তোর আসক্ত পর্ব -১৩

#তোর আসক্ত❤
#পর্ব – ১৩
#writer_শিফা_আফরিন_মিম

🍁
আমান – একটু আকটু তো দিতেই হয়। তোমার বোন বলে কথা। আমার বেয়ানজী! (দাঁত কেলিয়ে)

রুপসা – আচ্ছা হয়েছে এবার যাও।

আমান – হুম যাচ্ছি রেডি হয়ে আসছি ওকে।

রুপসা – ওকে।

আমান রেডি হয়ে রুপসাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়।

রাইসা সাজুগুজু করে রেডি হয়ে বসে আছে। কিন্তু একটা কথা কিছুতেই তার মাথায় ঢুকছে না তাকে নিয়ে যাবে কে?
আপু? নাহ। আপু তো একা আসবে না। তাহলে হয়তো বাড়ির ড্রাইভার কে পাঠাবে।
ধুরর যাকেই পাঠাক আমার দেখার বিষয় না। আমার আপুর কাছে যেতে পারলেই হলো ব্যাস।

রাইসা বসে ওয়েট করছে এমন সময় দরজায় কেউ বেল বাজায়।

রুপসার মা – রাইসা… দেখ তো কে এসেছে।

রাইসা – কে আবার হবে মা। নিশ্চয় আপু ওদের ড্রাইভার কে পাঠিয়েছে আমাকে নিয়ে যেতে।

রুপসার মা – আচ্ছা আগে গিয়ে দেখবি তো নাকি।

রাইসা – ওকে ওকে যাচ্ছি।

রাইসা পরিপাটি হয়ে গিয়ে দরজা টা খুলতেই চমকে উঠে!

রাইসা – আপনি?

আমান – তো? অন্য কারোর আসার কথা ছিলো নাকি?

রাইসা – আপনি আবার ফালতু কথা শুরু করে দিয়েছেন। ঐ দিনও আপনার জন্য আমার মায়ের কাছে বকা শুনতে হলো। আজও যদি শুনি তো আপনাকে আমি….

আমান – আমাকে আপনি কী? (বাঁকা হেসে)

রাইসা – গুলি করে দেবো। (রাগে কটমট করে)

আমান রাইসার কথা শুনে হো হো করে হেসে দেয়।

আমান – গুলি করলে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে কে শুনি?

রাইসা – এতো কিছু জানিনা। আর আমি কি আপনার সাথে যাবো নাকি!

আমান – ইয়েস ম্যাম। আপনাকে নিতেই আমি এসেছি। বাই দ্য ওয়ে…. আপনি রেডি তো? না হলে ঝটপট রেডি হয়ে নিন। আমি বেশিক্ষণ ওয়েট করতে পারবো না।

রাইসা – আমি যাবো না আপনার সাথে ব্যাস।

আমান – ওকে ফাইন। তাহলে আমি গেলাম। টাটা।

রাইসা বেচারির রাগে দুঃখে কান্না আসছে। এতো আশা করে আছে বোনের সাথে আড্ডা মারবে, দু’জন একসাথে ঘুরতে যাবে। শেষে কিনা সব শেষ হয়ে গেলো! তাও এই ছেলেটার জন্য। ওফফ আপু যে কি!
দেশে আর মানুষ পেলো না। উনাকে ছাড়া।

রাইসা – শুনুন…

আমান – কী হলো?(ভ্রু কুঁচকে)

রাইসা – আপনি বসুন আমি আসছি।

আমান মুচকি হেসে ভেতরে এসে বসে।

রুপসার মা আমানের জন্য কফি করে নিয়ে আসে। কিছুক্ষণ বসে কথা বলার পর রাইসা আসে।

রাইসা – আমি রেডি।

আমান – আন্টি (রুপসার মাকে) আসি তাহলে।

রুপসার মা – হ্যা বাবা সাবধানে যেও। আর রাইসা শোন… কোনো অশান্তি করিস না ওখানে গিয়ে।

রাইসা – ওকে মা। বাবার খেয়াল রেখো আর সাবধানে থেকো।

রাইসা তার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।

আমান গাড়ির সামনে গিয়ে রাইসা কে ইশারা করে গাড়িতে উঠতে বলে তারপর নিজে ড্রাইভিং সীটে বসে পড়ে।

রাইসা পেছনের সীটে বসলে আমান রাগে গজগজ করে রাইসার দিকে তাকায়…

আমান – আমাকে কি তোমার ড্রাইভার পেয়েছো?

রাইসা – না তো! কেনো?

আমান – তাহলে ভাব দেখিয়ে পেছনের সীটে বসলে কেনো?

রাইসা – আমার ইচ্ছে তাই।

আমান – তোমার ইচ্ছে তোমার ব্যাগে রাখো। আর সামনের সীটে এসে বসো। কুইক….

রাইসা – ওফফফ…. এতো কাহিনী করার কী আছে বলুন তো।

আমান হটাৎ গাড়ি থামিয়ে রাইসার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকায়। রাইসা ভয় পেয়ে ভদ্র মেয়ের মতো সামনের সীটে এসে বসে।
বাকি পথ আর কেউ কোনো কথা বলেনি। অবশ্য আমান দুই এক বার বকবক করেছে রাইসা শুধু ইশারায় হ্যাঁ, হুম, না এই সবই উত্তর দিয়ে গেছে।

বাসায় এসে রাইসা গাড়ি থেকে মেমে লাগেজ টা হাতে নিতেই আমান বলে…

আমান – আমি আছি কী করতে? (শান্ত সুরে)

রাইসা আমানের কথার কিছুই বুঝতে পারে নি। শুধু ভ্রু কুঁচকে আমানের দিকে তাকিয়ে ভেতরে চলে যায়।

রুপসা কে দেখতেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে…

রাইসা – আপুনি….

রুপসা – কেমন আছিস?

রাইসা – ভালো আছি তুমি কেমন আছো আপু?

রুপসা – ভালো আছি।

আয়ানের মা ও রুপসার সাথেই বসা ছিলো। রাইসা আয়ানের মার কাছে যায়।

রাইসা – আন্টি কেমন আছো?

আয়ানের মা – ভালো আছি মা তুই কেমন আছিস?

রাইসা – আমিও ভালো আর এখন তো আরও ভালো থাকবো আপুর সাথে কতো আড্ডা দিতে পারবো।

আয়ানের মা – বুঝেছি। আমরা বুঝি বুড়ি হয়ে গেছি? তাই আমাদের সাথে আড্ডা দেয়ার কথা বলিস নি তাই না?

রাইসা – এ মা আন্টি তা কি করে হয় বলো। তুমি ছাড়া তো জমবেই না। (হেঁসে)

রুপসা – রাইসা… কি করছিস। মা কি ভাববে বল তো (রাইসার কানে ফিসফিসিয়ে)

রাইসা – সরি আপু।

আয়ানের মা – কী হয়েছে রুপসা?

রুপসা – আসলে মা আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না। ও এমনি। সবাইকে জ্বালিয়ে মারে। আবার খুব সহজে আপন ও করে নেয়।

আয়ানের মা – হ্যাঁ হ্যাঁ এই জন্যই তো রাইসার সাথে আড্ডা দিতে চাই।

আয়ানের মার কথায় রুপসা রাইসা দু’জনই হেঁসে দেয়।

রুপসা – রাইসা ফ্রেশ হয়ে আয় তুই।

রাইসা – ওকে আপু।

রুপসা রূইসা কে নিয়ে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে এসে রাইসা লাগেজ টা খুঁজতে থাকে।

রাইসা – আমার লাগেজ কই গেলো?

রুপসা – আরে আমান বোধহয় কোথাও রেখেছে দাড়া আমি জিগ্যেস করে আসি।

রুপসা আমানকে জিগ্যেস করতেই আমান বলে…

আমান – পাশের গেস্ট রুমে রেখে আসছি। ও তো ওখানেই থাকবে।

রুপসা – হ্যা ভালো করেছো। আমিই রাখতাম।

আমান – হুম।

রুপসা রাইসা কে নিয়ে গেস্ট রুমে দিয়ে আসে।

রুপসা – কিছু লাগলে ডাকিস কেমন। আমি পাশের রুমেই আছি। তুই বরং বিশ্রাম কর। রাতে গল্প করতে পারবো সমস্যা নেই।

রাইসা – ওকে আপু।

জার্নি করে আসায় অনেক টা ক্লান্ত লাগছে। দরজা টা চাপিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় রাইসা। চোখ বন্ধ করে থাকে কিছুক্ষণ।

রাইসার রুমের পাশেই রুপসার রুম তার সাথে আমানের।
কিছুক্ষণ ল্যাপটপ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে আমান ল্যাপটপ টা বন্ধ করে রাখে।

আমান টি শার্ট টা গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বের হয় উদ্দেশ্য এখন সে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবে।

রাইসার রুমের পাশ দিতে যেতেই খেয়াল করলো দরজা টা একটু ফাঁকা। হয়তো ভেতর থেকে লক করা নেই তাই।
আমান ভাবলো একবার উঁকি দিয়ে দেখবে ওকে?
নাহ… কারো রুমে এভাবে উঁকি মারা টা নিতান্তই অভদ্রতা। কিন্তু মনকে কি আর মানানো যায়। ইচ্ছে তো করছে একটু দেখতে।
আমান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতে যাবে এমন সময় আবার কিছু একটা ভেবে সরে আসে।

না। কারো রুমে নক না করে যাওয়া টা ঠিক না। পরে না হয় এক সময় দেখে নিবো রাগি কুইন কে।

আমান বের হয়ে যায়।
রাইসা সন্ধার দিকে ঘুম থেকে উঠে। এতো টুকু রাস্তা জার্নি করে এসেই এই দশা! আর যদি দূরের কোথায় যায় তাহলে হয়তো তাকে খুজেই পাওয়া যাবে না।

রাইসা উঠে চোখে মুখে পানি দিয়ে রুম থেকে বের হয়।

রুপসার রুমে আসে…

রাইসা – আপু…

রুপসা – তুই উঠে গেছিস। আয় বস। আমি বরং কফি বানিয়ে আনি তোর জন্য কেমন?

রাইসা – ওকে আপু।

রুপসা কফি বানাতে চলে যায়। আর রাইসা ঘুরে ঘুরে রুপসার রুম টা দেখতে। তারপর বেলকনির দিকে যায়।
বাহ! বেলকনিটা তো অসাধারন! সাইডে কি সুন্দর ফুল গাছ লাগানো। কতো টা পরিপাটি দেখাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর রুপসা দুইটা কফি নিয়ে আসে।

রুপসা – রাইসা কোথায় গেলি?

রাইসা বেলকনি থেকে জবাব দেয়…

— তোমার বেলকনিতে।

রুপসা মুচকি হেসে কফি দু’টো নিয়ে বেলকনিতে যায়। একটা রাইসার হাতে দিয়ে অপরটা নিজে রাখে।
দু’জনই গল্প করতে করতে কফিটা শেষ করে।

রাইসা – আপু ভাইয়া কখন আসে।

রুপসা – উনার কোনে ঠিক নেই। কাল তো ৯ টার দিকপ আসছে আজ না জানি কোন সময় আসে।

রাইসা – আপু আজ তুমি আমার সাথে থাকবে প্লিজ।

রুপসা – আচ্ছা বাবা থাকবো।

রাইসা – ভাইয়া কিছু বলবে না তো?

রুপসা – আরে ধুরর কি বলবে আবার।

রাইসা – ওকে। জমিয়ে আড্ডা মারবো আজ।

ঘন্টাখানেক পর আয়ান আসে।
রুপসা গিয়ে আয়ানের জন্য শরবত বানিয়ে আনে।
আয়ান ফ্রেশ হয়ে আসলে রুপসা শরবত টা আয়ানের কাছে নিয়ে যায়।

আয়ান – কী এটা?

রুপসা – শরবত। খেয়ে নিন?

আয়ান – আমি তোমাকে বলেছি? (ভ্রু কুঁচকে)

রুপসা – আপনি কেনো বলবেন? আমিই বানিয়ে আনলাম। কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিন।

রুপসা একপ্রকার জোর করে আয়ানের হাতে গ্লাস টা ধরিয়ে দেয়।

রেস্ট করুন আপনি। আমি আসছি।

আয়ান কিছু না বলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

রাতে…

রুপসা – রাইসা….

রাইসা – হ্যাঁ আপু আসো।

রুপসা – খেতে চল।

রাইসা – ওকে আপু আসছি তুমি যাও।

রুপসা – তারাতারি আয়।

রাইসা – আচ্ছা।

রুপসা চলে যায়। রাইসা খাবার টেবিলে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ে।
রাইসার ঠিক অপর পাশেই আমান। রাইসা আমানের দিকে তাকাতেই আমান চোখ মেরে দেয়।

রাইসা রাগে কটমট করতে থাকে।

রাইসা – (কী বেয়াদব বে বাবা! ইচ্ছে করছে চোখ দু’টো দিয়ে মার্বেল খেলি… যত্তসব!)

রাইসা খেতে বসেও মারাত্মক অস্বস্তিতে পড়েছে। আমানের দিকে চোখ গেলেই আমান হয় মুচকি হাসছে না হয় চোখ মারছে। রাইসার রাগ এবার চরম পর্যায়ে! এখন তো ইচ্ছে করছে তার নিজের চোখ দুটু দিয়ে মার্বেল খেলতে কেনো যে বার বার এই অসভ্য ছেলেটার দিকে চোখ যাচ্ছে!

রাইসা কোনো রকম খাওয়া শেষ করে উঠে পরে।

আয়ানের মা – কিরে উঠে পড়লি যে?

রাইসা – আন্টি আমার খাওয়া শেষ। তোমরা খাও আমি রুমে যাই।

আয়ানের মা – দেখো কান্ড! দুইটা বোন একি রকম। খাবার নিয়ে এতো অবহেলা!

রুপসা – আসলে মা ও এমনি।

আয়ানের মা – হ্যাঁ ও এমনি। আর তুই তো খেতে খেতে মোটি হয়ে যাচ্ছিস তাই না?

আয়ানের বাবা – এখন কার দিনের মেয়েরা এমনই বুঝলে।

আয়ানের মা – হ্যাঁ তুমিও ওদের কে সাই দাও। যাতে এক্কেবারে না খেয়েই দিন পার করে দেয়।

রাইসা – আন্টি আমি যাই কাল থেকে বেশি বেশি খাবো। পাক্কা…

আয়ানের মা – শুনো মেয়ের কথা! (বলেই হেঁসে দেয়)

রাইসা নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শোয়ে ফোন টা হাতে নেয়।
সারা দিনে একবার এফবিতে ঢুকে নি। তাই আইডিটা লগইন করে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here