তুমিময় আসক্তি পর্ব -২৩+২৪

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২৩”

–” রোজার সামনে বসে আছে সামির। রোজাকে সব জানানোর পর সামির এটা বলে যে, সে দোলাকে বিয়ে করতে চাই। কিন্তু রোজা ইস্যু করে বাচ্চাটাকে।
– তুমি দোলাকে বিয়ে করবে সমস্যা নেই। কিন্তু দোলার বেবিটাকে কি করবে? মেনে নেবে তাকে? রোজা ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে। সামির রাগী গলায় বলে রুদ্রর বাচ্চার দায়ভার কেনো আমি নিতে যাবো। তাছাড়া আমি চাইনা আমার আর দোলার মধ্যে কেউ আসুক। অনেক হয়েছে৷ আমি আর দোলাকে হারাতে চাইনা এটাই আমার শেষ কথা।
– তোমার কি মনে হয় সামির” রুদ্র এত সহজে সবটা ছেড়ে দেবে। দোলাকে এখন সে চোখে হারায় অফকোর্স সেটা বেবিটার জন্য। যদি বেবিটার কিছু হয় তাহলে কিন্তু রুদ্র তোমাকে ছাড়বে না। সো মাথা গরম করলে চলবে না। আমাদের ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে৷ যাতে করে সাপও মরে আর লাঠিও অক্ষত থাকে।

– কি করতে চাইছো তুমি? বিস্ময় নিয়ে বলে সামির।
– রোজা মুচকি হেসে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে আমি যা বলছি এবার তাই করো শুধু।

— বিকেলে! রুদ্রর ঘুম ভেঙেছে কিছুক্ষণ আগে৷ ঘুম থেকে উঠেই সে দোলাকে দেখতে পাইনা। রুদ্রর প্রচন্ড মাথা ধরেছে৷ সচারাচর এই সময় রুদ্রর কখনোই ঘুম হয়না৷ শরীর খারাপের জন্য তার ঘুমানো আজ। তবে হঠাৎ করে মাথাটা এমন ভাড় হয়ে আছে৷ ইচ্ছে করছে আদা দিয়ে এক-কাপ চা খেতে। রুদ্র দোলাকে ডাকতে দিয়েও ডাকে না। রুদ্র ভাবে দোলা হয়তো কোনো কাজে আছে নিচে৷ সময় মতো চলে আসবে।

– তানিয়া দুপুরের পর আর রুম থেকে বের হয়নি। কানে হেডফোন গুজে গান শুনছে সে। রত্না চৌধুরী তার ঘরে থাকলেও একটু বাদে ড্রয়িং রুমে আসেন। জেসমিন চৌধুরী আর তানভীর আহমেদও আছেন যেখানে। সবাই চা এর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু দোলার কথাটা কারো মাথায় নেই আপাতত। কারণ সবাই মনে করে দোলা ঘরে আছে রুদ্রর সাথে। যেহেতু দোলা মা হতে চলেছে! সেহেতু দোলার রেস্টের প্রয়োজন অনেক।
– এর মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করে সজল। এই সময় সজলকে দেখে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাই কিছুটা সংকোচিত চোখে তাকায়।
-রত্না চৌধুরী দৃষ্টিগোচর হতেই সজল সালাম দেয় তাকে হাসার চেষ্টা করে। রত্না চৌধুরীর বিস্ময় নিয়েই সালামের জবাব দেন।

-আন্টি একটু দোলাকে ডেকে দেওয়া যাবে৷ সজলের আবদার স্বরুপ কথায় রত্না চৌধুরী হাস্যজ্বল মুখে বলে দাঁড়িয়ে কেনো বাবা! বসো না। আমি দোলাকে ডেকে পাঠাচ্ছি। জেসমিন চৌধুরী মুখ বাকায় সজলকে দেখে। তানভীর আহমেদ সজলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে হঠাৎ এই সময় আসলে বাবা। আবার দোলাকে খুঁজছো এসে। কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
– তানভীর আহমেদের কথায় সজল মুখটা মলিন করে বলে আসলে আঙ্কেল মামার শরীরটা ভালো নেই। হঠাৎ করেই সকাল সকাল অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি৷ দুপুরের দিকে অবস্থা বেশি খারাপ হলে রোকন দোলাকে ফোন দেয়। কিন্তু দোলাকে ফোনে পাইনা। এরপর আমাকে কল করে। মামাকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। আমি এরপর থেকে দোলাকে ফোনে ট্রাই করছি”কিন্তু দোলার ফোন সুইচ অফ বলছে। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে আসতে হলো। মামার ছোটখাটো একটা স্ট্রোক হয়। চিন্তার কোনো কারণ নেই। এখন মোটামুটি ঠিক আছে। তবে বারবার শুধু দোলাকে দেখতে চাইছে। সজলের কথায় আতংকিত দৃষ্টি রাখে রত্না চৌধুরী আর তানভীর আহমেদ। চিন্তিত হয়ে বলে এখন আর কোনো সমস্যা নেই তো বাবা। দোলা যদি জানতে পারে তাহলে তো মন খারাপ করবে অনেক। আর ওর জন্য এটা একদম ঠিক হবে না এই সময়।

– এই সময় মানে? রত্না চৌধুরীর কথা বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে সজল।
রত্না চৌধুরী মুচকি হেসে বলে তুমি যে মামা হতে চলেছো সজল বাবা। আমাদের দোলা মা হতে চলেছে। কথাটা শুনে সজলের ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়ে আসে আনন্দে। অতঃপর সেখানে তানিয়া উপস্থিত হয়। সজলকে দেখে ভ্রু কুচকায় সে। সজল তানিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয়। সেই হাসিতে তানিয়াও হেসে উঠে।

– তানিয়া দোলাকে ডেকে নিয়ে আয় তো মা। বল সজল এসেছে ওর সাথে দেখা করতে। রত্না চৌধুরীর কথায় তানিয়া সাবলীল ভাবে বলে আমি ডেকে নিয়ে আসছি ভাবিকে। এরপর তানিয়া সজলের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও উপরে চলে যায়।

– রুদ্র ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। এই দুদিন অফিসটা রাজই সামলাচ্ছে। হঠাৎ ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠে। রুদ্র স্বাভাবিকভাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে গিয়ে আবছা চোখে ফোন স্ক্রিনে দোলার নাম্বার সো করতে দেখে। রুদ্র কপালে ভাঁজ ফেলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে দোলার নাম্বার থেকে আসা ম্যাসেজ নোটিফিকেশন।
– রুদ্র ম্যাসেজ চেক করতেই চমকে উঠে। অনুভূতিশূণ্য হয়ে কিছুক্ষণ ফোনের দিকেই তাকিয়ে থাকে। মাথার মধ্যে ভনভন করে ঘুরছে। রুদ্র আবারও ম্যাসেজটা চেক দেয়। আর সেখানে স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে! “আমি সামিরের সাথে থাকতে চাই। কারণ আমি সামিরকে ভীষণ ভালোবাসি। দয়া করে আপনি আমাদের মাঝে আসবেন না। আমি সামিরের কাছে স্ব-ইচ্ছায় চলে এসেছি। আমাকে বিরক্ত করবেন না আর”। রুদ্রর চোখ মুখে একটা ঘোর নেমে আসে। এর মধ্যে তানিয়া উপস্থিত হয় হাসি মুখে।
– ভাবি তোমাকে নিচে ডাকছে বলে তানিয়া ভেতরে তাকিয়ে দেখে রুদ্রর অস্বাভাবিক চেহারা। তানিয়া ভালো ভাবে এদিক ওদিক তাকিয়ে দোলাকে কোথাও পাইনা।
– ব্রো কি হয়েছে তোমার? আর ভাবি কোথায়? তানিয়ার কথায় রুদ্র যেনো হতভম্ব হয়ে উঠে অবাক করা কন্ঠে বলে তার মানে দোলা বাড়ি নেই?
– হঠাৎ রুদ্রর এমন কথায় তানিয়া কপাল কুচকে বলে ভাবি বাড়ি নেই মানে। ভাবি আবার কোথায় যাবে?
– দোলা বাড়িতে নেই তানিয়া। গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। তানিয়া যেনো হকচকিয়ে উঠে।
– কি হয়েছে ভাইয়া? ভাবি কোথায়? তানিয়ার কথায় রুদ্রর চেহারাটা মলিন হয়ে আসে। অসহায় চোখে তাকিয়ে ফোনটা বাড়িয়ে দেয় তানিয়ার দিকে।
– তানিয়া বিস্মিত হয়ে এগিয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতেই ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকায় রুদ্রর দিকে।

– এটা মিথ্যা! ভাবি এমনটা কখনোই করতে পারে না।
– আমিও এটাই বিশ্বাস করি তানিয়া। রুদ্রর মুখে এমন কথা শুনে তানিয়া আকাশ থেকে পড়ে এমন একটা লুক নিয়ে বলে ব্রো তোমার সন্দেহ হচ্ছে না ভাবির উপর?
– রুদ্র আহত দৃষ্টি রাখে শুধু।

— চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুমে চিন্তিত হয়ে বসে আছে সবাই। রুদ্র মাথা নুয়ে কিছু একটা ভাবছে। রাজ,সজল, তানিয়া, রত্না চৌধুরী, তানভীর আহমেদ অস্থির হয়ে উঠছেন মাঝে মাঝে। কোনো ভাবান্তর নেই শুধু জেসমিন চৌধুরীর মধ্যে। হঠাৎ করে দোলা এমন সিদ্ধান্ত কেনো নেবে? আর দোলা বাড়ি থেকে কখন বেরিয়েছে এটা ভাবতেই বেশ বেগ পেতে হয় সবাইকে।

– রুদ্র! তোর সত্যি দোলাকে সন্দেহ হচ্ছে না? তোর মনে হচ্ছে না দোলা এইগুলো করতে পারে। রাজের কথায় রুদ্র বিরক্ত নিয়ে বলে কেনো এক কথা বারবার বলছিস রাজ? আমি বললাম তো! এইসব কিছু বিশ্বাস করিনা আমি৷ আমি যে ভুল আগে করেছি সেটা আবার পুনরায় করতে চাইনা। আমি দোলাকে আর অবিশ্বাস করবো না৷ কারণ আমি দোলাকে কথা দিয়েছি। আর দোলাও আমাকে কথা দিয়েছে ও কখনোই আমাকে ঠকাবে না। আমি ওর চোখে সেই ভরসা, বিশ্বাসের ছোঁয়া দেখেছি। তাই যতখন না দোলা আমার সামনে এসে নিজ মুখে এইগুলো বলছে ততখন আমি একটা শব্দও বিশ্বাস করবো না।।দোলা আমাকে ঠকাবে না আমি এতটুকু বুঝে গিয়েছি এতদিনে। রুদ্র কথায় সবার মধ্যে প্রশান্তি। অনেক ভালো লাগছে এত খারাপ সময়ের মধ্যেও।
– মিস্টার রাজ! আপনি বারবার এক কথা বলে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন। আমার বোন দোষী? আমার বোন সত্যি ওই ছেলেটার সাথে… না না সজল আমাকে ভুল বুঝবেন না প্লিজ। উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে রাজ।
– দেখুন! আমি জানিনা আপনি কেনো বলছেন এইসব কথা। কিন্তু আমি বলতে পারি আমার বোন এমন ধরনের কাজ কখনোই করবে না। দোলা অনেক ভালো একটা মেয়ে। আমার শুধু চিন্তা হচ্ছে ওকে নিয়ে। কোথায় আছে? কেমন আছে আল্লাহ জানে। আর ওইদিকে মামাকে গিয়ে কি বলবো আমি? মামা তো দোলাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। সজল কপালে হাত ঠেকিয়ে নুয়ে পড়ে। সবার মধ্যে বিরহের ছাপ বিদ্যমান।

– আমি নিশ্চিত ভাবি কোনো না কোনো বিপদে পড়েছে। নাহলে ভাবি এমন কখনোই করবে না আমি বিশ্বাস করি। তানিয়া বলে দুঃখ বিলাপ করে।
— রোজা! হঠাৎ করে রুদ্র রোজার নাম করে। সবাই কৌতুহলী হয়ে তাকায় ওর দিকে।
– আমি জানি এইসব রোজার কাজ। ও দোলাকে সরিয়েছে কোনোভাবে। দোলার যদি কিছু হয় আমি ওকে ছাড়বো না। খু/ন করবো নিজ হাতে রাগে রুদ্রর শরীরের প্রতিটি রগ যেনো ফুলে-ফেঁপে উঠে। চোখ মুখে আগ্নেয়গিরির লাভা ফুটন্ত হয়ে।

— আচ্ছা রুদ্র” আমরা যদি সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করি। তাহলে তো জানতে পারবো দোলা কখন বেরিয়েছে বাড়ি থেকে। বা ওকে কেউ নিয়ে গেছে কি-না। রাজের কথায় রুদ্রর চোখ দুটো চকচক করে উঠে। এত দুঃচিন্তার মধ্যে এই কথাটা ভুলেই গিয়েছিলো সে। রুদ্র দ্রুত পায়ে উঠে ঘরে যায়। পেছনে যায় রাজ আর তানিয়া। বাকিরা আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে।

— সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করতেই রুদ্ররা দেখে যে দোলা কাউকে একটা ফোন করে। এরপর একটু পর বেরিয়ে যায়। দোলা কাকে ফোন করছে সেটা জুম করে দেখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় তারা।
– আচ্ছা দোলা কোনো ভাবে সামিরের সাথে দেখা করতে যায়নি তো। রাজের কথায় তানিয়া উত্তেজিত কন্ঠে বলে একদম ঠিক বলেছো রাজ ভাইয়া। আমরা তো সামিরের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। ভাইয়া তোমার মনে আছে ভাবি গতকাল বলেছিলো সে সামিরের সাথে দেখা করবে। কেনো এমন করেছে সামির তার জবাব চাই তার। আমরা তো বারণ করি ভাবিকে। তাহলে কি ভাবি আমাদের কিছু না বলে সত্যি সামিরের কাছে যায়। আর সেখানে গিয়েই কি কোনো বিপদ হয়। আমার খুব ভয় করছে ব্রো। ভাবির কোনো ক্ষতি করবে না তো সামির আতংকিত কন্ঠে বলে তানিয়া।

— কিছু হবে না দোলার। ওর গায়ে যদি একটা আচঁড়ও পড়ে তাহলে আমি কাউকে আস্ত রাখবো না। রেগে বলে রুদ্র।
– ওয়েট আমি আশাকে ফোন দিয়ে দেখি। ও কিছু জানে নাকি দোলার ব্যাপারে। রাজের কথায় সবাই অপেক্ষা করে। রাজ আশার নাম্বারে ফোন দিলে ফোন সুইচ অফ বলে। রাজ বেশ কয়েকবার ট্রাই করে কিন্তু বারবার একই কথা বলে।

– বুঝলাম না। আশার ফোনও বন্ধ কেনো। আচ্ছা আমি কি একবার যাবো ওর কাছে?
– কোনো দরকার নেই রাজ। আমি বুঝে গেছি এইসবের পেছনে কে আছে। সামির আর রোজা মিলে দোলাকে আটকে রেখেছে। রোজা যাওয়ার আগে দোলাকে থ্রেট দিয়ে যায় মনে আছে। আমাকে এখনি যেতে হবে রোজার কাছে৷ আজ এর শেষ দেখেই ছাড়বো বলে রুদ্র বেরিয়ে যেতে গেলে রাজ থামিয়ে দেয়।
– প্লিজ রাজ আমাকে থামাস না। দোলার কোনো ক্ষতি করার আগে আমাকে সেখানে যেতে হবে। দোলা একা নেই সেখানে৷ আমার বেবিও আছে ওর মধ্যে। আর আমি চাইনা আমার সন্তানের আর কোনো ক্ষতি হোক। করুণ কন্ঠে বলে রুদ্র।
– কারো কিছু হবে না রুদ্র৷ তুই মাথা ঠান্ডা করে কাজ কর। আমার কথাটা শুন। যদি রোজা দোলাকে কোনো ভাবে আটকে রাখে তাহলে দোলাকে পাওয়া সহজ হবে না। তাই আমাদের শান্ত মাথায় সবটা ভাবতে হবে।

– তুই ঠিক কি করতে চাইছিস? রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে। রাজ মুচকি হেসে বলে শুন আমার কথাটা।

— দোলা আর আশা বন্ধ রুমে ছটফট করছে। কীভাবে এখানে থেকে বেরুনো যায় সেটাই বুঝতে পারছে না।।তাছাড়া এখানে থেকে যাওয়ার মতো কোনো পথও নেই৷
– আমাদের সত্যি অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে দোলা। এইভাবে কাউকে কিছু না বলে আশাটা ঠিক হয়নি। সামির যে এতটা খারাপ সত্যি জানা ছিলো না।।আচ্ছা সামির যদি তোর বেবিটার কোনো ক্ষতি করে দেয় তাহলে?
– নাহ! এমন কিছু হবে না। আমার বেবির কিছু হতে দেবো না আমি। আমার প্রাণ থাকা পর্যন্ত ওর কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারবে না উত্তেজিত হয়ে বলে দোলা।
– আমরা এখন কি করবো দোলা? সব প্রমাণ তো সামিরের কাছে৷ ফোন গুলো নিয়ে গেছে। না জানি কি হবে এরপর। আশা অনেক ভয় পেয়ে যায়।
– চিন্তা করিস না আশা। কিছু হবে না আমাদের। আমার জন্য তুইও বিপদে পড়ে গেলি। সরি রে৷ আমি সত্যি ভাবিনি সামির এমন কিছু করবে। তবে আমার বিশ্বাস রুদ্র ঠিক আসবে আমাকে খুঁজতে দেখিস। আমার বিশ্বাস উনি আমাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে।

– রুদ্র কখনোই আসবে না দোলা জান। হঠাৎ কারো কথায় দোলা আর আশা চমকে উঠে।
দরজার সামনে সামির কে দেখে রাগে শরীর যেনো রিরি করে উঠে তাদের।
-আমাদের যেতে দাও সামির। তুমি কিন্তু অনেক বড় ভুল করছো। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। দোলা বলে দৃঢ় কন্ঠে। দোলার কথায় সামির হো হো করে হেসে উঠে। চোখ মুখ কুচকে তাকায় দোলা।

– আচ্ছা কোন ভরসায় এইগুলো বলছো তুমি দোলা? রুদ্রর ভরসায়? তোমার মনে হয় রুদ্র আসবে তোমাকে রক্ষা করতে। উমম! হ্যাঁ ঠিক ভেবেছো রুদ্র আসতো যদি তুমি রুদ্রকে এসএমএস দিয়ে না বলতে তুমি আমার সাথে থাকতে চাও। রুদ্র যেনো আমাদের মধ্যে না আসে। সামিরের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝে না দোলা। তাই বিস্ময় নিয়ে বলে মানে? কিসের এসএমএস?

– সামির মুখের হাসিটা চওড়া করে দোলার দিকে এগিয়ে এসে বলে, তোমার ফোন থেকে রুদ্রকে এসএমএস করে দিয়েছি। তুমি আমার সাথে থাকতে চাও। স্ব-ইচ্ছায় তুমি আমার কাছে চলে এসেছো।
– সামির! তুমি এতো নিচ জঘন্য মানুষ সত্যি আমি ভাবতে পারিনি।
– তাতে কি? এখন ভাবো! গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে সামির।
– দোলার শরীর জ্বলে উঠে সামিরের কথায়। ইচ্ছে করছে কয়েকটি চড় বসিয়ে দিতে। তবে একটু শান্তি আসে মনে।

– রুদ্র তোমার কাছে আর আসবে না। তাই রুদ্রর কথা ভুলে যাও। এখন শুধু আমার কথা ভাবো তুমি। রুদ্র তোমাকে আগেও ঘৃণা করতো এখনো করবে।

– “পীপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে” এটা নিশ্চয় জানো সামির। তোমার পতন খুব শীগ্রই তাই উড়ে নাও যত ইচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে মাটিতে থুবড়ে পড়বে বলে রাখলাম। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে তুমি এতো আনন্দিত সেটা কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হবে না৷ রুদ্র আসবে আর আমাকে নিয়ে যাবে। এটাই আমার বিশ্বাস।

– আচ্ছা তুমি তোমার বিশ্বাস নিয়ে থাকো তাতে আমার প্রবলেম নেই। এখন চলো।

– কোথায়? চমকে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা সামিরের কথায়।

– আমাকে বিয়ে করতে। সামির দোলার দিকে ঝুকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস কন্ঠে বলে কথাটা।
#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২৪”


– আচ্ছা তুমি তোমার বিশ্বাস নিয়ে থাকো তাতে আমার প্রবলেম নেই। এখন চলো।

– কোথায়? চমকে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা সামিরের কথায়।

– আমাকে বিয়ে করতে। সামির দোলার দিকে ঝুকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস কন্ঠে বলে কথাটা। দোলা চমকানো চোখে তাকিয়ে বলে মানে?
– মানে পরে বুঝলেও চলবে। এখন চলো আমার সাথে কথাটা বলে সামির দোলার হাত চেপে ধরলে দোলা রাগী দৃষ্টিতে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে আমার হাত ছাড়ো। আমি কোথাও যাবো না তোমার সাথে। দোলার কথায় যেনো মজা পাই সামির। তাই হো হো করে হেসে উঠে বলে তুমি তো আমার সাথেই যাবে। নাহলে! দোলা ভ্রু কুচকে বলে নাহলে? কি নাহলে?

– তোমার বাচ্চার ক্ষতি করে দেবো আমি। সামিরের কথাটা শেষ হতেই দোলা চিৎকার দিয়ে সামির বলে হাত ওঠাতে যায় মারার জন্য কিন্তু সামির পুনরায় দোলার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে।
– ভুলেও আর এই কাজ করার সাহস দেখিও না। এই হাত যদি উঠাতেই হয় তবে ভালোবেসে আদর করার জন্য উঠিও। এখন চলো নয়তো! তোমার বাচ্চাকে শেষ করতে আমার পাঁচ মিনিটও সময় লাগবে না।

— তুমি না দোলাকে ভালোবাসো সামির? তাহলে ওর ক্ষতি করার কথা ভাবো কিভাবে? ওর সুখ ‘দুঃখ যদি না বুঝো তাহলে কেমন ভালোবাসা তোমার? তাচ্ছিল্যের সুরে বলে আশা।
– বাসি তো! অবশ্যই ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই দোলাকে আমার করে পেতে চাই। ও রুদ্রর সন্তানের মা হতে যাচ্ছে জেনেও বিয়ে করতে চাই। এটা কি কম স্যাকরিফাইস হেয়ালি নিয়ে বলে সামির।

– ভালোবাসা মানে শুধু কাছে পাওয়া না সামির। যাকে ভালোবাসি তার সাথে জীবন কাটাতে হবে এমনটাও নয়। ভালোবাসা তো দূর থেকেও হয়।
– আশার কথায় সামির আবারও শব্দ করে হেসে উঠে। দোলা আর আশা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে সে হাসির দিকে৷ সামির হাসি থাকিয়ে কন্ঠে গাম্ভারিতা এনে বলে আমি এতটাও মহান প্রেমিক নয় যে নিজের প্রেমিকা অন্যের হাতে তুলে দিয়ে নিজে বিরহে দিন কাটাবো। স্যাড সং শুনে, এক্স প্রেমিকার কথা ভেবে চোখে জলে নাকের জলে একাকার করবো। আমি হলাম সেই প্রেমিক যে তার ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিতে জানে। যদি আমার ভালোবাসা আমার না হয় তো আমি কারো হতে দেবো না।

যার মধ্যে নুন্যতম মানবিকতা নেই, মনুষ্যত্ব নেই তার মুখে ভালোবাসা কথাটা শুধু উপহাস মাত্র। ব্যঙ্গ করে বলে দোলা।
– অনেক কথা হয়েছে৷ এবার বাকি কথা ওইখানে গিয়ে হবে চলো। এরপর সামির তার লোকদের ডাকলে ওরা এসে দোলা আর আশার হাত আর চোখ বেধে দেয়। তারপর গাড়িতে উঠায়।

— তোর কি মনে রুদ্র! রোজার ওইখানে গিয়ে কোনো লাভ হবে? রুদ্র ড্রাইভ করতে করতে গম্ভীর মুখে তাকায় রাজের দিকে। রুদ্রর তাকানো দেখে রাজ বলে! আমি বলতে চাচ্ছি যে দোলা যদি রোজার কাছে না থাকে। তাহলে তো আমাদের সব প্ল্যান ফ্লপ হয়ে যাবে। অসহায় মুখ করে বলে রাজ।
– আমার বিশ্বাস দোলাকে আমি পাবো৷ রোজায় দোলাকে আটকে রেখেছে তার সাথে সামিরও আছে। যদি দোলার কিছু হয় আমি কাউকে ছাড়বো না আজ।
– রাজ আর রুদ্র একটু আগেই বের হয় দোলাকে খোঁজার জন্য। রুদ্রর দৃঢ় বিশ্বাস দোলা রোজার কাছেই আছে। তানিয়া আর সজল গেছে আশার বাড়ি৷ রাজ বলে তাদের ওইখানে যেতে।
— ভাবি! জেসমিন চৌধুরী আসেন ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে রত্না চৌধুরীর ঘরে। জেসমিন চৌধুরীকে ব্যতিব্যস্ত দেখে রত্না চৌধুরী ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে কি হয়েছে জেসমিন? তোমাকে এত অস্থির দেখাচ্ছে কেনো? দোলাকে পাওয়া গেছে? রুদ্র কি নিয়ে এসেছে দোলাকে? রত্না চৌধুরী চিন্তিত এবং ঘাবড়ে আছেন।
– জেসমিন চৌধুরী আগের তুলনায় মুখটা আরও মলিন করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ভাবি দোলাকে পাওয়া গেছে। রুদ্র ফোন দিয়েছিলো আমায় বলল তোমায় নিয়ে যেতে। দোলার নাকি অবস্থা ভালো না।
– রত্না চৌধুরী আঁতকে উঠে বলে কি হয়েছে দোলার? কোথায় আছে ও। আমাকে এক্ষুনি নিয়ে চলো দোলার কাছে। রত্না চৌধুরীর কথায় জেসমিন চৌধুরী বলে আমার সাথে চলো ভাবি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি আমি। এরপর জেসমিন চৌধুরী রত্না চৌধুরীর হুইলচেয়ার ধরে নিয়ে যায় মুখে তার পৈশাচিক হাসি একটা।

— আরে আসুন আসুন মিস্টার রুদ্রনীল চৌধুরী। কি সৌভাগ্য আমার। আরে কে কোথায় আছিস এনাদের বরণ করে নে কথাটা বলতে বলতে এগিয়ে আসে রোজা। রুদ্ররা রোজার বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেই কথাগুলো কানে আসে। রুদ্র ক্রোধান্বিত হয়ে তাকায় রোজার দিকে। রাজ ভ্রু কুচকে আছে। রোজার ভাবগতি দেখে মনে হচ্ছে সে আগে থেকেই জানতো রুদ্ররা এখানে আসবে আর তাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো সে।
— দোলা কোথায় রোজা? কাঠগলায় বলে রুদ্র।
– আরে রুদ্র সবে তো এলে! বসি আমরা। দুই চারটা কথা বলি এরপর নাহয় কণের খবর দেওয়া যাবে।
– রোজার কথার মানে কিছুই বুঝতে পারে না রুদ্র আর রাজ। তাই দুজনেই ভ্রু কুচকে কৌতুহলী হয়ে বলে কনে মানে?

– রোজা হাসে। মুখের হাসিটা গাঢ় করে বলে কনে মানে পাত্রী। বিয়ের পাত্রী যাকে বলে। আর সেটা হলো তোমার পিয়ারের দোলা-রাণী। যে আজ কিছুক্ষণ বাদে আমার ছোট ভাই সামিরের বউ হতে চলেছে।

– রোজা! অনেক বাজে কথা হয়েছে। দোলা কোথায় বলো? ওকে কেনো নিয়ে এসেছো এখানে?

– রুদ্র বলে অনেকটা রেগে। রুদ্রর কথায় রোজা ঠোঁট উল্টোয় বলে উঁহু! তোমার ভুল হচ্ছে রুদ্র। আমি নিয়ে আসিনি। তোমার ওয়াইফ, উপস সরি! তোমার এক্স ওয়াইফ নিজে পায়ে হেঁটে হবু শ্বশুর বাড়ি চলে এসেছে। আমি তো শুধু আপ্যায়ন করে এখানে নিয়ে এসেছি ওকে। কারণ আমি জানতাম তোমার প্রথম সন্দেহের তীর টা আমার দিকে আসবে। আর সে সন্দেহবশত তুমি আমার কাছেই ছুটে আসবে। যেহেতু আমি সন্দেহের তালিকায় আগে আছি। সেহেতু অযথা দোষ নিয়ে তো লাভ নেই৷ তাই দোষটা করেই ফেললাম। আর অপেক্ষা করছিলাম কখন কনেপক্ষ আসবে আর তাদের সুন্দর মতো আপ্যায়ন করবো। হেয়ালি করে বলে রোজা৷
— দেখ রোজা তোর এইসব হেয়ালিপণা একদম সহ্য হচ্ছে না৷ দোলা কোথায় বল? নিয়ে আয় ওকে।
– রাজের কথায় রোজা মুচকি হেসে বলে বাবাহ তোর দেখি দোলার জন্য অনেক চিন্তা। সেদিনও দেখলাম সবার থেকে তোর আগ্রহটাই বেশি ছিলো দোলাকে নিয়ে। কি ব্যাপার রে রাজ? দোলার সাথে কি কোনো গোপন চক্কর আছে নাকি? তুই কোনো ভাবে বন্ধুর বউয়ের সাথে…. শাট আপ রোজা। রাজ রেগে চিৎকার করে চুপ করিয়ে দেয় রোজাকে।
– তুই এতটা নিচ মনের মানুষ সত্যি ভাবতে অবাক লাগছে। তুই যে আমার বন্ধু এটা ভাবলেও আমার নিজের প্রতি করুণা আসে। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সম্পর্কে কিভাবে এতটা বাজে কথা বলতে পারিস। তোর মতো জঘন্য নোংরা মেয়েমানুষ আমি দুটো দেখিনি। তুই যে আমার বন্ধু ছিলিস এটাও ঘৃণা আসে ভাবতে। দোলা আমার বোন হয় বুঝলি। ওকে আমি বোনের মতোই ভালোবাসি। তোর নোংরা কথায় সে সম্পর্ক মিথ্যা হয়ে যাবে না। রাজের কথায় রোজা হো হো করে হেসে উঠে।

– তোকে বলেছিলাম না রাজ! দোলা এখানেই আছে। রোজাই ওকে আঁটকে রেখেছে। আমার কথা এবার তো বিশ্বাস হলো দাঁতে দাঁত চেপে বলে রুদ্র।

— এরপর রোজা দোলা আর আশাকে নিয়ে আসতে বললে তাদের নিয়ে আসা হয়। সাথে আসে সামিরও। দোলার সাথে আশাকে দেখে চমকে উঠে রাজ। রুদ্রও অবাক হয়। তার মানে আশা আর দোলা একসাথে আছে এখানে।
– রুদ্র ভাইয়া আমাদের এখান থেকে নিয়ে চলেন প্লিজ। আমরা ভুল করেছি আপনাদের না জানিয়ে এখানে এসে। সামির যে আমাদের সাথে এমন কিছু করবে সত্যি আমরা বুঝতে পারিনি। মাথা নুয়ে ফেলে আশা কথাটা বলে। দোলার মধ্যেও অপরাধবোধ৷ করুণ চাহনি রাখে দোলা রুদ্রর দিকে। রুদ্র দোলার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷

— দোলাকে ছেড়ে দাও রোজা। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না। আমি চাচ্ছি না এখানে কোনো ঝামেলা হোক। আমি দোলাকে নিয়ে যেতে এসেছি শুধু। রুদ্র নরম কন্ঠে বলে কথাটা। রোজা মুচকি হেসে বলে! অতিথিশালা আমার, ইনভাইটও করেছি আমি। তাই আপ্যায়নটাও আমাকেই করতে দাও। কীভাবে কি করবো সেটা নাহয় আমাকে ভাবতে দাও। বেশি বাড়াবাড়ি করার একদম চেষ্টা করবে না। তাহলে এর ফল একটুও ভালো হবে না। থ্রেট দিয়ে বলে রোজা।

এবার কাজের কথায় আসা যাক দুই হাত ভাঁজ দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে রোজা। সবাই আগ্রহ পূর্ণ হয়ে তাকায় রোজার দিকে।
– সামির এবার কাজের কাজ করি আমরা। রোজার কথায় সামির হাসিমুখে এগিয়ে আসতে গেলে রোজা সামিরকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ওয়েট সামির! সামির বিস্মিত হয়ে তাকায়।
– আগে ওদের থেকে ফোন গুলো নিয়ে নে। আমি একটুও বিশ্বাস করিনা এদের। কথাটা শক্ত কন্ঠেই বলে রোজা। রোজার কথায় একজন লোক এগিয়ে আসতে গেলে রুদ্র বলে খবরদার আমাদের কাছে আসবে না। আমরা ফোন দেবো না। আর রোজা! তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো।
– হ্যাঁ করছি বাড়াবাড়ি তো? কি করবে তুমি? কিচ্ছুটি করতে পারবে না। তাই আমি যা বলছি সেটাই শুনতে তোমরা বাধ্য নয়তো তোমার আদরের বউ দোলার গর্ভে যে তোমার অনাগত সন্তান আছে। তার জন্য কিন্তু একটু ভালো হবে না ব্যাপারটা। রোজার কথায় চমকে উঠে সবাই। দোলা ঘাবড়ে গিয়ে পেটে হাত রাখে।

– রোজাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই রুদ্র। ও যা বলছে তাই শোনা ছাড়া আর কোনো উপাই নেই আমাদের হাতে। তবে এর শেষটা দেখেই ছাড়বো আজ! রাজ বলে মিনমিন কন্ঠে। রাজের কথা মতো রুদ্র ওর ফোনটা বের করে এগিয়ে দেয়। সাথে রাজেরটাও দিয়ে দেয়। রোজা স্বার্থক হাসি দেয় একটা।
– সামির একটা পেপার এনে রুদ্রর সামনে ধরে বলে সাইন করো এটাই। হঠাৎ এমন কথায় কৌতুহলী হয়ে যায় রুদ্র। উত্তেজিত কন্ঠে বলে কিসের পেপার এটা?

ডিভোর্স পেপার! তোমার আর দোলার ডিভোর্স পেপার। সাবলীল ভাবে বলে রোজা।
– হোয়াট? রোজা তুমি কিন্তু সব সীমা অতিক্রম করে ফেলছো এবার রেগে বলে রুদ্র।
– বলেছি না আমি যা বলব তাই হবে আজ। বাড়তি কোনো কথা হবে না এখানে৷ বেশি কথা না বলে সাইন করে দাও। তোমার সাথে ডিভোর্স হয়ে গেলে আজ এখনই সামির দোলাকে বিয়ে করবে আর সেটা তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে আর ছটফট করবে ভালোবাসার মানুষটা হারিয়ে যাওয়ার শোকে। যেটা দেখে আমি শান্তি পাবো দাঁতে দাঁত চেপে বলে রোজা।

— তুই এইসব কেন করছিস রোজা। রুদ্রর সাথে তোর কিসের এতো শত্রুরা? তুই তো রুদ্রকে ভালোবাসতিস এক সময়। তাহলে এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারিস?

– ঘৃণা করি আমি ওকে আর এটাই করতাম সব সময়। ভালোবাসা সে-তো লোক দেখানো ছিলো মাত্র। বলতে পারিস আমার একমাত্র হাতিয়ার ছিলো ভালোবাসা। যেটা আমি রুদ্রর সাথে করেছি। অভিনয় করেছি শুধু ভালোবাসার। রুদ্র অবাক চোখে তাকায় রোজার দিকে। দোলার ইচ্ছে করছে রোজার গালে কয়েক-ঘা চ/ড় বসিয়ে দিতে।

– রুদ্র তাড়াতাড়ি সাইন করো বলছি। রোজার কথায় রুদ্র জেদ নিয়ে বলে জীবন থাকতে কেউ আমাকে দিয়ে এই ডিভোর্স পেপারে সাইন করাতে পারবে না।
– ওকে ফাইন! আমার কাছে অন্য রাস্তা আছে। নো প্রবলেম বেশ খোঁস মেজাজে বলে রোজা। বিস্ময় নিয়ে তাকায় সবাই ওর দিকে।

– রুদ্র একবার পেছনে তাকাও ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে রোজা৷ রোজার কথা মতো সবাই পিছু ঘুরতেই দেখতে পাই রত্না চৌধুরী আর জেসমিন চৌধুরীকে।
– মা তুমি এখানে? অবাক করা কন্ঠে বলে রোজা।
– আসুন এক্স শাশুড়ীমা। ওয়েলকাম। আপনি ছাড়া ঠিক জমছিলো না। তাই পিপিকে বলে আপনাকে নিয়ে আসা এখানে! স্বাভাবিক ভাবে বলে রোজা।

– পিপি? কৌতুহল নিয়ে বলে রুদ্র।
– হুম পিপি। যে কি-না তোমার খেয়েছে, পড়েছে। তোমার আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সব-সময় কাজ করেছে আমার হয়ে। উদাহরণস্বরুপ নিজেই দেখে নাও সি!
– পিপি তুমি এমনটা করতে পারলে আমাদের সাথে। আমরা তো তোমার নিজের মানুষ পিপি। আমি তোমার ছেলের মতো। তাহলে কিভাবে? রুদ্র আর কিছু বলতে বা ভাবতে পারছে না। ঘরের মানুষী যখন বেইমান সেখানে পর-কে আপন ভাবা বিলাসিতা মাত্র।
– জেসমিন তুমি আমাকে মিথ্যা বলে এখানে নিয়ে এসেছো? অবাক হয়ে বলে রত্না চৌধুরী। জেসমিন চৌধুরী রত্না চৌধুরীকে নিয়ে ভেতরে এসে হো হো করে হেসে বলে খুব অবাক হচ্ছো সবাই। হওয়ারই কথা। হও হও! আরো অবাক হও। অবাক হতে হতে মরমে মরে যাও তোমরা।

– পিপি আপনি কেনো করলেন এমনটা? রুদ্র তো আপনার নিজের ভাইয়ের ছেলে? তাহলে কিভাবে সম্ভব এইগুলা? রাজ বলে হতাশ হয়ে।
– তো কি হয়েছে তাতে। কি পেয়েছি আমি ওদের থেকে। সারাজীবন লাঞ্চিত হয়েছি শুধু। পায়ের তলায় পড়ে থেকেছি। কখনো কোনো কথার দাম পাইনি আমি ওদের থেকে। ওদের ব্যবহার দিয়ে আমাকে সব সময় বুঝিয়ে দিয়েছে যে আমি তাদের বাড়ির আশ্রিতা একজন। হেও করেছে আমায়।

– এইগুলো তুমি কি বলছো পিপি? আমরা কখনো তোমাকে ছোট করে দেখেনি। এমনকি এমন কিছু কখনো ভাবিনি। তুমি আমার পরিবার। আমার আপনজন। আমার বাড়ির মানুষ! ঘরের মানুষ।
– রুদ্রর কথায় জেসমিন চৌধুরী বলে সারাজীবন ঘরের মানুষ হয়ে কি লাভ আমার? সব সম্পত্তি তো তোর বাপ তুই দখল করে বসে আছিস। আমার মেয়ের কি ভবিষ্যৎ নেই। আমার নিজের ভবিষ্যৎ নেই সব সময় তোদের গোলামি করবো এটাই ভেবেছিস?

– আহ পিপি! এবার থামো। ওরা তোমায় অবহেলা করেছে তো কি হয়েছে। আমি তোমাকে প্রায়োরিটি দেবো। তোমার কাজের যথাযথ মূল্য তোমায় আমি দেবো মৃদু হেসে বলে রোজা।
– আমি জানি রোজা তুমি আমাকে কখনো ঠকাবে না। তাই তো সব সময় তোমার সাথে থেকেছি। তোমার হয়ে কাজ করেছি। তুমি আমাকে বলেছিলে রুদ্রর থেকে সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে তার অর্ধেক ভাগ আমাকে দেবে৷ এবার নিশ্চয় আমার সে আশাটা পূরণ হবে। বেশ গদগদ কন্ঠে বলে জেসমিন চৌধুরী। তার কথায় রোজা মুখের হাসিটা চওড়া করে বলে অবশ্যই পি-মনি। আমি তোমার কাজের উপহার এখনি দেবো। সামির! রোজা সামিরের দিকে ইশারা করলে সামির পকেট থেকে একটা রি/ভো/ল/বার বের করে জেসমিন চৌধুরীর দিকে তাক করলে জেসমিন চৌধুরী ঘাবড়ে যায়। চমকানো চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলে এইগুলো কি হচ্ছে রোজা। সামির আমার দিকে ব/ন্দু/ক ধরেছে কেনো?

– তোমার কাজের প্রাপ্য সম্মান দিতে। রোজার কথাটা শেষ হতেই সামির জেসমিন চৌধুরী বুকে একটা আর একটা পেটে গু/লি করে। সবাই চমকে উঠে অবাক হয়ে তাকায়। রোজা এতটা ডেঞ্জারাস হয়ে উঠেছে ভাবতেই সবার আত্মা শুকিয়ে আসে। জেসমিন চৌধুরী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ছটফট করতে থাকে। সামির আর রোজা একসাথে হাসতে থেকে। আজ যেনো মরণ খেলায় নেমেছে তারা। বেইমানের সাথে বেইমানিই করতে হয়। যে বিশ্বাসঘাতক হয় তাকে কখনো বাঁচিয়ে রাখতে হয়না। রোজা বলে কথাটা।

– জেসমিন চৌধুরী হাত বাড়িয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করে কিন্তু সেটাও তার হয়ে উঠে না৷ কিছুক্ষণের মধ্যে প্রাণ ত্যাগ করে সে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here