#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৫
অনুর স্পর্শে তানিমের শরীরে কারেন্ট বয়ে গেলো। তানিম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনুর চলে যাওয়ার দিকে।মনে মনে ভাবছে আচ্ছা মেয়েটা কি? ইচ্ছে করে আমাকে টাচ করলো। জীবনে প্রথম এমন অদ্ভুত অনূভুতি হলো তানিমের। বুকের বা’পাশে হাত রাখলো। ঠিক বা’পাশটা কেমন ধুক,ধুক শব্দ করছে।
তানিমের দৃষ্টি এখনো অনুর যাওয়ার পথে। গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় চার চোখের মিলন ঘটলো।তানিমর হার্ট বোঁধ হয় এখন বেড় হয়ে আসবে।অনু চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ছে।দেখতে দেখতে অদৃশ্য হয়ে গেলো অনু। তানিমের কেমন গরম লাগছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জড়ো হয়েছে।
সারা তানিমকে হাত দিয়ে টোকা দিয়ে বলে, তুই ঠিক আছিস তো দাভাই? তোর কোন সমস্যা হয়নি তো।
সারার আওয়াজে তানিম যেনো অন্য জগত থেকে বের হলো। সারার কথার উত্তর না দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা উপরে চলে গেলো।
সারা অবাক হয়ে তানিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, কি হয়েছে বলে তো যাও দাভাই।
তানিম রুমে এসো সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দিতে লাগলো। পানি দেয়া শেষ করে আয়নাতে তাকাতেই অনুর মুখটা ভেসে উঠলো। দু’হাত দিয়ে আয়নায় পানি দিয়ে মুছতে লাগলো। এলোমেলো পায়ে বের হয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে। শরীরে শার্টটা খুলে ফ্লরে ছুড়ে মারলো। বেডে শুয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো। চোখের সামনে বারবারর ওই একি চেহারে ভেসে উঠছে। চোখ খুলে নিজের হাতটা সামনে এনে তাকিয়ে আছে যেখানে অনু স্পর্শ করেছেলো।
অস্ফুটে স্বরে বলছে,কেনো তুমি এলে অবেলায়। কেনো আমার শহরে প্রেমে ছড়িয়ে দিলে!কেনো আরো আগে আসলে না এই শুন্য হৃদয়ে!হাতটা জড়িয়ে ধরে উঠে দাঁড়ালো, কাভার্ড থেকে একটা টিশার্ট বের করে পরে নিলো। হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে বের হয়ে গেলো। কেন বের হচ্ছে কোথায় যাবে? সব যেনো উদ্দেশ্যহী।মন যখন বাঁধন হারা! গন্তব্য তখন অজনা।
যাওয়ার সময় সারা বললো, দাভাই তুমি এই অবেলায় কোথায় যাচ্ছ।তোমার কি কোন প্রবলেম হচ্ছে?
তানিম সারার গাল টেনে দিয়ে বলে,হুম একদম হার্টে প্রবলেম হচ্ছে। বলেই বের হয়ে গেলো।
সারা বোকার মতো তাকিয়ে ভাবছে দাভাই কি বলে গেলো?
বাহিরে এসেই তন্ময় অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে কর্কশ গলায় বললো,একদিনে আমার পরিবারের মানুষদের হাত করে নিয়েছো!এই তুমি কি ম্যাজিশিয়ান নাকি?
অনু হাত দিয়ে চোখ ঢেকে রেখে বলে,আমার দরিদ্র কোন ম্যাজিশিয়ান না।
– তারজন্য খুঁজে খুঁজে আমাদের বাসায় আসতে হবে?
– দেখুন আমি কিন্তু জানতাম না এটা আপনাদের বাসা।
অনু হাত ছাড়িয়ে অন্যদিকে হাঁটা শুরু করলো,তন্ময় অনুকে কোলে তুলে নিলো।
অনু দাঁতে দাঁত চেপে বলেে,ছাড়ুন আমাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব কি অসভ্যতা শুরু করেছেন!
– ছেড়ে দেবো শুধু মুখটা বন্ধ রাখো।আমাদের জন্য কারো কোন সমস্যা হোক সেটা আমি চাইনা। তাই তুমি চাও বা না চাও ডক্টর তোমাকে দেখাতেই হবে।
– আমি ডক্টরের কাছে যাবো আপনি আমাকে ছাড়ুন
তন্ময় অরুকে নামিয়ে দিলো কোল থেকে। নির্লিপ্তি ভঙ্গিতে অনুর হাত ধরে হাঁটতে লাগলো।
– হাত ছাড়ুন আমি ছোট বাচ্চা না! আমাকে হাত ধরে নিয়ে যেতে হবে। ছাড়ুন হাত।
তন্ময় অনুর হাতটা একটু টান দিয়ে আবার ছেড়ে দিলো। এতে অনু রাস্তায় পরে গেলো।
অনু ব্যথায় আহহ করে উঠলো। তন্ময় বসে অনুর সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,উঠে আসো।
অনু তন্ময়ের হাত না ধরেই উঠে দাঁড়ালো। কোন কথা বললো না। চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। প্রায় পাঁচ মিনিট হেঁটে অনু বললো, আর কত দূর?
– এতোটুকু তেই এই অবস্থা আরো পনেরো মিনিটের মত হাঁটতে হবে।এটা ভুলেও ভেব না আমি রিক্সা নেবো। সেটা নেওয়ার হলে তো বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে আসতাম। আমার বাসায় আসার শাস্তি হিসেবে এখন হেঁটে হেঁটে হসপিটালে যেতে হবে।
চোখের অসহ্য ব্যথা আবার পড়ে যেয়েও যথেষ্ট ব্যথা পেয়েছে কোমড়ে। তবুও হেঁটে যাচ্ছে। চোখ দুটো’ ঝাপসা হয়ে আসছে আশেপাশের সব কিছু কেমন ধোঁয়াসা মনে হচ্ছে। তবুও পা টেনে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছে অনু।
সাজু মিয়া বড় রাস্তার ধারে এক দোকানে বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে, চোখের সামনে ভেসে উঠছে তার মেয়ের মুখখানি। এই রাস্তায় ধারে এভাবেই অপেক্ষা করতেন নিজের মেয়ের জন্য। ক্লাস শেষে বাবার সাথে একসাথে বাসায় যেতো অনু আর সাজু মিয়া। চোখের কোনে অশ্রু জমা হলো। একমাত্র আদরের মেয়ে আজ দূর শহরে। কতদিন মেয়েটাকে ছুয়ে দেখা হয়না। এসব ভাবনায় বিভোর সাজু বেপারি। এমন সময় আব্দুল্লাহ ( অনুর ভাই)এসে বলে আব্বু বাসায় যাবানা। বেলা তো শেষ।আম্মা কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ছেলের দিকে না তাকিয়ে বলেন আমি তো আমার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছি। সেতো এই রাস্তা দিয়েই আসবে। এসে বলবে, তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো! আব্বু তাড়াতাড়ি চলো খুব খিদে পেয়েছে।
আব্দুল্লাহ বলল,আব্বু চলো আমরা আপুরে দেখতে শহরে যাই।
আব্দুল্লাহর কথা শুনে সাজু মিয়া নিজের চোখের পানি মুছে বলে, যে আমাদের কথা ভাবেনি আমরাও তার কথা ভেবে কষ্ট পাবো না। চল বাসায় চল।
হালিমা বেগমের মনেও শান্তি নেই একমাস ধরে মেয়েটা বাসায় নেই। হাসি খুশি বাড়িটা কেমন ঝিমিয়ে পরেছে। আজ মুগ ডাল আর রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘণ্ট রান্না করেছে। সাথে মোচড়ার তরকারি। চিংড়ী মাছ দিয়ে বেগুন। এই সব খাবার তার মেয়েরে পছন্দের। দুপুরে এক লোকমা খাবারও মুখে তুলেনি হালিমা বেগম।
মেয়ের রুমের বিভিন্ন জিনিস হাত দিয়ে ধরে ধরে দেখছেন। আজকে মনে হয় মেয়ের কথাটা একটু বেশি মনে পরছে। নিজের স্বর্নের কানের দুল জোড়া বিক্রি করে মেয়েকে টাকা দিয়েছিলেন। কারণ সাজু মিয়া এক পয়সাও দেবেন না বলে দিয়েছেন। এখন হাঁস মুরগী বিক্রি করে কিছু টাকা জমা করছেন সামনের মাসে পাঠাবেন।হালিমা বেগমের ভরা সংসার মধ্যবিত্ত পরিবার তবে কোন জিনিসের অভাব নেই যা আছে তাই যেনো তার কাছে অনেক। একটা মেয়ের খরচ চালানো সাজু মিয়ার কোন ব্যপার না। তবে এক পয়সাও তিনি দেবেন না। নিজের স্বামীর জেদের সাথে পেরে উঠেন না হালিমা বেগম। কত করো বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ তিনি। এই সীমিত টাকা দিয়ে মেয়েটা কি খায় না খায় ঢাকা শহরে সব জিনিসের দাম নাকি বেশি এসব ভাবছেন আর শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছছেন।
আদিল সাহেব আনাহা আর আয়ানের রুমে আসলো। মুখে যাই বলুক মেয়েটা নিজের খরচ নিজে বহন করে এটা শুনে তার মেয়েটাকে খুব মনে ধরেছে। তাই মেয়েটার সাথে কথা বলতে গেলেন। দরজার সামনে যেয়ে শুনতে পেলেন
আনহা আয়ানকে বলছে, এই শোন আমরা একটু টিচারকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। জানিস টিচারের চোখ পুরো আলুর মতো ফুলে গিয়েছিলো। আর টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে। আমার ভিষণ ভয় করছে আয়ান।বড় আব্বু জানতে পারলে আমাদের বোডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেবে।
আয়ান বললো কি বলছিস তুই ওই পারফিউমের বোতলে তো আমি পানি ভরে রেখেছিলাম।
– তাহলে এতো কষ্ট কেনো হলো চিটারের। থুক্কু টিচারের।
– দাঁড়া দেখছি পারফিউমের বোতল চেক করে।
আয়ান পারফিউমের বোতল প্রেস করতেই পারফিউম বের হয়ে আসলো। আতংকিত চেহারা নিয়ে আনহাকে বলে, এই টাতে পারফিউম কোথা থেকে আসলো।আমি তো পানি ভরে রেখেছিলাম।
– এবার কি হবে। টিচারের চোখ যদি আর ভালো না হয় তাহলে!
– আমি থাকতে তুই এতো চিন্তা করছিস কেনো! আমার মিনি ব্যাংকে টাকা আছে না। সেগুলো দিয়ে টিচারের চিকিৎসা করিয়ে নতুন চোখ লাগিয়ে আনবো।
– তুইতো জিনিয়াস আয়ান। তবে জানিস চিটার থুক্কু টিচার কিন্তু অনেক ভালো। দাভাই আমাকে রাগ করছিলো তখন টিচার বলে,ওকে কিছু বলবেন না।
– আগামীকাল টিচারকে সরি বলে দেবো তাহলেই দুতভাত হয়ে যাবে।
আদিল সাহেব সব শুনে চলে গেলেন নিজের রুমে।
তানিম গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলো গাড়ি পার্ক করে একটা দোকান থেকে কিছু চকলেট কিনলো। মাঝে মাঝেই চিপস, চকলেক বিভিন্ন খাবার কিনে পথ শিশুদের দেয়। সেগুলো কিনে ফিরে আসার সময় তানিমের চোখ পরলো রাস্তার অপর পাশে অনু আর তন্ময়ের দিকে।
অনুর পা আর চলছে না মাথটাও কেমন চক্কর দিচ্ছে এতো টেনশন তার উপর এই মানসিক টর্চার।হঠাৎ করে অনু মাথা ঘুরিয়ে রাস্তায় পরে যাওয়ার আগেই কারো বলিষ্ঠ বাহুতে আগলে নিলো কেউ।
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰