তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ১৬

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ১৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরহাম মেহেভীনের পিছনে দৌড়াচ্ছে। মেহেভীনও দৌড়ে উপরের একটা কর্নারে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। ছেলেকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে,আরহামের মা আরহামের কাছে এসে বললো, ‘বাবা তুই থাম।কি করছিস কি তুই? মেয়েটার পিছনে এইভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন?’ আরহাম ক্ষিপ্ত গলায় বললো,
‘ মা তুমি জানো না আজকে আমার জরুরী একটা মিটিং আছে,কিন্তু স্টুপিড মেয়েটা আমার গাঁয়ে দুধ ঢেলে দিয়েছে না খেয়ে,কতটা অবাধ্য দেখেছো তুমি?যেখানে আমি ওকে পুরো গ্লাসটা শেষ করতে বলেছিলাম, সেখানে ও কি করলো? পুরো দুধের গ্লাস আমার উপরেই ফেলে দিলো। ‘ আরহামের মা বুঝেছেন ছেলে আজ চটেছে। তাই ছেলেকে শান্ত করার জন্যে তিনি বললেন,
‘ আহা হয়তো বুঝেনি তুই দাঁড়িয়ে ছিলি। তুই রাগ করিস না। ‘

‘হ্যা বুঝবে কেন? ও তো নাদান শিশু তাইনা? আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন। রাহেলা চার গ্লাস দুধ রেডি রাখো। ‘

‘ভাইজান গো চারডা গ্লাস?’

আরহাম ধমকে বললো,
‘বেশি বকবক করো না। যা বলছি করো। রেডি করে উপরে নিয়ে এসো। ‘

রাহেলা মাথায় হাত দিলো সে সব বুঝে গেছে আজকে চার চারটে গ্লাস সব আরহাম মেহেভীনকেই খাওয়াবে।আজ মেহেভীনের কী হবে ভাবতেই রাহেলার হাত -পা কাঁপছে। আরহাম উপরের দিকে দৌড়ে যায়। আরহাম উপরে গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা ভিড়িয়ে দেয়। দরজা খুলার শব্দে মেহেভীন মৃদ্যু কেঁপে উঠে। এইবার সে করবে? আরহাম চারপাশে ঘুড়তে ঘুড়তে বলে,

‘হেই স্টুপিড গার্ল তুমি এখুনি বেড়িয়ে পড়ো। লুকিয়ে কোন লাভ নেই। আজকে তোমাকে কেই বাঁচাতে পারবে না। ‘

আরহাম রুমের চারপাশে ঘুড়ছে। মেহেভীন আল্লাহ আল্লাহ করছে। যে করেই হোক আরহাম নাক যমের থেকে তাকে বাঁচতে হবে। আজকে যদি একবার আরহাম তাকে ধরে ফেলে, সে বাঁচতে পারবে না।

আরহামের চোখ যায় তার বিছানার কিনারের দিকে।সেখানে মেহেভীনের ওড়নাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আরহাম ঘুড়ে পিছন থেকে মেহেভীনের হাত ধরে বলে,

‘ এখন কোথায় যাবে তুমি? ‘

মেহেভীন আরহামকে দেখে চমকে উঠে। মেহেভীন শুকনো ঢুগ গিলে। আরহাম আবারোও বলে উঠে,

‘অনেক দৌড় করিয়েছো তুমি মেয়ে। নাও ইটস মা ট্রান! রাহেলা কোথায় তুমি? আজকে তোমাকে চার গ্লাস দুধ খাওয়াবো। আমার উপর দুধ ফেলে দাওয়ার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। ‘

মেহেভীনের যেন মাথা ঘুড়ে যাওয়ার উপক্রম। এক গ্লাস দুধই সে খেয়ে শেষ করতে পারেনা,সেখানে চারগ্লাস। কিছুতেই সে খাবে।

মেহেভীন অসহায় মুখ করে বলে,

‘ দেখুন প্লিয। আমি বুঝিনি আমাকে ছেড়ে দিন। আমাকে আজকে ভার্সিটি যেতেই হবে। কালকের টেস্ট এক্সাম টা মিস করিছি। আজকে একদমই করা যাবে না। ‘

‘সেইটা তোমার এইসব স্টুপিড কাজ করার আগে মনে ছিলো। তুমি আমার ব্লেজার টা কি করেছো? তুমি জানো আমার কত ইম্পোর্টেন্ট মিটিং ছিলো আজকে। স্টুপিড একটা!’

মেহেভীন কিছু একটা ভেবে বলে ‘আইডিয়া । আপনি দাড়ান আমি এখুনি আসছি৷ ‘

মেহেভীন উঠে দাঁড়াতে নিলে,আরহাম পুনরায় মেহেভীনকে বসিয়ে বলে,

‘ এই মেয়ে তুমি আবারো পালানোর ধান্ধা করছো। ‘

‘ আরে বাবা। পালাবো না। একটু অপেক্ষা করুন। আমি আসছি। ‘

মেহেভীন উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে, একটা ভেজানো কাপড় নিয়ে আসে। আরহাম তা দেখে বলে,

‘ এইটা দিয়ে কি করবে? ‘

মেহেভীন বিড়বিড় করে বলে,

‘ আপনাকে ইচ্ছে-মতো ধুবো।’

‘কি বললে? ‘

”আজ্ঞে কিচ্ছু না। আপনি চুপটি করে বসুন না। ‘

মেহেভীন আরহামের কাছে বসে,আরহামের ব্লেজারে লেগে থাকা দুধটুকু মুছতে শুরু করে দেয়। আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকায়। মেহেভীন আরহামের অনেকটাই কাছে। ঠিক যতটা কাছে আসলে একে-অপরের নিঃশ্বাস গুনতে পারা যায়। মেহেভীন কাপড়টা রেখে লেবু দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করার প্রচেস্টা করে।রাহেলা রুমে ঢুকে দুধটুকু তাড়াহুড়ো করে নিয়ে আসতে গিয়ে, দুধের গ্লাস গুলোই রাহেলার হাত থেকে পড়ে যায়। রাহেলা ‘ভাইজান গো ‘ বলে চিৎকার করে। মেহেভীন চিৎকার শুনে উঠে যায়। অতঃপর মেহেভীন রাহেলার কাছে যেতে গিয়ে,দুধে পা লেগে পড়ে যেতে নিলে, আরহাম মেহেভীনকে কোমড় চেপে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে। যাতে মেহেভীন পড়ে না যায়। আরহাম শক্ত কন্ঠে বলে,

‘ এই মেয়ে এইভাবে কেউ হাটে? হাও স্টুপিড ইউ। একটু হলেই তো পড়ে যেতে। ‘

রাহেলার চিৎকার শুনে আরিয়ান, মজনু ও আক্কাস চলে আসে। আরিয়ান ঘরের এই অবস্হা দেখে বলে,

‘ ভাই কিসের এতো চিল্লাচিল্লি? ‘

আরহাম মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘কিসের জন্যে আবার? আমাদের বাড়িতে একটা স্টুপিড আছে না? তার কাজই তো প্রতিটা পদে স্টুপিড সব কাজ করা। ‘

আরহামের হাত এখনো মেহেভীনের কোমড়ে। মেহেভীন তাকিয়ে দেখে আরিয়ানসহ সবাই তাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মেহেভীন এইরকম চাহনীতে মেহেভীনের মুখশ্রীতে একরাশ লজ্জা এসে ভীর করে। মেহেভীন আরহামের কানে ফিসফিস করে বলে,

‘ ছাড়ুন। ‘

‘কি ছাড়বো? ‘

‘বেশরকম লোক একটা। আমাকে ছাড়ুন। ‘

মেহেভীনের কথায় আরহাম তাকে ছেড়ে দেয়।

‘আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ‘

কোনরকম আরহাম কথাটি বলে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। বুঝাই যাচ্ছে বেচারাও লজ্জা পেয়েছে। আরহামকে এইভাবে যেতে দেখে আরিয়ান ও বাকি সবাই হেঁসে উঠে। মেহেভীন বেচারি বিছানায় বসে পড়ে। আরিয়ান মেহেভীনের পাশে বসে বলে,

‘ একটা কথা বলবো মেহু? ‘

‘কি? ‘

‘এইযে ভাই তোকে সবসময় আগলে রাখে। এই আগলে রাখার মানুষটা কিন্তু আমাদের জীবনে বড্ড প্রয়োজন। আমাদের জীবনের কত মানুষ আসবে আমাদের কষ্ট দিতে। কিন্তু সেই ক্ষতে মলম লাগাতে একজন আগলে রাখার মানুষটি একবারই আসবে। হয়তো তোর জীবনের আগলে রাখার মানুষটিই হলো ভাইয়া৷ ‘

মেহেভীন আরিয়ানের কথার সঠিক মানে বুঝতে পারলো না। সে আরিয়ানকে জিজ্ঞাসা করবে,কিন্তু তার আগেই আরিয়ান বেড়িয়ে গেলো।
______________________

আরহাম মেহেভীনকে ভার্সিটির গেটের সামনে রেখে চলে যায়। আজকে আরহামের একটু বেশিই ব্যস্ততা ছিলো, তা মেহেভীনকে ‘স্টুপিড ‘ বলার সুযোগটুকুও পাইনি। মেহেভীন নিজের ক্লাসে চলে যায়। সেখানে চলে যেতেই তার চোখ পড়ে তার বান্ধুবিদের দেখে। তাদের মধ্যে আলিসা ও ছিলো,যে মেহেভীনের কষ্টাকে দ্বিগুন করে দিতে অভ্র এবং মায়রার ঘনিষ্ট মুহুর্তের ছবি মেহেভীনকে পাঠিয়েছিলো। মেহেভীনেকে এতোদিন পরে দেখে তারা এগিয়ে আসে। আলিসা বলে,

‘মেহু তুই? ‘

‘কেন আশা করিস নি? কি ভেবেছিস? তোদের মতো স্বার্থপর কিছু বন্ধুরা এবং অভ্রের মতো প্রতারকের জন্যে কষ্টেই আমার দিন পাড় হয়ে যাবে? ‘

‘দেখ মেহু তুই কিন্তু বেশি বলছিস?’

আলিসাকে থামিয়ে মেহেভীন আবারো বলে,

‘ যেখানে তোদের মতো মুখোশধারী বন্ধুরা আছে,সেখানে আরিয়ানের মতো বন্ধুরাও আছে।
যারা আসল বন্ধের মতো বিপদে এগিয়ে আসে। তারা আছে বলেই আমাদের মতো মানুষেরা শত আঘাত পাওয়ার পরেও উঠে দাঁড়াতে পারে। আসলে বন্ধুত্বটা এমনই। বন্ধুর মতো বন্ধু যদি আমাদের জীবনে থাকে, সত্যি বলছি জীবনটা বড্ড সহজ হবে। অতীতকে সরিয়ে ঘুড়ে দাঁড়ানোটাও বড্ড সহজ হবে। শুধু জীবনে আরিয়ানের মতো বন্ধ হলেই চলবে। ‘

মেহেভীনের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়। মেহেভীনের সবাইকে পাশ কাটিয়ে, তার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে।

______

আরহাম মিটিংয়ে তার নিজের করা ফাইলস গুলো তাহসানকে নিয়ে তাদের টিমের সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। সবাইও খুব ভালো করে বুঝার চেস্টা করছে।
রুশা শুধু মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুটা অভিমান কাজ করছে আরহামের প্রতি। কালকের দিনটাতে অন্তত সে আরহামকে আশা করেছিলো,কিন্তু আরহাম তার আশায় একপ্রকার জল ঢেলে দিয়েছে। আরহাম কাজের ফাঁকেই গম্ভীর সুরে বলে, ‘মিস রুশা আমি যখন কিছু বুঝাই,সেই টাইমে কেউ অমনোযগী থাকুক,তা আমি মোটেও পছন্দ করিনা। ‘ আরহামের কথায় রুশা ‘সরি স্যার ‘ বলে। আরহাম পুনরায় তার কাজ শুরু করে দেয়।
রুশাকে নিজেকেই নিজে বকতে শুরু করে। সে কার প্রতি অভিমান করছে? যার কাছে সে মোটেও কোন গুরুত্বপূর্ণতা পায়না।
তাহসান রুশাকে দেখে বলে, ‘আর ইউ ওকে মিস রুশা?’

‘ইয়েস স্যার আম ওকে। প্লিয কনটিনিউ। আমি আসছি। ‘

কথাটি বলে রুশা বেড়িয়ে যায়। তাহসান কিছু যেন আন্দাজ করতে পারছে।

____________

অভ্র বাড়ি থেকে সোজা গাড়িটা ভার্সিটির দিকে ঘুড়ায়। মেহেভীনকে আজকে যে করেই হোক তার কথা শুনতে হবে। অভ্র তাকে প্রয়োজন পড়লে বাধ্য করবে,তবুও মেহেভীনকে তার কথা শুনতে হবে। যদিও আজকে মায়রাকে দেখে অভ্রের কেমন যেন ঠিক লাগছিলো না। মায়রার ফোনটাও বন্ধ। কিছু তো একটা করতে চাইছে মায়রা কিন্তু কি? অভ্রের মধ্যে এখন নানারকম চিন্তা এসে ভর করছে,তাই সে দ্রুত গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে দেয়।

মেহেভীন নিজের টেস্ট এক্সাম টা দিয়ে,ক্লাস থেকে বেড়োতেই দেখে মায়রা এবং তার গার্লস গ্যাং এর সব সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছে। মায়রার ভার্সিটিতে বেশ
ক্ষমতা আছে সিনিয়র হিসেবে। মায়রাকে এইভাবে পথ আটকে দাড়াতে দেখে,মেহেভীন বলে,

‘ এইভাবে পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ‘

‘কেননা তুমি আমার পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছো।’

মায়রার কথায় মেহেভীন চমকে বলে,

‘ পথের কাটা মানে? কিসব বলছো তুমি মায়রা?আমাকে যেতে দাও। সামনে থেকে সরো। ‘

‘ দাঁড়াও মেহেভীন। এতো কিসের তাড়া তোমার?
তুমি কি ভেবেছো তুমি আমার সংসার ভাঙ্গবে আর আমি বসে বসে দেখবো? ‘

দাঁতে দাঁত চেপে কথাটি বলে মায়রা। মেহেভীন মুচকি হেঁসে বলে,

‘মানুষের সংসার ভাঙ্গাটা তোমার কাজ মায়রা। এইসব কাজ তোমাকে সোভা পায়। আমাকে নয়। এইসব কথা আমাকে একদম বলবে না। নাহলে আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে জানাতে বাধ্য হবো। এইটা তোমার পার্সোনাল জায়গা না,যে তুমি এখানে নিজের পার্সোনাল লাইফে আক্রোশ দেখাবে। সরো বলছি। ‘

মেহেভীন মায়রাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে,মায়রা মেহেভীনের দিকে পা বাড়িয়ে দিয়ে,যার ফলে মেহেভীন পড়ে যায় নীচে। মায়রা ও তার বন্ধুরা একসাথে জোড়ে জোড়ে হাঁসতে থাকে। মায়রা হাঁসতে হাঁসতে বলে,

”ওলে বাবারে। আমাদের মেহুরানী কত্ত বড় কথা বলে,অথচ ঠিকমতো হাটতেও পারেনা? হা হা। ‘

মেহেভীনকে দেখে ক্যাম্পাসের সব ছেলে-মেয়েরাই হাঁসছে। মেহেভীন ঠোট কামড়ে নিজের কান্না আটকানোর চেস্টা করে।

চলবে….ইনশা-আল্লাহ 😊

[কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন কিন্তু 😊]
[ কার্টেসি ছাড়া কপি করা থেকে বিরত থাকুন ❌]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here