#তোমাতে আসক্ত
নীলচুড়ি (রোকসানা)
পর্ব (৪)
মাহিরের কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম গাল বেয়ে পড়তে লাগলো। কান দিয়ে গরম ধোয়ার মতো কিছু বের হচ্ছে এমন অনুভূতি হতে লাগলো,ভয়ে হাত কাপতে লাগলো। মাহির চোখ বন্ধ করে বাপাশে ব্রেক কষে একটা চিৎকার দিলো।
আজিজ,অথৈও সামনের দিকে ঝুকে ঝাকি খেলো। মাহিরের মাথা স্টিয়ারিংয়ে বাড়ি খেলো। মাহির চোখ বন্ধ করে স্টিযারিংয়ে মাথা ঠেকিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে লাগলো। বড্ড ভয় লাগছে। মিনিট কয়েক এভাবেই থাকার পর মাহির চোখ খুলে মাথা তুলে পাশে তাকাতেই অথৈকে কোমড়ে হাত দিয়ে দারিয়ে থাকতে দেখলো। একটা ব্রু উচু করে নাক ফুলিয়ে বেশ রাগ নিয়েই তাকিয়ে আছে বুঝা যাচ্ছে।
“”স্যার, কি হয়েছিলো? হঠাৎ এমন ব্রেক কষলেন?””
“”পানি খাবো।””
আজিজ দ্রুত সিটের নিচ থেকে পানি বের করে মাহিরকে দিলো। মাহির ডগডগ করে পুরো বোতলের পানি খেয়ে নিলো।
“”আজিজ আরো পানি খাবো।””
এবার বেশ রাগ নিয়ে অথৈর মুখ খুললো,
“”আপনার পেটে কি পানির টাংকি ভরা যে এত পানি খেতে হবে?””
“”হু।””
“”হু মানে? দেখি কতবড় ট্যাংকি! কত লিটারের?””
অথৈ মাহিরের ডানপাশের জানালাটা খুলে ভেতরে ঢুকে মাহিরের শার্টটায় হাত দিলো।
“”আরে কি করছেন ছিড়ে যাবে। আমার কাছে আর কোনো শার্ট নেই অথৈ।””
অথৈ মাহিরের কোনো কথায় শুনলোনা জোর করে শার্টের বোতাম ধরে খোলার চেষ্টা করলো। রাগের জ্বালায় খুলতে পারছেনা তাই টান দিয়ে ছিড়তে গেলো। মাহির অথৈর দুহাত টেনে ধরে অথৈকে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকের সাথে। চোখদুটো বন্ধ করে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“”আমার পেটে পানির ট্যাংকি নয় খুনীরানি কথার ট্যাংকি আছে। যার লিটার সীমাহীন। আপনি কি ট্যাংকিটা খালি করার সুযোগ দিবেন? এত ভার আমি আর বয়তে পারছিনা। প্লিজ অথৈ!!””
মাহিরের ফিসফিস করে কথা বলার জন্য তার নিস্বাসগুলো কানে বাড়ি খাচ্ছিলো যা এক অন্যরকম নেশা কাজ করছিলো অথৈর,বেশ সুড়সুড়িও অনুভূতি হচ্ছিলো তাই মাহিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানো অনেক চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু মাহিরের হাতের জোরের কাছে অথৈর জোর কিছুনা। ব্যর্থ হয়ে সে মাহিরের কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে চিল্লিয়ে বললো,
“”আমার সুড়সুড়ি লাগছে।””
মাহির ঝটপট তাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের কানে নিজের হাতের শাহাদাৎ আংগুলটা ঢুকিয়ে খোচাতে লাগলো।
“”আপনি কি আমাকে বয়রা করে দিবেন? উফ! এত জোরে কেউ চিল্লায়?””
অথৈ আবার মাহিরের অন্য কানের কাছে মুখ নিয়ে চিল্লিয়ে বললো,
“”তাহলে আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কেন? মেয়ে মানুষ দেখলেই জড়িয়ে ধরতে…..”””
অথৈকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মুখ চেপে ধরলো
“”You are a crazy woman.””
অথৈ মাহিরের হাতটাতে জোরে করে কামড় বসালো।
“”আহ! অথৈ আপনি কি মাল্টি পাগল?””
“”ওই মাল্টি পাগল আবার কি?””
“”জানিনা””
মাহির আজিজের দিকে তাকাতেই দেখলো ও দুকানে হাত দিয়ে বেশ দুরে অবস্থান করছে।
মাহির তার এসিসট্যান্টকে বললো,
“”আজিজ আমি গাড়ী চালাতে পারবোনা। তুৃমি চালাও।””
মাহির অথৈকে ভেতরে বসতে বলে নিজেও উঠে বসলো। বেশ কয়েক মিনিট বসার পরও যখন দেখলো গাড়ীর কোনো নড়চড় হচ্ছেনা তখন বললো,
“”কি হলো গাড়ী স্টার্ট করছোনা কেন? আমরা কি এখানেই রাত কাটাবো?””
“”স্যার মনে হচ্ছে কোনো সমস্যা হয়ছে। স্টার্ট হচ্ছেনা।””
“”তাহলে কেবলার মতো বসে আছো কেন? যাও গিয়ে দেখো কি প্রভলেম হয়ছে!””
আজিজ দ্রুত নেমে কিছুক্ষন চেক করে এসে বললো,,
“”মনে হয় গ্যারেজে নিতে হবে।””
অথৈ খুশিতে চিল্লিয়ে উঠলো,
“”তারমানে আমার আর যেতে হবেনা আজিজ ভাই?””
“”যেতে হবেনা মানে?””
“”মানে এখান থেকে ২কিলোমিটারের আগে কোনো গ্যারেজ নাই আর এখানে তো রিকশা ছাড়া আর কিছুই নাই আর ঐ রাস্তায় রিকসাও যাওয়া নিষেধ সো, আপনার স্যারের বাসায় যাওয়া বন্ধ। আমি রিকশা নিয়ে বাড়ি চলে যাই আপনারা বরং গাড়ী ঠিক করে আমাকে নিতে আসবেন।””
অথৈ একটা চোখ মেরে দিলো মাহিরের দিকে তারপর গাড়ী থেকে নেমে রিকশা ডাকার জন্য হাত বাড়াতেই মাহির সামনে এসে দাড়ালো,
“”আপনার কোথাও যাওয়া যাবেনা। আমি স্যারকে অসম্মান করতে পারবেনা অথৈ। উনি নিজে আপনাকে আমার বাসায় নিয়ে য়াওয়ার জন্য আপনাকে রাজি করিয়েছেন।””
“”so, What? আমি এতদুর হাটতে পারবোনা।””
“”আপনাকে হাটতে হবেনা,আমি নাহয় কোলে করে নিয়ে যাবো,হয়ছে?””
অথৈকে কোলে তুলার জন্য একটু ঝুকতেই অথৈ দুপা পিছিয়ে গেলো,
“”Wait,wait,wait, খুব সুন্দর প্লেন করেছেন তো আপনি। কোলে তুলার বাহানায় আমারপেট ছুয়ার ধান্ধা? আমার কোমড়…””
“”ছি! আপনি এসব কি বলছেন? আমি সেরকম….””
“””Shut up. আর একটা কথাও বলবেননা। আপনারা ছেলে জাতিরা কেমন আমার জানা আছে। পৃথিবীতে আমি আমার বাবাকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করিনা। ওহ! এখন বুঝতে পারছি তারমানে আপনি ইচ্ছে করেই গাড়ীটা নষ্ট করলেন, আপনার বাজে প্লেন ফুলফিল করার জন্য??””
“”দেখুন আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।””
“”আমার যা ইচ্ছে হয় তাই বুঝবো আাপনার কি? আপনার বাজে ইচ্ছের জন্যতো আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে। আপনার কোলে নেওয়ার খুব শখতো? Just wait.””
আজিজ এতক্ষন চুপচাপ দুজনের ঝগড়া দেখছিলো। হঠাৎ অথৈ এসে আজিজের হাত টেনে নিয়ে মাহিরের কাছে নিয়ে গেলো,
“”আপনি এখন আজিজ ভাইকে কোলে নিয়ে ২ কিলোমিটার রাস্তা হেটে যাবেন।””
“”What? আপনি কি পাগল হয়েছেন?””
“”yes,I am. একটু আগেই তো আপনি বললেন আমি Crazy woman. তাইনা।””
“”আমি পারবোনা।””
“”Ok,then আমি বাবার কাছে যাচ্ছি। এই রিকশা।””
“”স্যার কি করছেন কি আমার বউ যানলে…””
“”চুপ। একটা কথা বললে একদম খাদে ফেলে দিবো আজিজ।””
অথৈ পাশে তাকিয়ে দেখলো মাহির আজিজকে কোলে নিয়ে বেশ হতাশ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ হয়ছে,বাজে প্লেনের শাস্তি এটাই, আমাকে বিয়ে করেছেন তো? আরো কি কি করতে হয় দেখবেন Just wait and see.. অথৈ দুজনের একটা পিক তুলে নিলো। ঠোটে হাসি ফুটিয়ে মাহিরের সাথে হাটতে লাগলো
চলবে