তুমিময় আসক্তি পর্ব -১১+১২

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“১১”

–“”দোলা ঘরের বাইরে এসে মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদে৷ ঘাড়ে এবং হাতে অসম্ভব যন্ত্রণা করছে। রুদ্রর ব্যবহারে দোলার মধ্যে ঘৃণা, হীনতা বেড়েই চলেছে।
– ভাবি! তুমি ঠিক আছো? ব্রো আবারও তোমার গায়ে হাত তুলেছে? চিন্তিত কন্ঠে বলে তানিয়া ঘাবড়ে যাওয়া ফেস নিয়ে। তানিয়ার কথায় দোলা শব্দ করে কেঁদে দেয়৷ তানিয়া দোলাকে আগলে নেয় নিজের কাছে৷
– তোমার ভাইয়া অদ্ভুত মানুষ তানিয়া। কোনো সুস্থ মানুষ এমন হতে পারে না। সে নাকি আমাকে ভালোবাসে? তাহলে কীভাবে আঘাত করে আমায় বলতে পারো তানিয়া? সজল ভাইয়াকে নিয়ে উনি! ছিহ আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগছে সেখানে উনি আমাকে! দোলার গলা কাঁপছে৷ কথা আটকে আটকে আসছে কান্নায়৷
– শান্ত হও ভাবি৷ নিজেকে সামলাও। এইভাবে নিচে গেলে সবাই সন্দেহ করবে৷ তোমার ভাইয়া কষ্ট পাবে৷ তুমি নিচে যাও আমি আসছি! তবে ব্রো যেটা করছে একদম ঠিক করছে না৷ আর এর মূল্য একদিন চুকাতে হবে তাকে। রেগে বলে তানিয়া।

— দোলা চোখের পানি মুছে! মুখে হাসি এনে নিচে যায়। গলার পাশটা চুল দিয়ে ঢেকে নেয় হাতটা শাড়ির আড়ালে রাখার চেষ্টা করে।

– ব্রো! দৃঢ় কন্ঠে ডেকে উঠে তানিয়া। চোখ মুখে তার রুদ্রর প্রতি ক্রোধের ছাপ।
– তুই এখানে? কেনো এসেছিস? আমাকে একটু একা থাকতে দে তানি। যা এখানে থেকে।
– তুমি একা থাকো তাতে আমার সমস্যা নেই ব্রো। বা আমিও এখানে থাকার জন্য আসেনি। শুধু কয়টা কথা বলার ছিলো তোমাকে। রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকায়।
– বড্ড সাহস দেখাচ্ছিস মনে হচ্ছে। আমার সাথে এইভাবে কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোকে?

– একটা ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য কোনো বোনের আলাদা করে সাহসের প্রয়োজন হয়না। যদিও জানি না আমি সত্যি কখনো তোমার বোন হয়ে উঠতে পেরেছি কি-না। ব্যথিত হৃদয়ে বলে কথাটা তানিয়া।
– তানিয়া! কি বলছিস এইসব? উত্তেজিত কন্ঠে বলে রুদ্র। আমি তোকে সব সময় নিজের বোনের চোখে দেখে এসেছি। কখনো নিজের বোন ছাড়া অন্য কিছু ভাবিনি। আর আজ তুই এত বড় কথা বলতে পারলি?
– হ্যাঁ পারলাম। তুমি যদি একটা ভাই বোনের পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে বাজে কথা বলতে পারো। সেখানে আমি এই সামান্য কথাটা বলতেই পারি ব্রো।
– মানে? কি বোঝাতে চাইছিস তুই? গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র।
– ব্রো তুমি দোলা ভাবির সাথে আর কত অন্যায় করবে বলতে পারো? কেনো এত কষ্ট দাও মেয়েটাকে৷ আচ্ছা তুমি কাকে ধরে সন্দেহ করছো তাকে। যে ছেলেটার তার ভাই হয়। কি করে পারো ব্রো তুমি? তোমার আমার সম্পর্ক যতটা পবিত্র ঠিক ওদের সম্পর্কটাও ততটাই পবিত্র। আর তুমি কি-না। আমার না ভাবতেও লজ্জা লাগে ব্রো যে আমি তোমার মতো একটা ভাইয়ের বোন। আচ্ছা তোমার কেমন লাগবে বলো তো! কেউ যদি তোমাকে আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলে। আমাদের একসাথে জুড়ে দিয়ে বাজে ট্যাগ লাগাই। খুব ভালো লাগবে নিশ্চয় তোমার?

– তানিয়া! চিৎকার করে বলে উঠে রুদ্র। রাগে হাতের মুঠো শক্ত করে চেপে ধরে।
– খুব গায়ে লাগছে তোমার তাই না ব্রো? শুনতেও খারাপ লাগছে নিশ্চয়? দোলা ভাবির অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করো একবার। তুমি যে কথাগুলো বলেছো। যে টর্চার করেছো অহেতুক সন্দেহের বশে সেটা একবার উপলব্ধি করো। এটাকে ভালোবাসা বলে না ব্রো। ভালোবাসা এমন ভাবে হয়না৷ হ্যাঁ মানছি তুমি ভাবিকে অনেক ভালোবাসো। তাকে হারানোর ভয় পাও৷ এই জন্য তুমি কারো সাথে সহ্য করতে পারো৷ তাকে হারানোর ভয়ে তটস্থ থাকো সব সময়। কারণ তুমি একবার বিশ্বাস করে ঠকেছো৷ তার মানে এই নয় যে একজনের জন্য সেটা সবাই সাফার করবে? একজনের বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার সবাই হবে। রুদ্র আহত চোখে তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে।

– এখনো সময় আছে ব্রো! নিজেকে সামলাও। ভালোবাসাকে আগলে রাখতো শিখো। নয়তো এমন একটা দিন আসবে যেদিন তোমার পাশে কিন্তু তোমার ভালোবাসার মানুষ গুলো থাকবে না৷ আর সেটাও তোমার ভুলে। ভালোবাসা হলো পানির মতো স্বচ্ছ, আকাশের মতো অসীম, বাতাসের মতো শীতল। তুমি যতটা মুগ্ধ হয়ে থাকবে ততটাই উপলব্ধি করবে। তাই বলছি ব্রো বেরিয়ে এসো এইসব থেকে। বিশ্বাস করতে শিখো নিজের ভালোবাসাকে। কোনো নিয়মের বেড়াজালে বাঁধতে যেওনা। তাহলে সেটা আর ভালোবাসা থাকে না৷ অধিকারবোধ জমিয়ে অহেতুক ভালোবাসার প্রকাশ দিয়ে চালানো হয়। কথাগুলো বলে তানিয়া এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না সেখানে। তানিয়ার চোখে পানি। দোলার চোখ মুখ দেখে তানিয়ার ভীষণ খারাপ লাগে৷ যার জন্য আজ রুদ্রকে এতগুলো কথা শোনানো তার। আর সত্যি তো বলেছে সে। এইভাবে কখনো ভালোবাসা হয়না৷

রুদ্র অনুভূতিশূণ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে৷ তানিয়ার বলা কথাগুলো বারবার ভাবতে থাকে। সত্যি অনেক অন্যায় করে ফেলেছে সে দোলার সাথে। দোলা তো এইসবের যোগ্য না। তাহলে কেনো করছে এমন? রুদ্র ধীর পায়ে বারান্দায় এগিয়ে যায়৷ বারান্দায় রাখা চেয়ারে গা এলিয়ে বসে। হতাশা, অনুশোচনা তোলপাড় অবস্থা ভেতরে।

– সজল চলে গেছে একটু আগে৷ রাতের খাবার খেয়ে চলে যায় সে৷ যদিও সে চলে যাওয়ার বাহানা করেছিলো আগে কিন্তু রত্না চৌধুরীর জন্য পেরে উঠে না। দোলা পুরোটা সময় হাসিখুশি মুখটা বজায় রেখে সবার সামনে। তানিয়া আহত চোখে বারবার দোলাকে দেখেছে৷ ভেতরে চাপা কষ্ট টা থাকলেও প্রকাশ করতে পারে না দোলা বা তানিয়া কেউ-ই। রাত প্রায় বারোটা। সবাই খেয়ে যে-যার ঘরে চলে গেছে৷ রয়ে গেছে শুধু দোলা৷ দোলা সবার খাওয়া দাওয়া শেষে সব কিছু গুছিয়ে রাখে৷ যদিও এইসবের জন্য সার্ভেন্ট আছে। কিন্তু দোলা এইগুলা নিজে করে। কারণ তার ভালো লাগে কাজগুলো করতে। কাঙ্ক্ষিত হোক না অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হোক। এই সংসারের সাথে তো সে জুড়ে গেছে। তাই এই সংসারটা তার। সংসার গুছিয়ে রাখাও তার দায়িত্ব। তাই দোলা কোনো অবহেলা করতে চাইনা এই সংসারকে।

– দোলা ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছে৷ কি করবে সে ভাবতে ঘাম ছুটে যায়৷ ঘরে যাবে কি-না যাবে না ভেবে দিকহারা৷ যদিও দোলার তিল পরিমাণ ইচ্ছে নেই রুদ্রর মতো নোংরা মানসিকতার মানুষের সামনে যাওয়ার। তার উপর রুদ্র বলেছে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে৷ যদি দোলা ঘরে যায় আর তাকে দেখে রুদ্র আবার রেগে যায়৷ দোলার শরীর প্রচন্ড ব্যথা৷ রুদ্রর আঘাত নতুন করে সহ্য করার ক্ষমতা তার মধ্যে নেই আপাতত। দোলা সোফায় বসে গিয়ে৷ বড্ড ক্লান্তও লাগছে নিজেকে। চোখ জুড়ে আসছে ঘুমের ছায়া৷ তানিয়া উপর থেকে দোলাকে দেখে নিচে নেমে আসে। দোলা বসেই চোখ দুটো বন্ধ করে। কিন্তু কারো আসার আভাস পেয়ে চোখ মেলে তাকায় আবার।

— ভাবি তুমি ঘরে না গিয়ে এখানে কেনো? তানিয়ার কথায় হকচকিয়ে উঠে দোলা। ঘাবড়ে যাওয়া দৃষ্টি রেখে আমতাআমতা করে বলে আসলে ওই খাওয়া মনে হয় বেশি হয়ে গেছে৷ তাই একটু হাঁটাহাঁটি করছিলাম৷ তুমি নেমে এলে যে? কিছু লাগবে তানিয়া? তানিয়া মুগ্ধ চোখে তাকায়।
– আমার থেকে কি লোকানোর চেষ্টা করছো ভাবি! আমি তো সব কিছুই দেখতে পারছি তোমার ওই অসহায় চোখের চাহনিতে। তুমি ঘরে যেতে ভয় পাচ্ছো তাই না?

– দোলা করুণ চোখে তাকায়।
– আচ্ছা তোমাকে ব্রোর রুমে যেতে হবে না৷ এসো আজ আমার সাথে ঘুমাবে। সাবলীল ভাবে বলে তানিয়া।
– এইম! না না তানিয়া৷ এমন কিছু নয়। সত্যি বলছি আমি একটু হাঁটাহাঁটি করছিলাম। আমি চলে যেতাম ঘরে এক্ষুনি। তুমি যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো আমি একটু বাদে ঘরে চলে যাবো। হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে বলে দোলা৷ তানিয়া কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে। এরপর বলে ঠিক তো?.
– আরে বাবা একদম। তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়ো৷ অনেক রাত হলো তো। তানিয়া দোলার কথায় মুচকি হেসে চলে আসে৷ তানিয়া যাওয়ার পরেই দোলা ড্রয়িং রুমের আলো নিভিয়ে ড্রিম-লাইট জ্বালিয়ে দেয়৷ যাতে কেউ কাছ থেকে ছাড়া দূর হতে স্পষ্ট তাকে না দেখে।

– রাত প্রায় একটা বাজতে আসছে কিন্তু দোলা রুমে আসে না। রুদ্র এতখন বারান্দায় বসে ছিলো চোখ বন্ধ করে। রুদ্র মনস্থির করে দোলা আসলে তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবে সব কিছুর জন্য। কিন্তু দোলা আসেনা রুমে।
-রুদ্র এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ে রুদ্রর।
– একটা বাজে দোলা এখনো রুমে আসলো না কেনো? করছে টা কি নিচে? রুদ্র কৌতুহলী হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। উপর থেকে নিচে তাকিয়ে দেখে ড্রয়িং রুমে আবছা ড্রিম-লাইটের আলো। রুদ্রর চোখ মুখ কুচকে আসে৷ কারণ ড্রয়িং রুমে সব সময় লাইট অন করাই থাকে। হঠাৎ আজ ড্রিম- লাইট কে জ্বালিয়েছে৷ আর দোলা বা কোথায়? রুদ্র বিস্ময় নিয়ে নিচে নেমে এসে দেখে দোলা সোফার উপর গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। দোলাকে এইভাবে দেখে রুদ্র হতভম্ব হয়ে যায়।
– হোয়াট ইজ দিস? আমি রুমে অপেক্ষা করছি আর এই ষ্টুপিডটা এখানে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আর এখানে কিভাবে ঘুমিয়ে আছে ও আরামে। উফফ আল্লাহ! আমি পাগল হয়ে যাবো এই মেয়েকে নিয়ে। আচ্ছা দোলা রুমে না গিয়ে এখানে ঘুমিয়েছে কেনো? ভাবে রুদ্র।
– আমি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছি তাই? নাকি আমার উপর রাগ করে যায়নি? রুদ্র এবার ভালোবাসার দৃষ্টি রাখে দোলার দিকে৷ দোলার মায়াবী ঘুমন্ত ফেস দেখে মুচকি হাসে। সাথে বেরিয়ে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস। রুদ্র দোলাকে ডাকতেও গিয়ে ডাকে না। এগিয়ে এসে কোলে তুলতে যাবে তখনই একটা ছায়া মতো কিছু সরে যায় দরজার আড়াল থেকে। রুদ্র ভ্রু কুচকে কৌতুহলী হয়ে তাকায় সেদিকে। এগিয়ে এসে এদিক ওদিক দেখে কে ছিলো।।কিন্তু কাউকে দেখতে পাইনা৷ রুদ্র মনের ভুল ভেবে দোলাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে আসে৷ শরীর ব্যথা আর ক্লান্ত থাকায় দোলার ঘুমটা একদম জেঁকে বসে। যার জন্য সে কিছুই বুঝতে পারে না।

– নিজ ঘরের সামনে থেকে সব কিছু দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসে তানিয়া৷ সে জানতো রুদ্র আসবে দোলাকে নেওয়ার জন্য। তাই তো তানিয়া তখন জোর করেনি দোলাকে তার ঘরে যাওয়ার জন্য। তানিয়া আগেই জানতো দোলা আজ ঘরে যাবে না। কিন্তু তাকে ঠিকই মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে। সব কিছু বুঝেও তানিয়া দোলাকে বুঝতে দেয়না কিছু৷ তার কথা বিশ্বাস করে চলে আসে এমন একটা ভাব নেই। কারণ তানিয়া চাই রুদ্র আর দোলা একে-অপরের কাছাকাছি থাকুক। রুদ্র দোলাকে সঠিকভাবে বুঝতে শিখুক৷ তানিয়া প্রশান্তির দীর্ঘশ্বাস রেখে ঘরে চলে আসে৷

– রুদ্র দোলাকে এনে শুয়ে দেয়৷ দোলা এখনো ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। রুদ্র দোলাকে ঠিকভাবে শুয়ে দিয়ে উঠে আসতে যাবে তখন চোখ যায় দোলার ঘাড়ে। খারাপ লাগে রুদ্রর নিজের করা এমন কাজের জন্য। রুদ্র হাত দেয় সেখানে৷ এতে দোলা নড়েচড়ে উঠে একটু।

– আইম সরি দোলাপাখি। আমি এমনটা করতে চাইনা তোমার সাথে। কিন্তু আমি জানি না আমার মধ্যে কি হয় তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে। কোনো পর-পুরুষের সাথে দেখলে আমার মধ্যে যেনো তোলপাড় তৈরি হয়৷ রাগে মাথা গরম হয়ে আসে৷ তোমাকে হারানোর ভয়টা আমার মধ্যে গাঢ় হতে থাকে৷ আর তখনই আমি কন্ট্রোললেস হয়ে পড়ি। নিজেকে সংযোত করতে পারিনা। সব রাগ ক্রোধ তোমার উপর এসে পড়ে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি চাইনা তোমাকে আঘাত করতে। আমি তো তোমাকে ভালোবাসি দোলা। ভীষণ ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষকে সত্যি কেউ কখনো আঘাত করতে পারেনা। কিন্তু আমি পারিনা নিজেকে সামলাতে, নিজের রাগকে দমাতে। আমাকে মাফ করে দাও দোলা৷ আমি কথা দিচ্ছি আর এমন ভুল করবো না৷ আর কখনো তোমাকে ভুল বুঝবো না। তুমি শুধু বলো আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না। আমাকে ঠকাবে না? আমার
থেকে কখনো দূরে যাওয়ার কথা চিন্তা করবে না? আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে দোলা। রাতের আঁধারে একজন পুরুষের অনুভুতি প্রকাশ পায় ঠিকই কিন্তু সেটা তার ভালোবাসার মানুষের কান অবধি পৌছায় না৷ যার জন্য তার এত ভালোবাসা, এত আবেগ অনুভূতি ব্যক্ত সে মানুষটাই জানতে পাইনা৷ জানবে কি করে? সে তো নিথর ঘুমে আচ্ছন্ন। রুদ্র দোলার আঘাত লাগা স্থানে মলম লাগিয়ে দেয়৷ এরপর দোলার কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।

– সকালে দোলার ঘুম ভাঙে একটু দেরি করে। শরীরটা খারাপ থাকায় ঘুমটা একটু বেশি হয়ে গেছে। দোলা নিজের উপর ভারী অনুভব করে। আবছা আবছা ঘুমন্ত চোখে তাকিয়ে দেখে রুদ্র তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। দোলার ঘুম ভাব ছুটে যায়। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে দেখে সে ঘরে আছে।
– আমি ঘরে আসলাম কখন? আমি তো নিচে.. তাহলে কি উনি নিয়ে এসেছেন আমায়? হতে পারে৷ উফফ এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যেনো আমি উনার পাশবালিশ। আমার নিজের কোনো স্বস্তি নেই। গন্ডার একটা।
– দোলা উসখুস করতে শুরু করে। দোলার নড়াচড়ায় রুদ্রর ঘুম হাল্কা হয়ে আসে৷
কি হচ্ছে দোলা পাখি? ঘুমাতে দাও আমায়।
– হ্যাঁ তো ঘুমাননা বারণ করছে কে। তবে আমাকে ছেড়ে দিয়ে তবে ঘুমান৷ উঠবো আমি ছাড়ুন৷ গম্ভীর কন্ঠে বলে দোলা।
রুদ্রর ঘুম পুরোপুরি হাওয়া হয়ে যায় দোলার কথায়। চোখ খুলে তাকায় দোলার দিকে। রুদ্রকে তাকাতে দেখে দোলা চোখ ফিরিয়ে নেয় ঘৃণায়।
– আমি যতখন ঘুমাবো ততখন তোমায় এইভাবেই থাকতে হবে৷ তাই কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে থাকো।। – হ্যাঁ সেটাই তো! আপনি যেটা বলবেন সেটাই তো হবে৷ কারণ আপনি তো স্বামী আমার। আমার অভিভাবক আমার দিকনির্দেশনা তো আপনি করবেন। আমি কি করবো, কোথায় যাবো কার সাথে কথা বলবো সব কিছু তো আপনি ঠিক করে দিবেন৷ আমার তো নিজের কোনো ভালো-মন্দ নেই৷ আমার সুবিধা অসুবিধা এইসব কিছু দেখার বিষয় নয়। আমি তো ভুলেই গেছি যে আমি একটা মানুষ হলেও কারো হাতের প্রপার্টি। সে যেমন ভাবে ইচ্ছে আমাকে নাচাবে আমাকে চলাবে আর আমি তাই করতেই বাধ্য। রাগে, অভিমানে কথাগুলো বলে দেয় দোলা। রুদ্র ব্যথিত নয়নে তাকায় দোলার দিকে। দোলাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে। রুদ্রর থেকে ছাড়া পেতেই দোলা ধুসমুসিয়ে উঠে যেতে নিলে রুদ্র হাত টেনে ধরে দোলার। দোলা ক্রোধান্বিত চাহনি রাখে রুদ্রর দিকে।

– আমি জানি দোলা তুমি আমার উপর অনেক রেগে আছো। আর রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
– ওহ বুঝতে পেরেছেন তাহলে? হেয়ালি নিয়ে বলে দোলা। সত্যি দোলার রাগ হচ্ছে রুদ্রকে দেখে। একদম সহ্য হচ্ছে না তাকে।

— আইম সরি দোলা। আমার সত্যি ভুল হয়ে গেছে। আমার উচিত ছিলো কাল তোমার কথাগুলো শোনা। কিন্তু… কিন্তু আপনি শুনেননি। রুদ্রর কথা শেষ না হতেই দোলা বলে।
– আপনি আপনার অধিকারবোধ, পুরুষত্ব দেখিয়েছেন আমার উপর। আর এই জন্য এখন সরি বলছেন। আচ্ছা সরিতে সব শেষ হয়ে যায়? আপনার এই সরি শব্দটা পারবে আমার আঘাত গুলো সারিয়ে দিতে। পারবে আমার পাওয়া কষ্ট গুলো মুছে দিতে৷ আমার হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে সেগুলো ঠিক করে দিতে পারবে? রুদ্র অসহায় দোলার প্রশ্নের কাছে।

– পারবে না। তাই আপনার সরি আপনার কাছে রাখেন। লাগবে না আমার কোনো কিছু। দাঁতে দাঁত চেপে বলে দোলা। কিন্তু রুদ্রর এবার রাগ হয়৷ ভুল করেছে তার জন্য সরি তো বলেছে সে। আর এই নিয়ে এত কথা শোনাবে।
– শুনো আমি ভুল করেছি সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি। তাই আমার মনে হয়েছে তোমাকে সরি বলা উচিত তাই আমি বলেছি৷ এখন তুমি সেটা এক্সেপ্ট করবে নাকি করবে না সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার বুঝেছো তুমি? চিৎকার করে বলে রুদ্র। দোলা অবাক চোখে তাকায় রুদ্রর দিকে।
– দোলার এই তাকানো দেখে রুদ্র থেমে যায়।
– কুল রুদ্র কুল। এত হাইপার হলে চলবে না তোর। নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। তুই দোলাকে আর কষ্ট দিবি না প্রমিস করেছিস৷ তাহলে এইসব কি হচ্ছে? সামলা নিজেকে! নিজেকে নিজেই বলে রুদ্র। দোলা এখনো একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে। রুদ্র উঠে ওয়াসরুমে চলে যায়। দোলা হতভম্ব লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে ওয়াসরুমের দিকে।

– এটা কি ছিলো? সরি না থ্রেড। মানে কি! উনি সরি বলছেন থ্রেড দিয়ে। আসলেই গন্ডার একটা। জীবনেও শোধরাবার না। কথাটা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“১২”

–” রুদ্র আর দোলা কাছাকাছি চলে আসছে। ওদের চাইলেও দূরে করা সম্ভব না এখন। তুমি বলেছিলে দোলা আমার হবে। তুমি দোলাকে আমার কাছে নিয়ে এসে দেবে! কিন্তু কি করলে তুমি? দোলা কবে হবে আমার? রুদ্র কখনোই দোলাকে ছাড়বে না রেগে বলে কথাগুলো সামির।
– সামনে থাকা ব্যক্তিটি সামিরের কথায় মুচকি হাসে। তাই দেখে সামির আরো রেগে যায়।
– আমার কথায় তোমার হাসি পাচ্ছে। আমার অনুভূতি নিয়ে মজা করছো তুমি? আমারই ভুল ছিলো তোমাকে ভরসা করা। তুমি কোনো কাজের নও এটা আমার আগেই ভাবা উচিত ছিলো। সামিরের কথায় ব্যক্তিটি ভীষণ রেগে যায় এবার। ক্রোধান্বিত হয়ে লাল বর্ণ চোখে তাকায় সামিরের দিকে।
– শাট আপ সামির। কি বাজে বকছো? আমি যখন বলেছি দোলা তোমার হবে মানে দোলা তোমার হবে। আমাকে ভরসা করা ছাড়া তোমার কাছে দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই খুব ভালো করে জানো সেটা তুমি।
– ও আচ্ছা। তুমি যখন বুঝেই গিয়েছো তাহলে কেনো দোলাকে এনে দিচ্ছো না আমার কাছে। আর কতদিন আমি ওই রুদ্রকে টলারেট করব দোলার সাথে। ও দোলাকে ভালো থাকতে দেয়না৷ কিভাবে অত্যাচার করে জানো না তুমি? দেখো আমি আর পারছি না এইভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে৷ যদি তুমি কিছু না করো তবে এবার আমি আমার কাজ করবো। দোলাকে নিয়ে আসবো আমার কাছে সে -যেভাবেই হোক।
– শব্দ করে হেসে উঠে ব্যক্তিটি। তাই দেখে সামির ভ্রু কুচকে তাকায়।
– তোমার কি মনে হয় সামির! তুমি বলবে আর দোলা সুড়সুড় করে তোমার কাছে চলে আসবে? তাছাড়া কেনো আসবে দোলা তোমার কথায়? তুমি দোলাকে ভালোবাসো কিন্তু দোলা তোমাকে নয়৷ দোলা তোমাকে জাস্ট ফ্রেন্ড ভাবে এর বাইরে কিছু নয়। হয়তো ভুলে গিয়েছো তুমি দৃঢ় কন্ঠে বলে ব্যক্তিটি। সামির অসহায় চোখে তাকায়।
– শুনো সামির! সময় চলে এসেছে দোলাকে রুদ্রর থেকে আলাদা করার। রুদ্র দোলাকে ছাড়বে না কিন্তু দোলা! সে অনায়েসে রুদ্রকে ছেড়ে চলে আসবে। আর সে রাস্তাটা প্রশস্ত করতে হবে আমাদের। দোলা রুদ্রকে কখনোই ভালোবাসেনি। হয়তো রুদ্রকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে কোনো কারণে। কিন্তু রুদ্রর প্রতি দোলার এতটুকু মায়া,ভালোবাসা কাজ করে না৷ আর সেটাও রুদ্রর জন্য। আমাদের এখন দোলাকে এটা বোঝাতে হবে রুদ্র তার জন্য কখনোই ঠিক ছিলো না। রুদ্র ভালো মানুষ নয়। শুনো সামির! আমি তোমাকে যা বলেছি তাই করো এবার। দোলাকে সবটা জানাও। প্রমাণ গুলো দেখাও। তাহলে দোলা রুদ্রকে আরও আরও ঘৃণা করবে। রুদ্রর মুখও দেখতে চাইবে না। আর তখন রুদ্র আর দোলা আলাদা হয়ে যাবে। আর তুমি দোলাকে খুব সহজে পেয়ে যাবে আর আমার কাজও স্বার্থক হাসি রেখে বলে ব্যক্তিটি। সামির গভীর ভাবনায় পড়ে যায়।

— বিকেলের দিকে! রুদ্র বারান্দায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। রুদ্র আজ সারাদিন বাড়িতেই আছে। ঘরে বসেই অফিসের কাজ করেছে। দোলা আজ রুদ্রকে এড়িয়ে এড়িয়ে চলেছে। রুদ্র কথা বলতে চাইলেও দোলা পাত্তা দেয়না রুদ্রকে। রুদ্রর প্রতি রাগ,ক্রোধ কোনোটাই কমেনি দোলার। রুদ্র হতাশ হয় দোলার বিহেভে। দোলার যে রুদ্রর প্রতি এক পাহাড় সমান অভিমান জমা হয়েছে সেটা রুদ্র উপলব্ধি করতে পারে। দোলা আজ খুব একটা দরকার ছাড়া ঘরেও আসেনি। বিকেলের দিকে রুদ্রর কফিটাও একজন সার্ভেন্ট দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। রুদ্র কফির মগে চুমুক দেয় আর ল্যাপটপে কাজ করে। এমন সময় রুদ্রর মনে পড়ে গতরাতের ওই ছায়ার কথায়৷ যেটা রুদ্রকে দেখে সরে গিয়েছিলো। রুদ্র প্রথমে মনের ভুল ভাবলেও এখন সেটা ভুল মনে হয়না তার কাছে। রুদ্র কৌতুহলী হয়ে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করে গতরাতের। রুদ্রর বাড়ি সম্পুর্ণ সিসি ক্যামেরা দ্বারা সুরক্ষিত আছে। তাই রুদ্র সহজেই জানতে পারবে গতরাতে তার দেখা ভুল ছিলো নাকি সঠিক।

— সিসি ক্যামেরা ফুটেজ অন করতেই রুদ্রর চোখ কপালে উঠে যায়। কারণ তার মনের ভুল ছিলো না।সত্যি কেউ একজন এসেছিলো সেখানে। তবে যে এসেছিলো তার মুখ ঢাকা ছিলো একটা কালো চাদরে। একটু পর রুদ্র খেয়াল করে দোলাও বের হয় সে রাতে। এটা দেখে রুদ্র চমকানো চোখে তাকিয়ে থাকে ল্যাপটপের দিকে।
– দোলা এত রাতে বাইরে গিয়েছিলো! কিন্তু কেনো? তাহলে কি ওই লোকটা দোলার কাছে এসেছিলো? দোলা কি কোনো ভাবে চিনে এই ব্যক্তিটিকে? রুদ্র ভাবনা চিন্তা ছেড়ে আবারও ল্যাপটপে চোখ রাখে।
– দোলা সদর দরজা থেকে বের হয়ে বাইরে যেতেই সব কালো হয়ে আসে৷ রুদ্র আর কিছু দেখতে পাইনা। যার মানে কেউ ইচ্ছে করে সেখানকার সিসি ক্যামেরাটা আড়াল করেছে। যার ফলে ওইখানের আর কিছু রেকর্ড হয়নি সিসি ক্যামেরা ফুটেজে।

– রুদ্রর মধ্যে আবার রাগ,ক্রোধ, জেদ হিংস্রতা দেখা দেয়। দোলার প্রতি সন্দেহ বেড়ে যায়। রাগে চোখ মুখ লালাভ হয়ে আসে।
– তার মানে দোলা ইচ্ছে করে নিচে ছিলো রাতে। যাতে এই ব্যক্তিটির সাথে দেখা করতে পারে। কিন্তু কে এই ব্যক্তি? রুদ্র আবারও দেখে ফুটেজটা। রুদ্র বোঝার চেষ্টা করে কে হতে পারে এই ব্যক্তিটি। রুদ্র ওই ব্যক্তিটির হাতের দিকে খেয়াল করে দেখে সামিরের ঘড়ি মতো একটা ঘড়ি পড়া এই ব্যক্তিটির হাতে। রুদ্র চমকে উঠে। রুদ্র জুম করে দেখে এটা সামিরেরই ঘড়ি। আর ব্যক্তিটিও সামির। রুদ্র ক্রোধান্বিত স্বরে দোলাকে ডাকে। দোলা রত্না চৌধুরীর সাথে গল্প করছিলো নিচে৷ হঠাৎ রুদ্রর এমন চিৎকার করে ডাকে ঘাবড়ে যায়৷
– রুদ্র ঘরের মধ্যে এসে পায়চারি করছে আর দোলার আসার অপেক্ষা করছে।
– রুদ্রর ডাকে দোলা ঘরে আসে বিরক্ত নিয়ে। দোলা ঘরে আসতেই রুদ্র রাগী লুক নিয়ে তাকায় দোলার দিকে। দোলা বিস্ময় নিয়ে তাকায় রুদ্রর দিকে। হঠাৎ এমন বিহেভের মানে বুঝতে পারে না দোলা।
— কি হয়েছে? ডাকলেন কেনো আমায়? অভিমানী স্বরে বলে দোলা।
– গতরাতে কে এসেছিলো? কোনো রকম ভণিতা ছাড়াই বলে রুদ্র। দোলা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে কে এসেছিলো মানে? কার কথা বলছেন?
– কার কথা বলছি বুঝতে পারছো না? বাকি বুঝেও বুঝতে চাইছো না? তুমি ইচ্ছে করে গতরাতে নিচে ছিলে যাতে তুমি ওই ছেলেটার সাথে দেখা করতে পারো। রুদ্র সামিরের নাম নেয় না। কারণ সে চাই দোলা নিজ মুখে বলুক সামিরের কথা।

– কি যা-তা বলছেন রুদ্র। কোন ছেলে! কিসের ছেলে? আর কোথা থেকে আসলো। দেখুন আপনি আমাকে বারবার মিথ্যা অপবাদ দিতে পারেন না। যখন যা ইচ্ছে হবে তাই বলে দোষারোপ করবেন না। আপনার যদি এতই সমস্যা থাকে আমাকে নিয়ে তাহলে কেনো রেখেছেন এই বাড়িতে৷ তাড়িয়ে দিন আমায়। বের করে দিন। মুক্ত করে দিন আমায়। তাহলে অন্তত আমাকে নিয়ে আপনাকে আর ভাবতে হবে না আর আমিও এই নরক থেকে মুক্তি পাবো। রুদ্র কথায় দোলার আবারও রাগ হয়৷ অভিমান গুলো এখন তিক্ততায় স্থান নিয়েছে।

– তুমি তো চাও আমি তোমাকে মুক্ত করে দিই। আর সেই জন্য তুমি ইচ্ছে করে এইগুলো করছো তাই না?
– রুদ্রর কথায় দোলা ভ্রু কুচকে তাকায়। রুদ্রর কোনো কথার মানেই বুঝতে পারছে না সে।
— আমি সবটা দেখেছি দোলা। তাই তুমি চাইলেও কিছু আড়াল করতে পারবে না আমার থেকে।
– তাহলে নতুন করে আমার থেকে আবার কি জানতে চান আপনি? সব যখন আপনি জানেন! আপনি দেখেছেন তাহলে কেনো আমাকে জিজ্ঞেস করছেন। আপনার কাছে নিশ্চয় প্রমাণ আছে আমার বিরুদ্ধে? তাহলে এখনো দাঁড়িয়ে কেনো আছেন আপনি। আসুক আমাকে শাস্তি দিন। গায়ে হাত তুলুন আমার। যেটা আপনি সর্বদা করেন। ক্ষোভ নিয়ে বলে দোলা। রুদ্র বিস্মিত চোখে তাকায় দোলার দিকে।
– দোলার চোখে পানি৷ যেটা দোলা যথা সাধ্য চেষ্টা করছে আড়াল করার রুদ্রর থেকে। কিন্তু রুদ্র ঠিক দেখে নেয় দোলার সে কষ্টস্রোতের ধারা।
– রুদ্রর মনটা হীনো হয়ে আসে। আহত চোখে তাকায় দোলার দিকে। দোলা মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।
– দোলা! কোমল কন্ঠস্বর রুদ্রর। দোলা এরপরও তাকায় না রুদ্রর দিকে।
– সত্যি তুমি জানো না গতরাতে কি হয়েছিলো? কে এসেছিলো? রুদ্রর কথায় দোলার মধ্যে ক্ষোভটা আরো বৃদ্ধি পায়। ইচ্ছে করছে না রুদ্রর কোনো কথার জবাব দিতে।
– কি হলো উত্তর দাও? আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমায়। গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র।
আমার আপনাকে কিছু বলার নেই আর না কিছু বলতে চাই। যা ইচ্ছে ভাবুন আপনি। আমি আর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইনা আপনার কাছে। কারণ এতে কোনো লাভ নেই। যার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস নেই তার কাছে রচনা দিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করলেও সে কখনোই বুঝবে না৷ সেই এক সূচনায় আবদ্ধ থাকবে। কথাগুলো বলতেই দোলার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দুঃখের বিষাদমাখা অশ্রুকণা।

— রুদ্র নড়েচড়ে উঠে দোলার কথায়। নিজের মধ্যে রাগ,ক্রোধ সরিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
– এটা আমি কি করছি? আবারও দোলাকে ভুল বুঝছি? অবিশ্বাস করছি আমি। কিন্তু আমি তো কথা দিয়েছি আর কোনো রকম অবিশ্বাস আমি দোলাকে করবো না। আচ্ছা সত্যি দোলা জানে না গতরাতে কে এসেছিলো? তাহলে দোলা বাইরে কেনো গিয়েছিলো ওই সময়। উফফ সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আমাকে আরো ভালো ভাবে জানতে হবে সব। মাথা গরম করলে চলবে না। আমাকে মাফ চাইতে হবে দোলার কাছে। আমি আবারও দোলাকে হার্ট করলাম। সরি দোলাপাখি। আইম রেলি ভেরি সরি মনে মনেই আওড়াই কথাগুলো রুদ্র।
– রুদ্র দোলার দিকে এগিয়ে গিয়ে দোলার দুই গালে হাত রাখে আলতো স্পর্শে। দোলা নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে চাই রুদ্রর থেকে কিন্তু রুদ্রর ভালোবাসা জড়ানো স্পর্শ উপেক্ষা করতে পারে না।
– আমি আবারও তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম দোলাপাখি। আমি এমনটা করতে চাইনি তোমার সাথে। আসলে ওই গতরাতে! থেমে যায় রুদ্র। দোলা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
– কি গতরাতে? বলুন।
– রুদ্র হাত নামিয়ে নেয় দোলার গাল থেকে। করুণ চাহনি রেখে বলে কিছুনা৷ তুমি এখন যেতো পারো৷ আমার কিছু কাজ আছে বেরোতে হবে কথাটা বলে রুদ্র বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
– দোলা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। আর ভাবতে থাকে রুদ্রর কথাগুলো। কি হলো হঠাৎ রুদ্রর? এইতো রেগে ছিলেন উনি আবার সব নরমাল। আচ্ছা উনি কোন ছেলের কথা বলছিলেন? তখন দোলার মনে পড়ে গতরাতের কথা। যখন সে দরজায় কারো নক করা দেখে দরজা খুলে বাইরে যায়।
আসলে দোলা রাতে সত্যি বাইরে গিয়েছিলো তবে কারো সাথে দেখা করতে নয়৷ বরং কে দরজায় নক দিয়েছে সেটা দেখতে। গতরাতে দোলা যখন ঘরে আসবে কি আসবে না এই নিয়ে দোটানায় ছিলো। তখন হঠাৎ সদর দরজায় কেউ একজন করঘাত করে। দোলা ভ্রু কুচকে তাকায় সেদিকে। কারণ মেইন গেটে দারোয়ান আছে। সেখানে থেকে এসে সদর দরজায় আবার কে নক করবে। এইটা তো সব সময় খোলা থাকে৷ আবার ভেজানো থাকে অনেক সময়। গতরাতেও তাই ছিলো। আর তখনই কেউ নক করে
দোলা দরজা খুলে দেখে কেউ নেই সেখানে। দোলা একটু না অনেকটাই অবাক হয় তাতে। কারণ তার স্পষ্ট মনে আছে কেউ করঘাত করেছে দরজায়। কিন্তু এখানে কেউ নেই। দোলা বাইরে বেরিয়ে দেখে একটু৷ এরপর কাউকে না দেখতে পেয়ে আবার ফিরে আসে। আর ঠিক সে সময়টা সিসি ক্যামেরায় আবদ্ধ হয়ে যায়।

— দোলা আর কিছু ভাবতে পারে না৷ তার আর ভালোও লাগছে না এইসব। রুদ্র কেনো এমন? কেনো উদ্ভুত আচরণ এইগুলো দোলাকে খুব করে ভাবায়৷। দোলার খেয়াল আসে ওই বন্দি ঘরটার কথা। দোলার বিশ্বাস তার সব প্রশ্নের উত্তর ওই ঘরে আছে৷ আর সেটা দোলাকে উন্মোচন করতেই হবে।
— আচ্ছা আমি কি এখন একবার গিয়ে দেখবো ওই ঘরটা। কিন্তু ওই ঘর তো তালা বন্ধ হয়ে। চাবিটা নিশ্চয় ওই গন্ডারের কাছে আছে।
– উনি কি চাবি সাথে রাখবেন সব সময়? নিশ্চয় না। তাহলে চাবিটা ঘরে কোথাও আছে নিশ্চয়। আমাকে খুঁজে দেখতে হবে। উনার আলমারিটা দেখলে আমি পেতে পারি। দোলা চাবি খোঁজার জন্য রুদ্রর আলমারির কাছে যায়।

— রাস্তার পাশে রিকসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে তানিয়া। বিকেলের দিকে বের হয় তানিয়া একটা ফ্রেন্ডের বাড়ি যাবে বলে। তার থেকে একটা নোট নেওয়ার জন্য বের হয় তানিয়া৷ তানিয়া আজ ইচ্ছে করে গাড়ি নিয়ে আসে না। তার খুব ইচ্ছে করে রিকসায় চেপে যেতে। অনেক দিন হয়েছে রিকসায় ঘোরা হয়নি তার। তানিয়া কাজ শেষ করে এখন বাড়ি ফিরছে। আর তার জন্যই রিকসার অপেক্ষা করছে। সেখানে হঠাৎ আবির্ভাব হয় সজল। ওইদিক দিয়ে যাচ্ছি সে। আর তানিয়াকে দেখে থমকে যায়। প্রত্যাশাই ছিলো না তানিয়ার সাথে দেখা হবে তার এইভাবে। সজল গাড়ি নিয়ে এসে থামে তানিয়ার সামনে। হুট করে বড় গাড়ি সামনে আসায় তানিয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। তানিয়া কৌতুহল কাটাতেই সজল বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে। তানিয়ার কপালে আপনাআপনি একটা ভাঁজ পড়ে।

আরে আপনি এখানে? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। বেশ উৎসাহিত হয়ে উল্লাসিত কন্ঠে বলে সজল। তানিয়া চোখ মুখ কুচকে বলে অবিশ্বাসের কি আছে এখানে? হ্যাঁ আমি তো আছি আপনার সামনে গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে।
– না মানে!সে যাই হোক। আপনি এখানে এই সময়? কোনো দরকারে এসেছিলেন বুঝি?
– নাহ!এমনই হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি। খুব শখ জেগেছিলো তো ব্যঙ্গ করে বলে তানিয়া। সজলের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
আপনি রাগ করছেন মিস তানিয়া?
– জ্বি-না৷ তবে বিরক্ত হচ্ছি এটা নিশ্চিত। তানিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে রিকসা খোঁজার ছলে কথাটা বলে।
– ওহ! তবে আমি তো আপনার বিরক্তর কারণ হতে চাইনা। মুখটা মলিন করে বলে সজল। তানিয়া চমকে উঠে ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে এমা! কথাটা আমি আপনাকে বলিনি। আসলে কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি এখানে তবে একটাও রিকসার দেখা মিলছে না। তাই সেই বিরক্তর কথা বলেছি। আপনাকে একদম নয় ভাইয়া। দাঁত কেলিয়ে বলে তানিয়া। এইদিকে সজল হযবরল লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে। উত্তেজিত কন্ঠে বলে ভাইয়া? কে ভাইয়া? সহজ আশাহত হয় তানিয়ার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে।

– চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here