তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব -২৭

#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -২৭
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা

ভার্সিটির গেইট দিয়ে গাড়ি ঢুকতেই নজর পড়ল দূরে বসে থাকা মেয়েটার দিকে। সাদা টপস,,কালো স্কার্ট পরিহিত গলায় স্কার্ফ পেঁচানো মেয়েটা কে চিনতে একটু ও কষ্ট হয় নি আমার। প্রিয়ু মন খারাপ করে বসে আছে শিমুল গাছটার নিচে পাতানো বেঞ্চিতে। চোখ গুলো ফোলা ফোলা। মুখটাও কেমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে। এতো বছরের পরিচয়ে আজ প্রথম প্রিয়ু কে এমতাবস্থায় দেখলাম। বুক টা মুচড়ে উঠল। মনে অশান্তি এসে ভর করল। নিজের সবচেয়ে প্রিয়ু বান্ধবীর একটু কষ্ট ও যেন হৃদয়ে আঘাত হানে। নিতে পারছি না আমি প্রিয়ুর কষ্টদায়ক মুখশ্রী। গাড়ি পার্কিং এড়িয়ায় থামাতেই কিছু টা নড়েচড়ে বসলাম আমি। তূর্য মুখে হাসি নিয়ে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে। ঠোঁটের কোণে বহমান এই মুগ্ধ হাসি যেন এক নিমিষেই কেঁড়ে নিল আমার মনের সবটুকু অশান্তি। কিন্তু তবুও যেন প্রিয়ুর চেহারা দেখে আমার মনটা হাহাকার করে উঠছে। ঠোঁটে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে তূর্যর দিকে চেয়ে রইলাম। ওনি যদি বুঝতে পারেন কোনো কারণে আমার মন খারাপ তবে ভয়ানক রেগে যাবেন। মানুষ টা তো আর আমাকে কষ্টে রাখে না। বরং নিজের চেয়েও খুব বেশি ভালোবাসে আমাকে। বিয়ের তিনদিন কেটে গেছে। এই তিনদিনে যেন ওনার ভালোবাসা বেড়ে গেছে অনেক বেশি। এখনও মনে হয় কোনো স্বপ্নের রাজ্যের পরী আমি।

–হাসিটা ফেইক শ্রেয়া!

সাবলীল ভঙ্গিতে কথাটা বললেন তূর্য। গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে হাত বাড়িয়ে আমাকে টেনে নিলেন একদম নিকটে।

–মিথ্যে হাসির অভিনয় করার প্রয়োজন নেই বউ। কি হয়েছে? একটু আগে ও মুড ভালো ছিল আপনার।

নিজের হাত টা দিয়ে দূরে প্রিয়ুর দিকে ইশারা করলাম আমি। একটু তাকিয়ে আমার দিকে মুখ ফেরালো তূর্য। চিন্তিত স্বরে বললেন,,,

–শালী সাহেবা কে তো আপসেট মন হচ্ছে। তুমি যাও ওর কাছে।

—আপনি যাবেন না?

–না। আমি গেলে প্রিয়ু অস্বস্তিে পড়ে যাবে । আমার সামনে কিছু বলতে জড়তা ফিল করবে। বাট তোমাকে কিছু বলতে কোনো আড়ষ্টতা অনুভব করবেনা। কারণ তুমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। ও তোমার সামনে কমফোর্ট ফিল করে।

তূর্যর কথাগুলো অসম্ভব ভালো লাগল। সত্যিই তো বলেছেন তূর্য। আমরা চাইলেও সবার সামনে স্বাভাবিকভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারি না।

–ঠিক আছে। আমি প্রিয়ুর কাছে যাচ্ছি। ক্লাস শেষে অপেক্ষা করব আপনার জন্য।

–নিজের খেয়াল রেখো।

—————————-

প্রিয়ুর পাশে ধপ করে বসে পড়লাম আমি। মুখে হাত দিয়ে ভাবার ভঙ্গিতে বললাম,,,”নীল আকাশ কি আজ কালো মেঘে ডেকে গেছে?”
আমার দিকে ফিরে তাকালো প্রিয়ু। ফোলা ফোলা চোখ দুটো তে কি মায়াবী-ই না লাগছে মেয়েটা কে। একটু হেসে বললাম,,,

“আজ কি আন্টি বকেছে প্রিয়ু বেবী টা কে?”

“উহু”

“তাহলে প্রিয়ুর বেবীর চোখে অশ্রুকণাদের ভিড় কেন জমেছে? ”

” কারণ অশ্রু কণারা আমার সঙ্গী হতে চেয়েছে।”

একটু হাসলাম আমি। হাত বাড়িয়ে দিলাম প্রিয়ুর দিকে। আমার হাত টা ধরে একদম কাছে এসে বসল প্রিয়ু। মন খারাপ নিয়ে বলে উঠল,,

–আমাকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে শ্রেয়া।

প্রিয়ুর কথা কানে আসতেই বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লাম আমি। বড় বড় চোখে করে তাকালাম প্রিয়ুর মুখের দিকে। চমকিত স্বরে বলে উঠলাম,,

” কি বলছিস? আংকেল আন্টি রাজি?”

“রাজি না হয়ে উপায় আছে? ছেলে শিহাব ভাইয়ার ফ্রেন্ড। আর তাজ্জব ব্যাপার কি জানিস? ছেলে এবং ছেলের পুরো পরিবারই আমাকে পছন্দ করে। শিহাব ভাইয়ার সাথে মায়ের কানাঘুঁষা তে যতটুকু বুঝেছি আজ দেখতেই এসে হয়তো বিয়েটা হয়ে যাবে।”

কথাটা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ল প্রিয়ু। কান্নাটা তো একদম স্বাভাবিক। কারণ প্রিয়ু আয়ুশ ভাইয়া কে ভালোবাসে। কিন্তু আয়ুশ ভাইয়া তো ওকে ভালোবাসে না। তবুও একবার হলেও আমার আয়ুশ ভাইয়ার সাথে কথা বলা উচিত। প্রিয়ুর হাতটা ধরে বললাম,,

“আমার সাথে চল প্রিয়ু।”

“কোথায়?”

“আয়ুশ ভাইয়ার কাছে।”

কান্না থামিয়ে আমার দিকে বিস্ময়কর দৃষ্টি তাক করল প্রিয়ু। দৃঢ় কন্ঠে বলল,,

“পাগল হয়েছিস? ওনি আমায় ভালোবাসে না শ্রেয়া। ওনি তো তোকে ভালোবাসে। ”

চমকে গেলাম আমি। প্রিয়ুর হাত টা ছেড়ে দিলাম আস্তে করে। অতিশয় বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম প্রিয়ুর মুখ পানে। মলিন হাসি হাসল প্রিয়ু।ব্যথিত স্বরে বলল,,

–তুই তো সবসময় বলিস মেয়েদের বুঝার ক্ষমতা প্রখর হয়। আয়ুশ ভাইয়ার চোখে দৃশ্যমান তোর জন্য ভালোবাসা আমার চোখ এড়ায় নি। ওনার চাহনি তোর জন্য অস্থির হওয়া সবই আমার চোখে আটকা পড়েছে এ কদিনে । বিশেষ করে তোর গায়ে হলুদের রাতে। জানিস শ্রেয়া! তোর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আয়ুশ তূর্য ভাইয়াদের বাগানের অপর পাশে বসে কাঁদছিলেন। জীবনে প্রথম কোনো পুরুষ কে কাঁদতে দেখে বুকটা ধুক করে উঠেছিল। মানুষ টা যখন আয়ুশ ভাইয়া বুঝতে পারলাম কলিজা টা ছিঁড়ে যাচ্ছিল আমার। ইতস্ততা নিয়ে ধীর পায়ে গিয়ে ওনার পাশে বসতেই নিজের চক্ষু জল লুকিয়ে নিতে চাইলেও পারে নি। অজান্তেই হোক আমার হাত টা আঁকড়ে ধরে কষ্ট গুলো প্রকাশ করেছিলেন। যে ছেলে তোর জন্য অস্থির হয়ে পড়ে সে কখনো আমায় গ্রহণ করবে না শ্রেয়া। ওনি তোকে ভালোবাসে তাতে আমার একটু ও কষ্ট নেই। ওনি যদি আমাকে ডাকেন তবে সব ফেলে ছুটে যাব আমি। কিন্তু আমায় কখনও ডাকবে না ওনি এটাই সত্য ।

—যদি আয়ুশ ভাইয়া তোকে গ্রহণ করে নেই তুই ওনার কাছে ধরা দিতে বাধ্য তাই তো! চল আমার সাথে।

–না শ্রেয়া।

–কেন প্রিয়ু? বিয়ে যখন করেই নিচ্ছিস তবে একবার শুধু একবার নিজের মনের কথাটা প্রকাশ কর প্রিয়ু। সারাজীবন মনের মাঝে চেপে রাখা অনুভূতি গুলো যে অসহনীয় যন্ত্রণা দেয়। তার চেয়ে ঢের ভালো হবে অনুভূতি গুলো কে মুক্ত করে দে। মন টা কে হালকা কর।

উঠে দাঁড়াল প্রিয়ু। মুচকি হেসে বলল,

“চল শ্রেয়া।”

————————

দুরুদুরু বুক নিয়ে দুই বান্ধবী এসে উপস্থিত হলাম তূর্যদের আড্ডা স্থানে। আমাকে দেখতে পেয়েই এগিয়ে এলেন তূর্য। ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করে বসল,,

–এখানে কেন এসেছো শ্রেয়া? ক্লাস শুরু হয় নি এখনও?

সাহস জুগিয়ে প্রিয়ু কে নিয়ে তো আসলাম কিন্তু এখন তূর্য সাহেব কে দেখে এক নিমিষেই সব সাহস ফুস করে উড়ে গেল। মিয়িয়ে গেলাম আমি। লাজ লজ্জা ভুলে কিছুটা নিকটে গিয়ে দাঁড়ালাম তূর্যর। আড়চোখে বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,

–কি করছো জান? দিস ইজ নট রোমান্স টাইম।

চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এল। তূর্যর বলা কথাটা কানে এসে প্রতিধ্বনিত হতেই লজ্জায় নুইয়ে পড়লাম আমি। বিড়বিড় করে বললাম,,,

–আপনি একটু বেশি বুঝেন তূর্য। আয়ুশ ভাইয়া কে ডেকে দিন না।

–কেন?(ভ্রু কুঁচকে)

চোখের ইশারায় পিছনে দাড়িয়ে থাকা প্রিয়ু কে দেখালাম আমি। তূর্য মুচকি হেসে বললেন,,,

–পিছনের দিকে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসো।আমি আয়ুশ কে নিয়ে আসছি।

খুশিতে সাথে সাথেই বলে উঠলাম,,

–ধন্যবাদ চিরকুট লেখক।

–ধন্যবাদে লাভ হবে না বউ। আজ কিন্তু একটা কিস চাই আমার। (দুষ্ট স্বরে)

–ছি! কতটা নির্লজ্জ আপনি।

বাক্যটা উচ্চারণ করে আর এক মুহুর্ত ও দাড়ালাম না। প্রিয়ু কে নিয়ে চলে এলাম পুকুর পাড়ে। পুরো এক বোতল পানি সাবাড় করে ফেলেছে প্রিয়ু। ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বলে উঠল,

–গলা শুকিয়ে যাচ্ছে দোস্ত। আমাকে দিয়ে হবে না। একদমই হবে না। চল না চলে যায় এখান থেকে।

মেজাজ গরম হয়ে গেল। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে চেয়ে তেজী স্বরে বললাম,,,

–শশুর বাড়িতে তো চলেই যাবি। যাওয়ার আগে অন্তত বেচারা অনুভূতিকে মুক্তি দে তোর মনের বাঁধন থেকে।

তূর্য ও আয়ুশ ভাইয়া কে আসতে দেখে চুপচাপ হয়ে বসে রইলাম দু’জন। আয়ুশ ভাইয়া এসে দাড়াতেই তূর্য বলে উঠল,,

–চলো বউ আমরা ঐদিক টায় একটু হেঁটে আসি।

আমাকে আর পায় কে। প্রিয়ু কে ইশারায় অল দ্যা বেস্ট জানিয়ে তূর্যর সাথে কিছু টা দূরে সরে আসলাম আমি।

——————–
আয়ুশ তীক্ষ্ণ নজরে তাকাল প্রিয়ুর দিকে। এতেই প্রিয়ু শেষ। ভয়,সংকোচ নিয়ে দাড়িয়ে রইল জড়োসড়ো হয়ে। ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটে উঠল আয়ুশের। স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,

–তূর্য বলল তুমি নাকি কিছু বলতে চাও আমাকে?

জড়তা, অভিশঙ্কা নিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রিয়ু চোখ বন্ধ করে বলে উঠল,,

–আআআমি আপনাকে ভালোবাসি ভাইয়া। আজ রাতে আমায় পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। আপনি যদি আমায় গ্রহণ না করেন তবে আমি চিরতরে অন্য কারো হয়ে যাব। কিন্তু আমি আপনার হতে চাই। আপনার প্রণয়ে আবদ্ধ হতে চাই। আপনি ভালে না বাসলে ও ধীরে ধীরে বাসবেন কোনো একসময়। কিন্তু আমি হারিয়ে গেলে তো আর সেই সুযোগ টাও থাকবে না ভাইয়া।

বড় বড় শ্বাস ফেলল প্রিয়ু। আতঙ্কিত মন নিয়ে আয়ুশের দিকে তাকাতেই দেখল আয়ুশ তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে তার দিকে। সাধাসিধে ভাবে জবাব দিল আয়ুশ,,,

–আমি আগেই বুঝতে পেরেছি তুমি আমায় পছন্দ করো। বিয়ে করে নাও প্রিয়ু। আমার পক্ষে তোমাকে ভালোবাসা সম্ভব না৷ কখনও গ্রহণ করা ও না।

দুচোখে জল নিয়ে আয়ুশের দিকে তাকিয়ে কান্নামিশ্রিত স্বরে বলে উঠল প্রিয়ু,,,

–জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না আয়ুশ। আপনি আমাকে ভালো না বাসেন কিন্তু একটা সুযোগ তো দিতে পারেন তাই না? চিরকুমার তো থাকবেন না৷ একদিন না একদিন পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে টা ঠিকি করে নিবেন। যে মেয়েকে করবেন তাকে কি ভালোবেসেই করবেন? ভালো তো বাসতে পারবেন না তবুও বিয়েটা করবেন তাহলে আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছেন কেন? অন্য মেয়েকে করলে আমায় করতে কি সমস্যা আয়ুশ? বলুন না। চুপ করে আছেন কেন? একটা সুযোগ দিয়েই দেখুন।

— প্লিজ তুমি চলে যাও প্রিয়ু। আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না ।

কথাটা বলে বড় বড় পা ফেলে চলে গেল আয়ুশ। কান্নায় ভেঙে পড়ল প্রিয়ু। আঁতকে উঠলাম আমি। তূর্য ও বিচলিত হয়ে এগিয়ে এল আমার সাথে। একটু স্পর্শ করতেই আমাকে ঝাপটে ধরল প্রিয়ু। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল,,,

–ওনি আমায় গ্রহণ করে নি শ্রেয়া। ফিরিয়ে দিয়েছেন আমায়।

কষ্ট ব্যতীত কি ভালোবাসার নাগাল পাওয়া যায় না? হতাশ দৃষ্টিতে তূর্যর চাহনি তে চোখ রাখতেই এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে। এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালেন না তূর্য। যেতে যেতে বলে গেলেন,,,

–প্রিয়ু কে নিয়ে বাড়িতে যাও শ্রেয়া।

—————————————
অপরাহ্ন,,,,,,,,,,,,

প্রিয়ুদের ড্রইং রুমে বসে আছে দুটো মেয়ে, একজন ছেলে ও ছেলের বাবা-মা। শিহাব ভাইয়া, প্রিয়ুর বাবা-মা ও বসে আছেন পাত্রপক্ষের সামনে। প্রিয়ু কে আমি অনেক বার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। শিহাব ভাইয়ার সাথে ও কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু প্রিয়ু জেদ চেপে বসে আছে। ওর একটাই কথা এই বিয়েটা করবে। কোনো আয়ুশ চায় না সে। রাগের বশে এই কথাটা বললেও পরে যে মেয়েটা খুব পস্তাবে। এখন তূর্যই শেষ ভরসা। নিশ্চয়ই ওনি কিছু না কিছু করবেন বিয়ে টা ভাঙতে। আমি জানি ওনি কখনো আয়ুশ ভাইয়া কে প্রেশার দিবে না কারণ এতে আয়ুশ ভাইয়া কষ্ট পাবে। কিন্তু ওনি করবেন টা কি? নীল শাড়ি টা পড়ে মাথায় ঘোমটা টেনে নিল প্রিয়ু। বিয়ের জন্য কত উতলা ভাব! কিন্তু আমি তো জানি সবই রাগের প্রভাব। ভিতরে তো দহনে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। নুসাইবা আপু তাড়া দিতেই প্রিয়ু কে নিয়ে ড্রইং রুমে এলাম আমি। প্রিয়ু কে বসিয়ে ফোন টা নিয়ে সাইডে চলে এলাম।

–তূর্য কোনো উপায় পেলেন?

–ছেলে খুবই ভালো। নির্দ্বিধায় বিয়ে বসে যেতে বলো প্রিয়ু কে।

তূর্যর ভাবলেশহীন কন্ঠ শুনে অবাক হলাম আমি। অস্ফুটস্বরে বললাম,,

–আপনি এসব কি বলছেন তূর্য? প্রিয়ু আয়ুশ ভাইয়া কে ভালোবাসে। মরে যাবে মেয়েটা ওনাকে ছাড়া।

–আয়ুশ তো ভালোবাসে না শ্রেয়া। প্রিয়ু যদি নিজের মর্জিতে বিয়েটা করতে চায় তবে আমাদের আর না বাঁধা দেওয়ায় ভালো। কিন্তু প্রিয়ুর যদি একটু ও অনিচ্ছা থাকে বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা একদম নেই।

ফোন কেটে দিলেন তূর্য। কথাগুলো তো ওনি সত্যিই বলেছেন। তবুও চাই একটা বার যেন আয়ুশ ভাইয়ার মন বদল হয়। ভালোবাসা পাওয়া খুব কঠিন। খুবই কঠিন। ছেলের মা রিং পড়িয়ে দিলেন প্রিয়ুর হাতে। চোখ দুটো ছলছল করে উঠল প্রিয়ুর। প্রিয়ুর কষ্ট নিতে পারছি না আমি।ইচ্ছে করছে আয়ুশ ভাইয়া কে গিয়ে বলি–একটা সুযোগ দিলে কি হতো?প্রিয়ু কে একটু ভালোবাসতে দিলে কি হতো?আপনার ভালোবাসা কি সবকিছু প্রিয়ুর টা কি ফেলনা? দীর্ঘ শ্বাস ফেলে প্রিয়ু্র দিকে চেয়ে রইলাম। প্রিয়ুর হবু শাশুড়ী বলে উঠলেন,,,

–বিয়েটা ও আজ সেরে ফেলতে চাই তা তো আপনাদের আগেই জানিয়েছি। কাজী সাহেব আসছেন। কয়েক মিনিট বাদেই পৌঁছে যাবেন। আপনাদের কোনো সমস্যা নেই তো?

আংকেল হাসি মুখে বললেন,,,

–না না কোনো সমস্যা নেই।

ছ্যাঁত করে উঠল ভিতরটা। সমস্যা তো অনেক কিন্তু প্রিয়ু টা যে কিছুই বলছে না। কেমন নিষ্প্রাণ হয়ে বসে আছে। তোর কি কষ্ট হচ্ছে না প্রিয়ু? চিরতরে অন্য কারো হয়ে যাচ্ছিস তুই। মনের কথা মনেই রয়ে গেল। আচমকা কারো কণ্ঠ শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়লাম আমি। আচ্ছা আমি ভুল শুনলাম না তো?

তূর্যর সাথে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে আয়ুশ ভাইয়া মুচকি হেসে বলে উঠলেন,,,

–বাহ!! আমার গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন? গার্লফ্রেন্ড আমার আর বউ হবে অন্য কারো? এটা কখনও মেনে নিবে না আহনাফ হাসান আয়ুশ।

ড্রইং রুমে উপস্থিত সবাই বিস্ময়ে থ মেরে রইল। পাত্রপক্ষ বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে রইল আয়ুশ ভাইয়ার দিকে। কিন্তু আমার মনে খুশির ঢেউ উতালপাতাল করছে। তূর্য এসে আমার পাশে দাঁড়াতেই নিচু স্বরে বললাম,,

–ধন্যবাদ।

মিষ্টি হাসি উপহার দিলেন তূর্য। একটু নুইয়ে আমার কানের কাছে স্লো ভয়েসে বললেন,,

–আমি কিছুই করিনি বউ। আয়ুশ নিজের ইচ্ছেতে এসেছে।

কানের কাছে গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়তেই হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল আমার। থম মেরে দাড়িয়ে রইলাম তূর্যর পাশে। অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে আয়ুশ ভাইয়া নিজের ইচ্ছে তে এসেছে। আয়ুশ ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে দিল প্রিয়ু। ওনার কাছে গিয়ে বলে উঠলেন,,

–আমি পারছি না আয়ুশ। প্লিজ আমায় এভাবে মেরে ফেলবেন না। আমাকে গ্রহণ করে নিন দয়া করে।

প্রিয়ুর কান্ডে সবার চক্ষু চড়কগাছ। শিহাব ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,

–কি করছিস তুই প্রিয়ু? পাগল হয়েছিস? কি আবোল তাবোল বকছিস?

–আমি আয়ুশ কে ভালোবাসি ভাইয়া। আমার সাহস হয়নি তোমাদের বলার। দয়া করে ওনাকে বলো আমাকে মেনে নিতে। তুমি বুঝিয়ে বলো ভাইয়া।

প্রিয়ুর ভালোবাসার মানুষ কে পাওয়ার জন্য আকুতি মিনতি দেখে বুকটা কেঁপে উঠল আমার। ভীষণ অবাক হলাম আমি। আয়ুশ ভাইয়া প্রিয়ুর হাত টা আলতো করে ধরে রিং টা খুলে ঐ ছেলেটার হাতে দিয়ে দিল। বিনীত ভাবে বললেন,,

–ক্ষমা করবেন। প্রিয়ু ও আমি একে অপরকে ভালোবাসি। আপনাকে বিয়ে করলে এক প্রকার ঠকানো হতো। তার চেয়ে ভালো হল প্রথমেই সব জেনে গেলেন।

শিহাব ভাইয়ার কাছে অনুরোধের স্বরে বলে উঠলেন,,,

— আমি আপনার বোন কে বিয়ে করতে চাই। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।

–আমি কখনও জোর করে বিয়ে দেব এমন ভাই না। প্রিয়ু আমাকে একবার বললেই হতো।

খুশিতে চকচক করে উঠল প্রিয়ুর চোখ দুটো। পাত্রপক্ষের কাছে ক্ষমা চাইলেন শিহাব ভাইয়া। ওনারা চলে যেতেই শিহাব ভাইয়া আয়ুশ ভাইয়া কে বাবা-মা নিয়ে আসতে বললেন।

————————
গাড়িতে বসে আছি আমি ও তূর্য। অপেক্ষা আয়ুশ ভাইয়ার। ওনি কথা বলতে ব্যস্ত প্রিয়ুর সাথে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি দু’জনের দিকে। আজ অনেক শান্তি অনুভব করছি। মনে হচ্ছে যেন বুকের উপর থেকে অনেক বড় পাথর সরে গেল।আকস্মিক ঘাড়ে উত্তাপ নিঃশ্বাস অনুভব করতেই উল্টো ঘুরলাম আমি। হতবিহ্বল হয়ে থম মেরে গেলাম। কি হল এটা? তূর্য অভিভূত হয়ে চেয়ে আছে আমার দিকে। মিনিট আগেই উল্টো ঘুরতেই আমার ঠোঁট গিয়ে তূর্যর ঠোঁটে ঠেকেছিল। আমার কোমরের এক পাশে হাত রেখে আমার দিকে আরেকটু ঝুঁকে এলেন তূর্য। নিশ্চুপ হয়ে আছি উভয়েই। নীরবতা ছেয়ে আছে চারদিকে। কিন্তু হৃৎস্পন্দন যেন পাল্লা দিয়ে কথা বলে চলেছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কিছু বলতে নিলে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলেন তূর্য। তূর্যর এক হাত খামচে ধরলাম খুব জোরে। সাথে সাথেই ছেড়ে দিয়ে সরে গেলেন একটু দূরে। আমাকে আবদ্ধ করে নিলেন বাহুতে।
—————–
–আপনি তো আমায় ভালোবাসেন না আয়ুশ। তাহলে কেন এলেন?মিথ্যেই বা বললেন কেন?

–ভাবলাম বিয়ে তো করবই। অন্য কাউকে করার চেয়ে যে মেয়েটা আমায় ভালোবাসে তাকে করে নেওয়ায় উত্তম। আর তুমিই তো বলেছ ভালোবাসা হয়ে যাবে ধীরে ধীরে। — ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল আয়ুশ।

মাথা উঁচু করে তাকাল প্রিয়ু। বিমোহিত হয়ে সংকোচ নিয়ে বলে উঠল,,,

–আমি আপনাকে একবার জজজজড়িয়ে ধরতে চাই আয়ুশ। একটুখানি শুনতে চাই আপনার হৃৎস্পন্দনের শব্দ।

সময় নিল না আয়ুশ। হাত টেনে প্রিয়ুর মাথা টা চেপে ধরল নিজের বুকে। আয়ুশের বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির শ্বাস নিল প্রিয়ু। চোখ বুঝে কান পেতে রেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ল আয়ুশের হৃৎস্পন্দন শুনতে।

চলবে,,,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here