তোমার নেশায় পর্ব ১৪

#তোমার_নেশায়!!
,
,
(১৪)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!!
,
,
,
,
রুপশা রাস্তায় কিছুক্ষন ওইভাবে পড়ে থাকায়, ওকে ঘীরে একটা ভীড় জমে গেছে। লোকজনের গুঞ্জন ও হাসির শব্দ শুনে ধীরে ধীরে রুপশা চোখ খুলল। নিজেকে রাস্তার ধারে এইভাবে পড়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে, পরর্বতিতে ওর মনে পড়ে গেল। রুপাঞ্জন খান নামক এক ঝড় ওর জিবনের সমস্ত সুখ লন্ডবন্ড করে দিয়েছে। লোকজন যারা এতোক্ষন ওকে দেখছিল তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল,

:– এই মনে হয় কোনো ভিক্ষিরি টিকিরি হবে।
,
:– আরে না দেখছিস না, গায়ে দামি শাড়ি কিন্তু তাও তো ছেড়া ময়লা, আমার মনে হয় এলেকায় নতুন পাগলি এসেছে। কোনো বড় লোকের ফেলে দেওয়া শাড়ি কুড়িয়ে পড়েছে। (অন্যজন লোক)
,
:– আরে ভাই, তোমাদের কি কাজ কর্ম নেই, শুধু রাস্তার পাগল দের দেখে সময় নষ্ট করছো। যাও সবাই নিজেদের কাজে যাও! (অন্য এক লোক)
,
রুপশার কানে লোকগুলার কোনো কথাই ডুকছেনা। তার এখন নিজেকে নর্দমার কীট মনে হচ্ছে। নিজের উপর ঘৃন্না হচ্ছে এইভেবে যে সে নিজের মায়ের খুনিদের সাথে এতোদিন ছিল। রুপাঞ্জন খানের মতো একটা লোককে কি করে ভালোবেসে ফেললাম আমি?? সে তো মানুষরুপি জানোয়ার, জানোয়ার দের বুকে তো কোনো হৃদয় থাকেনা তাহলে আমি কি করে ভাবলাম, ওই পশু আমায় ভালোবাসে। ওই আশ্রাফ খানের কারনে আজ আমার বাবা কে এতো কষ্ট পেতে হচ্ছে , ওই আশ্রাফ খানের কারনেই আজ আমি এতিম। মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত আমি শুধু মাত্র এই পশুগুলোর কারনে!
আমি আপনাকে ঘৃন্না করি রুপাঞ্জন!!!!(চিৎকার করে)
I just Hate you scoundrel!!!

,
অজোরে কাঁদতে লাগলাম আমি। কিন্তু তবুও যে মন হাল্কা হচ্ছে না। কেন এমন হলো আমার সাথে? আমার কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছি আমি?? কেন অন্য পাঁচটা মেয়ের মতো আমার সুখের সংসার করা হলোনা। আমি আপনাকে খুন করবো মি, রুপাঞ্জন খান! I will kill you…………..
আমার যে আর কাদার শক্তিও নেই। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে উঠে দাড়ালাম! প্রত্যাশা কাননের দিকে হাটতে লাগলাম। আমার শাড়ির আচল মাটির সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রাস্তা দিয়ে হাটছি আর ভাবছি অতিতের কথা! কি করে একটা মানুষ এতো নিখুত ভাবে অভিনয় করতে পারে। ওহহ সেতো মানুষ না, সে তো পশু! আর পশুরা সব পারে। আমার এখন নিজের জন্য কষ্ট হচ্ছেনা, এইভেবে কষ্ট হচ্ছে যে আমি এতোদিন আমার মায়ের খুনিদের এতো কাছ থেকেও চিন্তে পারিনি। মা! আমায় ক্ষমা করো! আমি অজান্তেই তোমার খুনির ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। আমি তোমার বাধ্য মেয়ের মতো কাজ করিনি। আমায় ক্ষমা করো মা! ক্ষমা করো……….
বাসায় এসে কলিং বেল চাপলাম। আমার যে সব শক্তি ফুরিয়ে এসেছে। কলিংবেলের সুইচ টা ও ঝাপসা লাগছে। দরজা খোলার পর বাবা কে দেখতে পেলাম,
:– বাবা!!!!!!

,
আর কিছু মনে নেই। চোখ খুলে দেখলাম বাবা আমার হাত ধরে কাঁদছেন। আমার নড়াচড়া বুঝতে পেরে উনি চেঁচিয়ে ডাক্তার কে ডাকলেন। আশেপাশের পরিবেশ দেখে বুঝলাম আমি হাস্পতালের বেডে শুয়ে আছি। ডাক্তার এসে আমার পালসরেট চেক করে বললেন,
:– thank god! পুরো ২ দিন পর আপনার সেন্স ফিরে এসেছে। এখন আমি সুস্থ আছেন, আর আপনি মিস রুপশাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।
,
:–Thanks docter! (রুপশার বাবা)
,
:– মা, তুই যখন দরজা খুলতেই ওমন হঠাৎ করে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলি আমি খুব ভয়ে পেয়ে যাই। তোর চোখ মুখের অবস্থা দেখে আমি বুঝে গিয়েছিলাম ওই শয়তান নিশ্চই তোর সাথে কিছু করেছে। আমি তোকে তাড়াতাড়ি এখানে নিয়ে আসি। ডাক্তার বললেন, কোনো কারনে তুই অনেক বড় শক খেয়েছিস। যার ফলে তুই জ্ঞান হারিয়েছিস। দুইদিন পর যখন তোর জ্ঞান ফিরেনি ডাক্তার রা বলেছিল তুই ধীরে ধীরে কোমায় চলে যাচ্ছিস। জানিস তখন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল আমি খুব ভয়ে পেয়ে গেছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমাকে আবার আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ। কিন্তু মা, তুই কেন এতো বড় শক খেয়েছিস বল!
,
:– বাবা আমি বাসায় যাবো! আমার এখানে ভালো লাগছেনা।
,
:– হুম। আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসি।
,
,
পরেরদিন সকালে বাবা আমায় নিয়ে বাসায় চলে আসে। দুইদিন বাবার সেবায় কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠি আমি। কিন্তু বলেনা, শরিলের ক্ষত শুকিয়ে যায়, কিন্তু মনের ক্ষত শুকায়না। আমি মানসিক ভাবে এখন ও আগের মতই। আগের সেই চঞ্চলতা হারিয়ে গেছে আমার! আমি এখন সারাদিন আমার রুমের বারান্দায় বসে থাকি, কারো সাথে কথা বলিনা। একা একা কাদি! কিন্তু বাবাকে কিছুই বুঝতে দেইনা। উনি মায়ের খুনিদের কথা শুনে সহ্য করতে পারবেননা। একদিন বিকালে বারান্দায় বসে বিকালের রোদ উপভোগ করছিলাম তখনই কেউ হাত রাখল দেখলাম বাবা।
,
:– কিছু বলবে বাবা?
,
:–মা আমি যে তোকে এইভাবে দেখতে পারছিনা, তুই যে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিস। আমারই ভুল হয়েছে মা! আমি যদি ওই বিয়ের জন্য রাজি না হতাম তাহলে আজ আমার মেয়েকে এতো কষ্ট পেতে হতোনা।
,
:- বাবা! ডিসিশান টা আমি নিয়েছিলাম এতে তোমার কোনো দোষ ছিলনা।
,
:– মা আমায় বল, কি হয়েছে তোর? কেন তুই এইভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিস।তোকে আমার দিব্যি দিলাম!
,
:– বাবা কি বলছো এটা?
,
:– হ্যা, তুই যদি আমায় সত্যি ভালোবেসে থাকিস আজ তুই কিচ্ছুই লুকাবিনা।
,
আমি আর থাকতে পারলাম না। বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। অনেকদিন পর কাদার জন্য একটা বুক পেয়েছি। কাদার পর একে একে বাবাকে সব বলতে লাগলাম। রুপাঞ্জনের মায়াজাল, রুপাঞ্জনের ভালো হওয়ার নাটক, ওর বাবা যে আমার মা কে খুন করিয়েছে। সব বলে আমি ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদতে লাগলাম।
,
:– মা! আমি আগেই জানতাম তোর মায়ের খুনের পিছনে আশ্রাফ খানের হাত আছে।
,
:– বাবা!
,
:– হ্যা রে! আমি তোকে কোনোদিন জানাইনি। কারন আমি চাইনি তুই তোর মায়ের খুনিদের এত কাছ থেকে দেখে কিছু একটা করে বসিস। তোর বিয়ের পর ও তোকে জানাতে চেয়েছিলাম যখন তুই রুপাঞ্জনের সাথে ঘুরতে যাওয়ার আগে এখানে এসেছিলি। কিন্তু সেদিন আমি তোর চোখে রুপাঞ্জনের জন্য গভির ভালোবাসা দেখেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম হয়ত, তোর এইই ভালোবাসাই রুপাঞ্জনকে বদলে দিবে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। মানুষ বদলাতে পারে কিন্তু অমানুষ কখন ও বদলায় না । আমারই ভুল মা! আমার সেদিন তোকে আটকানো উচিৎ ছিল।
,
আমি বাবার কথা গুলা শুনে নির্বাক হয়ে গেছি।
,
:– রুপশা মা! চল আমরা এই শহর থেকে এই অমানুষ গুলা থেকে অনেক দুরে কোথাও চলে যাই। লাগবেনা আমার কোনো বিজনেস! আমার বেচে থাকার শেষ সম্বল যে তুই! তোকে হারালে আমি যে মরে যাব মা!…..
,
:— বাবা আমরা কোথাও যাবোনা। আমি জানি এই বাড়িটাকে তুমি কতোটা ভালোবাসো। এখানে আমার মায়ের কত স্মৃতি আছে বাবা তুমিই তো বলতে।
,
:– তোর মায়ের সব থেকে বড় স্মৃতি তো তুই! তোর মা মরার সম্য শুধু এইটুকুই বলেছিল আমার মেয়েটাকে আগলে রেখো। চল মা আর না করিস না! আমরা আর এখানে থাকবোনা!
,
:– ঠিক আছে বাবা! আমায় দুইদিন ভেবে দেখার সময় দাও।
,
:– ঠিক আছে। আমি গেলাম তাহলে কেমন।
,
বাবা চলে গেলে আমি আবার বারান্দায় গিয়ে সন্ধ্যার ডুবন্ত সুর্যের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার জিবনের সব সুখ ও তো এই সুর্যের মতো ডুবে গেছে এই শহরে তো আমার জন্য আর কিছুই নেই!………..
,
,
,
অন্যদিকে রুপাঞ্জন আজ অনেক খুশি। সে তার ফুফিকে দেওয়া কথা রেখেছে। আহসান চৌধুরী আর তার মেয়েকে একেবারে রাস্তায় নিয়ে এসেছে। আজ তার খুশির দিন। তাই সে নিজের বাসায় একটা পার্টি দিয়েছি। বিয়ার পার্টি। সব কটা মেয়েবন্ধু কে ইনভাইট করেছে। রাত নামতেই সব গুলা মেয়ে চলে এলো ওর বাসায়। সব গুলাই মেয়েই ওয়েস্টার্ন ড্রেস আপে। মিউজিক শুরু হতেই ওরা হেলে দুলে নাছতে শুরু করলো। একটা মেয়ে এসেই রুপাঞ্জন কে জড়িয়ে ধরল।
রুপাঞ্জন ও বিয়ার হাতে নিয়ে অন্যন্য মেয়েদের সাথে তাল মেলাতে লাগল। কিন্তু কোথাও কিছু একটা ফাকা লাগছে। হয়ত মিউজিকের ভলিউম কম। তাই সে ডি জে কে বলে ভলিউম বাড়িয়ে দিল। মেয়েরা আরো জোরে নাচতে লাগল। কিন্তু রুপাঞ্জনের মনের অস্থিরতা তবুও কমছেনা। কেন এমন লাগছে বুঝতে পারছেনা। ওর তো আজ সব থেকে খুশি হওয়ার কথা! তাহলে কেন ও মন খুলে ইঞ্জয় করতে পারছেনা। ও এক কোনে দাড়িয়ে এইসব ভাবছিল তখনই একটা মেয়ে ওকে টেনে ওর বেডরুমে এনে বিছানায় দাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। রুপাঞ্জন কিছু বলে উঠার আগেই মেয়েটা রুপাঞ্জনের বুকের উপর উঠে কিস করতে লাগল। কি মনে করে রুপাঞ্জন ওই মেয়েকে সজোরে থাপ্পর দিয়ে নিচে ফেলে দিল। তারপর চেচিয়ে বলল,

:– How dare you?? এই বিছানায় শোয়ার সাহস হলো কি করে তোমার? এই বাছানায় শুধু……………
,
রুপাঞ্জন নিজেই থতমত খেল। ও কি বলছে আর কি করছে। বিয়ের আগে তো ওর জন্য এটা কমন ব্যেপার ছিল তাহলে আজ ও মেয়েটার সাথে এইভাবে রিয়েক্ট করলো কেন???
,
,
,
,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here