#তোর_মায়ায়_আবদ্ধ
#পর্ব_৮
#আঁধারিনী(ছদ্মনাম)
বাড়িতে ঢুকে ভেবেছিলাম অনেক প্রশ্নের অনেক কটুকথার সম্মুখীন হতে হবে।কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি আমার সাথে এর কারণ অবশ্য শুভ্রই।আমাকে বাড়ির গেইটের সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেছে।কি নাকি কাজ আছে তাই।অগত্যা আমাকে বাড়িতে একাই ডুকতে হয়েছে।এতে অবশ্য একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে।শাশুড়ী মা আর মিথিলা আপুর থেকে কোনো কথা শুনতে হয়নি।দুইদিনে তাদের যতোদূর চিনেছি শুভ্রের ওমন অবস্থা দেখলে নিশ্চয়ই আমাকে কম কথা শুনাতো না।আচ্ছা শুভ্র কি আমাকে এইরকম পরিস্থিতিতে যাতে না পরতে হয় তার জন্যই চলে গেছে নাকি সত্যিই কোনো কাজ ছিলো।হয়তো কাজই ছিলো আমিই একটু বেশি ভাবছি।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে ডুকে পরলাম।
শাওয়ার নিয়ে বেরোতেই রোকেয়াকে আমার ঘরে দেখে একটু অবাক হলাম।রোকেয়া আমার বেরোনোর জন্যই অপেক্ষা করছিলো তাই আমি বেরোতেই আমার দিকে এগিয়ে আসলো,
” আফামনি তোমারে বড় আফায় ডাকে এহনি তোমারে রান্নাঘরের দিকে যাইতে কইছে।”
” আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।”
“আইচ্ছা কিন্তু তাড়াতাড়ি আইবা।” যেতে যেতেই বললো রোকেয়া।
কোনোরকমে ভেজা চুল গুলো শুকিয়ে নিচে নেমে আসলাম।কিচেনে রোকেয়া টুকটাক কাজ করছে আর মিথিলা আপু পাশে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে। আমাকে দেখেই একটু হাসার ভান করে কফির মগ টা পাশে রাখলো।
” বাড়ির বউ হয়ে আসছো বাড়ি থেকে নিশ্চয়ই রান্নাবান্না কিছু শিখিয়ে পরিয়ে পাঠিয়েছে।নাকি মা নেই বলে তাও শিখে আসতে পারোনি?”
আমি জানতাম আমাকে এখন এমন কিছুর সম্মুখীন হতে হবে।আরো অনেক কিছুই সইতে হবে তাও জানা আছে।মিথিলা আপুর প্রশ্নের জবাব টা হাসি মুখেই ফেরত দিলাম।
” জি আপু মোটামুুটি পারি ছোটো কাকিমুনি শিখিয়েছে।আর যে কটা পারি না সেগুলো শিখে নিবো।”
“হুম ভালো।আমার ননদ রাত্রী কিন্তু রান্না থেকে শুরু করে সব কাজে পাকা।ওর এ বাড়ির বউ হওয়ারও কথা ছিলো। কিন্তু মাঝখান থেকে তোমার বাড়িতে গিয়ে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।” আফসোসের সুরে কথাটা বললো মিথিলা আপু।
আমি তাও কিছু বললাম না।পাশে রোকেয়া আপুর দিকে বিরক্তির চোখে তাকাচ্ছে। বিরবির করে কিসব বলছেও।কিন্তু কিছুই শোনাচ্ছে না।তবে বিরবির করে যে মিথিলা আপুরই গোষ্ঠী উদ্ধার করছে তা ওর মুখের ভঙ্গিমাতেই বোঝা যাচ্ছে।মনে মনে বেশ হাসি পেলো তবে এই মুহূর্তে হাসা যাবে না তাই হাসিটা আটকে রাখলাম। আপু ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে বলে এসব দেখছে না।বাকি কফিটা শেষ করে আপু আমাকে চিংড়ি মাছের মাইলাইকারি গরুর মাংশের কালা ভুনা সহ আরো বেশ কয়েকটা পদের নাম বলে গেলো।আর বলছে বেলা দুইটার আগেই সব রান্না জেনো কমপ্লিট হয়।এ বাড়ির সবাই দুইটা বাজার সাথে সাথে খেতে বসে।
ঘর থেকে বেরোনোর সময় ঘড়ির কাটায় সাড়ে এগারোটা দেখে এসেছি।এরমধ্যে তো পাঁচ দশ মিনিট সময় চলেই গেছে কথা বলতে বলতে তারমানে হাতে এখন আড়াই ঘন্টাও নেই।তাই কোমড়ে ওড়না পেচিয়ে কাজে লেগে পড়লাম।মিথিলা আপু যাওয়ার সময় রোকেয়াকেও নিয়ে গেলো কি তুর নাকি কান্না করছে ওর সাথে একটু থাকার জন্য। তাই এখন হেল্প করার মতোও কেউ নেই আমার।আর এইদিকে যেই কয়টা পদের নাম বলেছিলো তারমধ্যে দুইটা আগে ছোটো কাকিমনির সাথে রান্না করেছিলাম তাই ওগুলো শুধু পারি।কিন্তু বাকি গুলো তো পারি না। ওগুলো কিভাবে রান্না করবো সেই চিন্তা করতে লাগলাম। হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠলো আসার সময় ফোন নিয়ে আসছিলাম।আমি যেখানেই যাই না কেনো ফোন বাবাজী আমার সঙ্গে থাকবেই।কখনো হাত ছাড়া হয় না আমাদের সম্পর্ক টা যে বড় গভীর।শত চেষ্টা করেও আমাদের কে কেউই আলাদা করতে পারেনি আজ অবধি।
দ্রুত ফোন হাতে নিলাম কে কল দিলো দেখার জন্য।আমাকে বাবা আর অভ্র ছাড়া কেউই তেমন ফোন করে না।এখন তো আর অভ্র করবে না বাবাই করেছে হয়তো।তাই ফোনটা দ্রুত নিলাম।কিন্তু ফোনটা হাতে নিতেই মেজাজ টা গেলো একদম বিগড়ে কারণ ফোন টা বাবার নয় বরং সিম কোম্পানির।এদের কাজই হলো সারাক্ষণ মানুষকে বিরক্ত করা।বুঝি না বাবু এতো নির্লজ্জ কেনো এরা?এরা ফোন দিলেই তো সবাই কেটে দেয় তারপর নির্লজ্জের মতো বারবার ফোন করতেই থাকবে।আহারে বেচারাদের কেউই পাত্তা দেয় না।ফোন দেখে রান্না গুলোর কথা মনে পরলো।আমি তো ইউটিউব দেখেই রান্না গুলো করে নিতে পারি।যদিও ইউটিউব কাকুকে একদম বিশ্বাস নেই এর কারণে কাকিমনির কাছে অনেক বকা খাইতে হইছে আমাকে আর অধরাকে।
আমরা মাঝে মাঝেই ইউটিউব দেখে নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করতাম দুই একটা যদিও হতো কিন্তু বেশিরভাগই উল্টো পাল্টা হতো তার বিনিময়ে মনে কাকিমনির ফ্রীতে বকা খাওয়া লাগতো।এই বকা খাইতে খাইতে ইউটিউব কাকু দিনে দিনে আমাদের চোখের বিষ হয়ে উঠেছিলো।কিন্তু আজকে ইউটিউব কাকুকে ছাড়া তো কোনো উপায়ও দেখছি।ঠোঁট কামড়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম ইউটিউব কাকুকে আজ কাজ লাগাবো।বেশ কয়েকটা রেসিপি দেখে যেগুলোতে ভালো ভালো মন্তব্য করা আছে ওগুলোকে ডাউলোড করলাম।তারপর কাজে লেগে পড়লাম।
প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে রোকেয়া মিথিলা আপু ঘর থেকে এলো।এতোক্ষণে আমার তিনটে পদ রান্না শেষ।রোকেয়া এসেই আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার হাতে হাতে কাজ করতে লাগলো।
” মানুষ কেমন শয়তান।তোমারে সাহায্য করতে দিবো না বইলা আমারে নিয়ে পোলার পাশে এতোক্ষণ ধইরা বসাইয়া রাখছে।তুর কিন্তু একটুও কান্দে নাই হুদাই মিছা কতা কইয়া আমারে নিয়া গেলো।”রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো রোকেয়া।
আমি এমন টাই আন্দাজ করেছিলাম। কি এসব আমার ভালো লাগে প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য হালকা তেলে আধ ভাজা চিংড়ি মাছ গুলো নাড়তে নাড়তে বললাম ” রোকেয়া নারকেল কোঁড়া কোথায় একটু খুঁজে দিবে।নারকেল কোঁড়া খুঁজে পেলাম না।”
” আচ্ছা দাঁড়াও” বলেই ফ্রীজ থেকে বের করে আনলো।আমি মাছ বের করার সময় দেখেছিলাম কিন্তু তখন প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য কিছু খুঁজে না পেয়ে ওইটুকু মিথ্যা বললাম।রোকেয়া আসাতে বেশ অনেকটা উপকার হলো। হাতে হাতে সব রান্নাই শেষ হয়ে গেলো শুধু একটা ভাজির আইটেম বাকি ছিলো ওইটা গ্যাসে চাপিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম।মিথিলা আপুর দেওয়া টাইম মতোই সব কিছু শেষ হলো কিন্তু টেষ্ট কেমন হয়েছে ঠিক জানি না। বিশেষ করে লবনের ব্যপার টা বাড়িতে যতোবার রান্না করছি ততোবারই কাকিমনি পরিমান মতো লবন দিয়ে দিতো কারণ আমার টা কোনোদিন ঠিকঠাক হতো না।পরের রান্না গুলোর সময় রোকেয়া ছিলো বলে স্বস্তি কিন্তু আগের গুলো ইউটিউব দেখেই পরিমান করেছি।
মিথিলা আপু এসে আমার রান্না গুলো চামচ দিয়ে একটা একটা করে সব গুলোই টেষ্ট করলো।টেষ্ট করার পর কিছুই বললো না তা দেখে মনে মনে লম্বা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ালাম। যাক বাবা এই কুচুটে আপু থুড়ি মিথিলা আপু যখন কিছু বললো না তারমানে সব কিছু ঠিকঠাকই আছে।
খাবার টেবিলে সবাই একে একে এসে পড়ছে।শাশুড়ী মা মিহি অর্নব ভাইয়া তুর শুভ্রও এসে পরছে।তবে উনার মাথায় এখন কোনো ব্যান্ডেজ দেখতে পেলাম না।শুধু ক্ষত স্থানে একটু ফাস্ট এইড টেপ লাগানো তাও কোনোরকমে চুল দিয়ে ডাকা আমি তীক্ষ্ণ ভাবে লক্ষ করাতে দেখতে পেলাম।বোঝাই যাচ্ছে সবার সবার চোখের অগচড়ে রাখার জন্যই এই প্রচেষ্টা। আমার খুব খারাপ লাগছে আমাকে যাতে কথা শুনতে তাই এভাবে লুকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা এইটুকু বুঝতে আমার বাকি রইলো না।মনে মনেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।
ফারহান আংকেলের আসতে একটু দেড়ি হলো। মিথিলা আপু হয়তো আংকেলের জন্যই অপেক্ষা করছিলো তাই তো আংকেল আসার সাথে সাথেই আংকেলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
“বাবা তোমার জন্য আজ রান্না করলাম।” মিষ্টি হেঁসে উৎফুল্লের কন্ঠে বললো মিথিলা আপু।
আপুর কথা শুনে আমি নির্বাক। কি মিথুক আড়াই ঘন্টা যাবত আমি খেটেখুটে রান্না করলাম আর এই কুচুটে বলে কিনা নিজে রান্না করছে।এবার আমার সত্যি সত্যিই মেজাজ বিগড়ে গেলো।এরমধ্যেই অর্নব ভাইয়া বলে উঠলো,
” মিথিলা তততুমি রান্না করছো?”চরম বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললো।
ভ্রু কুঁচকালো মিথিলা আপু “কেনো আমি করতে পারি না?”
” আপু সত্যি সত্যি তুই এতো গুলো রান্না করছোছ?দুলাভাই এ আমি কোন আপুকে দেখছি?”মিহিও বিস্ময় নিয়ে বললো।
” শালীকা তুমি যাহা দেখিতেছো আমিও তাহাই দেখিতেছি।”মেকি হাসলো অর্নব ভাইয়া।
” আগগে না এগুলা সবই আমাগো শুভ্র ভাইয়ের বউ আমার নতুন আফামনি রানছে।”মুখ ভেঙ্গছি কেটে বললেই সবার খাবার সার্ভ করতে লাগলো৷ রোকেয়া।
সবার এমন রিয়াকশনের মানে বোধগম্য হলো না আমার। তাই ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকা ছাড়া আমার আর উপায় ছিলো না।ফারহান আংকেল মিহি আর অর্নব ভাইয়া খেতে খেতেই অনেক বার রান্নার তারিফ করলো।মিথিলা আপু মোটেও খুশী হলো মুখ কুচকে একটু খেয়েই চলে গেলো।আর শাশুড়ী মা আর শুভ্র নিশ্চুপ ছিলো।বাবার খাওয়া শেষ হতেই বাবা উঠে যাওয়ার আগে শুভ্রকে নিজের ঘরে যেতে বললেন কিনাকি জরুরি কথা আছে।
চলবে,,,,,
দুংখিত অসুস্থতার জন্য গল্প দিতে পারলাম না আরো একবার গ্যাপ গেলো।তবে আজ রাতে একটা বোনাস পার্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।