তোমাতে আসক্ত পর্ব ১৭+১৮

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৭

আপনি আমার সামনে থেকে দূরে সরে যান, আমি আমার নিজের জীবনটা এই নরক থেকে মুক্তি দিতে চাই।

মিহি মুখে এমন কথা শোনে অভ্র জিজ্ঞেস করে,

–এতো কষ্ট ই কী আমি দিয়েছি।

–তা আর বলার অপেক্ষা রাখে নাকি।

–স্যরি মিহি। আমি তো আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

–ওমা সে কী কথা, অভ্র চৌধুরী আবার ক্ষমা চাইতে পারে নাকি। একটা মেয়ে যখন তার হাসবেন্ড এর বাসায় আসে, মা,বাব কে ছেড়ে তখন আদর করে আগলে রাখতে হয়। আর আপনি তো জোর করে বিয়ে করেছে তার উপর চুন থেকে পান খসলে আপনার…

অভ্র হাতের আঙ্গুল দিয়ে মিহিকে চুপ করে দিয়। মিহি অভ্রের হাত সরিয়ে দেয়। গিয়ে বেডে শুয়ে পড়ে।
অভ্র ও গিয়ে মিহির পাশে শুয়ে পড়ে।
মিহি এবার পোরা দমে অবাক। কী হচ্ছে কী। জীন ভর করলো নাকি, হয়েছি কী আজকে।

–আপনি আমার বেডে শুয়েছেন কেনো।

–আমার বউ এর পাশে শুয়েছি, আপনাকে বলার কী আছে।

–কে আপনার বউ?

–মিহি।

–আমি কারো বউ না।

–ওহ আপনার নাম বুঝি মিহি, আমার বউ এর নাম ও মিহি।

–তো আপনার বউ এর কাছে যান, আমার পাশে আসছেন কেনো।

–বউ এর পাশে ই আছি।

মিহি এবার বেড থেকে উঠে যেতে নিলে ই অভ্র টান দিয়ে অভ্রের বুকের উপর ফেলে দেয়। ওষ্ঠদ্বয় দুটো ছুয়ে দেয়। মিহি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। স্পর্শটা নিতে পাড়ছে না। আর অভ্রের এতোটা চেঞ্জ হওয়া টা ও নিতে পাড়ছে না।

বেশ কিছুক্ষন পড় অভ্রের পাশ থেকে উঠে পড়ার সুযোগ হলো। উঠে সোজা অভ্রের মায়ের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
অভ্র লজ্জায় আর মায়ের রুমে যায়নি।

–কী হয়েছে মা, রাগ করে চলে এসেছো বুঝি।

—কিছু না মা, ঘুমাবো।

মা মুখে হাসি রেখে আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।
আমি ও মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ালাম।

_____________________________

সকাল বেলা পাখির কিচিরমিচির এর শব্দ ঘুম ভাঙ্গলো, বাসায় বাগান থেকে এই শব্দ আসছে, বাগানটা বড় হওয়ার গ্রামের কিছু দৃশ্য উপভোগ করার যায়। মিহি ঘুমাচ্ছে পাশে টেবিলে অভ্র কফির মগটা রেখে চেয়ার টেনে মিহির দুহাত নিজের সামনে এনে হাত দুটো ধরে বসে আছে। মিহির দিকে তাকিয়ে হাসছে।

“প্রথম দেখার প্রেম তুমি
….. আমার প্রথম ভালোবাসা
আমার এই হৃদয় দিয়ে স্পর্শ করবো
তোমার ভালোবাসা

অভ্র মিহির কানের কাছে গিয়ে কথাগুলো বলে,

অভ্রের মুখ থেকে এমন কথাগুলো শুনে চোখ মেলে তাকায় মিহি, সাথে সাথে হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। অন্য দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়ে,

–মিহি কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছি, খাবেন না।

তোর কফি তুই খা হনুমান। অসভ্য, লুচু তুই মনে মনে কথাগুলো বললো মিহি।

–কথা বলছেন না কেনো আপনি??

মিহি এবার বেড থেকে নেমে নিজের রুমে দিকে চলে যায়।

————

মিহির আম্মুকে কালকে অনেকবার কল দিয়েছে মিহি। মিহিকে নিয়ে যাওয়া জন্য। মেয়ের এমন অস্থিরতা দেখে মিহির আম্মু সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। মেয়ের জন্য খুব টেনশন হচ্ছে । তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ই রওনা দিয়েছে।

–মিহি তুই একটু বেশি ই করছিস মনে হচ্ছে না।

–মিনতি যেটা জানিস না, তা নিয়ে কথা বলবি না।

–একটা থাপ্পড় দিবো। আমি তোর এক দিনের হলে ও বড়। এমন ব্যবহার কেনো করছিস মিহি। কালকে রাতে মা তোর জন্য ঘুমাতে পাড়েনি। আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে ই রওনা দিয়েছে।

মিহি কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

হঠাৎ মিহির এই অগ্নিমুখ অভ্রের আর দেখতে ভালো লাগছে না। তাই সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে বের হলো। ফুল,চলকেট,আইসক্রিম কিনতে। ফুল প্রত্যেকটা মেয়ের ই পছন্দ মিহির ও পছন্দ হবে। ড্রাইভ করছে আর মিহির কথা ভাবছে।

মিনতিকে যেদিন প্রথম দেখতে গিয়েছিলো তখন ই মিহিকে অর্ণব এর চোখে পড়ে, অবশ্য মিহি সামনে আসেনি পর্দা আড়াল থেকে বার বার উঁকি দিচ্ছিলো। বারবার পর্দার আড়াল থেকে কেউ একজন দেখছি মনে হচ্ছে তাই অভ্র একটু আড়ালে চলে গিয়েছো। যখন ই মিহি আবার উঁকি দেয় দেখার জন্য, মুহুর্তে ই অভ্রের ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু অভ্র অন্য কাউকে ভালোবাসতো তাই মিহির দিকে দ্বিতীয় বার ফিরে তাকায়নি।

——–

মিহি সব কিছু ভুলে আবার নতুন করে ভার্সিটিতে ভর্তি হবে, নতুন করে জীবন সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মায়ের সাথে বাড়িতে এসে ই বিছানায় শুয়ে পড়লো। দুচোখ ঘুম ভর করছে। সারা রাস্তা মায়ের সাথে একটা কথা ও বলেনি। কতো প্রশ্ন করেছে কিন্তু কোনো কথা ই মিহি মাথায় ডুকেনি, মিহিকে এমন ভাবলেশহীন দেখে আর কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি মিহির মা। এসব ভাবতে ভাবতে ই ঘুমের রাজ্যে ডুবে যায় মিহি।

অভ্র বাসায় আসে হাতে ফুল, চকলেট বাক্স,আইসক্রিম বাক্স একটা শপিং ব্যাগে মিহির জন্য প্লাজু আর ট্রি-শার্ট এনেছে। কারন এই ড্রেসটা মিহি বাবার বাসায় পড়তে দেখেছে।
কিন্তু বাসার ভিতর পা দিতে ই একরাশ হতাশা অভ্রকে আঁকড়ে ধরলো। অভ্র বুঝতে পারেনি মিহি সত্যি ই চলে যাবে তাও এতো সকালে।

কালকে যখন গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলো, পরক্ষণেই যখন খুজতে আসে তখন মিহিকে পাইনি অভ্র ঐ জায়গাতে। পাগলের মতো চারপাশে খুজতেছি। বুকের বা পাশে হালকা ব্যাথা অনুভব হচ্ছিল মিহির শূন্যতাটা ঠিক তখন বুঝতে পেরেছে। আজকে আবার সেই একই শূন্যতা বিরাজ করছে অভ্রের মনে।

_________

মিহি চোখ খুলে চারপাশ দেখছে, এই জায়গাটা তো বড্ড অচেনা লাগছে। এটা তো সেই রুম না যেখনে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এটা কোথায় আর আমার হাত পা এমন বাধা কেনো। হে আল্লাহ তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে আনলে। আমাকে কে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসলো, কথাটা বলে ই পিছনে ঘুরে তাকাতে দেখলো…….
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৮

মিহি নিচের দিকে তাকিয়ে অভ্রের সামনে দাড়িয়ে আছে, শত ডাকা শর্তে ও উপরের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। অভ্র এভাবে কিডন্যাপ করার অভিনয় করবে মিহির তা জানা ছিলো না, মিহি খুব ভয় পেয়েছে।

–মিহি প্লিজ ক্ষমা করে দেন।

–আমি বাসায় যাবো।

— আমাকে ক্ষমা না করলে বাসায় যেতে দিবো না।

–আম্মু অনেক টেনশনে করবে, আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না।

–আমি আন্টিকে বলে এসেছি।

–আপনি এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো।

–আমার বউ আমি যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যাবো, অনেক হয়েছে মিহি আমি আর এগুলো নিতে পারছি না।

–না নিতে পারলে আমার সামনে আসবেন না।

এবার অভ্র বেশ রেগে চেয়ার থেকে উঠে মিহির দিকে এগিয়ে গেলো। মিহির গাল চেপে ধরে মুখটা উপরে তুলে বললো,

–খুব রাগ তোর তাই না, আমি কথা বলছি তুই ভাব দেখাচ্ছিস, অনেক হয়েছে, দেখ আজকে কী করি। এতো দিন দূরে থাকতে দিয়েছিলাম, এখন নিজের সাথে জড়িয়ে রাখবো সব সময়। আজকে বুঝবি অভ্র কী জিনিস

বলে ই মিহিকে ধাক্কা দিয়ে বেডের উপর ফেলে দিলো নিজরে শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে মিহির দিকে এগিয়ে যায়, এতোটা কাছে চলে যায় দুজনের নিশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে ,মিহি ভয়ে চোখগুলো খিঁচে বন্ধ করে নেয়, ঠোঁট জোড়া দুটো কাপতে থাকে। অভ্রে মিহির হাত ধরেতে ই, মিহি জোড়ে চিৎকার করে কেদে উঠে।
মিহির কান্নার শব্দে অভ্র দূরে সরে আসে।

–আজকে কিছু করলাম না। যদি নেক্সট টাইম আবর কোনো দিন আপনি এমন করেন তাহলে বুঝবেন কী হয়।

অভ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়। মিহি কান্না ও বন্ধ হয়ে যায়। মূলত কান্না করেছিলো অভ্র যেনো স্পর্শ না করে। এটা কোথায় আছে মিহি কিছু ই বুঝতে পারছে না। রুমটা সুন্দর ই, বেশ সাজানো গুছানো। মিহি চোখ ভুলিয়ে চারপাশ দেখতে লাগলো।

বেডের পাশে ড্রেসিং টেবিলের উপর চোখ পড়তে ই দেখলো, ফুল দেখা যাচ্ছে। ফুল বরাবর ই মিহি ভালো লাগা। ফুলগুলো হাতে নিতে ই আরো কয়েকটা ব্যাগ চোখে পড়লো,

একটা ব্যাগ খুলতে ই তিনটা চকলেট বাক্স বের হলো। মিহি একটা বাক্স খুলে চকলেট খেতে খেতে অপর ব্যাগটা খুলে দেখলো আইসক্রিম, কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে আইসক্রিম গুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছুটা মন খারাপ করে পড়ের ব্যাগটা খুলতে ই দেখে প্লাজু আর ট্রি-শার্ট এটা দেখে মিহি এবার হেসে ফেলে। যা ই হক আমার দিকে তো অভ্রের ভালো ই খেয়াল আছে।

–আপনার দিকে আমার কোনো খেয়াল ই নেই।

অভ্র রুমে ডুকতে ডুকতে এই কথাটা বললো,

–আপনি এই ব্যাগগুলো খুলেছেন কেনো।

–এইখানে রাখা ছিলো তাই খুললাম।

–আপনি তো বেশ খাদক, বাক্স খুলে চকলেট খাওয়া শুরু করেছেন। এগুলো আপনার জন্য নাকি।

মিহি মুখে অসহায় একটা ভাব নিয়ে বললো,

–তাহলে কার জন্য।

–কার জন্য এটা আপনার জানার দরকার নাই, টাকা দিন এই যে আপনি এই রেপিং করা জিনিসগুলো খুলে নষ্ট করে ফেলেছেন। ব্যাগগুলো ও ছিড়ে ফেলেছেন। এখন এগুলোর টাকা দিন।

–না দিলে কী করবেন,

–একটু আগে কী জেনো করতেছিলাম।

—আচ্ছা আচ্ছা দিবো টাকা। তা কতো টাকা এই জিনিসগুলো।

–জিনিসগুলোর দাম যত ই হক এগুলো নষ্ট করার অপরাধে আপনাকে দশ হাজার টাকা ই দিতে হবে।

–এতো টাকা কেনো।

–জিনিসগুলো নষ্ট করেছেন কেনো। আপনি টাকাগুলো দিলে দেন নয়তো আমার কাজ আমি শুরু করে দেই, শার্ট এর বোতাম উপরের টা খুলে বললো,

— এই না, না, আমি টাকা দিবো।

–তাহলে এখন দেন।

–এখন কোথায় পাবো।

–তাহলে আমার কাছে বিকল্প একটা পদ্ধতি আছে মিসেস মিহি চৌধুরী।

–কী পদ্ধতি।

ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা স্টাম্প কালম বের করলো অভ্র। স্টাম্প এ লিখলো,

মিস মিহি অভ্রে চৌধুরীর কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ধার নিয়ে ছিলো। সময় মতো পরিশোধ করতে না পাড়ায় আগামী দশদিন মিস মিহি অভ্রের কথা অনুযায়ী উঠবে এবং বসবে। অভ্র যা বলে তাই ই করতে বাধ্য থাকবে, অভ্রের কথা ছাড়া ওয়াশরুম অব্দি যেতে পারবে না। উপর উক্ত একটা নিয়ম ভঙ্গ করিলে মিহি দশদিন পর বিশ হাজার টাকা জরিমানা সহ পরিশোধ করিবে।

–নিন সাইন করুন।

–এই আমি আপনার কাছ থেকে কবে টাকা ধার নিয়ে ছিলাম। আর আপনি মিস মিহি কেনো লিখেছেন। মিসেস মিহি চৌধুরী লিখেন।

–পরের আপনি আমার কাজ না করলে তো এই স্টাম্প কাউকে দেখিয়ে আপনার বিচার করতে পরবো না। তাই আমার বউ আপনি এটা উল্লেখ করলাম না।
বেশি কথা বললে কিন্তু আমার কাজ আমি শুরু করে দিবো।

–আপনার যে কী অবস্থা করি আমি দেখবেন,আমাকে ভয় দেখিয়ে আপনি সাইন করাচ্ছেন। আপনার মতো বজ্জাত মানুষ পৃথিবীতে আরেকটা আছে নাকি সন্দেহ। আল্লাহ আপনার বিচার করুক।

–তাহলে আপনার সাইন করার দরকার নাই, আমার দশ হাজার টাকা দিয়ে দিন। এতো বদদোয়া নিয়ে আমি থাকতে চাই না।

–কোথায় সাইন করতে হবে বলেন।

মিহি মুখে বিরক্ত ভাব নিয়ে সাইন করে দিলো।
অভ্র মুখ টিপে টিপে হাসছে। এই দশদিন যদি তুমি আমার জন্য পাগল না হইছো তাহলে অভ্র চৌধুরী নিজের নামটা চেঞ্জ করে দিবে, মিহি পাখি। তোমার জন্য ই এনেছিলাম এই জিনিসগুলো গিফ্ট হিসেবে , তোমার গিফ্ট দিয়ে তোমাকে আমার ফাদে ফেললাম। মনে মনে কথাগুলো বলে স্টাম্প অভ্র ও সাইন করে স্টাম্প টা তালাবদ্ধ করে দেখে দেয়।মিহির দিকে তাকিয়ে বলে “লাভ ইউ লট মাই টিয়া পাখি”

চলবে,

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here