তোমাতে আসক্ত পর্ব ১৯

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি(রোকসানা)

পর্ব (১৯)

“”আপনি দরজা আটকাচ্ছেন কেন??””
“”দরজা খুলা রেখে কেউ ঘুমাই, অথৈ??””
“”হুম,আমি ঘুমাই। খুলে রাখেন বলছি।””

মাহির দরজাটা আটকে দিয়ে অথৈর কাছে এসে বললো,

“”তখন তো একা ঘুমাতেন। ভয় পেলে যাতে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে যেতে পারেন। আর এখন তো স্বামীর সাথে ঘুমাবেন। ভয় পেলে আমাকেই জড়িয়ে ধরবেন।””

মাহির একটা চোখ টিপে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। অথৈকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। চেহারাটায় অন্যরকম আভা দেখতে পাচ্ছে মাহির। বেশ ভালো লাগছে। একটু একটু বোকা বোকাও লাগছে।

“”কি হলো ওখানে দাড়িয়েই রাত কাটাবেন? আসেন একটু লীলাবতীর গল্পে মেতে উঠি।””
“”আমি কি আপনার মতো মাতাল যে লীলাবতীর গল্পে মেতে উঠবো??””
“”মাতালই তো আমি তো আপনার প্রেমে কবেই মাতাল হয়ে গিয়েছি। মাঝে মাঝে এতো নেশা উঠে নিজেকে আর কন্ট্রোলে রাখতে পারিনা। এখন আসুন তো একটু আপনাকে মন ভরে দেখি।””
“”না আমি কোথাও যাবোনা। আপনার মতো মাতালের সাথে আমি ঘুমাবোনা। আমি অন্যরুমে ঘুমাবো।””
“”আচ্ছা চলেন তাহলে অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাই।””
“”ধুর,আপনি বুঝতে পারছেননা আমি আপনার সাথে ঘুমাতে চাচ্ছিনা??””
“”এই মুহুর্তে আপনার নেশায় ডুবে আছি। আর কিছু বুঝার ক্ষমতায় নাই।””

অথৈ মাহিরের চোখের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো তার চোখ অন্যদিকে ডুবে আছে। অথৈ চোখদুটো ছোট করে নিজের জামাকাপড় একটু টান দিয়ে ঠিক করে নিলো। তারপর বিছানার দিকে এগিয়ে মাহিরের পাশের বালিশটা নিয়ে মেঝেতে রাখলো।

“”বালিশ নিচে ফেললেন কেন? আপনার কি নিচে ঘুমানোর প্লেন? আমি কিন্তু আপনার প্লেন সফল হতে দিবোনা,অথৈ। এতো কষ্ট করে বউকে তুলে আনলাম কি নিচে ঘুমোতে দেওয়ার জন্য?””
অথৈ বিছানায় উঠে এসে মাহিরের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“”না,এতো কষ্ট করে বউকে তুলে নিয়ে আসছেন আপনি নিচে ঘুমানের জন্য।””

অথৈ মাহিরকে সমানে ধাক্কাতে লাগলো,

“”যান নিচে যান। কত্ত শখ আমার সাথে ঘুমাবে। আপনার শখ আমি মুড়ি ভর্তার সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিবো। যান নিচে যান।””
“”আরে কি করছেন,পড়ে যাবো তো।””
“”পড়ে গেলেই তো বাচি। একদিন দেখবেন আপনাকে বাসার ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিছি।””

অথৈর শেষ ধাক্কা সামলাতে না পারায় মাহির ঢুপ করে নিচে পড়ে গেলো।মাহির দ্রুত উঠে অথৈর কাছে চলে এলো।

“”এখন যদি আমার কোমড়টা ভেংগে যেতো তাহলে আপনি পালালে আবার তুলে আনতাম কিভাবে?””
“”আপনার শুধু কোমড় কেন হাত পা সব ভেংগে ফেলবো যদি এখন নিচে না যান।””
“”এমন করেন কেন? একটু আপনার সাথে ঘুমালে কি এমন হয়?””
“”আপনি যাবেন নাকি?””

মাহির অথৈর দিকে ঝুকে পড়লো,

“”নাহলে কি করবেন হুম?””
“”নাহলে””
“”হুম,বলেন কি করবেন?””

মাহির বেশ খানিকটা অথৈর দিকে ঝুকে পড়তেই অথৈ বালিশের সাথে চেপে গেলো। মাহির মুগ্ধ নয়নে অথৈর দিকে তাকিয়ে আছে। অথৈর চোখের পাপড়িগুলো কাপছে। মাহিরের দিকে তাকালেও ঠিকমতো তাকাতে পারছেনা। ঝট করে চোখটা নামিয়ে নিচ্ছে। গালগুলো লাল টকটক রঙ ধারন করেছে বুঝাই যাচ্ছে অথৈ বেশ লজ্জা পাচ্ছে। যা মাহিরকে আরো বেশি আসক্ত করে তুললো। মাহির তার ডান হাতটা দিয়ে অথৈর চুলগুলো হাতড়িয়ে নিলো। গালে ছুতে যাবে তখনি অথৈ ফেকফেক করে কান্না করে দিলো,,

“”আজ যদি আরমান থাকতো ও আমার সাথে এমন জবরদস্তি করতোনা। ও ঠিক ভালো ছেলের মতো মেঝেতে গিয়ে শুয়ে থাকতো। ও আমাকে কত ভালোবাসতো।””

অথৈ দুহাত দিয়ে চোখ মুছার মতো করে চোখ ঘষতে লাগলো আর নাক টানতে লাগলো। এমন সিচুয়েশনে অথৈ আরমানকে টেনে আনবে মাহির ভাবতে পারেনি। মনে মনে বেশ রাগ হলো। চোখগুলো লাল পানি দিয়ে ভিজে গেলেও বাইরে আসতে পারছেনা। শুধু আরমানের ভালোবাসাটায় দেখলেন আমার ভালোবাসাটা কি আপনার চোখে পড়েনা?!!!

মাহির অথৈকে ছেড়ে দিয়ে নিচে গিয়ে শুয়ে পড়লো। বেশ কষ্ট হচ্ছে তার। আমি কি কখনো আরমানের মতো অথৈর মনে জায়গা করতে পারবো?? আমার ভালেবাসা কি অথৈর মন থেকে আরমানকে ভুলাতে পারবেনা?? আমার ভালোবাসা কি এতই নগন্য?? মাহির নিজের হাতটা দিয়ে চোখটা ঢেকে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

অথৈ অনেক্ষনযাবত এপাশ ওপাশ পায়চারী করতে লাগলো কোনোভাবেই ঘুম আসছেনা। চোখ বন্ধ করলেই মনে হচ্ছে তার মুখের উপর কোনো এক রাক্ষস তার লাললাল চোখ দিয়ে তাকে গিলে খাচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে রাক্ষস তার ইয়াবড় নাক দিয়ে তার শরীরের মাংসের গন্ধ নিচ্ছে আর ভাবছে কোন জায়গা থেকে খাওয়া শুরু করবে। নাহ! এভাবে কি ঘুমানো যায়?? অথৈ বিছানায় উঠে বসে চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলো। কেথাও কিছু দেখতে পাচ্ছেনা। মাহিরের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো মাহির থমকে থমকে কেমন করে জানি কাপছে। অথৈ বেশ অবাক হলো,মনে হলো হয়তো শীত লাগছে তাই কাপছে। নিজের বালিশের পাশেই একটা চাদর নিয়ে মাহিরের গায়ে মেলে দিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।

অথৈর নিজের চুল ছিড়ে খেলতে ইচ্ছে করলো। ঘুমে চোখ ভার হয়ে জ্বালা করছে কিন্তু কোনোভাবেই ঘুম আসছেনা। এ কেমন যন্ত্রনায় পড়লাম আমি? মনের ভেতরে এক চাপাআর্তনাদ শুনতে পাচ্ছে অথৈ। মাহিরের দিকে তাকিয়ে বেশ হিংসে হলো,ইশ! কেমন আরামে ঘুমাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি!!!

চারপাশে রঙবেরঙের গাছপালা দেখতে পেলো মাহির। যার মধ্যে লাল,নীল,সবুজ,বেগুনী এমন কি কালো কালারেরও বেশ ফুল দিয়ে ভরে আছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে কালারের ফুল ফুটে আছে সেই কালারেরই গাছের রং ধারন করে আছে। এমন আশ্চর্য আর এতো বড় ফুল গাছ মাহির এর আগে দেখেছে বলে মনে করতে পারছেনা। হঠাৎ খেয়াল করলো প্রত্যেকটা ফুল থেকে বিভিন্ন কালারের অথৈর মতো পরীরা বের হচ্ছে। একে একে সব পরী মাহিরকে ঘিরে ফেললো আর হাসাহাসি করতে লাগলো।

“”মাহির,আমাকে একটু ভালোবাসবে?””
“”মাহির,আমাকে একটু ভালেবাসবে??””

চারপাশ থেকে হাজারও অথৈ পরীরা মাহিরকে ডাকছে। আমি তো একটা অথৈকেই ভালেবাসতে পারলামনা এতগুলো অথৈকে কিভাবে ভালেবাসবো?? বেশ চিন্তাই পড়ে গেলো মাহির। হঠাৎ কালো কালারের পরীটা মাহিরকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো আর চিৎকার করতে লাগলো,

“”তুই আমাকে ভালেবাসা দিতে পারিসনি,তোর বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই।””

আরেকজন বলে উঠলো,

“”চলো ওকে পাহাড় থেকে ফেলে দেই। ওর বেচে থাকার কোনো মূল্য নাই।””

সবাই মাহিরকে উচু করে নিয়ে বিশাল এক পাহাড়ে উঠে গেলো। আর সেখান থেকে মাহিরকে নিচে ঢিল মেরে ফেলে দিলো। মাহির নিচে পড়তে পড়তে দেখতে পেলো আরমান তার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপভাবে হাসছে। মাহির আর সহ্য করতে পারলোনা। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো,,,

“”আরমান,তোকে আমি ছাড়বোনা।””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here