তুমি কবে আমার হবে পর্ব ১+২

কেমন মেয়ে তুই যে একটা ছেলেকে নিজের আচলে বাঁধতে পারিস না। মাত্রই গ্লাসে পানি নিয়ে ছিলাম। শাশুড়ীর এমন কথা শুনে হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে এই দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম। আজ আমার মনটাও এভাবে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে আছে। আবার শাশুড়ী মার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম।
~কেনো আম্মা তুমার ছেলে আর আমি তো ভালোই আছি। আর আচলে বাদতে হবে কেনো।
মা: জানি আমি কতোটা ভালো আছিস তুই। আমার সামনে মিথ্যা হাসি দেখিয়ে লাভ নেই। আমি সব বুঝি।ছেলেটা আমার আমি সবি বুঝি,আমি তর জীবনটা নিজে শেষ করে দিলাম, খুব শখ করে তকে বউ করে এই বাড়িতে এনে ছিলাম। কিন্তু আমার ছেলে কাচ কে হিরা ভেবে তার পিছে ছুটছে আর হিরাকে কাচ ভেবে দূরে সরিয়ে রাখছে, কোনটা কাচ আর কোনটা হিরা এটাই বুঝলো না।
~আচ্ছা মা তুমি বসো আমি তুমার জন্য চা বানিয়ে আনি ।
মা:সব সময় এভাবে কথা এরিয়ে যাস কেনো। পালিয়ে যাচ্ছিস।
~কি যে বলো না মা। আচ্ছা তুমি বসো আমি চা নিয়ে আসি। দুই জন বসে আড্ডা দিবো।(আমাদের মধ্যে শাশুড়ী বউমার সম্পর্ক না, মা মেয়ের সম্পর্ক)
এবার রান্না ঘরে যেতে যেতে আমার পরিচয় দেই(আমি উম্মে হাবিবা নূর। সবাই নূর বলেই ডাকে। আমি এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি হয়েছি। আমরা দুই বোন। আমি ছোট)
আমি: নাও মা চা রেডি। কেমন হয়েছে খেয়ে বলো।
মা: বস আমার পাশে।
মিম: ভাবি অ ভাবি কই তুমি,, জলদি এখানে আসো।
~মা তুমি বসো আমি দেখে আসি।
কি বেপার মিম, কি হয়েছে।
মিম: দেখনা ভাবি অনেক চেষ্টা করতেছি শাড়িটা পড়ার কিন্তু পারতেছি না, মিম কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।আচ্ছা এদিকে আসো আমি পড়িয়ে দিতেছি।
মিম: এইতো আমার কিউটি ভাবি।তারা তারি করো ভাবি এমনি তেই দেরি হয়ে গেছে।
~হুম করছি করছি শাড়ি দাও।
মিম: ভাবি..
~কি,,
মিম: তুমি একটা পার্লার খুলো না। এতো সুন্দর করে শাড়ি পরাও না। পুরা শহরের মানুষ তোমার কাছে চলে আসবে।
~আচ্ছা, এবার দেখো ঠিক আছে তো।
মিম: একদম ঠিক আছে। আচ্ছা আমি গেলাম ভাবি।স্কুলে অনুষ্ঠান মনে হয় শুরু হয়ে গেছে।
~এই দারাও, দেখি এদিকে ফিরো,কানের পিছে কালো টিকা দিয়ে দিলাম।। যেনো কারু নজর না লাগে। একদম পরির মতো লাগছে আমার ননদিনী কে।সাবধানে যেও, বলা তো যায় না বলে চোখ মারলাম।
মিম: ভাবি তুমিও না,আচ্ছা গেলাম বাই ভাবি। আম্মু আমি গেলাম বাই।
মা:মাশাল্লাহ কারু নজর না লাগে, কিছু খেয়ে যা।
মিম:না আম্মু এমনি অনেক দেরি হয়ে গেছে।
মা:আচ্ছা, সাবধানে যাস।পাগলি মেয়ে,। নূর তুই তর রুমে যা।আমি এখন একটু বাহিরে যাবো। আর অভি কে বল নাস্তা করে নিতে।
~আচ্ছা মা, এই বলে রুমে চলে আসলাম। একি রুমে তো কেউ নাই। অভি ভাইয়া কোথায়।যেখানে ইচ্ছা যাক আমার কি, এই বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি অভি ভাইয়া বেলকনিতে দারিয়ে কথা বলছে। হইতো প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে কথা বলছেন। এটা ভেবেই দীর্ঘ শাস ফেললাম। কিছু কিছু সময় চুপ থেকেই সব কিছু মেনে নিতে হয়। আমার ও এই দুই মাসে সব কিছু সয়ে গেছে। আমারও আজ কলেজের প্রথম দিন।তারা তারি রেডি হয়ে নিলাম প্রথম দিন লেট করা যাবে না। এমনি দেখি অভি ভাইয়া রুমে আসলেন। আমাকে দেখে ওনার মুখের হাসি বিলিন হয়ে গেলো।মুখে রাগি রাগি ভাব ফুটে উঠেছে। গট গট পায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। হয়তো অফিসে যাবেন।এমনটা প্রতি দিনই হয়ে আসছে, আমিও নিচে চলে আসলাম। নাস্তা অভি ভাইয়ার সামনে দিলাম। ওনি নিচের দিকে তাকিয়ে নাস্তা করে চলে গেলেন। আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শাস ফেললাম।এবার অভি ভাইয়ার পরিচয় দেই(অভি আহমেদ।একজন বিজনেসম্যান।এক ভাই এক বোন।বাকিটা গল্পে জেনে যাবেন)
কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছি, সাফার জন্য, সাফা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ওকে কল দিলাম,
~ওই কুত্তী তুই কই।
সাফা:এই তো চলে আসছি আমি পিছনে দেখ।
~এতো দেরি কেনো।
সাফা:ভাইয়া আসছে রে। অনেক দিন পর ভাইয়া কে দেখে। আসতে দেরি হয়ে গেলো।
~ওহ আচ্ছা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি বিতরে যাবি।
সাফা: চল যাওয়া যাক।
~হুম চল।
সাফা:এই দাঁড়া দাঁড়া।
~আবার কি।
সাফা: আমার কলিজা শুন না তুই যা আমি আসছি।
~কি বেপার তুই কই যাস?
সাফা:আসলে আজকে চকলেট আনতে ভুলে গেছি। একটা নেক্সট চকলেট নিয়ে আসি।
~একদম দাঁত কেলিয়ে হাসবি না। যা তারা তারি চলে আসবি এমনি লেট হয়ে গেছে।
সাফা:আচ্ছা বাবা এই যাবো আর আসবো।
~ঠিক আছে তুই যা, আমি সামনে গেলাম এই বলে সামনে হাঁটতে শুরু করলাম। গেইট দিয়ে ঢোকার সময় কার সাথে যেনো হাওয়ার বেগে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। আল্লাহ গো আমার কোমর শেষ গো।#তুমি_কবে_আমার_হবে
#পার্ট_২
লেখিকা #sabihatul_sabha

আল্লাহ গো আমার কোমর শেষ গো। ঐ কোন উগান্ডার বাচ্চারে, দেখে শুনে চলতে পারিস না। চোখ কি বাসায় রেখে এসেছিস, নাকি মাথায় নিয়ে হাঁটিস। সামনের মানুষের কথা অতো ভেবে চলতে হয়। চোখ গরম করে সামনে তাকালাম।
অচেনা ছেলে: সরি মিস,আসলে খেয়াল করিনি, একটু তারায় ছিলাম তাই।
~হা এখন তো কতো কথাই বের হবে। তারায় ছিলাম, খেয়াল ছিলনা, দেখতে পাইনি, ইচ্ছা করে ধাক্কা দিবে তার পর হাজারটা অজুহাত বের করবে।
অচেনা ছেলে: এই মেয়েতো দেখি মেজাজ টাই খারাপ করে দিবে ,মনে মনে বলছি। এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি এভাবে উল্টো পালটা কথা বলছো কেনো। আর একটা বাজে কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। দেখি কি হয়েছে তোমার।
~ দেখে শুনে চলতে পারে না কানা।
অচেনা ছেলে:থাপরিয়ে তুমার সব দাঁত ফেলে দিবো। এত বড় মেয়ে কলেজে পড়ো এখনো ব্যবহার শিখলে না।
~এখন আপনার থেকে ব্যবহার শিখতে হবে আমার।আসছে একি তো অন্যায়করছে তার উপর বড় বড় কথা বলছে।
অচেনা ছেলে : মূহুর্তে ছেলেটার চোখ লাল টকটকে হয়ে গেলো রাগে কিন্তু কিছুই বললো না।
অচেনা ছেলে:আজ আমার একটা কাজ আছে দেরি হয়ে যাচ্ছে। তানা হলে আজ তুমাকে দেখে নিতাম। এমনি ফোন বেজে ওঠলো। তোমাকে পরে দেখে নিবো বলে ফোন কানে দিয়ে ছেলেটি চলে গেলো।
~হুম তোমাকে দেখে নিবো। কেনো রে এখন দেখতে কি সমস্যা মুখে কি নিকাব করে রাখছি নাকি, বলে মুখ মুচকি কাটলো।
সাফা:কি রে নিজে নিজে কি বক বক করতেছিস।
~যেতে যেতে বলি চল।
সাফা:হুম, বল এবার?
~সব এইতো শুনলি,কিরে পেত্নীর নানী এভাবে হাসতে সোস কেনো, মুখ ভার করে অর দিকে তাকালাম।
সাফা: আমার ডাইনি রাক্ষসী ফ্রেন্ড ও যে এভাবে জগরা করতে পারে তা আজ শুনলাম। ইসস একটুর জন্য মিস করে ফেললাম রে।
~সামনের দিকে তাকাতেই দেখি একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।
অচেনা মেয়ে: হাই আমি মেঘা, আর আমার ভাই মেঘ।
~আমি আর সাফা অভাক হয়ে তাকিয়ে আছি, কারন দেখতে দুই জন একদম এক রকম। হইতো মেয়েটা আমাদের তাকানো দেখে বুঝে গেছে।
মেঘা: আমরা জমজ তাই দেখতে একি রকম বলে হেসে দিলো।
~ওহ আচ্ছা, আমি নূর আর ও আমার ফ্রেন্ড সাফা।
মেঘা: তোমরা কি নতুন, না মানে আর দেখিনি তো তাই।
সাফা:হা আমরা নতুন।
মেঘা:ফ্রেন্ড হবে।
~হুম অবশ্যই।
মেঘ: আমিও কি হতে পারি সুন্দরীরা তুমাদের ফ্রেন্ড।
মেঘা:তর এখানেও ফ্লাটিং শুরু, বলে দাঁত দাত চেপে ওর দিকে তাকালো।
মেঘ:ওরে ডাইনী আমি তো ভাব জমাচ্ছিলাম, বলে মাথা চুলকালো।
~ওদের কাহিনি দেখে সাফা আর আমি হেসে দিলাম, ওকে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড। প্রথম দিন প্রথম ক্লাস ভালোই গেলো। সেকেন্ড ক্লাস শুরু হবে।স্যার ক্লাসে আসলেন আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম খেয়াল করিনি।
সাফা:এই নূর উঠ স্যার আসছে।
~ওর কথা শুনে সামনে তাকালাম। আমি তো যেনো আকাশ থেকে পরছি। এটা স্যার?
সাফা:হুম,কলেজের প্রায় মেয়েরাই উনার প্রতি ফিদা, উনার মুড আর এটিটিউড এ নাকি মেয়েদের হার্টবিট বেড়ে যায়। উনি যখন ক্লাসে প্রবেশ করেন খুব গম্ভীর মুডে প্রবেশ করেন। প্রয়োজনের বেশি কথাও বলেন না।একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট এর হেড উনি।নাম রুদ্র চৌধুরী।
~তুই এতো কিছু জানিস কিভাবে?
সাফা:আসলে, স্যার তো ক্লাসে পড়ে বলবো।
সবাই রুদ্রকে সালাম দিলো?
রুদ্র :তো তোমরা সবাই কেমন আছো?
সবাই এক সাথে জি ভালো আপনি?
রুদ্র :ভালো, তো পড়ায় আসা যাক।পড়ার ফাকে কয়েক বার রুদ্র আর চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
ক্লাস শেষ, কলেজ ক্যান্টিনে বসে চোখ জোরা রসগোল্লার মতো বড় বড় করে তিন জন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
~আমি একটা ডোন্ট কেয়ারে ভাব নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।
মেঘা:সত্যি দুস্ত তুই স্যারের সাথে এভাবে জগরা করছোস।
মেঘ:আমি তো মরে গেলাম রে।
সাফা:হ তুই মর আমি চল্লিশা খামু।
মেঘা:তুই তো মরতে পারিস ভাই, অনেক দিন হলো চল্লিশা খাইনা, তুই মরলে অনেক দিনের আশা পূরন হতো আরকি।
~কে মরবি সেটা বড় বিষয় না, বড় বিষয় হলো খেতে পেলেই হলো।
মেঘ:তরা কেউ আমার আপন না, মেঘা ডাইনী তুই না হলে আমার মা কষ্ট করে এক সাথে দুইটা বাচ্চা পালা লাগতো না।
মেঘা: তুই না হলেই পারতি।
~একদম চুপ, এক সাথে হলেই জগরা শুরু হয়ে যায় তদের।আমি বাসায় গেলাম তরাও চলে যা। এই বলে বাসায় চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে মার রুমে আসলাম। মা মিম আসছে।
মা:কখন আসলি, মিম তো বাসায় এসে মনে হয় ঘুমাইতেছে।
~এই তো আসলাম। তুৃমি খাবার খাইছো।
মা:হুম তুই খেয়ে নে।
~মার রুম থেকে চলে আসলাম। রাতে রুমে বসে পড়তেছি।
মিম : ভাবি ও ভাবি শুন না।
~হুম বল, কি হইছে, চা লাগবে।
মিম:আরেহ না চল না বাহিরে যাবো।
~না আমার এখন পড়া আছে, তুইও পড়তে বস।
মিম:প্লিজ ভাবি, ওর দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারলাম না। আচ্ছা চল।
মিম:ভাবি ফুচকা খাবো।
~আচ্ছা চলো, মামা দুই প্লেট ফুচকা দেন।
মিম:মামা ঝাল বেশি দিয়েন, বলে পিছনে ফিরেই মিম এর চোখ আটকে গেলো এক জুড়া কাঁপলের উপর। ভাবি এদিকে দেখো।
~কি মি…মুখ দিয়ে আর কথা বের হচ্ছে না। চোখ মনে হয় বিশন জলছে, আমি একদম স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি সামনের দিকে।
মিম: ভাবি ভাই না আর সাথের মেয়েটা কে। আর এক জন আরেক জন কে জরিয়ে দরে আছে কেনো।
~বাসায় চলো মিম।
মিম:তুমি সব সময় এমন কেনো ভাবি প্লিজ বলো তোমাদের মধ্যে কি হইছে ভাই অন্য মেয়ের সাথে, আর তুমি দেখেও কিছু বলছো না।
~সবি নিয়তি মিম। সবার কপালে সুখ নামের পাখিটা থাকে না। তারাতারি ফুচকা শেষ করো বাসায় জেতে হবে।
মিম: ভাবি বলবে ভাই আর ওই মেয়ের সম্পর্ক কি।তুমি এইবা দেখেও না দেখার মতো কেনো। আমি জানি মেয়েরা সব কিছুর ভাগ দিলেও স্বামীর ভাগ কাওকে দেয় না।
~শুনবে তুমি।
মিম:হুম বলো, আমি শুনবো।
~তাহলে শুনো।

চলবে,,….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here