#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১৮
কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে সকালটা, অন্যদিনের তুলনায় আজকের কুয়াশাটা যেনো একটু বেশিই পরেছে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে এমন কুয়াশা থাকা অস্বাভাবিকের কিছু নাই স্বাভাবিক । পৃথিবীর বুকে যেমন কুয়াশার জন্য আগে পিছে কিছুই দেখা যাচ্ছে না ঠিক তেমনি সায়ানের চোখেও নুশার হঠাৎ কিডন্যাপ হওয়ার ব্যাপারটাতে সব কিছু ধোঁয়াশা লাগছে । কোনো দিক দিয়েই মেলাতে পারছে না তার হিসেব কে হতে পারে সেই ব্যক্তিটি যে নুশাকে তার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কিডন্যাপ করেছে। সারা রাত পেরিয়ে এখন ভোর পাঁচটা বাজে ‘ সায়ান , সায়ানের আব্বু সাজ্জাত চৌধুরী কারো চোখেই ঘুম নেই । সায়ান তো নুশাকে যখন সারা বাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না তখনই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু সাজ্জাত চৌধুরীর আটকানোর জন্য বের হতে পারেনি। সাজ্জাত চৌধুরী সায়ানকে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করতে বলে সায়ানকে নিজের রুমে পাঠিয়ে দেন আর উনিও নিজের রুমে চলে আসেন । কিন্তু দুই জন একজনের চোখেও ঘুম নাই । দুইজন ভিন্ন চিন্তায় বিভোর একজন তাকে ছাড়া বাঁচবে কি করে আরেকজন তার ফেমেলীতে কি জবাব দিবে।
সায়ান যখন বাবার কথা মতো রুমে এসে বিছানায় বসে তখন বিছানার উপর একটা কাগজ দেখতে পায়। সাদা কাগজটা খুব সুন্দর করেই ভাজ করা । সায়ান বিছানা থেকে কাগজটা হাতে নিয়ে পরতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ লাগিয়ে দুই তিনবার পরলো লেখা গুলো , লেখা গুলো কেনো জানি সায়ানের খুব চেনা চেনা লাগছে কোথাও একটা এই লেখা গুলো দেখেছে কিন্তু খেয়াল করতে পারছে না কোথায় দেখেছে। কাগজে লেখা গুলো ছিলো সায়ানকে নুশার থেকে দূরে থাকার হুমকি পএ। ফজরের আজান পড়তেই ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে ওজু করে পকেটে মোবাইল মানি বেগ নিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে সায়ান উদ্দেশ্য তার এখন মসজিদে গিয়ে নামাজটা আদায় করে বের হয়ে যাবে তার অনুমান করা ঠিকানায় যেটাকে সায়ান সন্দেহ করছে।
________
চোখ কচলিয়ে চোখের ঘুমটা কমাতে চাচ্ছে কিন্তু কোনোভাবেই যেনো চোখটা ভালো করে খুলতে পারছে না । চোখ গুলো এতো ভারি হয়ে আছে যেনো চোখের পাপড়ি গুলোতে পাথর দিয়ে রাখা আছে । বহু কষ্টে চোখ টা খোলে আশ পাশটা ভালো করে দেখতে লাগলো, জায়গাটা বেশ পরিচিত পরিচিত লাগছে । আগে যতোবার কিডন্যাপ হয়েছে ততবার চোখ মেলে অপরিচিত আলিশান রুম মাথার উপর সিলিং পাখা নিজেকে ব্ল্যাংকেট দিয়ে ডাকা দেখেছে । কিন্তু এবার কিডন্যাপের পর সব কিছু অন্য রকম আগের বারের থেকে সম্পূর্ণভাবে উল্টোটা মাথার উপরে টিনের চাল আর লাকড়ি কোনো সিলিং পাখা টাখা কিছুই নেই, গরম হলে হয়তো এতোক্ষণে নুশা সিন্ধ হয়ে যেতো । আগেরবার নরম তুলতুলে বিছানা হলেও এবার অনুভব করে শক্ত কোনো কিছুর উপর শুয়ে আছে , তাই ঘাড়টা ঘুরিয়ে নিজের শুয়ে থাকা জায়গাটা দেখতে গেলে অনেকটাই আশ্চর্য হয়ে যায়। কারন এটা তো নিশি আপুর ছেড়া কাঁথা যেটা আরো একবছর আগে বাড়ির পিছনে পুরান ঘরে রাখা হয়েছে । নুশার আর বুঝতে বাকি নেই সে কোথায় আছে। প্রথমে সে কোথায় আছে সেটা বুঝতে না পারলেও এখন ঠিকই বুঝতে পারছে। এই ঘরটাতে নুশা তেমন একটা আসে না , নিশাত আর তার মা তারিন বেগমই বেশির ভাগ এই ঘরটায় আসে তাই তো নুশা প্রথমে চিনতে পারেনি ।
নুশা আস্তে আস্তে উঠে বসে আর এই ঘর থেকে বের হতে দরজা ধাক্কা দিতে থাকে কিন্তু বাহির থেকে দরজা বন্ধ করা আর দরজার ঠিক পাশেই একটা বাটন মোবাইল রাখা আছে । তাই নিচের দিকে ঝুকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বাটনে চাপ দিতেই মোবাইলের স্কিনে একটা মেসেজ ঝলঝল করতে লাগলো, মেসেজটা এমন ছিলো,,,
“সায়ানের নুশা রানী নও তুমি, তুমি তো শুধু আমার নুশাপরী”
নুশা মেসেজটা পরে মুখ দিয়ে সাথে সাথে উচ্চারণ করে উঠলো,
এই আবালটার আবার কোথা থেকে আমদানী হলো নতুন করে , আরে ভাই একটা নামেরে যদি একেকজন একেক সময় একেক নামে ডাকে তাহলে তো একজনেরই সব নাম হয়ে যাবে। আর এক জনের এতো গুলো নাম থাকলে বাকী মানুষ গুলো কি নাম ছাড়া থাকবে। আমার ভাই বলে নুশা বুড়ি আমার সায়ান ভাই বলে নুশা রানী এখন আবার এই আবাল বলে সায়ানের নুশা রানী নও তুমি, তুমি তো আমার নুশা পরী । আরে শোন ভাই আমার আর কোনো পরী টরী নামের প্রয়োজন নাই নুশা বুড়ি আর নুশা রানীই যথেষ্ট ।
নুশা দরজা হাজার বার ধাক্কা দিলেও কেউ জানতে পারবে না নুশা এদিকটায় আছে । কারন এই ঘরটা একদম ব্যকসাইটে এদিকে ধরকার না পরলে তেমন কেউ আসে না। তাই গলা ফাটিয়ে ডাকলেও কেউ শুনবে না। নুশা ভাবতে থাকে ‘আবালটা আর যাই করুক মোবাইলটা দিয়ে ভালোই করেছে এখন তাড়াতাড়ি কাউকে ফোন দেই প্রথমে নিশাত ভাইয়ের নাম্বার ট্ মোবাইলে উঠিয়ে ডায়ালে দিতেই একটা মিষ্টি মধুর কন্ঠে একটা মহিলা ইংরেজিতে কিছুক্ষণ বকবক করে ফোনটা কেটে দিলো। নুশা এবার বিরবির করে বলে উঠলো,
-আবাল কি আর শুধু শুধু বলি কিডন্যাপারকে মোবাইল দিছোত ভালো কথা মোবাইলে যে টাকা নাই সেটা খেয়াল করবি না৷ অযথাই মোবাইল টা দিয়ে গেলি । এখন আমি কিভাবে এখান থেকে বের হবো, প্রচুর খিদে পেয়েছে গতকাল দুপুরে আমার পেটে খাবার গেছে আর যাই নি।
সেখানে শুয়ে ছিলো ছিড়া কাঁথায় সেই জায়গাতেই আবার বসে পরলো নুশা, কি করে বের হবে এখান থেকে ভাবতে লাগলো, হঠাৎ করেই তার মাথায় একটা কথা মনে পড়ে যায় স্কুলের ইমা আর নুশার ক্লাস এইটে একটা বান্ধবী ছিলো নাম ছিলো তানিশা , এদিকে নুশা আর ইমার কোনো বয়ফেন্ড না থাকলেও তানিশার বয়ফেন্ড ছিলো ঐস্কুলেরই দশম শ্রেণির তখন তানিশা মাঝে মাঝে সেই ছেলেটিকে রিকোয়েস্ট কল দিতো। নুশা একদিন লিখে এনেছিলো কিভাবে রিকোয়েস্ট কল দিতে হয় সেটাই এখন টাই করতে হবে কারন এছাড়া আর কোনো উপায়ও নাই এখান থেকে বের হওয়ার । মোবাইলে কিভাবে ইমারজেন্সি বেলেন্স আনতে হয় সেটাও জানা নাই, তাই একে একে সবার মোবাইলে রিকোয়েস্ট কল দিলো যাদের নাম্বার মুখস্থ। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি একজনও ফোনটা বেক করলো না। অবশেষে বাধ্য হয়ে সবার শেষে সায়ানের মোবাইলে ফোন দিলো, সায়ানের মোবাইল নাম্বারটা নিশি আপুর বাসা থেকে আসার পর অনেকবার ফোন দিতে দিতে মুখস্ত হয়ে গেছে।
এইদিকে সায়ান এখন একজনের বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা থামিয়ে যেই গেট দিয়ে বের হবে ওমনি পকেটে মোবাইল টা বাজতে লাগলো তাই তাড়াতাড়ি পকেট থেকে বের করে অবাক হয়ে যায় নাম্বার টা দেখে আর ভাবতে থাকে এটা কিভাবে সম্ভব । ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেলো সাথে সাথে সায়ান পয়েন্টে আরেক পকেট থেকে নুশার মোবাইলটা বের করে দেখে নুশার মোবাইলটা ঠিক জায়গাতে আছে কিন্তু মোবাইলে সিম নেই তাই আবার সাথে সাথে ঐ নাম্বারে ফোন দিলো,,,
সায়ানেরও কোনো রেসপন্স না পেয়ে আশাহত হয়ে বসে রইলো । এখন খুব কান্না পাচ্ছে তার সাথে ভয়ও হচ্ছে কিভাবে এখান থেকে বের হবে সে। হাত দিয়ে দুই হাটু ধরে মাথাটা হাঁটুর কাছে রেখে কাঁদতে লাগলো তখনই অন্ধকারে আশার আলো হয়ে হাতে থাকা মোবাইলটা কাঁপতে লাগলো। সাথে সাথে মাথাটা উচু করে মোবাইলে তাকিয়ে দেখলো সায়ানের নাম্বার থেকে ফোন আসছে । নাম্বারটা দেখে ডান হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ফোন টা রিসিভ করে আবার কান্না কন্ঠে বলে উঠলো ,
-সায়ান ভাইয়া।
নুশার এমন কন্ঠ শুনে সায়ানেরর তো যায় যায় অবস্থা, নুশার কোনো বিপদ হলো না তো এটাই ভেবে পাচ্ছে না সায়ান । নুশার কথা শেষ হতেই সায়ন বলে উঠলো,
-নুশা রাণী, তুমি কোথায় কান্না না করে বলো।
-ভাইয়া আমি নিজের বাড়িতেই আছি।
-মানেহ, তাহলে কান্না করছো কেনো ..! কোনো সমস্যা বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো! আমি এখনি আসতেছি । কথা বলতে বলতে সায়ান গাড়ি তে উঠে বসলো আর গাড়িটা ঘুড়িয়ে নুশাদের বাড়ির দবকে রওনা দিলে কানের কাছে এখনোও ফোনটা রাখা আছে । সায়ানের কথা শুনে ঐদিক থেকে নুশা বলে উঠলো ,
– না না আমি বাড়িতে আছি ঠিকই কিন্তু আমি আমাদের ঘরের পিছনে যে পুকুরের পাশে টিনের একটা ঘর সেই ঘরে আছি বাহির থেকে বন্ধ করা তাই বের হতে পারছি না। আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসেন ভাইয়া আমার খুব ভয় করছে আর প্রচুর ক্ষুধাও লাগছে। আমি খুবই ক্ষুধার্ত আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে আমি জ্ঞান হারাবো।
নুশার শেষের কথাটা শুনে সায়ানের এই সিরিয়াস মুডেও হাসি পাচ্ছে । তাই সায়ান হাজারো চিন্তা বাদ দিয়ে মুখের মধ্যে মুচকি হাসি তুলে বিরবির করে বলে উঠলো,
“কবে যে আমার এই পিচ্চি রাণীটা বড় হবে, আর আমার ঘরে সারাজীবনের জন্য আনবো ”
-কিছু বলছেন ভাইয়া ,,,?
ধ্যান থেকে বের হয়ে ধরফরিয়ে বলে উঠলো,
-হুম না না কিছু বলছিলাম না। তুমি আর কান্না কইরো না আমি এখনি আসতেছি ।
-হুম তাড়াতাড়ি আসেন আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে ।
সায়ান মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো হুম আসছি আর দশ মিনিট।
#চলবে,,#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১৯
দশ মিনিটের জায়গায় পঁচিশ মিনিট পর পুকুর পারের সেই ঘরটার সামনে এসে উপস্থিত হয়। ঘরটা বাহির থেকে তালা লাগানো না থাকলেও সিকল দিয়ে আটকানো আছে। সায়ান আর সময় নষ্ট না করে সিকলটাতে হাত দিয়ে খুলতেই দরজার দুই পাঠ আপনা আপনি খুলে গেলো । অন্ধকার ঘরে রোদের আলো না আসলেও বাহিরে দিনের আলোটা ঠিকই ঘরটাকে আলোকিত করেছে। নুশা এতোক্ষণ ছিড়া কাথার উপর বসে হাতে থাকা বাটন মোবাইলে গ্রেমস খেলছিলো, হটাৎ সামনে তাকিয়ে সায়ানকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে যায় আবার মুখটাকে ফুলিয়ে বলে উঠলো,
-এতোক্ষণ লাগে আসতে তুমি তো বলছো দশ মিনিট লাগবে তাহলো এতোক্ষণে শেষ হইছে তুমার দশ মিনিট ।
নুশা খেয়ালই করেনি সে সায়ানকে আপনি বলা বাদ দিয়ে তুমি বলে সম্মোধন করছে । নুশা খেয়াল না করলেও সায়ান ঠিকই নুশার দিকে ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবতেছে মেয়েটা কি এবার সত্যি সত্যিই পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি । এতোদিন তো দেখতেই পারেনি আপনি করে ডাকবে সেটাও সয্য করতে পারেনি আর আজ হটাৎ একেবারে তুমি করে ডাকছে বিষয়টি সায়ানের কাছে রহস্যময় লাগছে সাথে খুব ভালোও লাগছে।
সায়ানকে এমন চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নুশা এবার বসা থেকে উঠে দাড়ালো আর বলে উঠলো,,
-কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো চুপচাপ ।
সায়ানের প্রথমে ভালো লাগলেও এখন আবার আপনি বলে ডাকাতে ভালো লাগাটা কমে গেলো তাই এবার হাতে থাকা খাবারের দিকে তাকিয়ে নুশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ,,,,
-ফুপিরা হয়তো এখনো রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করেনি মাএ সাতটা বাজে তাই আসার সময় বাহিরের দোকান থেকে রুটি আর ডিম পোস নিয়ে আসছি তাই দেরি হইছে এখন তাড়াতাড়ি খাবার গুলো খেয়ে নেও।
নুশা সায়ানের কথা শুনে সায়ানের দিকে কিছুটা এগিয়ে সায়ানের হাতে থাকা খাবার গুলো নিজের হাতে নিয়ে নিলো আর সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,
-আমি এখানে খেতে পারবো না বাড়িতে গিয়ে খাবো আসেন বলে সায়ানকে ক্রস করে সায়ানের পাশ দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে কিছু একটা ভেবে আবার পিছনে তাকিয়ে সায়ানকে দেখে দরজা দিয়ে বাহিরে বের হয়ে গেলো। নুশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সায়ানও নুশার পেছন পেছন যেতে লাগলো।
দরজার কলিং বেলটা মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে তাই কলিং বেল চাপ দিলেও কোনো রকম শব্দ হচ্ছিল না। তাই নুশা আর কলিং বেল না বাজিয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে , পিছন থেকে সায়ান এসে বলে উঠলো,
-কলিং বেল থাকতে দরজা ধাক্কাচ্ছো কেনো,,,?
নুশা সায়ানের দিকে ফিরে বলে উঠলো,,
-কলিং বেল বাজলে তো কলিং বেল বাজাবো।
নুশার কথা শুনে সায়ান কিছুটা এগিয়ে সেও কলিং বেল চাপ দিলো সত্যিই কোনো রকম শব্দ হচ্ছে না । নুশাতো ভেবেই পায়না একদিনে কতো কিছু হয়ে গেছে গত কালকে ঐতো দশটা কি এগোরাটার দিকে এই বাড়ি থেকে বের হইছে। দরজা ধাক্কাচ্ছে তো ধাক্কাচ্ছেই খোলার নাম গন্ধ কিছু নাই । তাই সায়ান একটু সাইটে গিয়ে নিশাত কে ফোন লাগালো , নিশাত ঘুম ঘুম চেখেই কার নাম্বার না দেখেই ফোনটা রিসিভ করে বলে উঠলো,,
-হ্যাঁলো কে,,,
সায়ান বলে উঠলো,,
-হবু দোলাভাই ,, তাড়াতাড়ি নিচে আয় আর দরজাটা খোল আমার বউ তোদের দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে নরম হাতটা শক্ত করে ফেলছে।
-মানে কে আপনি,,,?
-চোখ খুলে নাম্বারটা দেখ আমি কে,,,?
নিশাত নাম্বার খুলে শুয়া থেকে সোজা বসে গেলো বিছানায় আর বলে উঠলো,,
-সায়ান ভাই তুমি এতো সকালে এখানে, মজা করছো নাতো , গতকাল তোমার জন্য কতো সুন্দর একটা ভালো উপহার দিয়ে আসছি তোমাদের বাড়িতে আর আজ সকাল সকাল আমার বাড়িতে কেমনে কি কিছু বুঝতে পারছি না।
সায়ান নিশাতের কথা শুনে কিছুটা রেগেই বলে উঠলো,
-তর এতো কিছু বুঝতে হবে না, এখন রুম থেকে বের হয়ে দরজাটা খুল তারপর সব বুঝাইতাছি।
বলে ফোনটা কেটে দিয়ে নুশাকে বললো আর দরজা না ধাক্কা তে নিশাত আসতাছে দরজা খুলতে।
বেশ কিছুক্ষণ পর হামি দিতে দিতে নিশাত দরজা খুলে এদের ঢুকতে না দিয়েই প্রশ্ন করে উঠলো,
-কি বেপার নুশা বারো ঘন্টাও ভালো করে হয়নি তকে সেই বাড়িতে দিয়ে আইছি তুই সকাল সকাল চলে এলি যে , তাহলে বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে থাকবি কেমনে বছরের পর বছর।
নুশা নিশাত কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো,,
– বিয়ের পর জামাইকে নিয়ে এখানে থাকমু এখন আমারে জায়গা দে ক্ষিদা লাগছে।
কথাটা বলে ড্রাইং টেবিলে বসে একটা প্লেটে খাবার টা রেখে যেই খেতে শুরু করবে অমনি পিছন থেকে সায়ান বলে উঠলো,,
-বাহির থেকে এসেছো হাত মুখ না ধুয়েই খাওয়া শুরু করবে নাকি, যাও আগে হাত মুখ ধুয়ে আসো।
সায়ানের কথা যেই নুশা বসা থেকে উঠতে যাবে তখনই নিশাত নুশাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,,
-খাচ্চুনির আবার তল বিছানা, খেতে পারলেই হয় হাতে পায়ে যদি খারাপ খারাপ জিনিসও লেগে থাকে তারপরও পেটের ভিতর যাবে তার৷। বাই দা ওয়ে নুশা সায়ান ভাই কি তকে রাতে ঐবাড়িতে কিছু খাওয়াই নাই যে সকাল সকালই খেতে বসে গেলি ।
নিশাতের এমন কথা শুনে সায়ান নুশা দুইজনই নিশাতের উপর রাগী চোখে তাকিয়ে আছে নিশাত তা খেয়াল করে আবার বলে উঠলো,
-কি হলো এভাবে দুইজন আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে থাকার মানে কি ,,,!
নুশা নিশাতকে বলে উঠলো,
-ভাই তুই একটু চুপ করবি এখন আমাে খুব ক্ষুধা পাইছে তাই আমি এখন তোর সাথে ঝগড়া করার মুডে নাই, তাই পেটটা আগে শান্তি করে নেই তারপর তোর সাথে ঝগড়া করবো, এখর একটু চুপ করে বসে থাক না হলে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে থাক৷ বলে নুশা ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো ফ্রেস হইতে ।
সায়ান এখনো রাগী চোখে তাকিয়ে আছে নিশাতের দিকে নিশাত সেটা লক্ষ করে বলে উঠলো,,
-কি ব্যাপার ভাই তুমি আমার দিকে এমনে তাকিয়ে আছো কেনো আমি আবার কি করলাম।
সায়ান দাতে দাত চেপে বলে উঠলো,,
-,কিছু করিসনি তুই তাই না ,, মুখ থেকে এমন পটর পটর খই ফুটছে কেনো আজকা । যা ফুপ্পি কে ডেকে আয় আর বল আমি আইছি কিছু কথা বলবো। সায়ানকে নিশাত একটু আকটু ভয় পায় বড় ভাই বলে কথা তাই বড় ভাইয়ের কথা অনুযায়ী মাকে ডাকতে মা বাবার রুমের দিকে যেতে লাগলো তখ৷ পেছন থেকে সায়ান আবার বলে উঠলো,,
-আমার শ্বশুর মশাইকেও আসতে বলিস খুব দরকারি কথা আছে ।
নিশাত সায়ানের দিকে ঘুরে মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝালো আচ্ছা তারপর মা বাবার রুমের দিকে চলে গেলো। নিশাত সামনে থেকে চলে যেতেই পেন্টের পেকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সোফায় বসে টিপতে লাগলো তখনই নুশা ফ্রেস হয়ে টেবিলে বসে খেতে লাগলো। একটা পাউরুটি খেয়ে শেষ পেটটা একটু ঠান্ডা করার পর কি যেনো মনে করে পিছনে সায়ানের দিকে তাকিয়ে সায়ান কে বলে উঠলো,,
– সায়ান ভাইয়া আপনি গতকাল রাতে কিছু খাইছিলেন ।
সায়ান নুশার কথা শুনে নুশার দিকে তাকিয়ে সোজাসাপ্টা বলে উঠলো,,,
-নাহ ।
সায়ানের নাহ শুনে সাথে সাথে বলে উঠলো তাহলে আসেন এখান থেকে খান অনেক গুলোই তো আছে আমি তো সব শেষ করতে পারবো না।
সায়ান নুশার দিকে তাকিয়ে থেকেই আবারো সোজাসাপ্টা বলে উঠলো,,
-তুমি খাওয়াতে পারলে বলো তাহলে আমি খাবো।
সায়ানের কথা শুনে সায়ানের থেকে মুখ সরিয়ে সামনে খাবারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,
-মানেহ কি বলছেন এসব।
-কেনো কি বলছি তুমি শুনতে পাওনি, গতকাল যেমন মাথা মুছিয়ে দিছিলে আজও আমাকে খাইয়ে দাও ।
নুশা পাউরুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলে উঠলো,,
-কেনো আপনার হাত নাই আপনি হাত দিয়ে ছিঁড়ে ছিড়ে খেতে পারেন না।
-হাত থাকবে না কেনো হাত তো আমার আছেই আমার বউকে আদর করার জন্য কিন্তু আমার হাত দিয়ে আমি এখন খেতে পারবো তুমি খাইয়ে দিলে দিতে পারো সমস্যা নাই।
-, আপনার হাত দিয়ে যেই বউ কে আদর করবেন সেই বউকে বলেন আপনাকে খাইয়ে দিতে ।
নুশার কথা শুনে সায়ান বিরবির করে বলে উঠলো,,
-আমি তো আমার সেই বউকেি বলছি আমাকে খাইয়ে দিতে যেই বউকে আমি বিয়ের পর আদর করবো ।
সায়ানের বিরবিরানি শুনতে না পেয়ে নুশা আবার পিছন ফিরে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো –
-কি বিরবির করছেন কিছু শুনতে পাইনি তো আবার বলেন কি বলছেন।
সায়ান এবার আর কিছু না বলে বসা থেকে উঠে দাড়ালো আর নুশার কাছে গিয়ে নুশার পাশের চেয়ার টা টেনে সেটায় বসে নুশাকে উদ্দেশ্য করে বললো-
-নেও তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও তো প্রচুর ক্ষুধা লাগছে তোমার মতো।
নুশা অবাক হয়ে আছে সায়ানের এই ব্যবহারে, আর মনে মনে নিজেই নিজেকে বকতে লাগলো,,
– কে বলেছিলো আগে আগে তাকে খাওয়ার কথা বলতে এখন তো লোকটার ভালো করতে গিয়ে নিজেই বিপদে পরে গেলি নুশা । কথায় আছে না৷ উপকারে বাগে খাই সেই দশা এখন আমার।
নুশার ভাবনার ব্যাগাত বসিয়ে সায়ান বলে উঠলো,,
-এখন আর নিজেকে বকে কোনো লাভ নাই, আমাকে খেতে যখন একবার বলেছো এখন তো তোমাকেই আমাকে খাওয়াতে হবে। সো দেরি না করে তাড়াতাড়ি শুরু করো।
নুশাও আর কিছু না বলে হাত দিয়ে পাউরুটি ছিঁড়ে সাথে একটু ডাল দিয়ে সায়ান কে খাওয়াতে লাগলো । সায়ান এক মনে নুশার দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,,
-এই পিচ্চি মেয়েটার মাঝে কি আছে যেটা সায়ানকে এক সময় বেদনা দেয় আবার এক সময় সুখ দেয় । এই পিচ্চি মেয়েটার দিকে তাকালে সায়ানের কেনো জানি সব ক্লান্তি নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। এই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলে ভিতরে একটা শান্তি শান্তি অনুভব করে । সায়ান তো ভেবেই পায়না কি করে এই পিচ্চি মেয়েটার প্রেমে পরে গেছে সে ।
এতোকিছু ভাবার মাঝে এক গ্লাস পানি ঢেলে পেছন থেকে নিশাত কেশেঁ দিলো সাথে সাথে সায়ান পিছন ফিরে দেখতে পেলো নিশাতের পিছনে সায়ানের আব্বু এদিকেই আসছে । নুশাও তার বাবা আর ভাইকে দেখে প্রচুর লজ্জা পেয়ে গেলো তাই খাবার আর না খেয়েই এক গ্লাস পানি খেতে বসা থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো । নুশা চলে যেতেই নুশার বাবা কিছুটা সামনে এসে সায়নের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,
-আরেহ সায়ান যে কি ব্যাপার এতো সকাল সকাল এই বাড়িতে, আর নুশা কই সেও আসছে নাকি কালকে মাএ দিয়ে আসতে না আসতে আজকে সকাল হতে না হতেই চল৷ আসলো।
সায়ান বসা থেকে উঠে সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো,,
-জি আংকেল,,,.
#চলবে,,,