#তোমাতে আসক্ত
নীলচুড়ি (রোকসানা)
পর্ব (৩)
কোনো এক দুর্যোগের মতো অথৈ মাহিরের কাছে ছুটে এলো। মাহির কিছু বুঝার আগেই অথৈ মাহিরের শার্ট খামচে ছিড়ে ফেললো। অথৈ রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে রইলো,,
“”আপনাকে খুন না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নাই। আমি আপনার সাথে যাবোনা। বের হয়ে যান বলছি।””
অথৈ আবার দুর্যোগের মতো রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিলো। কি হলো মাহির কিছুই বুঝলোনা শুধু এটা বুঝলো তার উপর দিয়ে কিছুক্ষন আগে একটা বড়সড় ঝড় বয়ে গেলো।
“”আজিজ ইমিডিয়েটলি একটা শার্ট নিয়ে আসো।””
“”জ্বী স্যার।””
মাহির ফোনটা রেখে নিজের শার্টের উপর কিছুক্ষন তাকিয়ে শোকাহত নিশ্বাস ছাড়লো। আমার এক সপ্তাহ ঘুরে ঘুরে আনা শার্টের কি অবস্থা হয়ে গেলো? এত দামী শার্টটা একটা মেয়ের জোরের কাছে হেরে গেলো? ছি!ছি! লোকটা কি আমাকে দু নাম্বার শার্ট দিলো নাকি????
“”স্যার আপনি এমন পাগলের বেশ ধরছেন কেন?””
“”তোমাকে কামড়ানোর জন্য।””
“”এসব কি বলেন স্যার? তাহলে আমার বউয়ের কি হবে? ও তো কাদতে কাদতে ২০৬ বার হার্টফেল করবে!!””
“”ইডিয়েট মানুষ একবার হার্টফেল করলেই মৃত্যুর দুয়ারের কাছে চলে যায় আর তোমার বউ ২০৬ বার কিভাবে হার্টফেল করবে??””
“”আমার বউ তো কই মাছ স্যার। কই মাছ কেটে মশলা মাখিয়ে যখন তেলে ছাড়া হয় তখনো লাফায় আমার বউ তার থেকে বেশি শক্তিশালি।””
“”এত কথা কিভাবে শিখছো তুমি? যাও গাড়িতে গিয়ে বসো আমি আসছি।””
“”স্যার মেম যাবেনা?””
“”না,তোমার মেমেরে ভুতে ধরছে। ভূত না ছাড়ানো পর্যন্ত সে সংসার করবেনা বলছে।””
“”আসতাগফিরুল্লাহ। তাহলে তো কবিরাজ ধরতে হবে।””
“”আগে গাড়ীতে গিয়ে হ্যান্ডেল ধরো।””
মাহির শার্টটা চেন্জ করে গুটি গুটি পায়ে আবার নিচে চলে আসলো।
“”মাহির বাবা,অথৈ কই?””
“”বাবা,হঠাৎ করে বিয়ে হলো তো,ওকে বরং কয়েকদিন পরে এসে নিয়ে যাই? আমি নিজেও দুইতিন ধরে একটু বিজিই থাকবো। আর আমার বাসায় তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই। অথৈ বিরক্ত হবে। আমি নাহয় কিছুদিন পরে এসে নিয়ে যায়?””
এনামুল হক মুখে ম্লান হাসি নিয়ে বললো,
“”তুই গাড়িতে গিয়ে বস,আমি আসছি।””
মাহির কিছুটা মন খারাপ করে নিলো। বাইরে বেরিয়ে নিজের শ্বশুড়ের জন্য ওয়েট করতে থাকলো।
“”বাবা, সাবধানে যাস। আর অথৈ মামনিকে দেখেশুনে রাখিস।””
মাহির বেশ অবাক হয়েই গাড়িতে এসে বসলো। পাশেই অথৈ এসে বসে রয়েছে। সামনের আয়নায় অথৈর মলিন মুখটা দেখতে পেলো। এই মুখটা এতো মলিন হয়ে আছে কেন? কিছুক্ষন আগেও সে যাকে দেখেছিলো এটাই কি সে অথৈ? এখন তো বেশ চুপচাপ হয়েই বসে আছে। তাহলে মাঝে মাঝে অমন বিহেভ কেন করে? কি সমস্যা? ওকে ভুতে টুতে ধরলোনাতো? আমি কি একবার কবিরাজের খোজ করবো? নাকি বাবার সাথে এ ব্যাপার নিয়ে কথা বলবো???
হঠাৎ পাশে তাকাতেই দেখলো অথৈ ঘুমিয়ে পড়েছে। বেশ আনন্দ অনুভূতি হলো মাহিরের। যাক এবার একটু শান্তিতে নিজের বউকে দেখার সুযোগ পেলাম। একটু গাঢ় নজর দিতেই অথৈ টুপ করে তাকালো।
“”আপনার লজ্জা করছেনা এভাবে একটা ঘুমন্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন?””
“”….””
“”ইচ্ছে করছে আংগুল দিয়ে আপনার চোখের মনিদুটো খুলে নিয়ে আসি। তারপর আপনার মাথাটা কেটে,গলায় সে মনিদুটো বসিয়ে দেয়।””
“”আজব তো,আপনি আমাকে খুন করতে চাচ্ছেন কেন? আমি কি করেছি?””
“”….””
অথৈ মাহিরের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রাগে ফুসতে লাগলো। বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে মাহিরের কাছে এগিয়ে এলো। মাহিরের টাইটা টেনে ধরে বললো,
“”আমাকে বিয়ে করেছেন এটাই আপনার সবথেকে বড় অপরাধ। আপনার জন্য একটা ছেলে ছেকা খেলো।আপনি ভাবতে পারছেন? আমি একজনের প্রফিস ভেংগে ফেলেছি।””
অথৈ কথাগুলো শেষ করে নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়লো। রাগে প্রচন্ড গরম লাগছে। মাথার চুল থেকে ঘাম বেয়ে বেয়ে পড়ছে। চুলগুলো খোপা করে নিলো। উরনাটা খুলে হাত দিয়ে বাতাস করতে লাগলো। কিছুক্ষণ বাতাস করে মাহিরের দিকে তাকাতেই মনে হলো তার নজরটা সুবিধার না। তাড়াতাড়ি ওড়নাটা বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
“”ওই ড্রাইভার গাড়িতে এসি নাই? আমার যে গরম লাগছে বুঝতে পারছোনা?””
আজিজ আহত কন্ঠে বললো,
“”মেম আমি তো ড্রাইভার না। আমি স্যারের এসিসট্যান্ট।””
“”তাহলে গাড়ী চালাচ্ছো কেন? গাড়ী থামাও। এখনি।””
অথৈর চিল্লানির জ্বালায় আজিজ গাড়ীটা থামিয়ে দিলো।
“”কি হলো মেম,গাড়ী থামাতে বললেন কেন?””
অথৈ মাহিরের দিকে তাকালো।
“”এখানে বসে আছেন কেন? নামুন বলছি।””
মাহির ঝটপট গাড়ী থেকে এলো।
“”এখন থেকে আপনি গাড়ী চালাবেন।””
অথৈর কথা শুনে আজিজ দাত কেলিয়ে হাসতে লাগলো। আজিজের হাসি দেখে মাহিরের ইচ্ছে হলো আজিজের দাতগুলো ইট দিয়ে বাড়ি মেরে ভেংগে ফেলতে তারপর সে দাতগুলো মালা গেথে গলায় পড়িয়ে দিতে।
মাহির সুড়সুড় করে গাড়ীর ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে পড়লো। কয়েক বছর হলো নিজে গাড়ী চালাইনা। চালাতে পারবো তো?
“”আজিজ ভাই আপনি আমার পাশে এসে বসেন।””
“”মেম আমি স্যারের কাছেই বসি?””
“”আমি আমার পাশে বসতে বলছি। আপনি আসবেন নাকি…””
আজিজ অথৈর পাশে গিয়ে বসে পড়লো। স্যার ড্রাইভিং সিটে আর আমি স্যারের বউয়ের পাশের সিটে। বেশ লজ্জা লাগছে। আমার বউ যদি জানতে পারে আমার কল্লা আর আমার গলায় অবস্থান করবেনা।
“”কি হলো আপনি গাড়ী চালাচ্ছেননা কেন,ড্রাইভার?””
মাহির গাড়ী স্টার্ট করে দিলো। আমি ড্রাইভার না? নিজের বরকে ড্রাইভার বানানো? এতই যখন ড্রাইভার পছন্দ ড্রাইভারকেই বিয়ে করতেন আমাকে কেন করছেন? আমি কি আপনার হাত পা ধরে বলছিলাম যে আমাকে বিয়ে করুন?
বেশ মনোযোগ দিয়েই মাহির গাড়ী চালাতে লাগলো। আর যাইহোক কোনো এক্সিডেন্টের মুখোমুখি হতে পারবেনা সে। এক্সিডেন্ট বেশ নিষ্ঠুর। হঠাৎ এক ভয়ানক দৃশ্য মাহিরের চোখে ভেসে এলো। নিজের হাতদুটো কাপতে লাগলো,কপাল ঘেমে বিন্দু বিন্দু পানির রেখা গাল বেয়ে নামতে লাগলো
চলবে