তুমি গহীন অনুভব পর্ব -০৪

#তুমি_গহীন_অনুভব
#পর্ব_৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আইজান আর ইরজা শুনলো সবাই কে আইজানের নানা বাড়ি যেতে হবে কারন আইজানের নানাভাই তাদের দেখতে চেয়েছে। তার নানাভাই নাকি অসুস্থ। আইজান যেতে চাইছিল না কিন্তু ওর নানাভাই অসুস্থ দেখে আর না করে নি।আরো একটা কারন আছে সেটা আইজান আর ইরজা ভালো জানে। আইজানের মা বাবা, ফায়জা, তিশা আর আইজান আর ইরজা যাবে। তিশার বিয়ে আরো ১ মাস পর হবে তাই ও ওদের সাথে যাচ্ছে ।আইজান যেহেতু ওর স্যারকে আগেই বলেছিল তাই ছুটি পেতে সমস্যা হয় নি। আইজান আর ইরজা যাবে আলাদা গাড়িতে আর বাকি সবাই আলাদা গাড়িতে ওদের নানাবাড়ি সিলেট এ সবাই বাড়ির গাড়ি নিয়েই যাবে। ইরজা বোরকা হিজাব পড়লো আর আইজান ওর ম্যাচিং শার্ট। ওরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লো। ফায়জা অবশ্য আইজানের গাড়িতে আসতে চেয়েছিল কিন্তু আইজান মানা করে দিয়েছে ফায়জা ও আর চায় নি। ফায়জাদের গাড়ি আগে বেরিয়েছে তারপর আইজানদের গাড়ি । হুট করে ইরজা বলল,,

“আপনি ফায়জা কে আমাদের গাড়িতে আসতে দিলেন না কেন? তিশা আর ফায়জা তো আমাদের সাথেই যেতে পারতো।”

“আমরা হলাম নিউলি ম্যারিড কাপল বুঝতে পারলে। ওরা হলো কাবাব মে হাড্ডি।”

“ওরা আসলে কি হতো?

“ওরা আসলে তুমি লজ্জা পেতে আমার হাত জরিয়ে ঘুমাতে পারতে না ।”

“আমি আপনার হাত জরিয়ে গাড়িতে ঘুমাই বুঝি!”

“যেদিন চৌধুরী বাড়িতে তোমাকে নিয়ে আসলাম সেদিন তো সারা রাস্তা আমার হাত ধরে ঘুমিয়েছিলে।”

“আরে সেদিন তো আমি অসুস্থ ছিলাম।”

“তাই বুঝি তাহলে সেদিন ফুসকা খেতে গেলে সেদিন ও তো ধরে ছিলে।”

“আসলে আপনার হাত দুটো আমার ভালো লাগে।”

“তা আর কি কি ভালো লাগে মিসেস!”

“আপনি কি জানেন আপনি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।”

“বিয়ের পর এটা সব বউদের কমন ডায়লগ হয়ে যায়।”

“বিয়ের আগে তো কতো ভালো ছিলেন কিন্তু এখন।”

“বিয়ের আগে তো তুমি তোমার বাবার মেয়ে ছিলে এখন তুমি হলে আমার বউ। তোমাকে হালাল ভাবে পাওয়ার আশায় ছিলাম বুঝতে পারলে।”

“হুম!”

“কিছু খাবে এখন চকলেট?”

“না এখন কিছু খাবো না। আচ্ছা আপনার নানাবাড়িতে কে কে আছে?”

“আমার নানাভাই আর নানুমনি এদের দুই ছেলে আর দুই মেয়ে একজন হলো আমার মা। আমার দুই মামা বড়মামা আলোক তালুকদার আর ছোট মামা পলক তালুকদার। বড় মামার দুই মেয়ে নিপা আর রুপা ওরা টুইন এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে টুইন হলেও ওদের চেহারার মিল নেই। ছোট মামার এক ছেলে আর এক মেয়ে ছেলে পরশ আমার থেকে ছোট কিন্তু ধুরন্ধর ছেলে ওর থেকে সবসময় দূরে থাকবে। মেয়ে পালক এবার ইন্টারে পড়ে ফায়জার সাথে। আমার নানু আর মামীরা ভিশন ভালো। সবাই একসাথে থাকে।”

“ওহ আচ্ছা।”

কয়েক ঘন্টা পর দুপুরের দিকে ওরা সিলেট পৌঁছে গেল । ফায়জারা আগেই পৌঁছে গেছে ওরা একটু দেরি করে এসেছে। গাড়ি থামতেই পালক বাড়ির সামনে থেকে চিৎকার দিল ,,,

“মা দাদি তাড়াতাড়ি এসো আইজান ভাইয়ারা এসে পড়েছে। ”

আসলে পালক রুপা আর নিপা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা আসতেই পালক চিৎকার দিল। আইজান নেমেই বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম পিচ্চিরা তোরা কেমন আছিস।”

তখন পালক বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আমরা। আর আইজান ভাইয়া তুমি আমাদের “পিচ্চি বলছো কেন আমরা কি এখনো ছোট আছি। আমি এইবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। বুঝতে পারলে।

“তুই আর ফায়জা কোনদিন শুধরাবি না। ইন্টার এ পড়িস বলে যে ভাব। কিরে রুপা নিপা তোরা দুটো চুপ করে আছিস কেন কেমন আছিস তোরা।”

তখন রুপা আর নিপা বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া ভালো আছি তোমরা কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

এতক্ষণ ইরজা চুপ করে দিড়িয়ে ছিল। হুট করে পালক এর নজর পড়লো ইরজার দিকে কথা বলতে গিয়ে ভুলেই গেছিল ওদের ভাবি আছে। ও গিয়ে ইরজার হাত ধরে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম ভাবি তোমাকে তো নজরেই পড়ে নি। কেমন আছো তুমি?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুমি কেমন আছো? কথা বলে সময় পেলে তো আমার দিকে নজর পড়বে তাই না পালক। ”

“ওহ ভাবি তুমি আমাকে চেনো? আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

“হুম!”

তখন পেছন থেকে বড়মামী বলল,,

“এই তোরা কি ওখানেই সব কথা বলবি আয় ভেতরে আয়।”

আইজান ইরজার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। সবাইকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো।ইরজাও তাই। বড় মামী ইরজাকে দেখে বলল,,

“মাশাআল্লাহ আয়েশা আপু তোমার ছেলের বউ তো ভারী মিষ্টি।”

তখন আইজান বলল,,

“নানাভাই কোথায় তার জন্যই তো এখানে আসা।”

“তোর নানাভাই নিজের রুমে আছে।”

“ওহ আচ্ছা।”

আয়েশা চৌধুরী রা আগেই নানাভাই কে দেখে এসেছে। এখন শুধু আইজান আর ইরজা মিলে নানাভাই এর রুমে প্রবেশ করলো। আইজান বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম নানাভাই। কেমন আছো তুমি?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আগের থেকে ভালো আছি। তা আমার নাতবউ কই ? তারে একটু দেখি!”

“তোমার নাতবউ এখানেই আছে। ”

আইজান ইরজার হাত ধরে এনে বলল,,

“এই যে তোমার নাতবউ!”

তখন ইরজা বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম নানাভাই কেমন আছেন আপনি?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। মাশাআল্লাহ আমার নাতবউ তো ভারি মিষ্টি হয়েছে।

এ কথা শুনে আইজান বলল,,

“আমি কি করলা নাকি আমিও তো মিস্টি তাইনা। আমি মিস্টি দেখেই আমার বউও মিস্টি হয়েছে বুঝলে নানাভাই।”

এ কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।ওরা কিছুক্ষণ কথা বলে ওদের বারাদ্দকৃত রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে ইজরা বিছানায় শুয়ে পরলো তা দেখে আইজান বলল,,

“ক্লান্ত লাগছে বুঝি?”

“একটু লাগছে অনেকদিন পর লং জার্নি করলাম তো তাই একটু ক্লান্ত লাগছে।”

“আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে তারপর একটা ঘুম দাও।”

“নানাশুশুর বাড়িতে এসেছি ঘুমালে লোকে কি বলবে?”

“লোকের কথার ধার ধারো নাকি তুমি।”

“সেসব বাদ দিন আপনার সাথে ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে?”

“কি?”

“আপনার নানাভাই অসুস্থ নয় আপনাকে মিথ্যা বলে এখানে এনেছে।”

“তুমি বুঝতে পারলে কিভাবে?”

“আমার কাছে এটা কোন ব্যাপার হলো! যাইহোক সকাল বেলা জানলাম আপনার নানাভাই অনেক অসুস্থ তখন মায়ের মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছিল। কিন্তু এখানে আসার পর মা রিল্যাক্স মুডে আছে । আবার আপনার মামাবাড়ির লোকদের ও কারো মুখে ভয়ের ছাপ দেখলাম না সবকিছু মনে হয় স্বাভাবিকভাবেই আছে। আপনার নানাভাই এর রুমে আশেপাশে আমি কোন ওষুধ দেখতে পেলাম না যা ছিল সব ভিটামিন আর প্যারাসিটামল। এমনিতেও অসুস্থ ব্যক্তির রুম যেভাবে থাকে সেরকম তো একেবারেই ছিল না। আপনার নানাভাই যখন কথা বলল তখন ও মনে হচ্ছিল উনি ভালোই আছে ওনার কোন সমস্যা নেই। তারওপর ওনার হাতে কিছু খাবারের লেগে ছিল। মনে হচ্ছিল হুট করে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা আসার পর পালক যে চিৎকার দিল সেটা ছিল সতর্কতা মুলক চিৎকার। আরো কিছু ব্যাপার আছে আপনাকে বলবো না এবার বুঝতে পারলেন এখানে আনার জন্য মিথ্যা বলা হয়েছে।”

“তুমি সিওর?”অবশ্য তুমি এ বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা আছে।”

“জি একশত ভাগ!”

“ওকে তাহলে তো মিস্টার নানাভাই কে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতেই হয়। দুর্ভাগ্য বশত যদি তাকে ডাইনিং টেবিলে খেতে আসতে দেখা যায়। তাহলে তো কথাই নেই। আচ্ছা সব বাদ ভালোই হয়েছে অনেক দিন এদিকে আশা হয় না। যাই হোক তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর আমি হবো।”

“আপনি আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর আমি যাবো। এখন শুয়ে থাকতেই ভালো লাগছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আইজান ফ্রেশ হয়ে এলো। তারপর ইরজা গিয়ে গোসল করে এলো‌। ইরজা একটা কলা পাতা রঙের শাড়ি পড়লো কারন তার শাশুড়ি মা তাকে শাড়ি পড়তে বলেছে। ও গোসল করে আসতেই আইজান বলল,,

“মাশাআল্লাহ আমার বউটাকে শাড়িতে কি সুন্দর লাগে। এই প্রথম তোমার এই রুপ দেখলাম।”

একথা শুনে ইরজা লজ্জা পেল। আইজান আবার বলল,,

“মাথাটা তো ভালো করে মুছোনি এদিকে আসো আমি মুছিয়ে দিচ্ছি।”

আইজান ইরজাকে এনে ওর সামনে দাড় করালো আর মাথা মুছে দিতে লাগলো। তখনি দরাজায় নক করলো রুপা ।

“ভাইয়া আসবো?”

“হ্যা আয়!

রুপা এসে দেখলো আইজান ইরজার মাথা মুছিয়ে দিচ্ছে। তা দেখে রুপা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।
রুপা শরবত নিয়ে এসেছে। ও তাড়াতাড়ি শরবত রেখেই চলে গেল। আর বলে গেল ওদের নিচে খাওয়ার জন্য ডাকছে।অবশ্য অদ্ভুত দৃষ্টিতে ইরজার দিকে তাকিয়ে ছিল। কি ছিল ঐ দৃষ্টিতে সেটা ইরজা ধরতে পারলো না। ও যেতেই ইরজা বলল,,

“আপনার ছোট মামাতো বোন টা একটু চঞ্চল কিন্তু আপনার বড় মামাতো বোনগুলো এতো শান্ত কেন?”

“শান্ত থাকলেও এতো শান্ত ছিল না এইবার-ই এতো শান্ত। কিছু কি হয়েছে নাকি বুঝতে পারছি না।”

“ওহ আচ্ছা। আপনার মামাতো ভাই পরশ কে তো দেখলাম না।”

“কেন তোমার দেখার শখ হয়েছে বুঝি।”

“না আপনি বললেন না ধুরন্ধর তাই আমিও দেখতাম কেমন ধুরন্ধর।”

“ওহ আচ্ছা। ”

__________________

খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে খাচ্ছেনা কারন আইজানের নানাভাই নাহিদ তালুকদার বলেছেন তার এখন অনেক ভালো লাগছে উনি সুস্থ বোধ করছেন তাই তিনিও এসে ওদের সাথে খাবে। কিছুক্ষণ পর নাহিদ তালুকদার আস্তে আস্তে এসে টেবিলে বসলো তা দেখে আইজান মুচকি হাসলো। আজকে নাহিদ তালুকদার এর ফ্রেবারিট খাবারগুলো রান্না হয়েছে। তা দেখে নাহিদ তালুকদার খুশি হয়ে গেলেন। খাওয়া নিয়ে সে কোন কমপ্রোমাইজ করে না। কিন্তু যখনি তিনি খেতে নিবেন তখন আইজান বলল,,

“আহ হা নানাভাই তুমি না অসুস্থ তোমার কি এতো ভারি খাবার খেলে চলবে। আমি ছোট মামীকে বলেছি সে তোমার জন্য ভেজিটেবল স্যুপ বানিয়েছে। এখন তুমি সেটা খাবে।”

এ কথা শুনে নাহিদ তালুকদার মেকি হেঁসে বলল,,

“আহ হা আইজান আমি এখন অনেক সুস্থ আছি তাই এগুলো খেতে পারবো‌।”

“না নানাভাই তুমি পারবে না। তোমার অসুস্থতার কথা শুনে আমি এক ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি ডাক্তার বলেছে তোমাকে ভারি খাবার না দিতে।”

“আরে একটু খেলে কিছুই হবে না।”

“একটুও না।”

নাহিদ তালুকদার মুখটাকে অসহায় বানিয়ে ফেলেছে বাকি সবাই ওনার অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। তখন ইরজা বলল,,

“আপনি এমন করছেন কেন? নানাভাই তো বলল একটু খাবে একটু খাক না। একটু খেলে কিছুই হবে না”

“হ্যা হ্যা নাতবউ ঠিকই বলেছে একটু খেলে কিছুই হবে না। খাই না।”

“না মানে না ছোট মামী নানাভাই এর স্যুপ কোথায় দাও।”

আইজানের ছোট মামী স্যুপটা সামনে রাখলো। তখন আইজান বলল,,

“সবাই খাওয়া শুরু করো!”

নাহিদ তালুকদার এক চামচ স্যুপ মুখে দিল। অনেক কষ্টে গিলল। তা দেখে আইজান আর ইরজা মুচকি হাসলো। তখন আইজান বলল,,

“নানাভাই এই হাঁসের মাংস টা বড় মামী যা রেঁধেছে না কি বলবো। মনে হচ্ছে অমৃত। আর বড় চিংড়ি মাছ টা যাস্ট দারুন কোন কথা হবে না।”

আইজান সবাইকে আগেই বলে দিয়েছে যাতে কেউ কিছু না বলে খাবার টেবিলে এসেই সবাইকে ধরে ওর কথায় ভয় পেয়ে সবাই বলে দেয় নাহিদ তালুকদার অসুস্থ না।তাই ও বলে ও কিছু একটা করবে কেউ যেন কিছু না বলে ।তাই সবাই নাহিদ তালুকদার এর অবস্থা দেখেও কিছু বলছে না। তখন নাহিদ তালুকদার বলল,

“আইজান প্লিজ এক পিচ খাবো যাস্ট একটা।”

“সব কিছুর আগে তোমার শরীর বুঝতে পারলে এখন ভারী খাবার খেলে তুমি এমনিতেই অসুস্থ আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমি সেটা হতে দিতে পারি না তাই না।”

“আমি অসুস্থ নই।”

“আরে কি বলছো তোমার অসুস্থতার কথা শুনেই তো আমরা আসলাম এখন বলছো অসুস্থ নও।”

“আরে এমনি বললে তো তুই আসিস না তাই বলেছি।সবাইকে দেখতে ইচ্ছে করছিল তোকে বললে তো তুই বলতি আমি পারবোনা নানাভাই আমার কাজ আছে। তাছাড়া নাতবউ কেও তো দেখার ছিল তাই।”

“এখন যদি বলি তুমি খাওয়ার জন্য মিথ্যা বলছো।”

“আমি সত্যিই বলছি আমি অসুস্থ নই।”

“প্রমান কি যে তুমি সত্যি বলছো!”

“আমি একদম সত্যি বলছি তোকে এখানে আনার জন্যই মিথ্যা বলেছি। আর অসুস্থ মানুষ কি এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়।”

“আমাকে বললেই পারতে তাই বলে মিথ্যে বলবে। এর শাস্তি হিসেবে তোমার দুপুরের খাবার এই স্যুপ।

তখন ইরজা বলল,,

“আপনি শুধু মিথ্যেটাই দেখলেন এই মিথ্যের পেছনে আপনার জন্য লুকিয়ে রাখা ভালোবাসা দেখলেন না।”

এ কথা শুনে সবাই ইরজার দিকে তাকালো মেয়েটা এই টুকুতেই বুঝে ফেলল নাহিদ তালুকদার আইজানকে কতোটা ভালোবাসে। সত্যি নাহিদ তালুকদার আইজানকে সবার থেকে বেশি ভালোবাসে কারন তার ছেলেমেয়ের মধ্যে আইজান ছিল প্রথম পুত্র সন্তান। আর ছোট বেলার আইজান ওর নানাভাই এর সাথে বেশিক্ষণ থাকতো। এই জন্য আইজানের প্রতি একটু টান অনুভব করে। কেউ কিছু বলছে না দেখে ইরজা বলল,,

“নানাভাই তুমি খাও তো আমি দেখবো উনি কি করে তুমি খাও।”

তখন নাহিদ তালুকদার হেসে বলল,,

“এই তো আমার দলের লোক পেয়ে গেছি। এখন আর আইজান কিছু বলতে পারবে না। তো মিসেস আইজান আপনি কি আমার মিসেস হবেন?”

এ কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো তখন আইজান বলল,,

“আমার বউ বললো দেখে কিছু বললাম না বুঝলে। কিন্তু আমার বউকে আমি কাউকে দেব না। এখন খাও এই নাও আমি তোমায় বেড়ে দিচ্ছি।”

আইজান নাহিদ তালুকদার খাবার কে বেড়ে দিল। সবাই হাসি মজার সাথে খাবার খেল। ইরজা রুমে এসে শুয়ে পড়লো ও অনেকটাই ক্লান্ত।

________________

বিকেল ইরজা ঘুম থেকে উঠে পরলো। কখন যে চোখ লেগে গেছে ও বুঝতেই পারে নি। ও চোখ খুলে দেখলো আইজান ওর পাশে নেই। ও ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিল। তারপর নিচে আসলো নিচে আসতেই দুটো নতুন মুখ দেখতে পেল। আয়েশা চৌধুরী ইরজাকে দেখে এগিয়ে এসে ওকে নিয়ে বলল,,

“আপা ও হচ্ছে ইরজা আমার আইজানের বউ। ইরজা ও হচ্ছে আমার বড় বোন তোমার খালামনি।”

তা শুনে ইরজা বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম খালামনি!কেমন আছেন?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি! গ্ৰামের মেয়ে হলে কি হবে আদব কায়দা ভালোই দেখছি।”

এ কথা শুনে ইরজা ওনার দিকে তাকালেন। আর মুচকি হেসে বলল,,

“তা খালামনির আপনি কি মনে করেন গ্ৰামের মেয়েরা আদব কায়দা জানে না।”

“না আমি ঠিক ওটা বলিনি। আচ্ছা যাই হোক ও হচ্ছে আমার মেয়ে প্রিয়া।”

তখন প্রিয়া বলল,,

“ও তাহলে তুমিই আইজানের বউ।”

“জি কেন?”

“তুমি তো গ্ৰামের মেয়ে তাহলে বলো তো আইজান কে কিভাবে ফাসালে।”

তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

“প্রিয়া এটা রকমের ব্যবহার।”

“আমি কি ভুল কিছু বলছি নাহলে দেখো এত মেয়ে থাকতে আইজান দুই মাসের জন্য গ্ৰামে গেল আর বিয়ে করে ফেললো নিশ্চয়ই মেয়েটা ফাসিয়েছে তাই বাধ্য হয়েই আইজান ওকে বিয়ে করেছে।”

এ কথা শুনে ইরজা অসহায় চোখে আয়েশা চৌধুরীর দিকে তাকালো তখন পেছন থেকে আইজান বলল,,

“আমার বউ আমাকে না আমি ওকে ফাসিয়েছি যাতে ও আমাকে বিয়ে করে তাই না বউ।”

একথা শুনে সবাই আইজানের দিকে তাকালো আইজান মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আইজান এগিয়ে এসে বলল,,

“প্রিয়া ভুলেও এরপর থেকে আমার বউয়ের নামে কিছু বলবি না। নাহলে ভুলে যাবো তুই আমার খালাতো বোন।”

“এই মেয়েটার জন্য তুমি আমাকে কথা শোনাচ্ছো?”

“আমার বউকে কিছু বললে আমি তা কখনোই মেনে নেব না। সে গ্ৰামের মেয়ে তো কি হয়েছে তোদের মতো লোকের থেকে গ্ৰামের লোকেরা অনেক ভালো।”

আইজান ইরজার হাত ধরে রুমে চলে গেল। বাকি সবাই অবাক হয়ে আইজানকে দেখলো। আইজান ওর বউকে নিয়ে কতো প্রসেসিভ। আইজান রুমে এসেই বলল,,

“তুমি কিছু বললে না কেন?”

“আমি বলার সুযোগ পেলাম কোথায়? আপনিই তো বললেন তাছাড়া প্রথম দিনেই যদি সবার মুখের ওপর কথা বলি তাহলে সেটা মায়ের অসম্মান করা হয়।”

“হুম বুঝতে পেরেছি। চলো ঘুরতে যাই !”

“কোথায়?”

“সিলেট এসেছি চা বাগান দেখবো না তাই কখনো হয়।”

“শাওনের কি খবর?”

“আজ রাতে ওর একটা খবর করবো।”

“ও তো এখন সিলেটেই তাই না।”

“হুম কাল ফিরেছে।”

“আপনার টিম আসবে কখন?”

“এসে পরেছে তোমার ভাইরাও! আজ শাওনের খবর আছে!”

“এই জন্যই ঘুম থেকে উঠে আপনাকে পাশে পাইনি।”

“হুম তাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম।চলো তোমার ভাইয়ার সাথে দেখা করে আসি।”

“এখন বের হলে ফায়জা, তিশা, নিপা রুপা আর পালককেও নিয়ে যেতে হবে। ওদের না নিলে বিষয়টা খারাপ দেখায়।”

“তা ঠিক বলেছো?”

“আপনি ভাইয়াকে চা বাগানে আসতে বলুন আমরা দেখা করে নেব।”

“ঠিক আছে!”

______________________

ওরা সকলে চা বাগানে ঘুরতে গেল। আইজান ইরজার হাত ধরে সবকিছু দেখাচ্ছে। ওরা পেছনে আর সবাই সামনে। সবার সাথে প্রিয়াও এসেছে অবশ্য ওকে কেউ বলে নি। হুট করে ফায়জার আওয়াজ পেয়ে ওরা দুজন তাড়াতাড়ি ওখানে গেল। ফায়জা একটা ছেলের সাথে ঝগড়া করছে। ছেলেটা ছবি তুলতে তুলতে ফায়জার পায়ে পাড়া মেরেছে সেটা নিয়েই ঝগড়া হচ্ছে ছেলেটা সরি বলেছে তবুও ফায়জা শুনছে না। তখন আইজান গেল ওখানে আর ফায়জা কে থামিয়ে বলল,,

“কি হয়েছে ঝগড়া করছিস কেন?”

তখন ছেলেটা বলল,,

“আসলে ভাইয়া আমি চা বাগানের কিছু ছবি তুলছিলাম পেছাতে পেছাতে ওনার পায়ে পাড়া লাগে আমি সরি বলেছি কিন্তু উনি শুনতে চাইছে না।”

“মিথ্যে বলছে ভাইয়া আমি জানি ছেলেটা ইচ্ছে করে আমার পায়ে পাড়া মেরেছে।”

“আপনার সাথে আমার কোন শত্রুতা আছে নাকি যে আমি আপনাকে ইচ্ছে করে পাড়া মারবো!”

“আপনাকে তো আমি!”

তখন ইরজা বলল,,

“ফায়জা থামো উনি তো তোমায় সরি বলেছে !”

“ভাবি তুমি জানো না আমি কতো ব্যথা পেয়েছি। আমার পায়ে ব্যথা লেগেছে ওনার সরি বলায় কি আমার পায়ের ব্যাথা গায়েব হয়ে যাবে।”

“আরে উনি তো ইচ্ছে করে তোমায় মারে নি তাই না। ভাইয়া ওর হয়ে আমি সরি বলছি । আপনি এখন যান।”

“ইটস্ ওকে আপু। ”

বলেই ছেলেটা চলে গেল। ইরজা ফায়জার হাত ধরে সবার থেকে দূরে এনে বলল,,

“ফায়জা কি হয়েছে বলো তো এরকম ব্যবহার কেউ করে?”

“আরে ভাবি তুমি গল্প পড়ো না সব নায়িকা নায়কদের সাথে কোন কারন পেলেই ঝগড়া করে তাই আমিও করলাম। আমারো ইচ্ছে হলো কোন ছেলের সাথে ফিল্মি স্টাইলের ঝগড়া করতে। তাই করলাম।

“তুমি আর তোমার ইচ্ছে দুটোই বেকার।”

“হি হি হি।””

“এখন না হেসে চলো তো!”

ওরা সবাই আরো কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলো। তারপর সবাই বাড়ি ফিরে এলো। রাতে সব কাজিনমহল ছাদে আড্ডা দেবে বলে মনস্থির করলো। সবাই সেখানে পৌঁছে গেছে শুধু ইরজা আইজান আর প্রিয়া যায় নি। কিছুক্ষণ পর ফায়জা গিয়ে ইরজাকে নিয়ে এলো আইজান কোথায় যেন গেছে। ও আসতেই বলল পালক বলল,,

“ভাবি কোথায় ছিলে আমরা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম।”

“রুমেই ছিলাম।”

“ভাবি তোমাদের কি লাভ ম্যারেজ ?”

পালকের কথা শুনে তিশা আর ফায়জাও ইরজার দিকে তাকালো কারন ওরাও এ বিষয়ে জানে না।ইরজা মুচকি হেসে বলল,,

“একদিক থেকে আমাদের লাভ ম্যারেজ ও না আবার এরেন্জ ম্যারেজ ও না। আরেকদিক থেকে লাভ ম্যারেজ ও আবার এরেন্জ ম্যারেজ ও।

“মানে বুঝলাম না ভাইয়া তো তোমাকে বিয়ে করে এনেছে।”

“হুম এনেছে তো” তবে আমাদের ভেতরে লাভ এর মতো কিছুই হয় নি।”

“তারমানে তোমরা প্রেম করো নি?”

“না !”

“ওহ আচ্ছা তাহলে তোমাদের বিয়েটা হলো কিভাবে?”

“যেভাবে সবার হয় তিন কবুল পড়ে!”

“হেঁয়ালি করছো কেন? বলো না।”

“উঁহু এই জিনিস টা আমার আর ওনার মাঝে সিক্রেট তবে একদিন তোমাদের বলবো। আজ থাক।”

“বলো না!”

“কিছু জিনিস অজানাই ভালো। আজ থাক।”

তখনি প্রিয়া আর পরশ এলো। পরশ বলল,,

“তাহলে এটাই হলো আমাদের আইজান ভাইয়ার বউ। এই সুইট ভাবি আমি হলাম তোমার দেবর।”

ইজরা ওকে দেখে একটু অস্বস্তি হলো। এমনিতেও ভালো করেই সব ঢাকা আছে। ইরজা জোর পূর্বক হেসে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। ভাইয়া কই?

তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,

“এই তো আমি! আমায় মিস করছিলিস বুঝি?”

“আরে ভাইয়া কেমন আছো তুমি।”

“এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা তুই কোথায় ছিলিস পেলাম-ই না তোকে আসার পর থেকে।”

“ঐ একটু কাজে!”

“আচ্ছা বাদ দে ইরজা একটু রুমে এসো তো!”

“আসছি!”

বলেই ইরজা উঠলো। আর আইজানের সাথে চলে গেল।ওরা যেতেই প্রিয়া বলল,,

“এদের ঢং দেখে বাচি না।”

ইরজা রুমে যেতেই আইজান বলল,,

“শাওন মারা গেছে !”

“কি বলছেন কি আপনি ?’

“হুম সত্যি বলছি আজ আমরা ওকে ধরতে গিয়েছিলাম কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখলাম ও মরে পরে আছে।”

এ কথা শুনে ইজরা ওখানেই বসে পরলো আর চোখ টলমল করে উঠলো। ও বলল,,

“এখন কি করবো আমরা এখন কিভাবে জানবো বাবাকে কে মেরেছে ? ঐ লোকটা বলেছিল শাওনের ওপর ও একজন আছে। কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি সিওর ও জেনে গিয়েছিল আপনারা শাওনকে ধরতে যাচ্ছেন। তাই ওকে মেরে ফেলেছে।”

“হুম এটা তারই কাজ কারন ওখানে একটা চিঠি ছিল ওখানে লেখা ছিল তাকে ধরা সহজ কাজ নয়। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না এটা তো আমি কাউকে জানায় নি তাহলে?”

“আমাদের কোন কাছের মানুষ নয় তো!”

এটা শুনে আইজান ও চিন্তায় পড়ে গেল। কি হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ও।

~চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here