#তুমি_নামক_প্রশান্তি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_একুশ
নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ভাইয়ের বউ হিসেবে গ্রহণ করে নিতে হবে। এর থেকে যন্ত্রণার আর কি আছে? সহ্য হচ্ছেনা রাকিবের। সব কিছু এলোমেলো লাগছে। বুকের ভেতরের যন্ত্রণাটাকে কাউকে বুঝাতে পারছেনা। গলা ছেড়ে কান্না করতে পারছেনা। কাউকে বলতে পারছেনা ‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি একটু কাঁদতে চাই। আমার একটু সান্তনার প্রয়োজন’। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাকিব একটু কাঁদতেও পারছেনা। ঠোঁটে, ঠোঁট চে*পে সহ্য করে নিচ্ছে, বিষাদের যন্ত্রণা। ফোন কা*টার পর থেকে এখন কব্দি ‘থ’ হয়ে বসে আছে। সকালের খাবারটাও পেটে যায়নি। এর মধ্যে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে, রাকিবের হুঁশ ফিরে। তড়িঘড়ি করে ছুটলো ওয়াশরুমের দিকে। চোখে মুখে কয়েকবার পানি দিয়ে, পা বাড়ালো দরজার দিকে। দরজা খুলতেই বেলী আর নীলাভ্রকে দেখে একটু অবাক হলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না। এই সময় ওদের দুজনকে এখানে আশা করেনি ও। রাকিবের মুখ দেখে বেলী একটু ভড়কে গেলো। ছেলেটার মুখ ফুলে আছে খানিকটা, চোখ দুটো হালকা লাল হয়ে ফুলে আছে। তৎক্ষনাৎ বেলী প্রশ্ন করলো,
“আন্টি ঠিক আছে রাকিব?”
রাকিব মুখে হাসি টেনে উত্তর দিলো,
“আলহামদুলিল্লাহ, মা একদম ঠিক আছে। তুই এই সময়? নীলাভ্র ভাই কেমন আছেন?”
নীলাভ্র রাকিবের প্রশ্নে হেসে উত্তর দিলো,
“ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
‘কেমন আছো’ শব্দটা শুনেই রাকিবের গলায় শব্দগুলো জট পাকিয়ে আসলো। তবুও মুখের হাসিটা ঠিক রাখলো। বললো,
“আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো আছি। ভেতরে আসুন।”
রাকিবের কথা শেষ হতেই, বেলী পুনরায় প্রশ্ন করলো,
“তোর কি হয়েছে? তুই ঠিক আছিস তো?”
বেলীর প্রশ্নে নীলাভ্রও একটু অবাক হলো। বেলীর দিকে তাকিয়ে দেখলো, বেলীর মুখটা চুপসানো, চোখে রয়েছে প্রশ্ন। রাকিবের দিকে উত্তরের আশায় চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে৷ রাকিব অবাকের স্বরে বললো,
“আমার আবার কি হবে! আমি ঠিক আছি। তুই আসতে না আসতেই প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে বসেছিস। আয় ভেতরে আয় আগে।”
রাকিব ঠিক বুঝতে পারছে, বেলী ওর মুখ থেকে সবটা আন্দাজ করে নিয়েছে। রাকিব বা তানিশা কখনোই, বেলীর থেকে নিজেদের কষ্ট আড়াল করতে পারেনা। বেলী ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে, সবটা বুঝে যায়। কি ক্ষমতা আছে, মেয়েটার কাছে কে জানে? রাকিব কথাটা শেষ করে পেছন ফিরতেই নীলাভ্র বলে উঠলো,
“আমরা তানিশার কাছে যাব রাকিব।”
কথাটা শুনে রাকিবের পা জোড়া থেমে গেলো। আর বেলী আতঙ্কগ্রস্ত চেহারা নিয়ে রাকিবের দিকে তাকিয়ে। নীলাভ্রর কথাটা শুনে রাকিব ওদের দিকে তাকালো। হুট করে তানিশার কাছে কেনো যাবে? বুঝতে পারলোনা। কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
“হঠাৎ, তানিশাদের বাড়ি যাবেন কেনো?”
রাকিবের প্রশ্নে নীলাভ্র উত্তর দেওয়ার জন্য মুখ খুললো, তার আগেই বেলী বলে উঠলো,
“তোকে যেতে যেতে সবটা বলবো। এখন তুই চল আমাদের সাথে। নয়তো, দেরি হয়ে যাবে। আমাদের আবার ফিরতে হবে।”
এইবার রাকিব বুঝতে পারলো। বেলী কেনো তানিশার কাছে যাবে। তারমানে বেলী সবটা জানতো? কথাটা মনে উঠতেই রাকিবের চোখের কোণে অশ্রুকণা জমাট বাধা শুরু করলো। বললো,
“তার মানে তুই সবটা জানতি?”
রাকিবের প্রশ্নের ইঙ্গিতটা নীলাভ্র বুঝতে পারলেও, বেলী বুঝতে পারলোনা। বিস্ময় ভরা স্বরে বললো,
“কি জানার কথা বলছিস তুই!”
বেলীর উত্তর শুনে রাকিবের রাগ হলো। ভয়ংকর রাগ। রাগটাকে সংযত করার জন্য রুমের মধ্যে ঢুকে গেলো। এমন আচরণের মানে বেলীর মাথার উপর দিয়ে গেলো। রাকিবের পেছন পেছন রুমে ঢুকে, শান্ত স্বরে বললো,
“আমার তোকে অনেক কিছু বলার আছে, রাকিব। এখানে বলতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। তুই আমার সাথে চল। গাড়িতে যেতে যেতে সবটা তোকে বুঝিয়ে বলব। চল।”
বলে রাকিবের হাতটা ধরতেই, এক ঝটকায় বেলীর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো, রাকিব। চেঁচিয়ে বললো,
“কি বুঝাবি, তুই আমাকে? কি বুঝাবি যে, তানিশার বিয়ে হয়ে গেছে। ‘ও’ আমাকে ঠকাতে চায়নি। কিন্তু বাধ্য হয়ে ঠকিয়েছে। তানিশা এই বিয়ে করতে চায়নি। কিন্তু পারিবারিক চা*পে পড়ে করেছে। এইগুলাই বুঝাবি। তাইতো?”
রাকিবের কথা গুলো শুনে, বেলী কয়েকপা পিছিয়ে গেলো। নয়ন জোড়া অবাকের শেষ সীমানায় গিয়ে, বেরিয়ে আসার উপক্রম। ঠোঁট দুটো মুহূর্তেই তিরতির করে কাঁপতে শুরু করলো। অস্পষ্ট স্বরে শুধালো,
“কি.কি.বলছিস তুই? তানিশার বিয়ে…।”
রাকিব রাগে চিৎকার করে উঠলো। দ্বিতীয় দফায় চেঁচিয়ে বললো,
“এমন ভান করছিস যেনো, তুই কিছু জানিস না। যদি তুই না জানতি, তাহলে আজ কেনো তানিশাদের বাসায় যাচ্ছিলি?”
নীলাভ্র কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্ত ওর কথা বলা ঠিক হবেনা। বন্ধুদের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে, কথা না বলাই ভালো। তানিশার বিয়ে হয়ে গেছে শুনে বেলীর যতটা না কষ্ট লাগছে, তার থেকেও বেশি কষ্ট লাগছে, রাকিবের অবস্থা ভেবে। তাই খুব শান্ত স্বরে শুধালো,
“বিশ্বাস কর, আমি জানতাম না এত কিছু।”
রাকিব এবার চোয়াল শক্ত করে জবাব দিলো,
“আসলে কি জানিস? তানিশা কোনোদিন আমাকে ভালোবাসেনি। যদি ভালোবাসতো, তাহলে অন্তত আমাকে ঠকাতে পারতোনা। ”
বেলী এবার উত্তর দিতে সময় নিলোনা। একটু জোরেই বললো,
“রাকিব! তুই এতদিনে তানিশাকে এইটুকু বুঝেছিস? তানিশা ঠকানোর মতো মেয়ে না। ‘ওর’ উপর কতটা চা*প ছিলো, তুই তো সব জানতি। তাহলে, আজ এই কথাটা কি করে বলতে পারছিস তুই?”
প্রতিউত্তরে রাকিব বলতে শুরু করলো,
“অনেক চা*প ছিলো তাইনা? আরে ‘ওর’ বাবা-মা তো একটা লো*ভী। লোভের বসে কি থেকে, কি করছিলো, নিজেরাও বুঝতে পারছেনা। মেয়েটাকে টাকার জন্য বিয়ে দিয়ে দিলো। তুই জানিস কার সাথে বিয়ে দিয়েছে? আমাদের বাসার শাকিলের সাথে। যেই ছেলেটা একটা চরি*ত্রহীন। যার পরিবারের লোকগুলো একেকটা পা*ষাণ। শাকিল ওর বাবাকে এমনে এমনে টাকা দেওয়ার মতো ছেলেনা। দেখে নিস এর পরিমাণ কতটা ভয়ংকর হবে। তখন আমার কথাটাও মিলিয়ে নিস।”
এইটুকু বলে থামলো। বেলী নিশ্চুপ হয়ে, অশ্রুসিক্ত চোখে রাকিবের দিকে তাকিয়ে রইলো। রাকিব পুনরায় শান্ত স্বরে বলতে লাগলো,
“তানিশাকে আমি বলেছিলাম, ওদের ঋণ শোধ করার জন্য সাহায্য করব। ‘ওর’ বাবা-মা ‘ওকে’ যতই জোর করুক, তাও যেনো বিয়েতে রাজি না হয়। ‘ওকে’ গ্রামে না যাওয়ার জন্য, বারবার বারণ করছিলাম। বলেছিলাম, ‘ওর’ বাবা-মা বেশি জোর করলে আমার কাছে চলে আসতে। কিন্তু ‘ও’ আমার কথা শুনলো না। আমার কথা অমান্য করে ঠিকি চলে গেলো। আর বিয়েটাও করে নিলো। বিয়ে করে আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিলো।”
বলে হাসলো। তাচ্ছিল্যের হাসি। রাকিবের কথাগুলো শুনে কষ্টে বেলীর বুক ফে*টে যাচ্ছে। আর তানিশার কি অবস্থা? এইসব চিন্তাগুলো বেলীর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বেলী কিছু বলতে যাবে, তখনি রাকিব আবারো চেঁচিয়ে বলে উঠে,
“কি না করেছিলাম আমি ‘ওর’ জন্য? পড়াশোনার পাশাপাশি ওভারটাইম জবটাও শুধুমাত্র তানিশার জন্য করা। যাতে একটু হলেও ‘ওকে’ সাহায্য করতে পারি, ‘ওর’ কষ্ট কমাতে পারি। এত ভালোবাসার মূল্য এভাবে দিলো। তাইনারে?”
বেলী আর কথা বলতে পারলোনা। ওর মুখটা বন্ধ হয়ে গেলো। কি বলবে এখন? তানিশা যে, সত্যিই পরিস্থিতির স্বীকার। এই কথা রাকিবকে কি করে বুঝাবে বেলী? কি করে বুঝাবে ‘তানিশা অসহায় ছিলো’। বেলী নিজেকে সামলে শান্ত স্বরে বললো,
“তানিশাকে ভুল বুঝিস না প্লিজ। তুই আমাকে যা খুশি বল। আমি সব মেনে নিব। কিন্তু তবুও তানিশাকে ভুল বুঝিস না প্লিজ, রাকিব। ‘ও’ সত্যিই অসহায়, হতভাগী। মেয়েটা কোনোদিন পরিবারের থেকে সামান্য সুখ পায়নি। তোকে পেয়ে সবটা ভুলে ছিলো। তুই ‘ওর’ ভালোবাসার মানুষ হওয়ার আগে, ‘ওর’ বন্ধু। বন্ধু হয়ে কি করে পারছিস, ‘ওকে’ অবিশ্বাস করে ভুল বুঝতে?”
রাকিব কিছুসময় চুপ থাকলো। উত্তর দিলোনা। নীলাভ্র আজ রাকিবের মাঝে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। যেদিন বেলীর বিয়ের খবরটা শুনেছিলো, সেদিন তো ‘ও’ এমন পা*গলের মতো করেছিলো। কি ভয়ানক যন্ত্রণা হয়েছিলো সেদিন! রাকিবের কষ্টটা খুব করে ফিল করতে পারছে নীলাভ্র। তাই আর দাঁড়িয়ে থাকলো না। এগিয়ে গেলো ‘ওদের’ দিকে। রাকিবের কাঁধে হাত রেখে শান্ত স্বরে বললো,
“আমি জানি, তোমার কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে, এইসব বলছো। বিশ্বাস করো, আমার রাগ হচ্ছেনা তোমার উপর। কিন্তু তুমি তো তানিশার বিষয় সবটা জানো। তবুও কেনো মেয়েটাকে ভুল বুঝছো। আমাদের সবার ভুল হয়েছে। কি ভুল, জানো? ‘ওকে’ গ্রামে যেতে দেওয়া। আমাদের ভুল হয়েছে পুরো একদিন ‘ওর’ খোঁজ না পেয়েও চুপ করে থাকা। এখন নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বা ভুল বুঝাবুঝি না করে, আমাদের তানিশার কাছে যাওয়া উচিত। জানা উচিত, ‘যে ও কি চায়?’। ”
নীলাভ্রর কথা শেষ হতেই, রাকিব বলে উঠলো,
“তানিশা কি চায় জানেন? আমি যেনো ‘ওকে’ ভুলে যাই, ঘৃণা করি।”
বেলী সাথে সাথে উত্তর দিলো,
“এইসব তানিশা কষ্ট থেকে বলেছে, রাকিব। তুই সবটা বুঝেও, না বুঝার ভান ধরছিস। এই তুই আমাদের বন্ধু! এই তুই আমাদের বন্ধু ভাবিস! আমরা নাকি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। কই? তোর মধ্যে তো আমি বেস্টফ্রেন্ডের বৈশিষ্ট্য দেখতে পারছিনা আজ। কোথায় গেলো তোর সেই বন্ধুত্ব?”
বেলীর চোখ বেয়ে পড়ছে নোনা জল। চোখ, মুখ জলে একাকার। রাকিবের চোখে জমে আছে, হতাশা, বিষাদ, প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা। তবুও রাকিব বু*কে পা*থর চা*পা দিয়ে বললো,
“আসলেই, না আমি তোদের ভালো বন্ধু হতে পেরেছি। আর না, তানিশার ভালোবাসার মানুষ। এইসব আমার ব্যর্থতা। কিন্তু, আজ আমিও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, ‘তোরা দুজন আমার বন্ধু বা বেস্টফ্রেন্ড ছিলিনা’। যদি আমার বেস্টফ্রেন্ড হতি, তাহলে আমাকে এভাবে ঠকাতে পারতিনা। আমার সব কিছু এলোমেলো করে দিতে পারতিনা। আজ থেকে তোরা আমার কেউ না। কেউ না। সব ভুলে গেলাম আমি।”
রাকিবের কথা গুলো শুনে বেলীর মাথায় বা’জ পড়লো। রাকিব এইসব বলছে! বিশ্বাস হচ্ছেনা। অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া বিস্ময় ভরা চাহনী নিক্ষেপ করে আছে, রাকিবের দিকে। তবুও রাকিবের কষ্টের কথা চিন্তা করে, বেলী এইসব কথা ধরলো না। শান্ত স্বরেই বুঝানোর চেষ্টা করলো। বললো,
“রাকিব, আমি জানি তোর কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু, এখন এভাবে নিজেদের মধ্যে ঝা’মেলা করলে হবেনা। প্লিজ তুই একটু নিজেকে সামলা। তু…।”
বেলীর কথা শেষ হলোনা। রাকিব ফোড়ন কা*টলো। বেলীর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
“তুই এখন আসতে পারিস। আমার কাজ আছে।”
বলে রাকিব নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। আর বেলী ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠলো। হাঁটু ভে’ঙে বসে পড়তে চাইলো মেঝেতে। কিন্তু, পারলো না। তার আগেই নীলাভ্র ধরে নিলো। বললো,
“এখন ভে’ঙে পড়ার সময় না, বেলীপ্রিয়া। রাকিবের কষ্টটা কমে গেলে ‘ও’ ঠিক সব সামলে নিবে। ‘ওকে’ একটু সময় দে। আমি আছি তো তোর পাশে। সব সামলে নিব, আমরা দুজন মিলে।”
বেলী স্বান্তনা বানী পেয়েও কান্না থামাতে পারলো না। কিছুক্ষণ অসহায় চোখে রাকিবের রুমের দিকে চেয়ে রইলো। তারপর ধীর পায়ে উঠে, নীলাভ্র আর বেলী চলে আসলো। থাকুক না রাকিব একটু একা। ক্ষতি কি? যদি একা থাকতে পেরে ছেলেটা নিজেকে বুঝাতে পারে।
—
বেলী বাসায় এসেছে সেই দুপুরে। সকাল থেকে দুইটা ঝড় বয়ে গেছে ওর উপর দিয়ে। এত ঝড়ের মোকাবিলা করতে, করতে বেলী ক্লান্ত। রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করেছে, ওর মুখদ্বয়ে। নীলাভ্র বেলীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে চলে গেছে। কি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে গেছে ‘ওর’? দুপুরের খাবারটা অব্দি বেলীর গলা দিয়ে নামেনি। ইশু আর মেরিনা আজ সকালে চলে গেছে। বেলী একা বাসায়। ফোনটা হাতে নিয়ে মনম*রা হয়ে বসে আছে, খাটের এক কোণে। ফোন দিবে কি দিবেনা তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেছে। যদি ফোন দিলে অন্য কেউ ধরে? তানিশা কি ফোন ধরবে? বেলী চাইছিলো আজকেই তানিশার সাথে দেখা করতে। কিন্তু, তানিশা তো এখন শুশুড় বাড়ি, গিয়ে তাদের কি উত্তর দিবে? অনেকগুলো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। তাই নীলাভ্র বেলীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় দিয়ে গেছে। অনেক চিন্তা ভাবনা শেষে তানিশার নাম্বারে ডায়াল করলো। কয়েকবার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে তানিশার কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। মাঝে দুইদিন কে’টে গেছে। কিন্তু বেলীর মনে হচ্ছে কতদিন পর তানিশার কন্ঠস্বর শুনলো। তানিশা ওপাশ থেকে বেশ শান্ত স্বরে বললো,
“কেমন আছিস বেলী?”
বেলীর কেনো যেনো কান্না পেলো। কান্না গুলো চে*পে আসছে, ভেতর থেকে। তবুও শান্ত স্বরে বললো,
“তুই শেষ রক্ষা করতে পারলিনা?”
তানিশার কন্ঠস্বর অনেক শান্ত। এত শান্ত তো কখনো থাকেনা। তবুও আজ শান্ত লাগছে কেন? তানিশা বললো,
“এইসব বাদ দে। যা হইয়া গেছে তা আর ফিরাইয়া আনা সম্ভব না। তাই এইসব ভাইবা নিজের জীবনটারে আর বিষাদময় করতে চাইনা।”
বেলীর কানে স্পষ্ট ভেসে আসলো দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। তানিশার বুকের ভেতর জমানো কষ্টটা বেলী ঠিক উপলব্ধি করতে পারছে। পারবে নাই-বা কেন? বেলী আর তানিশা দুজন দুজনের প্রতিচ্ছবি। বেলী তানিশাকে শুধালো,
“আমাকে একটাবার ফোন করলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো? আমি কতশতবার তোকে ফোন দিয়েছি। একটাবারের জন্যেও ওপাশ থেকে সাড়াশব্দ পাইনি। তোর জীবনটা শেষ অব্দি ন’ষ্টই করে দিলো তোর পরিবার। এমন পরিবার যেনো আর কারোর না হয়।”
বেলীর কাঁদতে চায় না। তবুও কেন ওর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। কে জানে? তানিশা শান্ত, শীতল কন্ঠে শুধালো,
“যার ভাগ্যে যা লেখা থাকে তাই হয়। হুদাই আমরা নিজেগো দোষ দেই। আসলে দোষ আমাগো না, আবার আমাগো ভাগ্যের ও না। উপরওয়ালা ভাগ্যে যা লেইখা থুইছে, তাইতো হইবো। আমরা কি আর ভাগ্য বদলাইতে পারুম। তাই যা হইতাছে, হইতে দে। যদি আমার কপালে সুখ থাকে, তাইলে এই বাড়িতেই সুখ পামু। আর যদি সুখ না থাকে তাইলে কোনো বাড়িতেই সুখ পামু না। তুই হুদাই এইসব লইয়া ভাইবা মন খারাপ করিস না। আমি আমার ভাগ্য মাইনা নিছি। তাইতো দেখ একদিনেই সব মানাইয়া নিছি। দোয়া করিস আমার লেইগা। আমার নতুন জীবনে আল্লাহ্ যেনো একটুখানি সুখ দেয়।”
বেলী নিশ্চুপ। ওরা দুজন আজ এক নৌকার মাঝি। মাঝ নদীতে কূল-কিনারা হারিয়ে বসে আছে। বৈঠাহীন নৌকা স্রোতের তালে তালে চলছে। কোথায় গিয়ে কূল-কিনারার দেখা পাবে তা জানেনা। স্রোত যতো বাড়ছে তত বেশি ভয়ানক হয়ে উঠছে জীবন। এর শেষ কোথায়?
#চলবে