#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ১১(বৃষ্টিবিলাস)
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোনো ক্রমেই কপি করবেন না কেউ)
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। ইতোমধ্যে আকাশে মেঘের গুড়ুম গুড়ুম শব্দ শুরু হয়ে গিয়েছে। রিমি নিজ খেয়ালে ভুট্টা খাচ্ছে। আহসান ভুট্টার স্বাদ নেওয়ার থেকে বেশি রিমির খাওয়া দেখতে ব্যস্ত। খাওয়া শেষে রিমি আহসানকে বলল, ‘বৃষ্টি আসতে পারে যেকোনো মুহুর্তে। আমি বাসায় যাব।’
‘হুম চলুন আমি দিয়ে আসছি।’
‘লাগবে না আমি যেতে পারবো।’
‘নো ওয়ে, আমি আপনাকে বাড়িতে দিয়ে আসবো। মনে করেন এটা আমার রেস্পন্সিবিলিটি।’
‘আচ্ছা চলুন।’
ওরা এক কদম যেতেই পার্কের সামনের দারোয়ানকে একটা পিচ্চিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে দেখলো। বাচ্চাটি পাকা রাস্তার উপর মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে হাত পায়ের নানা জায়গা ছিলে যায়। ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে মেয়েটি। আহসান দৃশ্যটি দেখে বেশ রেগে গেল। ও দ্রুত পায়ে সেখানে গিয়ে দারোয়ানের উদ্দেশ্যে বলল, ‘আপনি বাচ্চাটাকে এভাবে ধাক্কা দিলেন কেন?’
‘ধাক্কা দেবনা তো কি করবো? চুরি করে পার্কের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করছিলো। রাস্তার কোন ফকিরের মেয়ে কে জানে? বাবা মা জন্ম দিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে। পথে ঘাটে পড়ে থাকা পঁচাবাসি খেয়ে জীবন বাঁচায় আর সুযোগ পেলে চুরি করে খায়। এসব নর্দমার কীট পতঙ্গ মার খাওয়ারই যোগ্য।’
আহসান মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল।দারোয়ানের কথাটায় আহসানের রক্ত মাথায় চড়ে বসলো। আহসান দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘আপনার কি কোনো সন্তান নেই?’
‘আছে কেন?’
‘আপনার বাচ্চাকে কেউ এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে আপনার কেমন লাগতো? আজ যদি আপনি এই বাচ্চাটার মতো রাস্তায় বড় হতেন, তাহলে আপনার সন্তানও রাস্তাতেই ঘুরে বেড়াতো। ওর মতো আপনার বাচ্চাকেও কেউ না কেউ লাথি চড় মারতো। একটু নিজের বাচ্চাকে ওর জায়গায় বসিয়ে অনুভব করুন, দেখবেন আপনি আপনার ভুল বুঝতে পারবেন।’
দারোয়ান নিশ্চুপ হয়ে শুনে যাচ্ছে আহসানের কথা। ওদিকে রিমি বাচ্চা মেয়েটাকে তুলে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি করছিলে এখানে? নাম কি তোমার?’
মেয়েটি চোখের পানি হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,’আমি ওইডার ভিতরে যাইতে চাই(পার্ক দেখিয়ে বলল)। রঙের রঙের হাতি ঘোড়া,ময়ূরের উপর চড়তে চাই। কিন্তু আমার বাপ মা নাই। এতিম বইলা যাইতে পারি না। আইজ তার লাইগা চুরি কইরা ঢুকতে চাইছিলাম। পারি নাই। ধরা পইড়া গেলাম। আমার নাম টোকাই। সবাই এইডা বইলাই ডাকে।’
ময়লা কাপড়, উষ্কখুষ্ক চুলওয়ালী মেয়েটার কথায় রিমি খুব দুঃখ পেল। রিমি বলল, ‘তুমি চিন্তা করো না। আমি তোমাকে ওটার মধ্যে নিয়ে যাব৷ কিন্তু সব রাইডে চড়াতে পারবো না। তুমি কিন্তু রাগ করতে পারবে না আমি তোমার সম্পূর্ণ ইচ্ছে পূরণ করতে পারবো না বলে।’
তখনই আহসান বলল, ‘কেন পারবেন না? সব রাইডেই চড়াতে পারবেন মেয়েটিকে।’
রিমি ভ্রু কিঞ্চিৎ বাকিয়ে বলল, ‘কিভাবে?’
‘আর কোনো কথা নয়। ভেতরে যাওয়া যাক।’
আহসান রিমি আর বাচ্চাটিকে নিয়ে আবারও পার্কের মধ্যে গেল। বাচ্চা মেয়েটি যা যা চাইলো সব আহসান পূরণ করলো। যা যা খেতে চাইলো খাওয়ালো। রিমির কাছে অচেনা আহসানকে খুব চেনা মনে হলো। বড়লোকদের মনে যে গরীবদের জন্য এতো বেশি সহানুভূতি থাকতে পারে তা আহসানের সাথে দেখা না হলে রিমি বুঝতেই পারতো না। রিমি সবসময় ভাবতো বড়লোকরা মুডি আর অহংকারী হয়। কিন্তু আজ রিমির ধারণা পাল্টে গেল আহসানের মাধ্যমে। আহসান ওর দাদুর নামের এতিমখানায় মেয়েটিকে দিয়ে আসলো। যাতে মেয়েটি থাকার জন্য একটা জায়গা পায়। আসার পথে তুমুল তোড়জোড়ে বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। রিমি আহসানের পাশের সিটে। আর আহসান ড্রাইভিং সিটে। বৃষ্টি দেখে আহসান বলল, ‘আমি আগেই বলেছিলাম আপনাকে ড্রপ করার পর বাচ্চাটিকে এতিমখানায় দিয়ে আসবো। কিন্তু আপনি শুনলেন না। এখন দেখেছেন বৃষ্টি নেমে গেছে। আপনার বাড়ির পথ এখনও দূরে।’
‘আমার ইচ্ছে হলো খুব তাই আসলাম।’
‘আপনার বাসার লোকজন চিন্তা করবে আপনার জন্য। আপনি ভার্সিটি থেকে অনেক আগেই বেড়িয়েছেন।’
‘উহু কেউ চিন্তা করবে না। কারণ আমি তিয়াসাকে বলে এসেছি ও সামলে নেবে।’
‘ওহ, তাহলে ঠিক আছে।’
‘আপনি খুব ভালো একজন মানুষ। আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুব ভালো লাগছে। কিছু শিক্ষা পেয়েছি।’
‘শিক্ষা! যেমন?’
‘এইযে ধনীরাও যে নিম্নস্তরের মানুষদের ভালবাসতে পারে, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। এসব।’
‘ধনীদের নিয়ে ভুল ধারণার কারণ কি জানতে পারি?’
‘কখনো মেশা হয়নি তাই হয়তো। আসলে আমি জানি না কেন। তাই সঠিক বলতে পারলাম না।’
‘বিশ্বাস করলাম। বলে গান বাজিয়ে দিল আহসান।’ বৃষ্টির কোনো এক রোমান্টিক গান। গান শুনে রিমি আর বসে থাকতে পারলো না। রিমি বলল, ‘গাড়ি থামান। আমি বৃষ্টিতে ভিজবো।’
‘বৃষ্টিতে ভিজলে আপনার জ্বর আসতে পারে। এই সময়ের বৃষ্টি ভালো নয়। ওয়েদার চেঞ্জ হয়েছে। তাই বৃষ্টিতে না ভেজাই বেটার। কিছুদিন পর ভিজবেন।
‘বৃষ্টি আমার পছন্দ নয়। কিন্তু আজ মন চাচ্ছে কেন জানি। প্লিজ আমার কথাটা রাখুন।’ রিমি আহসানের কাঁধে হাত রেখে বলল। পরক্ষণেই হাত সরিয়ে সরি বলল।
‘ইট’স ওকে সরি বলতে হবে না। ভিজুন তবে বেশিক্ষণ না। বললাম না এখন সিজন ভালো যাচ্ছে না।’
‘আপনি কি ডক্টর নাকি যে অ্যাডভাইস দিচ্ছেন?’
‘হুম ডক্টর।’
‘ওপ্স, সরি। ওকে তাই হবে।’ বলে নেমে পড়ে রিমি।
রিমি বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা অনুভব করে এঞ্জয় করছে। আর আহসান অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখছে। এবার আহসানও সিটবেল খুলে রিমির সাথে ভিজতে গেল। লোভটা আর সামলাতে পারলো না আহসান। তাই সব বিধিনিষেধ ভুলে বের হলো। রিমির খোলা চুলগুলো অবাধ্য হয়ে রিমির মুখে লেপ্টে আছে। আহসান আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে দিতেই রিমি ধীর স্থির হয়ে গেল। হাত পা একজায়গায় বেঁধে ফেলল। চোখ নামিয়ে মাটিতে গাড়লো। আহসান বুঝতে পারলো রিমি বিষয় টা ভালো চোখে নেয়নি। তাই সরি বলে রিমিকে ওর বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসলো।
#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ১২
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোনো ক্রমেই কপি করবেন না কেউ)
‘আপু তুই ভিজে আসলি যে? রিকশা বা অটো পাসনি?’ তিয়াসা দরজা খুলতেই রিমিকে ভেজা অবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রশ্ন করে।
‘পরে বলছি এখন সর খুব শীত শীত লাগছে আমার।’ বলে পাশ কেটে রিমি ভেতরে ঢুকে গেল।
রিমি চেঞ্জ করে এসেই দেখলো তিয়াসা এক কাপ রঙ চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,
‘আমার জন্য?’
‘হুম তোর জন্য। পিয়াজুও বানিয়েছি তুই খাবি? অবশ্য অনেকক্ষণ আগেই বানিয়েছি তাই ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে৷ তুই যে এতো লেট করবি তা আমি কি করে জানবো বল?’
‘না খাব না। চা টাই খাই। আব্বু আম্মু এসেছে তো?’ তিয়াসার থেকে কাপ নিয়ে বলল।
‘হুম তুই যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই চলে এসেছিল।’
‘সেকি! আমার কথা জিজ্ঞেস করেছে কিছু?’
‘হুম করেছিল।’
‘তুই কি বলেছিস?’
‘বলেছি ভার্সিটি গিয়েছিস মাত্র। আর আসতে একটু লেট হবে তোর।’
‘তারপর আব্বু আম্মু আর কিছু বলেছিল?’
‘না, দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। খুব ক্লান্ত। কতখানি জার্নি করে এসেছে।’
‘ভালো করেছে।’
‘এবার এসব কথা ছাড়। তুই বল আহসান ভাইয়ার সাথে কি কথা হয়েছে তোর? ভাইয়া কি সত্যি তোকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিত নাকি অন্য কোনো শাস্তি দিয়েছে?’
‘শাস্তি!’ হা হা হা,,, রিমি হেসে খুন।
এতো সিরিয়াস কথায় রিমি হেসে দিয়েছে বলে তিয়াসার খুব রাগ হলো। ও বাজখাঁই কন্ঠে বলল, ‘হাসার কি আছে? আমি টেনশন করে বাচিঁনা আর তুই হাসছিস দাঁত কেলিয়ে?’
‘ওলে বাবা আমার ছোট্ট বনুটা কতো ভাবে আমার জন্য।’ তিয়াসার গলা জড়িয়ে বলল রিমি।
তিয়াসা রিমির হাত ঝামটা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে, ‘উফফ ভাল্লাগে না। মেইন পয়েন্টে আয়।’
‘ওকে বাবা বলছি।’ রিমি এক এক করে সব বলছে আর মাঝে মাঝে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। সব শুনে তিয়াসাও হো হো করে হেসে ওঠে।
‘কি বলছিস আপু! ভাইয়া তাহলে ডেয়ার নিয়েছিল? এতো সবকিছুর পেছনে তাহলে সামান্য ডেয়ার!’
‘হুম, ইন্টারেস্টিং না?’
‘সত্যিই, যে এইরকম ডেয়ার দিয়েছে না সে নিশ্চয়ই মজার কোনো মানুষ। আমার তো তাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে এখন। সত্যি ভাবা যায় এগুলা!’
‘এতো দেখতে যাসনা। পরে দেখবি আমার মতো মাইনকার চিপায় গিয়ে ফাঁসবি একদিন।’
‘তুই কোথায় ফাঁসলি হুম? আজ তো একা একাই ঘুরলি আমাকে ছাড়া। দ্যাট’স নট ফেয়ার। আহসান ভাইয়া তো খুব ভালো একজন মানুষ। আমি তো প্রথম দিনই বুঝে গিয়েছিলাম।’
‘হুম ঠিক বলেছিস। উনি আসলেই ভালো একজন লোক।’
‘বুঝলি শেষে, তবে কাঠখড় পুড়িয়ে।’
‘তা যা বলেছিস।’
‘কিন্ত তুই ভিজলি কিভাবে? মানে ভাইয়ার তো গাড়ি ছিল। তাহলে কিভাবে হুম? আর তুইতো বৃষ্টিতে ভিজতে ভালবাসিস না। সো হাউ?’
‘কেন যেন আজ খুব মন চাইলো। অ্যাটমোসফেয়ার টাই মনোমুগ্ধকর ছিল পুরোই।’
‘পাশে ক্রাশ থাকলে তো মন কতো কি চাইবে।’ তিয়াসা কথাটা ব্যঙ্গ করে বলল।
‘ওই তুই কি বললি?’
‘যা শুনেছিস।’
‘তুই অনেক পেকেছিস।’
‘তোর থেকে কম। তোর মতো ছোট বেলায় বিয়ে বিয়ে করিনি। এখনো করছি না। সামনেও করবো না। আর তুই? আহসানকে বিয়ে করবো, আহসান আমার প্রিন্স হ্যান ত্যান। আব্বু আম্মুকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করা যাক কে বেশি পাকনা?’
‘হয়েছে হয়েছে। আর বলতে হবে না। ওই একটু পাগলামি করেছি শুধু। এখন বুঝেছি ওসব আবেগ ছিল। মানে শখ টাইপ আবেগ। আহসানদের বাড়ি টা খুব পছন্দ হয়েছিল বলে এতদূর এসে পড়েছলাম। ছোট বেলায় কি ওতো বুঝে নাকি কেউ যে আমি বুঝবো?’
‘আহসান ভাইয়ার বাড়ি গাড়ি পছন্দ হয়েছিল বলে আহসান ভাইয়ার বউ হতে চেয়েছিলি বুঝলাম। কিন্তু এখন তো আহসান ভাইয়াকে চিনলি কাছ থেকে। এখন কি চাস?’
‘কি চাইবো?’
‘এখন বউ হতে চাসনা ভাইয়ার?’
‘কি যাতা বলছিস? আজ আহসান প্রপোজ করার কথা বলে যেই লজ্জা দিলনা, আমার তাতেই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ওসব আবেগ ছিল। বিয়ে কি মুখের কথা নাকি যে বলে দিলাম আর হয়ে গেল?’
‘তাও ঠিক। তবে ভেবে দেখিস একবার। মানে ছেলে ভালোই। হ্যান্ডসাম, ভালো মনের, আবার ডক্টরও।’
রিমি চোখ পাকিয়ে বলল,
‘তুই বেশি বলছিস কিন্তু!’
‘আচ্ছা সরি বাবা। তো আমি কলেজে যাচ্ছি কবে থেকে?’
‘ আগামীকাল থেকে।’
‘ইয়াহু! অনেক মজা হবে তাহলে।’
‘মজা তোর পিঠে পড়বে। আমি সবসময় নজর রাখবো তোর উপর। তাইতো আমাদের ভার্সিটির পাশের কলেজেই ভর্তি করিয়েছি তোকে।’
‘যা ইচ্ছা কর। আমি কলেজে যাচ্ছি। আমি বড় হয়ে গিয়েছে।’ বলে তিয়াসা লাগাতে শুরু করে।
ওইদিকে আহসান বাড়িশুদ্ধু লোকের হাজারটা প্রশ্নের সাথে লড়াই করার পর নিজের রুমে আসতে পারলো। আহসানের শরীর ভালো লাগছে না। বিশেষ করে জিসান আর জান্নাত তো খুব বেশিই জ্বালিয়েছে আহসানকে। আহসান কোনোমতে বেঁচে ফিরেছে ওদের হাত থেকে। জ্বর জ্বর ভাব লাগছে আহসানের কাছে। তাই লাইট কিছু খেয়ে আগে থেকেই প্যারাসিটামল খেয়ে নিল।
আহসান খানিকক্ষণ রেস্ট নিল। কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে তাকাতেই ওর পাশে স্রুতিকে বসে থাকতে দেখলো। আহসান নড়েচড়ে বসলো। তা দেখে স্রুতি বলল, ‘কিরে উঠে যাচ্ছিস কেন? শুয়ে থাক। তোর শরীর ভালো না বলেছিলি তো।’
‘নাও আই এম বেটার।’
‘তাও শুয়ে থাক।’
‘বললাম তো ঠিক আছি। কিন্তু তুই কি করছিস এখানে?’
‘বসে ছিলাম। মামি বলল তোকে মাঝে মাঝে দেখে যেতে। তাই আরকি বসে থাকা।’
‘ওহ, এখন আমি ভালো আছি। শরীরও ভালো লাগছে। তুই যেতে পারিস।’
স্রুতি ইতস্তত করছে। যাবে কি যাবে না ভাবছে। সাথে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। আহসান সেটা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কিছু বলবি কি?’
‘হুম কিন্তু তুই guess কর। বা কিছু লক্ষ্য কর।’
‘কি গেস করব? কি বলছিস?’
‘উফ তুই যে কি? দেখছিস না আমি শাড়ি পড়েছি। চোখ নেই বুঝি তোর?’
‘ও, তো কি হয়েছে? শাড়ি পড়া কি গুনাহ?’
‘তুই বুঝবি না। আমারই ভুল। আচ্ছা আমি তাহলে যাই। তুই তো আমাকে সহ্য করতে পারছিস না।’
‘এটা কোনো কথা বললি? আমি কি তাই বলেছি? তুই বসে বসে বোর হচ্ছিলি বলে আমি যেতে বলেছি। তোর সমস্যা দূর করতে।’
‘তোর কাছে থাকলে বুঝি আমার সমস্যা হয়?’
‘না সেটা না। তুই কি বলতে চাস বলতো?’
‘কিছু না। বৃষ্টি দিন। ভাবলাম শাড়ি পড়ি। কিন্তু কেউ তো দেখার নেই তাই কমপ্লিমেন্ট দেওয়ারও কেউ নেই। ভুল হয়েছে। বায়।’ চলে গেল স্রুতি।
‘কি ব্যাপার! এভাবে স্রুতি চলে গেল কেন? রাগ ইবা করলো কেন? স্ট্রেঞ্জ!’
#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ১৩
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোনো ক্রমেই কপি করবেন না কেউ)
স্রুতি নিজের রুমে এসে শাড়ি বদলে ফেললো। তারপর বসে রইলো এককোণে মনমরা হয়ে। জান্নাত ধীর পায়ে স্রুতির রুমে এসে বলল,
‘শাড়ি বদলে ফেললে কেন? ভাইয়া দেখেনি তোমায়?’
স্রুতি মাথা উঁচিয়ে তাকালো। তারপর পুনরায় চোখ নামিয়ে বলল, ‘তোর ভাই কখনো দেখেছে আমায়? যখন তোরা ফরেন ছিলি, তখন ভিডিও কল করলেও দু চার কথা বলে লাইন থেকে চলে যেত আহসান। ভাবতাম বিজি হয়তো। কিন্তু এখন বুঝলাম ইচ্ছে করেই ওমন করতো।’
‘ভাইয়াটা আসলেই কেমন যেন। মনে হয় ভিন্ন প্রকৃতির। মেয়েদের কাছে ঘেঁষতে দেয়না। তুমি মন খারাপ করো না।’
‘মন খারাপ কি ইচ্ছে করে হয়?’
‘তা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা একটা কথা বলবে আমায়?’
‘কি?’
‘ভাইয়াকে লাভ করো?’
স্রুতি হচকচিয়ে উঠে বলল,’কি?’
‘ভালবাসো আমার ভাইয়াকে?’
‘না আসলে’,,,, স্রুতি মৃদু হেসে ওঠে।
‘হুম বুঝে গিয়েছি।’
‘কি বুঝলি?’
‘ওই চোখ দুটো যেন কিছু বলে যায়। হিহিহি।’
‘মানে? মার খাবি কিন্তু জান্নাত। বল কি বলবি।’
‘ভাবিজি হবে কি আমার?’
কথাটা শুনে শ্রুতির চোখ মুখ লাল হয়ে আসলো।তা দেখে জান্নাত আবার বলল, ‘লজ্জা পাচ্ছো! ওয়াও তার মানে রাজি?’
স্রুতি মাথা ঝাকিয়ে বলল, ‘হুম অনেক আগে থেকেই।’
‘তো বলে ফেল ভাইয়াকে। বিয়ের বয়স তো হয়েছে দুজনেরই।’
‘কিভাবে বলবো? বলার উপায় আছে কি? আহসান তো তাকায় না আমার দিকে।’
‘এমন কিউট একটা মেয়ের দিকে তাকায় না? ভাইয়াটা আসলেই বোকা। আমি ওর জায়গায় থাকলে চোখ বুজে বিয়ে করে নিতাম তোমাকে। নেহাত মেয়ে বলে।’
‘এখন বল আমি কি করবো? কিছু টিপস দে বড় বোনটাকে।’
‘বোন নয় ভাবি ওকে?’
‘আচ্ছা তো ভাবিকে টিপস দে।’
‘তুমি একটা কাজ করো।’
স্রুতি উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘কি রে?’
‘বড়দের জানাও। বিশেষ করে দাদিয়াকে।’
‘কি বলছিস? নানু খুব স্ট্রিক্ট। আমি তাকে এই নিয়ে কিছু বলতে পারবো না। আমার সেই দুঃসাহস নেই।’
‘ভীতুর ডিম। ভালবাসতে পারো কিন্তু এতটুকু সাহস দেখাতে পারো না।’
‘ভয় লাগে তো। নানুর এটিটিউড জানিস না তুই?’
‘জানি তবে আমাদের বাড়ির মেইন মাথা দাদিয়া। তার কথাই শেষ কথা। তাই তাকেই পটাতে হবে।’
‘বলছিস?’
‘হুম গেট রেডি।’
‘আমি পারবো না বোন।’
‘পারতে হবে। নইলে হবে না।’
‘বাট হাও?’
‘যেভাবে বউ শাশুড়ীর সেবা করে মন ভোলাতে চায়। ঠিক সেভাবে।’
‘তুই যে বলিস না? উনি আমার নানু। শাশুড়ী! ছি ছি।’
‘বোকা মেয়ে আমি কি তাই বলেছি নাকি?’
‘তো ভালো ভাবে বল।’
‘শোনো আপু, তুমি দাদিয়াকে পান বানিয়ে দিবে সামনে। রাতে পা টিপে দেবে। গল্প করবে বেশি বেশি।’
‘এসব করলে কাজ হয়ে যাবে?’
‘হুম হয়ে যাবে।’
‘কিন্ত যার সাথে জীবন কাটাতে চাই সেকি আমাকে মেনে নেবে? আহসানের দিক দিয়েও তো রেসপন্স পেতে হবে।’
‘দাদিয়া মেনে নিলে ভাইয়া এক পায়ে খাড়িয়ে মানতে বাধ্য।’
‘হুম তাও ঠিক। তাই হবে।’
‘তো আজই শুরু করে দাও মিশন নানু পটাও।’
‘মিশন বলছিস? অ্যাডভেঞ্চার বল এটাকে। আমার তো এখনি ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।’
‘ভয় পেওনা আপু। আমি তোমার পেছনে আছি।’
‘পেছনে!’
‘হুম পেছনে। তুমি সামলাতে না পারলে আমি আছি। তাই বললাম পেছনে। ধরো তুমি একটা ক্যাচ মিস করলে।’
‘হুম ধরলাম।’
‘ধরবে কিভাবে? তুমি তো ক্যাচ মিস করবে।’
‘তোর কথাটা ধরলাম। ক্যাচ না।’
‘ওহ, হুম তো ক্যাচ মিস করলে। তো এখন কি হবে?’
‘সিক্স হওয়ার চান্স অথবা ফোর। যা ইচ্ছা হতে পারে। তবে আমার উপর ক্ষেপে যাবে টিম এটা সিওর।’
‘উফ কোথায় চলে গেলে? আমি বলতে চাইলাম তুমি ক্যাচ মিস করলে তাতে কি আরেকটা চান্স তো আছে। মানে আমি তো তোমার পেছনে আছি। তাই আউট হওয়ার আরেকটা চান্সও আছে।’
‘ওও ওকে। কিন্তু তুইও যদি না পারিস?’
‘বি কনফিডেন্ট। সব ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।’
‘এখন কি করবো?’
‘রাতের অপেক্ষা৷ এখন বসে থাকো।’
————————————–
আহসান ফোনের মধ্যে করা কয়েক মিনিটের ভিডিও দেখছে। চোখ যেন সরছে ফোনের স্ক্রিন থেকে। খানিক বাদে আহসান ঘোর কাটিয়ে আচমকা বলে ওঠে, ‘আমি যে রিমির বৃষ্টি ভেজা দৃশ্যটা ওনাকে না জানিয়ে ভিডিও করেছি, এটা কি ঠিক হয়েছে? নিঃসন্দেহে ভুল করেছি। এখন কি করি? সরি বলবো? না বললে আমার আবার শান্তি হবে না। বলেই ফেলি।’ আহসান কল দিল। দু একবার রিং বাজার সাথে সাথেই রিসিভ হলো। আহসান ভেবে রেখেছে প্রথমে কিছু বলবে না। তবে চুপচাপ শুনবে। লাইনের ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো।
‘হ্যালো পাওনাদার ভাইয়া।’ আহসান কন্ঠ শুনেই আচ করতে পারলো এটা তিয়াসা।
‘কেমন আছো তিয়াসা?’
‘ভালো ছিলাম একটু আধটু কিন্তু আপনার ফোন আসায় অনেক ভালো হয়ে গেলাম।’
‘কারণ টা কি?’
‘ভালো মানুষের সাথে কথা বললে বা তাদের যেকোনো কিছুতেই ভালো লাগা থাকে।’
‘তুমি আমাকে ভালো বললে?’
‘সন্দেহ আছে?’
‘না জিজ্ঞেস করলাম তাও।’
‘বুঝেছেন যখন আর কি? আচ্ছা বলুন কি জন্য ফোন দিলেন? আপুকে লাগবে?
‘হুম লাগতো একটু।’
‘একটু লাগতো? পুরোটা না?’
‘হা হা, হুম পুরোটাই লাগতো। কোথায় উনি?’
‘আম্মুর কাছে রুটি বানানো শিখছে। পারে না তাই।’
‘তাহলে বিজি। ওকে আমি পরে ফোন দিব তাহলে।’
‘এই না আপু চলে এসেছে।’
রিমির ফোন তিয়াসার হাতে দেখামাত্রই রিমি রেগে ফায়ার।
‘ওই তোকে মা ডাকছে। আর আমার ফোন তোর হাতে কেন? কার সাথে কথা বলছিস?’
‘পাওনাদার ওরফে আহসান ভাইয়া।’ বলে রিমির হাতে ফোন গুজে দিয়ে চলে যায় তিয়াসা। রিমি আহসানের নাম্বার দেখে মৃদু হেসে ফোন কানে ধরে বলল,
‘হ্যালো!’
আহসান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘সরি।’
‘সরি বলছেন কেন?’
‘আপনি রাগ করবেন নাতো?’
‘না করবো না। বলুন আপনি।’
‘আমি আজ আপনার ভিডিও বানিয়েছিলাম। যখন বৃষ্টিতে ভিজছিলেন তখন।’
‘কিহ! কেন? কি দরকার ছিল?’ বাজখাঁই কন্ঠে।
‘সরি আমার ভুল হয়েছে। আমি জানি না কেন করেছি। বাট আপনাকে দেখতে খুব ভালো লাগছিল তখন। তাই সিনটা বন্দী না করে পারলাম না।’
‘খুব খারাপ করেছেন।’
‘আমি ডিলিট করে দেব।’
‘ওকে তবে আমাকে পাঠিয়ে তারপর। আমার মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিয়েন। আমি আমার আইডি নেম টেক্সট করছি কিছুক্ষণ পর।’
আহসান প্রাণখোলা এক হাসি দিয়ে বলল, ‘কখন?
‘ফোন কেটে তারপর।’
‘ওকে।’
‘শুনুন!’
‘জ্বি বলুন।’
‘আপনি আমার কাছে যে টাকা পান তা কাল দিতে না পারলেও পরশু দিন দিয়ে দেব।’
‘লাগবে না বলেছিলাম তো?’
‘ইশশ! আমি দিয়ে দেব। আর একটাও কথা নয়।’
‘ওকে। ভালোই হবে আপনার সাথে আবার দেখা হবে তাহলে।’
‘যদি বিকাশে দেই?’
‘আমি যেভাবে দিয়েছি সেভাবেই দিতে হবে।’
রিমি ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে বলল, ‘আচ্ছা তাই হবে।’
‘আরেকটা জিনিস চাইলে দেবেন?’
‘কি?’
‘শাড়ি পড়বেন?’
কথাটা শুনে রিমির চোখ বড় হয়ে গেল। এমন একটা কথার সম্মুখীন হয়ে রিমি লজ্জায় পড়ে গেল। অপ্রস্তুত হলে যা হয়।
আহসান আবারও বলল,’বলুন পড়বেন তো?’
‘জ্বি না, কি কালার?’ রিমি না চাইতেই বলে ফেলল। তারপর নিজের মাথাতেই চাটা মারলো।
‘স্কাই ব্লু। আমার পছন্দের।’
‘আচ্ছা আমি ফোন রাখলাম।’ রিমি ফোন কেটে দিল। ওদিকে আহসান মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নিচ্ছে রিমিকে নিয়ে। যার প্রকাশ তার হাসিতে ফুটে উঠছে।
#চলবে,
(