#তোমার_জন্য_ফিরে_আসা
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৫
পাঁচদিন ধরে রুমের জানালা এবং ফোন বন্ধ করে রেখেছে।জ্বরে ভুগছে তাই বাসা থেকে বের হতে হয় নি।ইভার আজ জ্বর কিছুটা কমেছে তাই ড্রয়িং রুমে সোফায় শুয়ে টিভি দেখছে।
“মহারানী কি আমার উপর রাগ করেছে? ”
ইভা কথাটা শুনে চকমকে উঠলো কারন ওদের বাসায় আলিবের আসার প্রশ্ন উঠে না তাহলে কে কথা বললো? আলিব কি আবার জ্বীন-ভূত হলো নাকি? ইভা একটু নড়ে চড়ে বসে ভালো করে চারপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। সারাক্ষণ আলিবকে নিয়ে চিন্তায় মগ্ন তাই এটা মনের ভুল।
“কি গো মহারানী আমার সাথে কথা বলবে না?”
ইভা এবার কথাটা ভালো করে খেয়াল করলো যে এটা আলিবের কন্ঠ কিন্তু কথা না শোনার ভান করে টিভি দেখছে তখন ড্রয়িং রুমে লিমা, রিদায়, রিয়াদের বউ, নানু, আরো কয়েকজন এবং আলিব প্রবেশ করে। রিয়াদ বললো,
-আর কতো শুয়ে বসে দিন কাটাবি এবার একটু উঠে আমাদের আপ্যায়ন কর
-হঠাৎ তোমার সবাই এক সাথে?
-তোর বিয়ে আর আমার আসবো না তা কি হয়? (লিমা)
-আমার বিয়ে আর আমিই তো জানি না
-সারপ্রাইজ টা কেমন দিলাম মহারানী বলো (আলিব)
-আপনি সত্যি আমাকে চিনতে পেরেছেন?
-তোকে এখানে কে চিনে না? (নানু)
ইভা ভাবলো আলিব আগের মতো অদৃশ্য ওর ফিরে আসতে সময় লাগবে তাই ওর ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তাই সবার উদ্দেশ্য বললো,
-আমি এখন বিয়ে করবো না, আমার বিয়ে নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করলে ভালো হবে না
-কেনো তুই কি অন্য কেউকে ভালোবাসিস (রিয়াদ)
-হ্যাঁ, তোমরা তাকে দেখতে চাও তো?
-হুম সবাই দেখবো তাকে ডেকে নিয়ে আয় সবাই পরিচয় হই (রিয়াদ)
ইভা আলিবের পাশে গিয়ে ওর শার্টের কলার্ট ধরে বলে,
“আপনি এখানে বসে নাটক দেখছেন, আমার বিয়ে হয়ে গেলে আপনার খুব ভালো লাগবে তাই না কিন্তু আপনিও জেনে রাখেন আমি বিয়ে করবো না না। আপনি এখন দৃশ্য হয়ে আসেন ”
“কি করছো এসব? আমাকে ছাড়ো সবাই দেখছে তো আমি দৃশ্য আছি”
ইভার মা এরকম অবস্থা দেখে ইভাকে টেনে নিয়ে সোফায় বসালো আর বললো,
-তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি ছেলেটা আমাদের বাসায় প্রথম এসেছে আর তুই এটা কি ধরনের অসভ্যতা করছিস? কোনোদিন কি তোর বুদ্ধিসুদ্ধি হবে না?
-আসার পর থেকে শুনছি ও অন্য কেউকে ভালোবাসে আবার দৃশ্য হতে বলে এসবের মানে কি ইভা (মামা)
-ওর কথা বাদ দেও জ্বর হয়েছে তো তাই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আলিবের সাথে ওর বিয়ে হবে(রিয়াদ)
ইভা সবার কথা শুনে বুঝলো আলিব দৃশ্য আছে। সবার সামনে আলিবকে ওরকম বলায় লজ্জা লাগছে আবার রাগ হচ্ছে তাই নিজের রুমে চলে গেলো।
ইভার মা লিমাকে বলেছে ইভাকে যেনো শাড়ি পড়িয়ে সাজিয়ে দিয়। ইভা আলিবের দেওয়া লাল রংয়ের শাড়িটা পড়েছে, চোখে কাজল, হালকা লিপস্টিক,হাতে চুড়ি , কানে ঝুমকো ব্যাস সাজ পরিপূর্ণ।
রিয়াদ, আলিব ইভার রুমে এসে বিছানার উপর বসলো। ইভা রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরে,
-না ভাই তুমি এখন রাগ সামলাও আমি গেলাম (রিয়াদ)
-ভাইয়া তুমি আগে ওকে একটু বুঝাও (আলিব)
-না পারবো না গেলাম (রিয়াদ)
রিয়াদ চলে গেলো।আলিব সংশয় কাটিয়ে বললো,
” আজকে কেমন যানো লাগছে তোমার সাথে কথা বলতে, আগে কখনো বিয়ে করতে আসি নি তাই আর তুমি রাগ করে থেকো না ”
ইভার আলিবের দিকে ঘুরে বললো,
“এটা প্রথম বিয়ে হবে না তো কি দ্বিতীয় বিয়ে হবে? খবরদার আমাকে ছাড়া অন্য কেউকে বিয়ে করলে সংসার টিকবে না ”
“আমি কি বলেছি অন্য কেউকে বিয়ে করবো? তুমি তো সবাইকে বলে বেড়াচ্ছো অন্য কেউকে বিয়ে করবে ”
“আমি তো জানতাম না আপনি দৃশ্য হয়েছেন ”
“আমি দেখতে চেয়েছি তুমি জাদু আলিবকে নাকি মানুষ আলিবকে ভালোবাসো তাই তোমাকে না চেনার ভান করেছি আর তুমি পাগলামি করে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধালে ”
“আমি বুঝেন না আপনাকে ভাল,,,,,”
“কি বলো”
“বলবো না ”
“আচ্ছা বলতে হবে না আমি বলছি, খুব ভালোবাসি মহারানী ”
“ভালোবাসে আবার না চেনার ভান করে যত্তসব ঢং ”
“আহ্ হা আমি তো দুষ্ট মিষ্টি টক ঝাল প্রেম করতে চেয়েছি আর তুমি রাগ করে সব শেষ করে দিলে ”
“ওতো প্রেম করতে ভাল্লাগে না তার থেকে বিয়ের পর জামাইয়ের সাথে প্রেম করবো ”
“তাই বুঝি জামাইয়ের জন্য সাজলে খুব বেশি সুন্দরী লাগে ”
এবার ইভা লজ্জা পেয়ে পেয়ে উঠে দাঁড়ালো। আলিবকে ইভাকে ড্রেসিং টেবিলর সামনে নিয়ে এটা চেইন পরিয়ে দিলো।
” জানতে চাইবে না হঠাৎ করে সবাইকে সাথে করে কেনো নিয়ে এসেছি বা এতো তাড়াতাড়ি পরিচয় হলো কি ভাবে? তোমার তো কৌতুহল বেশি? ”
ইভা মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক দিলো।
“রিয়াদকে বলেছি আমাদের বিয়ের ব্যাপারে আর তোমার বাবা তো নিজে থেকে তার মেয়ের জামাই করবে বলে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো রিয়াদের বিয়ের সময় তারপর রিয়াদ সব ব্যাবস্থা করলো ”
“এতো কিছু হলো আমি কিছুই জানতে পারলাম না ”
“একটু মিষ্টি খাও তাহলে মাথায় বুদ্ধি হবে ” বলে
আলিব ইভাকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। ইভার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, আলিবের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনছে। আলিব ইভার একেবারে খুব কাছে তখন ইভা আলিবের মুখ চেপে ধরে বললো
“এই মিষ্টির স্বাদ পরে গ্রহন করবো আপাতত বাজারের মিষ্টি খেলে হবে, এখন চলুন আমাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে ”
“হুম, তোমার জন্য ফিরে আসা আমার স্বার্থক হলো”
“ভালোবাসি রাজামশাই”
“ভালোবাসি মহারানী ”
ইভা আর আলিবের এনগেজমেন্ট হলো। কিছু দিন পরে ওদের বিয়ে সবাই বিয়ের আমেজে মেতে উঠছে।
[[সমাপ্ত ]]