তোর শহরে প্রেম পর্ব -১২

#তোর_শহরে_প্রেম

#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-১২

অনু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ছাদে গেলো কাপড় শুকাতে দিতে। কাপড় মেলে দিয়ে কিছু সময় ছাদে, দাঁড়িয়ে চুল শুকালো । কিছুক্ষণ ছাদে থেকে। ছাদ থেকে নেমে আসলো। নিজের রুমে ঢুকে আবার বের হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো। ঠিক রুমে এসেছে তো? নাকি অন্য কারো রুম। না ঠিকি তো আছে তাহলে এসব। সুন্দর একটা খাট, ড্রেসিংটেবিল,কাভার্ড, পড়ার টেবিল। অনু বোকার মতো চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।

তন্ময় কিচেন থেকে কফি খেতে খেতে বেডে বসে বলে সারপ্রাইজ কেমন লাগলো হবু বউ!

– আপনি এখানে? এক্ষুনি বের হযে যান কেউ দেখে ফেললে আমার মান সম্মান সব শেষ। তাড়াতাড়ি চলে যান।

– আহারে হিতা তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেনো আফটারল আমি তোমার হবু হ্যাসবেন্ড। সো এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।বসে কফি খাও।

– প্লিজ আপনি চলে যান। কেনো করছেন এমন! আর এসব কিছু কেনো এনেছেন?

– এটা কোন কথা বললা বউ! আমি এতো আরামে থাকবো আর আমার বউ কষ্টে থাকবে। সেটা কি করে হয়। তাই সামান্য কিছু ব্যবস্থা করেছি। বাপের হোটেল তো তাই।নিজের হলে আরো করতাম।

– এসব কেনো করছেন?

তন্ময় হুট করে অনুর হাত ধরে নিজের বুকের বা’পাশে রাখলো। অনু কিছু বলবে তার আগেই তন্ময় অনুর ঠোঁটের উপর নিজের আঙ্গুল রেখে বলে,কোন কথা বলবে না। যাস্ট ফিল করো! আমার হৃদয়ে তোমার জন্য অনূভুতি। অনু কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন!
তন্ময় হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, আনরোমান্টিকের বস্তা।

– ফাইজলামির এক লিমিট থাকে আপনি তাও ক্রস করে ফেলেছেন। আর আপনার হৃদয়ে আমার জন্য অনূভুতি তো ভালো কথা তার অ-ও নেই।

-আচ্ছা তাড়াতাড়ি খেতে দাও খাবার খেয়ে তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো।

– খেতে দাও মানে কি? দেখুন ভদ্র ছেলের মতো এখান থেকে চলে যান।

– না আজকে তোমার হাতের রান্না খেয়ে দেখতে চাই। সারাজীবন তোমার হাতের রান্নাই তো খেতে হবে?

– দেখুন আপনার মতো নিমপাতার মুখে মধুর মতো কথা মানায় না। আর প্লিজ চলে যান।

– তোমার মুখের মুধুর কথা শুনে শুনে নিমপাতায় মধু তৈরী হচ্ছে। আচ্ছা তাড়াতাড়ি খেতে দাও।

– মাহি রুমে ঢুকে আবার বের হয়ে যেতে নেয়। অনু মাহিকে বের হতে দেখে বলে, কিরে কোথায় যাচ্ছিস!

মাহি বোকার মত বলে,এটা কোথায় এসেছি আমি!

– তুই ঠিক জায়গায় এসেছিস! এবার বাকী কথা পরে হবে ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার খাবো।

তন্ময়, বললো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও শ্যা*লি*কা প্রচণ্ড খুদা পেয়েছে!

– মাহি বোকার মতো একবার অনুর দিকে তো একবার তন্ময়ের দিকে তাকাচ্ছে।

তন্ময় বললো, এতো কি ভাবছো! হবু দুলাভাই কি? তোমাদের বাসায় আসতে পারনে?

মাহি কিছু না বলে, ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

অনু তন্ময়কে বলো আপনি চলে যান প্লিজ! কেউ দেখে ফেললে কেলেংকারি হয়ে যাবে।

তন্ময় উঠে এসে দরজার লক লাগিয়ে দিল। অনু বললো, কি, কি করছেন দরজা খুলেদিন বলছি!না হলে আমি কিন্তু চিৎকার করবো।

– মিস হিতা শুরু করুন চিৎকারর,সাথে বাংলা সিনিমের নায়িকাদের মতো বলুন, সয়তান তুই আমার দেহ পাবি মন পাবিনা।

– ছিহহহহ কি কথা এসব।

– তাহলে কথা না বাড়িয়ে খেতে দাও খেয়ে চলে যাই

অনু ভাবছে একটা ডিম ভাজা আর ডাল দিয়ে তিনজন কি ভাবে খাবো?

মাহি বের হয়ে খাবার বাড়তে লাগলো

তিনজন বসেছে খাবার খেতে। একটা ডিম তিনজনে ভাগ করে নিলো। ডিম আর ডাল দিয়ে তন্ময়কে খেতে দেখে, অনু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

তন্ময় বললো এভাবে তাকিয়ে থাকলে পেট খারাপ করবে আমার।

– আপনি এসব খাবেন ভাবতে পারিনি।

তন্ময় বললো কেনো এটা কি মানুষের খাবার না। এটা কি শুধু এলিয়েনরা খায়!

– মানুষের খাবার তবে আপনার মতো মানুষের না। আচ্ছা এবার কথা কম বলে খাবার শেষ করে চরে যান। আর হ্যাঁ এসব কিছু নেোযার ব্যবস্থা করবেন।

– তন্ময় খাবার শেষ করে অনুর ওড়নায হাত মুছে বলে, হবু বৌয়ের জন্য এতোটুকু করতেই পারি! আচ্ছা এখন আসছি! সকালে রেডি থেকো আমি তোমাকে পিক করবো।

– মানে কি?
– মানে হলো এখন থেকে একসাথে ভার্সিটিতে যাবো, আবার আসার সময় তোমাকে নিয়ে আসবো

– আপনি কি চাইছেন?
– তোমার জীবন সঙ্গী হতে!
– কোন মেয়েই দু’মাসের জন্য পুতুল খেলার সম্পর্ক চায় না।

– আরে জান এখনও ওইখানে আটকে আছো! ভুলে যাও দু’মাস। শুধু মনে করো সারাজীবন।

অনু আরো কিছু বলতে চেয়েও বললোনা করণ এখন কথা বাড়ানো মানেই আরো কিছু সময় তন্ময় এখানে থাকবে তাই চুপ করে রইলো।
– ইশ ভাবতেই ভালো লাগছে, তোমার মতো বুদ্ধিমতী মেয়ে ভবিষ্যতে আমার বউ হবে!

অনু চুপ করেই রইলো।

ওকে হিতা ফোনে কথা হবে। কল করার সাথে সাথে রিসিভ হওয়া চাই। নয়তো স্বশরীরে চলে আসবো।

তন্ময় চলে যেতেই মাহি হাসতে হাসতে বলে, অনাহিতা থেকে অনু ঠিক আছে। বাট শুধু হিতা সো ফানি।

– চুপ থাক তোর কাছে ফানি মনে হচ্ছে। হুট করেই এই নিমপাতার কি হলো কে জানে! সকাল থেকেই রসমালাইয়ের মতো কথা বলছে।

– তুই কি ভয় পাচ্ছিস

– ভয়তো পাওয়ারি কথা। আমার কাছে বিষয়টা সন্দেহ জনক।

-শোন আমি বলি কি তুইও ওর সাথে অভিনয় কর!

– তোর মাথা ঠিক আছে ওই অসভ্য ময়ের সাথে আমি ছিহহহ।

– আরে শোন তাহলে সা*পও ম*র*বে*না লাঠিও ভাঙবে না।

-তোর কথা তোর কাছেই রাখ, এর ব্যবস্থা আমি করছি।

______________________________________________রাতে খাবার টেবিলে সবাই খাবার খেতে বসেছে। তন্ময় খেয়াল করলো তানিম খাবার রেখে কিছু নিয়ে চিন্তায় মগ্ন আছে। এর মধ্যেই ইরা বেগম এসে তানিমের প্লেটে করলা ভাজি দিতেই। তানিম বলে, আমি মোটেই করলার মতো কথা বলিনা।

সবাই তানিমের দিকে তাকিয়ে আছে। সারা হাসতে হাসতে বলে, দাভাই তোকে প্রেমের পেত্নীতে ধরেছে নাকি?
– সারার কথায় তানিম আশেপাশে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। ইশরে কি বলতে কি বলে ফেলেছি।

তন্ময় বললো,দাভাই করলা খেলে তো মুখ দিয়ে করলার মতোই কথা বেড় হবে।তাই নয় কি?

– তোর কথাওতো নিমপাতার মতো! তুই কবে থেকে নিমপাতা খাওয়া শুরু করেছিস।

সবাই হেসে ফেললো। আদিল সাহেব বললেন, অবশেষে কেউ হয়তো আমার গম্ভীর ছেলেটার মুখে বুলি ফুটিয়েছে। তা কে সে? ঠিকানা বলো একেবারে নিয়ে আসি! সে এসে যদি তোমাকে করলার বদলে মধু খাইয়ে মিষ্টি কথা শেখাতে পারে তাহলে মন্দ হতো না।

তানিম বললো বড় আম্মু আমার জন্য কফি পাঠিয়ে দিও আমি উপরে গেলাম। বলেই হনহন করে চলে গেলো।

সায়লা বেগম আদিল সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার কি এই কথাটুকু না বললে হতো না। দেখলে তো ছেলেটা খাবার ছেড়ে উঠে চলে গেলো।

– এসব কথা রাখো আর ছেলের বউকে খুঁজে বেড় করো।

তন্ময় মনে মনে বলছে, আমি বিয়ের কথা বললেই দোষ হয়ে যায়।

সারা আস্তে করে তন্ময়কে বললো তোর কি মনে হয় দাভাই সত্যি সত্যি কারো প্রেমে পরেছে?

-শুধু মনে হয়না এটাই রিয়েলিটি। এখন তোকে আর আমাকে মিলে হবু ভাবিকে খুঁজে বের করতে হবে।

সারা তন্ময়ের সাথে বলে তাহলে আজ থেকে মিশন ভাবি খুঁজে বের করা স্টার্ট।
– হুম। সাথে আমার নিজের বিয়ের ব্যবস্থাও করতে হবে।

– আমার কি মনে হচ্ছে তন্ময়, তুই শুধু থাপ্পড় আর থুথু আর ফয়সালের বাজির কারণে অনাহিতাকে বিয়ে করছিস না। এর পেছনে অন্য কোন কাহিনী আছে। এই বলনা আসল কাহিনী কি?

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here