তুমি শুধু আমারই হও পর্ব -০৪

#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|৪|

–“অর্নি? এই অর্নি কোথায় তুই? কখন থেকে ডাকছি শুনতে পারছিস না নাকি___”

মিসেস অদিতি অর্নিকে ডাকতে ডাকতে ওর রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো অর্নি কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। এই ভরা সন্ধ্যায় এভাবে অর্নিকে শুয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলেন মিসেস অদিতি। দ্রুত পায়ে অর্নির গায়ে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কিনা। কিন্তু না জ্বর তো নেই। তাহলে এই ভরা সন্ধ্যায় মেয়েটা এভাবে শুয়ে আছে কেন? শরীর খারাপ লাগছে? নাকি অন্যকিছু? মিসেস অদিতির মনে এরকম হাজারো প্রশ্নেরা এসে ভীর জমাচ্ছে। অর্নিকে ডেকে তুলে বললেন,
–“কিরে এই অবেলায় এভাবে শুয়ে আছিস কেন?”

–“এমনি আম্মু।”

–“আচ্ছা এখন উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। অর্নব এক্ষুনি এসে কিন্তু তাড়া দিবে। পরে আর রেডি হওয়ার সময় পাবি না।”

–“কেন কোথাও যাচ্ছো নাকি?”

–“সে কি রে ভুলে গেলি নাকি আজ যে হৃদিতার হলুদ।”

–“কোন হৃদিতা?”

–“তোর বাবার বন্ধুর মেয়ে৷ তোর আংকেল কিন্তু বারবার ফোন করছে এখনো যাচ্ছি না কেন?”

–“ওহ! হৃদি আপুর হলুদ আজকে? ভুলে গেছিলাম আমি।”

–“আচ্ছা এখন তো মনে হয়েছে। এবারে শীঘ্রই রেডি হয়ে নে তো।”

–“আম্মু যাবো না আমি। তুমি আর ভাইয়া চলে যাও।”

কথাটা বলে অর্নি আবারো শুয়ে কাথা মুড়ি দিলো। মিসেস অদিতি অর্নিকে আবারো টেনে তুলে বললেন,
–“হৃদিতাও ফোন করেছিলো। বার বার বলেছে তোকে যেতেই হবে।”

–“কিছু একটা বলে দিও। আমি যাবো না প্লিজ।”

–“আহ অর্নি! মেয়েটা তোকে এত ভালোবাসে আর তুই কিনা?”

–“ধুর ভাল্লাগে না!”

কথাটা বলেই অর্নি বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মেয়ের চোখমুখ দেখে মিসেস অদিতি মুচকি হাসলেন। অর্নি যাবে ভেবে তিনি নিশ্চিন্ত হলেন। কাবার্ড থেকে অর্নির জন্য একটা শাড়ী বের করে সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ চুড়ি সব বের করে বিছানার উপর রেখে বের হয়ে গেলেন তিনি রুম থেকে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় শাড়ী চুড়ি দেখে চোখমুখ কুঁচকে ফেললো অর্নি। ইশ্! এখন আবার এসব পড়তে হবে। ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ও। ওর আম্মু যেহেতু এসব বের করে রেখেছেন তার মানে এইসবই পড়তে হবে ওকে। তাই আর দেরী না করে রেডি হতে শুরু করলো অর্নি।

সন্ধ্যা সাতটা বাজে। মিনিট দশেক হলো অর্নব অফিস থেকে এসে নিজের রুমে গেছে শাওয়ার নিয়ে রেডি হতে। মিসেস অদিতি রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছেন। কিছুক্ষণ বাদেই চুলগুলো ঠিক করতে করতে অর্নব বের হয়ে এলো রুম থেকে। মিসেস অদিতি অর্নবের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
–“মাশাল্লাহ। আমার ছেলের উপর যাতে কারো নজর না লাগে।”

অর্নব মায়ের কথায় মুচকি হেসে বললো,
–“আম্মু তুমিও না! অর্নি কোথায়? ওর এখনো হয়নি?”

কথাগুলো বলেই অর্নব অর্নিকে ডাকতে শুরু করলো। অর্নব গিয়ে সোফায় বসে পড়লো। মিনিট পাঁচেক পাড় হয়ে যায় অর্নি এখনো আসছে না। সেই কখন থেকে শুধু আসছি আসছি বলেই যাচ্ছে। অর্নব অর্নির রুমের দিকে পা বাড়াতেই অর্নি শাড়ীর আচল ঠিক করতে করতে বের হয়ে আসে রুম থেকে। মিসেস অদিতি এবং অর্নব দুজনেই থমকে যায় অর্নিকে দেখে। বেশ লাগচে ওকে আজ। মিসেস অদিতি এবারে অর্নিকে দেখেও একই কাজ করলেন। তা দেখে অর্নব বাঁকা হেসে বললো,
–“আম্মু তুমি বরং এক কাজ করো, ওর কপালে কালো টিপ এঁকে দাও তাহলেই আর কেউ নজর দিবে না।”

অর্নবের কথায় মিসেস অদিতি হেসে দিলেন। সাথে অর্নবও হাসলেন। অর্নি রেগে গিয়ে মৃদু চিৎকার করে বললো,
–“ভাইয়া__”

–“আচ্ছা স্যরি স্যরি। এইবার চল সত্যিই লেট হচ্ছে।”

অর্নবের কথায় সায় জানিয়ে মিসেস অদিতি আর অর্নি অর্নবের পেছন পেছন বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। মসেস অদিতি পেছনের সিটে গিয়ে বসলেন। আর অর্নি ফ্রন্ট সিটে। ওরা দুজন গাড়ীতে উঠে বসতেই অর্নব গাড়ী স্টার্ট দিলো।

বড় একটা হলের সামনে এসে অর্নব গাড়ি থামালো। আহনাফ আর হৃদিতার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান একই সাথে করা হবে। দুই পরিবারের সকল মানুষজন যেহেতু এখানে উপস্থিত থাকবে তাই বড় একটা হল বুকড করা হয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে অর্নি দাঁড়িয়ে যায়। ফোন এসেছে ওর একটা। অর্নব পিছন ফিরে বললো,
–“থেমে গেলি কেন? ভিতরে চল।”

–“তোমরা যাও আমি কথা বলে এক্ষুনি আসছি।”

–“আচ্ছা বেশি লেট করিস না।”

কথাটা বলে অর্নব আর মিসেস অদিতি ভিতরে চলে গেলেন। অর্নি ফোনে কথা বলতে বলতে একপাশে চলে গেলো৷ হলের সামনেই মাঝারি আকারের একটা বাগান। বাগানের এক পাশে দাঁড়িয়ে অর্নি কথা বলছে ফোনে। কথা বলা শেষে অর্নি হলের দিকে পা বাড়ায়। শাড়ির কুঁচিগুলো ঠিক করতে করতে ভিতরে যাওয়ার সময় কারো সাথে আচমকা ধাক্কা লেগে যায়। অর্নি মাথা নিচু করে শাড়ির ঠিক করতে করতেই বললো,
–“স্যরি স্যরি, আসলে আমি খেয়াল করিনি।”

কথাটা কোনোমতে বলে ওভাবেই কুঁচি ঠিক ঠিক করতে করতে ভিতরে চলে যায় ও। এদিকে অর্নির যাওয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে উৎসব। একটু আগে উৎসবের সাথেই অর্নির ধাক্কাটা লেগেছে। অর্নিকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছে না উৎসব। পরণে রংধনু পাড়ের সাদা চুমকি শাড়ি। কোমড় সমান চুলগুলো সারা পিঠময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কাঁচা ফুলের টিকলি আর কানের দুল পড়েছে অর্নি। মাঝে সিথি করে মাথায় বেলিফুলের টিকলি। টিকলির যে অংশটি কপালে তাতে একটা লালগোলাপ বসানো। কানের সাথে লাগানো অংশটাতে বেলি ফুল আর ঝুলানো অংশে লাল গোলাপ। দুহাত ভর্তি চুড়ির বাহার। কারো ডাকে উৎসবের ধ্যান ভাঙে। পাশে তাকিয়ে দেখলো সায়ান দাঁড়িয়ে আছে। উৎসব কিছু না বলে বের হয়ে গেলে হল থেকে। ওর পিছু পিছু সায়ানও গেলো।

অর্নি হৃদিতার সাথে কথা বলে একপাশে চেয়ার নিয়ে বসে আছে। বসে বসে ফোন দেখছে ও। তখনই ওর পাশে কেউ একজন এসে বসে। অর্নি মাথা তুলে নূরকে দেখে খুশিতে আপ্লূত হয়ে যায়। বলে,
–“জানু তুই এখানে? এতক্ষণ একা একা বসে বোরিং ফিল করছিলাম। ভালোই হলো তুই এসেছিস।”

–“আমার তো আসতেই হতো। হৃদিতা আপু আর আহনাফ ভাইয়া দুজনেই ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। তাই আমি দুই পক্ষেই। আর তুই?”

–“ওহ! হৃদিতা আপুর আব্বু আর আমার আব্বু ছিলেন খুব কাছের বন্ধু। তাই আমি কনে পক্ষ। আন্টি কোথায়? উনি আসেননি?”

–“হ্যাঁ এসছে তো। কোথাও একটা বসে গল্পগুজব করছে হয়তো বা। ভাইয়াও এসছে। এতক্ষণ এখানেই ছিলো। আমি তো তোকে দেখিইনি। ভাইয়া বললো আমাকে। তাই চলে এলাম তোর কাছে।”

–“ওহ!

ওরা দুজনে কথা বলার মাঝেই উৎসব আর সায়ান এসে বসলো ওদের সাথে। অর্নি কাচুমাচু করে বসে রইলো। ভদ্রতার খাতিরে উঠে যেতেও পারছে না। সায়ান নূর আর উৎসব টুকটাক কথা বলছে। অর্নি একদমই চুপচাপ বসে আছে। তা দেখে উৎসব বললো,
–“আচ্ছা নূর তোর বান্ধবী কি কথা বলতে পারে না? বোবা নাকি?”

এতক্ষনে অর্নি চোখ তুলে উৎসবের দিকে তাকালো। পরণে সাদা পাজামা/পাঞ্জাবী। পাঞ্জাবীর কর্লারে সানগ্লাস ঝুলানো। পাঞ্জাবীর হাতা ফোল্ড করা। এই ছেলের দিকে একবার যে তাকাবে ঘুরেফিরে সে নিশ্চিত আরো তাকাবে। চোখে লেগে থাকার মতো একটা লুকে আছে এখন উৎসব। অর্নিকে এরকম একধ্যানে উৎসবের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সায়ান আর নূর মুখ টিপে হাসলো। উৎসব অর্নির মুখের সামনে তুড়ি বাজালো। অর্নি হকচকিয়ে আশেপাশে তাকালো। নিজেই নিজেকে গালি দিলো কয়েকটা। ইশ! কি বিচ্ছিরি একটা ব্যাপার হলো। কিভাবে ড্যাবড্যাব করে উৎসবের দিকে তাকিয়ে ছিলো ভাবতেই অর্নির লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। উৎসব বাঁকা হেসে বললো,
–“এই যে মিস ওভাবে কি দেখছিলে?”

উৎসবের এমন কথায় অর্নি আরো বেশি লজ্জা পেয়ে যায়। তাই মাথা নিচু করে নেয়। সায়ানের ফোন আসায় ও ফোন কানে নিয়ে উঠে চলে গেলো। কিছুক্ষণ বাদে নূরের ডাক পড়াতে ও চলে গেলো ওর আম্মুর কাছে। এখন শুধু উৎসব আর অর্নি বসে আছে। অর্নি ব্যাপারটা লক্ষ্য করতেই ওঠে দাঁড়ায় ওখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু উৎসবের গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে অর্নি থেমে যায়। উৎসবের দিকে তাকায় ও। দুজনের দৃষ্টি মিলে যায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য। উৎসব আবারো বললো,
–“বসতে বললাম তো। বসো।”

উৎসবের এমন কন্ঠস্বরে অর্নি কিছুটা ঘোরের মাঝেই বসে পড়ে। তা দেখে উৎসব মৃদু হাসে। অর্নিকে সামনে বসিয়ে রেখে উৎসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ওকে। মেয়েটা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে ওর সামনে। হাত মোচড়ামুচড়ি করছে। আর উৎসব বসে বসে তা উপভোগ করছে। ওর ইচ্ছে করছে সারাজীবন অর্নিকে এভাবে ওর সামনে বসিয়ে রাখতে। তাহলে যদি ওর মনে শান্তি মিলতো। অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“আপনি কিছু বলবেন?”

–“উহুঁ।

–“তা তাহলে আমি যাই?”

–“একদম না। চুপচাপ এখানে এভাবেই বসে থাকো।”

অর্নির ভয়ের কারনটা আরো বাড়লো। লোকটা ওকে কিছু বলবে না অথচ সংয়ের মতো এভাবে সামনে বসিয়ে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে৷ আজব! অর্নির মনের দিকটা বুঝতে পেরে উৎসবের বেশ হাসি পাচ্ছে। বেশ ভালোই লাগছে ওর অর্নিকে এভাবে ওর সামনে বসিয়ে রাখতে। কিন্তু ওর ভালো লাগাটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। অর্নব ডাকছে অর্নিকে। এই মূহুর্তে অর্নবের ডাক শুনে মনে মনে বেশ খুশি হলো অর্নি। ওর এই খুশিটা উৎসব অর্নির মুখ দেখেই বুঝতে পারছে। খুশিতে চোখদুটো চিকচিক করছে। এতক্ষণ তো অর্নি এটারই সুযোগ খুঁজছিলো। কিভাবে এখান থেকে যাওয়া যায়? অর্নি চট করে দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর,
–“আসছি ভাইয়া।”

বলেই দৌড়ে পালালো। যেন এখান থেকে যেতে পারলেই ও বাঁচে। অর্নির কান্ডে উৎসব কিছুটা সময় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হেসে দেয়।

এগারোটা নাগাদ অর্নি ওরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ওখানে থাকার পুরোটা সময় অর্নি অর্নবের সাথে সাথে ছিলো। যাতে উৎসবের সামনে আর পড়তে না হয়৷ লোকটাকে ও অজানা কারনে ভয় পায়৷ প্লাস তার সামনে গেলে কেমন যেন লজ্জায় কুঁকড়ে যায় ও। হয়তো বা যদি উৎসবের সামনে ওর এভাবে পরিচয় না হতো তাহলে বোধহয় এরকম ভয় আর লজ্জার কোনো কারন থাকতো না। ইশ! কোন অলুক্ষণে যে সেদিন নূরকে ননদিনী বলতে গেছিলো ও তার জন্য ওর এখন বড্ড আফসোস হয়। সেদিন যদি না ও নূরকে ননদিনী বলতো আর না উৎসব নিজেকে ওর বর বলে দাবী করতো সামান্য ওর বোনকে ননদিনী বলে ডাকায়। তাহলে আজ এভাবে লোকটার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হতো না। লোকটাও ভারী বদ মানুষ। জানে না ফ্রেন্ডদের মাঝে এরকম একটু আধটু কথা হয়-ই। তাই জন্য তারও ওরকমভাবে বলতে হবে? ‘আমি তোমার বর বলছি।’ ইশ্ কি লজ্জা কি লজ্জা! ছেলেটা এখন ওকে দেখলেই কেমন ভাবে যেন তাকায়। যে কারনে ওর লজ্জায় আরো মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে।

অর্নির এসব আকাশ – কুসুম ভাবনার মাঝেই বাসায় চলে আসে ওরা। অর্নি গাড়ি থেকে নেমে ওর আম্মুর পিছন পিছন নিজের ফ্ল্যাটের সামনে চলে যায়। নিজের রুমে গিয়ে জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেস হয়ে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় অর্নি।

তীব্র রিংটোনের আওয়াজে অর্নির ঘুম ভেঙে যায়। চোখমুখ কুঁচকে বালিশের পাশ থেকে হাতড়ে ফোন নিয়ে রিসিভ করার আগেই কেটে যায়। ফোন রাখতে গেলেই আবারো নতুন উদ্যমে বাজতে শুরু করে। বিরক্তিতে অর্নি মুখ দিয়ে ‘চ্যাহ’ টাইপ শব্দ করে ফোন রিসিভ করে কানে নেয়। ফোনের ওপাশের ব্যাক্তির কন্ঠস্বর শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসে ও। কান থেকে ফোন নামিয়ে চেক করে দেখলো বিডির নাম্বার। চমকে উঠলো ও। ওপাশ থেকে কিছু একটা বলতেই অর্নি তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে নেমে গায়ে উড়না জড়িয়ে দৌড়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে গেলো। অতিরিক্ত এক্সাইটমেন্টে অর্নি লিফটে না গিয়ে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। মানুষটার সামনে গিয়ে অর্নি দু হাটুতে ভর করে হাঁপাতে লাগলো। কিছুক্ষণ বাদে নিজেকে স্বাভাবিক করে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো,
–“তুমি বিডিতে ব্যাক করছো এটা আগে জানাওনি যে আমাকে।”

–“আগে জানালে কি তোর এই খুশিটা দেখতে পারতাম আমি?”

টায়রার কথায় অর্নি মুচকি হাসলো। টায়রার পিছনে লাগেজ দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো অর্নি। টায়রা বিষয়টি বুঝতে পেরে মৃদু হেসে বললো,
–“এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এসেছি ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দিয়ে যাই।”

–“এটা তো বাহানা। মূলত তুমি অন্যকাউকে দেখতে এখানে এসেছো। সেটা আমার থেকে ভালো আর কে জানে?”

অর্নির কথায় টায়রা লাজুক হাসলো। অর্নি মৃদু হেসে বললো,
–“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, তুমি যার মুখদর্শন করার জন্য বাড়ি না গিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এসেছো সে এখনো পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে।”

–“এই সময়ে ঘুমোচ্ছে? অফিস যায়নি? শরীর খারাপ ওর?”

–“নাহ এমনিতেই যায়নি। বললো কি কাজ নাকি আছে। বাই দ্যা ওয়ে তুমি যে আজ বিডিতে ব্যাক করছো সেটা ভাইয়া জানে না? বলে আসোনি?”

–“তোর ভাই আমার ফোন ধরে নাকি যে বলবো? ভাবের ড্রাম একটা৷ আমার সাথেই যত ভাব দেখায়। ফোন দিলে রিসিভ করে না। রিসিভ করলেও বিজি আছি বলে রেখে দেয়।”

–“আচ্ছা বুঝলাম। এখন এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরে যাবে? বাসায় চলো।”

–“নাহ পরে এক সময় আসবো।”

–“আম্মু যদি জানে তার ভাইয়ের একমাত্র মেয়ে এবং তার হবু পুত্রবধূ তার বাসার নিচে এসে আমার সাথে দেখা করে গেছে অথচ ভিতরে যায়নি তাহলে আমাকে আস্ত রাখবে না। চলো প্লিজ।”

–“সেটা ফুপ্পিকে আমি পরে ম্যানেজ___”

টায়রা পুরো কথা বলার আগেই তিন তলার ব্যালকোনি থেকে অর্নব বলে,
–“অর্নি নিচে কার সাথে কথা বলছিস তুই?”

টায়রা তখন উলটোদিকে ঘুরে থাকায় অর্নব ওর মুখ দেখতে পারেনি। ওর কন্ঠস্বর শুনে টায়রা মনে অদ্ভুত কম্পন সৃষ্টি হলো। অজানা ঝড় শুরু হলো ওর মনের মাঝে। কতদিন পর এই মানুষটাকে দেখবে ও। ভাবতেই সারা শরীরে অজানা ভালো লাগা বয়ে যাচ্ছে। টায়রা পিছন দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই অর্নবের সাথে চোখাচোখি হলো ওর। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই বাসার নিচে টায়রাকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠলো অর্নব। অর্নবকে টাওজার পরে খালি গায়ে ব্রাশ হাতে ব্যালকোনিতে দেখে চোখ নামিয়ে নিলো টায়রা। অর্নব তখনো হা করে টায়রাকেই দেখছিলো। অর্নি দুজনের কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসছে৷ তারপর কিছুটা জোরেই বললো,
–“ভাইয়া দেখো না ভাবী আমাদের বাসার নিচ অব্দি এসে এখন ভিতরে না ঢুকেই চলে যাচ্ছে। এভাবে চলে গেলে কেমন দেখায় বলো তো?”

অর্নির কথায় ঘোর ভাঙে দুজনের। টায়রা হচ্ছে অর্নির মামাতো বোন। পারিবারিক ভাবেই দেড় বছর আগে অর্নবের সাথে টায়রার আংটি বদল হয়। মাস ছয়েক আগেই সিঙ্গাপুরে টায়রার খালামনির ওখানে বেড়াতে যায়। সপ্তাহ খানেক আগে হুট করেই সামান্য একটা বিষয়ে অর্নবের সাথে ওর একটু রাগারাগি হয়। সে জন্য অর্নব কিছুটা রাগের ফলেই টায়রার ফোন রিসিভ করে না আর রিসিভ করলে বিজি বলে রেখে দেয়। অর্নবকে মানাতেই টায়রা তাড়াতাড়ি বিডিতে ব্যাক করে। অর্নব কয়েক মিনিট একদৃষ্টে টায়রার দিকে তাকিয়ে থেকে রুমে চলে যায়। টায়রা ছলছল চোখে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। অর্নি একপ্রকার টেনেই টায়রাকে বাসায় নিয়ে যায়।

চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here