তোমাতেই পূর্নতা পর্ব -০৬

#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ৬
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

রাতুলের পাশাপাশি হাঁটছে বর্ষা। তিন্নি আজকে কলেজে আসেনি। তাই বর্ষাকে একাই আসতে হলো । বর্ষা একা আসতো না । কিন্তু রিয়ানের জ্বালায় কলেজে এসেছে । রিয়ান আজকে অফিসে যায় নি । সারাদিন বাসায় থাকবে । সকালেও রিয়ানের সাথে ঝগড়া হয় বর্ষার । রাগ করেই বাসা থেকে কলেজে আসে ।

” কি এতো ভাবছো ?

বর্ষা রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলে ,

” তেমন কিছু না ।

রাতুল আর বর্ষা নদীর পাড়ে গিয়ে বসে । রাতুল বর্ষার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

” বর্ষামনি মন খারাপ ??

রাতুলের প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বর্ষা নদীর স্বচ্ছ জলরাশির দিকে তাকিয়ে বলল,

” ভালোবাসেন কাউকে ?

বর্ষার প্রশ্নে চমকে উঠলো রাতুল । সে ভাবেনি বর্ষা এমন একটা প্রশ্ন করবে । মনের মধ্যে প্রশ্ন জেগে উঠলো, ‘ তবে কি বর্ষা বুঝতে পেরে গেল ? ‘ কথাটা মনে হতেই হৃদয়ে এক অজানা অনুভূতি কাজ করলো । কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো ,’ বর্ষা তো এমনিতেই জিজ্ঞেস করতে পারে । রাতুল একটু রয়ে সয়ে উওর দিলো,

” হুম বাসি ।

বর্ষা উদ্বিগ্ন হয়ে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,

” দেখতে কি খুব সুন্দর ?

বর্ষার প্রশ্নে রাতুল হেসে দিল । রাতুল কে হাসতে দেখে বর্ষা গাল ফুলিয়ে বলল,

” এখানে হাসার কি হলো ?

রাতুলের সাথে কথা বলার সময় প্রায় এভাবে গাল ফুলিয়ে কথা বলে বর্ষা । রাতুল বর্ষার মতো গাল ফুলিয়ে প্রশ্ন করল ,

” এখানে গাল ফুলানোর কি হলো ?

রাতুলের কথা বলার ভাব-ভঙ্গি দেখে হেসে দিল বর্ষা। বর্ষার হাসি মুগ্ধ চোখে দেখছে রাতুল। বর্ষা হাসি থামিয়ে দেখে রাতুল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে । তাই বর্ষা ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

” কি হয়েছে ?

রাতুল বর্ষার প্রশ্নে একবার বাম দিকে একবার ডান দিকে মাথা ঘুরিয়ে উওর দিলো,

” কিছু না

———————-

সন্ধ্যা সাতটা বাজে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পূর্বে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে রিয়ান । তিন্নি বর্ষা রুমে এসে দেখে বর্ষা বসে বসে মোবাইল টিপছে । পিছন থেকে বর্ষার মাথায় গাট্টা মেরে মুখে হাসি লাগিয়ে বলল,

” কি করো গো ভাবি ?

বর্ষা মাথায় হাত বুলিয়ে তিন্নির চুল টান দিলো । চুলে টান পড়ায় তিন্নি ” আহহহ ” শব্দ করে উঠলো । বর্ষা তিন্নির চুল ছেড়ে দিয়ে আদেশের সুরে বলল ,

” আমাকে একদম ভাবি বলে ডাকবি না ।

তিন্নি মুচকি হেসে কথা পাল্টে বলল,

” জানিস , আজকে তুই কলেজে যাওয়ার পর শুভ ভাইয়া এসেছিল । তর ভাইটা দেখতে হেব্বি হয়েছে । আমি তো আগে থেকেই ক্রাশ খেয়ে বসে আছি। আজকে দেখে আরেক দফা ক্রাশ খেয়ে আমি আহত হয়ে গেছি ।

তিন্নি এক নাগাড়ে কথাগুলো বলার পর হঠাৎ কারো কাশির শব্দে চমকে গেল । আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ রুমে আছে কি-না । কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না । তারপর চোখ গেল বর্ষার মোবাইলের দিকে ।

বর্ষা শুভর সাথে কথা বলছিল । কথা বলার মাঝে স্পিকার বাড়িয়ে ফেসবুকিং করছিল ।

ওপাশে শুভ বর্ষার সাথে কথা বলার সময় পানি মুখে দিয়েছিলো । হঠাৎ তিন্নি এরূপ কথা শুনে মুখ থেকে পানি বেরিয়ে কাশি শুরু হয়ে গেল ।

তিন্নি বর্ষার হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখলো ভাইয়া দিয়ে সেইভ করা নাম্বার । তিন্নি দ্রুত কলটা কেটে দিল । তিন্নির সব কথা শুনে ফেলেছে শুভ । কথাটা মাথায় আসতেই লজ্জায় মিইয়ে গেল তিন্নি । পরক্ষনেই রেগে বর্ষাকে বলল,

” ফোনটা কানে লাগিয়ে কথা বলতে পারিস না ? তর জন্য আমার সব কথা শুনে ফেলল ।

তিন্নির মুখ দেখে বর্ষা হাসতে হাসতে বলল,

” বেশ হয়েছে । আমাকে তো ভাইয়াকে জানাতে দিলি না । এখন নিজের মুখেই জানিয়ে দিলি ।

তিন্নি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আজকে ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করল তুই কোন জিনিসটা ভয় পাস । আমি বলে দিয়েছি তেলাপোকা ভয় পাস ।

বর্ষা ভ্রু কুঁচকে মনে মনে বলল,

” আবার নতুন কি করার ফন্দি করছে উনি ?

————

নয়টার দিকে বাসায় ফিরেছিল রিয়ান । হাতে ছিল একটা বোতল । বোতলের মুখে একটা কাপড় লাগানো ছিল । বর্ষা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে কিছু বলল না।

রাতে খাবার খাওয়ার পর বর্ষা রুমে গেল । রুমে গিয়ে দেখল রুমের লাইট অফ করা । রিয়ান একটা মোমবাতি জ্বালিয়েছে । বর্ষা রিয়ানকে বলল,

” রুমের লাইট নিভিয়েছেন কেন ?

বর্ষার প্রশ্নে রিয়ান মুচকি হেসে বোতলটা নিয়ে বর্ষার দিকে এগিয়ে এলো । বর্ষার পায়ের কাছে বসে বোতলের কাপড়টা খুলছে । বর্ষা ভ্রু কুঁচকে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে ।

রিয়ান বোতলের মুখের কাপড়টা খুলতেই বোতল থেকে তেলাপোকা বেরিয়ে এলো । তেলাপোকা দেখে বর্ষার হৃদপিন্ড লাফাতে লাগলো । বর্ষা ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে রিয়ানকে জড়িয়ে ধরল ।

বর্ষা রিয়ানকে জড়িয়ে ধরতেই রিয়ানের বুক ধড়ফড় করছে । এক অজানা অনুভূতি এসে ঘিরে ধরেছে । রিয়ান মনে মনে ভাবছে ,

” নিলাও তো আমায় জড়িয়ে ধরেছিল । কই তখন তো এমন অনুভূতি হয় নি !

নিলার কথা মনে হতেই রাগে দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বর্ষাকে এক ঝটকায় সরিয়ে ফেলল রিয়ান । হঠাৎ এমন হওয়ায় বর্ষা ব্যাথিত দৃষ্টিতে তাকালো রিয়ানের দিকে …..

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here