# তোমার_নেশায় !
.
.
(০৮)
.
.
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
,
,
,
রুপাঞ্জন আমায় জোর করে মেডিসিন খাওয়ালেন।
তারপর বললেন,
:– এখন একটু রেস্ট নাও! ঠিক ১২ টায় আমি তোমায় নিতে
আসব।
,
:– কোথায় নিতে আসবেন?
,
:– সারপ্রাইজ!
,
:– কি সারপ্রাইজ??
,
:– বলে দিলে তো মজাই নষ্ট হয়ে যাবে। এখন ঘুমাও তো!
গুড নাইট বিউটি!!
এই বলে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলেন।
আমি ভাবছি কি এমন সারপ্রাইজ দিবে রাত ১২ টায়। কাল
সকালে ও তো দেওয়া যেত। আচ্ছা যাইহোক, আজ আমি
অনেক খুশি। আমার ও অন্যদের মতো একটা লাভিং
হাজবেন্ড হয়েছে যে আমায় অনেক ভালবাসবে। এইসব
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষন পর, কেউ একজন
কানের মধ্যে ফিসফিস করে কিছু একটা বলায় ঘুম ভেঙে
গেল। কিন্তু চোখ না খুলে শোনার চেষ্টা করলাম কে
কানে ফিসফিস করছে। একটু শুনতেই বুঝতে পারলাম এটা
আর কেউ না আমার রাগি হাজবেন্ড। আর কানে ফিসফিস
করে বলছে, বউ উঠে পড়ো!!
ওনার বউ ডাক টা শুনতে খুব ভালোই লাগছিল তাই ঘুমের
ভান করেই শুয়ে থাকলাম। হঠাৎ উনি খুব জোরেই বললেন,
বউ উঠো!!!!!!
আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। উফফ!! কানের পর্দা গেল
মনে হয়। আমার এই অবস্থা দেখে শয়তান টা হাসতে
হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,
:– এতো হাসার তো কিছু হয়নি।
,
:– ওলে বাবা লে, বাবু সোনা রাগ করেছে। কি করবো
বলো, আমি বুঝে গিয়েছিলাম তুমি ইচ্ছা করে উঠছোনা
তাই ওভাবে চেচালাম।
,
:– হুম, বুঝছি আমি। এখন বলুন তো কি এমন দেখানোর জন্য
আমার সাধের ঘুম নষ্ট করলেন।
,
:– কেন যে জাগালাম, কেন জাগিয়েছি। উমম… মনে
পড়ছে না। তোমার কিছু মনে আছে নাকি??
,
:– ভালো হচ্ছে না কিন্তু! আমি ঘুমালাম তাহলে।
,
:– ওহহহহ মনে পড়েছে। আমার বউ টা সারপ্রাইজ দেওয়ার
কথা ছিল তাইতো চলো!!
,
:– আমি হাটবো কি করে? খুব উইক লাগছে।
,
:– হুম তাহলে একটা হুইলচেয়ার নিয়ে আসি কেমন??
,
:– আবার ফাজলামো??
,
:– হা হা হা সরি।
,
এই বলে কোলে তুলে নিলেন আমাকে। লোকটা যে এতো
দুষ্ট কখন ও বুঝতেই পারিনি আর কত রোমান্টিক। এইগুলা
মনে মনে ভেবে মুচকি হাসছি আমি। উনি আমাকে নিয়ে
ছাদের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছেন। আমাকে হাসতে দেখে
বললেন,
:– এতো হেসোনা তো আবার প্রেমে পড়ে যাবো। আর
বুঝতেই তো পারছো এই সিড়ির উপর থেকে তোমাকে
নিয়ে যদি পড়ে যাই তাহলে কাল সকালে পুলিশ এই বাসা
থেকে দুইটা ডেডবডি উদ্ধার করবে।
,
:– শাট আপ!! যা তা বলেন কেন? মুখে কিছুই আটকায় না।
,
:– উহুম কিছুই আটকায়না। আমি এমনি!!!
,
টুকটাক কথা বলতে বলতে উনি আমাকে ছাদে নিয়ে
এলেন। কোল থেকে নামিয়ে একটা চেয়ারে বসালেন।
ছাদের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছি, কই সারপ্রাইজ
হওয়ার মতো কিছুই তো দেখছিনা। উনি আমাকে অবাক
হতে দেখে বললেন,
:– কি খুজছো???
,
:– আপনার মাথা!!
,
:– আমার মাথা তো আমার সাথেই আছে ওইদিকে কি
খুজছো??
,
:– কিছুনা।
,
:– আচ্ছা এই নাও!!
,
:– আরে এটা তো মাইক। আমাকে নিয়ে মজা করছেন
কেন?? মাইক দিয়ে কি করবো আমি!!
,
:– আচ্ছা তুমি আমাকে ভালোবাসো??
,
:– হুম বাসি তো। এটা কেমন প্রশ্ন??
,
:– হুম এই কথাই এই মাইকে বলো।
,
:– এই আপনার মাথা খারাপ রাত ১২ টা বাজছে আর আমি
মাইকে এইসিব বলব। সোসাইটির লোকজন কি ভাববে??
,
:— এই যে ম্যেডাম। শীত কালে এখন সবাই কম্বল মুড়ি
দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে তোমার এই কথা শুনার জন্য কেউ
জেগে নেই। নাও বলো,!
,
:– আচ্ছা সারপ্রাইজ কই আমার??
,
:– আহা, আগে আমার কথা শুনো তো। আচ্ছা বলতে হবেনা
যাও।
,
আমার হাব্বি টা রাগ করেছে। ওনাকে কিভাবে খুশি
করতে হবে আমি জানি, মাইক টা হাতে নিয়ে অন
করলাম। তারপর যতটা সম্ভব চিৎকার করে বললাম,
:– I love you…. Rupanjon!!!!!!!!!!! I love you A lot…
,
আমি এটা বলার সাথে সাথে পুরো আকাশ বিভিন্ন
আলোয় রঙিন হয়ে উঠল। হাজার রকমের তারাবাজি
ফাটতে লাগল। বেগুনি কালার একটা তারাবাজি
ফাটতেই কয়েকটা লেখা ভেসে উঠতে লাগল আকাশের
বুকে, আমি আরেকটু সামনে গিয়ে লেখাটা বুঝার চেষ্টা
করলাম।
,
Happy Birthday Rupsha!! wishing you a very Happy life…And I
love U too…..(Rupanjon)
,
আনন্দে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। উনি আমার
জন্মদিনের কথা জানলেন কি করে? আমি নিজেই তো
ভুলে গিয়েছিলাম। তখন উনি পিছন থেকে আমায় চেপে
ধরে কানে কানে বললেন,
Happy Birthday My dear Wife…..!!!
তোমায় ভালবাসতে পেরেছি আর তোমার জন্মদিন কবে
সেটা জানতে পারবোনা। কেমন লাগলো সারপ্রাইজ???
,
আমি সামনে ঘুরে বললাম,
:– অনেক সুন্দর! আমায় লাইফে ফাস্ট টাইম কেউ এতো
সুন্দর করে উইস করলো। আমি ভাবতেই পারিনি আমার
জন্মদিন আপনি মনে রাখবেন। I am very happy!!
আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম। উনি আমাকে বললেন, চলো
কেক কাটবে!
,
:– কেক ও আছে??
,
:– কেন জন্মদিনে কেক আনতে ট্যেক্স দিতে হয় বুঝি?
,
:– দুর, সারাক্ষন দুষ্টমি।
,
:– একটা মাত্র বউ আমার!!
,
:– আরো লাগবে বুঝি??
,
:– হুম আরও অনেক গুলা লাগবে তবে বউ না ভালোবাসা
তাও শুধু তোমার!
,
তারপর আমরা দুজন মিলে ছাদেই একটা কেক কাটলাম।
একে অপরকে খাওয়ানোর পর, ক্রিম মাখামাখি ও হলো।
,
:- আমার গিফট কই??
,
:– গিফট লাগবে বুঝি??
,
:– হুম লাগবে!!!
,
:;- ওকে চোখ বন্ধ করো!!
,
:– আমি চোখ বন্ধ করলাম। কিন্তু অনেকক্ষন হয়ে গেল
উনি আমাকে চোখ খুলতে বলছেন না। আজিব! আমি চোখ
খুলে ফেলি কিন্ত আমার সামনে উনি নেই।
কিছুটা হাটতেই একটা টুল এর উপর একটা খাম পড়ে
থাকতে দেখলাম।কৌতুল বশত আমি খাম টা খুলে
দেখলাম। খাম টা খুলতেই আমার খুশিতে হার্ট এট্যেক
হওয়ার অবস্থা!!
১০ দিনের জন্য সিঙ্গাপুরের কাপল টিকেট! আমরা ঘুরতে
যাবো। এতো খুশিতে আমার জর টর সব পালিয়েছে কিন্তু
লোকটা গেল কই??
আমি খুশিতে লাফাচ্ছি?? তখন ই উনি পিছন থেকে এসে
আমার সামনে আইসক্রিম তুলে ধরলেন। উফফ! আমি আজ
খুশিতে পাগল হয়ে যাব।
,
আমি ওনার উপর ঝাপিয়ে পড়লাম।
:–Thank u, Thank u, Thank u so much!! আপনি কি করে
জানলেন আমি আইসক্রিম খেতে ভালোবাসি আর
সিঙ্গাপুর যাওয়ার ইচ্ছা আমার অনেকদিনের কিন্তু একা
একা ঘুরতে ভালো লাগেনা। বাবা অসুস্থ বলে তাকেও
নিয়ে যেতে পারিনি। আমি আপনার সাথে যাব কি
মজা!!!
,
:– হুম আমি তো জ্যোতিষ বিদ্যা শিখিনি তবে তোমার
ডাইরি টা আমায় অনেক হেল্প করেছে। প্লাস এটাও
জানতে সাহায্য করেছো তুমি আমার কি কি নাম
রেখেছো, শয়তান, জানোয়ার, পশু, হায়না, পাষান…….ভাল
োবাসি কথা টার পাশেও হারামি লিখে রেখেছো।
,
আমি রাগে ওনাকে কিল মারতে লাগলাম।
,
:– শয়তান, হারামি অন্যের ডাইরি পড়তেই নেই
জানোনা??
,
:– আচ্ছা পরে মেরো, আগে আইসক্রিম খেয়ে নাও!!
যদি ও অনেক শীত তবুও তোমাকে হ্যাপি রাখতে আনলাম।
আর যদিও শীত লাগে আমায় বলো কিন্ত……
,
:– শয়তান, ইতর, ক্যেরেক্টার লেস কোথাকার???? ওয়েট
আইসক্রিম শেষ করে নিই তারপর মারবো।
,
:– এখন নিচে চলুন ম্যেডাম। ছাদে বেশিক্ষন থাকলে
ঠান্ডা লেগে যাবে।
,
:– হুউউ!! এতো কেয়ার কই ছিল যখন আমার উপর এতো
নির্মম অত্যাচার করতে। একটুও দয়া হতোনা??
,
:– খোটা দিচ্ছো কেন? তখন তো প্রতিশোধের আগুনে
জলছিলাম আমি।
,
:– আচ্ছা আমরা চলে গেলে ফুফি কই থাকবেন।
,
:– ওনাকে বাবার বাসায় শিফট করানোর ব্যবস্থা
করিয়েছি। আমাদের তো পরশু ফ্লাইট। কালকের মধ্যে
হয়ে যাবে সব!
,
নিচে এসে ঘুমানোর জন্য নিজের রুমের দিকে পা
বাড়ালাম। তখনই রুপাঞ্জন সামনে এসে দাড়ালো
,
:– কই যাচ্ছো?
,
:– কেন, ঘুমাতে।
,
:– আমাকে আর আমার রুম কে একা রেখে তুমি ওখানে
ঘুমাবে??
,
আমি ও একটু ভাব নিলাম।
,
:– ছিছিছি স্যার! একটা সামান্য মেডকে নিজের রুমে
রাখবেন।
,
:- সরি তো! আর কত খোটা দিবে?? ওই মেডকে তাড়িয়ে
দিয়েছি এখন আমার বউ আমার বেডরুমে থাকবে।
বুঝেছেন??
,
:– হুউ! ডং!!!
,
:– চলুন এবার!!
,
ওনার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। তারপর ভাবতে
লাগলাম, বাবা জানলে কতো খুশি হবে যে রুপাঞ্জন
আমায় স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে। হয়ত রুপাঞ্জন
নিজেই বাবা কে ক্ষমা করে ফিরিয়ে নিবে।
,
,
,তো
,ত