তোর নামেই শুরু পর্ব -০৭

#তোর_নামেই_শুরু
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৭

আমি গিয়ে ছোট মাকে জরিয়ে ধরলাম। হু হু করে কেঁদে দিয়ে সব‌ বলে দিলাম। ছোট মা আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন কিন্তু আমি কি আর শান্ত হই?আমি কেঁদেই চলেছি।

মেঘা কি হয়েছে? এভাবে কাঁদছিস কেন? রিশান কিছু বলেছে নাকি?

আমি কাঁদছি।

মামণি তুই যদি না‌ বলিস আমি বুঝবো কিভাবে?

আমি ছোট মাকে সব বলে দেই। ছোট মা চুপচাপ আমার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন এরপর বললেন,

মা রে আমার ছেলেটা একটু বেশি রাগী হলেও মন থেকে অনেক ভালো। ও তোকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারে না কারণ ও তোকে ভা,,,,,

হঠাৎ রিশান ভাইয়ার ঘর থেকে বিকট শব্দ ভেসে আসতেই উঠে দাঁড়ালাম। কি হয়েছে ভাইয়ার? কি করছেন উনি? এতো জোরে শব্দ কিসের?

আমি আর ছোট মা দৌড়ে ভাইয়ার ঘরে ছুটে গেলাম।রিশান ভাইয়া ঘরের সব জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেছেন। একটা জিনিসও আস্ত নেই সব ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছেন তিনি। আমাকে দেখে তার রাগ যেন আরো বেড়ে গেল। ড্রেসিং টেবিলের আয়নার জোরে এক ঘুষি বসিয়ে দিলেন। আয়না ভেঙে কাঁচ যেন তার হাতে বিঁধে গেল। আমি ভয় পেয়ে যাই। এতো রেগে যান কেন উনি? রেগে নিজের ক্ষতি কেন করছেন উনি? ছোট মা রিশান ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললেন,

রিশান কি হয়েছে বাবা? কি করছিস এগুলো। শান্ত হ প্লিজ।

মা আমি ঠিক আছি তুমি যাও।

হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে আর তুই আমাকে যেতে বলছিস? মেঘা ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে আয় তো।

না এসব লাগবে না মা আমি ঠিক আছি।

বলেই ভাইয়া নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে হাতে পেঁচিয়ে নিলেন।

আমি কি আর দাঁড়িয়ে রই? দৌড়ে নিচ থেকে ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে আসি। ভাইয়ার সামনে এসে দাঁড়াতেই তার রাগটা মনে হয় বেশি বেরে গেল। তিনি এক ধমক দিয়ে বললেন,

আমি বলেছি না লাগবে না একাই ঠিক হয়ে যাবে। কথা কানে শুনিস না?

এখন আমারও খুব রাগ হচ্ছে। হাতটা থেকে রক্ত বেরিয়ে রুমালটাও ভিজে গেছে আর সে বলছে লাগবে না? এবার আমি বললাম,

লাগবে না মানে? দেখেছো হাত থেকে কত রক্ত বের হচ্ছে? রুমালটাও ভিজে গেছে আর বলছো লাগবে না। চলো আগে হাত ভালো করে পরিষ্কার করে নাও এরপর ব্যান্ডেজ করে দিবো।

আমি ধমকের সুরে কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে গড়গড় করে বলে ফেললাম। ভাইয়া আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ছোট মা মিটিমিটি হাসছেন।

রিশান মেঘা তো ঠিকই বলেছে। হাতটা পরিষ্কার করে নে। এখন যদি আমার ধমক খেতে না চাস তাহলে যা তাড়াতাড়ি।

ছোট মা চলে গেলেন। ভাইয়া আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।

তার ডান হাতের অনেকটা অংশ কেটে গেছে। বলতে হয় খুব বাজেভাবেই কেটে গেছে। আমি আস্তে আস্তে ব্যান্ডেজ করে দিলাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

মেঘপরি! আমি তোকে অনেক শাসন করি তাই না। এরপরও আমার জন্য এতো মায়া। আমার সাথে রাগ করিস আবার কথা বলিস। তবে তুই ও কি ভালোবাসিস আমাকে? আমি কেন আমার অনুভূতিগুলো তোকে বুঝাতে পারি না? কবে বুঝবি আমাকে? (মনে মনে রিশান)

ভাইয়া হয়ে গেছে। এখন চুপচাপ নিচে যেয়ে বসো।‌

কেন নিচে যাবো কেন?

ঘরের কি অবস্থা করেছো দেখেছো? এগুলো ঠিক করতে হবে না? একদম সব শেষ করে দিয়েছো।

হুম।

রিশান ভাইয়া নিচে চলে গেলেন। ছোট মাকে ডাক দিয়ে আমিই সব ঠিক করতে লাগলাম। এমনিতে রিশান ভাইয়ার ঘরে সহজে আমার আসা হয় না। ভাইয়াই বারণ করে দিয়েছেন আমি যেন তার ঘরে না যাই। ভাইয়ার কথাগুলো মাঝে মাঝে আমার বুকে কাঁটার মতো বিঁধে। আবার মাঝে মাঝে তার কথা শুনলে মনে হয় তিনিও আমার সব। একটা জিনিসপত্রও অক্ষত অবস্থায় নেই সব ভেঙে গুড়িগুড়ি করে ফেলেছেন‌। এই মানুষটার এতো রাগ কেন? ক্ষুদ্র কথাও রেগে যান কেন তিনি? ঘরের সব ঠিকঠাক করে দিতে লাগলাম। আস্তে আস্তে সব ঠিকঠাক করলাম। হঠাৎ চোখে এলো ভাইয়ার মোবাইলটা খাটের নিচে পড়ে আছে। হয় তো এটাও ভাংচুরের কবলে পড়েছিলো। হাতে নিয়ে দেখলাম উপরের কাঁচটা ফেটে গেছে বন্ধ হয়ে গেছে মোবাইলটা। কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলটা অন করলাম। মোবাইল অন করতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ আমার ছবি! হাত পা কেঁপে উঠছে ক্রমশই। ছোট মা চলে এলেন।

কি হয়েছে মেঘা?

কিছু না ছোট মা।

ওহ্, দেখেছিস ঘরটার কি করেছে?

হুম।

মাথায় এখন একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে ভাইয়ার মোবাইলে আমার ছবি কি করে গেলো? তাও ছবিটা লিসাদের বাড়িতে তোলা। লিসাই তুলে দিয়েছিলো।‌ ভাইয়া কোথায় পেলেন? তবে কি লিসা দিয়েছে?
আমার ভাবনায় ছেদ ফুটিয়ে ছোট মা বললেন,

মেঘা এই দেখ রিশানের ঘড়িটা। এটা ড্রয়ারে রেখে দে তো। এটাকেও পর্যন্ত আস্ত রাখলো না। ছেলেটা যে কি করে আমার মাথায় ধরে না।

ছোট মায়ের হাত থেকে ঘড়িটা নিয়ে ড্রয়ারে রাখতে গেলাম। কিন্তু ড্রয়ারটা খুলতেই চোখে পড়লো একটা খয়েরি রঙের ডায়েরি। হয় তো ভাইয়ার বেশ সুন্দর ডায়েরিটা। ডায়েরিটা হাতে নিয়ে নিলাম। বেশ কৌতূহল জাগছে কি আছে এটার মধ্যে? রিশান ভাইয়ার ডায়েরি এটা কিছু একটা তো আছে স্পেশাল এটাতে। ডায়েরিটা খুলতে নিবো ঠিক তখনই রিশান ভাইয়ার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।

মেঘা!!!

ভাইয়ার দিকে ফিরে তাকালাম।

তোর হাতে এটা কেন? এটা ধরেছিস কেন? কারো পার্সোনাল জিনিসে হাত দিতে নেই জানিস না?

না মানে ভাইয়া এটা ড্রয়ারে ছিল আমি

কি তুই? ড্রয়ারে থাকলেই ধরতে হবে? এই তুই ঘর গুছাচ্ছিস? নাকি আমার জিনিসপত্র সার্চ করছিস?

ভাইয়া আমি তো

ভাইয়া এসে আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে ডায়েরিটা নিয়ে নিলেন। তার ব্যবহারে আমার কাছে খুব খারাপ লাগছে। কিছু হলেই আমাকে বকেন? আমি কি মানুষ না? আমার কি খারাপ লাগে না?

তোর ঘর গুছানো লাগবে না। যা এখান থেকে,,

রিশান এভাবে বলছিস কেন? তোর কোন পার্সোনাল জিনিস হলে তুই আলমারিতে রাখ। ড্রয়ারে কেন? আর ও দেখেছে তাই হাতে নিয়েছে। ও তো দেখেও নি এর মাঝে কি আছে।

ও না জিজ্ঞেস করে এটা নিবে কেন?

আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। দৌড়ে সেখান থেকে চলে এলাম। ঘরে এসে কান্নার রোল লাগিয়ে দিলাম।

রিশান ওকে এতো বকিস কেন? এরকম করলে কি ওর কষ্ট লাগে না?

জানি না মা। আমি ওকে বকতে চাই না কিন্তু তারপরও হয়ে যায়।

হয়ে যায় মানে? ওকে তুই কি মনে করিস তোর হাতের পুতুল? যা ইচ্ছে তাই করবি মেয়েটার সাথে? ওর কি খারাপ লাগে না? আর কখনো যদি ওকে কিছু বলিস বা ওর প্রতি কোন প্রকার অন্যায় করিস তাহলে আমি ভুলে যাবো যে আমি তোর মা। আর কখনো তুই ওকে দেখতে পারবি না। ওকে অনেক দূরে সরিয়ে দেব। তোর স্পর্ধা দিন দিন বাড়ছে। একটু কমাতে শিখ।

অনেক রেগে কথাগুলো বলেই রিশানের মা চলে গেলেন। রিশান ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো।

মেঘপরি! কি বললো মা? তোকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেবেন। কিভাবে থাকবো আমি তোকে ছাড়া? তুই ছাড়া আমি যে শূন্য! অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি তোকে। তোর প্রতিটি অভিমান অভিযোগই ভালো লাগার কারণ। তোর নামেই শুরু আমার সকাল। কি করে থাকবো আমি? সত্যিই চলে যাবি তুই? না না পারবো না আমি আমি তো তোর আসক্তিতে মারাত্মক ভাবে আসক্ত। এই আসক্তি যে মাদককেও হার মানাবে রে।

.

রাতে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম। কিছুই ভালো লাগছে না। ফুফু এসে অনেক বার ডেকে গেছেন ফুফাও এসেছিলেন। কিন্তু আমি যাই নি। আজ রিশান ভাইয়ার কথায় বেশ খারাপ লেগেছে। আমি তাকে নিয়ে কোন বিষয়ে নাক গলাতে পারবো না। আর সে আমার সব বিষয়ে নাক ডুবিয়ে রাখবে? নিজের বেলা ষোল আনা আর আমার বেলা?

রাত একটা বেজে গেছে! দুচোখে ঘুম নেই। এপাশ ওপাশ করছি বারবার। হঠাৎ দরজায় কেচকেচ আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমার ঘরে এতো রাতে কে আসবে? মনের মাঝে কৌতুহল ভয় দুটোই কাজ করছে। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম। কেউ একজন ঘরে প্রবেশ করে আমার বিছানার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। চোখ ছোট ছোট করে সব পর্যবেক্ষণ করছি আমি কিন্তু লোকটাকে ভালো করে দেখতে পাচ্ছি না। সে আমার একদম কাছে চলে এলো। এবার আমি আর চোখ বন্ধ করে রাখতে পারলাম না হঠাৎই চোখ খুলে ফেললাম। চোখ খুলে বসে পড়লাম সামনের লোকটিকে দেখে আমি হা হয়ে গেলাম। কিছু বলতে যাবো এর আগেই আমাকে মুখে কিছু একটা স্প্রে করে দিলেন সামনের প্রতীয়মান ব্যক্তিটি। আমি মাথা ঘুরিয়ে তার উপর লুটিয়ে পড়লাম।

চলবে……..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here