#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_২৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
‘আহান বেলকনি’তে গিয়ে দেখলো,অধরা বেলকনি’র গ্রিল ধরে,নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।অধরা’কে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরতে যাবে।তখনি অধরা দূরে সরে দাঁড়াল।আহান গিয়ে বেলকনির গ্রিলের ওপরে পড়ল।নাকে,হালকা ব্যাথা পেলো আহান।অসহায় দৃষ্টিতে অধরা’র দিকে তাকালো।
–খবরদার বলছি,একদল আমাকে স্পর্শ করবেন না।আমি আপনার সাথে এসেছি।তারমানে এই না,যে আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি।কথা গুলো বলে-ই গটগট করে রুমে চলে গেলো।
পরের দিন সকাল বেলা আহান ভোরে উঠে বাগানে গিয়ে শিউলি ফুল কুড়িয়ে নিয়ে আসলো।আজ সে,খুব ভোরে উঠেছে।সকাল থেকে ফুলের মালা বানাচ্ছে আহান।ফুল দিয়ে বিভিন্ন রকমে’র গহনা বানাচ্ছে। অধরা’র জন্য,এতে যদি অধরা’র রাগ একটু ভাঙে।শুনেছি মেয়েরা ছোট-খাটো উপহার পেলে খুব খুশি হয়।সেজন্য হালকা প্রচেষ্টা আহানের অধরা’র জন্য।
–সকাল থেকে এত যত্ন সহকারে,কার জন্য বানানো হচ্ছে,বউয়ের জন্য বুঝি।বলল তিতির।
–আমার ওপরে এখনো রাগ করে আছে।ঠিক মতো কথা বলে না।এই সামান্য উপহার দিয়ে যদি খুশি করতে পারি।বলল আহান।
–আচ্ছা ঠিক আছে।চেষ্টা করে দেখ,মহারাণীর রাগ ভাঙাতে পারিস কি না।বলে-ই তিতির চলে গেলো।আহান ফুলের মালা গুলো নিয়ে নিজের রুমের দিকে গেলো।অধরা এখনো ঘুমোচ্ছে।রুমে এসে কিছুক্ষণ ঘুমন্ত অধরা’র দিকে চেয়ে রইলো আহান।অধরা’র কাপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে,দেওয়ার জন্য।আহান অধরা’র পাশে বসলো।হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিতে লাগলো।মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে,ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো অধরা।আহান-কে নিজের এত কাছে দেখে রেগে আহানে’র গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
–আপনাকে বলেছিলাম না।একদম আমার কাছে আসবেন না।আমি ঘুমিয়ে গেলে আমার ঘুমের সুযোগ নেন তাই না।আপনার এত সাহস হয় কি করে,আমাকে স্পর্শ করার।
সামান্য পাশে বসা নিয়ে,অধরা আহানে’র গায়ে হাত তুলতে পারে।তা আহানের কল্পনার’ও বাহিরে,একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে আহান।কি বলবে,তার এখন কি বলা উচিৎ।কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে সে”!অধরা-কে খুব বেশি বিরক্ত করা হয়ে যাচ্ছে।একটা মানুষের প্রতি কতটা বিরক্ত হলে,তার গায়ে হাত তোলা যায়।আমার ওপরে যখন এতটা-ই বিরক্ত তুমি।আজ থেকে তোমাকে আর বিরক্ত করবো না অধরা।আহান কোনো কথা না,বলে চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।অধরা আহানে’র যাওয়ার,প্রাণে তাকিয়ে আছে।একটা কথা না বলে,চুপচাপ চলে গেলো।বিষয়টা অধরা’কে বেশ অবাক করলো।তিতির অধরা’র রুমে এসে বলল।
–দেখি অধরা-কে কেমন লাগছে।বলতে বলতে অধরা’র দিকে এগিয়ে আসলো।
–আমাকে কেমন লাগছে মানে”!
–আমার ভাই যে,সকাল থেকে শিউলি ফুল কুড়িয়ে নিয়ে এসে,তোমার জন্য ফুলে মালা,ফুল দিয়ে হাতে চুরি,মাথায় দেওয়ার জন্য টায়রা বানালো।সেগুলো কই তোমাকে দেয় নাই।বলে-ই ফ্লোরের দিকে তাকালো তিতির।তাকিয়ে বলল।দেখো ছেলের কান্ড।নিজের হাতে তোমার জন্য এতকিছু করলো।আর তোমার হাতে না দিয়ে ফ্লোরে রেখে গেছে।মাথামোটা একটা,কোনোকিছু সঠিকভাবে করতে পারে না।
তিতিরে’র কথা শুনে,অধরা ফ্লোরে তাকিয়ে দেখলো,গোলাপি রংয়ের ঝুড়ির মধ্যে সাদা ধবধবে তাজা শিউলি ফুল দিয়ে বিভিন্ন রকমের গহনা তৈরি করা।নিমিষে-ই অধরা’র মন টা ভালো হয়ে গেলো।ফুল ভালোবাসে না।এমন মেয়ে খুব কম-ই খুঁজে পাওয়া যাবে।ছোট বেলায় কতো কুড়িয়ে মালা বানিয়ে ঘরে রেখে দিয়েছে অধরা।তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে নামলো অধরা।ঝুড়িটা হাতে তুলে নিলো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো।তিতির হেঁসে রুম ত্যাগ করলো।
ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো অধরা।তারপরে ফুলগুলো নিয়ে পড়লো।খুব সুন্দর করে ফুলগুলো দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তুলল অধরা।একদম ফুলপরীর মতো লাগছে অধরা’কে।নিজের ফোনে কয়টা ছবি তুলে রাখলো অধরা।তারপরে সবকিছু খুলে রেখে নিচে গেলো।খাওয়া দাওয়া করে,আহান’কে খুঁজতে লাগলো।সকালে আহান তাকে,ফুল দেওয়া’র জন্য আসছিলো।আর সে,আহান-কে ভুল বুঝে মারলো।এখন নিজের কাছে-ই বেশ খারাপ লাগছে অধরা’র।সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো,এখনো আহানে’র আসার নামে কোনো খবর নেই।অধরা’র মন খারাপ হয়ে গেলো।চাতক পাখির মতো আহানে’র জন্য অপেক্ষা করছে।এভাবে সময় সময়ের নিয়মে গড়িয়ে যাচ্ছে।আহান এখনো আসছে না।ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁই ছুঁই।আহান এখনো আসছে না দেখে,অধরা’র ভিষণ চিন্তা হতে লাগলো।দৌড়ে তিতিরে’র কাছে গেলো।
–আপু উনি কোথায় গেছেন,সকালে উনাকে দেখেছিলাম।এর পরে আর দেখছি না।ফোনটা’ও বাসায় রেখে গেছে।তুমি জানো কোথায় গেছেন উনি।
–আহানের কথা বলছো।আহান “তো” ওর বন্ধুর,বাসায় গিয়েছে।তিতলি’র বিয়ের আগের দিন আসবে।
–কই আমাকে কিছু বলে নাই।তোমাকে বলে গেলো।আমাকে একটা বার জানানোর প্রয়োজন মনে করে নাই।নিমিষে-ই অধরা’র মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কোনো কথা না বলে,নিজের রুমে চলে গেলো।
এভাবে তিতলি’র গায়ে হলুদে’র দিন চলে আসলো।অধরা সকাল থেকে আহানে’র জন্য অপেক্ষা করছে।কয়টা দিন খুব ছটফট করেছে অধরা।আজ অপেক্ষার অবসান ঘটবে।আজ সময় যেনো,কাটতে-ই চাইছে না অধরা’র।অধরা’র সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিকেলে’র দিকে আহান বাসায় ফিরলো।অধরা ড্রয়িং রুমে-ই বসে ছিলো।আহান বাসায় এসে কোনোদিকে, না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।বীরদের বাসা দূরে হবার কারনে,সন্ধ্যার সময় গায়ে হলুদের ব্যবস্তা করা হয়েছে।কাজ রেখে অধরা উঠে চলে যাবে।তার-ও উপায় নেই।লোকে কি বলবে।চুপচাপ বড়দের সাথে কাজ করতে লাগলো।একটু পরে আহান নিজে-ই ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই বরের বাসার লোকজন চলে আসলো।রুহি’ও এসেছে,খুব সুন্দর করে সেজেছে।দেখলে যে,কেউ পছন্দ করবে।সবাই তিতলি’র কাছে চলে গেলো।একে একে সবাই তিতলি-কে হলুদ পড়িয়ে দিলো।হলুদ পড়ানো শেষ হলে,মেহেদী দাওয়া শুরু করলো।রুহি এসে আহানে’র পাশে বসলো।
–তুমি তোমার বোন’কে হলুদ পড়িয়ে দিবে না আহান।
–না,তোমাদের বাড়ির বউ তোমরা-ই দাও।
–তুমি কি আমার ওপরে রাগ করে আছো।
–তুমি আমার কে”?তোমার ওপরে রাগ করতে যাব।বলে-ই আহান উঠে চলে গেলো।এতক্ষণ সবকিছুই দেখছিলো অধরা।নিজের কাজ শেষ করে,রুহির পাশে গিয়ে বসলো।
–আহানের সাথে কি কথা বলছিলে রুহি আপু।বলল অধরা।
–ভয় নেই।তোমার জামাই-কে কেঁড়ে নিতে আসি নাই।
–নিলে-ও নিতে পারো।এমন দুর্বল মানুষ আমার দরকার নেই।আহান এমনিতেই দুর্বল প্রকৃতির একটা ছেলে।এমন দুর্বল ছেলে নিয়ে আমি কি করবো।তুমি বরং রেখে দাও।আর কয়টা দিন পরে তো আমি ছেড়ে-ই দিব।
রুহি রাগী দৃষ্টিতে অধরা’র দিকে তাকালো।
–তুমি এসব কি বলছো।তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।অধরা কোনো উওর না দিয়ে চলে যেতে,লাগলো।রুহি কি একটা ভেবে বলল।
–অধরা শুনো আহান সত্যি দুর্বল প্রকৃতির ছেলে।
–তবে আমি তোমাকে মিথ্যা কথা বলছি।আহান আমার স্বামী,আমি তার বউ এতটুকু জানবো না।এতদিন হলো বিয়ে হয়েছে।আমার একটা নখ’ও ছুঁইয়ে দেখে নাই।আচ্ছা তুমি বলো যখন তোমাদের রিলেশন ছিলো।তোমরা কখনো কাছাকাছি এসেছো।আহান তোমার কাছে গিয়েছিল।কথা গুলো বলে-ই অধরা থামলো।মিথ্যা কথা বলার জন্য আল্লাহ’র কাছে মাফ চেয়ে নিলো।অধরা’র ভেতরে প্রচুর অস্থিরতা কাজ করছে।রুহির দিক থেকে যেন,কোনো বাজ উত্তর না আসে।রুহির উত্তর শোনার জন্য ভেতরটা ছটফট করছে অধরা’র।ভিষণ ভয় কাজ করছে অধরা’র মাঝে,এমনিতেই মেয়েটা’কে সয্য করতে পারে না অধরা।রুহির চুপ থাকা দেখে বুকের বামপাশে হালকা ব্যাথা অনুভব করলো অধরা।বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে রুহি বলল।
–তুমি ঠিক বলেছো অধরা।আমার মনে হয়,আহানের কোনো সমস্যা আছে।তা-না হলে,আমাদের রিলেশনের ছয়মাস হয়ে গিয়েছিল।আহান আমাকে কোনোদিন স্পর্শ করে দেখে নাই।একদিন আমি নিজে ওর হাত ধরে ছিলাম।তবু্’ও জোর করে।ও আমাকে বারবার বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছিলো।আল্লাহ যা,করে ভালোর জন্যই করে।এখন বুঝতে পারলাম।আজকাল খুব কম ছেলে পাওয়া যাবে।যে,তার গার্লফ্রেন্ড-কে স্পর্শ না করে থাকে।আর আহান আমাকে কতদিন একা পেয়েছে।তবু’ও দূরে দূরে থেকেছে।আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।বলে-ই উঠে চলে গেলো রুহি।
এদিকে অধরা পারে,তো হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খায়।সে,তার উত্তর পেয়ে গেছে।আর কিছুর জানার দরকার নেই।তবু’ও ভেতরে ভেতর খারাপ লাগা কাজ করছে।অন্য একটা মেয়ে তার স্বামীকে স্পর্শ করেছে।তার স্বামীর হাত ছুঁইয়ে দেখেছে।ভাবতে-ই অধরা’র কলিজা কেঁপে উঠলো।তবু’ও নিজের মন’কে শান্তনা দিয়ে।হাসতে হাসতে চলে গেলো।রুহি’কে তো জব্দ করতে পেরেছে।
অর্ধেক রাস্তা এসে রুহি আবার ঘুরে আসলো।কিন্তু অধরা’কে পেলো না।রুহি মনে মনে বলল।
–আচ্ছা অধরা আমাকে মিথ্যা কথা বলল না তো।আমি কথা’টা আহান-কে সরাসরি প্রশ্ন করবো।তখন দেখবো আহানের উত্তর কি হয়।তাহলে বুঝবো অধরা সত্যি কথা বলছে।রুহি আহান’কে খুঁজতে লাগলো।তিতিরে’র কাছে এসে আহান-কে খুঁজে পেলো।
–আহান তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।একটু এইদিকে আসবে।
–দেখতে পারছো না কাজ করছি।আমার সময় নেই।যা-ও পরে শুনবো।
–কথাটা গুরুত্বপূর্ণ।এখনি বলতে হবে।
–তোমার মতো নির্লজ্জ মেয়ে আমি দু’টো দেখি নাই।দেখতে পাচ্ছো,তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না।ছ্যারা’র মতো এখনো পেছনে পড়ে আছো।
আহানের কথা শুনে রুহি রেগে তিতিরে’র সামনেই বলে উঠলো।
–তোমার মতো দুর্বল ছেলের পেছনে পড়ে থাকতে আমার বইয়ে-ই গেছে।তুমি কিভাবে ভাবলে আমি রুহি তোমার পেছনে পড়ে থাকবো।যতসব।
আহান রুহির কোথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তিতির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে।রুহি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
–আপু এই মেয়ে-কে কিন্তু আমি কিছু একটা করে ফেলবো।এতে যদি তোমার বোনের বিয়ে ভেঙে যায় যাবে।অনেক সয্য করেছি।আর না ওর ভাইয়ের সাথে আমার বোনের বিয়ে হচ্ছে মানে,তার মানে এই না যে,ও আমার মাথা কিনে নিয়েছে।এসব ফালতু কথা বলার সাহস কোথায় থেকে পেলো।বলল আহান।
–আমি কিছু বলি নাই।যা বলার তোমার বউ বলছে।তোমার বউ যদি আমাকে না বলে,তাহলে আমি এসব কি করে জানলাম।তুমি নাকি দুর্বল প্রকৃতির ছেলে।বিয়ের এতদিন হয়ে গেছে।বউয়ের নখ’ও ছুঁইয়ে দেখো নাই।সব তোমার বউ বলেছে।তাই তো বলি তুমি কেনো আমার কাছে আসতে চাইতে না।আমি এমন একটা ছেলের সাথে রিলেশন করেছি।
আহান রেগে দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো।রেগে বলল অধরা’র বাচ্চা আজ তোমাকে পাই খালি।তবু’ও নিজেকে শান্ত রেখে বলল।
–অধরা তোমাকে এসব কথা বলেছে।
–বিশ্বাস না হলে অধরা-কে ডেকে নিয়ে আসবো।
রুহির কথা শুনে তিতির মুখ টিপে হাসলো।আহানের বেশ লজ্জা লাগছে।বড় বোনের সামনে তাকে এভাবে অপমান হতে হলো।অধরা’কে তাজাই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে আহানে’র।আমাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলা বের করছি আমি ওর।আহান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।লজ্জায় বোনের দিকে তাকাতে’ও পারছে না।রুহি সেখানে থেকে চলে গেলো।তিতির নিজের কাজে মনযোগ দিলো।আহান অধরা’কে পুরো বাসা জুড়ে খুঁজতে লাগলো।অবশেষে রান্না ঘরে গিয়ে অধরা’কে পেলো।রাগী দৃষ্টিতে অধরা’র দিকে তাকিয়ে আছে।আহানে’র মা রান্না ঘরে থাকায় কিছু বলতে’ও পারছে না।সুন্দর করে হেঁসে বলল।
–অধরা একটু রুমে এসো কথা আছে তোমার সাথে।অধরা শুনে’ও না শোনার ভান ধরে বসে থাকলো।
আহান দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
–কি হলো আমার কথা কানে যাচ্ছে না।তোমাকে কিছু বলছি আমি।
অধরা মনে মনে দোয়া-কালেমা পড়তে শুরু করলো।এখন তাকে কে বাঁচাবে।রেগে তখন উল্টা পাল্টা মুখে যা,আসছে বলে দিয়েছি।এখন আমাকে কে”?রক্ষা করবে।অধরা হাত ধুইয়ে উঠে আসলো।আহান সামনের দিকে এগোতে লাগলো।অধরা পেছনে থেকে দে দৌড়।অধরা’কে আর পায় কে”?বহু কষ্টে বাসার কাজের লোকের রুমে এসে লুকানো অধরা।দরজার ওপাশ থেকে আহান বলে গেলো।
–তুমি কতক্ষণ এই রুমের মধ্যে বসে থাকবে।একটা সময় ঠিকি বের হতে হবে।তখন দেখবো,তোমাকে কে বাঁচায়।বলে-ই আহান গটগট করে চলে গেলো।অধরা মনে মনে ভাবলো আজ কিছুতেই সে,রুমে যাবে না।আজ বরং তিতির আপুর কাছে ঘুমাবে।যে,করেই হোক আজকে’র রাতটা কারো রুমে থেকে যাবে।তিতলি’কে হলুদ পড়িয়ে সবাই চলে গেলো।আশেপাশের আত্নীয়-স্বজন ড্রয়িং রুমে আড্ডা দিচ্ছে।
কাজের মেয়েটি কাজ শেষ করে নিজের রুমে আসছিলো বিশ্রাম নেওয়া জন্য।এসে দেখে তার রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো।আমার রুমে কে রে।চোর আইলো নাকি।অধরা তাড়াতাড়ি এসে দরজা খুলে দিয়ে বলল।
–চুপ,চপ আমি,আমি অধরা চিৎকার কইরেন না খালা।
–আরে অধরা মা তুমি।তুমি আমার ঘরে কি করছো।তুমি আমার মতো করে কথা কইলে।
–আপনি বললেন,তাই আমি’ও আপনার সাথে বললাম।মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমার।আগে বলেন উনি কোথায়।
–আহান বাবা নিজের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
এটাই সুযোগ আহান নিজের রুমে আছে।এই সুযোগে তিতর আপুর রুমে যেতে হবে।অধরা তাড়াতাড়ি করে বেড়িয়ে তিতিরে’র রুমের কাছে গেলো।রুমের ভেতরে প্রবেশ করতে যাবে।তখনি আহান খপ করে অধরা’র হাত ধরে ফেললো।আহান এতক্ষণ অধরা’কে ধরার জন্য-ই বসেছিলো।আহানের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।ভয়ে অধরা শুকনো ঢুক গিললো।
#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–জানো ভাইয়া অধরা আজ-কে আমাকে কি বলেছে।বলল রুহি।
রুহি’র কথা’য় বীর ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তারপরে রুহি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা হয়েছে।সবকিছু বীর’কে বলল।রুহি’র কথা শুনে বীর অনেক’টা রেগে গেলো।
–গাধা মেয়ে একটা।কখনো দেখেছিস।একটা মেয়ে তার স্বামীর নামে,কারো কাছে বদনাম করেছে।আহানে’র থেকে তোকে দূরে সরানোর জন্য অধরা,চালাকি করে তোকে এসব বলেছে।আর তুই বদলের মতো বিশ্বাস করে নিলি।আহানে’র সাথে ঝামেলা করে চলে আসলি।সত্যি যদি এমন টা হয়ে থাকে।তাহলে আহান আর অধরা’র মিল কখনো হতে দিব না।বলে-ই তিতলি-কে ফোন দিলো।
–হ্যালো বীর তুমি আমাকে ফোন দিয়েছো।আমি বিশ্বাস-ই করতে পারছি না।
–আজ-কে অধরা’কে তোমার সাথে ঘুমোতে বলবে কেমন।
–কিন্তু কেনো”?
–এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পরবো না।তুমি যদি আমার কথা না শুনো।তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
–তুমি রেগে যাচ্ছো কেনো।আমি যাচ্ছি।আর অধরা আজ-কে আমার সাথে ঘুমাবে।তুমি চিন্তা করো না।বলে-ই ফোন রেখে বাহিরে চলে গেলো তিতলি।ড্রয়িং রুমে আসতে-ই তিতলি’র ‘মা’ তিতলি-কে কাছে ডাকলো।তিতলি মায়ের পাশে গিয়ে বসলো।
অধরা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আহান অধরা’র হাত শক্ত করে ধরে।টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।অধরা দৌড়ে বিছানায় উঠে বসলো।আহান দরজা বন্ধ করে অধরা’র কাছে এসে বসলো।
–তুমি রুহি’র কাছে কি বলেছো।
–রুহি কে”?আমি কোনো রুহি-কে চিনি না।আমি কোনো রুহির কাছে বলি নাই।আপনি দুর্বল প্রকৃতির ছেলে।
–আমি কখন বললাম,তুমি রুহি’র কাছে এসব বলেছো।এখনি বললে,তুমি রুহি-কে চিনো না।এখনি আবার বলছো।তুমি রুহি’র কাছে কিছু বলো নাই।
আহানে’র কথা শুনে,অধরা জিভে কামড় দিলো।নিজের জালে নিজে-ই ফেঁসে গেলো।
–কেনো পুরোনো প্রেম জেগে উঠেছে।বলেছি বেশ করেছি।দরকার পড়লে আরো বলবো।পুরো এলাকায় বলে আসবো।যেনো কোনো মেয়ে আপনাকে বিয়ে করা তো দূর।আপনার আপনার আশেপাশে’ও আসবে না।
–তাতে তোমার কি তোমার এত লাগছে কেনো।তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।তুমি যখন রুহির কাছে এসব উল্টা পাল্টা কথা বলেছো।তাহলে তো একটু প্রমাণ করে দিতেই হয়।
–মানে”?
–কাছে আসো বোঝাচ্ছি।
–আমার ভুল হয়ে গেছে।তওবা,আর কোনোদিন কারো কাছে,আপনার নামে,এমন কথা বলবো না।আমাকে যেতেদিন।রোহান আমাকে ডেকেছিল।
আহান অধরা’র একদম কাছে চলে আসলো।অধরা’র ঠোঁট হাত রেখে বলল হুস একটা কথা’ও বলবে না।আজকের দিন আমার।বলে-ই অধরা’র চুলগুলো খুলে এলোমেলো করে দিলো।অধরা কাপা কাপা গলায় বলল।
–আপনি কথায় কথায় আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দেন কেনো।আমার চুলে’র সাথে আপনার কিসের শত্রুতা।
–এতকিছু বলার পরে’ও তোমাকে এখনো এলোমেলো করে দেই নাই।এটা-ই তোমার ভাগ্য ভালো।আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করো।অধরা’র কানের কাছে গিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল আহান।আহানে’র শীতল কণ্ঠে বলা কথা গুলো অধরা’র কলিজা কেঁপে উঠলো।হৃদপিন্ডের গতিবেগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে।ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে অধরা’র।আহান অধরা’র গালে গভীর ভাবে চুমু খেলো।অধরা ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।অধরা কিছু বলতে যাবে।অধরা’কে বলার সুযোগ না দিয়ে।অধরা’র ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো আহান।বেশ কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিয়ে।অধরা’র দিকে তাকিয়ে আছে আহান।অধরা মাথা নিচু করে বসে আছে।মুখ দিয়ে একটা কথা’ও বের হচ্ছে না।দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে।আহান অধরা’র এগোতে যাবে।অধরা,আহান’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।অধরা’র কান্ড দেখে আহান হাসলো।অধরা চোখ বন্ধ করে আছে।কেমন জানি মানুষটা’কে দেখলে-ই লজ্জা লাগছে।এখন যদি মানুষটা’র সামনে থেকে দৌড়ে পালাতে পারতো।তাহলে অধরা’র থেকে বেশি খুশি কেউ হতো না।কেনো যে,কথা গুলো বলতে গেলাম।অধরা’র ভাবনার মাঝে-ই আহান অধরা’কে নিজের সামনে,নিয়ে আসলো।অধরা মাথা নিচু করে বসে আছে।অধরা’র সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো যত্ন সহকারে কানে গুজে দিলো আহান।
–এখন কথা বলছো না কেনো।কি কি জানি বলেছিলে।
আহানে’র কথা শুনে,অধরা’র ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।এখন কে বাঁচাবে তাকে।কেনো যে,কথাগুলো বলতে গেলো।অধরা আহনে’র থেকে সরে বিছানার এক কোণে চলে গেলো।আহান যখনি অধরা’র দিকে এগোতে যাবে।তখনি রোহান জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে।
–মামু দরজা খুলো।আম্মু আজকে তোমার সাথে ঘুমোতে বলছে।আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।
আহান অসহায় দৃষ্টিতে অধরা’র দিকে তাকালো।অধরা মুখে হাত দিয়ে হাসছে।রোহান এবারে’র মতো বাঁচিয়ে দিলো।রোহান-কে কালকে অনেক গুলো চকলেট কিনে দিব।আহান বিরক্ত হয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
–তুই আমার রুমে ঘুমাবি কেনো।তোর মায়ের রুমে কি হয়েছে।
–আব্বু-আম্মুর আবার ঝগড়া লাগছে।তাই আম্মু আমাকে তোমার কাছে থাকতে বলছে।
–তুই তিতলি আপুর রুমে যা,আমার রুমে ঘুমানো লাগবে না তোর।
–তোমার এতবড় রুম।সামান্য রোহানের জন্য এতটুকু জায়গা হবে না।
–কে বলেছে হবে না।রোহান তুই আয়,তুই আমার সাথে আমার পাশে ঘুমাবি।বলল অধরা।
অধরা’র কথা শুনে আহান রাগী দৃষ্টিতে অধরা’র দিকে তাকালো।অধরা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে।রোহান’কে নিজের পাশে শুইয়ে দিলো।এবং নিজে’ও রোহানের পাশে শুইয়ে পড়ল।
–বাবা রোহান।তুই এভাবে মামার শত্র হয়ে দাঁড়ালি।বলল আহান।
–তোমার বউকে আদর করার মেলা সময় পাবে বাপু।আজ-কে আমাকে একটু জায়গা দাও তোমার রুমে,সকালে উঠে চলে যাব।রোহানে’র কথা শুনে আহান চোখ বড় বড় করে তাকালো।বাচ্চা ছেলে বলে কি।
–এই তুই এসব কথা কোথায় থেকে শিখেছিস।
–আরে আব্বু-আম্মু আর বলতে পারলো না।তার আগে-ই অধরা রোহানে’র মুখ চেপে ধরলো।আহান ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে তাকালো।
–অধরা তুমি ওর মুখ চেপে ধরলে কেনো।রোহান কি বলতে চেয়েছিলো।ওকে বলতে দাও।
–আপনি চুপ থাকুন।ছোট মানুষ কি না তে কি বলে দিবে।কালকে রোহানে’র আম্মুর সাথে কথা বলতে হবে।ছেলে বড় হচ্ছে,বুঝতে শিখছে।এখন থেকে ছেলে-কে আলাদা রুম করে দিতে হবে।না হলে ঘরের কথা পর’কে বলে বেড়াবে।বিষয়’টা দৃষ্টিকটু দেখাবে।
–তুমি নিজে-ই ঘরের কথা পর’কে বলে বেড়া’ও।আবার রোহান’কে শিখাচ্ছো।
–বলেছি বেশ করেছি।দরকার পড়লে আরো বলবো।ঘরে বউ থাকতে আপনি কেনো।অন্য মেয়ের সাথে কথা বলবেন।
–তাতে তোমার কি”?তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।
–একজনের কাছে থেকে মুক্তি পেতে,তোমাদের কাছে এসে ছিলাম।তোমরা’ও ঝগড়া শুরু করে দিলে,জানো না।বাচ্চাদের সামনে ঝগড়া করতে নেই।তোমরা এখন যা,শিখাবে বাচ্চারা তাই শিখবে।আমি ছোট হয়ে এটা জানি।আর তোমরা বড় হয়ে জানো না।
–তুই ছোট হলে,তোর কথা আর কাজ কাম তো ছোট না।বলে-ই রেগে গটগট করে বেলকনিতে চলে গেলো আহান।আহান যাওয়া’র পরে,অধরা আর রোহান হাইফাই করলো।দুজনে-ই হেঁসে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
–তারপরে বলো মামি কেমন দিলাম।আজকে তোমাকে আমি বাঁচিয়ে দিলাম।না হলে মামা তোমাকে আজ অনেক মারতো।আমি আম্মুর সাথে জেদ করে তোমার কাছে আসছি।শুধু তোমাকে মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।তুমি না বললে আসতাম-ই না।আমি আমার কথা রেখেছি।এবার তুমি তোমার কথা রাখবে।তোমার মনে আছে তো।আমাকে কি কি কিনে দিবে।
–হ্যাঁ বাবা আমার সব মনে আছে।তিতলি আপু বিয়েটা কাল হয়ে যাক।তারপরে তোকে আমি যা যা কিনে দিতে চেয়েছি।সব কিনে দিব।এখন চুপচাপ ঘুমাই পর।কেয়ামত হয়ে গেলে’ও আজ এই রুম থেকে সরবি না।
–আচ্ছা মামি।বলে-ই রোহান শুইয়ে পড়ল।আসলে কাজের লোকের রুমে থেকে বের হবার পরে অধরা’র সাথে রোহানে’র দেখা হয়েছিল।তখন রোহান-ই বলেছিল।আহান তার ওপরে খুব রেগে আছে।অধরা-কে ধরার জন্য বাহিরে বসে আছে।তখন অধরা রোহান-কে শিখিয়ে দিয়েছিলো।ওর আম্মুর সাথে জেদ ধরে,রোহান যেনো আজ অধরার সাথে ঘুমাই।না হলে রোহানের মামা আজ তার মামিকে খুব মারবে।মামি-কে বাঁচানোর জন্য রোহানের হালকা প্রচেষ্টা।অধরা রোহানে’র পাশে শুইয়ে পড়ল।
তিতলি ড্রয়িং রুমে মায়ের সাথে গল্প করতে করতে অধরা’র কথা ভুলে-ই গেছে।মেয়ে-কে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কান্না করে-ই যাচ্ছেন আফরোজা চৌধুরী।ছোট থেকে আদর-শাসন ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছে মেয়েকে।কালকে মেয়েটা পরের ঘরে চলে যাবে।মায়ের কান্না দেখে তিতলি’ও কান্না করে দিলো।তারপরে মাকে বুঝিয়ে নিয়ে রুমে আসলো।এসে দেখে বীর অনেক বার ফোন দিয়েছে।তিতলি বীরকে ফোন না দিয়ে।একটা মেসেজ করে দিলো।যে,অধরা তার সাথে আছে।বলে-ই ফোনটা বালিশে’র নিচে রেখে দিলো।তার ভাই জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে।বোন হয়ে নিজের ভাইকে আর কষ্ট দিতে পারবে তিতলি।মেয়েটাকে নিয়ে যদি তার ভাই ভালো থাকতে পারে।তাহলে তিতলির সমস্যা কোথায়।ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করে নিলো।মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে বীর রিপ্লে করেছে।কিন্তু তিতলির কেনো জানি দেখতে ইচ্ছে করলো না।তাই চুপচাপ শুইয়ে রইলো।কেনো জানি আজ ভিষণ কষ্ট হচ্ছে তিতলি’র।
রাত বাজে দু’টো।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আহান।বোনের জন্য প্রচুর চিন্তা হচ্ছে।এই বিয়েতে তার বোন সুখী হবে তো।বীর ছেলেটা-কে একদম ভালো লাগে না আহানে’র।কিন্তু তার বাবা যখন ঠিক করেছে।অবশ্যই ভালো হবে।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমে আসলো।রোহান আর অধরা দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে।আহান চুপচাপ ওদের পাশে শুইয়ে পড়ল।
পরের দিন সকাল বেলা,পুরো বাড়িতে মেহমান এসে ভরে গেছে।সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।আজ খুব ভোরে আহানে’র ঘুম ভেঙে গেছে।সকাল থেকে বড় ভাইয়ে’র সাথে হাতে হাতে কাজ করছে।
অধরা’র ঘুম ভাঙতেই দেখলো সাতটা বাজে।আহান,রোহান পাশে দু’জন কেউ নেই।অবাক হয়ে গেলো অধরা।আজকে এত ঘুমালো কি করে।কেউ তাকে ডেকে দিলো না।ভোরের নামাজ টা অধরা ঠিক মতো আদায় করতে পারে না।এর জন্য খুব রাগ হয় অধরা’র।উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো অধরা।আহান তার ভাইয়ের সাথে কিসের জানি হিসেবে মেলাচ্ছে।অধরা-কে দেখে আফরোজা চৌধুরী বললেন।
–মা তুই আমার সাথে আয়।খেয়ে নিবি।আজকে অনেক ঝামেলা।কে কখন খেলো সবদিকে খেয়াল রাখতে পারবো না।তুই আমার সাথে আয়।বলে-ই অধরা’কে নিয়ে চলে গেলো।একটা প্লেটে খিচুড়ি,ডিম ভাজি,আর গরুর মাংস সাজিয়ে অধরা’র হাতে প্লেট’টি দিয়ে চলে গেলো।অধরা চুপচাপ খেয়ে নিলো।এটা ভেবে ভালো লাগছে।আহানের মা তাকে মেনে নিয়েছে।তার কথা ভাবছে।অধরা খেয়ে আহানে’র কাছে গেলো।আহান খুব মনযোগী হয়ে কাজ করছে।অধরা’কে দেখে বলল।
–খেয়েছো।
–হ্যাঁ খেয়েছি।মা আমাকে নিজে খাবার বেড়ে দিয়ে গেছে।আপনি খেয়েছেন।
–সবাই তো তোমার মতো স্বার্থপর না।বর’কে রেখে খেয়ে ফেলবে একা একা।
আহানের কথা শুনে অধরা অসহায় দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো।ইস উনি সকাল থেকে কাজ করছেন।কিছু খেয়েছে কি না।তা জানার একটা বার দরকার ছিলো।তাকে না বলে-ই একা একা খেয়ে নিলাম।ভাবতে-ই মন খারাপ হয়ে গেলো অধরা’র।
–হয়েছে আর মন খারাপ করা লাগবে না।যাও আমার জন্য খাবার নিয়ে আসো।
আহান বলতে দেরি করলে-ও অধরা যেতে দেরি করে নাই।উঠে তাড়াতাড়ি করে,খাবার নিয়ে আসতে চলে গেলো।একটু পরে প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসলো।
–এই নিন আপনার খাবার।
–আমি এখন হাত দিয়ে খাব।দেখতে পারছো না।কাজ করছি।
–তাহলে খাবেন কিভাবে।
–কেনো তোমার মাথা দিয়ে।এখন খাব না যাও।রেখে দাও।পরে খেয়ে নিব।
–এটা কেমন কথা।না খেয়ে কাজ করতে দিব না।
–বোক মেয়ে আহান কাজ করছে।তুমি খাইয়ে দিতে পারছো না।ঝগড়া তো ঠিকি করতে পারো।বলে-ই তিতর চলে গেলো।তিতিরের দু’হাতে খাবারের প্লেট ছিলো।হয়তো কারো জন্য নিয়ে যাচ্ছে।যাওয়ার আগে তাড়া দিয়ে অধরা’কে বলে গেলো।
অধরা মনে মনে নিজেকে হাজারটা বকা দিলো।কোনো কথা না বলে,আহান-কে খাইয়ে দিতে লাগলো।কিন্তু আহান খাবে না।মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।তখনি রোহান এসে বলল।
–মামি মামা না খেলে তুমি আমাকে খাইয়ে দিতে পারো।
–তুই কেনো সব সময় চাচির আদর খাবি।তোর থেকে আমার বেশি অধিকার।তাই চাচি আমাকে খাইয়ে দিবে।বলল আশার ছেলে।
এক পর্যায়ে দুজনের ঝগড়া লেগে গেলো।আহান একটা ধমক দিতে-ই দু’জন দু’দিকে দৌড়ে দিলো।
–এভাবে সং সেজে বসে আছো কেন।দাও খাইয়ে দাও।অধরা আহান’কে খাইয়ে দিতে লাগলো।আহান উঠে রুমে গেলো।অধরা খাবার নিয়ে,আহানের পেছনে পেছনে সে-ও রুমে গেলো।আহান এদিক ওদিক করে কিছু একটা খুঁজে চলেছে।কিন্তু পাচ্ছে না।অধরা অধৈর্য হয়ে বলল।
–কি খুঁজছেন,আমাকে বলুন।আমি খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
–তোমার মাথা খুঁজছি।পারলে এনে দাও।
–এই যে আপনার সামনে আমার মাথা।নিন কি করবেন করুন।রুম থেকে আর এক পা বের হলে আপনার পা ভেঙে দিব।চুপচাপ সব খাবার শেষ করবেন।তারপরে সব কাজ করবেন।অধরা প্রচুর রেগে গেছে।আহান চুপ করে বিছানায় বসলো।অধরা আহান-কে খাইয়ে নিচে চলে যাবে।তখনি আহান ডেকে বলল।
–প্লেট’টা নিচে রেখে রুমে এসো।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
–আচ্ছা বলে-ই অধরা নিচে নেমে গেলো।হাত ধুইয়ে রুমে আসতেই অধরা’র চোখ গোল গোল হয়ে গেলো।
চলবে…..
(