্ধ করে দিল। মনে মনে স্রস্টাকে লাখো কোটি শুকরিয়া জানালো। ধরে নিলো মা বাবা আগের জনমে বা ইহজনমে কোন পূর্ণের কাজ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে তার এত সুখী পরিবারে বিয়ে হলো।

ফুল গাছগুলোর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। সারামুখে প্রশান্তির স্নিগ্ধ আমেজ। যেন সদ্য ফোটা শিশিরভেজা শিউলি ফুল। ঝিনুক অনেকগুলো ঘাসফুল ছিঁড়ে নিলো। জামরুল গাছের সরু ডালের উপর বসে আছে কয়েকটি চড়ুই পাখি। চড়ুইদের চিউ চিউ কলরবে ঝিনুক ও চঞ্চল ঝর্ণা হয়ে উঠলো। তাদের ধরার চেষ্টা করেও পারলোনা। ফুলের উপরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফড়িং ও প্রজাপতি ধরে ফেলল। খুশীতে টগবগ করতে করতে বাসায় চলে গেল। ঘুমন্ত আরশাদের মুখের উপর ছেড়ে দিলো ফডিং আর প্রজাপতিটাকে।

সুড়সুড়ি পেয়ে আরশাদ নড়ে গিয়ে জেগে গেল।

ঝিনুক বাঁদরামো হচ্ছে আমার সাথে। ফাজিল যুবতী।

ঝিনুক ঠোঁট উল্টিয়ে ভেংচি কাটলো। হিহিহিঃ করে হেসে ঘাসফুলগুলোকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে আরশাদের মাথার উপর ছিটিয়ে দিলো।

আরশাদ ঝিনুককে ধরে ফেলার চেষ্টা করতেই ঝিনুক দৌড়ে বের হয়ে গেল। রান্নাঘরে গিয়ে সালেহাকে বলল, আজ দুপুরে রান্না আমিই করবো। যেহেতু শুক্রবার সবাই আছে। আরিশা ও নিলম আসবে দুপুরের আগেই।

ওক্কে ভাবিজান। আমিও আইজ আপনার হাতের রান্না খাব।

অবশ্যই সালেহাপু। আপনি কি আমাদের বাসার বাইরের কেউ নাকি।

দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসলো। নিলম বলল সব রান্নাই বেশ হয়েছে। তবে ফিরনি টা বেশী জোস হয়েছে।

জোবেদা বেগম স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে, বাবা আজকের সব রেসিপি করেছে তোমার ভাবি।

ওহ! মাই ডিয়ার সুইট ভাবি। অসাধারণ আপনার হাতের রান্না।

সবার প্রাণখোলা হাসিতে পরিবেশ আরও বেশী প্রাণবন্ত হলো। জামান খান সবাইকে নিয়ে নিজের গ্রামে যাওয়ার প্রস্তাব দিলো। তার কথায় তাল মিলিয়ে জোবেদা বেগম বললেন, যাওয়া জরুরি।
গ্রামের নিকটাত্মীয়রাও যাওয়ার জন্য আবদার করে আছে। তাহলে তারা নিলম আর ঝিনুক আমাদের পরিবারের নতুন এই দুই সদস্যকেই দেখতে পাব।।

হুররে কি মজা হবে। গ্রামের কাজিনেরা মিলে একদিন পিকনিক করব। উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল আরিশা।

গ্রাম আমার এত্ত ভালো লাগে। গেলে আসতেই মন চায়না। এই ইট কাঠের শহরে শুধু কালো ধোঁয়া আর গাড়ি গোড়ার গটগট আওয়াজ। বলল ঝিনুক।

আরিশা তাহলে আমরা ঝিনুককে গ্রামে রেখে আসব। আর আমাদের বাগান ক্ষেত পাহারা দেওয়ার লোকটাকে বিদায় দিয়ে দিব। গ্রামের বধু সেজে কাপড় পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে থাকবে। হাঁসমুরগি পালবে। নানান সবজি আর ফলের গাছ লাগাবে। আমরা তার পালা হাঁসমুরগির ডিম খাব। টাটকা সবজি আর ফলফলাদি খাব। কেমন হয় বিষয়টা। সিরিয়াস মুড নিয়ে বলল আরশাদ।

ঝিনুক গোল গোল চোখে তাকালো আরশাদের দিকে। বলল। আমি একপায়ে রাজি। পরিক্ষার সময় এসে পরিক্ষা দিয়ে যাব। ব্যাস।

আরিশা বিকেলেই চলে গেলো নিলমের সাথে। ভালো আছে নিলমের সাথে সে। যাওয়ার আগে ঝিনুক নিলমের দিকে চেয়ে,
এই যে ভাই আমার ননদিকে কোনদিন দুঃখ দিওনা। আমরা মেয়েরা নরম মনের। ব্যথা বেদনা সইতে পারিনা। বইতে পারিনা।

নিলম মৃদু হেসে এদিক ওদিক চাইলো। না কেউ নেই। ঝিনুকের সামনে আরিশার হাত ধরে বলল,

” একটাই চাঁদ তুমি আমার ছোট্ট ভুবনে
তুমি আছো তুমি রবে জীবনে মরনে। ”

কি বুঝলেন ভাবি।
ঝিনুক মিষ্টি হেসে বলল।
” যতনে রেখো তোমরা দুজন দুজনকে।
ভালো থেকো সুখে থেকো এই আশা মনে। ”

আরিশা আর নিলম বাসা থেকে চলে গেলো। ব্যস্ততম শহরের শত ব্যস্ততায় গ্রামে যাওয়া মাসের পর মাস শুধু পিছাচ্ছে। সবার ফ্রি সময় এক করা যাচ্ছেনা। হয় নিলম অফিস থেকে ছুটি নিতে পারছেনা। নয়তো আরিশার জব ইন্টারভিউ থাকে। বা ঝিনুকের এসাইনমেন্ট সাবমিট করার ডেট পড়ে। নয়তো ফ্যাক্টরিতে কোন সমস্যা দেখা দেয়। এমন করতে করতে ঝিনুকের অনার্সের সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল সন্নিকটে চলে এলো।

অতঃপর পরিক্ষা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করল সবাই। যথারীতি নির্ধারিত সময়ে পরিক্ষা শেষ হলো। থার্ড ইয়ারে ভর্তি হয়ে গেলো ঝিনুক। সকল প্রস্তুতি শেষ গ্রামে যাওয়া উপলক্ষকে কেন্দ্র করে।

দুপুর পেরিয়ে বিকেলে ও পেরিয়ে যাচ্ছে, তবুও ঝিনুক বাসায় ফিরছেনা। আরশাদ ফোন দিল। হ্যালো ঝিনুক আজ ভার্সিটিতে এত সময় কি করছ? কোন এক্সট্রা ক্লাস বা সেমিনার?

ঝিনুক সহাস্য গলায় জানালো,
ওহ নো! এক্সট্রেমলি স্যরি মাই ডিয়ার সুইটহার্ট। বন্ধুদের আড্ডায় পড়লে দিন দুনিয়া ভুলে বসে থাকি। আমার একটা মেয়ে ক্লাসফ্রেন্ড গ্রাম থেকে আসা। হোস্টেলেই থাকে। তো প্রসঙ্গত বায়না ধরলো চিড়িয়াখানা দেখতে যাবে।

স্বচক্ষে নাকি কোনদিন দেখেনি। চিন্তা করলাম গ্রামে গেলেতো আমার আর আসা হবেনা। আপনি রেখে আসবেন আমাকে ক্ষেতে খামারে কাজ করার জন্য। তাই যাওয়ার আগে ওকে নিয়ে ঘুরে আসি চিড়িয়াখানা থেকে। আর ভিতরের পরিবেশটাও এখন বেশ গোছানো আগের চেয়ে। একপাশে মিনি শিশুপার্ক করেছে। আমরা তিনবন্ধু মেয়ে বন্ধু এসেছি। এইতো বের হয়ে যাচ্ছি আমরা। পাঁচটার পরেতো তারাই বন্ধ করে দেয়।

ওহ আচ্ছা। সাবধানে এসো। বাই।

আরশাদ মনে মনে তৃপ্তির ঢেকুর ছাড়ে। ভাবে ঝিনুক কতটা অনুরক্ত আমার। কোন ছেলে আছে ভেবে যদি মাইন্ড করি তাই নিজ থেকেই আগ বাড়িয়ে জানালো তিনজনই মেয়ে বন্ধু। বুদ্ধিমতী বউটা আমার।

সন্ধ্যা পার হয়ে গেলো। জামান খান জোবেদা বেগম আরশাদের রুমে এলেন। শত উৎকন্ঠা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে,
কিরে বৌমা এখনো ভার্সিটি থেকে ফিরলনা কেন? তুই জানিস কিছু? কথা হয়েছে?

আরশাদ ঝিনুকের বলা কথাগুলো বাবা মাকে জানালো। আর বলল বন্ধুরাসহ আছে তাই আর ফোন দিচ্ছিনা। শুনে তারা বলল রাস্তায় জ্যামে পড়েছে হয়তো।

হয়তো মা। চিন্তাগ্রস্ত সুরে বলল আরশাদ।

আরো বেশ কিছু সময় গড়িয়ে গেল। ঝিনুকের ফেরার কোন নাম নেই। আরশাদের মোবাইল বেজে উঠলো। আরশাদ হাতে ধরে রাখা মোবাইল স্কিনে দেখল আননোন নাম্বার। ভাবল ঝিনুকের মোবাইলের হয়তো চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই সাথে থাকা বন্ধুর মোবাইল দিয়ে ফোন দিয়েছে জানিয়ে দেওয়ার জন্য। যেন চিন্তা না করি লেট হচ্ছে দেখে।

আরশাদ রিসিভ করে হ্যালো বলতেই অপরপাশ থেকে ভেসে এলো পুরুষালী মোটা কন্ঠ।

হ্যালো…এই মোবাইলের মেয়েটা আপনার কি হয়?

আমার ওয়াইফ। কেন? কি হয়েছে?

আপনার ওয়াইফ এক্সিডেন্ট করেছে। দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে আসুন।

চলবে…২০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here