#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#PART_10
#FABIYAH_MOMO🍁
ক্যাম্পাসের গেট পার করে ভেতরে ঢুকতেই মনে হলো কেউ ভীষন ফলো করছে। পলকে পলকে কদমে কদমে সে আমায় টিপটিপ দেখছে। আমি বিষয়টাতে ঘাবড়ালাম না, শান্ত থাকলাম। ব্যাগের ফিতা আকড়ে ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছি। সিড়িতে এক পা ফেলবো পেছন থেকে অর্পনা ডেকে দিলো। ওর চিকন গলায় মিনমিন কন্ঠ পেলেই বুঝে যাই ওটা অর্পনা ছাড়া কেউ হবে না। আমার ক্লাসমেট। আবার ব্যাচমেটও বলা চলে। ও বলল-
–মম দাড়াও।। একটু কথা আছে।
আমি ওর কথায় দাড়ালাম। হাতের বাদামী ঘড়িতে একবার সময় দেখে নিলাম। দশ মিনিট এখনো আছে। ক্লাস শুরু হতে দেরি হবে। আমি শান্ত গলায় বললাম-
–খুব জরুরী কিছু? কি বিষয়ে বলতে চাও?
–তোমায় ক্যাম্পাসে মুগ্ধ ভাইয়ার দলবল খুজঁছে। কি কাজে উনাদের তোমায় লাগবে। জলদি যাও।
–ওদের কাজে আমার কি প্রয়োজন? একেকটা তো একেকটার চেয়ে কম না! আশ্চর্য! কেমন বেহায়া মুখে আবার ডাকলো!
–আমি কি করি বলো? জেনি আপু যেই খাতারনক, পারেনা গলায় হাত ঢুকিয়ে মারে। ভয় পাই গো। তুমি উদ্ধার করো।
–আচ্ছা তুমি টেনশন নিও না আমি ব্যাপারটা দেখছি। ওদের তলবে আমায় কেন ডাকলো তার জন্য মশলার ঝাটা খেতেই হবে। তুমি আমার ব্যাগ নিয়ে ক্লাসে বসো, আমি আসছি।
–সাবধানে থেকো মম। ওরা কিন্তু আগের বার তোমার চুল কেটে দিয়েছিলো। এবার…
–এবার কিছু করতে পারবেনা। আগেরবার নাহয় ভালোমানুষী করেছি। এবার টাটকা দুই থাপ্পর গালে বসিয়ে আসবো।
অর্পনা আমায় বিড়বিড় করে অনেক কিছু বললেও স্পষ্ট কানে কিছুই শুনিনি। অনুমান শক্তিতে বলছি, অর্পনা খুব সম্ভবত এই বলেছে- মম তোমাকেই খুজছে বাংলাদেশ!
গরম পড়েছে খুব। কি সূর্যের প্রখরতা!! তালু ফেটে গড়াগড়ি খেতেই দ্বিধাগ্রস্ত হবেনা, এমন কাঠফাটা গরম। ইচ্ছা করছে হিম শীতল পানির মধ্যে ডুবে থাকি, কি ঠান্ডা! আহ্..পরানটা জুড়িয়ে যায় ঠান্ডায়। কল্পনারাজ্য থেকে গরমের নিস্তার পাওয়া গেলেও বাস্তব দুনিয়ায় গরমে ঘেমে চৌচির। ওরা আমার সামনে। বদমাশ মুগ্ধ শহীদ মিনারের চকচক ফ্লোরে বসে আছে। বাকি গুলা ফ্লোরের নিচের সিড়িতে। মানে দূর থেকেই বোঝা যায় লিডার বসে আছে।।গলার ওড়নাটা নিয়ে কপাল মুছতেই বলে উঠলাম-
–দা না কাস্তে? কোনটা কোনটা? কোনটা দিয়ে কোপাবো?? বল বল দেরি না!!
এক বালতি অবাক নিয়ে মুখ হা করে আছে সবাই। কেবল মুগ্ধ স্বাভাবিক। যেমনটা সর্বদা থাকে। জেনি চিৎকার করে বলল-
–হাউ ডেয়ার ইউ রাস্তার মেয়ে! কাকে ধমকি দিচ্ছো? চোখ নামাও! তোমার বাবার সামনে চোখ উঠাবা! আমাদের সামনে ভুলেও না!
–সোজা হয়ে থাকিস! আমার ফ্যামিলি মেম্বার টেনে আনিস না! তোরটা টানলে ইজ্জত থাকবে না!
নাসিফ সবসময়ের মতো সিগারেট টানছে। ছেলেটাকে সিগারেট ছাড়া একদিনও দেখিনি। সে একটা সিগারেটখোর! মুগ্ধ কেমন শোপিসের মতো পুতুল সেজে আছে।বসে বসে তামাশা দেখছে। জেনি মেয়েটা রিমির দিকে সর্তকতায় ইশারা করলো। অঘটন ঘটানোর ইশারা। রিমি ইশারা পেয়ে আমার দিকে তরল কিছু ছুড়ে মারলো। নিমিষেই পুরো জামা নষ্ট হয়ে গেল। আকষ্মিক চোখ বন্ধ করলেও চোখ যখন খুলি তখন সবাই আমার দিকে অট্টহাসিতে হাসছে। জামার দিকে তাকালাম। বুক ফেটে কান্না আসছিলো! কাদঁতে পারছিলাম না! কালো কালির পানি গুলিয়ে আমার দিকে ছুড়ে মেরেছে। গতবছর আব্বু জন্মদিন উপলক্ষে জামাটা গিফট করেছিলো। সেই পছন্দের জামাটা আমার শেষ। কি করে দিলো? দাগটা সাবান দিয়ে ধুলে, লেবু দিয়ে ঘষলেও উঠবে না। কঠিন দাগ টিভির এডর্ভাটাইজের মতো কোনো ডির্টাজেন্টে উঠবেনা। রাগ লাগছিলো। দা এনে একঘন্টা কুপিয়ে জখম করলেও রাগের স্ফুলিঙ্গ কমবেনা। তবুও কাদো মনে ছোট হয়ে চলে আসলাম। আজ কিছু করলাম না। মনটা শক্ত নেই। প্রচণ্ড নরম হয়ে গিয়েছে। যেকোনো সময় চোখ দিয়ে ছলছল হয়ে জল পড়তে পারে। ওদের সামনে কাদতে নেই। দ্রুত পায়ে হাটঁতেও পারছিনা। সবাই ভাববে হেরে গিয়েছি। নিজেকে কঠোর দেখানোর প্রয়াস করছি।
গার্লস হোস্টেলের ওয়াশরুমে আছি। বেসিনের পানি ছেড়ে মুঠো করে জামার উপর থেকে আলতো কালির ছোপটা উঠাচ্ছি। যদিও জানি কালির দাগ উঠবেনা। পছন্দের জিনিসে কটু দেখা দিলে ভেতরটা কেমন হাহা করে বলে বোঝানো যাবেনা। মেয়েদের কাছে ছোটখাটো জিনিসটাই অনেক। অনেক কিছু। আমার কাছে সর্নালংকারের মূল্য নেই। স্বর্ণ কখনো হীরার যোগ্যতা পায়না, বাবার ভালোবাসা মিশ্রিত উপহারটা হীরার মতো। আমার হীরার খনিতে দাগ লাগলো। জামারহাতায় চোখ মুছে বাইরে বের হলাম। হোস্টেলের ব্যাক এরিয়া এটা। ওয়াশরুম গুলো স্বচ্ছ পরিস্কার। বড় একটা হলরুম পেরিয়ে এখানে আসা লাগে। যেহেতু আমি কান্না করেছি তাই জায়গাটা আমার জন্য উত্তম। নিরিবিলি, কোলাহলমুক্ত। কেউ নেই। কেউ নেই। আমি ওয়াশরুমের দরজাটা বাইরে থেকে সিটকিনি লাগিয়ে পেছনে ঘুরতেই ঝড়ের বেগে কেউ ঝুকে আসলো। একহাত ওয়াশরুমের দরজায় পড়লো। আমি চমকে দরজার সাথে ঠেকে গেলাম। চোখ বড় করে অবাকে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। মুগ্ধ ধারালো চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে। পিছনে দরজা সামনে মুগ্ধ ডানে হাত বামেও অপর হাত দিয়ে দিলো। মাঝে আমি পুরো খাচায় বন্দিশিবির! সে বলল-
–আজকের মেয়েটা কে আমি চিনি না। কে সে? Who is she? Is she Momo?
মুগ্ধকে জবাব দেওয়াটা প্রয়োজন মনে করিনা। ওর বুকের উপর হাতজোড়া দিয়ে ধাক্কা দেই। ও জমের মতো লেগে আছে। কেউ ওর হাত দুটোকে আঠা মেরে দরজায় লাগিয়ে দিয়েছে। আমি চরম বিরক্ত। ও আবারো বলল-
–তুমি জবাব দিচ্ছো না কেন!এ্যান্সার মি!কে তুমি! কেন তুমি চুপ আছো!
ওর ফালতু কথা শুনে মাথা গিজগিজ করছে। এমনেই জামা নষ্ট করে দিয়েছে! এখন আমাকে আহ্লাদ দেখাতে চলে এসেছে! ফালতু! গালে একটা থাপ্পর দিলাম। মুগ্ধ রেগে গেল। রাগলো… রাগলো চরম রেগে গেলো। আমার বাহু চেপে ঝাকিয়ে বললো-
–তুমি চুপ থাকবে কেন! চুপ তোমার জন্য চুজেবেল না! তুমি ওদের সামনে কেন চুপ ছিলে ব্লাডি ফুল! হোয়াট দ্যা হ্যাল ইজ উইথ ইউ!আমি তোমার সিচুয়েশন দেখলাম! তুমি ফাউ ফাউ ওদের শেমফুল কাজে চেহারা দেখছিলে! কেন কিছু করলেনা!আমায় চড় মারলেই ওদের কাজে রিভেন্জ পাবে? Why have you slapped me?হোয়াই?
-চলবে
#