#তোর আসক্ত❤
#পর্ব – ১৫
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
🍁
আয়ান আমানের রুমে এসে দেখে আমান চুপচাপ বসে আছে।
আয়ান – আমান..
আমান – হ্যাঁ ভাইয়া।
আয়ান – তুই কি কোনো কারনে আপসেট?
আমান – ন না তো। (মাথা নিচু করে)
আয়ান – মিথ্যে বলছিস কেনো?
আমান – আসলে ভাইয়া তোমাদের ছেড়ে এতো দিন থাকবো তো তাই….
আয়ান – শুধু কি আমাদের জন্য?
আমান – হ হ্যাঁ ভাইয়া। আ আর কি কারন থাকতে পারে বলো।
আয়ান – সেটা তো তোর মুখ থেকেই শুনতে চাইছি। এমন কেউ কি আছে যাকে ছেড়ে যেতে তোর মন খারাপ লাগছে?
আমান কি বলবে বুঝতে পারছে না আয়ানের কথার ইঙ্গিত যে আমান বুঝতে পারছে না তা না কিন্তু কিছুতেই সাহস করে উঠতে পারছে না বলার।
আয়ান – আমাকে বলতে পারিস। সমাধান করতে চেষ্টা করবো প্রমিস।
আমান – ন না ভাইয়া ক কিছুনা।
আয়ান – রাইসা কে পছন্দ করিস?
হটাৎ আয়ানের এমন প্রশ্নে আয়ান যেনো ধুম করে জমিনে পড়ে। কি সব বলছে আয়ান!
রাইসা কে যে সে পছন্দ করে না এমনটাও নয়। কিন্তু এখন কি বলবে.. হ্যাঁ বলারও সাহস নেই আবার না ও বলতে পারছে না।
আমান কে চুপ থাকতে দেখে আয়ান মুচকি হাসে…
আয়ান – বুঝেছি। নিরবতা সম্মতির লক্ষণ।
আমান মুখ তুলে আয়ানের দিকে তাকায়।
আয়ান – ভয় হচ্ছে তো? যদি ৬ মাস পর এসে রাইসা কে হারিয়ে ফেলিস?
আমান চুপচাপ আয়ানের কথা শুনে যাচ্ছে। কি আজব! ভাইয়া কি মনের কথা পড়তে পারে নাকি!
আয়ান – নো প্রবলেম আমি কিছু একটা করার চেষ্টা করবো। তুই কোনো চিন্তা করিস না।
আয়ান চলে যায়। আমান যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। যাক…. এবার একটু হলেও চিন্তা মুক্ত লাগছে নিজেকে।
রুপসা বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে আছে। হটাৎ পেছন থেকে পেটে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে সে।
পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে আয়ান আলতো করে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
রুপসা পুরাই কারেন্টের শক খাওয়ার মতো অবস্থা।
রুপসা – আ আপনি?
আয়ান – কেনো? অন্য কেউ আসবে নাকি?
রুপসা – না আ আপনি এভাবে…
আয়ান – ছাড়ো ওসব। তোমার সাথে কথা আছে। রুমে চলো…
বলেই রুপসার হাত টেনে রুমে নিয়ে আসে। রুপসা এখনো সেই আগের মতোই শক!
আয়ান রুপসাকে বিছানায় বসিয়ে নিজেও রুপসার মুখোমুখি বসে।
আয়ান – রুপ তোমার কাছে কিছু চাইবো। দিবে প্লিজ?
রুপসা আয়ানের কথায় অবাক হয়ে যায়। এমন ভাবে কেনো কথা বলছেন উনি?
রুপসা – কি হলো আপনার? এভাবে কথা বলছেন কেনো?
আয়ান – বলো না দিবে কি?
রুপসা – হ্যাঁ অবশ্যই চেষ্টা করবো।
আয়ান – রাইসা আর আমান কে এক করে দাও প্লিজ। আমি জানি তুমি চাইলে তোমার বাবা মাকে বলে বুঝিয়ে ম্যানেজ করতে পারবে। দেখো আমান মনমরা হয়ে আছে। আমি জানি ও রাইসা কে ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারছে না। কালও রেস্টুরেন্ট এ খেয়াল করলাম রাইসার দিকে বার বার কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলো। ওর আবার চলে যেতে হবে কথাটা শুনে রাইসা ও একটু হলেও কষ্ট পেয়েছে৷ তুমি দেখলে না তখন ব্রেকফাস্ট করার সময়। আর আমান ও অনেক আপসেট। ও হয়তো ভাবছে যদি ৬ মাস পর এসে রাইসা কে আর না পায়
রুপ..আমি অন্য কোনো মেয়ে হলে হয়তো মেনে নিতে পারতাম না কিন্তু রাইসা তোমার বোন। আর আমি বিশ্বাস করি ও তোমার মতোই সবার থেকে আলাদা হবে।
রুপসা – কিন্তু মা বাবা..?
আয়ান – এটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি ম্যানেজ করবো। তুমি মা বাবাকে বলে রাজি করিও প্লিজ রুপ। আমার ভাইটা কষ্ট পাক, মন মরা হয়ে থাকুক আমি দেখতে পারবো না।
রুপসা – আচ্ছা ঠিক আছে।
আয়ান – ঠিক আছে বললে তো হবেনা। তুমি তো জানো আমানের কাছে বেশি দিন সময় নেই।
রুপসা – আচ্ছা আমি তাহলে কালই বাবা মার সাথে কথা বলবো।
আয়ান – থ্যাংকস আ লট রুপ।
আয়ান অফিসে চলে যায়। রুপসা রাইসার রুমে গিয়ে দেখে রাইসা খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে।
রুপসা – রাইসা… শরীর খারাপ লাগছে?
রাইসা – কই না তো আপু।
রুপসা – আসলে তোর সাথে কিছু কথা ছিলো তাই…
রাইসা – হ্যাঁ বলো না কি কথা।
রুপসা – কাল বাড়ি যেতে হবে একবার।
রাইসা – কেনো? কিছু হয়েছে কি?
রুপসা – না তেমন কিছু না। একটু কাজ আছে আরকি। তোকেও যেতে হবে আমার সাথে।
রাইসা – আচ্ছা ঠিক আছে।
পরের দিন…
আমান রুপসা আর রাইসা কে ড্রপ করে দেয়।
রুপসা – আমান ভেতরে আসো।
আমান – না ভাবি একটু কাজ আছে আমি যাই।
রাইসা – সে কি! বাড়ির কাছ থেকে চলে যাবেন?
আমান – পরে একদিন আসবো নি। আজ থাক।
রাইসা – পরে আর আপনার সময় কই?
আমান – যাওয়ার আগেই একবার এসে দেখা করে যাবোনি। আজ আসি।
রাইসা – ওকে।
রুপসা আর রাইসা ভেতরে আসতেই রুপসার মা চমকে যায়।
রুপসার মা – কিরে তোরা?
রুপসা – হ্যাঁ মা। একটা কাজ ছিলো তাই…
রুপসার মা – তাই বলে তো একটা ফোন দিতে পারতি।
রুপসা – আচ্ছা বাদ দাও। কেমন আছো তোমরা?
রুপসার মা – আছি ভালো। তুই কেমন আছিস?তোর শশুর শাশুড়ি, আয়ান ভালো আছে তো?
রুপসা – হ্যা মা সবাই ভালো আছে।
রুপসার মা – আয়ান এলো না যে?
রুপসা – আসলে উনার কাজ আছে তো। আর আমিও চলে যাবো বিকেলের দিকে।
রুপসার মা – সেকি? কি হয়েছে বল তো?
রুপসা – বলবো মা।
রুপসার মা – আচ্ছা আগে ফ্রেশ হয়ে নে।
রুপসা – বাবা কোথায়?
রুপসার মা – বাহিরে গেছে। এখনি চলে আসবে হয়তো।
রুপসা – আচ্ছা মা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। রাইসা তুইও ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে।
রাইসা – ঠিক আছে আপু।
রুপসা ফ্রেশ হয়ে তার বাবা মার রুমে যায়।
রুপসা – মা আসি…
রুপসার মা – ওরে বাবা! অনুমতি নিচ্ছে আমার মেয়ে!
রুপসা হেসে রুমে ঢুকে।।
রুপসা – বাবা কেমন আছো?
রুপসার বাবা – ভালো আছি মা। তুই কেমন আছিস?
রুপসা – হ্যাঁ ভালো।
রুপসার বাবা – কিছু বলবি মনপ হচ্ছে। কোনো সমস্যা হয়েছে?
রুপসা – না বাবা তেমন কিছু না আসলে তোমাদের একটা কথা বলতে চাইছিলাম।
রুপসার বাবা – হ্যাঁ বল।
রুপসা – আমান রাইসা কে অনেক পছন্দ করে। রাইসা ও আমান কে অপছন্দ করে না আমার মনে হই। তাই আয়ান চাইছিলো যে তোমরা যদি রাজি থাকো তাহলে ওরা দু’জনের বিয়ে হতে। আমান ছেলে হিসেবে ভালো। রাইসা কে ভালোই রাখবে।
রুপসার মা আর বাবা দু’জনই অবাক হয়ে যায়।
রুপসার বাবা – কিন্তু কেনো? আমানের সাথেই বিয়ে দিতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।
রুপসা – বাবা আমি সেটা বলতে চাইনি। আসলে আমান রাইসাকে ভালোবাসে। তাই…
রুপসার মা – হ্যাঁ বুঝলাম। আমান ছেলেটা বেশ ভালো সেটা আমিও জানি। কিন্তু তোর শশুর শাশুড়ি কি মানবে?
রুপসা – মানবে মা৷ উনি সব ম্যানেজ করবে। তোমরা এসব নিয়ে ভেবো না।
রুপসার বাবা – না করার মতো কোনো কারন আমিও দেখতে পারছিনা। আমান ও ছেলে হিসেবে ভালো। ঠিক আয়ানের মতোই।
তাছাড়া তোরা দু’জন একসাথে থাকলে আমাদের ও ভালোই লাগবে।
রুপসার মা – হ্যা সেটাই। আমিও ভাবছিলাম। ভালোই হবে এতে।
রুপসা – কিন্তু মা। একটা সমস্যা হয়েছে।।
রুপসার বাবা – আবার কী? (চিন্তিত হয়ে)
রুপসা – আসলে আমান কে আবার সামনের সপ্তাহে দেশের বাহিরে চলে যেতে হবে ৬ মাসের জন্য। তো উনি চাইছিলেন যাওয়ার আগেই যদি বিয়েটা হয়ে যেতো তাহলে ভালো হতো…
রুপসার মা – সামনের সপ্তাহে?
রুপসার বাবা – এ আবার কেমন কথা! এতো তারাতারি কিভাবে সম্ভব। তাছাড়া প্রস্তুতির ওতো একটা ব্যাপার আছে নাকি।
রুপসা – বাবা চেষ্টা করলে তো সবই সম্ভব। বড় করে না হয় কোনো অনুষ্ঠান করা গেলো না। তাতে কী? আমান দেশে আসলে ওরে সেসব নিয়ে ভাবা যাবে।
রুপসার বাবা – সবই তো বুঝলাম কিন্তু রাইসা কে জিগ্যেস করেছিস? সে কি রাজি?
রুপসা – না বাবা জিগ্যেস করিনি। তোমাদের মতামত টা জানা হয়ে গেলো ব্যাস। এবার রাইসা কে জিগ্যেস করে নিবো নি। আমার মনে হইনা রাইসা না করবে বলে।
রুপসার মা – হ্যাঁ তাই করিস।
রুপসা – আচ্ছা মা আমি তাহলে আসি।
রুপসার মা – কী! পাগল হলি নাকি? কিছু খেয়েছিস ও না এখনি চলে যাবি?
রুপসা – মা খেতে পারবো পরে এসেও। আজ অনেক কাজ আছে৷ যেতে হবে।
রুপসার বাবা – তাই বলে একটু বসবি ও না।
রুপসা – বাবা আরেক দিন আসলে সময় নিয়ে আসবো। আজ আসি। উনাকে জানাতে হবে আবার৷ উনি বোধহয় অপেক্ষা করছেন।
চলবে…