#তোমাতে আসক্ত
নীলচুড়ি (রোকসানা)
পর্ব (২)
মাহির দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। কোথায় শুয়ে রাত কাটানো যায় টেনশনে পড়ে গেছে। একবার কি বাবাকে কল দিবো?? না থাক,উনি আবার অস্থির হয়ে পড়বেন। কিন্তু অথৈর আচরনতো সুবিধার লাগছেনা। বাসর ঘরে জামাইকে ঢুকতে দিবেনা এটা কেমন কথা? আমি কি উনাকে খেয়ে ফেলবো??
“”আজিজ এখনি একটা বালিশ,একটা চাদর নিয়ে আসো।””
“”স্যার এগুলো দিয়ে কি হবে?””
“”Shut up. বেশি কথা বলো কেন? যা করতে বলছি তাই করো।””
এমন একটা রাতও যে কাটাতে হবে ভাবতে পারেনি মাহির। ফ্লোরেই গালে হাত দিয়ে বসে পড়লো। বিয়ের প্রথম রাতেই যে মেয়ে আমাকে বাইরে ফেলে রেখেছে আর জীবন না জানি কোথায় কোথায় ফেলে রাখবে? আমি কিভাবে একে নিয়ে সংসার করবো? আমার কি বিয়ে করাটা ভুল হয়েছে নাকি ভুল মেয়েকে বিয়ে করেছি? আচ্ছা ওই চিঠিতে উনি আমাকে কি বলতে চেয়েছিলেন? ওইটা আমার পড়ার দরকার ছিলো। এত বড় একটা ভুল আমি কিভাবে করলাম? এমনও তো হতে পারে উনি অন্যকাউকে???
ভাবতেই মাহিরের বুকটা কেপে উঠলো। যদি সত্যিই এমন হয়ে থাকে আমি কি নিজেকে সামলাতে পারবো? যার মুখটা এখনো দেখলামনা তাকে নিয়ে এতটা উতলা হচ্ছি কেন আমি???
মাহির দরজার সামনে খানিকটা জায়গা দখল করে চাদর পেতে শুয়ে পড়লো। আশেপাশে তাকিয়ে বুকে ফু দিয়ে নিলো। মনে যথেষ্ট সাহস নিয়ে চোখটা বন্ধ করে নিলো মাহির। সারাদিন অস্থিরতা,টেনশন,ভয় সবকিছু মিলিয়ে ক্লান্ত শরীরটা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো।
ভোরের আযান কানে আসতেই মিটমিট করে চোখ মেললো মাহির। কিন্তু এটা সে কি দেখছে? মনে হচ্ছে কোনো দেবী এসে তার পেটের উপর পা দিয়ে আছে, চোখদুটোতে আগুনের ফুলকি নিয়ে এসেছে,একটা ত্রিশুল তার বুকের উপর তাক করে রেখেছে। একটু নড়চড় করলেই তার বুকের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। মাহির সাথে সাথে চোখটাকে বন্ধ করে নিলো। ঘুমের ঘরে হয়তো স্বপ্ন দেখছে। কাল কি হয়েছিলো সবকিছু গুছিয়ে নিলো মাহির। কাল যে তার বিয়ে হয়েছে সেটাও চোখে ভেসে উঠলো। মিনিট দুয়েক চোখ বন্ধ করে নিজেকে সস্থি দিয়ে আবার এক চোখ মেললো, আসলেই কি স্বপ্ন নাকি সত্যি তাই যাচাই করার জন্য।
চোখটা মেলেই মাহির আবার দেবীরুপে একটা মেয়েকে নিজের উপর আবিষ্কার করলো কিন্তু এবার ত্রিশুল না হাতে একটা ছুরি। যা মাহিরের গলায় এমনভাবে ধরে আছে মনে হচ্ছে এখনি আল্লাহু আকবার বলে তাকে জবাই করে দিবে। মাহির একচোখ রেখে দুইচোখ এমনভাবে মেললো যেন চোখদুটো এখনি খুলে যাবে।
“”আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে বিয়ে করার?””
“”আপনিই কি অথৈ? এমন পাগলামি কেন করছেন?””
“”কিহ! আমি পাগল? আমাকে আপনার পাগল মনে হলো? আপনাকে তো এখনি..””
“”আরে আরে কি করছেন!! আমি করে যাবো তো। আমি মরে গেলো তো আপনি বিধবা হয়ে যাবেন।””
“”আমি বিধবা হলে আপনার কি? আমি আপনাকে এখনি খুন করে ফেলবো।””
অথৈ চাকুটা হালকা নাড়াতেই মাহিরের গলার চামড়াই লেগে গেলো। মাহির অথৈর সাথে হাতাহাতি করে ছুরীটা নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিলো। হাতাহাতির পর্যায়ে অথৈর উপরে অবস্থায় করছিলো মাহির। অথৈর মুখের কাছে নিজের মুখটা নিলো। চোখে চোখ রেখে বললো,
“”যার চেহারায় এত মায়া,এতো অভিমান,তার চেহারায় এমন কঠিন চেহারা মানায়না খুনিরানী। ছুরী দিয়ে কেন আপনার সৌন্দর্য দিয়েই তো আমাকে খুন করতে পারেন। এই যে টানা টানা চোখের মাঝে অতলস্পর্শী সমুদ্র বসবাস করছে সেখানে আমাকে ডুবিয়ে মেরে ফেলতে পারেন। এত কিছুর মাঝে আপনি এই সামান্য আপেল কাটার ছুরিকে কেন গ্রহন করলেন? নিজেকে অপমান করার জন্য নাকি নিজেকে ছোট করার জন্য??””
“”ছি!ছি!!ছি!!! মাহির, বিয়ের একদিন যেতে না যেতেই বউয়ের উপর এমন হামলা চালিয়ে দিলি? তাও আবার এমন রুমের বাহিরে ফ্লোরে গড়াগড়ি করে? আমার তো সন্দেহ হচ্ছে যে তুই আমার ভাগিনা।”””
মাহির তাড়াতাড়ি অথৈর উপর থেকে উঠে এলো। মাথাটা নিচু করে বিড়বিড় করতে লাগলো,
“”আমি হামলা করার সুযোগ কই পেলাম খালামনি? বউই তো হামলা করে বসলো!!””
“”কিরে কি বিড়বিড় করছিস হে? বিয়ে করে কি লজ্জা সরম সব খেয়ে ফেলছিস? দিন দুপুরে এমন জনসম্মুখে বউয়ের উপর শুয়ে আছিস?””
“”খালামনি খালু তেমাকে কল করতে বলছিলো।করেছে?””
“”ওমা সেকি রে? আমাকে কল না দিয়ে তোকে কেন বললো কল দিতে? আমাকে কল দিলে কি তার জাত যাবে? দাড়া ওর পুলিশিগিরি আমি ছুটাচ্ছি।””
খালামনির প্রস্থানে মাহির হাফ ছেড়ে বাচলো। একটু আগে কি ঘটে গেলো ভাবতেই মাহির বুকে কয়েকটা ফু দিয়ে দিলো। নিজের চারপাশে কোথাও অথৈকে দেখতে না পেয়ে অথৈর রুমে ঢুকে গেলো। কিন্তু রুমেও কাউকে দেখতে পেলোনা মাহির। খুনিরানি কি তার খুন রাজ্যে চলে গেলো?
“”মাহির বাবা এখনো ফ্রেস হোসনি? অথৈ কখন থেকে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করে আছে। যা তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে আয়।””
“”জ্বী,বাবা।””
সাওয়ার করতে গিয়েই মাহিরের গলা জ্বালা করতে লাগলো। পানিতে জ্বালাটা বেড়ে গেছে। দ্রুত সাওয়ার নিয়ে ডায়নিং রুমে পৌছালো।
খালামনি তখন থেকে অথৈর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। অসস্থিতে পড়ে গেলো অথৈ। খাওয়ার সময় তাকিয়ে থাকলে কি খাওয়া যায়? ইচ্ছে করছে উনার মাথায় গরম কড়াই বসিয়ে ডিম ভাজি করে খাই, অসহ্য।
মাহিরের ঠিক সামনের চেয়ারটাতেই অথৈ বসে আছে। কিন্তু সামনে তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা। এ দিকে খালামনির আচরনে বেশ লজ্জিত হচ্ছে। এভাবে তাকিয়ে কি দেখছে খালামনি???
“”খালামনি খাবারটা খান ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।””
অথৈর ডাকে হুশ এলো মিসেস ইরানীর। খানিকটা লজ্জা নিয়ে নিজের খাবারের প্লেটে মনোযোগ দিলেন।
“”বাবা, আমাকে এখনি রওনা দিতে হবে। তোমাকেতো বলেছিলাম কাল আমার ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে জয়েনের ডেট। অনেক গোছগাছের ব্যাপার আছে। আমার বাসায় যাওয়াটা জরুরী।””
এনামুল হক মাহিরের কথার সম্মতিতে মাথা নেড়ে অথৈর দিকে তাকালেন।
“”অথৈ মা,খাওয়াটা শেষ করে রেডি হয়ে নে।””
“”কেন বাবা?””
“”কেন আবার কিরে পাগলি? বিয়ে হলো স্বামীর সাথেই তো তোর পথ চলতে হবে।””
অথৈ মাহিরের দিকে চোখ রাঙিয়ে উঠে গেলো।
মাহির অনেক্ষন যাবত গল্প করছে শ্বশুড়ের সাথে আর একটু পর পর হাতের ঘড়িটাই চোখ বুলাচ্ছে। কিন্তু অথৈর নিচে নামার কোনো লক্ষণই দেখছেনা।
“”বাবা,আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে অথৈকে একটু ডেকে দিবে?””
“”তুই নিজেই গিয়ে ডেকে নিয়ে আয়না।””
মাহির সোফা ছেড়ে উপরে উঠে এলো। সিড়ি যত বেয়ে উঠছে হৃদয়ে কম্পন তত বাড়ছে। অবশেষে রুমের সামনে এসেও ভেতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছেনা। ভিতরে না গিয়ে বাইরে থেকে ডাকলেই বেশি ভালো হয়।
“”আপনার রেডি হতে আর কতক্ষন লাগবে? আজিজ গাড়ীতে বসে ওয়েট করছে। লেট হয়ে যাচ্ছে। কাইন্ডলি তাড়াতাড়ি করলে খুশি হ……””
মাহির আর কিছু বলতে পারলোনা। কোনোএক দুর্যোগের মতো অথৈ ছুটে এসে মাহিরের কলার টেনে ধরলো। কিছু বুঝার আগেই মাহিরের শার্ট টেনে ছিড়ে ফেললো অথৈ!!!
চলবে