তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব -১৭+১৮

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আহান ফ্রেশ হয়ে এসে,সোজা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।ওদের রুমের জানালা থেকে রাতের সমুদ্রে বেশ ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে।চাঁদের আলো সমুদ্রের পানিতে জ্বলজ্বল করছে।চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে।একটা মানুষজন নেই।অথচ দিনের বেলা এই সমুদ্রে মানুষ গিজগিজ করে।অধরার সামনে’ও যেতে পারছে না।কেমন জানি লজ্জা লাগছে।কি বলবে বুঝতে’ও পারছে না।একটু পরে খাবার দিয়ে গেলে।অধরা আর আহান চুপচাপ খেয়ে নিলো।কেউ কোনো কথা বলল না।দু’জন পাশাপাশি শুয়ে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।সন্ধ্যা বেলায় ঘুমানোর জন্য আহানের ঘুম আসছে না।অধরা খেয়ে-ই ঘুমিয়ে গেছে।রাত দুইটার সময় অধরার ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসলো।আহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।এতরাতে কিসের মেসেজ।কে পাঠালো।আহান অধরার ফোন নিতে যাবে।তখনি অধরা আহানের হাত ধরে ফেললো।

–কারো অনুমতি না নিয়ে,কারো জিনিস ধরতে নেই।আপনি সেটা জানেন না।

–তোমার ফোনে এতরাতে কিসের মেসেজ আসলো।

–তুমি ঘুমা’ও নি।এতরাতে তোমার ফোনে কিসের মেসেজ আসলো।কে মেসেজ পাঠিয়েছে তোমাকে।

–সেই কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিব নাকি।আপনি আমার কে।

–আমি তোমার স্বামী।আমার জানার অধিকার আছে।দেখি ফোন টা দাও।আমাকে দেখতে দাও।

অধরা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল।

–স্বামী।কিসের স্বামী?”আমার ওপরে কোনো অধিকার আপনার নেই।আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না।

–তুমি আমাকে কি স্বামী হিসেবে মানো না।আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না।আমি শুধু একজনকে ভালোবাসি সেটা হলো রুহি।আর আমি বিয়ে করে,যদি কারো সাথে সংসার করি।তাহলে রুহির সাথে-ই করবো।বাসায় গিয়ে তোমাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিব।লাগবে না তোমার মেসেজ দেখা আমার।বলে-ই রেগে শুইয়ে পড়ল আহান।

আহানের বলা কথা গুলো অধরার বুকে গিয়ে লাগলো।কি ধারাল অস্ত্রের মতো এসে ভেতর টাকে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে।জীবনে সবকিছুর আঘাত সয্য করা যায়।কিন্তু কথার আঘাত সয্য করা যায় না।উনি যখন ওনার গার্লফ্রেন্ড কে ভালোবাসেন।তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করলেন।সত্যি সত্যি উনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন।ভাবতে-ই অধরার দু-চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।আহান-কে সে,ভালোবেসে বিয়ে না করলেও।অধরার জীবনে আহান-ই প্রথম পুরুষ।তার প্রথম ভালোলাগা-ই হচ্ছে আহান।আস্তে আস্তে আহানের প্রতি সে,দুর্বল হয়ে পড়ছে।মনের গভীর থেকে আহানের প্রতি টান ও দুর্বলতা অনুভব করতে পারে অধরা।তবে কি সে,আহানকে ভালোবেসে ফেললো।অধরা চোখের পানিটুকু মুছে নিলো।আহানের বিপরীতে পাশে শুইয়ে পড়ল।

পরের দিন সবাই মিলে আবার সমুদ্রে নামছে।অনেক মজা করছে।আজ রাতে-ই বাসায় ফিরে যাবে।তিতিরের স্বামী আর আহানের বড় ভাইয়ের অফিসের ছুটি বেশি পায় নাই।তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে।রাতের পরে আহান অধরা কেউ কারো সাথে কথা বলে নাই।দু’জন দু’দিকে।অধরা আকাশের সাথে পানি ছিটিয়ে খেলা করছে।তিতলি এসে’ও ওদের সাথে যোগ দিলো।অধরা কয়টা শামুক কুড়িয়ে নিলো।সাদা সাদা শামুক দেখতে কি সুন্দর লাগছে।

বিভিন্ন রকমের আচারের দোকান দেখতে পেলেন মিসেস আফরোজা চৌধুরী।তিতি গিয়ে বিভিন্ন রকমের আচার কিনে নিলেন।শামুক দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রকমের গহনা দেখে বেশ ভালো লাগলো তার।তিনি সবার জন্য কিনে নিলেন।দুপুরে সবাই মিলে রেস্টুরেন্ট খেতে গেলো।খাওয়া দাওয়া করে নিজেদের রুমে এসে বিশ্রাম নিলো।এই অল্প সময়ে বেশি ঘোরাঘুরি করতে পারলো না সবাই।কিন্তু পরিবারের সাথে এত সুন্দর মুহুর্তে সময় কাটালো।এটা ভেবেই সবার মন ভালো হয়ে গেলো।বিকেলে অধরা সমুদ্রের কাছে আসলো।সমুদ্রের ধারে বড় করে নিজের নাম লিখলো।তারপর খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে কয়েকবার জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো।রুমে গিয়ে নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিলো।গাড়িতে ওটার সময় আহান বলল।

–বাবা আমি ড্রাইভারের কাছে বসবো।

–কেনো বাবা কি হয়েছে।তুৃমি অধরার পাশে বসো।

–অধরার কাছে আকাশ বসবে।

–না ভাইয়া আমি আমার মতামত বদলে ফেলছি।আমি তিতলি আপুর পাশে বসবো।বলল আকাশ।

–সবাই আগের মতো যে,যার জায়গায় বসে পড়লো।আহান এক প্রকার বাধ্য হয়ে-ই অধরার পাশে বসলো।কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না।কারো মুখে কোনো কথা নেই।এমন ভাব করছে,কেউ কাউকে চিনে না।আগে কখনো দেখে নাই।অধরা এবার আগের মতো বায়না ধরলো না।সারারাত এতটুকু ঘুমোয় নাই।যদি ভুল করে আবার আহানের কাছে চলে যায়।আহান তো তাকে ছেড়ে-ই দিবে।শুধু শুধু মিথ্যা মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই।এখানে-ই থেমে যা অধরা।বেশি ভালোবাসলে বেশি কষ্ট পাবি।এখন থেকে যতটা সম্ভব পারা যায়।আহানের থেকে দূরে থাকতে হবে।বাসায় গিয়ে নানির কাছে চলে যাব।চৌধুরী বাড়িতে আর যাব না।এসব ভাবছিলো অধরা।সারারাত না ঘুমানোর জন্য অধরার চোখ লাল হয়ে আছে।মুখটা ফুলে উঠেছে।সারা রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিয়েছে অধরার চোখে।কিন্তু অধরা ইচ্ছে করে ঘুমোচ্ছে না।ভোর প্রায় হয়েই আসছে।চৌধুরী বাড়িতে যাওয়ার আগে অধরার নানির বাসা আগে পড়ে।ভোরের আলো ফুটে উঠেছে।

–স্যার আমার নানির বাসার কাছে গাড়িটা একটু থামাতে বলবেন।

–কেনো মা।

–এটা আমার রিকুয়েষ্ট।প্লিজ আমাকে নামিয়ে দিবেন।আমি সেখানে গিয়ে আপনাকে বলবো।

অধরার নানির বাড়ির কাছে আসলে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দেয়।অধরা গাড়ি থেকে নেমে আকাশ-কে গাড়ি থেকে টেনে নামালো।আকাশ ঘুমিয়ে ছিলো।ঘুমের মধ্যেই বায়না ধরলো।সে,তিতলির সাথে যাবে।অধরা একটা ধমক দিলো।

–সরি স্যার আমি আর আপনাদের বাসায় যেতে পারবো না।আমাকে মাফ করবেন।আপনার সাথে আমার কি কথা হয়েছিলো।আপনি নিশ্চয় সেটা ভুলে যান নাই।বলেই অধরা নিজের ব্যাগ আর আকাশকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।আশরাফুল চৌধুরী অসহায় দৃষ্টিতে অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সে,তো ভেবেছিল অধরা ভুলে গেছে।আহান আর অধরার মধ্যে একটু হলে-ও ভাব ভালোবাসার সম্পর্ক হয়েছে।তবে কি তার ধারনা ভুল।একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আশরাফুল চৌধুরী।আহান একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।ভেতরে কেমন জানি শূন্য শূন্য লাগছে।অধরা চলে যাওয়াতে কেনো সে,শূন্যতা অনুভব করছে।কাল রাতে বেশি খারাপ ব্যবহার করা হয়ে গেছে।ওভাবে কথা বলা একদম উচিৎ হয় নাই।কিন্তু এতরাতে কে ওকে মেসেজ করলো।আমারও তো জানার অধিকার আছে।আমি ওর স্বামী।তাহলে’ও আমার সাথে কেনো ওমন ব্যবহার করলো।আর আমি কেনো এসব ভাবছি।একদম ঠিক করেছি।আমি রুহিকে ভালোবাসি।ও মেয়ের কোনো জায়গা নেই আমার জীবনে।বলে-ই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।মুখে এক কথা বলছে।কিন্তু মন তো আর মানছে না আহানের।গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো।আহানের কেমন জানি সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

অধরা কলিং বেলে চাপ দিলো।বেশ কয়েবার চাপ দেওয়ার পরে,অধরার নানি এসে দরজা খুলে দিলো।ভোর বেলা আকাশ আর অধরাকে দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলো।

–তোরা এত সকাল বেলা,ব্যাগ নিয়ে।

–কক্সবাজার গিয়েছিলাম মাত্র আসলাম।সারারাত ঘুম হয় নাই।ঘুমোতে দাও।বলেই ব্যাগ রেখে ভেতরে চলে গেলো।অধরার নানি ব্যাগ বাসার ভেতরে নিয়ে আসলো।আকাশের চোখে পানি দেখে।অধরার নানি বলল।

–কি হয়েছে তুই কাঁদছিস কেনো।

–আপাই বোকছে।

–তোকে আমি মারি নাই।এটা-ই তোর ভাগ্য ভালো।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় কর।বলেই অধরা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়ল।

আহান বাসায় গিয়ে একটু ঘুমিয়ে আটটার দিকে উঠে পড়ল।মনটা বড্ড ছটফট করছে।এক পলক অধরাকে দেখার জন্য।সকালে উঠে অধরার ঘুমন্ত মুখের তাকলে অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করতো আহান।আজ সকালে অধরাকে দেখতে না পেরে খুব অস্থির হয়ে উঠেছে আহান।সেজন্য চোখে হাজারো ঘুম থাকা শর্তেও উঠে রেডি হয়ে অফিসে আসলো।অফিসে এসে আহান নিরাশ হলো।অধরা অফিসে আসে নাই।আহান ভেবেছিল অধরা অফিসে আসবে।দুপুরের দিকে আহান বাসায় চলে আসলো।শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে।খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

সন্ধ্যা বেলায় অধরার ঘুম ভাঙলো।উঠে গোসল করে খেয়ে নিলো।অধরার নানি বেশ অবাক,অধরা কোনোদিন এত ঘুমোই না।হয়তো সারারাত ঘুৃম হয় নাই।তাই ঘুমিয়েছে।অধরা নিজে’ও বেশ অবাক,সে কি করে এত ঘুমালো।অধরা তার মায়ের কাছে গেলো।অধরাকে দেখে তার মা দূরে সরে গেলো।অধরা বুঝতে পারলো,তার মায়ের কাছে গেলে আবার পাগলামি শুরু করে দিবে।কোনো কথা না বলে নিজের রুমে গেলো।

রাতে আহানের ঘুৃম ভাঙলো।সে,আর থাকতে পারলো না।তাকে এখনি অধরার কাছে যেতে হবে,না হলে দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে সে।কোনো কথা না বলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।রাত বারোটায় কলিং বেলের আওয়াজ পেতে-ই ভ্রু কুঁচকে তাকালো অধরা।এতরাতে কে আসতে পারে।অধরা দরজা কাছে গিয়ে।দুইবার প্রশ্ন করলো কে।কিন্তু কোনো উওর পেলো না।অধরা কৌতুহল বশত গিয়ে দরজা খুলে দিলো।অধরাকে ঠেলে আহান ভেতরে প্রবেশ করলো।আহানকে দেখে অধরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।ভুল দেখছে নাতো।আহান গিয়ে অধরার রুমে বসলো।অধরা দরজা লাগিয়ে নিজের রুমে আসলো।আহান মাথা নিচু করে বসে আছে।জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে আহান,দেখে-ই বোঝা যাচ্ছে।অধরা কিছু বলতে যাবে।তখনি আহান এসে অধরার দুই হাত দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।অধরা রেগে বলে।

–সমস্যা কি আপনার।

–তোমার সমস্যা কি।

–আমার কোনো সমস্যা নেই।আপনি কেনো এসেছেন।এখনি বেড়িয়ে যান বলছি।

–যদি না যাই তাহলে কি করবে।

–ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব।

–দেখি তোমার কত ক্ষমতা।আমাকে বের করে দেখাও দেখি।

আহানের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।অধরার দু-হাত শক্ত ভাবে ধরে আছে।ছেলে মানুষের শক্তির সাথে মেয়ে মানুষ তাই পারে।আহান’কে এক চুল পরিমাণ সরাতে পারলো না অধরা।আহান অধরাকে ছেড়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।তারপরে অধরা কে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো।অধরা উঠতে যাবে।তখনি আহান অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুইয়ে পড়ল।অধরা আহানের থেকে ছোটবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।কিন্তু আহানের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।এক পর্যায়ে অধরা শান্ত হয়ে গেলো।মানুষটা চাইছে টা কি।এমন করছে কেনো।দুজনেই জেগে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।কেউ শান্তি পাচ্ছে।প্রান ভের নিশ্বাস নিচ্ছে।কেউ ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।কথা গুলোর আঘাত বারবার আঘাত করছে অধরাকে।

রাত বাজে দু’টো।ঘুম আসতে শুরু করেছে দুচোখের পাতায়।তখনি অধরার ফোনে মেসেজ আসলো।আহান চোখ মেলে তাকালো।পকেটে থেকে ফোন বের করে দেখলো দু’টো বাজে।আহানের এবার খুব রাগ হলো।প্রতিদিন অধরাকে কে মেসেজ পাঠায়।আজ সে,দেখেই ছাড়বে।অধরার ফোন নেওয়ার জন্য হাত বাড়াবে তখনি অধরা ফোন বন্ধ করে দিল।আহান অধরাকে ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।

–ফোন টা দাও।

–দিব না।

–তোমাকে প্রতিদিন কে মেসেজ পাঠায়।আজ আমি দেখেই ছাড়বো।

–আমি আপনাকে সেই অধিকার দেই নাই।আপনি রুহির সাথে কথা বলেন কি না বলেন।আমি দেখতে যাই।

–অধরা আমাকে রাগিও না।ফোনটা দাও আমাকে।কে তোমাকে প্রতিদিন মেসেজ পাঠায়।

–মনে করেন আমার ভালোবাসা মানুষ।আমার খুব কাছের মানুষ।আমার প্রিয় মানুষ।

–কে সে।

–আপনাকে বলতে বাধ্য নই।

–তারমানে তুৃমি অন্য কাউকে ভালোবাসো তাই না।বলে-ই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।তারপরে দেওয়ালে জোরে একটা লাথি মেরে চলে গেলো আহান।

–শুনুন আমার কথা।একবার আমার কথা টা শুনে যান।অধরার কথা আহানের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।

–ধুর আবার আমাকে ভুল বুঝলো।ভালো লাগে না।বলেই অধরা শুয়ে পড়ল।

পরের দিন সকাল বেলা অধরা অফিসে গিয়ে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।
#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

নিজের চোখকে’ও বিশ্বাস করতে পারছে না অধরা।আহান রাগ করেছে।ভেবে আজ আগে অফিসে এসেছে অধরা।আহানকে সত্যি টা বলবে।এসে নিজে-ই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো।আহানকে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।এই দৃশ্য দেখে অধরার বুকের ভেতর টাই ব্যাথা করে উঠলো।অধরাকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে,থাকতে দেখে আহান বলল।

–অধরা কারো রুমে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিতে হয়।সেটা মনে আপনি ভুলে গেছেন।

–সরি স্যার বলে-ই অধরা চলে গেলো।অধরা যাওয়ার সাথে আহান রুহি-কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।

–তোমার সাহস কি করে হয়।আমাকে স্পর্শ করার।বলল আহান।

–এসব তুমি কি বলছো আহান।আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে ছোঁয়ার অধিকার আমার আছে।বলল রুহি।

–এতদিন তোমার ভালোবাসা কোথায় ছিলো।সেদিন নিজের ক্যারিয়ারের জন্য আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে,সেদিন তোমার ভালোবাসা কোথায় ছিলো।একদম নাটক করবে না।ভালোভাবে বের হবে,নাকি দারোয়ান ডেকে,ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব।

–আমি জানি।তুমি আমার ওপরে রেগে আছো।তুমি আমাকে মারো,বকো,কাটো যা ইচ্ছে খুশি করো।আমি তোমাকে কিছু বলবো না।আমি জানি আমার ওপরে তোমার অনেক অভিমান তৈরি হয়েছে।আমি এবার চলে এসেছি।আমার ভালোবাসা দিয়ে,তোমার সব অভিমান ভেঙে দিব।

–তোর মতো কালনাগিনীর কোনো জায়গা আহান চৌধুরীর জীবনে নেই।আমাকে ছুঁইয়ে একদম অপবিত্র করে দিয়েছিস।পুরো শীরর আমার রিরি করছে।আহানের পরনে থাকা ব্লেজার টা খুলতে খুলতে বলল।ব্লেজার টা খুলে ছুরে ফ্লোরে ফেলে দিলো।

–এমন করে বলো না আহান।আমি মরে যাব।তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।আমি কার জন্য করেছি বলো।আমি তোমার ভালোর জন্য-ই করেছি তাই না বলো।

–তুমি মরে যা।তবু-ও আমার অফিস থেকে বেড়িয়ে যা।তোর মতো নোংরা মেয়ে।আমার অফিসে থাকলে আমার অফিসের অসন্মান হয়ে যাবে।

–বেশ ভালো কথা বলতে শিখে গেছো তুমি।আগে তো এমন ছিলে না।আগে শান্ত,বোকাসোকা সহজ-সরল অবুঝ আহান ছিলে।নিজেকে এতটা পরিবর্তন কিভাবে করতে পারলে আহান।বলল রুহি।

–তোকে আমার সব কৈফিয়ত দিতে হবে।আমি শেষ বারের মতো বলছি।ভালো-ই ভালো-ই বেড়িয়ে যা-ও।আমি রেগে গেলে তোমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।

–যতক্ষণ না তুমি আমাকে মাফ করবে।আমি ততক্ষণ এক চুল পরিমাণ সরবো না।আমি রাগ ভাঙিয়ে তারপরে যাব।কথা টা শেষ হবার আগে-ই আহান রেগে রুহির ঘাড় ধরে নিজের রুম থেকে বের করে দিলো।তাল সামলাতে না পেরে,রুহি ফ্লোরে পরে গেলো।রুহির এভাবে পড়ে যাওয়া দেখে,কয়েকজন শব্দ করে হেঁসে উঠলো।আহান রুমে এসে পানির বোতল বের করে হাত ধুইয়ে নিলো।

অধরা নিজের কেবিনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ল।ভেতর টা পুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।নিজের ওপরে নিজেরি বেশ রাগ হচ্ছে,অধরার।আগে তো সে,এমন ছিলো না।এখন কোথায় কোথায় এমন কান্না করে কেনো,তা-ও ছোট খাটো বিষয়ে।এটা তো সত্যি আহান তাকে ভালোবাসে না।এই সত্যটা মেনে নিতে এত কষ্ট কেনো হচ্ছে আমার।সত্যি নিজের ভালোবাসার মানুষরে পাশে অন্য কারো ছায়া’ও সয্য করা যায় না।সেখানে একটা মেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।এটা দেখার পরে অশান্ত মন-কে কিভাবে শান্ত করবো।মাথা কাজ করছে না আমার।নিজকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে।আহানের থেকে খুব বেশি দূরে দূরে থাকতে হবে।তা-না হলে শেষ হয়ে যাবি অধরা।বাঁচতে পারবি না।আমি এত সহজে দুর্বল হয়ে যেতে পারি না।আমি এমন কেনো হয়ে গেলাম।এক হাতে চোখের পানি মুছছে।আর নিজের মতো একা বকবক করছে।তখনি আদিল আসে অধরার কাছে।অধরা তড়িঘড়ি করে চোখের পানি মুছে।

–কিছু বলবেন।

–কি হয়েছে তোমার।কান্না করছো নাকি।তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেনো।বলল আদিল।

–আপনি যে,কাজে এসেছেন।সেটা বলুন।এসব দেখা আপনার কাজ না।

–সরি।আসলে আমি এই প্রজেক্ট টা করতে পারছি না।তুমি যদি একটু সাহায্য করতে।আমি জানি নিজের কাজ নিজেকে-ই করতে হয়।কিন্তু আজকে আমার একটু তাড়া আছে।আমার আম্মু অসুস্থ।আম্মুকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে।তা-না হলে আমি করতাম।

–আচ্ছা আপনি বসুন আমি আপনাকে সাহায্য করছি।তারপরে আদিল একটা চেয়ার নিয়ে এসে অধরার পাশে বসলো।দু’জন মিলে এক ঘন্টা কাজ করে সফল হলো।আদিল অধরা-কে ধন্যবাদ জানিয়ে।অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে গেলো।বিকেলের দিকে কাজ করে।নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে বাসার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ল।তখনি অধরার ফোনে একটা ফোন আসলো।

–হ্যাঁ বলো।

ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন কিছু বলে উঠলো।

–আচ্ছা চিন্তা করো না।আমি এখনি আসছি।বলে-ই উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলো।

রাত আটটা বেজে গেছে।অধরা তাড়াতাড়ি করে ফাঁকা রাস্তায় হাঁটছে।ভেতরে ভেতর ভয় কাজ করছে।সন্ধ্যার পরে খুব কম মানুষ চলাফেরা করে এই দিকে।একা আসা ঠিক হয় নাই।কিন্তু না এসে’ও উপায় ছিলো না।এর পরে থেকে দিনে আসবো।এসব ভেবে জোরে জোরে হাঁটছিল অধরা।আরেকটু গেলে-ই মেইন রাস্তায় উঠতে পারবে।তখন আর মানুষজন গাড়ির অভাব হবে না।পেছনে থেকে কেউ ডেকে উঠলো।

–কুইন।

অধরা পেছনে তাকালো না।আগের মতো হাঁটা শুরু করলো।আবার ডেকে উঠলো।

–আমার কুইন।

তবু’ও অধরা দাঁড়াল না।সে,জানে রাতের বেলা এই জায়গাটা কতটা বিপদজনক।বাজে লোকেরা রাতের বেলা এখানে আসে।হুট করে কয়েকজন কালো পোশাক পড়া লোক এসে অধরার সামনে দাঁড়াল।

–রাজকন্যা বুঝি আমার ডাক শুনতে পায় নাই।এত সুন্দর করে ডাকলাম।তবু’ও দাঁড়ালে না আমার পাগল রানী।বলল একজন লোক।

–বাহ আপনি তো অনেক সুন্দর করে কথা বলেন।দেখাতে’ও মাশাল্লাহ।অনেক স্মার্ট।লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল।

লোকটি অবাক হয়ে অধরার তাকিয়ে আছে।মেয়েটির সাহস দেখে অবাক হচ্ছি।অন্য কেউ হলে পালাতে শুরু করে দিতো।না হলে বাঁচার জন্য চেষ্টা করতো।এই মেয়ে পালানো তো দূর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ পর্যন্ত নেই।উওর না পেয়ে অধরা আবার বলল।

–এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলবো নাকি।হাঁটা শুরু করবেন।

–তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।তোমার ভয় লাগছে না।

–কিসের ভয়।আপনারা আমার সর্বোচ্চ কি করতে পারবেন।আমাকে মেরে ফেলবেন এর থেকে বেশি কিছু করতে পারবেন না।প্রতিটি জীবকে-ই মৃত্যুর সাধ গ্রহণ করতে হবে।আমি দু’দিন পরে মরতাম।এখন না হয় দু’দিন আগে মরতো।

–দারুণ কথা বলো তুমি।তোমাকে আমার বেশ ভালো লাগছে।আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।তুমি যদি রাজি থাকো।

–আশেপাশে কেউ নেই।এখানে আপনাদের দশজন-কে খুন করে রেখে গেলে।আমার মনে হয় কেউ টের পাবে না।চারিদিকে অন্ধকার।সিসি ক্যামেরা’ও নেই।বলল অধরা।

–স্যার পেছনে তাকিয়ে দেখুন।আমরা দশজন এসেছিলাম।পেছনে থেকে ছয়জন নেই হয়ে।লোকটি পেছনে তাকিয়ে দেখলো সত্যি।এই সুযোগ অধরা দৌড়ে দিলো।আরেক-টু গেলে-ই মেইন রাস্তায় উঠতে পারবে।অধরা আর বেশি দূরে যেতে পারলো না।তার আগে-ই লোকটি অধরার পায়ে হকিস্টিক ছুড়ে দিলো অধরার ডান পায়ের দিকে।অধরা পায়ে ব্যাথা পেয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।ব্যাথা পায়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটাতে শুরু করলো।একটু দূর যেতে-ই কালো রং এর একটা গাড়ি দেখতে পেলো।গাড়ির সামনে একটা ছেলে কালো রং এর শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো কোনোকিছু দিয়ে চিন্তা করছে।অধরা হাঁটতে হাঁটতে লোকটির কাছে চলে এসেছে।পেছনের চারজন’ও অধরার কাছে চলে এসেছে।কারো পায়ের শব্দ পেয়ে আহান পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো।অধরাকে আসতে দেখে অবাককে শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।অধরা আহানকে দেখে প্রান ফিরে পেলো।কোনো রকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে আহানের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল।

–আমাকে বাঁচান।ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।বলল অধরা।

–তুমি এত রাতে এই রাস্তায় কি করতে এসছো।

–আমার আরেকটা শশুর বাড়ি আছে।তাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।

লোকগুলো আহান কে দেখে বলল।

–স্যার আপনি।

–তোমরা মেয়েদের পেছনে ঘুরো।তোমাদের এই কাজের জন্য আমি রাখছি।তোমরা জানো তোমরা কার দিকে হাত বাড়াতে চেয়েছিলে।তোমাদের এই অসভ্যতামির শাস্তি তোমরা পাবে।বলল আহান।

–সরি স্যার আর হবে না।আমাদের ভুল হয়ে গেছে।আমাদের মাফ করে দিন।আমরা তো অন্য কাউকে মনে করে ওনার পেছনে পেছনে আসছিলাম।

–আমার সামনে থেকে চলে যা-ও।তোমাদের মুখ দেখতে চাচ্ছি না।তোমাদের আমি পরে দেখে নিব।লোক গুলো চলে গেলো।

–ধন্যবাদ আপনাকে।

–কিসের জন্য।

–এই যে,আপনি আমাকে বাঁচালেন।আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে।আজ তাহলে আসি।বাসার সবাই আমার জন্য চিন্তা করছে।বলে-ই অধরা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটা শুরু করলো।আহান দৌড়ে গিয়ে অধরার সামনে দাঁড়াল।

–এতরাতে কোথায় গিয়েছিলে।পায়ে কি হয়েছে তোমার।

–তেমন কিছু না।একটু ব্যাথা পেয়েছি।সমস্যা নেই আমার অভ্যাস আছে।

–আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।

–ধন্যবাদ স্যার,লাগবে না।আমি যেতে পারবো।

–না তুমি যেতে পারবে না।হাঁটতে পারছো না।আবার বলছো যেতে পারবে।

–আমাকে নিয়ে এত না ভাবলে’ও চলবে আপনার।

–তাহলে কে ভাব্বে।

–আমি নিজের টা নিজে-ই ভাবতে পারি।অনেক রাত হয়েছে আসি।বলে-ই সামনের দিকে এগোতে যাবে।তখনি আহান অধরাকে কোলে তুলে নিলো।পায়ে ব্যাথা থাকায় ছোটাছুটি’ও করতে পারছে না।

–আমাকে নামিয়ে দিন।লজ্জা করে না আপনার।এভাবে অন্য একটা মেয়েকে যখন তখন না বলে,কোলে তুলে নেন।

–বউ হও তুমি আমার।তুমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছো।এই অবস্থা একা যেতে পারবে না।স্বামী হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না।

–কিসের স্বামী।আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না।নামিয়ে দিন আমাকে।

আহান কোনো কথা বলল না।অধরাকে হালকা করে ছেড়ে দিতে লাগলে,অধরা ভয়ে আহানের গলা জড়িয়ে ধরলো।আহান হালকা হেঁসে অধরাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।অনেকক্ষন হলো আহান গাড়িতে বসে আছে।গাড়ি চালাচ্ছে না দেখে।অধরা বিরক্ত হয়ে বলল।

–কি হলো গাড়ি চালাচ্ছেন না কেনো।

–তোমাকে একটা গিফট দিবো নিবে।

আহানের কোথায় অধরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

–কেনো আপনার গার্লফ্রেন্ডের বুঝি পছন্দ হয় নাই।তাই আমাকে দিতে আসছেন।বলল অধরা।আহান রেগে অধরার দিকে তাকালো।অধরা নিজের দৃষ্টি নামিয়ে নিলো।খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো।সকালের মেয়েটি কে ছিলো।কেনো আপনাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো।এত সাহস কোথায় পেলো।আপনি বা কিছু বলছিলেন না কেনো।কিন্তু মনের কথা গুলো মনে-ই রেখে দিলো।কেউ কোনো কথা বলছে।দু’জনের মধ্যে নিরবতা বিরাজমান করছে।আহান পকেট থেকে একটা লাল রং এর বক্স বের করলো।বক্সটি খুলে একটা সোনার আংটি বের করলো।অধরার বাম হাত নিজের দিকে নিয়ে আসলো।অধরা হাত সরিয়ে নিয়ে আসতে চাইলে আরো শক্ত করে ধরলো অধরার হাত।অধরার হাতে আংটি টা পড়িয়ে দিয়ে অধরার হাতে চুমু খেলো আহান।অধরা দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো।

–কি হচ্ছে টা কি।আমাকে যদি না নিয়ে যাবেন।তাহলে কেনো এভাবে আটকে রেখেছেন।আমাকে যেতে দিন।আমার খুব খারাপ লাগছে।বাসায় যাব আমি।

–কেনো খারাপ লাগছে।কি হয়েছে।আমাক কেনো সয্য করতে পারছো না।

অধরা আর কোনো কথা বলল না।চুপ করে রইলো।

–আমার একটা কথা রাখবে।

অধরা আহানের দিকে তাকালো।আহান বলতে শুরু করলো।

–তুৃমি এই আংটি টা কখনো খুলবে না।যত যাই কিছু হয়ে যাক না কেনো।কখনো খুলবে না।আমাকে কথা দাও।

–আমি এসব কথা দিতে পারবো না।আমি এসব পড়তে ভালোবাসি না।এসব আমার লাগবে না।বলে’ই আংটি টা খুলে দিতে লাগলো অধরা।

আহান অধরার হাতে ওপরে হাত রেখে বলল।থাক কথা দিতে হবে না।তুমি তোমার কাছে-ই রাখো।তোমার যা ইচ্ছে খুশি করবে।বলেই গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

চলবে…..
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here