তুমিময় প্রেম পর্ব ২০+২১

#তুমিময়_প্রেম❤
#PART_20
#FABIYAH_MOMO 🍁

— ‘ইডিয়েট! গাধা কোথাকার! কথা কি কানে যাচ্ছে না! বেরিয়ে যাওবলছি! বেরিয়ে যাও!আই সেইড গো! গেট আউট!

— তুতমি আমাককে ইইনসসাল্ট কররলে মুমুগ্ধ…

কথা আটকে আসছিলো রিমির। নিজের বাড়িতেই রিমি এতোটা অপমানিত হবে ভাবতেও পারেনি! নিমিষেই মুখের রঙ পাল্টে কাদোঁকাদোঁ চেহারা করে রুম থেকে দৌড়ে পালালো। এদিকে মুগ্ধ এমন অপ্রতিভ কান্ড
করবে আন্দাজের বাইরে ছিলো আমার! আমি বোকা বনে ঝিম খেয়ে দাড়িয়ে আছি। মুগ্ধ জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। ওর কাটা হাতটা চোখের সামনে এনে বলে উঠলো,

— এই নিরীহ প্রাণীটার উপর একটু দয়া করবে? ব্যথাটা প্রচুর যন্ত্রনা দিচ্ছে….পারলে এটাকে আমি খন্ডখন্ড করে কেটে ফেলতাম! কিন্তু পারছিনা….অসহ্য লাগছে…ব্যথাটা আমি নিতে পারছিনা…

মুগ্ধের ওমন আকুতি ভরা কন্ঠ শুনলে যে, কারো যে মন গলবে, এটা আমি নিশ্চিতরূপে বলতে বাধ্য। মাঝে মাঝে মানুষের আকুতির মধ্যেও খানিকটা সত্য মেশানো থাকে! কিন্তু এখানে খানিকটা নয়, অনেকটাই সত্য জড়ানো! মুগ্ধের অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু সে মুখে না বলে চুপচাপ দাতঁ চিবিয়ে বসে আছে। আমি লম্বা দম নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।এলোমেলো চুলগুলোকে দুহাতে শক্ত খোপা পেচিয়ে নিলাম।। ফাস্ট এ্যাড বক্সটা রিনি দরজার ওখানে ফেলে দিয়ে গেছে। আমি ততক্ষণে বক্সটা নিয়ে দরজা ঠেলে মুগ্ধের কাছে ফ্লোরে আটোঁ হয়ে বসি। ঝটপট ড্রেসি করবো তা না! উল্টো হাতের রুমাল খুলে স্যাভনল দিতেই গলগল করে রক্ত বেরুতে লাগলো। তুলো দিয়ে মুছেও আমি রক্তপাত বন্ধ করতে সক্ষম হচ্ছিলাম না! আমার হাত পযর্ন্ত রক্তে মাখামাখি হয়ে যাচ্ছিলো! আমি বুঝতে পারছিলাম না রক্ত কীভাবে বন্ধ করবো! মুগ্ধের দিকে একবার তাকালাম। ও কেমন শান্ত দৃষ্টিতে পূবের আকাশ দেখছে!! যেনো একবিন্দু জ্বালা হচ্ছে না!! একদম কিছু হয়নি!!ওর জায়গায় আমি থাকলে এতোক্ষনে চিৎকার করে বাড়ি মাতিয়ে ফেলতাম! বড় একটা ঢোক গিলে নিজেকে ঠান্ডা করলাম। আমার হাত থরথর করে কাপছিলো! বেগতিক হারে কাপছিলো! তুলোটা ওর কাটা ঘা-য়ে দিতে যেয়েও দিতে পারছি না। চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে ডাকছি! এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আমি আদৌ পড়িনি। তুলোর সম্পূর্ন প্যাকেটটা মুছতে মুছতে বহু চেষ্টার পর রক্তপাত বন্ধ করি। ব্যান্ডেজের শেষ গিটটা দিয়ে উঠতে যাবো হঠাৎ মুগ্ধ বলে উঠলো,

— তুমি প্লিজ আমার একটা কথা রাখবে?
— রাখতে পারলে রাখবো!
— আমার সাথে আমার বাসায় চলো। তুমি ওখানে থাকবে। আমি তোমাকে রিনির কাছে রেখে যেতে ভয় পাচ্ছি! আমার কারনে যদি ও তোমার ক্ষতি করে?
— তাহলে এখানে আনলেই কেনো তুমি! আমি বলেছিলাম আনতে? বলো? বারবার আমাকে নিয়ে এতো ছয়নয় করছো কেনো?
— আ’ম সরি! প্লিজ, আমার সিচুয়েশনটা বুঝো! এমনেই আঙ্কেল আন্টির হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে কোনো এ্যাঙ্গেলে ভালো মনে হচ্ছে না। তার উপর রিনির এমন গোয়েন্দাগিরীর, রাগচটা স্বভাবটা….ড্যাম! আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে এখানে আনা! রিনির নেচার সম্পর্কে আমি ভালো জানি! ও যে তলে তলে তল্লাশি করবে, ফ্যাক্টটা ভুলেই গিয়েছিলাম! নাহ্…চলো!

চট করে আমাকে উঠতে বলে টেবিলের উপর থেকে ফোন ও গাড়ির চাবিটা দ্রুত পকেটে ঢুকাতে লাগলো মুগ্ধ! আমি সোজা হয়ে দাড়াতেই মুগ্ধ তাড়াহুড়ো করে আমার হাতের কবজি ধরে সামনের দিকে পা ফেলতেই হুট থমকে দাড়ালো! আমার মুখপানে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে ইতস্তত করছিলো মুগ্ধ! ‘জিজ্ঞেস করবে নাকি করবে না’ ঠিক এমন টাইপ জড়তা!

— কি হলো? কিছু বলবে? ওমন মিনমান করছো কেনো?
— মানে…বিষয়টা হলো…
— হ্যাঁ বিষয়টা কি? চুপ হলে কেনো? বলো?
— প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবে না। একচুয়েলি, তোমার শাড়ি টারি ঠিক করতে হবে? যেহেতু আমি তোমাকে ফ্রেশ হতে অতো সময় দেইনি… মানেটা বুঝেছো তো??

আমি ফিক করে হেসে দিলাম!! সামান্য একটা প্রশ্ন করতেই ওর জান বেরিয়ে যাচ্ছিলো!! আল্লাহ্ এগুলো ভাবা যায়??মুগ্ধ আমার হাসি দেখে লজ্জায় কাচুমাচু করছিলো। আমি হাসি আটকে কোনোরকমে বলে উঠি,

— তোমার গ্যাংয়ের রিমি, জেনি শাড়ি পড়লে সেকেন্ডে সেকেন্ডে ‘উলালা উলালা’ গানে ডান্স দিয়ে ছেলেদের মনোরন্জন দিতে পারবে মুগ্ধ সাহেব! আমি ওমন না! বাঙালি মেয়েরা শাড়িতে ‘স’ থেকে ‘সবকিছু’ করতে পারে! বুঝলেন??

মুগ্ধ জড়তা কাটিয়ে আমার দিকে একচিলতে গর্বসূচক হাসি দিয়ে যাত্রা ধরলো বাসার উদ্দেশ্যে! রিমি নাকি রুমের দরজা বন্ধ করে হু হু করে কাদঁছে। ওর আব্বু আম্মু চিকিৎসার জন্য বাইরে বিধায় আমাদের অযথা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি। ওদের একটা সার্ভেন্টকে জানিয়ে আমরা চলে এসেছি রিমির বাসা থেকে।

.
.

রাতের আধারে সুনশান সড়কে গাড়ির চলাচল খুব কম! মাঝেমাঝে দু-একটা গাড়ি শান বাজিয়ে ছুটে যাচ্ছে গন্তব্যস্থলে। মুগ্ধ একহাতে গাড়ি চালাচ্ছে, অন্যহাতটা আপাতত রেস্টে আছে। গাড়িতে লাইট জালানো হয়নি। সেটা বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। আমি সিটে গা হেলিয়ে বাইরের আধার দেখছি। হঠাৎ চলন্ত গাড়িতে বিকট রিংটোনে মুগ্ধের ফোনটা বাজতে লাগলো। স্বাভাবিক ভাবে, মুগ্ধ ফোনটা হাতে নিলো। কিন্তু স্ক্রিনে লক্ষ্য করতেই যেনো মুখের অবস্থা পাল্টে গেলো! একবার আমার দিকে, আরেকবার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিললো! সামান্য একটা কল নিয়ে মুগ্ধের আচমকা পরিবর্তনটা আমার কাছে খটকা লাগছিলো! খচখচ করছিলো মনে, কে দিলো কলটা ফোনে! মুগ্ধ আমার দিকে একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে কলটা রিসিভ করলো! গাড়িটা পার্ক না করে কানে ফোন লাগালো মুগ্ধ,

‘হ্যালো…’
প্রথম শব্দটা বলার পর মুগ্ধ আমার দিকে অনাকাঙ্ক্ষিত চাহনি ছুড়লো। ড্রেসিং করা হাত দিয়ে পাশের জানালাটা নামিয়ে সেদিক মুখ করে কথা বলতে লাগলো। মেইন কথা, মুগ্ধ চাচ্ছিলো না ওর কথোপকথন আমি কোনোভাবে শুনি! একটু আধটু শোনা যাচ্ছিলো। যা ছিলো এমন…

‘হোয়াট! তুমি আমাকে এই নিউজ দেওয়ার জন্য কল করেছো? হোয়াট সরি? আমি তোমার সরি শোনার জন্য বসে আছি! আই উইল ফায়ার ইউ নিজাম! রিজাইনেশন লেটার নিতে প্রস্তুত থাকো!’

কথা দ্বারা যতদূর বুঝলাম সম্ভবত স্টাফের কোনো বড়ো ভুল নিয়ে মুগ্ধ এখন চেচামেচি করছে। চোখে প্রচুর ঘুম। তবুও চোখের পাতা বেশি ঠেলেঠুলে খোলা রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করছি। আমি হাই তুলতেই দেখি, মুগ্ধ কল কেটে ফোনে ধুমাধুম টাইপিং করছে। টাইপ শেষ হতেই ফোনটা গাড়ির পিছন সিটে ছুড়লো! এবং রাগী গম্ভীর মুখ করে চাবি ঘুরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

.
.

ঠিক একঘন্টা পর মুগ্ধের বাসায় পৌছলাম। ওদের দারোয়ানটা আমাকে মুগ্ধের সাথে গাড়ি থেকে নামতে দেখে চোখের গোলক ইয়া বড় বড় করে দেখছিলো! যখন আমরা লিফটে আবদ্ধ, মুগ্ধ তখন বলে উঠলো,
— আমার একটু ইর্ম্পট্যান্ট কাজ আছে পাকনি। তোমাকে ভেতরে পৌছে দিয়ে আমাকে জরুরী কাজে বাইরে যাওয়া লাগবে। তুমি থাকো? কোনো টেনশান করবে না। সার্ভেন্ট আছে, চাচা আছে, উনারা তোমার দেখাশোনা করবে। কেমন? আমি খুব জলদি কাজ সেরে আসবো! আই প্রমিস!

‘কি এমন মহা ইর্ম্পট্যান্ট কাজ তোমার যাওয়াই লাগবে!’ প্রশ্নটা করা হলো না, লিফটের দরজা খুলে গেলো! লিফট খুলতে দেরি মুগ্ধের অপেক্ষায় থাকা সার্ভেন্ট দল দৌড়ে সেবা দিতে দেরি করলো না! মুগ্ধ তাদের চোখের ইশারায় কি যেনো বুঝালো তারপর লিফটের বাটন টিপে চলে গেলো। সার্ভেন্টরা আমাকে নানা ভাবে নানা কাজ করার জন্য হুকুম চাইলো। এতোগুলো চোখ যখন আমার দিকে আমি হড়বড় করে বলে উঠি,

— আমি ঘুমাবো। বেডরুম চাই। ফ্রেশ হতে চাই।প্রচন্ড খুদা পেয়েছে। খাবো আমি!

উনাদের মধ্যে অলরেডি ক’জন নির্দেশ পাওয়ার মতো একেকদিকে ছুটে গেলো। বাকি কিছু সার্ভেন্টের মধ্যে একটু বয়স্ক মতোন এক বৃদ্ধ এসে আমাকে রুমে নিয়ে গেলেন। পথিমধ্যে অনেককিছুই আমাকে বললেন উনি। জানতে পারলাম, উনার নাম রফিকুল ইসলাম। মুগ্ধ এনাকেই ‘চাচা’ বলে ডাকেন। এ বাড়িতে প্রায় একুশ বছর ধরে ঢ় গিয়ে দেখি লক ঘুরছেনা! মূহুর্তেই শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো! আমাকে…আমাকে কি ইচ্ছাকৃত ভাবে অপহরণ করা হলো? মুগ্ধের প্ল্যান কি তাহলে কিডন্যাপ করা ছিলো? শত জোরাজুরি করলেও কেউ লক খুললো না। আমার চিৎকার করা গলার আওয়াজ শুনেও না। কেউ দরজা খুললো না।

আমি দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে হাল ছাড়ার মতো বসে পড়েছি। চোখের সামনে দূরদূর পযর্ন্ত অন্ধকার। কিছুই ধরতে পারছিনা। সব ঘোলাশা। সব! চোখ বন্ধ করতেই চোখের দুকোণা থেকে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে হাতের উপর পড়লো। শব্দ করে কাদঁতে মন চাচ্ছিলো। আব্বু-আম্মু-ভাই এই তিনজন সদস্যের কোনো লাতাপাতা নেই! অনুষ্ঠানের উছিলায় হলরুমে কে উগ্র স্পর্শ করেছিলো জানা নেই! মুগ্ধ হেলাখেলা করে কেনো কিডন্যাপ করলো উত্তর নেই! এ কেমন বিপদে পড়লাম আল্লাহ্? এ কেমন সঙ্কট? চোখ থেকে থেমে থেমে পানি ঝরছিলো! কান্না পাচ্ছিলো ডুকরে! তবুও নিজেকে সামলে চোখ মুছে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই বিছানার উপর একটা শপিং ব্যাগ দেখি। আচঁলে মুখ মুছে ব্যাগ খুলে দেখি কিছু জামা রাখা এবং ওগুলো যে কেবল আমার জন্যই ছিলো সুস্পষ্ট প্রমাণ হলো জামাগুলো কালার। সবগুলো আমার পছন্দসই রঙের! একটা জামা তুলে ওয়াশরুমে গেলাম।শাড়ির গেটআপ পাল্টে বেরিয়ে দেখি, এখন টেবিলের উপর খাবার রাখা! খাবারটা খেলাম না। ওভাবেই রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কাথাটা মেলে শরীরে জড়াতেই ঘুম এসে হানা দিলো…

.

সূর্যের সোনালি মিষ্টি আলোয় ঘুমটা ভাঙলো আমার। আড়মোড়ে শরীর টানা দিয়ে উঠে বসতেই জানালার কাছে কারো উপস্থিতি দেখলাম। সে দুহাত ভাজ করে জানালার বামপাশে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সাদা পান্জাবীর জায়গায় এখন কালো পান্জাবী। সূর্যের আলোয় মাথার চুলগুলো চকচক করছে।যেনো সদ্য তেল মাখানো ঝলমল চুল!! বর্তমানে তার বাহ্যিক রূপ বর্ননা করার মতো নয়! শুধু চেয়ে চেয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকতে হয়! বিছানা থেকে চুপিসারে নেমে মুগ্ধের ঠিক পেছন দাড়িয়ে বলে উঠি,

— আমায় কিডন্যাপ কেনো করেছো রাদিফ মুগ্ধ!
হাতের ভাজ খুলে ঘুরে দাড়াতেই মুগ্ধ আমাকে দেখলো। সে মুচকে হেসে জবাব দিলো,
— ভুল! কিডন্যাপ করিনি। যা করেছি, যে জন্যে করেছি। সময়মতো সব জানবে পাকনি।
— খবরদার! পাকনি ডাকবেনা! ডাকবেনা!
মুগ্ধ আলতো করে আমার নাকটা টেনে হেসে বলে উঠলো,
— ইশশ…তুমিও না!! একটু বেশি বেশি!! কেনো ডাকি জানো না?? তুমি হচ্ছো রাদিফের পাকনি! মুগ্ধের মম! রাদিফ মুগ্ধের পাকনি মম!
আমি রাগী চোখে নাক ফুলালে মুগ্ধ হাসা বন্ধ করে এবং স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠে,
— যারা মূলত ত্যাড়া, শুদ্ধ বাংলা ভাষা বুঝেনা ও অন্যের উপদেশ না মেনে নিজেকে পন্ডিত মনে করে, তাকে মুগ্ধের ভাষায় ‘পাকনি’ বলে। তোমায় আমি পাকনি ডাকবো! এবং এই নামে ডাকার অধিকার স্রেফ আমার! ‘বাবু,সোনা,পাখি,ময়না,গিলা,কলিজা ব্লা ব্লা ব্লা… আমি এইসব নামে ভালোবাসা দেখিয়ে শো-অফ করতে চাইনা! নেভার এভার! আমার বিহেভিয়ারের সাথে ভালোবাসার শোঅফ…ধুর! ইমেজিন করতেও সমস্যা হয়! ছিহ্ঃ!
#তুমিময়_প্রেম ❤
#PART_21
#FABIYAH_MOMO

.
সকাল দশটা! আমাকে চরম বিক্ষিপ্ত বন্দীদশায় রেখে সে গেছে বাইরে! কোথায় গেছে, কখন আসবে কেউ তা জানে না! বাড়ির সার্ভেন্টগুলো খুব অদ্ভুত! তাদের আচরন মাঝেমাঝে এতোটাই উদ্ভট ধরনের হয়, সন্দেহের মায়াজালে নিজেই অভিভূত হয়ে যাই! একটু আগে এক সার্ভেন্ট এসে বললো,

— ম্যাম? কিছু লাগবে? চা, কফি সামথিং?আনবো?
— বিষ এনে দাও! জিংক ক্লোরাইড! হবে না ইদুর মারার ঔষুধ এই বাড়িতে? যাও আনো!

সার্ভেন্টটা ধমক খেয়ে চলে গেলো। কেউ কিডন্যাপ করে ভিক্টিমকে খাবার সাধে? তাও আবার চা নাকি কফি?? এ বাড়ির চার সীমানায় হিসেব ছাড়া প্রহরী। সবই যেনো আমার জন্য বন্দোবস্ত। মুগ্ধের বেডরুম বাদে সব কটা রুম সিসিক্যামেরা এবং মনিটরিং করার জন্য আছে সুব্যবস্থা। সকাল থেকে এক গ্লাস পানি ছাড়া কিছুই খাইনি, খাবোও না। রুম থেকে বেরিয়ে বাড়ির চারপাশটা তীক্ষ্ম চোখে দেখছিলাম। গভীরে পর্যবেক্ষণে এদিক ওদিক তাকাতেই আমার ভাবনার চাদঁরে কেউ সুতো কেটে বললো,

— মুগ্ধ বাবাকে ডাকবো?
আমি মাথা ঘুরিয়ে শব্দ উৎসের দিকে তাকালাম। ঠিক ষাটের এসপার ওসপার বয়সটা হবে বৃদ্ধার। পড়নে পরিস্কার শাড়ি, সোনালী পাড়। উত্তর না পেয়ে আবার বলল,
— মুগ্ধ বাবাকে ডেকে দেবো মা? ও কে খুজছো?
— নাহ্। কাউকে ডাকা লাগবেনা। ইচ্ছে হলে পুলিশ ডাকুন! আমি মামলা করবো।
বৃদ্ধা ফোকলা দাতেঁ হাসলেন। উপর চোয়ালের ডানপাশটায় দুটো দাতেঁর জায়গায় খালি।
— মুগ্ধ বাবার উপর রাগ? রাগ করো না মা। ছেলেটা ভদ্র। ও তোমার কোনো ক্ষতি করবেনা তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। আসো মা, আমার সাথে বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখো।
বৃদ্ধার কন্ঠে কিছু একটা ছিলো। উনার কথাটা অগ্রাহ্য করার অধিকার কেনো জানি পাচ্ছিলাম না। হয়তো বুড়ো মানুষ বলে এজন্য। আমার এমনেই বয়স্কদের প্রতি টান কাজ করে। দাদীর কথা মনে পড়ে। বয়সের ভারে বৃদ্ধার হাটঁতে কষ্ট হলেও আমাকে নিয়ে র্নিবিঘ্নে হাটাঁর মতো ভাব ধরেছেন। মুগ্ধের রুম আলোকিত হলেও পুরো বাড়িটা কেমন ঝিম ধরানো ঝাপসা অন্ধকার। সার্ভেন্টগুলোও আশ্চর্যজনক ভাবে সামান্যতম শব্দ না করে কাজ করছে। বৃদ্ধা আমার সাথেসাথে হাটঁছে। মনের শতশত প্রশ্নের আকিবুকি করতেই ওড়নায় লাগাতার হাত মুচড়ে যাচ্ছি।। বৃদ্ধা আড়চোখে ব্যাপারটা লক্ষ করলেন এবং হালকা কেশে বললেন,
— মুগ্ধ বাবা কেনো বন্দি করে রেখেছে, এটাই জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছো, তাইনা মা?
আমি হাত স্থির করে উনার দিকে অবাক দৃষ্টি ছুড়লাম। জানলেন কি করে আমার মনের কথা? আমি তো কিচ্ছু বলিনি মনের ব্যাপারে!
— আপনি জানলেন কি করে আমি আপনাকে স্পেসিফিক্যালি এটাই জিজ্ঞেস করবো?
বৃদ্ধা বিনা শব্দে হাসলেন। একটু থেমে বললেন,
— আমি সত্য লুকিয়ে রাখি না মা। তাই উত্তরটা দিবো। চলো ওদিকটায় বসি?
আঙ্গুল দিয়ে একটা রুমের দিকের দিকে নির্দেশ করলেন। আরে! রুমটা আমার চেনা চেনা লাগছে কেন্? আগেও কি এসেছি? বাইরে থেকে না চিনলেও ভেতরে ঢুকতেই মনে পড়েছে এটা ফাইজার রুম। মুগ্ধের ভাতিজি। কিন্তু ফাইজা কোথায়? ওর কি কিছু হলো? ওহ্ এখন তো ওর স্কুল। বৃদ্ধা ফোমের বিছানার উপর আরাম করে বসলেন। আমি চেয়ার টেনে মুখোমুখি হয়ে বসলাম। বৃদ্ধা কোলের দিকে চোখ রেখে ধীরেসুস্থে বললেন,

— আজ থেকে প্রায় আঠারো বছর আগে বাড়িটায় নিরবতা ছিলোনা। অন্য দশটা বাড়ির মতো প্রতিটা আনাচে কানাচে পরিবারের হাসিঠাট্টার শব্দ শোনা যেতো। পূবের সূর্য উঠার পৃর্বেই সবার চোখ খুলতো। উৎসব ছাড়াই সবার মধ্যে উৎসবমুখর আনন্দ বিরাজ করতো। কিন্তু বাড়িটা আর নেই…
একদীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন। চেষ্টা করলেন ভেতরে চাপাকষ্ট কিছু নিশ্বাসের সাথে ঝেড়ে ফেলতে। বৃদ্ধা পুনরায় বললেন,

— আমাদের মুগ্ধ এমন ছিলো না। খুব চন্ঞ্চল ও ডানপিটে ছিলো। কোনোদিন স্কুল থেকে নালিশ ছাড়া বাড়ি ফিরেনি। ওরা দুটো ভাই ছিলো সকলের আদরের টুকরা। রুগ্ধ একটু হিংসুটে হলেও ছোটভাইয়ের সাথে হিংসা করতো না। ও মুগ্ধকে সবচেয়ে বেশি আদর করতো। একদিন ওর মা প্রচুর ঝগড়া করে ওর বাবার সাথে। প্রচুর কথা কাটাকাটি হয়, কি কারনে হয় কেউ আন্দাজ করতে পারেনি। রাগে, ক্ষোভে, অপমানে মুগ্ধের বাবা বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, আর ফেরেনি। ঠিক দু’দিন পর খবরে এলো, মুগ্ধের বাবা দেশ ছেড়ে চলে গেছে। ততোদিনে পরিবারের সবাই জানতে পারলো মুগ্ধের বাবার অন্য একটা মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো সেটা মুগ্ধের মা জানতে পেরে পুলিশে মামলা করার হুমকি দিয়েছিলো।

পুরো পরিবার আছড়ে পড়লো কান্নাকাটিতে। সবচেয়ে বেশি ভেঙ্গে পড়েছিলো মুগ্ধের মা। মুগ্ধ তখন মাত্র সাতবছরের বাচ্চা। কারোর কান্নার কারন বুঝতো না, শুধু নিষ্পাপ চোখ দিয়ে চেয়ে চেয়ে সবাইকে দেখতো।। কখনো কখনো অন্যের কান্না দেখে নিজেই ফুপিয়ে কেদেঁ দিতো। পরিবারের বেজ্জতিতে, পাড়া প্রতিবেশীর কটুক্তিতে, আত্মীয় স্বজনের গালাগালে সব সম্পর্ক ধ্বংসস্তুপে বিলীন গেছে। সবাই একে একে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমালো। মুগ্ধ দাদার হাতে মানুষ হচ্ছিলো। জীবনের নিয়মে একদিন সেও মুগ্ধকে বিদায় জানালো। মুগ্ধ দাদার লাশের পাশে চিৎকার করে কেদেঁছিলো, ‘যেও না দাদাভাই, প্লিজ তুমি একা চলে যেও না। আমাকেও নিয়ে যাও!! আমার কেউ নেই আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যাও…’

দাদা যাওয়ার পর থেকে সবাই ভিন্ন মুগ্ধকে দেখলো। বিনা কারনে রাগ নিয়ে চলতো, কারোর সাথে একটু কথাও বলতো না। রুগ্ধ পড়া শেষে দেশে ফিরলো।। বিয়ে করলো, নতুন সংসার সাজালো। মুগ্ধকে নিজের কাছে এনে দেখাশুনা করতো। রুগ্ধের স্ত্রী ফারিয়া মুগ্ধকে নিজের ছেলের মতো মানুষ করতে লাগলো। শুধুমাত্র ভাই ভাবীর কথা ছাড়া একটা মানুষের কথা কানে ঢুকাতো না।

বৃদ্ধা কথার মাঝে ছাট বসিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলে উঠি,

— বাড়িটা যে খালি… বাড়ির বাকি সদস্যরা কোথায়?
— বাড়িতে কেউ…

বৃদ্ধা কথাটা বলতে যেয়েও বললো না। অদ্ভুতভাবে এমন প্রসঙ্গ তুললো আমি পুরো বিষ্মিত হয়ে গেলাম! ‘উনার নাকি হাটু ব্যথা করছে, ঔষুধের সময় চলে যাচ্ছে’ হেনতেন বাহানা বানিয়ে কেটে পড়লো সামনে থেকে। আশ্চর্য তো! এই বাড়ির মানুষগুলো এতো উদ্ভট কেনো?

.
সার্ভেন্ট দুপুরের নাস্তা নিয়ে যথারীতি রুমে ঢুকতেই বিছানায় বসা মমকে দেখলো। মেয়েটা কিছু তো একটা ভাবছে! নাস্তা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে সার্ভেন্টটা বলে উঠলো,

— ম্যাম খাবারটা খেয়ে নিন। নয়তো স্যার আমাদের খুব বকবে। প্লিজ..

মম চোখমুখ কঠিন করে সার্ভেন্টটার মাথা থেকে পা পযর্ন্ত একবার চোখ বুলালো। বিছানা থেকে উঠে সার্ভেন্টকে বললো,
— খাবারগুলো যেভাবে এনেছো ওভাবে নিয়ে যাও!
— ম্যাম খাবেন না?
— না!
— একটা কাজ আছে করবে?
সার্ভেন্ট চোখ উজ্জ্বল করে বললো,
— জ্বী জ্বী ম্যাম বলুন!!
— তোমার মোবাইলটা দাও! জরুরি একটা কল করবো!
— সরি ম্যাম পসিবল না। স্যারের স্ট্রিক্ট নির্দেশ আপনাকে ফোন কোনোভাবে দেওয়া যাবেনা!
মমর দ্বিগুণ রাগ উঠলো!দাউদাউ করে শরীর জ্বলছে! সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো,
— এক্ষুনি যদি ফোন না দাও পরদিন তুমি স্যার ডাকার জন্য সুস্থ থাকবেনা কচিবাবু !

মমর রাগী রূপ দেখে সাভেন্ট দুটো ঢোক গিললো। একদিকে স্যারের নির্দেশ, অন্যদিকে মমর ভয়ংকর চাহনী! সে উপায়ন্তর না পেয়ে হুড়হুড় করে খাবারের ট্রে নিয়ে চলে গেলো।

.
— এই মনির? ম্যাডামের খাবার ফেরত আনলি যে?
— ওই মেয়ে খেলে তো! যেই ঝংকার, যেই তেজ! মাগো! স্যার যে কেমনে এইটারে সোজা করবো ভাবতাছি!
— মুগ্ধ স্যার ভালো ভালোর অবস্থা টাইট করছে এই মেয়ে কি জিনিস? গতবার দেখলি না? মিনিস্টারের সামনেই এসিসটেন্টরে কেমনে সাবান পানি ছাড়া ধোয়া মারলো? এই মেয়েকে ধরে ঠাস করে একটা চটচনা দিলেই হাওয়া লুজ হইয়া যাইবো। যা এগ্লা বাদ দে, কাজ কর। কিরে প্লেটে কাটাচামচ দেসনাই?চামচ কই?
মনির কপালকুচকে দুলালের দিকে তাকালো। বিষ্মিত স্বরে বললো,
— ভাই? আমি তো কাটাচামচ মনেহয় দিছিলাম…

.

ঘড়িতে বারোটার ঘন্টা বাজছে। ঢং ঢং ঢং — শব্দটা এতো বিকট ও বিরক্তির ঠেকছে মমর ইচ্ছে করছে দেয়াল ঘড়িটা ছুড়ে ফ্লোরে ফেলতে। কোনোমতে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে, আরো একবার দরজার দিকে চোখ বুলালো। ‘মুগ্ধ কি আসবে না?’ এই নিয়ে টানা কতোবার যে প্রশ্নটা মুখের ভাঁজে আওড়ালো হিসাব নেই। কিন্তু আফসোস!! মুগ্ধ আসছেনা !প্রকান্ড বিছানায় ফাইজা তার রুমে ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটা আজ মমকে পেয়ে কি যে মহাখুশি !! তা বলার বাইরে। মমর মাথায় এখন ফোন করার চিন্তা ঘুরছে! কিন্তু কি করে সম্ভব হবে তা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবতেই এক সার্ভেন্টকে ডাক লাগালো মম। কোন্ প্রয়োজনে ডাক লাগালো বোঝা গেল না,

— হ্যালো? কেউ আছে?
— ম্যাম কিছু লাগবে আপনার?
— এইদিকে আসো তো!
সার্ভেন্ট কথামতো এগিয়ে গেলো। মম বললো,
— আরো কাছে আসো! কি হলো? কাছে আসতে বলছি না?
সার্ভেন্ট মমর ইঙ্গিতে অন্যকিছু ভেবে, কাছে যেতে লজ্জা পাচ্ছিলো। তবুও যেহেতু এটা আদেশ ! তাই শিরধার্যরূপে মান্য করে মমর অনেকটা কাছে গিয়ে দাড়ালো। দূরত্ব ক্রমশ ঘন হয়ে আসতেই মম ঠোট কুচকে ডানহাতে চুলের খোপা থেকে লুকানো কিছু বের করলো! সার্ভেন্ট ভয়ে দুহাত আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে শূন্যে উঠাতেই বিড়বিড় করে বললো,
— ম্যাম ম্যাম! কি করছেন! ওটা ফেলে দিন!! কাটাচামচ ফেলে দিন প্লিজ!!

কাটাচামচের অস্ত্র দেখে থতমত করছে সার্ভেন্ট!মমর একহাতে ছুড়ি ধরার স্টাইলে কাটাচামচ আকড়ে, অন্যহাত দুলালের দিকে বাড়িয়ে বললো,
— দে ফোন দে! হাতে ফোন দে বলছি নয়তো এটা দেখছিস না? তোর চোখে ঢুকিয়ে অন্ধ করে দিবো!
সার্ভেন্ট ভয়ে কাপাকাপি করছে! থরথর করে হাত কাপছে। সে বড় করে ঢোক গিললো। একটাহাত শূন্য থেকে নামিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে ফোন বের করে কাপা হাতে এগিয়ে দিলো! মম খপ করে ফোনটা নিতেই আবার আগের মতো সারেন্ডার ভঙ্গিতে দুই হাত উচু করে রাখলো।

— উল্টো ঘুর! ঘুর বলছি! হ্যাঁ, ঘুর ঘুর! খবরদার এদিকে মুখ ঘুরাবি না!

মম কাটাচামচটা মুখে আকড়ে বিছানা থেকে কয়েকটা ওড়না নিয়ে দুলালের হাত, মুখ ও পা বাধলো! বেচারা মাটিতে লুটিয়ে ছটফট করছে! দাপাদাপি করছে! মুখ থেকে কাটাচামচ ফেলে মম দৌড়ে জানালার কাছে গিয়ে ডায়াল করলো! ‘দ্যা নাম্বার ইউ হেভ ডায়াল্ড, ইজ কারেন্টলি নট রিচেব্যাল!প্লিজ ট্রায় এগেইন লেটার!’ বেশ ক’বার ট্রায় করলেও একই কথা! প্লিজ আব্বু ফোন ধরো!! তোমরা কোথায়? প্লিজ ফোনটা ধরো!! কেউ ধরলো! মম এবার ইসরাতকে কল করলো! রিং বাজছে!! ইশশ…প্লিজ ইসরাত কলটা ধর!! কলটা ধর ইসু!! কয়েকটা রিং যেতেই ওপাশ থেকে ইসরাত ফোনটা ধরলো!

— হ্যালো? কে বলছেন?
— বেব্ আমি!
— এই আমিটা কে? কে বলছেন?
— বান্দি আমি বলতেছি!
— মম তুই? তুই কোথায়? তুই কার নাম্বার দিয়ে কল করছিস?
— সব বলবো ইসু!! তুই প্লিজ! প্লিজ আমায় উদ্ধা.. হ্যালো? হ্যালো? প্লিজ তুই তো জবাব দে! হ্যাল…

কানে ফোন লাগিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি মুগ্ধ! ওর হাতে একটা ছোট্ট রিমোট! কিসের রিমোট জানি না। আমার চোখমুখ স্থির হয়ে হাত থেকে অজান্তেই ফোনটা ধপাস করে পড়ে গেলো। মুগ্ধ তার বাম ভ্রুটা উচুতে তুলে ঠোট শক্ত করলো! আমার খুব কাছে এসে শক্ত গলায় বলে উঠলো,

— এই মূহুর্তে তুমি যেই ভুলটা করেছো তার কি পরিণাম হবে ভেবেছো?

মুগ্ধ হুট করে আমার চুলের মধ্যে হাত ডুবিয়ে পাচঁ আঙ্গুলে শক্ত করে ধরলো! অসহ্য ব্যাথায় কুকড়ে উঠি! ও আরো জোরে ধরলো! একহাত আমার মাথায় ডুবিয়ে, অন্যহাত দিয়ে গাল চোয়াল চেপে ধরলো! ব্যথায় নাকমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে আমার! শতচেষ্টা করেও মুগ্ধের কোনোহাত ছাড়াতে পারছিনা! ও যেনো ভয়ঙ্কর জন্তুর মতো আমাকে শিকার করে ধরেছে!

— তুমি আমার রাগের সীমা দেখোনি মম! যেটা তোমাকে দেখা চাইনা সেটাই দেখার জন্য তুমি বারবার আমাকে ফোর্স করো! তুমি মেবি ভুলে গেছো এই রাদিফ মুগ্ধ ভার্সিটির ফাস্ট দিনে তোমার সাথে কি করেছিলো!

গলা শুকিয়ে এলো আমার! আজকে অন্যান্য দিনের তুলনায় বহুগুণ রাগী দেখাচ্ছে! ও কি সত্যি সত্যি আমার ক্ষতি করে বসবে?

চোয়ালের যন্ত্রণা ও মাথায় চেপে ধরাতে মম চোখ বন্ধ করে নিলে মুগ্ধ ওকে ছেড়ে দেয়। শার্টের উপর থেকে কালো হুডিটা খুলে বিছানায় ছুড়ে ফেলে। শার্টের কাফ হাতাটার বোতাম দুটো খুলে কনুইয়ে ভাজ করতেই পকেট থেকে ফোন বের করে কল দেয়।

— হ্যালো? রামিম? ইমিডিয়েটলি ওর পরিবাকে তুলে নিয়ে আয়! যেভাবেই হোক কাজিকে ধরে আনবি! যদি আসতে দেরি হয়…বায় গড! নিজের মুখ আর আয়নায় দেখার সুযোগ পাবি না!

– চলবে

(বিয়ে হবে কি হবে না, নাকি আরো কাহিনী জড়িয়ে যাবে!পরবর্তী পর্বে জানবেন! ধন্যবাদ)♥
‘ চলবে ‘

#ফাবিয়াহ্_মম ❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here