তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব -১৫+১৬

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

গাড়ি চলছে আপন গতিতে।সবাই সবার মতো মজা করছে।গান বলছে।গল্প করছে।অধরা আহানের পাশে চুপচাপ বসে আছে।ঘুম হয় নাই অধরার।প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।তবুও সবাই খুশি দেখে নিজের বিরক্তিকে দূরে ঠেলে দিলো।অধরার ইচ্ছে করছে।খোলা আকাশে নিচে দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে।নিজের ইচ্ছে টাকে আর দমিয়ে রাখলো না অধরা।আহানকে বলল।

–বলছিলাম কি গাড়ির গ্লাস টা একটু নামিয়ে দিতে বলুন না।আমি মাথা বের করে দিব।

–মাথা বের করে দিয়ে কোথায় যাবে।

–কেনো আপনার শশুর বাড়ি।

–কিন্তু আমার শশুর বাড়ি তো গ্রামে।

–আপনি বলবেন কি না।

–না গাড়ির মধ্যে চুপচাপ বসে থাকো।গাড়ির গ্লাস নামানো যাবে না।বাহিরে মাথা দিয়ে রাখলে যেকোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

–প্লিজ আমার মাথা যন্তনা করছে।আমি বেশি মাথা বের করবো না।খালি একটু বের করে রাখবো।আহান কোনো কথা বলল না।ড্রাইভার করে বললে ড্রাইভার গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিলো।অধরা মাথা বের করে দিলো।বাতাস এসে অধরার মুখে পড়ছে।অধরার সামনে থাকা অবাধ্য ছোট ছোট চুলগুলো উড়ছে।অধরা হাত বাড়িতে বাহিরের দিকে যাবে।তখনি আহান অধরাকে ধরে ফেলে।রাগি দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকায়।অধরা থেমে যায়।বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।রাতে কখনো জার্নি করা হয় নাই অধরার।এই প্রথম রাতে জার্নি করছে অধরা।বিষয়টা বেশ উপভোগ করছে অধরা।আহান অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।অধরার ছোট ছোট গুলো বারবার অধরাকে বিরক্ত করছে।অধরা বারবার চুলগুলোকে কানে গুজে দিচ্ছে।এটা দেখে আহান বেশ মজা পাচ্ছে।

–পেয়েছি ওকে জ্বালানোর বুদ্ধি।এবার কোথায় যাবেন।মিসেস অধরা চৌধুরী।বলে’ই অধরার খোঁপা করা চুলগুলো খুলে এলোমেলো করে দিলো।

অধরা চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো।তারপরে রেগে বলল।

–এটা কি করলেন আপনি।জানেন এক ঘন্টা যুদ্ধ করার পরে আমি চুলের প্যাচ ছাড়িয়েছি।এভাবে আপনি আবার আমার সব এলোমেলো করে দিলেন।আমি আর চুল রাখবোই না।সব কেটে ফেলবো।রাগে,দুঃখে, কষ্টে অধরার কান্না আসছে।প্রতিদিন চুলের সাথে কম যুদ্ধ করতে হয় না অধরার।আহানকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।বেশ বিরক্ত আহানের ওপরে।সব চুলগুলো একসাথে অধরাকে হামলা করলো।অধরা বিরক্ত হয়ে উঠেছে।

–এমন করছো কেনো।থাক না উড়তে দাও।বেশ ভালো লাগছে।তুৃমি কি সুন্দর ভাবে উড়ছো।তোমার চুলগুলোরও তো ইচ্ছে করে উড়ে বেড়াতে।

অধরা আহানের প্রশ্নের কোনো উওর দিলো না।নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে।কখনো অন্যের অবস্থা বোঝা যায় না।দোয়া করি আহান চৌধুরী,আপনার কোমড় পর্যন্ত চুল হোক।তাহলে বুঝবেন কেমন লাগে।অধরা মন খারাপ করে,দুই হাতে চুলগুলো ধরে আছে।আহানের বেশ খারাপ লাগলো।আহান অধরার চুলগুলো নিজের দু’হাতে ধরে সুন্দর করে খোঁপা করে দিলো।

অধরা অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।

–আপনি এত সুন্দর করে খোঁপা করলেন কিভাবে।এত শক্ত ভাবে আমি’ও খোঁপা করতে পারি না।

আহান কিছু টা ভাব নিয়ে বলল।

–আমি আহান চৌধুরী।আমি সব পারি।

–এমন ভাবে বলছেন।দশ বারোটা সংসার করে ফেলছেন।

–একটা বউয়ের জ্বালায় বাঁচি না।আবার দশ বারোটা।

–কেনো আমি আপনাকে কি করেছি।

–কি করোনি তাই বলো।

–বিয়ের আগে কয়টা প্রেম করছেন।কয়টা মেয়ের চুল এভাবে বেঁধে দিয়েছেন।

–একদম বাজে কথা বলবে না।আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি।একটা’ও প্রেম করি নাই।ভার্সিটিতে উঠে কিভাবে যে,রুহির সাথে রিলেশন হয়ে গেছে।আমি নিজে’ও জানি না।আমি কখনো কোনো মেয়ের আশেপাশে যায় নাই।খোঁপা তো দূরে থাকলো।একদিন শুধু রুহির হাত ধরে ছিলাম।তা-ও ওর রিকুয়েষ্টে।আমি নিজে থেকে ধরি নাই।রুহি নিজেই আমার হাত ধরে ছিলো।একদমে কথাগুলো বলল আহান।

অধরার মনটা কেমন জানি খারাপ হয়ে গেলো।আহানের কথার কোনো উওর দিলো না।ভেতরে ভেতরে কেমন অস্থিরতা কাজ করছে।এত খারাপ লাগছে কেনো তার।ভাবতে ভাবতে গাড়ির জানালায় মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো অধরা।আহান বোকার মতো তাকিয়ে আছে।এতগুলো কথা বলল কিন্তু কোনো উওর করলো না অধরা।অনেকক্ষন অধরার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে,অধরাকে দু’বার ডাক দিলো।তা-ও অধরার কোনো হেল দোল নেই।অধরাকে সামনের দিকে ঘোরাতেই দেখলো অধরা ঘুমিয়ে গেছে।আহান ড্রাইভার কে বলল গাড়ির গ্লাস বন্ধ করে দিতে।তারপর অধরাকে নিজের বুকের মধ্যে শুইয়ে নিলো।

ভোর প্রায় হয়েই আসছে।সবাই গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে গেছে।অন্ধকার ছুটতে শুরু করছে।দু’একটা পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে।আহানের ঘুম ভেঙে গেলো।সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,আহান বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো।একদল বাচ্চা, তাদের হাতে কায়দা।হয়তো আরবি পড়তে যাচ্ছে।আহানের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেলো।সে-ও ছোট বেলায় ভোরে উঠে অজু করে কায়দা হাতে নিয়ে মসজিদের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়তো।আরবি পড়া শেষ হলে,সবাই মিলে শিউলি ফুল কুড়াইত।সেই ফুলের মালা বানিয়ে তিতির আপুকে দিত।আপু কত যে,খুশি হত।খুশি হয়ে আহানকে কতগুলো যে,চকলেট কিনে দিতো।ভাবতেই আহানের ভালো লাগছে।অধরা আহানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে।মেয়েটা কাছে থাকলে,আহানের ভেতরে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করে।ভিষণ ভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করে অধরার জন্য।আমি যদি না থাকি তাহলে অধরা কার সাথে ঝগড়া করবে।অধরার সাথে ঝগড়া করার জন্য হলে-ও আমি কয়টা দিন বাঁচতে চাই।আল্লাহ যেনো আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।এসব ভাবছিলো আহান।তখনি আকাশ ঘুৃম ঘুম চোখে আহানকে বলে।

–ভাইয়া আমি’ও তোমার কোলের মধ্যে ঘুমাবো।

–কেনো তোমার ঘুৃম হয় নাই।

–হয়েছে।কিন্তু তুমি আপাই-কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছো।আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে না কেনো।আমি ছোট মানুষ আমাকে বেশি আদর করা উচিৎ।তা-না করে তুমি আপাইকে বেশি আদর করলে।এই ছিলো তোমার মনে ভাইয়া।

–এই আকাশ কিসব বলছো।তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।আমি তোমার আপাইকে-ই তো আদর করছি।অন্য মানুষকে তো করি নাই।তোমার তো খুশি হবার কথা।

–এটা’ও সত্যি কথা বলছো।তাহলে আমি তিতলি আপুকে বলছি।তুমি আপাইকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছো।তিতলি আপু যেনো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়।

–লক্ষি ভাই আমার।এখন কাউকে ডাকিস না।আমি আসার সময় তোকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।তুই যা,চাইবি তোকে তাই দিব।

–আমাকে চকলেট কিনে দিলে কাউকে ডাকবো না।

–আচ্ছা তোমাকে আমি চকলেট এর দোকান এসে দিব।তবু্ও কাউকে ডেকো না।

–আচ্ছা বলে-ই আবার সামনের দিকে ঘুরে বসলো আকাশ।

–আমার ভাইকে ঘুষ দেওয়া হচ্ছে।আহানের কাছে থেকে সরতে সরতে বলল অধরা।আহান আবার নিজের কাছে টেনে নিলো অধরাকে।

–কি হচ্ছে টা কি।এমন করছেন কেনো।

–আমার বউ আমার যা,খুশি ইচ্ছে করবো আমি।

–আমি আপনার বউ হলে-ও আপনি ভালো অন্য কাউকে বাসেন।একদম ন্যাকামি করবে না।আপনার ভালোবাসা এত পাতলা কেনো।হালকা বাতাস উঠলেই ঝড়ে পড়ে যাবে।

অধরা কথাটা বলার সাথে সাথে আহান অধার কাছে থেকে দ্রুত সরে আসলো।অধরা তো সত্যি কথা বলছে।তাহলে সে,অধরার প্রতি এত দূর্বল হয়ে পড়ছে কেনো।রুহি ছাড়া সে,কাউকে ভালোবাসতে পারে না।ভাবতেই নিজের খুব রাগ হলো।আহান এক দিকে অধরা আরেক দিকে।দু’জন দুদিনকে তাকিয়ে আছে।সাতটার সময় তারা কক্সবাজারে এসে পৌঁছালো।আশরাফুল চৌধুরী আগে থেকে হোটেল বুক করে রেখে ছিলেন।তাই আর কোনো সমস্যা হয় নাই।সবাই চাবি নিয়ে যে,যার মতো রুমে চলে গেলো।

অধরা রুমে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল।

–সারারাত তো ঘুমালে।এখন আবার কিসের ঘুম।চলো বাহিরে যাই।

অধরা আহানের প্রশ্নের কোনো উওর দিলো না।আহান প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আহান চলে যেতেই অধরা লাফ দিয়ে উঠে বসলো।ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে একটা ফোন করলো।

–তুমি বেঁচে আছো।সবাই জানে না।

–না।

–তুমি সুস্থ হয়েছিলে,কে কে জানতো।

–আকাশ,মিনারা,আর ডক্টর।

–তোমার ডক্টর কে ছিলো।

–আমি জানি না।আমার জ্ঞান ছিলো না।আমাকে অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়েছে।

–অধরাকে জানাও নাই।

–জানাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু অধরা ফোন ধরে নাই।অনেক বার ফোন করেছিলাম অধরাকে।

–এখানে আসলে কি করে।

–আমি জানি না।আমি হসপিটালে ছিলাম।রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম।ঘুম ভাঙতেই নিজেকে এখানে আবিষ্কার করছি।

–তারমানে তুমি সত্যি জানো না।

–আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না।আপনার কি মনে হয়।আমি আপনাকে মিথ্যা কথা বলছি।আপনাদের জন্য আমার আর আমার বউয়ের জীবন টা নষ্ট হয়ে গেলো।না জানি আমার অধরা কেমন আছে।কি করছে,আবার যদি…

–কি!

–কিছু না।আপনারা এখানে কি করে আসলেন।

–অপেক্ষা করো সব জানতে পারবে।

–কু*ত্তা*র বা*চ্চা আমাকে ভুল ইনফরমেশন দিয়ে কেনো এখানে ডেকে নিয়ে আসলি।কেনো আমার সময় নষ্ট করলি।আজ সবাইকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো।তোদের এত সাহস দিয়েছে কে।

বীর দৌড়ে এসে সাইকো কুইন কে আটকালো।

–ম্যাডাম প্লিজ আপনি শান্ত হন।আমরা ভুল খবর দেই নাই।আপনি রাগ করবেন না।ওরা এখানেই ছিলো।কিন্তু গতকাল দেশ ছেড়েছেন।এই দেখুন আমরা সিসি ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করেছি।

সাইকো কুইন ভিডিও টি দেখে ফোন টাকে দুই টুকরো করে ফেললো।দেওয়ালে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে লাথি মারলো।হাতের কাছে যেটা পাচ্ছে।ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে নিজের চুল দু’হাতে খামচে ধরে মাটিতে বসে পড়লো।

–তোদের জন্য যদি আমি ধরা পড়ে যাই।একটাও আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবি না।একটা ছেলের কলার ধরে বলল।তারপরে ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

–বীর বলছিলাম কি।

–গলা দিয়ে আর একটা কথা বললে,দেখবে তুমি আছো।তোমার গলা নেই।

আকাশ আর তিতলি সমুদ্রের ধারে খেলছে।আহান গিয়ে তাদের সাথে যোগদান করলো।
#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সবাই ফ্রেশ হয়ে সমুদ্রের কাছে আসলো।কি অপরুপ দৃশ্য।বাতাসের সাথে পানি তাল মিলিয়ে কি সুন্দর খেলা করছে।অধরা এসে একটু দূরে দাঁড়ালো।একটু পরে আহান এসে অধরা-কে সমুদ্রের আরো কাছে নিয়ে গেলো।অধরা যাবে না।আহান এক প্রকার হাত ধরে টেনে-ই নিয়ে গেছে অধরাকে।

–এখানে দাঁড়িয়ে থাকো।দেখবে একটু পরে পানি এসে,তোমার পা ধুইয়ে দিয়ে যাবে।

বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অধরা দেখলো।সত্যি সমুদ্রের পানি গর্জন করতে করতে এসে,অধরার পা ধুইয়ে দিয়ে গেলো।বিষয়টা বেশ ভালো লাগছে অধরার।অধরা আরেকটু পানির কাছে যাবে।তখনি আহান অধরার হাত ধরে ফেলে।

–বেশি দূরে যেও না।তুৃৃমি সাঁতার জানো না।পরে গেলে কি হবে একবার ভেবে দেখেছো।

–আহান,অধরা এদিকে এসো সবাই সকালের খাবার খেয়ে নেই।পরে আবার আসবো।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।ওনার কথা মতো সবাই চলে গেলো।এগারোটার দিকে সবাই আবার আসলো।

আকাশ আর রোহানের মধ্যে বেশ ভালো মিল হয়ে গেছে।দু’জন মিলে খেলা করছে।আশার সমুদ্র বেশ ভালো লাগে।আহানের বড় ভাইয়ের সাথে পানির মধ্যে নেমে অনেক মজা করছে।তিতির তার স্বামীকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তিতলি ভিডিও করছে।বিভিন্ন রকমের ছবি তুলছে।আশরাফুল চৌধুরী,মিসেস আফরোজা চৌধুরী বসে বসে ছেলে মেয়েদের আনন্দ দেখছেন।

–ঐ দেখো আমার ছেলে আর ছেলের বউ দাঁড়িয়ে আছে।ওদের কয়টা সুন্দর করে ছবি তুলে দিবে।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–আচ্ছা স্যার।বলেই লোকটি আহান আর অধরার কাছে গেলো।গিয়ে বলল স্যার,ম্যাডাম আপনারা একটু একসাথে দাঁড়ান ছবি তুলবো।

–আমি ছবি তুলবো না।বলল অধরা।

–আপনি আমার একা ছবি তুলে দিন।আমি ও মেয়ের সাথে ছবি তুলবো না।

–আশরাফুল স্যার আমাকে পাঠিয়েছেন।এখন আমি ওনার কথা কিভাবে অমান্য করবো।প্লিজ স্যার কয়টা ছবি তুলবো।

আহান গিয়ে অধরার পাশে দাঁড়ালো।

–নিন তুলুন।বলল আহান।

–স্যার এভাবে ছবি তোলা যায়।একটু কাছাকাছি আসুন।না হলে ছবি ভালো আসবে না।আহান গিয়ে আরো একটু কাছে দাঁড়ালো।

–স্যার যদি কিছু মনে না করেন।তাহলে আপনার একটা হাত ম্যাডামের কাঁধে রাখুন।

–আচ্ছা আপনি আমাদের ছবি তুলতে এসেছেন।নাকি সিনামার শুটিং করতে এসেছেন।

–সরি স্যার।আহান আলতো করে অধরার কাঁধে হাত রাখলো।লোকটি একটা ছবি তুললো।

–একটা কাজ করুন।আপনি আমার কোলের মধ্যে বসে পড়ুন।না হলে আমাকে আপনার কোলের মধ্যে বসিয়ে নিন।তবু্ও এত ঘা ঘেঁষাঘেঁষি করবেন না।রেগে বলল অধার।আহানর সত্যি সত্যি অধরাকে তুলে নিলো।

–এবার পারফেক্ট হয়েছে স্যার।ম্যাডাম আপনি স্যারের গলা জড়িয়ে ধরুন।তারপরে স্যারের দিকে তাকান।স্যার আপনি ম্যাডামের দিকে তাকাবেন।

–এত নাটক করতে পারবো না।আমাকে নামিয়ে দিন।আচ্ছা বদমাইস লোক তো আপনি।বলল অধরা।

–চুপচাপ কয়টা ছবি তোলো।এতে তুমিও মুক্তি পেয়ে যাবে।আর আমি’ও।

অধরা আর কোনো কথা বলল না।লোকটির কথা মতো কয়টা ছবি তুলে নিলো।লোকটি চলে যেতে-ই দু’জন আলাদা হয়ে গেলো।

অধরা এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।বাতাসে অধরার চুলগুলো উঠছে।দু’জন বাড়িয়ে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিলো অধরা।আহান এসে পেছনে থেকে অধরার সব চুল খুলে দিলো।তারপরে টানতে টানতে সমুদ্রের পানিতে নিয়ে গেলো।কিছুদূর নিয়ে যেতেই অধরাকে রেখে দৌড়ে আসতে লাগলে অধরা আহানের পা ধরে ফেলে।

–আপনার মতো খারাপ মানুষ দু’টো দেখি নাই।আপনি আমাকে মারতে চান।এতটা খারাপ আপনি।আমাকে রেখে যাবেন না।আমি সাঁতার জানি না।

–আগে তুৃমি আমার পা ছাড়ো।আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।পা ধরে এতবার মাফ চাইতে হবে না।

–আহানের বাচ্চা,আমি আপনাকে তাজাই খেয়ে ফেলবো।

–পেতনীরা সব পারে আগে নিজে নিজেকে বাঁচিয়ে দেখাও।বলেই আহান চলে যেতে লাগলো।অধরা দু’হাতে আহানের পা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

–এখন কেমন লাগছে।আমার সাথে আর ঝগড়া করবে বলো।যদি আমাকে কথা দাও আমার সাথে আর ঝগড়া করবে না।তাহলে তোমাকে নিয়ে যাব।

রাগে অধরা আহানের পা ছেড়ে দিলো।তার দুর্বলতা কে কাজে লাগাচ্ছে আহান।অধরা কারো কেনা গোলাম না।যে,উনি যা বলবে তাই শুনতে হবে।বাতাসের সাথে পানি তাল মিলিয়ে দ্রুত গতিতে কিনারা দিকে এগিয়ে আসছে।আহান দৌড়ে গিয়ে অধরা কে তুলে ফেললো।

–ছাড়ুন আমাকে আপনি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন।

–ঐ দেখো তোমার শশুর তোমার দিকে এগিয়ে আসছে।এখন যদি না যাও।তাহলে তোমার শশুর এসে তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে।বলেই আহান দৌড় দিলো।অধার’ও আহানের পিছু পিছু দৌড়ে দিলো।

সন্ধ্যা বেলা আহান ঘুমিয়েছে।অধরা চুপচাপ আহানের পাশে বসে আছে।হঠাৎ মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসলো অধরার।নিজের ব্যাগ থেকে
ত্রিম,পাউডার,লিপস্টিক,কাজল বের করলো।অধরার তো মেক-আপ নেই।এখন কি করবে।তখনি তিতিরের কথা মনে পড়লো।কোনো কথা না বলে আস্তে করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।তিতিরের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অধরা।ডাক দিবে কি না সেই ভেবে ইতস্ত বোধ করছে অধরা।তখনি তিতিরে স্বামী দু’হাতে খাবার নিয়ে অধরার পেছনে দাঁড়াল।

–কি ব্যাপার নতুন বউ যে,দাঁড়িয়ে আছো কেনো।তোমার আপুকে ডাক দেও।

–আসলে ভাইয়া।

–হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না।বলে-ই তিতির কে ডাকলো।তিতির এসে দরজা খুলে দিলো।

–আরে অধরা তুমি,কোনো সমস্যা বোন।কিছু লাগবে তোমার।

তিতিরের স্বামীর জন্য বলতে পারছে না।তিতিরের স্বামী বুঝতে পেরে ভেতরে চলে গেলো।

–আপু আপনার কাছে একটা জিনিস নিতে আসছিলাম।

–কি লাগবে বলো।এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে।

–আপু আপনার মেক-আপ আছে।

–হ্যাঁ আছে।কেনো তোমার লাগবে।

–জ্বী আপু।বেশি সময় লাগবে না।আমি একটু পরেই দিয়ে যাব।

–সমস্যা নেই।আমার কাছে একটা ছোট মেক-আপ আছে।তুমি ওটা নিয়ে যাও।তুমি তো মেক-আপ করো না।কি ব্যাপার!

–তেমন কিছু না আপু।তিতির আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে একটা মেক-আপ বক্স এনে,অধরার হাতে দিলো।অধরা মেক-আপ হাতে পেয়ে পারে তো খুশিতে নাচ শুরু দেয়।ইস আজ আহান চৌধুরী কোথায় যাবে।অধরা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে নিজের রুমে আসলো।তারপরে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে দুটো ঝুটি করে দিলো আহানের চুলে।তারপরে মুখে মেক-আপ করতে লাগলো।আহান একটু নড়েচড়ে উঠলে,অধরা হাত পেছনের দিকে লুকিয়ে ফেলে।পুরো মুখে মেক-আপ করা শেষ হলে,ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে দিলো।আহানের দিকে তাকিয়ে না হেঁসে পারলো না অধরা।শব্দ করে হেঁসে দিলো।আহানের কয়টা ছবি তুলে রাখলো।আটটার দিকে আহানের ঘুম ভাঙলো।

–কি হয়েছে আমাকে এত জরুরি তলব ডেকেছো কেনো।তোমাকে না বলছি আমাকে এভাবে ডাকবে না।আমার সমস্যা হয়।

–আমি তোমাকে ডাকতে চাই নাই।তোমাকে না জানিয়ে আমি একটা কাজ করে ফেলছি।এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।প্লিজ আমাকে সাহায্য করো।

–কেনো তোমার সব ক্ষমতা টুস।সেই আমার পায়ের নিচে-ই আসতে হলো।

–একদম বাজে কথা বলবে না।তুমি আর আমি কি আলাদা বলো।তুমি আমার সাথে সব সময় এমন করো কেনো।

–মুখ দিয়ে মধু ঝড়ছে।এতদিন তোমার এত মিষ্টি কোথায় ছিলো।আমাকে ছাড়া তুমি কখনো উদ্ধার হতে পারবে না।সেটা আমি ভালো করেই জানি।কেনো শুধু শুধু আমার সাথে লাগতে যা-ও বলতো।

–আমি তোমাকে এখন যা,বলবো তার জন্য তুমি প্রস্তুত হও।চিৎকার করবে না।তারপরে মহিলাটি মেয়েটির কানে কানে কিছু বলল।মেয়েটি চিৎকার করতে যাবে।তখনি মহিলাটি মেয়েটির মুখ চেপে ধরলো।

–আস্তে প্লিজ চিৎকার করো না।আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি।তাই তোমাকে বললাম।আমরা যতই যুদ্ধ করি না কেনো।একটা কথা ভেবে দেখো,আমরা নিজেদের কথা অন্য কাউকে কখনো বলছি বলো।

–তুমি দেখছি আমার থেকে-ও বড় খেলোয়াড়।তোমার লজ্জা করে না।তুমি পারো কি করে এসব।তোমার মরে যাওয়া উচিৎ।

–সাবধানে কথা বলো।আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়।তাই সন্মান দিয়ে কথা বলো।

–সন্মান পাওয়ার মতো কি কাজ তুমি করেছো।যে,তোমাকে আমি সন্মান করবো।আমাকে এভাবে যখন তখন ডাকবে না।আমার সমস্যা হবে।বলেই মেয়েটি চলে গেলো।

–শুনো আমার কথাটা আমাকে সাহায্য করো।তাহলে আর ডাকবো না।মেয়েটি শুনতে পেলো না।মহিলাটি মেয়েটিকে ফোন করলো।

–তোমাকে বলছি আমাকে ফোন করবে না।রাতে পেয়ে যাবে।দয়া করে আর বিরক্ত করো না।আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও।বলেই রেগে ফোনটি কেটে দিলো।

আহানের ঘুম ভাঙতেই অধরাকে নিজের পাশে দেখে অবাক হলো।কিছু বলল না।অধরা আহানের দিকে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানো চেষ্টা করছে।শেষে না পেরে জোরে হেঁসে দিলো।আহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে।মেয়েটা পাগল হয়ে গেলো নাকি।মাথায় হাত দিতে-ই আহান অনুভব করলো তার চুলগুলো বাঁধা।সেটা দেখার জন্য উঠে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই আহানের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।অধরা এই সুযোগে মেকআপ নিয়ে পালিয়ে যেতে লাগলে,আহান অধরাকে পেছনে থেকে ধরে ফেলে।

–কোথায় পালাচ্ছো।আমার এই অবস্থা করেছো কেনো।

–আমি করি নাই।আপনি তো এভাবে সেজে ঘুমিয়ে ছিলেন।

–আমার সাথে মজা করো।তোমাকে আমি কি করি দেখো।

বলেই অধরার হাতে থেকে মেক-আপ কেঁড়ে নিলো।অধরা দৌড়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে বালিশে মুখে গুঁজে দিলো।আহান যেনো তার মুখে কোনো কিছু করতে না পারে সেজন্য।আহান গিয়ে অধরাকে নিজের দিকে ঘোড়ালো।এক পা অধরার দুই পায়ে উপরে তুলে যেনো অধরা পালাতে না পারে।তারপরে অধরার ওপরে উঠে কাজল দিয়ে অধরার দাঁড়ি বানিয়ে দিতে লাগলো।আধরা আশেপাশে যেটা পাচ্ছে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে।আহান যেনো একটাও ধরতে না পারে।ওগুলো তুলতে গেলে অধরাকে ছেড়ে দিতে হবে।আহান কাজল দিয়ে অধরার গালে তিনটা করে ছয়টা দাগ একে দিলো।এবার ভালো লাগছে দেখতে।আহান লিপস্টিক ধরতে যাবে।তখনি অধরা লিপস্টিক ফ্লোরে ফেলে দিলো।

–তুমি কি ভেবেছো।আমি তোমাকে লিপস্টিক দিয়ে দিতে পারবো না।

–তাই নাকি কি করে দিবেন।যান ফ্লোরে থেকে তুলে নিয়ে আসুন।

–আমাকে কি বোকা পেয়েছো।বলেই আধরার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।অধরার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।দুচোখ বন্ধ করে ফেললো।ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে অধরা।আহানের গরম নিশ্বাস অধরার মুখে পড়তেই, অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে অধরার মাঝে।আহান’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবে।সেই শক্তি টুকু পাচ্ছে না সে।একটু পরে আহান নিজেই অধরাকে ছেড়ে দেয়।আহানের বেশ লজ্জা লাগছে এখন।রাগের বসে কি করে ফেললো সে।অধরা আহানের দিকে একবারো তাকাচ্ছে না।কেমন জানি লজ্জা করছে।আহান কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

চলবে…..
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here