তোমার নেশায় পর্ব ২১

# তোমার_নেশায় !
.
.
(২১)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
চোখে আনন্দের অশ্রু নিয়ে হেটে চলছি হাস্পাতালের
করিডোর ধরে। নার্স একটু আগে খবর দিয়ে গেছে যে
ফুফির জ্ঞান ফিরেছে। আমার আর তর সইছে না। ফুফির
সাথে প্রায় ২৩ বছর পর কথা বলবো। মা ছিলোনা কিন্তু
সেই অভাব ফুফি আমাকে কখন ও বুঝতে দেয়নি। আজ মনে
হচ্ছে এতো বছর পর আবার আমার মা কে ফিরে পেয়েছি।
কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে ডুকলাম। দেখলাম ফুফি
চোখ বন্ধ করে বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে। আমি
কাছে গিয়ে আস্তে করে ডাকলাম,
,
:– ফুফি!!!
,
ফুফি ধীরে ধীরে চোখ খুললেন। ভেবেছিলাম এই চোখে
অনেক বছর পর আমার জন্য স্নেহ দেখতে পাব কিন্তু চোখ
দুইটো যেন ক্রোধ এর আগুনে হিংস্র হয়ে আছে। আমি আর
কিছু বুঝে উঠার আগেই,,
:– ঠাসসসসসসস!!!!!
,
গালে হাত দিয়ে নির্বাক হয়ে বসে আছি। এতো গুলা বছর
পর ফুফি সুস্থ হলেন তার এই কাজের কারন বুঝতে
পারছিনা আমি। তবুও আমি আবার জিজ্ঞাস করলাম,
,
:– কেমন আছো ফুফি!!!
,
উনি আমাকে সঝোরে দাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললেন,
,
:– চুপ কর তুই!!! তোর ফুফি মরে গেছে। আমি তোর কেউ না।
আমার রুপাঞ্জন এমন ছিলনা সে ছিল ফুলের মতো পবিত্র
আর নিষ্পাপ। আমি তাকে এই শিক্ষায় বড় করিনি। তুই
কিছুতেই আমার রুপাঞ্জন হতে পারিস না। তুই একটা
পাপি, প্রতারক!!! চলে যা আমার চোখের সামনে থেকে।
গেট আউট!!!!
,
:– কিন্তু ফুফি……
,
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই কেবিনের দরজা ঠেলে
আশ্রাফ খান প্রবেশ করলেন। বোন এতো বছর পর বসে
থাকতে দেখে খুবই আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন।,
,
:– কুহু লক্ষ্মি বোন আমার! কেমন আছিস……..
,
:– মিঃ আশ্রাফ খান যেখানে দাড়িয়ে আছেন সেখানেই
থেমে যান। আমি আপনার কেউ না। আমি কোনো খুনির
বোন হতে পারিনা। আমার জন্য আমার ভাই সেদিনেই মরে
গিয়েছিল যেদিন সে একটা নিস্পাপ মহিলার খুন
করিয়েছিল। যেদিন সে এক নবজাতক শিশু থেকে তার মা
কে কেড়ে নিয়েছিল। যেদিন সে একজন ভদ্রলোক থেকে
তার প্রিয়তমা স্ত্রী কে কেড়ে নিয়েছিল। যেদিন সে
একটা সুখের পরিবার কে ধধংস করে দিয়েছিল। সেদিনই
আমার জন্য আমার ভাই মারা গিয়েছিল। আর যেই
ভাতিজা কে আমি নিজের ছেলের মতো বড় করেছিলাম
কখন ও ভাবতে পারিনি সে ও নিজের বাবার মতো পাপি
হবে নাহলে তাকে ছোট বেলায় গলা টিপে হত্যা করে
ফেলতাম। যে পরিবার কে আগেই ধধংস করে
দিয়েছিলেন তাদের বাকি জিবন টুকুও না নিয়ে আপনি
আশ্রাফ খান শান্তি পাননি। তাই নিজের ছেলেকে ওই
মা হারা নিষ্পাপ মেয়ের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছিলেন
যাতে সে ওই মেয়ের জিবন নষ্ট করে দিতে পারে। চলে
যান এখান থেকে, আপনারা কেউ আমার কিছু নন, কোনো
পশুদের সাথে আমার রক্তের সমপর্ক থাকতে পারেনা।
দিনের পর দিন একটা ভুলবুঝা বুঝি কে কেন্দ্র করে
আপনারা একের পর এক পাপ করে গেছেন।
,
আমি ফুফির কথা শুনে থতমত খেলাম। ফুফি আহসান খান
কে ভদ্রলোক বলছেন কেন? উনি তো ফুফির সাথে
প্রতারনা করেছিলেন। যার ফলে ফুফি সুইসাইড করেছিল।
আর কিসের ভুলবুঝা বুঝির কথা বলছেন উনি??
,
আশ্রাফ খান এতোক্ষন চুপ ছিলেন। এবার মুখ খুললেন,
:– দেখ বোন আমরা যা করেছি তোর জন্যই করেছি। ওরা
তোর সাথে যা করেছে তার শাস্তি দিয়েছি ওদের। আর
কিসের ভুলবুঝাবুঝির কথা বলছিস??
,
:– আশ্রাফ খান দয়া করে আমায় বোন ডাকবেন না। আসল
সত্যি জানা ছাড়াই আপনারা এতো পাপ করেছেন যে
আল্লাহ ও আপনাদের ক্ষমা করবেন না।
,
:– কিসের সত্যি ফুফি????
,
:– ২৩ বছর আগের আসল সত্যি! যা শুধু আমি জানি।
,
:– ফুফি প্লিস বলো কিসের কথা বলছো তুমি???
,
:– আমি, প্রত্যাশা আর আহসান চৌঃ বেষ্ট ফ্রেন্ড
ছিলাম। কলেজ লাইফ থেকে শুরু করে ভার্সেটি পর্যন্ত
আমাদের বন্ধুত অটুট ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি
আহসান কে ভালোবাসতে শুরু করি । কিন্তু আহসান আমায়
শুধুই বন্ধুর চোখে দেখতো। অনেকদিন মনের মধ্যে ওর জন্য
ভালোবাসা পুশে রেখেছিলাম। কিন্তু ওকে বলার জন্য
সাহস হয়ে উঠছিলনা। তারপর যেদিন আহসানের
জন্মদিনের পার্টি তে আমাদের ইনভাইট করা হলো। আমি
ভেবে নিলাম ওকে প্রপোজ করার এর থেকে ভালো
সুযোগ আমি আর পাবোনা । সেদিন খুব সুন্দর করে
সেজেছিলাম পার্টি তে সবাইর চোখ শুধু আমার দিকেই
ছিল। কিন্তু আমি খুজছিলাম আহসান কে। ওকে দেখার
পর আমি ওর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে সবাইর সামনে ওকে
প্রপোজ করলাম। ও কিছুক্ষন অবাক হয়ে আমার দিকে
তাকিয়ে ছিল। তারপর হাসি মুখে আমায় এক্সচেপ্ট করে
নিল। সেদিন প্রত্যাশা ও অনেক খুশি ছিল। কিন্তু পরে
আমি জানতে পারি প্রত্যশা ও আহসান কে ভালোবাসত
আর আ্হসান প্রত্যাশা কে। কিন্তু প্রত্যাশা আমাকে ও
অনেক ভালোবাসত তাই প্রানের বান্দুভির জন্য নিজের
ভালবাসা ত্যাগ করলো আর আহসান কে হাতঝোড় করে
বলেছিল ও যেন আমাকে মেনে নেয়। আহসান ও
প্রত্যাশার অনুরোধে আমাকে মেনে নেয়। কিন্তু
কোনোদিন আমাকে ভালোবাসার অভাব বুঝতে দেয়নি।
একদিন আমি আহসানের আর প্রত্যশার ত্যাগের কথা
ভাবতে ভাবতে গাড়ি ড্রাইব করছিলাম। মনে হচ্ছিল
আমি ওদের দুজনের মাঝখানে চলে এসেছি। তখনিই একটা
ট্রাকের সাথে আমার এক্সিডেন্ট হয়। সময় মতো
হাস্পাতালে নেওয়ার ফলে প্রানে বেচে গেলেও মা
হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। ডাক্তার জানালো আমি
কোনোদিন ও মা হতে পারবোনা। সব শুনেও আহসান
আমায় বিয়ে করতে চেয়েছিল কিন্তু আমি সায় দিনাই।
আমার বিবেক বাদ সাধল কারন আমি ওকে কোনোদিন
ওকে সন্তান সুখ দিতে পারবোনা। সেদিন প্রত্যাশা
আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল। আমি প্রত্যাশার
হাত আহসানের হাতে তুলে দেই। আমি জানতাম আহসান
প্রত্যাশার সাথে অনেক সুখি হবে। ওদের বিয়ে হয়ে যায়।
কয়েকমাস কেটে যায়। আমি ও রুপাঞ্জন কে আমার
ছেলের মতো বড় করতে লাগলাম। ভেবেছিলাম
সারাজিবন এইভাবেই কাটিয়ে দেব রুপাঞ্জন কে
ভালোবেসে। ওই তো আমার সন্তান। কিন্তু মাঝেমাঝে
খুব মন খারাপ হতো নিজের অবস্থার জন্য। একদিন ছাদে
আমি আমার ফুল গাছে পানি দিচ্ছিলাম তখনই
প্রত্যাশার ফোন এলো। ও আমাকে জানালো ও শিঘ্রিই
মা হতে চলেছে। সেদিন সত্যি অনেক খুশি হয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম ওদের যদি মেয়ে হয়ে আমার রুপাঞ্জন কে
ওর সাথে বিয়ে দিয়ে এখানে নিয়ে আসব। ওর সাথে কথা
বলতে বলতে কখন ছাদের রেলিং এ ধারে এসে
পড়েছিলাম বুঝিনি। যক্ষন হুশ হলো ততক্ষনে অনেক দেরি
হয়ে গেছে আমি টাল সামলাতে না পেরে ছাদ থেকে
পড়ে যাই। মনে হচ্ছিল ধীরে ধীরে প্রান বেরিয়ে
যাচ্ছে। সবাই ভাবল আমি সুসাইড করেছি কিন্তু আসল
সত্যি কাউকে জানাতে পারিনি। আমি জিবন্ত লাশ হয়ে
বাঁচতে শুরু করলাম। কিন্তু আমি সবাইর কথা শুনতে পেতাম
কিন্তু কোনো রেসপন্স করতে পারতাম না। ভাইয়া
সারাক্ষন রাগে গজগজ করতে লাগল ভাবতে লাগল সব
দোষ আহসান এর। ও আমাকে ভালোবেসে প্রত্যাশা কে
বিয়ে করেছে। কিন্তু আমি অনেক চেয়ে ও ভাইয়া কে
সত্যি টা বলতে পারতাম না। তারপর একদিন ভাইয়া
আমাকে এসে বলল,
:– কুহু বোন শোন না। তোর ওই শত্রু আছে না প্রত্যাশা ওর
একটা মেয়ে হয়েছে।
,
এটা শুনে আমার মন ভিতরে ভিতরে নাছতে শুরু করল। কিন্তু
পরের সংবাদ শুনে যেন আমি আবার ও প্রান হারালাম।
,
:– ভাইয়া এক ডাক্তার কে দিয়ে বিষের ইঞ্জেকশান পুশ
করিয়ে প্রত্যশা কে খুন করিয়েছে। আহসান নিজের
মেয়েকে বুকে নিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদছে। এটা বলে
ভাইয়া হাসিতে ফেটে পড়ল। আর আমি ভিতরে ভিতরে
চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলাম কিন্তু বাইরে কেউ সেটা
দেখলনা। ছোট রুপাঞ্জন প্রতিদিনন আমার কাছে আসত
আমি ওর সাথে অনেক কথা বলতাম মনে মনে। কিন্তু সেটা
শুধু আমি শুনতাম ও শুনতোনা। আমি ওকে বলতাম তুই বড়
হয়ে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডের মেয়েকে বিয়ে করিস। তখন
মনে হবে প্রত্যশা আমার সাথেই আছে। কিন্তু রুপাঞ্জন
সেটা শুনতোনা। এইভাবে দিন যেতে লাগল। দেখতে
দেখতে অনেক গুলা বছর কেটে গেল। আমার ছোট
রুপাঞ্জন অনেক বড় হয় গেল। কিন্ত আমার প্রতি
ভালোবাসা ঠিক আগের মতই ছিল। কিন্তু আমি জানতাম
আমার প্রতি ওর গভির ভালোবাসা ওকে দিয়ে এমন জঘন্য
কাজ করাবে। ছোট থেকে চাইতাম রুপাঞ্জনের সাথে
রুপশার বিয়ে হোক। সয়ং আল্লাহ ও হয়ত এটাই চাইতেন।
তাই রুপাঞ্জনের সাথে রুপশার বিয়ে হয়। প্রথম যেদিন
রুপশা আমার পাশে এসে বসেছিল। আমি অপলক তাকিয়ে
ছিলাম ওর দিকে অবিকল যেন প্রত্যাশা। সেই গভীর
চোখ, সেই নাক! আর একি ঘন কালো চুল। খুব ইচ্ছা করছিল
ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করি। কিন্তু পারলাম না। ও
আমার হাত ধরে বলেছিল, আমায় ক্ষমা করে দিন। আমি
জানি আপনি একদিন ঠিক সুস্থ হবেন।
যেখানে বড় বড় ডাক্তাররা বলেছিল আমি কোনোদিন
সুস্থ হবোনা। সেখানে ওই মেয়েটাই একমাত্র আমায়
বলেছল আমি সুস্থ হবো। রুপাঞ্জন ওকে দিনের পর দিন
কষ্ট দিতে লাগল। তার পর ও মেয়েটা কোন প্রতিবাদ
করেনি। আমার সেবায় কোন ত্রুটি রাখেনি। প্রতিদিন
এসে আমার সাথে অনেক গল্প করত। ওর মা ও এমন ছিল
সারাদিন বকবক করত। আমি অবাক ও দেখতাম ওকে। ও না
সাঝলেও ঠিক পরির মতো দেখাতে ওকে। যেদিন
রুপাঞ্জন ওর হাত পুড়িয়ে দিয়েছিল সেদিন আমার বুক
ফেটে গিয়েছিল। ওই কোমল মেয়েটার সাথে রুপাঞ্জন
কি করে এমন পাশুবিক আচারন করতে পারলো। এটা কি
আমার সেই ছোট রুপাঞ্জন? সে এতো টা হৃদয় হীন হয়ে
গেছে। মেয়েটা তাও ওকে ছেড়ে যায়নি। যেদিন
মেয়েটা আমাকে এসে বলেছিল ও রুপাঞ্জন কে
ভালবাসে সেদিন অনেক খুশি ও হয়েছিলাম আবার কষ্ট ও
পেয়েছিলাম। কারন রুপাঞ্জন কখন ও ওকে গ্রহন করবেনা।
তারপর রুপাঞ্জন হঠাৎ বদলে গেল ওর সাথে ভালো
আচারন করতে লাগল। ওকে সব সুখ দিতে লাগল মেয়েটা
আমার কাছে এসে খুব হাসিমুখে তার সুখের গল্প শুনাতো।
আমি চুপ করে শুনতাম কিন্তু আমি জানতাম ওর এই সুখ
সাময়িক। রুপাঞ্জন শুধু ওর সাথে খেলছে। একদিন শুনলাম
ওরা বেড়াতে যাবে। রুপশা সেদিন অনেক কেঁদেছিল
আমার কাছে! আমাকে সাথে নিতে পারছে না সেই জন্য।
কিন্তু বলেছিল যখন আমি সুস্থ হবো ও আমাকে নিয়ে
যাবে। আর আমাকে ঝোর দিয়ে বলেছিল আমাকে সুস্থ
হতে হবে, ওর বাচ্চাদের সাথে খেলার জন্য। জানিস তখম
ওর হাবভাব দেখে মনে হয়েছিল ও প্র্যেগনেন্ট। কিন্তু ও
তো একটা বাচ্চা মেয়ে তাই বুঝতে পারেনাই।
তুই কি করে পারলি রে?? কি করে পারলি? মেয়েটা কি
নিয়ে বাঁচবে এবার? তোর সন্তান কার পরিচয় বড় হবে?
সমাজে সবাই উঠতে বসতে রুপশা কে কথা শুনাবে। তোকে
ভালোবেসে শেষ পর্যন্ত এটাই ছিল ওর কপালে। না
জানি এখন ও বেচে আর না এই কষ্ট নিতে না পেরে………
আমাকে ভাইয়ার বাসায় শিফট করা হলো। তারপর একদিন
শুনলাম রুপাঞ্জন ওকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
সেদি সত্যি অনেক ঘৃন্না হয়েছিল আপনাদের বাপ
ছেলের উপর। আমি আজ সুস্থ অথচ যে আমার এই সুস্থতা
কামনা করত সেই আমার সাথে নেই!
,
এইটুকু বলে ফুফি থামলেন। আমি দাড়ানো থেকে বসে
পড়লাম। আজ আমার সব ভাষা হারিয়ে গেছে। বারবার
কানে বাজছে, রুপশা প্র্যেগনেন্ট ছিল!
আমি সত্যি টা না জেনে আমার স্ত্রী আমার সন্তানের
সাথে এতো বড় অন্যায় করলাম।
রুপশা!!!!!!!!!!!!!!!!!
,
,
,
,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here