#তোমাতেই_পরিপূর্ন
#আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#অনুগল্প (বাধিতাংশ)
সন্ধ্যা 6:45…
মেহুদের বাসার ড্রইংরুমে বসে হৃদয়ের বাবা, হৃদয়ের মা, তনয়, শেফা, ওদের অফিসের বস সহ ওদের আরো কিছু কলিগ’রা মিলে আড্ডা দিচ্ছে। মেহু কিচেনে বসে স্মাক্স বানাচ্ছে। হৃদয় রুমের মধ্যে বেডের উপর বসে বসে ফোন ঘাটছে। মেহু স্মাক্স বানানো শেষে সেগুলোকে সুন্দর ভাবে ট্রে’তে সাজিয়ে ড্রইংরুমে যাওয়ার উদ্দ্যেশে রওনা দিলো। যাওয়ার সময় দেখতে পেলো হৃদয় রুমের মধ্যে বসে বসে ফোন টিপছে। মেহু রুমের মধ্যে একটু উকি দিয়ে লো ভয়েসে বললো,
–“তুমি এখনো এখানে বসে আছো কেনো? ওদের সাথে দেখা করতে যাবে না? সেই কখন থেকে ওরা তোমার সাথে কথা বলার জন্যে ওয়েট করছে। আর তুমি এখানে বসে ফোন টিপছো?”
মেহুর গলার আওয়াজ পেয়ে হৃদয় ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মেহুর দিকে তাকালো। তারপর কিছু’টা ইতস্তত স্বরে বললো,
–“অ্যাকচুলি ওদের সামনে যেতে আমার ভিষন নার্ভাস লাগছে। সাথে লজ্জাও লাগছে! তাই যেতে পারছি না।”
হৃদয়ের কথা শুনে মেহু একটা হতাশ নিশ্বাস ফেললো। তারপর ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে বললো,
–“আপনি তো নতুন বউ। তাই লজ্জা লাগাটাই স্বাভাবিক। ওকে, কোনো ব্যপার না। আপনি এখানে বসে থাকুন, আমি এসে আপনাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি।”
কথাটা বলে মেহু ট্রে হাতে হনহনিয়ে ড্রইংরুমের দিকে চলে গেলো। ড্রইংরুমে এসে মেহু ওর হাতে থাকা ট্রে’টা কাউচের সামনে থাকা টি-টেবিলের উপর রাখতেই শেফা পিঞ্চ করে মেহুকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে উঠলো,
–“কিরে আমাদের দেখে তোর বর ভয় পেয়ে গেলো না-কি? এতোক্ষন হয়ে গেলো এসে বসে আছি অথচ তার কোনো খবর নেই যে?”
মেহু সোজা হয়ে দাড়িয়ে একটা হতাশ নিশ্বাস ফেলে বললো,
–“তার এখানে আসতে নাকি ভিষন লজ্জা লাগছে।”
শেফা অবাক হয়ে কিছুক্ষন মেহুর দিকে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
–“বেশি লজ্জা লাগলে শাড়ি পড়িয়ে ঘোমটা দিয়ে তারপর নিয়ে আয়। তাহলে আর লজ্জা লাগবে না।”
শেফার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। মেহু দরজা দিয়ে ভিতরের দিকে যেতে যেতে বললো,
–“বুদ্ধি’টা খারাপ না। দাড়া লজ্জাবতী নতুন বউকে একটু শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে আসি।”
কথাটা বলতে বলতে মেহু ভিতরে চলে গেলো। সবাই আবারও অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। কিছু সময় পর সবার চোখ গেলো দরজার দিকে। মেহু দাড়িয়ে আছে, ওর পাশে একটা ছেলে। ছেলেটাকে দেখে কারো আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এটাই হৃদয়। সবাই হাসি, হাসি মুখ করে হৃদয়ের দিকে তাকাতেই হৃদয় দরজার কাছ থেকে ধীর পায়ে সোফার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। মূহুর্তের মধ্যে সবার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ক্র্যাচে ভর দিয়ে হেটেঁ আসা ছেলেটার দিকে।
হৃদয় হাসি মুখে কাউচের কাছে আসতেই মেহু ওকে ধরে কাউচের উপর বসিয়ে দিলো। তারপর ক্র্যাচ’টা নিয়ে এক সাইডে রেখে দিলো। শেফা, তনয় সহ বাকিরা সবাই হৃদয়ের সাথে নরমালি কথা বলছে ঠিকই। কিন্তু ওদের চোখে মুখে রয়েছে ভিষন রকম কৌতুহলের ছাপ। মেহু বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ওদের কৌতুহলের কারন’টা। কিন্তু তাও আপাততো ‘ও’ এই টপিকে কথা বলে হৃদয়কে আপসেট করে দিতে চায় না। তাই চোখের ইশারায় সবাইকে আশ্বস্ত করে শান্ত থাকতে বললো। সবাই নিজেদের অদম্য কৌতুহলটাকে মনে চেপে রেখে হৃদয়ের সাথে নরমালি কথা বলতে লাগলো।
_________________________
রাত 10:00
ডিনার করে হাতে ডেজার্টের বাটি নিয়ে শেফা আর তনয় ব্যালকনিতে আসলো। ওদের পিছন পিছন মেহুও ব্যালকনিতে এসে মৃদ্যু হেসে তনয় আর শেফাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
–“এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি করছো? ভিতরে আসো।”
শেফা ওর হাতে থাকা কাস্টারের বাটি’টা ব্যালকনির রেলিংয়ের উপর রেখে এগিয়ে এসে মেহুর সামনে দাড়াল। তারপর শান্ত স্বরে বলল,
–“মেহু এসব কখন হলো আর কীভাবেই বা হলো? তুমি এই ব্যাপারে আমাদের আগে কিছু জানাও নি কেনো?”
মেহু শেফার কথার আগা মাথা কিছু বুঝতে না পেরে বলল,
–“কিসের কথা বলছো শেফা? আমি কিন্তু তোমার কথাটা ঠিক বুঝতে পারিনি।”
–“আমি হৃদ ভাইয়ার কথা বলছি মেহু। ওনার পায়ের এমন অবস্থা কিভাবে হলো? আর কবেই বা হলো?”
শেফার কথা শুনে মেহু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর রেলিংয়ের উপর দু-হাত রেখে বাইরের অন্ধকারের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
–“প্রায় দু-বছর আগে হৃদের একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। অ্যাক্সিডেন্টে ‘ও’ সাংঘাতিক রকমের ইনজুরড হয়েছিল। ওকে বাঁচানোই প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল ডাক্তারদের কাছে। ডাক্তারেরা বহু প্রচেষ্টার পর আল্লাহর অশেষ রহমতে ওর জীবন বাঁচাতে পেরেছিলেন সেদিন । কিন্তু ওর পাঁ’টাকে বাঁচাতে পারেন নি। ওর পায়ের ইনজুরিটা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ডাক্তারদের ওর ডান পাঁ’টাকেই কে*টে বাদ দিতে হয়েছে।”
মেহুর কথা শেষ হতেই শেফা আর তনয়ের বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল। ওরা দুজনেই হতবম্ভ হয়ে মেহুর দিকে তাকিয়ে আছে। মেহু এখনও অন্ধকারের দিকে নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে। শেফা আটকে আসা কন্ঠে বলল,
–“দুটো বছর একটা পজ্ঞু মানুষের সাথে কিভাবে সংসার করেছো মেহু? তোমার মতো সুন্দরি, শিক্ষিত একটা মেয়ে চাইলেই তো এর থেকে হাজারটা ভালো অপশন পেয়ে যেত। তাহলে অযথা কেনো নিজের লাইফটা এভাবে নষ্ট করলে?”
শেফার কথা শুনে মেহু হা হা করে হেসে দিল। হাসতে হাসতে শেফার দিকে তাকাতেই শেফা চমকে উঠল। মেহুর চোখ ভর্তি পানি আর এমন শব্দ করা হাসিতে মেয়েটাকে কেমন যেনো অদ্ভুত দেখতে লাগছে। মেহু হাত দিয়ে চোখের পানি টুকু মুছতে মুছতে বলল,
–“তাহলে একটা কাহিনি বলি শোনো।”
ওর কথা শুনে শেফা আর তনয় প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল। ‘ও’ লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বলা শুরূ করল,
–“আমি এমন একটা মেয়ে যার কোনো বংশ পরিচয় নেই। এমনকি বাবা-মায়ের পরিচয় অবদি নেই। ছোট্ট বেলা থেকে এতিম খানায় বড় হয়েছি। শুনেছিলাম ওই এতিমখানার মালিক নাকি আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওখানে আশ্রয় দিয়েছিল। উনিই আমাকে লেখাপড়া শিখিয়ে ছিলেন। ওখানের যতো বাচ্চা ছিল সবার সার্টিফিকেটের বাবা-মায়ের জায়গায় ওনার আর ওনার বউয়ের নাম দেওয়া থাকতো। আমরা জানতাম ওনারাই আমাদের বাবা-মা। ওনাদের পরিচয়েই আমরা ছোট থেকে বড় হয়েছি। আমার যখন সতেরো বছর বয়স তখন ওনাদের একটা ফ্যামিলি ফাংশনে আমাদের এতিম খানার সবাইকে ইনভাইট করা হয়েছিল। সেই ফাংশনেই আমার আর হৃদের প্রথম বারের মতো আলাপ হয়। কথায় কথায় জানতে পারি হৃদ ওনার বোনের ছেলে। হৃদ প্রথম দেখাই আমাকে নাকি ভিষন ভালোবেসে ফেলেছিল। তাই মাঝে মাঝেই আমাকে দেখার জন্যে আমাদের এতিম খানায় আসত। আমার সাথে কথা বলত, সময় কাটাত। এভাবেই একদিন হুট করেই ‘ও’ সবার সামনে আমাকে প্রপোজ করে বসেছিল। আমি সরাসরি ওকে রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম। ব্যাপারটায় ‘ও’ ভিষন কষ্ট পেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু হার মানেনি। তারপর থেকে প্রত্যেকদিন ‘ও’ একবার করে এতিমখানায় আসত আমার সাথে কথা বলতে। কিন্তু ওইদিনের পর থেকে আমি আর ওর সামনেও কখনো আসিনি। ওর ওখানে আসার কথা শুনলেই আমি গিয়ে রুম আটকে বসে থাকতাম।”
এইটুকু বলে মেহু থামতেই তনয় কৌতুহলী কন্ঠে বলল,
–“তারপর?”
মেহু কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারও বলা শুরু করল,
–“আমি এভাবে হৃদকে ইগনোর করায় হৃদ ভিষন রকম ডেসপারেট হয়ে গিয়েছিল। ‘ও’ গিয়ে সরাসরি ওর বাবা মাকে বলেছিল ‘ও’ আমাকে বিয়ে করতে চায়। ওনারা প্রথমে মানতে চাননি। একটা পরিচয়হীন মেয়েকে ওনারা কিছুতেই ওনাদের একমাত্র ছেলের বউ হিসেবে মানতে পারবেন না, বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু হৃদের জিদের কাছে ওনাদের সবাইকে হার মেনে নিতে হয়েছিল। ‘ও’ সু*ই*সাইড করার হু*ম*কি দিয়ে তারপর আমাকে বিয়ে করার জন্যে ওনাদের রাজি করিয়ে ছিল। ওনারাও ছেলে হারানোর ভয়ে বিয়েটা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু কখনো আমাকে বউ হিসেবে মানতে পারেন নি। তারপরেও বেশ ধুমধাম করেই আমাদের বিয়েটা হয়েছিল। বিয়ের পরে আমার জীবনটা পুরো পাল্টে গিয়েছিল। হৃদ সব সময় আমাকে বাচ্চাদের মতো ট্রিট করত। কখনো কোনো জিনিসের বিন্দুমাত্রও অভাব রাখেনি ‘ও’ আমার। আমাকে খাইয়ে দেওয়া, আমার চুল বেধে দেওয়া, আমার জামা-কাপড় ধুয়ে দেওয়া সবকিছু ‘ও’ নিজের হাতে করে দিত। এমনকি রাতের বেলা আমাকে গান গেয়ে ঘুম পড়িয়ে দিত। ওর কাছে আমি একটা অবুঝ শিশুর মতো ছিলাম। যার প্রায়োরিটি ওর কাছে এই পৃথিবীর সবকিছুর থেকে বেশি মূল্যবান ছিল।”
এইটুকু বলে মেহু মুচকি হাসল। তারপর নাক টেনে ভাঙা গলায় বলল,
–“জানো শেফা, ওর মা একবার ওকে ভিষন বকেছিল। বলেছিল, বউকে এতটা প্রশয় দিস না। এইভাবে অতিরিক্ত ভালোবাসা পেলে তোর বউ তোর উপরেই ছু*রি ঘোরানো শুরু করবে। তখন আর ওকে সামলাতে পারবি না। সময় থাকতে বউকে শাষনে রাখা শিখ। নাহলে ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে তোকে। ওর মায়ের এসব কথা শুনে আমার হৃদ সেদিন কি বলেছিল জানো? বলেছিল, তোমাদের তো মা-বাবা, সন্তান, শশুর-শাশুরি সব আছে আম্মু। কিন্তু এই পৃথিবীতে আমার মেহুর আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি যদি ওকে সারাক্ষণই শাষনে রাখি তাহলে ‘ও’ কার কাছে যাবে বলো তো? তোমাদের হয়তো মনে হচ্ছে আমি ওকে নিয়ে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছি। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি ওকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছি না। আমি শুধু ওর বাবা-মা হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। ‘ও’ ছোট বেলা থেকে যেই ভালোবাসা গুলো থেকে বঞ্চিত হয়েছে সেগুলো সব আমি ওকে একা দিয়ে ওর সব ভালোবাসার ঘাটতি পুষিয়ে দিতে চাইছি।”
কথাটা বলে মেহু ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। শেফা হাত দিয়ে মুখ চেপে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। তনয় বারবার হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে নিজের চোখের পানি মুচ্ছে। মেহু শাড়ির আঁচল দিয়ে আবারও চোখের পানিটুকু মুছে বলল,
–“হৃদয়ের কথা শুনে সেদিন ওর মাও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন। সেদিনের পর থেকে আমি আরেকটা মা পেয়েছিলাম। আরেকটা বাবা পেয়েছিলাম। সুন্দর একটা জয়েন ফ্যামিলি পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সেই সুখ আর বেশিদিন রইল না আমার কপালে। একটা অ্যাক্সিডেন্ট আমার হৃদের থেকে ওর পাঁ টা কেড়ে নিল। তবে এটা নিয়ে আমার কোনো আপসোস নেই। ওর একটা পাঁ নেই তো কি হয়েছে? ওর মেহু আছেনা? ওর মেহু ওর পাঁ হবে। যখন ‘ও’ হোচট খেয়ে পড়ে যাবে তখন ওর মেহু এসে ওকে সামলাবে। ‘ও’ যেমন মা-বাবা হয়ে ওর মেহুকে আগলে রেখেছিল। ওর মেহুও তেমনি ওর ঢাল হয়ে ওকে সারা জীবন সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে।”
মেহুর কথা শেষ হতেই শেফা দৌড়ে এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিল। মেহুও শব্দ করে কাঁদছে। ব্যালকনির দরজার সামনে হৃদ ওর মা-বাবা সহ বাকি সবাই ওখানে দাড়িয়ে আছে। এতক্ষণ মেহুদের কথপোকথন ওরা সবাই আড়ালে দাড়িয়ে সবটা শুনেছে। শেফা মেহুকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে হাসার চেষ্টা করে বলল,
–“হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি তুমি তোমার হৃদকে অনেক ভালোবাসো। আর কিছু বলতে হবে না। হুহ! তোমার কথা শুনে আমি আর কাঁদতে চাই না। কিছুদিন পরে আমার বিয়ে। আমি আমার চোখের পানি গুলোকে জমিয়ে রেখে দিয়েছি আমার বিদায়ের জন্যে। ভেবেছিলাম তখন অনেক অনেক কাদঁব। তাই এতদিন আমি সব ধরনের কান্নাকাটি থেকে বিরত থেকেছি। কিন্তু তুমি আজকে আমাকে ইমোশনাল করে দিলে।”
শেফার কথা শুনে মেহু কান্নার মধ্যেও হেসে দিল। শেফা নাক টেনে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
–“সবই তো বুঝলাম। বাট তুমি সবকিছু একসাথে সামলাও কীভাবে? আংকেল আন্টি তো ওনাদের গ্রামের বাড়িতে থাকে শুনলাম। তাহলে তোমার অফিসের কাজ, রান্না বান্না, ঘর গোছানো, হৃদ ভাইয়ের খেয়াল রাখা সেসব কে করে?”
মেহু একটা হতাশ নিশ্বাস ফেলে বলল,
–“এসব কিছু হৃদ একাই করে।”
শেফা চোখ বড় বড় করে বলল,
–“কিহ?”
মেহু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–“হ্যাঁ। ওই মহাশয়ের খেয়াল কাউকে রাখতে হয় না। উনি নিজেই উল্টে আমার খেয়াল রাখেন। বাসায় একজন হেল্পিং হ্যান্ড আছে কিন্তু আমার সব কাজ উনিই করেন। ইনফ্যাক্ট প্রতিদিনের রান্নাটাও উনি নিজের হাতে করেন। এইজন্যেই তো হাত-পাঁ কে*টে সারাদিন বসে থাকে। আর অফিস বাদ দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে বাসায় আসতে হয় আমার।”
শেফা বেশ কৌতুহল নিয়ে বলল,
–“আর কি কি করেন উনি?”
মেহু একটু আমতা আমতা করে বলল,
–“সবকিছুই করে। এমনকি অফিস থেকে যেই ফাইলগুলো আমি বাসায় নিয়ে আসি সেগুলোর সব কাজ ওই করে দেয়। আর আমার এক বছরের মধ্যে ডাবল প্রমোশনের রহস্যও হচ্ছে হৃদ। অফিসের যতো কাজ আছে সব কিছু ‘ও’ নিজে আমাকে বুঝিয়ে দেয়।”
মেহুর কথা শুনে শেফা চোখ বড়বড় করে মেহুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,
–“এই মেহু তুমি আমাকে তোমার সতীন বানাবে প্লিজ? হৃদ ভাই যদি আমাকে বিয়ে করে তাহলে আমি তনয়কে একশো তালাক দিয়ে হৃদ ভাইয়ের গলায় ঝুলে পড়ব। উফফ এত কেয়ারিং হাসবেন্ট আমি কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চাই না।”
শেফা কথাটা শেষ করতে না করতেই হৃদ ব্যালকনির দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল। তারপর শেফাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
–“আমি কিন্তু রাজি আছি শালী সাহেবা। তুমি চাইলে এখনই কাজি ডাকতে পারি।”
শেফা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তনয় বলল,
–“হ্যাঁ ডাকুন কাজি। এমনিতেও এই ভাঙা টিনটাকে আমি কিছুতেই নিজের গলায় ঝুলোতে চাই না। এটাকে আপনিই রেখে দিন। আমি বরং মেহুকে নিয়ে যাই। ওর মতো সুইট একটা মেয়ের আমার লাইফে ভিষন ভাবে প্রয়োজন।”
তনয় কথাটা বলার সাথে সাথে শেফা ধরাম করে ওর পিঠে কিল বসিয়ে দিল। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–“একবার আমাদের বিয়েটা হতে দে তারপর পি*টি*য়ে আমি তোর সব প্রয়োজন বের করে দিব। ব্যাটা ছ্যাচরা কোথাকার! সুন্দরী মেয়ে দেখলেই বিয়ে করতে মনে চায় তাইনা?”
শেফা আর তনয়ের কান্ড দেখে সবাই শব্দ করে হেসে দিল। এরমধ্যেই হৃদের মা সবাইকে ভিতরে আসতে বলল। ওনার কথায় একে একে সবাই ভিতরে চলে যেতে লাগল। হৃদয় ব্যালকনি থেকে ভিতরে আসতে যাবে তখনই ওর হাত ফশকে ক্র্যাচ’টা ফ্লোরে পড়ে গেল। ক্র্যাচ পড়ে যাওয়ায় হৃদয় আর নিজের টাল সামলাতে পারল না। ‘ও’ ভরহীন হয়ে পড়ে যেতে নিল। ওকে পড়ে যেতে দেখে শেফা ওকে ধরার জন্যে সামনের দিকে উদ্দ্যত হতেই পিছন থেকে মেহু এসে শক্ত করে ওর বাহু আকড়ে ধরল। হৃদয়ের মা শেফার কাধে হাত রেখে বলল,
–“যতদিন মেহু আমার ছেলের পাশে আছে ততোদিন আমার ছেলের হোচট খাওয়ার কোনো ভয় নেই মা। আমি জানি হৃদ যতবার বেসামাল হয়ে পড়ে যেতে নিবে মেহু এসে ততোবার ওকে সামলাবে। আর এটাও জানি, আমার ছেলের অসম্পূর্ণ জায়গাটার পূর্নতা হবে মেহু। সারাজীবন ওই মেয়েটাই আমার হৃদের পা হয়ে ওকে হাটতে শিখাবে।”
হৃদের মায়ের কথা শুনে শেফা ওনার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারও হৃদ আর মেহুর দিকে তাকাল। হৃদ মেহুর কাধে এক হাত রেখে হেঁটে আসছে। আর মেহু ওর এক হাত দিয়ে হৃদের কোমড় জাপটে ধরে আছে। চোখের সামনে এমন একটা দৃশ্য দেখে শেফার চোখের পাপড়ি গুলো আবারও ভিজে উঠল। ভালোবাসা আসলেই সুন্দর। যারা সত্যি কারের ভালোবাসে তারা শত অপূর্নতা, অসম্পূর্ণতার মাঝেও ভালোবেসে আগলে রাখে। ভালোবাসার মানুষটার দূর্বলতাকে ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ন করে রাখে।
সমাপ্ত……