তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ২৮+২৯+৩০+৩১+৩২+৩৩

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ২৮ [কাহানী মে আয়া টুইস্ট]
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভ্র আরহামকে এসেই জড়িয়ে ধরে। নিজের পাক্তনকে এইভাবে দেখে স্হীর হয়ে দাড়িয়ে যায় মেহেভীন। মেহেভীন বুঝতে পারছে না অভ্র এখানে কি করে এলো?অভ্রকে আরহাম কিংবা আরিয়ান কেউই আশা করেনি, তা তাদের চোখ-মুখেই স্পষ্ট। মেহেভীন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। তার মনে অনেক প্রশ্নের বিস্তার ঘটতে থাকে। আরহামকে অভ্র এসে জড়িয়ে ধরলো কেন? তাহলে কী আরহাম ও অভ্র পূর্বপরিচিত? অভ্র আরহামকে জড়িয়ে ধরেই বললো,
‘ এইসব কি ব্রো? এখনো নিজের ভাইয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবি? সেই একটা বিষয় নিয়ে এখনো এতো রাগ পুষে রেখেছিস? এখন তো এইসব ছাড় প্লিয। ‘
আরহাম কোন প্রতিক্রিয়া করলো না। অভ্র এইবার আরিয়ানের কাছে গিয়ে বললো,

‘ কি হলো? সবসময় তো আমাকে দেখে তুই সবার আগে এসে, টাইট করে হাগ করিস। আজ কি হলো?
বুঝেছি অভিমান হয়েছে। ওকে আমিই করে নিচ্ছি। ‘

অভ্র কথাটি বলে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। মেহেভীন অবাকের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেলো। অভ্র আরহাম ও আরিয়ানের ভাই? কীভাবে সম্ভব? মেহেভীনকে কখনো তো আরহাম কিংবা আরিয়ান বলেনি তাদের অভ্র নামক কোন ভাই আছে।

অভ্র আরিয়ানকেও ছেড়ে দিলো। অভ্র তার দুই চাচাতো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কখনো ভাবেনি চট্টগ্রামে এসে এইভাবে তোদের সাথে দেখা হয়ে যাবে। কিরে ভাই তোরা এখনো চুপ করে থাকবি? আমি বুঝতে পারছি না। বড়দের মধ্যে যা হোক, কিন্তু আমরা কেন আমাদের মধ্যে এইভাবে দূরত্ব বাড়িয়ে চলবো বলতো? ‘

‘ দূরত্ব সবসময় তোর পক্ষ থেকেই ছিলো অভ্র। আমরা কখনো তোর সাথে দূরত্ব বাড়াতে চাইনি। ‘

আরহাম কাঠকাঠ গলায় অভ্রের প্রশ্নের উত্তর দিলো।

অভ্র স্মিত হেসে বলল, ‘ তা আমি জানি। তোরা আমাকে কতটা ভালোবাসিস। সেইটাও জানি,কিন্তু
আমিই বা কি করবো? আমি বাধ্য হয়েই একপ্রকার এইভাবে দূরত্ব বাড়িয়েছি।তোরা তো জানিস মা কে আমি কতটা ভালোবাসি।
মায়ের জন্যে যে আমি কত কিছু করেছি,তা শুধু আমিই জানি। ‘

শেষের কথাটি অভ্র আস্তে করেই বললো।

আরিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,

‘ কি বললি ভাইয়া তুই? ‘

‘ না মানে আসলে আমি বলতে চাইছিলাম যে,আমি পরে তোদের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম,কিন্তু পারেনি। আচ্ছা এইবার তো বাদ দে এইসব অভিমান ইয়ার। লেটস গো বাদ্রারস গিভ মি সাম হাগস। ‘

অভ্র কথাটি বলেই আরহাম ও আরিয়ানকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো। আরহাম ও আরিয়ানও আর রাগ করে থাকতে পারলো না, তারাও জড়িয়ে ধরলো তাদের ভাইকে। অভ্র জড়িয়ে ধরতেই, তার চোখ গেলো তার অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটির দিকে। যার জন্যে সে এতোদিন ধরে ছটফট করছিলো। মেহেভীন বুঝতে পেরেছে, অভ্র তাকে দেখে ফেলেছো। মেহেভীনের পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। অভ্র আরহাম ও আরিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে ধীর গলায় বলে,

‘ মেহেভীন? ‘

অভ্রের কথা শুনে আরহাম ও আরিয়ান মেহেভীনের দিকে তাকায়। মায়রাও ততক্ষনে চলে আসে। আরিয়ান মেহেভীনের কাছে গিয়ে, মেহেভীনকে নিয়ে এসে অভ্রের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,

‘ তুই মেহেভীনকে কি করে চিনিস ভাই? ‘

‘ কিন্তু তার আগে বল? মেহেভীন তোদের কি হয়? ‘

মেহেভীনের সাথে আরহামকে দেখেই মায়রা চিনে ফেললো, আরহাম একবার ভার্সিটিতেও এসেছিলো। এখন তার মনে পড়লো অভ্রের ফোনে সে একবার আরহামের ছবি দেখেছিলো, তাই সেদিন আরহামকে তার চেনা মনে হচ্ছিলো। অভ্র আবারো মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কি হলো বললি না যে, মেহেভীনকে কি করে চিনিস তোরা? ‘

মেহেভীনের তো জান যায় যায় অবস্হা । মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরহামের প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে।
এখন কি বলবে আরহাম?আরহাম সবাইকে অবাক করে দিয়ে, মেহেভীনের হাত ধরে হাঁসিমুখে বললো,

‘ আমার ওয়াইফ। মিসেস মেহেভীন আরহাম হাসান তালুকদার। ‘

আরহামের কথাটা শুনেই পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে যায়। মায়রারও বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছে যে মেহেভীনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। যদিও তার বেশ খুশি লাগছে। অভ্র শুধু নিষ্পলকভাবে মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কানে এখনো আরহামের কথাটি বেজে চলেছে। মেহেভীন জানে অভ্র এখন তার উত্তরের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছে। মেহেভীনও আরহামের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,

‘ হুম আমি এখন মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার। এইটাই আমার পরিচয়। ‘

রুশা ও তাহসানরাও ততক্ষনে ফিরে আসলো হোটেলে। রুশার কানে কথাটি আসতেই, সে স্তব্ধ হয়ে রইলো।
মেহেভীন খেয়াল করলো অভ্র ঠিক কাঁদছে না। তার চোখ ছলছল হয়ে রয়েছে। আরিয়ানের চোখ এইবার মায়রার দিকে গেলো। আরিয়ান মায়রার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না যে? ‘

মায়রা স্মিত হেসে জবাব দিলো,

‘ আমি হচ্ছি মিসেস অভ্র আহমেদ। ‘

আরিয়ান হাত তালি দিয়ে বললো,

‘ বাহ কতটা দূরত্ব হয়ে গেলো যে, অভ্র ভাই তু্ই বিয়ে করলি অথচ আমরাও জানি না। ‘

অভ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘ আরহাম ও যে বিয়ে করেছে সেই খবরও তো আমরা পেলাম না। ‘

‘ মানুষের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেলে, অনেক কিছুই গোপনীয় থেকে যায়। বিয়ের বিষয়টাও তার মধ্যে অন্যতম। ‘

আরহামের কথায় অভ্র আর কিছু বললো না। অভ্র কখনো ভাবতে পারেনি মেহেভীন তার ভাইয়ের বউ হবে। মেহেভীন কিছু একটা ভেবে আনমনে হাসে। যা কারো নজরে পড়লো না। অভ্র স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেহেভীনের চোখে ঘৃণা উপচে পড়ছে তার জন্যে। মেহেভীন ইচ্ছে করেই আরহামের হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ আমার না শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি এখন রুমে যাবো। ‘

রুশা নিষ্প্রানের মতো দাড়িয়ে আছে।তাহসান রুশার অবস্হা বুঝতে পেরে, এগিয়ে এসে বললো,

‘ আরহাম তুই বলছিস টা কি? আমাকে একটু খুলে বলবি তো? ‘

আরহাম তাহসানকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

‘ তোকে যা বলার আমি পরে বলছি। আগে মেহেভীনকে ঘরে দিয়ে আসি। তারপর তোকে যা বলার বলবো। আমার বউ সবার আগে। যতই হোক একটা মাত্র বউ আমার। নকল হলেও বউ তো।’

শেষের কথা আরহাম ঠাট্টার সুরে আস্তে করে মেহেভীনের কানে বললো। মেহেভীন হেসে দেয়। আরহাম মেহভীনের হাত ধরে সকলের সামনে উপরে নিয়ে যায়। রুশা মুখ চেপে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে যায়। তাহসান রুশার পিছন পিছন চলে যায়। অভ্রের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে যেন। সে কিছুতেই হজম করতে পারছে না ব্যাপারটা।

________

আরহাম মেহেভীনকে রুমে এনে, ওষুধের বক্স থেকে একটা ওষুধ বের করে মেহেভীনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

‘ জাস্ট স্টুপিড মেয়ে একটা তুমি। টাইম মতো ওষুধ টাও খেতে পারো না। ‘

কথাটা বলেই আরহাম বক্সটা বেডের এক পাশে রাখে। মেহেভীন ওষুধ টা খেয়ে নেয়। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ আরহাম সাহেব আপনি আছেন না সবসময়ই? আমার যত্ন নেওয়ার মানুষ। আমার নিজের যত্ন নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ‘

মেহেভীনের কথায় আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকাতেই, মেহেভীন গলাটা খাকারি দিয়ে বললো,

‘ মানে বলছিলাম কি মায়রা আপু আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র সেই সুবাধে অভ্র ভাইয়াকে প্রায় আমাদের ভার্সিটিতে দেখিছিলাম,কিন্তু অভ্র নামক যে আপনাদের কোন ভাই আছে, তা জানতাম না তো। ‘

আরহাম খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মেহেভীনের মনে হাজারো প্রশ্ন এসে ঝটলা পাঁকাচ্ছে। সেসব প্রশ্ন সব অভ্রকে ঘিড়েই৷ আরহাম ধীর গলায় বললো,

‘ অভ্র সম্পর্কে আমার ছোট চাচার ছেলে হয়। মানে আমার চাচাতো ভাই। ছোট চাচা এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার পরে,কোন এক কারণে ছোট মা অর্থাৎ অভ্রের মা আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কোন একটা কারণে ছোট মা আমাদের পুরো পরিবারকে ঘৃণা করে। কিন্তু কেন কে জানে? অভ্র এবং আমি সমবয়সী ছিলাম। অভ্র ছোটবেলা থেকেই বিদেশ থেকে পড়াশোনা করতো। অভ্র একপ্রকার লুকিয়েই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতো, কিন্তু ছোট মা দুবছর আগে যখন আমাদের মধ্যে এখনো সম্পর্ক আছে কথাটি জেনে যায়। তখন অভ্রকে বাধ্য করে যেন আমাদের সাথে যোগাযোগ না করে। অভ্র ও আমাদের সাথে সম্পুর্ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই আমরাও আর যোগাযোগ রাখিনা। আজ ভাগ্যক্রমে চট্টগ্রামে অভ্রকে দেখে আমরা আর নিজেদের অভিমানটাকে ধরে রাখতে পারলাম না। ‘

মেহেভীন এইবার আস্তে ধীরে সবটা বুঝতে পারলো। তার খালামনি অর্থাৎ আরহামের ছোট মা তালুকদার বাড়ি থেকে কোন এক কারণে বেড়িয়ে, তার বাড়িতে মেহেভীনকে আশ্রয় দিয়েছিলো। এতোটা বছর ধরে তার খালা তার শ্বশুড় বাড়ির কথাও কখনো বলেনি এমনকি মেহেভীন জানতেও চাইনি। যদিও মেহেভীন জানতো অভ্রের দুই চাচাতো ভাই আছে, কিন্তু তাদের নাম যে আরহাম এবং আরিয়ান সে সম্পর্কে তার অবগতি ছিলো না। এমনকি মেহেভীন তার অতীতের কথা আরহাম ও আরিয়ানের কথা বললেও, অভ্রের নাম একবারও উচ্চারণ করেনি। তাই অভ্র যে মেহেভীনের প্রাক্তন তা আরহাম কিংবা আরিয়ান কেউই জানে না। আরহামের ফোন বেজে উঠায়, সে বাইরে চলে গেলো। মেহেভীনের মনে পড়ে গেলো কিচ্ছুক্ষন আগের কথা যখন আরহাম তাকে সকলের সামনে তার বউয়ের মর্যাদা দিয়েছে। মেহেভীনের অধরের কোণে এতো কিছুর পরেও, প্রাপ্তির হাঁসির ফুটে উঠলো। সে কখনো আশা করেনি আরহাম তাকে এইরকম একটা সম্মান দিবে। সত্যি আরহাম এবং অভ্র দুই ভাই হয়েও, তাদের মধ্যে কত তফাৎ। একজন শুধু কষ্ট দিতে পারে আরেকজন নিয়ে যেতে পারে সুখের রাজ্যে। এতোদিন পরে অভ্রকে দেখে মেহেভীনের মনে পড়ে গেলো সেই ভয়ংকর অতীত।

মেহেভীন আয়নার সামনে দাড়িয়ে আপনমনে বিড়বিড় করতে লাগলো,

‘ মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার। নাইস নেম! ‘

মেহেভীন মাথায় ভয়ংকর এক খেলার ভূত চেপে বসলো। যার পরিণতি ঠিক কি হবে জানেনা মেহেভীন। তখনি মেহেভীন শুনতে পায় দরজা বন্ধ করার আওয়াজ। মেহেভীন পিছনে ঘুড়ে দেখে……
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব-২৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভ্র দরজা বন্ধ করে দিয়ে, এক এক পা করে মেহেভীনের দিকে এগিয়ে যায়। মেহেভীন বুঝতে পারছে না অভ্র হঠাৎ তার রুমে কোন উদ্দেশ্য এসেছে। অভ্রকে এগিয়ে আসতে দেখে মেহেভীন শুকনো ঢুগ গিলতে থাকে। তবুও পিছায় না। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে নিজের স্হানে। অভ্র মেহেভীনের কাছে গিয়ে বলে,
‘ তুই আদোও বিয়ে করেছিস মেহু?
‘কেন শুনতে পেলে না? নীচে আরহাম কি বললো? আজকাল কি তুমি কানেও কম শুনছো অভ্র? ‘
মেহেভীনের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় অভ্র। অভ্র বললো,

‘ দেখ মেহু…’

অভ্রের কথার মাঝে ফড়ন কেটে, মেহেভীন গলায় বিরক্তির সুর এনে বললো,

‘ কল মি ভাবি মিঃ অভ্র আহমেদ। ভূলে যাবেন না আমি আপনার এখন প্রাক্তন স্ত্রী কিংবা কাজিন নই। আমি এখন থেকে সম্পর্কে আপনার বড় ভাবি হই। আমি যতটুকু জানি আরহাম সাহেব আপনার থেকে
দুই -তিনমাসের বড়। সে হিসেবে আপনি এখন আমার দেবর এবং আমি আপনার ভাবি। আমি আশা করবো আরিয়ানের মতো আপনিও আমাকে ভাবির সম্মানটুকু দিবেন। মিঃ অভ্র আহমেদ ওরফে আমার দেবরজ্বী। ‘

অভ্রের রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
তার এতোই রাগ হচ্ছে সে পারলে এখন মেহেভীনের গলাটাই টিপে দেয়। অভ্র নিজের রাগটুকু সংযত করতে না পেরে, মেহেভীনের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে,

‘ তুই জানতি আরহাম আমার ভাই হয় তাইনা? ইচ্ছে করে বিয়ে করেছিস বদলা নিতে চাস তুই আমার কাছে মেহেভীন? ঠিক চাইছিস টা কি তুই? আমাকে বলবি? ‘

অভ্রের করা এইসব রাগ দেখেই মনে মনে পৌচাশিক আনন্দ পাচ্ছে মেহেভীন। মেহেভীন ঠোটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। মেহেভীন কিছু একটা ভেবে ‘ আহ মাগো ‘ বলে চিৎকার করে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে অভ্র মেহেভীনকে ছেড়ে দেয়। আরহাম ও আরিয়ান ও রুমে ঢুকে। আরহাম মেহেভীনের কাছে গিয়ে বলে উঠে,

‘ মেহেভীন তুমি ঠিক আছো তো? কোথায় ব্যাথা করছে আমায় বলো তো? ‘

মেহেভীন আরহামের হাত খানা শক্ত করে চেপে ধরে বলে,

‘আমার না পেটে হুট করেই ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। ‘

আরহাম সঙ্গে সঙ্গে বাজখায় গলায় উত্তর দিয়ে বললো,

‘ স্টুপিডের মতো সারাদিন অনিয়ম করলে তো পেটে ব্যাথা করবেই। প্রেগন্যান্সির সময়টায় অন্ত্যন্ত তো সর্তক থাকতে পারো। ‘

আরহামের কথায় অভ্র আরেকদফা চমকে উঠলো। প্রেগ্ন্যাসির সময় মানে? অভ্র মেহেভীনের দিকে তাকাতেই, মেহেভীন লজ্জামাখা কন্ঠে বললো,

‘ অভ্র ভাই আপনি হয়তো জানেন না আপনি এখন চাচ্চু ও হতে চলেছেন। ‘

তাহসান রুমে ঢুকে এইসব শুনে বলে,

‘ কিরে ভাই আরহাম? তুই এতো ফাস্ট যে বিয়েও করে ফেললি আবার বাচ্ছাও? ‘

আরিয়ান তার ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘ বুঝতে হবে না? ইনি হচ্ছে আরহাম হাসান তালুকদার সব কিছুতেই উনি একটু বেশিই ফাস্ট। তাইনা ভাই? ‘

আরহাম আরিয়ানের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই, আরিয়ান তার মুখ বন্ধ করে ফেললো।

মেহেভীন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অভ্রের এই খবরটি একদমই হজম করতে পারেনি। অভ্রের চোখে একপ্রকার কষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেহেভীন। অভ্রের এই কষ্ট মেহেভীনের মনের ক্ষতটাকে যেন একটু লাঘব করে দিচ্ছে।
মেহেভীনের মনে পড়ে যাচ্ছে তার অতীতের সেই বিষাদময় স্মৃতি, যা অভ্র তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলো। অভ্র আজ যেই কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা একদিন মেহেভীন ও সহ্য করেছিলো দ্বীগুনভাবে।
অভ্র বেড়িয়ে যেতে নিলে, আরহাম বললো,

‘ অভ্র তুই কেন এসেছিলে? ‘

অভ্র শুকনো মুখে জবাব দিলো, ‘ আসলে তোকে খুঁজতে এসেছিলাম। আমার না এখন একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেলো। আমি আসছি। তোরা থাক। ‘

অভ্র আর এক দন্ড ও দাঁড়ালো না গটগট করে বেডিয়ে গেলো। অভ্রকে এইভাবে চলে যেতে দেখে কপালের কিছুটা চিন্তার রেশ ফুটে উঠলো আরহামের।

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
_________

অভ্র নিজের রুমে ঢুকেই দেখে, মায়রা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গুন গুন করছে, আর নিজের মতো সেঁজে চলেছে। আজ মায়রার ঠোটের কোণে আলতো হাসি বিরাজমান রয়েছে, যা এতোদিন ছিলোই না বলতে গেলে। অভ্রকে ঢুকতে দেখে মায়রা অভ্রের সামনে গিয়ে বললো,

‘ কি হলো অভ্র? তোমাকে এতোটা আপসেট দেখাচ্ছে কেন? তোমার তো হ্যাপি থাকার কথা বিকজ যাকে নিয়ে, তোমার এতো চিন্তা সে এখন তোমার নিজের চাচাতো ভাইয়ের বউ। তাই আমার মনে হয় তোমার ভাই মেহেভীনের খেয়াল ভালোই রাখতে পারবে। ‘

অভ্র সঙ্গে সঙ্গে মায়রার হাত চেপে ধরে বলে,

‘ আর ইউ কিডিং? মজা নিচ্ছো তুমি আমার সাথে? এইটাই বলতে চাইছো তাইতো যে, যেই মেহেভীনকে একসময় আমি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম সেই মেহেভীনই আমার ভাইয়ের বউ তাইনা? ‘

মায়রার নিজের হাত খানা অভ্রের হাত থেকে ছাড়িয়ে বলে,

‘ কোন মজা নিচ্ছি না আমি অভ্র। আমি শুধু এইটুকুই বলছি যার জন্যে তুমি আমাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছো,সে কিন্তু খুবই সুখে আছে এখন তোমার ভাইয়ের সাথে। এমনকি যা শুনলাম এখন সে তোমার ভাইয়ের সন্তানের মাও হতে চলেছে। দেখলে মেহেভীনের মনেও তোমার জন্যে কোন ভালোবাসা ছিলো না,তাহলে কেন তুমি এইরকম করছো অভ্র? কেন বুঝতে পারছো না যে মেহেভীন…’

মায়রা আর কিছু বলার সুযোগটুকু পেলো না, তার আগেই অভ্র মায়রার মুখ চেপে ধরে বলে,

‘ অনেককিছু বলে ফেলেছো তুমি। এইবার যা বুঝার আমি বুঝবো। ‘

অভ্র মায়রাকে ছেড়ে দিয়ে,বেডের এক কোণে বসে থাকে। তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না মেহেভীন বিয়েও করে ফেললো, তার মধ্যে আবার আরহামের সন্তানের মা ও হতে চলেছে?কিছু তো একটা গন্ডগল আছে এর মধ্যে।

_________________

অন্যদিকে মেহেভীন বিছানায় বসে গভীর ছক কষছে। অভ্রের চোখে আজ যে কষ্ট দেখেছে, সেই কষ্টকে সে আরো দ্বিগুন করে বাড়িয়ে তুলবে সে। অতীতের সব কষ্ট দে অভ্রকে ফিরত দিবে। মেহেভীন আনমনে বলে উঠলো,

‘ মেহেভীন থুরি মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার কারো ধার রাখেনা। এইবার আমি তোমাকে তোমার দেওয়া সকলে কষ্ট ফিরত দিবো মিঃ দেবরজ্বী।’

মেহেভীন আরেকদফা মুচকি হাসলো। আরহাম তখনি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে, আয়নায় জেল দিয়ে নিজের চুল সেট করতে থাকে। মেহেভীন অপলক তাকিয়ে থাকে। লোকটা বড্ড সুন্দর! চোখ ফিরানো যে কারো পক্ষে মুশকিল। আরহাম আয়নার দিকে তাকাতেই, মেহেভীন নিজের আখিঁজোড়া সরিয়ে ফেললো। যেহুতু সবাই জেনে গেছে মেহেভীন আরহামের স্ত্রী, তা মেহেভীনকে এখন আরহামের ঘরেই থাকতে হচ্ছে। আরহাম আয়নার দিকে তাকিয়েই বললো,

‘ আমি এখন আমার অফিসের কলিগদের সাথে কালকের জরুরী প্রযেক্ট নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। এসে যেন দেখি চুপচাপ ঘুমিয়ে গেছো। একদম স্টুপিডের মতো জেগে থাকবে না। এইসময় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়াটা ভালো। ‘

মেহেভীন ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়। আরহাম বেড়িয়ে যায়।

_______

আরহাম হোটেলের স্পেশাল রুমে তার অফিস কলিগদের সাথে কালকের তাদের জরুরী প্রযেক্ট নিয়ে জরুরী মিটিং করছে। সবাই আরহামের সাথে প্রযেক্টটা নিয়েও কথা বললেও, রুশা এক কোণে চুপ হয়ে বসে থাকে। রুশাকে চুপ থাকতে দেখে আরহাম বলে উঠে,

‘ মিস রুশা আপনি কিছু বলছেন না যে? এই প্রযেক্ট নিয়েই তো আমি আপনাকে হেড় করেছিলাম। আপনিই যদি কথা না বলেন, তাহলে আমরা এগোবো কীভাবে? ‘

রুশা উঠে দাড়িয়ে কান্নাভেজা গলায় বললো,

‘ স্যার আমি তো অনেক কিছু্ই বলতে চাই,কিন্তু সেসব শুনার সময়টুকু আদোও আপনার আছে?
আপনার সময়ের অভাবে আমার কথাগুলোও বলা হলো না বলে, আজ আমি শূণ্য হয়ে গেলাম। ‘

রুশার কথা শুনে অফিসের সবার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না যে, রুশা আসলে কি বলতে চাইছে। কেননা সবাই জানে রুশার মনে আরহামকে নিয়ে কিরকম অনুভুতি আছে।

আরহাম গম্ভীর সুর গলায় এনে বলে,
‘ মিস রুশা আপনি আসলে বলতে কি চাইছেন? ‘

‘ আমার মনে হয় কিছুক্ষন যদি আপনার সাথে একা কথা বলতে পারতাম, তাহলে বোধহয় ভালো হতো। ‘

রুশার কথা শুনে তাহসান সবাইকে ইশারা করে, রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে। তাহসানের ইশরায় সকলে বেড়িয়ে যায়। সকলে বেড়িয়ে যেতেই, রুশা…….
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে
#পর্ব- ৩০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
সকলেই বেড়িয়ে যেতেই, রুশা আরহামের হাতজোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কেঁদে ফেলে। রুশার কান্নার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে। আরহামের অস্বস্হি হচ্ছে তার হাত এইভাবে ধরে রাখার কারণে। আরহাম অস্বস্হি নিয়েই বললো,
‘ কি করছেন কি মিস রুশা? কেউ দেখলে কি ভাব্বে?
হাত ছাড়ুন প্লিয। ‘
‘ স্যার আপনার হাতদুটো ধরারও কি অধিকার নেই আমার? জানি নেই তবুও একটু ধরতে দিন না। আপনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদার সাধ্যি তো নেই আমার। অন্তত হাতদুটো ধরতে দিন দয়া করে। ‘
আরহাম নিজের হাতজোড়া তৎক্ষনাক ছেড়ে দিয়ে, কাঠিন্য গলায় বললো,

‘ এইসব কি ছেলেমানুষী করছেন মিস রুশা? এখন আপনার আবেগীর বয়স নয়। যথেষ্ট ম্যাচুরেটি আছে আপনার মধ্যে যতটুকু আমি জানতাম। আমি আশা করবো,আপনি নিশ্চই আবেগী হয়ে এমন কিছু করবেন না যাতে, আমার চোখে আপনার প্রতি যে সম্মানটুকু আছে তা নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। ‘

‘ স্যার কাউকে ভালোবেসেছেন কখনো? হ্যা ভালো তো বেসেছেনই তাইনা? আপনার স্ত্রীকে। কি নাম যেন মেহেভীন। হুম মেহেভীনকে আপনি খুব ভালোবাসেন তাইনা স্যার? ‘

রুশার প্রশ্নে আরহাম নিশ্চুপ হয়ে যায়। আরহামের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। তার খুব করে একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে, যা চাইলেও সে আপাতত বলতে পারছে না।
আরহামের থেকে কোনপ্রকার জবাব না পেয়ে, কান্নার বেগ দ্বিগুন করে রুশা বললো,

‘ স্যার জানেন? ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার যন্ত্রনাটা একটা মানুষকে তীলে তীলে শেষ করে দেয়।আজ হয়তো সেই কষ্টটাকে আপনি উপলব্ধি করতে পারছেন না। আসলে আমরা তখনি অন্যজনের কষ্ট অনুভব করতে পারে,যখব তা আমাদের সাথে ঘটে।’

রুশার কথায় আরহামের অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফোটে উঠে। আরহামের অদ্ভুদ হাসির মানে বুঝতে অক্ষম হলো রুশা। আরহাম ধীর গলায় বললো,

‘ আপনি এখন আসতে পারেন মিস রুশা। ‘

রুশা জানে শত সে কথা বললেও আরহাম তার কথা বুঝাতে পারবে না। তাই রুশা আর কথা বাড়ালো না। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নিঃশব্দে বেড়িয়ে গেলো।

আরহাম জানালার কাছে ঘেষে দাড়িয়ে বিড়বিড় করে বললো,
‘ নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের সামনেই অন্য কারো হতে দেখেছি। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে রেখেছিলাম,যেন সে সুখে থাকে। কেননা আমার ভালোবাসা আমাকে শেখায়, নিজের ভালোবাসা আমাকে শেখায়, নিজের ভালোবাসার মানুষের সুখেই প্রকৃত সুখ। থাকুক না সে অন্য কারো গল্পের নায়িকা হয়ে। তবুও তো সে সুখে আছে।
কিন্তু নিয়তি হয়তো অন্য কিছু চেয়েছিলো। ‘

আরহাম তার ফোনে কারো ছবি বের করে, প্রাপ্তির হাসি দেয়।

_________

আরহাম, আরিয়ান ও মেহেভীন আজ অভ্র এবং মায়রার সাথেই খাবে। মেহেভীন আজ ইচ্ছে করেই আরহামের পাশে বসে আছে। আরহাম বার বার মেহেভীনকে ধমকে ধমকে এইটা সেইটা খাওয়ার জন্যে বলছে। বেচারী মেহেভীন ও ধমক খেয়ে চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো। আরহামের বকা না খেলে, তার তো আবার খাবার পেটেও যায়না। আরহামকে দেখেই বুঝা যায়, তার কতটা চিন্তা হচ্ছে মেহেভীনকে নিয়ে। মেহেভীন খেয়াল করছে, অভ্র বার বার আড়চোখে তাদের দিকে তাঁকাচ্ছে। অভ্রের এমন চাহনীতে মেহেভীনের মাথায় চট করে একটা শয়তানী বুদ্ধি চেপে বসলো। ওয়েটার টেবিলে মেহেভীনের জন্যে সুপ রেখে চলে যায়। মেহেভীন একপ্রকার ইচ্ছে করেই, গরম সুপটা খেতে গিয়ে, নিজের হাতে ফেলে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। মেহেভীনের আওয়াজে সবার চোখ মেহেভীনের দিকে যায়। মেহেভীনের হাতে এইভাবে সুপ পড়ে যাওয়ায়,আরহাম তৎক্ষনাক ওয়েটারকে দিয়ে বরফ আনিয়ে নিয়ে, মেহেভীনের হাতে হাল্কা করে চাপ দেয়,যেন জায়গাটায় ফোসকা পড়ে না যায়। কেননা সুপটা বেশ গরম ছিলো। আরহাম রাগান্বিত সুরে বললো,

‘ দিনে একটা স্টুপিডের মতো কাজ না করলে তোমার কি হয়না? সুপটাও ঠিক মতো খেতে পারো না তুমি। ‘

মেহেভীন মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে,

‘ হুম খেতে পারি না তো। আপনি বরং খায়িয়ে দিন। ‘

মেহেভীনের এমন আবদারে অবাক হয় আরহাম। কেননা মেহেভীন নিজ থেকে কখনোই তার কাছে খেতে চাইনি। আরহাম কিছু না ভেবে মেহেভীনকে চামচ দিয়, সুপটুকু খায়িয়ে দেয়।

আরহাম ও মেহেভীনের কান্ড দেখে, আরিয়ান স্মিত হেসে বলে,

‘ ভাই কি মোহাব্বত নজর যেন লাগে। ‘

আরহাম উত্তর দিলো না,কেননা সে জানে আরিয়ান সবসময় তার মজা উড়াবেই। মেহেভীন খেতে খেতে খেয়াল করছে, অভ্র খাচ্ছে না। রাগে চোখজোড়া লাল হয়ে গেছে একপ্রকার। বেচারা না পারছে সহ্য করতে, না পারছে টেবিল ছেড়ে উঠে যেতে। আরহাম এবং মেহেভীনকে এইভাবে দেখে মন ক্ষুন্ন হলো মায়রার। আচ্ছা সে ও তো প্রেগন্যান্ট তাহলে অভ্র কেন তার আরহামের মতো যত্ন নেয়না? মায়রার নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে বসলো।
আজ কেন মেহেভীনকে মায়রার থেকেও বেশি সুখী দেখাচ্ছে,যেখানে মায়রার সুখে থাকার কথা ছিলো। মায়রা কিছু একটা ভেবে বলে,

‘ আরহাম ভাইয়া তো মেহেভীন মানে ভাবির ভালোই খেয়াল রাখে। অভ্র ও ঢাকাতে আমার এইরকম খেয়াল রাখতো। এইসময়টা আমাকে তো অভ্র চোখেই হারাতে চাইতো না। ‘

অভ্র অবাক পানে মায়রার দিকে তাকায়, যার অর্থ হচ্ছে এতোগুলো মিথ্যে মায়রা কেন বললো? সবার আর বুঝতে বাকি রইলো না মায়রাও প্রেগন্যান্ট।
আরিয়ান অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘ বাহ ভাই তোর ঘরেও যে এইরকম সুখসংবাদ আসতে চলেছে,তা বললি না যে? এতোটাই পর আমরা? ‘

অভ্র কিছু বলতে চাইবে, তার আগেই মায়রা লজ্জামাখা কন্ঠে জবাব দিলো, ‘ আসলে অভ্র বরাবরই লাজুক। তাই আসলে বলতে পারেনি। ‘

মেহেভীন শক্ত করে নিজের জামা চেপে ধরে আছে। চোখ তার ছলছল করছে৷ হয়তো এখন আখিজোড়া থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে মেঝেতে। মেহেভীন কোনরকম উঠে দাড়িয়ে বললো,

‘ আমার খাওয়া হয়ে গেছে। আমি আসছি। ‘

মেহেভীনের দিকে অভ্র অপরাধীর ন্যায় তাকালো। মেহেভীন তা উপেক্ষা করে, নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। তখনি হুট করে অভ্রের ফোন বেজে উঠলো। অভ্র ‘ এক্সকিউজ মি ‘ বলে সাইডে চলে গেলো। অভ্র তাকিয়ে দেখে রাইসার ফোন।যে সম্পর্কে অভ্রের খুব কাছের বন্ধু হয় । রাইসা হঠাৎ ফোন করলো কেন? রাইসা মেহেভীন এবং অভ্রের ব্যাপারে সবকিছুই জানতো। এমনকি ক্লাবে রাতের ঘটনা সম্পর্কেও সে মোটামোটি জানে। রাইসা আপাতত তার কাজের জন্যে ক্যানাডা গিয়েছে। রাইসাকে এতোদিন পর, ফোন করতে দেখে অভ্র অবাক হয়ে ফোনটা রিসিভ করে বললো,

‘ রাইসা তুই? ‘

‘ মেহেভীন আর তোর সম্পর্কে সবাই শুনলাম। তুই মেহেভীনকে ইউস করেছিস অভ্র? ছিহ। আজকে আমি আমাদের আরেক বন্ধু কায়েফ এর থেকে সব জেনে, তোকে ফোনটা দিলাম। তুই এতোটা নিঁখুতভাবে কি করে অভিনয় করলি অভ্র? তোর অভিনয় দেখে মনে হতো তুই সত্যি ভালোবাসতি মেহেভীনকে। ‘

অভ্র উদাসীন গলায় বললো,

‘ হুম বুঝলাম। আমি খারাপ। আমি অভিনয় করি। কিন্তু মেহেভীন তো খুব সুখেই আছে। তুই জানিস মেহেভীন বিয়ে….’

বাকিটুকু বলার আগেই, রাইসা বললো,

‘ আমি এখন সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি না। তুই জানিস তুই ঠিক কতটা অপরাধ করেছিস মেহেভীনের সাথে? সে সম্পর্কে একটুও ধারনা আছে তোর? সেদিন হোটেলে কি হয়েছিলো জানিস? ‘

‘ কি বলতে চাচ্ছিস তুই? হোটেলে সেদিন কি হয়েছিলো? ‘

রাইসা কিছু বলতে পারলো না তার আগেই ফোন কেটে গেলো। অভ্র বুঝলো নেট প্রব্লেম এর জন্যে ফোনটা কেটে গেছে।
_______< মেহেভীন রুমে ঢুকেই মেঝেতে বসে, ঢুকড়ে কেঁদে উঠলো। মায়রা অভ্রের সন্তানের মা হতে চলেছে। ভাবতেই মেহেভীনের শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। আচ্ছা মেহেভীন ও তো অভ্রের সন্তানের মা হতে চলেছে, তাহলে তার নিয়তিটা এমন কেন হলো? সে কেন পেল না তার সন্তানের মর্যাদা? মেহেভীন কান্নামিশ্রিত গলায় বললো, ' অভ্র! তুমি আজ বড্ড সুখি তাইনা? নতুন অতিথি আসতে চলেছে তোমার। সেই অতিথিকে নিয়ে তোমার কত্ত আয়োজন। তোমার এবং মায়রার সন্তান তোমার পরিচয়ে হেঁসে খেলে জীবন পার করে দিবে,কিন্তু আমার সন্তান কি করবে? আজ না হয় সে আরহাম সাহেবের সন্তানের পরিচয়ে ধীরে ধীরে আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে, কিন্তু যখন সে এই পৃথিবীতে আসবে,তখন তো সবাই সব কিছু জেনে যাবে। সবাই জানবে আমার সন্তানের কোন বাবার পরিচয় নেই। কেউ তো আসল সত্যটা জানতে চাইবে না অভ্র। এই সমাজটা তো আমার এবং আমার সন্তানের দিকে আঙ্গুল তুলবে। নিষ্ঠুর এই সমাজে আমার সন্তানের উপাধি হবে, সে অবৈধ সন্তান। আমি কী করে তা সহ্য করবো? ' মেহেভীনের চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। আরহাম ' মেহেভীন ' বলে রুমে ঢুকতেই, মেহেভীন পিছনে ঘুড়ে গেলো। আরহাম দুধের গ্লাস টা রেখে বললো, ' নীচে তো খেলে না। এখন এই দুধটা চুপচাপ খেয়ে নাও। ' মেহেভীন ভেজা গলায় বললো, ' আমি এখন খাবো না। প্লিয আমাকে জোড় করবেন না। ' কথাটি বলেই মেহেভীন তার চোখের জল আরহামের থেকে আড়াল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, যদিও আরহামের চোখে তা এড়ায়নি। আরহামের মনে প্রশ্ন জাগে মেহেভীন কাঁদছিলো? কেন কাঁদছিলো? তাহলে কি মেহেভীনের মন খারাপ। আরহাম কিছু একটা ভেবে,মেহেভীনের দিকে এগিয়ে এসে বললো, ' ওকে দুধ খেতে হবে না। চলো আমার সাথে। ' ' কোথায়?' ' একটা জায়গায়। ' 'কিন্তু কোন জায়গায়? ' সঙ্গে সঙ্গে আরহাম মেহেভীনের ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে, নিচু গলায় বললো, ' হুশ কোন কথা নয়। চলো আমার সাথে। নো কুয়েশচেন। ' আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে, বাইরের দিকে নিয়ে যায়। মেহেভীন বুঝতে পারছে না আরহাম তাকে হঠাৎ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? মেহেভীনকে অবাক করে দিয়ে, আরহাম...... #তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 #পর্ব-৩১ #Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা) মেহেভীনকে সম্পুর্ন অবাক করে দিয়ে, আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে হোটেলের পাশের সাইডের পুলের দিকে নিয়ে আসে।এই সাইডে তেমন কেউ আসেনা। আরহাম জায়গাটা কিছুক্ষন এর জন্যে ভাড়া করে নিয়েছে।ছোট্ট ছোট্ট ক্যান্ডেল পুলের পানিতে ভেঁসে চলেছে। সবমিলিয়ে মনোরম একটা পরিবশ তৈরি হয়ে গেছে মুহুর্তেই।তার পাশে একজন লোক হাতে দুইশোর মতো গ্যাসের বেলুন একসাথে রশিতে বেঁধে নিজের হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবগুলো বেলুনে ছোট্ট করে লেখা রয়েছে, ' New baby is Coming, only after 4 months. just waiting. ' লেখাটা পড়ে মেহেভীন তার পেটে হাত রাখে। দেখতে দেখতে পাঁচটা মাস কেটে গেছে তার সন্তান,তার গর্ভে বেড়ে উঠেছ। আর মাত্র ৪ মাস পরেই, সে পৃথিবীতে চলে আসবে। কথাটি ভাবতে গিয়ে, মেহেভীনের চোখে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। মেহেভীনের চোখ অশ্রুটুকু আরহাম সযত্নে মুছে দিয়ে, বলে, ' কাঁদছো কেন স্টুপিড মেয়ে? সবাইকে কাঁদলে মানায় না। কিছু কিছু মানুষকে হাসলেই শুধু মানায়। তারা কাঁদলে, বুকের ভিতর ধক করে উঠে। তাদের মধ্যে তুমিও অন্যতম। জানো মেহেভীন আমার কি মনে হয়? আমার কাছে যদি এখন ক্ষমতা থাকতো, তাহলে তোমার কান্না করাটা আমি দন্ডনীয় অপরাধ করা দিতাম। ' আরহামের কথা শুনে, ভরকে যায় মেহেভীন নামক রমনী। যুবক প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্যে বলে, ' তুমি জানো না? এখন যদি তুমি মন খারাপ করো থাকো,তাহলে ভিতরে যে ছোট্ট একটা প্রান বেড়ে উঠছে, তার কতটা ক্ষতি হবে? জানো তো? ' মেহেভীন মাথা নাড়ায়। আরহাম বেলুনওয়ালা লোকটার থেকে, সবগুলো বেলুন নিয়ে নিজের হাতে নিয়ে আসে। অতঃপর মেহেভীনের কাছে গিয়ে বলে, ' এখন এই বেলুনগুলো আকাশে তুমি উড়িয়ে দাও। ' মেহেভীন অবাকের সুরেই বললো, ' আমি কেন? ' । আরহাম ঠোটের কোণে চমৎকার হাঁসি ঝুলিয়ে বলে, ' এই বেলুনগুলোর সাথে তোমার সমস্ত দুঃখ কষ্ট আকাশের কাছে বিলিন করে দাও। আকাশ তো বিশাল। এই বিশাল আকাশে দেখবে তোমার এক মুঠো দুঃখ-কষ্ট মুহুর্তেই বিলিন হয়ে যাবে। জীবনটা অতি ক্ষুদ্র। এই ছোট্ট জীবনে ছোট ছোট আনন্দগুলোকে আকড়ে ধরে আমাদের বাঁচতে হবে। দুঃখ কষ্টকে সাথি করলে জীববটা নরকে পরিনত হয়ে যায়। ' আরহামের কথা শুনে মেহেভীনের ঠোটেও হাসির রেশ ধরা দেয়। মেহেভীন আরহামের থেকে বেলুনগুলো নিয়ে, একসাথে তা আকাশে ছেড়ে দেয়। বেলুনগুলো আকাশের ঠিকানায় উড়ে চলেছে। মেহেভীন জোড়ে চিল্লিয়ে বলে, ' বেবী তোমার মা তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি করে চলে আসো তোমার মায়ের কাছে। ' কথাটি বলেই মেহেভীন হাত তালি দিতে থাকে। আরহাম ও মুচকি হেসে মেহেভীনের সাথে হাতে তালি দেয়। সঙ্গে সঙ্গে মেঘের গর্জন করে উঠে। নভেম্বর মাস এখন। শীত প্রায় চলে এসেছে বলতে গেলে। এইসময় হঠাৎ বৃষ্টি আশাজনক নয়। বৃষ্টি ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করে দেয়। মেহেভীন বৃষ্টি দেখে পুলের দিকে গিয়ে, দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করতে থাকে। মেহেভীনের বরাবরই বৃষ্টি পছন্দ, তবে এতোদিন কষ্টের ভেড়াজালে সে তা প্রকাশ করতো না। আজ আরহামের কথা শুনে, তার বৃষ্টিতে বড্ড ভিজতে ইচ্ছে করছে। আরহাম মেহেভীনকে এইভাবে ভিজতে দেখে বলে, ' মেহেভীন? চলো এখন হোটেলে। অসময়ের বৃষ্টি। জ্বর-ঠান্ডা লেগে যাবে তো। লেটস গো। তাড়াতাড়ি চলো। ' আরহাম কথাটি বলে এগোতে নিলে, মেহেভীন আরহামের হাতজোড়া ধরে ফেলে। মেহেভীন এইভাবে হাত ধরে রাখায়, আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকাতেই, মেহেভীন বললো, ' একটু বৃষ্টিবিলাশ করলে ক্ষতি কি আরহাম সাহেব? বড্ড ভালো লাগে আমার বৃষ্টি। আপনার বুঝি ভালো লাগেনা? আপনিই তো বললেন ছোট ছোট আনন্দকে পুজি করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। ধরে নিন আমার আনন্দ এই বৃষ্টির মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ' মেহেভীনের কথা শুনে আরহাম মেহেভীনকে বাঁধা দিলো না। বরং স্মিত হেসে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে রইলো। আরহামের থেকে সায় পেয়ে, মেহেভীন খুশিতে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে,বৃষ্টি বিলাশ করতে থাকে। নিজের আখিজোড়া বন্ধ করে ফেলে। ঠোটের কোণে মিষ্টি হাঁসি লেগে আছে। মেহেভীনের এইরকম মিষ্টি হাঁসি দেখে আরহাম আস্তে করে বলে, ' ওগো বৃষ্টিবিলাশিনী দেখতে পাচ্ছো? হাসলে কিন্তু তোমার মুখে অদ্ভুদ মায়া এসে ভীর করে। এই অদ্ভুদ মায়ার ভীরে যেকোন যুবক হারিয়ে যাবে, তাহলে সবসময় হাঁসো না কেন? স্টুপিড মেয়ে একটা। ' আরহাম গুন গুন করে গেঁয়ে উঠে, রাতেরই এ আঁধারে অজানা ছোঁয়া মায়াবী চোখে কি মায়া যেন গোধূলি আবীর মাখা রাতেরই এ আঁধারে অজানা ছোঁয়া মায়াবী চোখে কি মায়া যেন গোধূলি আবীর মাখা কি নেশা ছড়ালে! কি মায়ায় জড়ালে? কি নেশা ছড়ালে! কি মায়ায় জড়ালে? আরহামের গানে মেহেভীন আরহামের দিকে তাকায়। আরহামের সুরে অদ্ভদ ভালো লাগা কাজ করছে মেহেভীনের। আরহামও সম্পুর্ন ভিজে যাচ্ছে। আরহাম মেহেভীনের দিকে এগোতেই, মেহেভীন পিছাতে গিয়ে, ধপ করে পড়ে যেতে নিলে, আরহাম মেহেভীনকে নিজের দিকে টেনে নেয়। মেহেভীনের ভেজা চুল আরহামের মুখে আচড়ে পড়ছে। আরহাম আস্তে আস্তে চুলগুলো ধীরে ধীরে মেহেভীনের কানের কাছে গুজে দিতে থাকে। আরহামের তপ্ত নিঃশ্বাস মেহেভীনের গলায় উপচে পড়ছে। মেহেভীনের মনে হচ্ছে এই নিঃশ্বাস সে আগেও তার গলায় অনুভব করেছিলো,কিন্থ তা কীভাবে সম্ভব? আরহামের কেন যেন ঘোরের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির বেগ সময়ের সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরহাম মেহেভীনের ঠোটের দিকে এগোচ্ছে। মেহেভীন সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেললো। তার৷ চিকন ঠোটজোড়া কাঁপছে অনাবরত। মেহেভীন ঠোট দিয়ে টু শব্দও করতে পারছে না। শরীরে যেন কোনপ্রকার শক্তি সে পাচ্ছে না। আরহাম কিছু একটা ভেবে, নিজেকে সামলিয়ে নেয়। আরহাম মেহেভীনের থেকে দূরে সরে গিয়ে বলে, ' অনেক ভেঁজা হয়েছে। এইবার রুমে চলো,নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে। ' আরহাম কথাটি বলেই দ্রুত রুমের দিকে যেতে থাকে। মেহেভীনের লজ্জ যেমন হচ্ছে, তেমন অস্বস্হিও হচ্ছে। সে নিজেকে বার বার বকা দিতে থাকে। সে কেন আরহামকে বাঁধা দেয়নি? মেহেভীনের এক মুহুর্তের জন্যে মনে কি আরহামের জন্যে অনুভুতি জন্ম নিয়েছিলো? মেহেভীন নিজের মনকে বুঝিয়ে বলে, ' এইসব কি ভাবছিস তুই মেহু? ছিহ। এইসব ভাবাও পাপ। আরহাম সাহেবের জন্যে কোনপ্রকার অনুভুতি জন্ম নিতে পারে না আমার। আমি আমার জীবনে আর কখনো কাউকে জড়াবো না। সবথেকে বড় কথা আরহামের সাহেবের মনে অন্য কেউ আছে। ' মেহেভীন নিজের মনকে শত বুঝালেও,সে একটু হলেও বুঝতে পারছে তার মনে অন্যরকম করে সুপ্ত অনুভুতির আগমন ঘটছে, যা মেহেভীনকে আবারোও কষ্ট দিবে। মেহেভীন কাঁপা গলায় বললো, ' মানুষ ভূল জীবনে একবারই করে। আমার কাছে ভালোবাসা তেমনই একটা ভূল। আমি জেনে বুঝে কিছুতেই পুনরায় ভূল করবো না। ' মেহেভীন ও আস্তে আস্তে করে রুমের দিকে পা বাড়ালো। অভ্র এতোক্ষন নিজের রুমের জানালা দিয়ে, সবকিছুই দেখছিলো। আরহাম এবং মেহেভীনের কাছে আসার প্রতিটা মুহুর্তেই অভ্রের নজরে ভালো করেই এসেছে। অভ্র নিজের মাথাটা ঠিক রাখতে পারছে না। তার মাথায় যেন আগুন ধরে গেছে। মেহেভীন তো একদিন তার ও এতোটা কাছে এসেছিলো। মেহেভীন তার স্ত্রীও ছিলো বটে, সে আজ অন্য কারো সাথে ঢলাঢলি করছে, তা কিছুতেই সে দেখতে পারছে না। অভ্র তার হাতে থাকা ফুলদানীর বাস্কটা সপাটে ছুড়ে ফেলে। এদিকে মায়রা ঘুমিয়ে ছিলো, কিছু পড়ার আওয়াজে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মায়রা ঘুম থেকে উঠে দেখে অভ্রের হাত থেকে ফিংকি রক্ত মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছে। অভ্রের চোখ-জোড়া লালাটে আকাড় ধারণ করেছে। অভ্র কেমন একটা হিংস্র মনে হচ্ছে। মায়রা থমথমে গলায় বললো, ' অভ্র...' সঙ্গে সঙ্গে অভ্র চিৎকার করে বলে, ' কেন? আজ কেন মেহেভীন আমার থেকে দূরে? আমি যে সহ্য করতে পারছি না। একদমই করতে পারছি না। আমি পারছি না আমার প্রাক্তন স্ত্রী আজ অন্য কারো এতোটা কাছে। আমি পারছি না মায়রা? আমার এতোটা অসহায় কোনদিন ও লাগেনি। ' অভ্র ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে কথাটি বলে। মায়রা মুখ চেপে কান্না করে। সে কিছুতেই ভাবতে পারেনি,অভ্র মেহেভীনের প্রতি এতোটা দূর্বল হয়ে যাবে। ______ রাইসা নিজের রুমে বসে গভীর ভাবনায় ঢুবে আছে। অভ্র এবং মেহেভীনকে সে অনেকটা কাছ থেকে দেখেছিলো। অভ্র শুধুমাত্র মায়রাকে জেলাস ফিল করানোর জন্যে, মেহেভীনকে শুধুমাত্র ব্যবহার করেছে, এই বিষয়টা সম্পুর্নভাবে রহস্যজনক লাগছে তার। তাছাডা রাইসার কাছে মনে হচ্ছে অভ্র যা করছে কিংবা ভবিষ্যৎ এ করবে,তা সত্যি ভয়ংকর। রাইসা সেদিন হোটেল রুমের সম্পুর্ন কাহিনী জানে। মেহেভীন এবং অভ্র সেদিন নেশার ঘোরে কাছাকাছি এসেছিলো, তা অভ্র নেশার ঘোরে ভূলে গেলেও, মেহেভীন রাইসাকে ঠিকই কথাটি জানিয়েছিলো। রাইসা বুঝতে পারছে, মেহেভীনের সাথে বড় অন্যায় করা হয়েছে। মেয়েটার মুখ ভেসে উঠলেই, রাইসার বড্ড খারাপ লাগে। রাইসা অভ্রকে পুনরায় ফোন করে। _____ মায়রা উঠে দাঁড়িয়ে, অভ্রের কলার চেপে ধরে বলে, ' তুমি এই কথা বলছো অভ্র? তুমি কী করে বলতে পারলে অভ্র? তোমার এখন তোমার প্রাক্তনের প্রতি এতোটাই দরদ উতলে পড়ছে যে, তার সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারছো না তুমি?কিন্তু কেন অভ্র? জবাব দাও অভ্র? আচ্ছা তুমি কি মেহেভীনকে ভালোবাসো? ' মায়রার কথায় মুহুর্তেই অভ্র শান্ত হয়ে যায়। তার মুখে নেমে আসে অন্ধকার। অভ্রকে চুপ থাকতে দেখে,মায়রার মেজাজটাই বিঘড়ে যায়। মায়রা অভ্রের শার্ট শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে, ' কি হলো অভ্র? তুমি কথা বলছো না কেন? আমাকে জবাব দাও। দেখো আমি অনেক সহ্য করেছি আর পারছি না। তুমি কী মেহেভীনকে ভালোবাসো? ' অভ্র কী জবাব দিবে এখন? এই প্রশ্নের উত্তর তো সে নিজেও জানে না। অভ্রকে চুপ থাকতে দেখে মায়রা আশাহত হয়। বুক ফেটে কান্না আসে তার। তার এখন সব রাগ -ক্ষোভ উতলে উঠছে মেহেভীনের উপর। মেহেভীন নামক কাটাটাই তার জীবনের সব সুখ নিমিষেই শেষ করে দিচ্ছে। মায়রা গটগট করে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। মায়রা বেডিয়ে যেতেই,অভ্রের ফোন বেজে উঠে। অভ্র তাকিয়ে দেখে রাইসার ফোন। অভ্র রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে, রাইসা হতদন্ত হয়ে বললো, ' অভ্র আমি কাল বা পরশুর মধ্যে দেশে ফিরছি৷ তোর সাথে জরুরী কথা আছে আমার। ' 'কি এমন জরুরী কথা? ' 'সেসব বলার সময় আমার নেই। শুধু এইটুকু জেনে রাখ। অনেক বড় কথা তোকে বলার আছে,যা সামনাসামনিই বলতে হবে। ' রাইসা কথাটি বলেই ফোন কেটে দেয়। অভ্র বুঝতে পারছে না রাইসা হঠাৎ কি বলতে চায়? ______ আরহাম সোফায় গড়াগড়ি করছে। তার চোখে ঘুম যেন ধরাই দিচ্ছে না। মেহেভীন রুমে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আরহামের কেমন যেন অস্বস্হি কাজ করছে। মেহেভীনকে তাকে কোনভাবে ভূল বুঝেছে? তখনি আরহামের কানে মেহেভীনের আর্তনাদ ভেঁসে আসে। #তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 #পর্ব- ৩২ #Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা) মেহেভীনের আর্তনাদ কানে আসতেই,আরহাম লাফিয়ে উঠে বসে। মেহেভীনের কাছে যেতেই, মেহেভীমের ঘুমের মাঝেই আরহামের হাতজোড়া খামচে ধরে, ব্যাথায় কুকড়ে উঠে।আরহাম বুঝতে পারছে না হঠাৎ মেহেভীনের কিসের ব্যাথা উঠলো? আরহাম আস্তে ধীরে মেহেভীনকে খাটের কিনারে হেলান দিয়ে, শুয়ায়। অতঃপর মেহেভীনের গালে হাত রেখে বলে, ' মেহেভীন হঠাৎ কি হলো তোমার? তুমি ঠিক আছো তো? ' মেহেভীন নিজের আখিঁজোড়া আস্তে আস্তে খুলে ধীর গলায় বললো, ' আরহাম সাহেব! ' 'হুম? ' 'বেবী আমার পেটে কিক করলো মনে হচ্ছে। বেবী নড়ছে আরহাম সাহেব। আমি অনুভব করতে পারছি। ' মেহেভীন ব্যাথা পেলেও, তার চোখ-মুখে খুশির আভাশ পাওয়া গেলো। মেহেভীনের কথা শুনে আরহাম মহানন্দনে বললো, ' সত্যি? বেবী নড়ছে? ' মেহেভীন খুশিতে মাথা নাড়ায়। আরহাম নিজের অজান্তেই তার কান পেতে দিলো মেহেভীনের দিকে ঝুঁকে, বেবীকে একটু অনুভব করার প্রচেস্টায়। মেহেভীনের থেকে কথাটি শুনে আরহামেরও বড্ড ইচ্ছে হলো, বেবীকে একটু অনুভব করার। মেহেভীন অদ্ভুদ পানে আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরহাম মনোযোগ সহকারে মেহেভীনের পেটে তার কান পেতে রয়েছে একটুখানি বেবীটাকে অনুভব করার প্রচেস্টায়। মেহেভীনের পেটটাও ভারী হয়েছে আগের তুলনায়, যদিও বেশি নয়।আরহাম একটু হলেও বুঝতে পারছে, বেবী সত্যি নড়ছে। এই মুহুর্তটা যেন, তার কাছে সত্যি সবথেকে শ্রেষ্ট মুহুর্ত। আরহাম উঠে গিয়ে, মেহেভীনের হাত ধরে খুশিতে বলে, ' মেহভীন আমি অনুভব করতে পারছি। আমি সত্যি পারছি। বেবী তার ছোট ছোট হাত-পা দিয়ে কেমন করে নড়ছে। আমার পক্ষে তো অপেক্ষা করা যেন এখন থেকে অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে। কবে বেবী আসবে, কবে আমি আমার হাতে তাকে একটু ছুঁয়ে দেখবো। সেইদিন কবে আসবে মেহেভীন? চারটা মাসেও যেন আমার কাছে এখন চার যুগ মনে হচ্ছে। আচ্ছা বেবী যখন হবে তখন তার নাম কি রাখবো আমরা? ' আরহাম নিজের মনে কথাগুলো বলেই যাচ্ছে। বেবী পৃথিবীতে আসলে, কত প্ল্যান তার। আরহাম যেন ভুলেই গেছে সে বাচ্ছাটার আসল বাবা নয়। মেহেভীন বুঝতে পারছে আরহামের টান হয়ে গেছে বাচ্ছাটার প্রতি। আরহামকে থামাতে হবে,নাহলে আরহাম আরো অনেক ভেবে ফেলবে, যা পরবর্তিতে কষ্ট দিতে পারে আরহামকে,যা মেহেভীন কিছুতেই চায়না। আরহাম আবারোও বললো, ' আচ্ছা বেবী আমাকে কি নামে ডাকবে? আমি বরং বেবীকে বলবো আমাকে ভালো বাবা বলে ডাকতে। ভালো না নামটা? আমি বেবীর জন্যে সবকিছু এনে দিবো। বেবী যা যা চাইবে সব। ' মেহেভীন থমথমে গলায় বললো, ' আরহাম সাহেব আপনি থামুন। আপনি কি ভূলে গেলেন? আমরা একটা চুক্তিতে ছিলাম। বেবীর জন্মের পরেই তো আমি এবং বেবী চলো যাবো। তাহলে শুধু শুধু মায়া কেন বাড়াচ্ছেন? সে তো অন্য কারো সন্তান। ' আরহাম কিছু একটা ভেবে রহস্যময় হাঁসি আস্তে করে বললো, 'কিছু টান তো হুট করে অজান্তেই হয়ে যায়। আর ভবিষ্যৎ এর কথা কে বলতে পারে? ' ' কি বললেন আপনি? ' ' না মানে, আমার মনে হয় না যে তোমার সাথে প্রতারণা করেছে। সে কখনোই বেবীর কোনপ্রকার অধিকার পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। ' আরহামের গম্ভের কন্ঠে বলা কথাটি শুনে মেহেভীন চুপ হয়ে যায়। সত্যিই তো অভ্রের কোন অধিকার নেই তার সন্তানের উপর। জন্ম দিলেই তো কেউ বাবা হতে পারেনা। আরহাম অধরের কোণে হাল্কা হাঁসি এনে বললো, 'এই কয়দিনে আমি বুঝে গিয়েছি, আমি না চাইতেও বেবীর সাথে জড়িয়ে গিয়েছি। সে এখনো পৃথিবীতে আসেনি তাতেই তার প্রতি এতোটা মায়া জন্মে গেছে, সে যখন আসবে তখন তাকে ছাড়া কীভাবে থাকবো? এইটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন। ' আরহামের কথা শুনে ভালো লাগা কাজ করে মেহেভীনের। মানুষটার এতোটা টান পড়ে গেলো? কখন কীভাবে? আচ্ছা আরহামের কি মেহেভীনের প্রতি কোন টান অনুভব হয়? মেহেভীনের কেন যেন প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হলো, কিন্তু সে তা করলো না। আরহাম বারান্দায় চলে গেলো। মেহেভীন গভীর ভাবনায় ডুব দিলো। এই মানুষটাকে একা করে সে কী করে তার সন্তানকে নিয়ে দূরে চলে আসবে? এই মানুষটা যে, নিজের অজান্তেই মায়াজালে জড়িয়ে ফেলেছে, নিজেকে। আচ্ছা অভ্র যখন জানতে পারবে এই সন্তানটি তার, তখন কি হবে? অভ্র কি সন্তানের অধিকার চাইবে মেহেভীনের থেকে? মেহেভীন তখন কি করবে? কথাটি ভেবেই শুকনো ঢুগ গিললো মেহেভীন। মেহেভীন গোলকা ধাঁধায় পড়ে যাচ্ছে। মেহেভীনের আজ বড্ড তার মায়ের কথা মনে পড়ছে। তার মা নিশ্চয় তার পাশে থাকলে, তাকে এখন সঠিক পথ দেখিয়ে দিতো। সে তো কখনোই তার মাকে পাশে পাইনি। মেহেভীন বড্ড ইচ্ছে করছে, এখন তার মা ম্যাজেকের মতো চলে আসুক এবং তার সকল সমস্যা নিমিষেই দূর করুক। মায়ের একটু ঠায় পেলেই, একজন সন্তান তো সমস্ত কষ্ট ভূলে যায়। মেহেভীন এখন সেই ঠায়টুকু পেতে ইচ্ছে করছে। ________________ রুশা মন খারাপ করে চুপটি করে নিজের ঘরে বসে আছে। মনটা যে বেহায়া, কথা সে মানেনা। আরহামকে দেখে তার কষ্টে বুকটা জ্বলে উঠে। এই কষ্টের আদোও শেষ আছে কোথাও? তাহসান রুশার রুমে কালকের প্রযেক্টের ফাইল নিয়ে এসে দেখে, রুশা চুপটি মেরে বসে আছে। তাহসান রুশার কাঁধে হাত রাখতেই, রুশা তাহসানের দিকে তাকায়। রুশার মুখখানি দেখে তাহসানের বুকের ভিতরে তলপার সৃষ্টি হয়। তাহসান রুশার অবস্হা দেখে বলল, ' রুশা তুমি এখন এইবার নিজেকে সামলাও? ' 'কীভাবে সামলাবো আমি নিজেকে? আমি যে পারছি না। আমার না মেহেভীন নামক মেয়েটার প্রতি অনেক হিংসা হয়। কি আছে ওই মেয়েটার মাঝে, যার জন্যে স্যার মেয়েটাকে এতোটা ভালোবাসে। আমার মাঝে কি সেই গুনগুলো নেই? কেন নেই আমার মাঝে।? ' তাহসান রুশার পাশে বসে বলে, ' রুপ-কিংবা গুন দেখে ভালোবাসা হয়না। ভালোবাসা তো এমন এক অনুভুতি যা হুট করে যে কারো প্রতি যখন-তখন চলে আসে। ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট কারণ থাকে না।' রুশা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। তাহসান রুশার দিকে টিস্যুর এগিয়ে বলে, ' রুশা তুমি অন্তত প্লিয় কেঁদো না। দেখো আল্লাহ নিশ্চয় সর্বশ্রেষ্ট পরিকল্পনাকারী। তিনি যখন আরহামের জন্যে তোমাকে রাখেননি, তাতে নিশ্চয় কিছু না কিছু ভালো হবেই। দেখবে আল্লাহ তোমার জন্যে উত্তম কিছুই নির্বাচন করেছেন। তুমি শুধু দৃঢ় মনোবল রাখো। ' তাহসানের্ কথায় কিছুটা ভরসা পায় রুশা। _____ সকাল হতেই মেহেভীন বারান্দায় হাটতে বের হয়। আরহাম তার অফিসের কলিগদের সাথে অনেক আগেই,প্রযেক্টের কাজে বেড়িয়ে গেছে। তখনি একজন স্টাফ এসে,মেহেভীনের হাতে একটা পার্সেল দিয়ে বলে, ' ম্যাম আপনার নামে কে যেন কুড়িয়ারে পার্সেল পাঠিয়েছে৷ টেক ইট৷ ' ।স্টাফের কথা শুনে, কিছুটা অবাক হয়ে মেহেভীন পার্সেলটা নেয়। পার্সেটা খুলেই দেখে ছোট্ট একটা চিরকুট। তার পাশেই অনেকগুলো লাল টকটকে গোলাপ ফুল। ফুলগুলো এতেটাই সুন্দর যে, মেহেভীনের মুখে অজান্তেই হাঁসি ফুটে উঠে, তা দেখে। মেহেভীন চিরকুট খুলে দেখে তাতে লেখা, ' লাল টকটকে গোলাপের মতো সবসময়ই তোমার মুখশ্রীতে যেন হাঁসিতে খুশির ঝলক ফুটে উঠে। ওগো প্রেয়সী সবসময় মনমরা হয়ে থাকো কেন? তুমি কি বুঝো না? তোমার কষ্টগুলো যে আমাকেও খুব করে পোড়ায়। ' মেহেভীন এইবার কেন যেন চিরকুট টা ছুড়ে ফেলে দিলো না। তার বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে কে এই চিরকুটের মালিক। সঙ্গে সঙ্গে মেহেভীনের ফোনের মেসেজের টং টা বেজে উঠলো। মেহেভীন মেসেজ চেক করে দেখে, অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে, 'গোলাপ ফুল দেখে তোমার মুখে যেই হাঁসিটা লেগে ছিলো, তা যেন সর্বদা বিরাজমান থাকে। ' মেসেজটা দেখে আরেকদফা চমকে উঠে মেহেভীন। তার মানে যে এই চিরকুটটা দিয়েছে, সে এখানেই আছে। কথাটি ভেবেই মেহেভীন চারদিকে তাকাতে থাকে,কিন্তু আফসোস কেউ নেই। সঙ্গে সঙ্গে আরেকবার মেসেজ আসে। মেহেভীন মেসেজ টা পড়ে দেখে তাতে লিখা, ' আমাকে শত খুঁজেও তুমি পাবে না প্রেয়সী। আর শুধু কিছুটা প্রহরের অপেক্ষা, তারপরেই আমি তোমার কাছে নিজেকে ধরা দিবো। ' মেহেভীন মেসেজটা পড়ে, আশ্চর্যের চরম সীমায় পৌঁছে যায়। তার মানে যে এসব করছে, সে এইবার নিজেকে সামনে আনবে, কিন্তু কীভাবে? মেহেভীন যেই নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছিলো, সেই নাম্বারে ফোন করে, কিন্তু বরাবরের মতো সে আশাহত হয়। নাম্বার বন্ধ! তখনি একটা গাড়ি গেট দিয়ে প্রবেশ করে। মেহেভীন বুঝতে পারলো আরহাম চলে এসেছে। আরহাম গাড়ি থেকে ফরমাল লুকে বেড়িয়ে, তাহসানের সাথে কথা বলতে বলতে হাটছে। আরহামকে দেখে মেহেভীনের চোখ যেন আটকে যায়। লোকটাকে ফরলাম ড্রেসাপে যে কারো চোখ আটকে যাবে। মেহেভীনকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, আরিয়ান মেহেভীনের কাছে এসে বলে, ' বইন রে চোখটা নামা এইবার। তোরই তো নকল বর। যখন-তখন দেখতে পারবি। ' মেহেভীন কথাটি শুনে আরিয়ানকে মারতে শুরু করে দেয়। আরিয়ান হু হা করে হেঁসে উঠে। ________ আরহাম যেহুতু দুপুরের মাঝেই মিটিং টা শেষ করে, ফিরেছে তাই সবাই মিলে ঠিক করেছে, আজকে সবাই পার্বত্য অঞ্চলটা ঘুড়ে দেখবে। আরহাম নোয়া গাড়ি ভাড়া করে নেয়। ফ্রন্ট সিটে আরহাম ও মেহেভীন একসাথে বসেছে। তার পরের সিটে মায়রা এবং অভ্র বসেছে। অভ্র ও মায়রাও মেহেভীনদের সাথে যাচ্ছে। তার পিছনে আরিয়ান ও মজনু বসেছে। তাহসান ও রুশাও যাচ্ছে। রুশা যদিও আসতে চাইছিলো না তবুও তাহসান জোড় করায় এসেছে। গাড়ি তার আপনগতিতে চলতে শুরু করে দেয়। অভ্র আজ নিষ্চুপ, তার মনে আজ এক্টাই প্রশ্ন উঁকি দেয় সে কি ভালোবাসে মেহেভীনকে? অভ্র নিষ্পলকভাবে মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে থাকে। মায়রার নজরে তা ঠিকই পড়েছে,তবুও সে চুপ থাকে। মেহেভীন তো অভ্রকে বার বার এড়িয়ে চলার চেস্টা করছে। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকায়। মানুষটা নিজের মতো ড্রাইভিং করছে। কালকের পর থেকে মেহেভীনের শুধু একটা কথায় মনে পড়ছে, ' আরহাম সাহেব! জীবনটা বড্ড এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কি করবো আমি এখন? ' গাড়ি চলছে আপন গতিতে, আরিয়ান কিছুক্ষন পরেই বলল, ' ভাই বড্ড বোরিং লাগছে জার্নিটা। পরিবেশ কেমন থমথমে একটা গান তো প্লে কর। ' আরিয়ানের কথা শুনে, আরহাম গান ছেড়ে দেয়, কিছু কথার পিঠে কথা তুমি ছুঁয়ে দিলেই মুখরতা হাসি বিনিময় চোখে চোখে মনে মনে রয় ব্যাকুলতা আমায় ডেকো একা বিকেলে কখনো কোনো ব্যথা পেলে আমায় রেখো প্রিয় প্রহরে যখনই মন ক্যামন করে কোনো এক রূপকথার জগতে তুমি তো এসেছো আমারই হতে কোনো এক রূপকথার জগতে তুমি চিরসাথী আমার, জীবনের এই পথে।। মুহুর্তেই পরিবেশটা মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠে। গানটা শুনে মেহেভীন আরহামে দিকে তাকাতেই,আরহাম চমৎকার মুচকি হাঁসি উপহার দেয়। মেহেভীনও তালি মিলিয়ে হাঁসে। যা নজর এরায় না অভ্রের। #তুমি_আছো_মনের_গহীনে #পর্ব- ৩৩ #Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা) চোখের সামনে নিজের প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে নিজের ভাইয়ের এতো চোখাচোখি অভ্রের কাছে অতিরিক্ত মাত্রায় বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছে। অভ্র জানে মেহেভীন এখন আরহামের স্ত্রী,তবুও প্রাক্তন স্ত্রীকে অন্য কারো সাথে দেখলে অভ্রের বুকে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়। এই ব্যাথা উৎস কি তবে ভালোবাসা? গাড়ি প্রায় পার্বত্য চট্টগ্রামে অঞ্চলে প্রবেশ করলো। এই অঞ্চলে একটা ঝর্না রয়েছে। ঝর্নাটা প্রায় সবার কাছেই বেশ পরিচিত এবং জনপ্রিয়। আরহামদের গাড়ি পাহাড়ের কাছে আসতেই, মেহেভীন চিল্লিয়ে গাড়িটা থামাতে বলে। মেহেভীনের চিল্লানাতো সবাই কিছুটা অবাক হয়। আরহাম গাড়ি থামিয়ে দেয়। গাড়ি থামাতেই, মেহেভীন গাড়ি থেকে কিছুটা হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যায়। মেহেভীনকে এইভানে বেড়োতে দেখে, আরহাম মেহেভীনকে থামাতে রাগান্বিত গলায় বলে, ' স্টুপিড মেয়ে, এইভাবে দৌড়াচ্ছো কেন? পড়ে যাবে তো। ' মেহেভীন থামে না। সে ঝর্নার দিকে ছুটে যেতে থাকে। আরহাম ও মেহেভীনের পিছনে পিছনে যেতে থাকে। মেহেভীন ও আরহাম ঝর্নার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতির অপরুপ মুগ্ধতায় তারা যেন একপ্রকার ঢুবে গেছে।ঝর্ণার জলরাশি উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে। জলধারা নীচে নেমে যাচ্ছে উচু পাহাড় গড়িয়ে। ঝর্ণার কাছে দাড়ালেই দেহ মন ভরে উঠছে পবিত্র স্নিগদ্ধতায়। মেহেভীনের কাছে ঝর্ণার সৌন্দর্য সম্পর্কে যতটুকু কল্পনা ছিলো তার থেকেও অধিক সুন্দর ঝর্নাটি। ঝর্নাটির কাছা-কাছি অনেকগুলো পাহাড় রয়েছে। মেহেভীন কছর্ণা পর্যন্ত যাতায়াতের উচুনিচু রাস্তা আর পাশের তাকালেই সে বুঝতে পারে, পাহাড় তাকে যেন এনে দিচ্ছে রোমাঞ্চকর অনুভুতি। বাকিরাও চলে আসে ততক্ষনে। সকলেই পরিবেশটা বেশ উপভোগ করছে। আরিয়ান ক্যামেরা নিয়ে চারদিকে ছবি তুলছে। রুশা ও তাহসান নিজেদের মাঝে কথা বলছে। যদিও রুশা চুপ। তাহসানই কথা বলে রুশার মন ভালো করার চেস্টা করছে। এতো সুন্দর পরিবেশ দেখে, মায়রা নিজেকে সামলাতো পারলো না, অভ্রের হাত ধরে মহান্দনের সাথে বললো, ' অভ্র তোমার কিছু মনে পড়ে? আমরা যখন বিদেশে ছিলাম,তখন এইরকম কত সুন্দর জায়গায় আমরা একা একা বেড়িয়ে পড়তাম। আজ যেন সবকিছুই অতীত। ' শেষের কথাটি বলতে গিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো মায়রার। অভ্রের সেদিকে খেয়াল নেই, সে তো অন্য চিন্তায় মগ্ন, তার দৃষ্টি বরাবরের মতো সামনের দিকে মিষ্টি কপোতির দিকে। মেহেভীন বার বার ঝর্না থেকে বার বার পানি নিয়ে আরহামের মুখে ছিটাচ্ছে আরহামকে জ্বালানোর জন্যে এবং আরহাম বার বার স্টুপিড বলছে মেহেভীনকে। মেহেভীন তা শুনে খিলখিল করে হাঁসতে থাকে, মেহেভীনের সাথে তাল মিলিয়ে মৃদ্যু হাঁসে আরহাম। মেহেভীনকে এতোদিন পরে এতেটা প্রানবন্তভাবে হাসতে দেখে অভ্রের ভালালাগা কাজ করে। তার মনে শুধু একটাই কথা বলে, তার একটা ভূলের জন্যে মেয়েটার এই মায়বী হাসিটা হারিয়ে গেয়েছিলো, সে যদি মেহেভীনের সাথে ভালোবাসার নাটক না করতো,তাহলে তো আজ আরহামের জায়গায় সে থাকতো। মেহেভীন সব হাসি -খুশি থাকার কারণ অভ্র হলে কি খুব ক্ষতি হতো? অভ্রের ধ্যান ভাঙ্গে আরহামের কর্কষ গলা শুনে। আরহাম এইবার কিছুটা রেগে গেছে মনে হয়। বার বার মেহেভীনকে মানা করছে, তবুও মেহেভীন শুনে কার কথা? সে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে আরহামের উপর। ' মেহেভীনের স্টুপিডের মতো এইভাবে পানি ছিটাচ্ছো কেন? আমি একদম ভিজে গেছি। ' মেহেভীন আরহামের কথা না শুনে খিলখিল করে হেসে আরহামকে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। এইবার আরহাম ও পানি নিয়ে, মেহেভীনকে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। মেহেভীন হেসে উঠে। আরিয়ান এইরকম সুন্দর মুহুর্তাটাকে ক্যামেরাবন্দী করে ফেললো। অভ্রকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, মজনু অভ্র এবং মায়রার কাছে এসে মায়রাকে উদ্দেশ্য করে বলে, 'ভাবি গো? অভ্র ভাইজানের কি জ্বীনের আচর লাগছে নি? ' মজনুর এমন কথা শুনে, অভ্র ও মায়রা ভরকে যায়। অভ্র ধমকে বলে, ' এই তুমি বলতে চাইছো কি? ' মজনু তার ৩২টা দাঁত বের করে বলে, ' আসলে আপ্নারে যখনি দেখি তখনি খেয়াল করি আপনি খালি চাইয়া থাকেন আমার বড় ভাইজান আর ভাবির দিকে। আমাগো গ্রেরামে এক বেডা আছিলো বুঝছেন নি? নাম আছিলো মদন। দেখতে কি কালার কালা। দাঁত তো একেবারে নাই বলতে গেলে চলে। একবারে আপনার মতো। ' মানে কি বলতে চাইছো তুমি? আমি দেখতে কালো? আমার দাঁত নেই? অভ্রের রাগান্বিত গলায় বলা প্রশ্নের জবাবে, মজনু বলে, ' আরে ভাইজান আফনে আবার উল্টা বুঝেন কেন? আফনে তো মাশা-আল্লাহ হিরোর মতো দেখতে। আমি তো কইতাছি যে আপনার ওর মতো অভ্যাস। মদন সারাদিন খালি চাইয়া থাকতো হুদাই।পরে সবাই জানতে পারলাম আসলে ওর জ্বীনের আচর লাগছিলো। পরে অনেক ঝাড়া--ঝাড়ির পরে ওইডা ঠিক হয়। আমাকো গ্রেরামে কাব্লা বাবা ঠিক করে দিছিলো। ভাবি আপনার কি কাব্লা বাবার নাম্বার লাগবো? ' মায়রা হেসে দিলো। অভ্র এইসব সহ্য করতে না পেরে, বললো, ' হেই ইউ ইডিয়েট। জাস্ট গেট লস! ' ' এমন করেন কে? আজ-কাল কারো ভালোও করতে নাই। ' মজনু মুখ বেকিয়ে চলে যায়। ______ [লেখিকা ঃজান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি] আরিয়ান নিজের হাতের ক্যামেরাটা নিয়ে, ছবি তুলতে থাকে। তখনি কেউ এসে তাকে খপ করে জড়িয়ে ধরে। এইভাবে কেউ হুট করে জড়িয়ে ধরায়, আরিয়ান চমকে পিছনে তাকাতেই দেখে ফারিয়া। ফারিয়াও আরিয়ানকে দেখে একপ্রকার শকড হয়ে যায়। সে এই মুহুর্তে আশা করেনি আরিয়ানকে। ' ডাক্তার সাহেব! আপনি এখানে? ' ' আমারও একি প্রশ্ন! আপনি এখানে কি করে? ' ফারিয়া এদিকে সেদিকে তাকিয়ে শুকনো মুখে বললো, ' আসলে আপনাকে বলেছিলাম না? আমি ট্যাুরে যাচ্ছি বান্ধুবিদের সাথে। আমি আমার বান্ধুবিদের সাথে চট্টগ্রামে এসেছিলাম, আজ আমাদের এখানে শেষ দিন ছিলো। আমার ফ্রেন্ডগুলো এতো হারামি আমাকে ছেড়েই কই যেন হারিয়ে গেলো। এখন ওদের পাচ্ছিও না। আমার ফোনটাও নষ্ট হয়ে গেছে। ওরা এখন কোথায় কীভাবে আছে কে জানে? ' ' আমি যে যদি ভূল না হই,তাহলে ওরা নয় আপনি হারিয়ে গেছেন তাইতো? আপনি পথটা হারিয়ে ফেলেছেন? ' আরিয়ানের প্রশ্নে মাথা নিচু করে, ফারিয়া জবাব দেয়, ' আসলে ওদের হোটেলে রেখেই, আমি চট্টগ্রাম ঘুড়তে বেডিয়েছিলাম সকাল-সকাল। এখন পথটাও হারিয়ে ফেলেছি। তার মধ্যে কয়েকজন বাজে লোক আমার পিছন নিচ্ছিলো, তাই দৌড়ে এসে আপনাকে দেখে জড়িয়ে ধরলাম।' আরিয়ান নিজের চশমাটা পড়ে বললো, ' এইরকম বাদরামী করলে, হারিয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক।' ফারিয়া কিছুটা রেগে বললো, ' কি বললেন? আমি বাদরামী করি? ' ' সত্যিই তো বললাম। এখন ভাবুন আপনি কিকরে নিজের হোটেলে ফিরবেন? ' ফারিয়াও চুপ হয়ে যায়। সে আসলে বুঝতে পারছে না, সে কি করবে? আরিয়ান এইবার টেডি স্মাইল দিয়ে বলে, ' আমি আমার ফ্যামেলির সাথেই এখানে এসেছি।চাইলে আজকে তুমি আমাদের সাথে জয়েন করতে পারো, কালকে তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবো। ' ফারিয়া কিছু একটা ভেবে সম্মতি জানায়। এমনিতেও এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখন আরিয়ানের কথাটাতেই সায় দেওয়া ঠিক মনে করলো ফারিয়া। আরিয়ান ফারিয়াকে নিয়ে, সবার কাছে গিয়ে ফারিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দে, ফ্রেন্ড বলে। ফারিয়ার সাথেও সবাই হাঁসিমুখে মিশে যায়। _________ সবাই মিলে অনেক্ষন ঘুরাঘুরিও করলো।মায়রাও আজ প্রচন্ডভাবে সবকিছু উপভোগ করেছে, যদিও অভ্র শুধুমাত্র নিরব দর্শকের মতোই ছিলো। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। সবাই ঠিক করেছে, এখন হোটলে ফিরবে,কিন্তু পাশে নাঁচগানের আওয়াজ শুনে, মেহেভীনের খুব ইচ্ছে ছিলো একটিবার দেখার,কিন্তু আরহাম তাতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে বললো, ' একদম না। এখন আমাদের হোটেলে যাওয়া দরকার,এতোক্ষন বাইরে থাকা তোমার পক্ষে ঠিক নয় মেহেভীন। ' মেহেভীন মনটা খারাপ করে ফেলে। ফারিয়াও মেহেভীনের সাথে তাল মিলিয়ে বললো, ' শুনেছি এই অঞ্চলে অনেক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থাকেন। হয়তো তারাই নাঁচ গান করছেন। আমার কিন্তু দেখার খুব শখ। আমিও যাবো মেহেভীন আপুর সাথে। ' মেহেভীন ফারিয়ার কথা শুনে হাসিমুখে আরহামের দিকে তাকিয়ে বললো, ' দেখলেন? ফারিয়াও যেতে চায়। আচ্ছা আমিও যাই কেমন? ' মেহেভীন ও ফারিয়া একে -অপরের হাত ধরে সামনের দিকে যেতে থাকে। এক কয়েক ঘন্টায় ফারিয়া এবং মেহেভীনের ভালোই বন্ধত্ব হয়ে গেছে। ফারিয়া ও মেহেভীনকে যেতে দেখে, বাকিরাও তাদের সাথে যায়। তাদের দেখে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা তাদেরকে নিজেদের অনুষ্টানে যোগ দেওয়ার জন্যে আমন্ত্রন জানায়। তারা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হলেও, তারা শুদ্ধ ভাষাতেই কথা বলে। তারাও যোগ দেয়। মেহেভীন খেয়াল করছে, অনেক মেয়েরা আরহামের দিকে নিজেদের সাথে ফিসফিস করে বলছে, ' দেখ শহর থেকে ছেলেগুলো আসছে, কি সুন্দর দেখতে তাইনা? ' ' হু সব গুলোই সুন্দর,কিন্তু মাঝখানের টা দেখ একেবারে রাজপুত্র যেন। ' মেহেভীন খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে, তারা আরহামকে উদ্দেশ্য করেই বলছে। মেহেভীনের কেন যেন ভালো লাগছে না শুনতে। কয়েকজন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মেয়েরা নাঁচতে নাঁচতে আরহাম ও আরিয়ানকে ঘিড়ে ধরে নাঁচতে থাকে। ফারিয়া কি মনে করে যেন আরিয়ানকে টেনে নিয়ে, আরিয়ানের সাথে নাঁচতে থাকে। তার ভাষ্যমতে তার ডাক্তার সাহেবের সাথে অন্য কেউ নাঁচতে পারেনা। ফারিয়ার এমন কান্ডে আরিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। তাহসান ও রুশা বসে আছে নিজেদের মতো। অভ্র ও বেশ খানিক দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মায়রাও অভ্রের পাশে দাড়িয়ে আছে। আরহাম বেচারা পড়েছে বিপাকে। এতোগুলো মেয়ের মাঝে সে বড্ড অস্বস্হিতে ভোগছে। আরহান স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেহেভীন কেমন একটা আগুনরুপী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,ভিতরের রাগটা ঠিক প্রকাশ করতে পারছে না। মেহেভীন নিজেও জানে না কেন তার এতো রাগ হচ্ছে মেয়েগুলোর প্রতি। শুধু অসহ্য লাগছে তার কীভাবে আরহামের সাথে চিপকে নাঁচানাচি করছে। আরহাম কিছু একটা ভেবে নাঁচে যোগ দিলো। মেহেভীনের রাগ তো নাকের ঢগায় চলে আসলো, তখনি কিছু বৃদ্ধ মহিলারা এসে, মেহেভীনকে কিছু একটা বলে তাদের সাথে নিয়ে গেলো। মেহেভীনকে হঠাৎ গাঁয়েব হয়ে যেতে দেখে আরহাম নাঁচ বন্ধ করে দিলো। মেহেভীন কোথায় গেলো? চলবে......কী?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here