#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|২২|
অর্নি আর উৎসবের বিয়ের সপ্তাহ দুই পেরিয়েছে৷ উৎসব অর্নির পরিবারের সাথেও মিশে গেছে একদম। আর অর্নির তো উৎসবের পরিবারের সাথে আগে থেকেই বেশ ভাব। দুই পরিবারের বন্ডিংটাও বেশ। রাত জেগে উৎসবের সাথে কথা বলা, মাঝে মধ্যে ঘুরতে বের হওয়া সব মিলিয়ে বেশ ভালোই চলছে সবকিছু।
ক্লাস শেষে ক্যানটিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে অর্নিদের গ্রুপ। তরী আর শান্ত জয়েন হয়েছে ওদের সাথে। শান্ত মুচকি হেসে অর্নিকে বললো,
–“ভাবী বলবো নাকি শালীকা বলবো?”
অর্নি মৃদু হেসে বললো,
–“যা বলে আপনি খুশি___”
–“আচ্ছা, উৎসব ভাইয়ার সামনে ভাবী আর এমনিতে শালীকা।”
নূর চট করেই বললো,
–“কেন, কেন?”
শান্ত হেসে বললো,
–“আরেহ উৎসব ভাইকে একটু সম্মান দেওয়া লাগবে না? সবসময় যদি শালীকা ডাকি তাহলে উৎসবের ভাইয়ের মনে হবে না উনার বউকে ভাবী কেন ডাকছি না? আর অর্নিরও তো একটা ইচ্ছে আছে নাকি? ওরও তো ভাবী ডাক শুনতে ইচ্ছে হবে।”
রুশান হেসে বললো,
–“কারেক্ট।”
অর্নি সবাইকে থামিয়ে বললো,
–“শান্ত ভাই আপনি নূরকে বিয়ে করে নিজের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কবে?”
শান্ত অসহায় চোখে বললো,
–“আমি তো এখনই চাচ্ছি, তোমার ননদিনী-ই তো চাইছে না আমার কাছে যেতে।”
নূর চোখ পাকিয়ে তাকালো শান্ত’র দিকে। শান্ত অর্নিকে বললো,
–“দেখো, কিভাবে তাকাচ্ছে আমার দিকে__”
অর্নি এবার নূরের মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
–“কিরে, ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন? দাঁড়া আমি ব্যবস্থা করছি তোকে শান্ত ভাইয়ের কাছে পাঠানোর জন্য।”
নূর সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
–“আমাদের তো এখনো বিয়ে হয়নি জাস্ট এনগেজমেন্ট হয়েছে। আর তুই তো কাগজে কলমে আমার ভাইয়ের বউ তাহলে তুই ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন? চলে আসতে পারছিস না ভাইয়ার কাছে?”
অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“এখানে উনাকে টানছিস কেন? কথা হচ্ছে তোদের নিয়ে__”
এভাবেই একের পর এক আড্ডা হচ্ছে সকলের মাঝে। শান্ত বললো,
–“তো তোমরা আড্ডা দাও, আমি তোমার ফ্রেন্ডকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি।”
অর্নি সম্মতি জানাতেই শান্ত নূরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো৷ কিছুক্ষণ বাদে রুশানও বললো,
–“দোস্ত তাইলে চল, আমরাও যাই? অনেক দিন হয় তরীরে নিয়ে কোথাও যাই না।”
অর্নি মুচকি হাসলো। বললো,
–“তোরা যা, আমি শুধু শুধু কাবাব ম্যা হাড্ডি হতে কেন যাবো?”
তরী অর্নির হাত ধরে বললো,
–“আপুই চলো না, তুমি একা থাকবে নাকি?”
অর্নি একগাল হেসে বললো,
–“উঁহু, আমি বাসায় চলে যাবো তোমরা যাও।”
রুশান বললো,
–“তাহলে চল, আগে তোকে বাসায় পৌঁছে দেই।”
–“আরেহ ইয়ার আমি যেতে পারবো। তোরা যা।”
–“সিয়র?”
–“অফকোর্স।”
অর্নির কথায় রুশান তরীকে নিয়ে চলে গেলো। অর্নিও ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরীতে গেলো। বই নিয়েছিলো পড়ার জন্য সেগুলোই জমা করবে। আগের বইগুলো জমা করে নতুন একটা বই নিলো অর্নি পড়ার জন্য। ভাবলো বাসায় গিয়ে শুয়ে বসেই কাটাতে হবে তাই এখানেই বসলো বই পড়ার জন্য। ফোন বেজে উঠলো অর্নির। উৎসবের ফোন। এসময়ে ওর ফোন দেখে ক্ষানিকটা অবাক হলো অর্নি। এসময়ে উৎসব অফিসে থাকেন। সচারাচর ফোন করে না। অর্নি রিসিভ করে কানে নিতেই উৎসব বললো,
–“গেটের বাইরে অপেক্ষা করছি, চলে এসো।”
অর্নি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বই হাত নিলো। তারপর উৎসবের সাথে কথা বলতে বলতেই বেরিয়ে গেলো লাইব্রেরী থেকে। গেটের কাছাকাছি আসতেই ওড়নায় টান বাজে। অর্নি পেছন ফিরে দেখতে পেলো মাহির ওর হাতে অর্নির ওড়না পেচাচ্ছে৷ অর্নি গলার কাছে ওড়না চেপে ধরে রাগী গলায় বললো,
–“কি অসভ্যতামি শুরু করছেন? সেদিনের মার খেয়েও লজ্জা হয়নি আপনার না?”
মাহির অর্নির সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
–“তোমার জন্য উৎসব বারবার আমার গায়ে হাত তুলেছে, ভাবলে কি করে এত সহজে তোমায় ছেড়ে দিবো আমি?”
কথাটা বলে মাহির আবারো অর্নির ওড়না ধরে টান লাগালো। অর্নি সজোরে মাহিরের গালে থাপ্পড় মেরে বললো,
–“কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না, তেমনি আপনিও ভালো হবেন এটা আশা করাটাই বোকামি।”
মাহির অর্নির হাত চেপে ধরে বললো,
–“তোমার সব তেজ আমি আজ মাটিতে মিশিয়ে দিবো।”
এতক্ষণ লাইনে থেকেই সবটা শুনছিলো উৎসব। ফোন কানে নিয়েই ক্যাম্পাসে ঢুকে। উৎসব প্রথমেই বুঝেছিলো কিছু একটা তো গোলমাল হবে তাই সাথে সাথেই গাড়ি পার্ক করে নেমে আসে ও। মাহির অর্নিকে টেনে নিয়ে গেটের কাছে যেতেই দেখা হয় উৎসবের সাথে। উৎসব রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে মাহিরের হাতের দিকে। মাহির ঘাবড়ে গিয়ে হাত ছেড়ে দিলো অর্নির। উৎসব সেদিকে তাকিয়ে বললো,
–“যেখানে অর্নি সা’য়াদাত আবরার উৎসবের গার্লফ্রেন্ড থাকা অবস্থায় ওর কিচ্ছুটি করতে পারিস নি সেখানে ও সা’য়াদাত আবরার উৎসবের বিয়ে করা বউ। তাকে স্পর্শ করার মতো সাহস কিভাবে দেখাস তুই?”
উৎসবের বউ কথাটা শুনে মাহির চমকালো। কিন্তু সেটা চেহারায় প্রকাশ করলো না। অর্নির হাত ধরতে গেলেই উৎসব লাথি মারলো মাহিরের হাত বরাবর। মাহির ছিটকে ক্ষানিকটা দূরে গিয়ে পড়লো৷ তেড়ে উৎসবের কাছে যেতে গেলেই মাহিরের বন্ধুরা ওকে টেনে নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। উৎসব আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
–“নূর আর রুশান কোথায়?”
অর্নি জানালো ঘুরতে গেছে ওরা। উৎসব ক্ষানিকটা চেঁচিয়ে বললো,
–“নূর তোমাকে একা রেখে যায় কিভাবে? কোনো কান্ড জ্ঞান নেই ওর? জানেনা মাহির কিভাবে ওত পেতে থাকে তোমার ক্ষতি করার জন্য?”
–“আপনি অযথাই রেগে যাচ্ছেন। এখন আমার জন্য কি ওরা নিজেদের মতো সময় কাটাবে না?”
–“ওদের উচিত ছিলো আগে তোমায় বাসায় পৌঁছে দেওয়া নয়তো আমাকে জানানো, আমি এসে নিয়ে যেতাম তোমাকে।”
–“রুশান বাসায় পৌঁছে দিতে চেয়েছিলো আমিই বলেছিলাম একা__”
উৎসবের মেজাজ খারাপ হলো এবার। অর্নির দুই বাহু চেপে ধরে ঝাঁজালো কন্ঠে বললো,
–“এখন যদি সময় মতো আমি এখানে না থাকতাম? মাহির যদি নিয়ে যেতো তোমায়? ভাবতে পারছো কি হতো আজ?”
অর্নি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অনেকেই কেমন চোখে দেখছে ওদের। অর্নি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে জড়িয়ে ধরলো উৎসবকে। উৎসব সরিয়ে দিতে চাইছিলো কিন্তু অর্নিই শক্ত করে ধরে রেখেছে। ইনোসেন্ট গলায় বললো,
–“আপনি এসে পড়েছেন তো৷ আর দেখুন, কিচ্ছু হয়নি তো আমার। আপনি অযথাই রেগে থাকবেন না প্লিজ।”
–“ছাড়ো।”
–“উঁহু আগে বলুন, রেগে থাকবেন না।”
–“সবাই দেখছে অর্নি।”
–“দেখুক না, আমার বরকেই তো ধরেছি।”
–“আচ্ছা তাহলে এর থেকেও বেশি কিছু করি আমি? চুমু খাই ঠোঁটে?”
অর্নি দ্রুত সরে গেলো উৎসবের থেকে। বললো,
–“ছিঃ কিসব বলছেন?”
উৎসব অর্নির দিকে এগোতে এগোতে বললো,
–“কেন? ভুল কি বললাম? আমার বিয়ে করা বউ-ই তো। আমার বউয়ের ঠোঁটেই তো চুমু খাবো__”
–“একদম কাছে এগোবেন না। এটা পাবলিক প্লেস।”
উৎসব বাঁকা হেসে বললো,
–“তাহলে চলো, বাসায় যাওয়া যাক? আমার ঘর তো আর পাবলিক প্লেস না___”
–“অসভ্য___”
এইটুকু বলেই অর্নি হাঁটা লাগালো গাড়ির দিকে। উৎসব অর্নির পেছনে যেতে যেতে মুচকি হেসে বললো,
–“তোমারই তো বর।”
–“হ্যাঁ আমার বরকেই বলেছি। আস্তো একটা অসভ্য সে।”
কথাটা বলে অর্নি গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে বসলো। উৎসবও হেসেই ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
–
উৎসব নিজেদের বাসার সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করালো। অর্নি ভ্রু কুঁচকে তাকালো উৎসবের দিকে। অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“বাসায় কেন?”
উৎসব বাঁকা হেসে বললো,
–“ভুলে গেলে? একটু আগেই না বললাম আমার ঘরটা পাবলিক প্লেস না?”
অর্নি চট করেই বললো,
–“বাসায় যাবো আমি। আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।”
উৎসব বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো,
–“ভয় পাচ্ছো কেন? তোমারই তো বর, একটু আধটু ঠোঁটে চুমু খেলে তেমন কিচ্ছু হবে না। তাছাড়া আমার তো আরো অনেক কিছুই করার অধিকার আছে রাইট?”
বলেই বাঁকা হাসলো উৎসব। অর্নির বুক ধরফর করছে। লোকটা এসব বলছে কেন? অর্নির এমন ফেস দেখে উৎসব উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। বললো,
–“রিল্যাক্স অর্নি। তোমার শাশুড়ী-মা তোমায় নিয়ে আসতে বলেছে তাই বাসায় নিয়ে এসেছি___নয়তো অন্য কোথাও নিয়ে যেতাম।”
অর্নি লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বললো,
–“অসভ্য একটা, ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো আমাকে।”
কথাটা বলেই অর্নি গাড়ি থেকে নেমে গেলো। উৎসব গাড়ি থেকে নেমে চাবিটা দারোয়ানের হাতে দিয়ে বললো গাড়িটা গ্যারাজে রেখে দিতে। তারপর অর্নির পিছনে গিয়ে বললো,
–“এখনো নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই বউ। বাসাটা কিন্তু আমারই, আর আমিও এখানেই আছি।”
অর্নি কলিংবেল চেপে বললো,
–“আমাকে একা পাবেনই না আপনি।”
–“চ্যালেঞ্জ করছো আমায়?”
অর্নি উৎসবের দিকে ঘুরে বললো,
–“হ্যাঁ।”
–“ওকে ওয়েট এন্ড সি।”
অর্নি অন্যদিকে ঘুরে তাকালো। শায়লা বেগম দরজা খুলে দিতেই অর্নি উনাকে জড়িয়ে ধরলো। শায়লা বেগম বললো,
–“কতদিন হয় আসিস না, এখন তো একটু আধটু আসতে পারিস আমাদের দেখতে। নাকি শাশুড়ী বর কাউকেই দেখতে ইচ্ছে করে না?”
অর্নি আড়চোখে তাকালো উৎসবের দিকে৷ তারপত বললো,
–“এই যে আজ আসলাম শাশুমা, এখন তো সবসময় আসবো দেখবা। তখন আবার বলো না কিন্তু এত আসি কেন এ বাসায়।”
শায়লা বেগম অর্নির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
–“এখন তো তোরও বাসা এটা। তোর বাসায় তুই আসবি।”
–“আচ্ছা, আচ্ছা।”
শায়লা বেগম অর্নিকে সোফায় বসিয়ে কিচেনে গেলেন। উৎসব উপরে নিজের রুমে চলে গেছে। শায়লা বেগম অর্নির সামনে কয়েক ধরনের স্ন্যাকস দিয়ে আবারো কিচেনে গেলেন রান্নার জোগাড়যন্তর করতে। উৎসব একেবারে ফ্রেস হয়ে এসে অর্নির পাশে বসলো। অর্নি বললো,
–“আম্মু চিন্তা করবে। এখন বাসায় যাই?”
–“আন্টি জানে তুমি এ বাসায়।”
অর্নি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। উৎসব বললো,
–“আম্মু ফোন করে আন্টির থেকে অনুমতি নিয়েছে। সুতরাং নিশ্চিন্তে থাকতে পারো তুমি।”
চলবে~
[