#দখিনা_প্রেম
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ০৪ ||
সেহের নিশব্দে মরিচা ধরা গ্রিলটা ধরে আকাশের পানে তাকিয়ে রয়েছে৷ মনে তার কালো মেঘের গর্জন দিচ্ছে, মেঘের অশ্রু তার চোখজোড়া বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে। কিছুক্ষণ আগেই তপা শুধু শুধু সৎমার হাতে চড় খাইয়েছে সাথে নিজের জম্ম পরিচয় নিয়েও অনেক বাজে কথা শুনেছে তাও নিজের জম্মদাতা বাবার সামনে যা সেহেরের সহ্যের সীমানার বাইরে। তপা কেন তাকে সহ্য করতে পারে না তা সেহের না। সেহের আকাশের পানে তাকিয়ে ভাঙ্গা গলায় বলে উঠলো,
—“মা! ও মা। আমার কষ্ট দেখতে পাচ্ছো মা? কেন আমায় এই নরকে ফেলে চলে গেলে? কেন মৃত্যুর আগে ওয়াদা করিয়ে গেলে বাবা এবং সৎমায়ের খেয়াল রাখ নিয়ে? কেন রিমনের জন্য এ বাড়িতে থাকার ওয়াদা দিলে মা? তোমার ওয়াদার কথা কাউকে মুখ ফুটে বলতেও যে পারি না মা। আমার অপরাধ কী মা? কেন সবাই আমার উপর এমন অত্যাচার করে?
মা তুমি বলেছিলে না আমি তোমার সুন্দর সকালের লাল টুকি ফুল। তাহলে তোমার এই ফুলটার কপালে সুখ কেন লেখা নাই মা? আর বাবা? আমার বাবা থাকতেও আমি এতিম, আমার জম্ম নিয়ে বাজে কথা শুনতে হয়!”
বলেই ডুঁকরে কেঁদে উঠলো সেহের। কিছুক্ষণ কেঁদে আপনমনে বলে উঠলো,
—“মা জানো আমার মাঝে মাঝে এই নরক ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে ইচ্ছা হয়, অনেক দূর! কিন্তু পারি না গো মা! তুমি যেমন আমার কাছে প্রয়োজন ঠিক তেমনই তোমার কথা। তাইতো যেদিন সৎমা এসে তোমার ওয়াদার কথা বললো সেদিন থেকে চাইলেও এই বাড়ি আর বাবা, রিমনকে ফেলে চলে যেতে পারিনি।”
সেহেরের কান্নার মাঝেই সে রিমনের কন্ঠ শুনতে পেলো। দরজার ওপারে রিমন ধাক্কাচ্ছে আর বারবার আপু আপু বলে ডাকছে।
—“আপু আপু! কী হলো দরজা লাগালে কেন আপু? খাবে না তুমি?”
—“আর খাওয়া! ভাইরে কবে পেট পুড়ে খেয়েছি আমার কনে পরে না রে। এই জীবনটা যে আমার বড্ড কঠিন।” আপনমনে বিড়বিড় করে বললো সেহের।
রিমনের আবার হাক শুনতে পেতেই সেহের নিজেকে স্বাভাবিল করে ভাঙ্গা গলায় বললো,
—“ভাই আমি খেয়ে নিবো। তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড় ভাই কাল যে তোর স্কুল আছে!”
—“আচ্ছা আপু। তুমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেও আর মনে করে খেয়ে নিও। আসছি।”
বলেই রিমন দরজার সামনে থেকে সরে নিজের ঘরে চলে গেলো। দূর থেকে তপা সবটা দেখতে পেলো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তপা আপনমনে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
—“ঢং দেখলে বাঁচি না।”
—“কীরে তপা খাবি না মা?”
—“খেয়েছি মা তুমি গিয়ে ঘুমাও।”
বলেই একপ্রকার রাগ দেখিয়ে উপরে চলে গেলো। সৎমা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। বয়স যতো বাড়ছে তার আলসামো যেন সেই হারে বেড়েই চলেছে। ছেলে-মেয়ে, সংসার এসব সামলানোর সময় কই? সে নিজে বিশ্রাম নিতেই যে ব্যস্ত। স্বামী কি করছে না করছে সেটা নিয়েও চিন্তা করে না। সবটা সামলাতে আছে তো সেহের। এইজন্যই সৎমা কখনো সেহেরের বিয়ের কথা উঠায়নি। সেহের চলে গেলে যে সে রাজরানীর মতো শুয়ে-বসে কাটাতে পারবে না।
★
সা’দ একটা সুন্দর বাগানে বসে প্রকৃতি বিলাস করছে। কিছুক্ষণ আগেই শুটিং সেরে সবে বিশ্রাম করতে বসলো। নানান ফুলের সুঘ্রাণে চারিপাশটা মৌ মৌ করছে। কিছু কিছু ফুলের ওপর দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি উড়ছে নাহয় ফুলের উপর বসে খাদ্য পান করছে। নীল আকাশ তার মাঝে ভ্যালার মতো টুকরো টুকরো মেঘ। এ যেন বসন্তের সুখবর। হঠাৎ অদূরে সা’দ খেয়াল করলো এক অপরূপ হুরপরী আকাশ থেকে নামছে। চেহারা থেকে যেন রূপের ঝলকানি উপড়ে পরছে। সা’দ মুগ্ধ নয়নে সেই কন্যাটিকে দেখছে। কন্যাটির রূপের ঝলক যেন সা’দকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। মেয়েটির দীঘল রেশমি কেশ অবাধ্য হয়ে বাতাসের তালে উড়ছে। মেয়েটি অতি যত্নে নিজের অবাধ্য কেশ সামলাচ্ছে। সা’দের দেখা যেন শেষই হচ্ছে না। এই মুহূর্তে সা’দের ইচ্ছে করছে সময়টা থেমে যাক। এই মায়াবী আর স্নিগ্ধময়ী চেহারা দেখে প্রাণ জুড়াচ্ছে না তার। মনে হচ্ছে সারাজীবন সে এই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার দেখার তৃষ্ণা মিটবে না। মেয়েটি মাটিতে পাড়া দিতেই সব ফুল উড়ে তার চারপাশটা ঘিরে সুঘ্রাণ ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই সুঘ্রাণ সা’দের নাকেও এসেছে। হঠাৎ ফুলগুলো শুকনো পাতার মতো শুকিয়ে মাটিরে পড়ে গেলো। চারপাশে নীল আকাশ যেন অন্ধকারে ঢেকে গেলো আর বড়ো বড়ো বিজলি পরতে শুরু করলো। সাথে সাথে চারপাশের সকল ফুলগাছে মরে নেতিয়ে গেলো। বাজের বিকট শব্দে মেয়েটি কানে হাত দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। এবার সা’দ উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। চোখের পলকে এসব হলো কী করে সেটাই ভেবে চলেছে সে। পায়ে তরল কিছু অনুভব হতেই সা’দ পায়ের দিকে তাকালো। একি! এ যে রক্ত! সা’দ ভীতদৃষ্টিতে চারপাশে তাকালো। পুরো মাটি রক্তের পুকুরে পরিণত হয়েছে আর এই রক্ত সব মেয়েটির থেকেই আসছে। এবার মেয়েটি মাথা উঁচু করে সা’দের দিকে তাকালো। ছলছল দৃষ্টি নিয়ে চাপা গলায় বলে উঠলো,
—“আমায় এই নরক থেকে মুক্ত করুন সা’দ সাহেব! ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।”
বলেই মেয়েটি অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।
সা’দ লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো। ভীষণ হাঁপাচ্ছে সা’দ। সা’দ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সে তার ঘরে তারই বিছানায় শুয়ে। এসি চলছে তাও সা’দের খুব উষ্ণতা অনুভব হচ্ছে। কপাল থেকে চুল সরাতে যেতেই খেয়াল করলো সা’দ ঘেমেও গেছে অনেক। সা’দ চটজলদি বালিশের পাশে থেকে এসির রিমোটটা হাতে নিয়ে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো। রিমোটটা রেখে পাশের বেডবক্স থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে সবটা খেলো। সা’দের অস্থিরতা যেন কাটছে না। কে ছিলো সেই মেয়ে? সা’দ মেয়েটার চেহারা মনে করার চেষ্টা করলো কিন্তু সে ভুলে গেছে। সা’দ ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। আবছা আলোয় বেশ বোঝা গেলো ঘড়ির কাটাটা ৩টার মাঝেই আছে। সা’দ এসব চিন্তা সাইডে ফেলার চেষ্টা করে আবার শুয়ে পরলো কিন্তু তার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘুম সহজে ধরা দিলো না। ঘুম যেন স্বপ্নের সাথে পালিয়েছে। স্বপ্নের মেয়েটা কেন যেন সা’দকে বড্ড পোড়াচ্ছে। স্বপ্ন তো স্বপ্নই! তাও কেন তার এতো ছটফটানি? অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারলো না। তাই সে উঠে বেলকনি গিয়ে কিছুক্ষণ পায়চারী করলো। তাও তার ঘুম আসছে না। অবশেষে আযান দিলো। সা’দ বেলকনি থেকে ওউ করতে চলে গেলো। নামাজ পড়ে, জগিং শেষ করে বাসায় আসতেই দেখলো তার মা সবে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে যাচ্ছে। সা’দ ক্লান্তি সুরে বললো,
—“মা কফি পাঠিয়ে দিও তো সাত টার মধ্যে বেরোতে হবে, কারীবও সাড়ে ছ’টা নাগাদ চলে আসবে!”
—“আয়হায় সে কী বলিস? আমি তো এখনো রান্নাই করলাম না। আর এখন তো ছ’টা বাজছে।”
—“আরে মা এতো উতলা হওয়া লাগবে না। সার্ভেন্টকে দিয়ে রাঁধিয়ে নিয়েছি। এখন জলদি কফি পাঠাও।”
বলেই সা’দ উপরে চলে গেলো। রাতে না ঘুমানোর ফলে সা’দের মাথা ধরে আছে সাথে রয়েছে চোখের অসম্ভব জ্বালা। ঠিক সাড়ে ছ’টায় কারীব এসে হাজির হলো। সা’দ আর কারীব একসাথে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে গেলো। মা জেগে থাকলেও বাকিরা এখন ঘুম। রুবাই আর সা’দের বাবা ৮-৯ টায় উঠে। তাদের অফিস ১০ টায়। রুবাই অর্ধেক রাত নিজের হাসবেন্ডের সাথেই কথা বলে কাটিয়ে ফেলে। রুবাইয়ের বিয়ে হয়েছে আরও ৪ বছর আগে। রুবাইয়ের হাসবেন্ড তানজীল ইতালিতে বিজনেসে আছে আর সেখানেই তানজীল থাকে। সা’দের বাবার বিজনেস পার্টনার ছিলো তানজীল। একবার বাংলাদেশের এক পার্টিতে রুবাইকে দেখে পছন্দ করে বসে। এর কয়েকদিনের মাঝেই সে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। তানজীলের বাবা-মা নেই তবুও তানজীলের ব্যবহার খুবই ভালো ছিলো। তাই পরিবার থেকে সকলে রাজি হয়ে যায়। রুবাই তখন কোনো অমত করেনি কারণ তার পছন্দের মানুষ ছিলো। তাদের বিবাহিত জীবন ভালোই চলছিলো, তানজীল রুবাইকে ইতালিতে নিয়ে সেটেল হয়। এর কয়েকমাস পরেই জানতে পারে রুবাই কনসিভ। এই সুখবর শুনে সেদিনই সা’দের বাবা-মা ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হয় কিন্তু সা’দের শুটিংয়ের প্রেশার থাকায় যেতে পারেনি। তখন সা’দ একদমই নতুন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাই নিজেকে প্রমাণ করতে তখন তার উপর দিয়ে বেশ চাপ যেতো। তবে বিপত্তি ঘটে আরেক জায়গায়।
রুবাইয়ের প্র্যাগন্যান্সির ৫ মাসে একটা এক্সিডেন্টে সে তার বাচ্চাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলে। সাথে হারিয়ে ফেলে নিজের মা হওয়ার আনন্দ। সেদিন ডক্টর বলেছিলো রুবাই আর কোনোদিন মা হতে পারবে না। একজন নারীর জন্য এর চেয়ে বড় জঘন্য যন্ত্রণা কী-ই বা হতে পারে? রুবাই তখনো ধৈর্য ধরে চুপ করে ছিলো। বিদেশের মাটিতে তানজীল নামক আপনজন ছাড়া যে তার আর কেউ নেই। সারাদিন রুবাই একা রুমে পরে থাকতো। তানজীল প্রথম কিছুদিন রুবাইকে সময় দিতে পারলেও পরে অফিসের কাজের জন্য তাকে রাত করে ফিরতে হয়। এই একাকিত্ব জীবনে তার দুঃখ যেন আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিলো। তাই রুবাই সিদ্ধান্ত নেয় সে বাংলাদেশ নিজের বাসায় থাকবে। আপনজন ছাড়া তার পক্ষে এখানে থাকা একদমই অসম্ভব। তানজীলও অমত করেনি। তানজীল এমন একটা মানুষ সে রুবাইকে বুঝে ফেলে। ১ সপ্তাহর মাঝেই রুবাই বাংলাদেশ আসে। আর তানজীল রুবাইকে কথা দেয় সে বাংলাদেশে সেটেল হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। সেদিন থেকে তানজীল দিনরাত চেষ্টা করে গেছে নিজের অফিস এখান থেকে বাংলাদেশে ট্রান্সফার করার জন্য। কিন্তু ইতালির নানান ঝামেলা শেষ করতে করতেই তানজীলের চার বছর পেরিয়ে গেছে। অবশেষে সে ছ’মাস পরেই বাংলাদেশে সেটেল হতে পারবে। তবে মাঝেমধ্যেই প্রিয়তমার সাথে সময় কাটাতে তানজীল দেশে আসতো। রুবাই দেশে আসার পর থেকে বাবার সাথেই সে আবার তাদের বিজনেসের হাল ধরে। আর সা’দ! সে তো কোনোকালেই এমুখো হয়নি। সে সবসময় তার ইচ্ছাকেই প্রায়োরিটি দিয়ে এসেছে। ৩টা বছর এতো বুঝোনোর পরেও সা’দ রাজি হয়নি। সে নিজের কথা থেকে ১ ইঞ্চিও এদিক সেদিক হয়নি।
★
—“আর কতোদিন এসব অন্যায়-অবিচার সহ্য করবি তুই? তোর মাঝে কী রাগ নেই প্রতিবাদ করার মতো? কী করে পারিস কথায় কথায় ওইসব অমানুষগুলোকে ক্ষমা করে দিতে?” কপট রেগে কথাগুলো বললো মানজু। সেহের নিজের মুখের মুখোশ ঠিক করতে করতে ম্লান হেসে বলে,
—“চেরি কার্টার-স্কট কী বলে জানিস? উনি বলেছেন ‘রাগ আপনাকে আরও ছোট করে তোলে, এবং ক্ষমা, আপনি যা তার থেকেও বড় করে।’
—“হইসে তোর এইসব ভংচং উক্তি আমাকে শোনাতে আসবি না। ক্ষমা মহৎ গুণ সেটা সবাই জানে! কিন্তু সকলকে বারবার ক্ষমা করতে নেই। ক্ষমা তাকেই কর যে তোর ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য।”
—“উফ কী শুরু করলি বল তো? এমনিতেই গরমের তাপে অনবরত ঘামছি আর তুই বাবা আর মাকে বকছিস!!”
—“এই মেয়ে আমি কী শুধু শুধু চেঁচাই? তোর ওই মাতাল বাপরে তো আমার মাগুর মাছে খানা বানাইতে ইচ্ছা করে! ওই অমানুষটার জন্যই তো তোর মুখোশ বাঁধতে হইসে। গরম খুন্তির কালচে দাগ তো এখনো তোর মুখ, থুতনি আর ঠোঁটের চারপাশে রইসে। বিশ্বাস কর একবার সামনে পাই। এক্কেবারে স্যান্ডেল ফিক্কা মারমু!”
—“তোর বকবকানি হলে এখন আসতে পারিস আমার যেতে হবে!”
—“যাবি মানে কই যাবি?”
—“দাদীর কাছে। সেদিনের পর তো বাসা থেকে বের হতে পারি নাই, আজ কলেজ আসছি এই একটা সুযোগ!”
—“তোর বইন তপায় যদি তোর নামে বিচার দেয়?”
—“তপা আপু তো আজ কলেজ যায়-ই নি। সে তো মনে হয় এখনো ঘুমাচ্ছে।”
—“এক সেকেন্ড তুই ওরে আপু ডাকিস কেন? তুই না ওর বড়?তুই তো সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী আর ওই তপা তো সবে ম্যাট্রিক দিয়া ইন্টারে উঠসে।”
—“ওসব কিছু না। সে বলে দিয়েছে তাকে যেন আপু ডাকি। আর ডাকলেই বা সমস্যা কী? ছোট বড় সকলকেই আপু ডাকা যায়!”
সেহেরের কথায় মানজু যেন আরও রেগে বোম হয়ে গেলো। সে রেগে উচ্চসরে বলে উঠে,
—“তোর আপুর গুল্লি মারি! চ্যাঙ্গা মাইয়ারে আপু ডাকে! এই দুনিয়ার তোর মতো বলদ এই এক পিসই আছে। কেমন পারিস তুই ফুল? যেখানে তোরে কেউ রেসপেক্ট করে না সেখানে কি না তুই মরতে যাস! যা ইচ্ছা কর আমি তোর সাথে আর নাই? যা গিয়ে আরও ঝাটার বাড়ি খা।”
বলেই মানজু সেহেরকে রেখেই উল্টোদিকে হাঁটা ধরলো। সেহের নিশ্চুপ হয়ে মানজুর যাওয়া দেখছে। মানজু আগেও এমন রাগ দেখিয়ে কথা বলেছিলো তবে তার রাগ বরফের মতোই খুব জলদি-ই গলে যায়। রাগ যেতেই মানজু সেহেরের কাছে এসে তার গলা জড়িয়ে বসে কাঁদো কাঁদো গলায় কথা বলতে শুরু করে দেয়। সেহের আপাতত সেই মুহূর্তেরই অপেক্ষায় আছে। ভাবতেই সেহের মুখোশের আড়ালেই মিষ্টি হাসি দিলো। এই একজন সখী সেহের বেশ ভাগ্য করে পেয়েছে। এই একটা মানুষই তার সুখ দুঃখের ভাগীদার হয়। কিন্তু সবাইকে কী তার ভেতরের কষ্টটা বলা যায়? সেহের একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জেঠুর বাসার দিকে চলে গেলো।
দাদী সেহেরকে অনেক সময় নিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলো আর চাপাস্বরে কাঁদছিলো। সেহেরকে সে একবারের জন্যেও ছাড়েনি। এতো করে সেহের সামলানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই সফল হলো না। দাদীমা বিলাপ করতে করতে শুধু কেঁদেই যাচ্ছিলেন। আবারও সেহেরের সুখাবারের দেখা মিললো। কারেন্ট না থাকায় চাচী সেহেরকে বাতাস করছিলো আর সেহের তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছিলো। হাঁসের মাংস, মিনি চিংড়ি মাছের ভর্তা, লাল শাক সাথে শশা, পেঁয়াজ, টমেটোর সালাদ। জম্পেশ খাওয়া হলো সেহেরের। খাওয়া শেষ হতেই সুখের ঢেকর তুললো সে। নাতনীর মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে দাদীমার প্রাণ যেন জুড়িয়ে গেলো। হাত ধুঁয়ে বসে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো দেরী হয়ে গেছে। সেহের তৎক্ষনাৎ গামছা দিয়ে হাত মুখ মুছে সকলকে বিদায় দিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরলো। সেহের থাকাকালীন আবিদকে দেখতে পায়নি। হয়তো কোনো কাজে বাসার বাইরে ছিলো। সেহেরদের বাসা জেঠুর বাসা থেকে বেশি দূরে নয় জাস্ট ১৫ ধাপের পথ। তবে সেহের বাড়িতে না গিয়ে আগে পুকুরপাড়ে গেলো। পুকুরপাড় থেকে নরম কাঁদামাটি নিয়ে কোনোরকম নিজের জামার কিছু অংশে লাগিয়ে নিলো। লাগানো শেষ হতেই পুকুরের পানিতে হাত ধুঁয়ে আল্লাহর নাম নিতে নিতে বাসার দিকে গেলো।
বাসায় গিয়ে দেখে বাঁশের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে টেলিভিশন দেখতে ব্যস্ত তার সৎমা। সেহের একটা শুকনো ঢেঁকুর তুলে বিড়বিড় করে “বিসমিল্লাহ” বলে বাসায় প্রবেশ করলো।
সৎমা কোণা চোখে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আবার টেলিভিশিনের দিকে তাকালো। হঠাৎ কী মনে করে টিভি বন্ধ করে রিমোটটা রেখে সেহেরের দিকে ফিরলো। সেহের চুপচাপ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আজ আবার বোম ফাটবে যা সেহের বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারছে।
—“কীরে নবাবের ঝিঁ! ভরদুপুরে কই গেছিলি? ঘরে যে কতোডি কাম আছে সেইগুলা দেখছিলি? ছাগলের বাচ্চা! আমার খাস আমার পড়োস আবার আমার টাকায় আনন্দ ফূর্তি করতে গেছিল! হারামজাদী!”
—“মা! বাবা ডেকে পাঠিয়েছিলো খালের দিকে। জালে পাথর বাঁধানোর জন্য। দেখো আমার জামাতেও কাঁদা লেগে আছে!” সৎমার কথা শেষ করতে না দিয়ে সেহের বললো। ছলছল দৃষ্টি নিয়ে জামার কাঁদা লাগা অংশটুকু দেখালো সৎমাকে।
কাঁদা দেখে উনি কিছুটা নরম হলেন। তাও গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
—“আচ্ছা বুঝলাম। এহন যা থালাবাসন আর জামা-কাপড় ধুঁয়ে দে। এগুলা শেষ হইলে উপর তলা মুছবি! আজ আমার ভাগনে আইতাসে! তার আপ্যায়নে যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে।”
বলেই উঠে চলে গেলো। এদিকে ভাগনের শুনে সেহের কেঁপে উঠলো। সৎমায়ের ভাগনের নাম রাফসান। লুচ্চামিতে মাস্টার সে। সেহেরকে সে নানানভাবে উত্ত্যক্ত করার ধান্দায় থাকে আর সবার সামনে নিষ্পাপ বান্দার মতো থাকে। রাফসানকে সেহেরের দু’চোখে সহ্য হয় না। সৎমা যাওয়ার আগে বলে গেলো,
—“আর হ্যাঁ৷ বেসিনের ধারে পান্তাভাত রাখসি, কালকের বাঁশি তরকারির আলু পটল ছিলো সেগুলা দিয়া খাইয়া নিস!”
সেহের উত্তরে শুধু মাথা নেড়েছিলো। ব্যাগটা রুমে গিয়ে রেখে একটা লম্বা গোসল দিলো। গোসল শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে সৎমায়ের রুমের দিকে গেলো। রুমে গিয়ে দেখে সৎমা ঘুমে কুপোকাত। সেহের আস্তে করে দরজা ভিঁজিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। তার তো পেট পুরো ভরা এসব খাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। আবার এই পান্তাভাত পরে থাকলে আরও খারাপ কথা শোনা লাগবে। সেহের ভেবে পাচ্ছে না সে এখন কী করবে। পরমুহূর্তে কিছু একটা মনে হতেই একটা কড়াইয়ে পান্তাভাত নিয়ে বাড়ির পেছন দিকে চলে গেলো৷ দূরে একটা কুকুর দেখতে পেতেই কিছুটা ঝোঁপে গিয়ে পান্তাভাত ফেলে দিলো। পান্তাভাত ফেলা দেখে কুকুরটা দৌড়ে ঝোঁপের কাছে চলে আসলো। খাবার পেয়ে চটজলদি খাওয়া শুরু করলো। সেহের হাঁটু গেড়ে বসে কুকুরটার খাওয়া দেখছে। কুকুরটা তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে লেজ নাড়তে নাড়তে জিহবা দিয়ে ফাস ফাস করে কিছুক্ষণ সেহেরের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। সেহেরও নাটিটা নিয়ে ভেতরে চলে এলো। থালাবাসন ধুঁয়ে উঠে দাঁড়াতেই রিমন এসে হাজির হলো,
—“বুবু বুবু একটা লোক কুলফির আইসক্রিম এনেছে?”
—“মানে?” অনেকটা অবাক হয়ে বললো সেহের।
—“আরেহ! মানে হলো ওইযে স্কুলের সামনে যে কুলফিওয়ালা কুলফি আইসক্রিম বিক্রি করতো উনি আমাদের বাসার এদিকে আসছে। চলো না কুলফি কিনে দাও ”
—“টাকা কই পাবো ভাই?”
—“আমার কাছে জমানো কিছু টাকা আছে তুমি চলো।”
—“না আরে ভাই তুই একা গিয়ে কিনে আন। মা একবার টের পেলে আমাকে আস্ত রাখবে না!”
—“আরে ধুর কিছু হবে না আসো!”
বলেই সেহেরের হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে গেলো। সেহের এতো বলেও রিমনকে থামাতে পারেনি। শেষে সেহেরকেই কিনে আনতে হলো রিমনের জন্য দুইটা কুলফির আইসক্রিম। রিমন একটা নিয়ে অপরটা নিলো না। সেহের ভ্রুজোড়া কুচকে বললো,
—“একটা নিলি কেন ভাই এটাও নে আর জলদি খা। যা কাঠফাটা রোদ গলে যাবে তো।”
—“ওটা তোমার জন্য আপু তুমি খাও!”
—“আমার জন্য মানে?”
—“আহ বুবু! এতো মানে মানে করো কেন? তুমি আর আমি মিলে খাবো দেখেই তো দুটো কিনেছি।”
সেহের আর কী বলবে। গরমে তারও আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিলো তাই সে নিজেও খেলো। খাওয়া শেষ করে পানির মটর ছেড়ে জামা-কাপড় ধোঁয়ার জন্য ছাদে গেলো। ছাদের এক কর্ণারে কল আর সাথে জামা+কাপড় ধোঁয়ার জায়গা করা আছে। সকালে অনেকটাই ধুঁয়ে ফেলেছিলো সে তাই এখন ২-৪টা জামার বেশি নেই। সেহের আধোঁয়া জামা-কাপড়সহ জরুরি সাবান বালতি মগ নিয়ে ছাদে চলে আসলো। ছাদের কর্ণারে বসে জামা-কাপড় কাচাকাচি করে শুকোতে দিয়ে দিলো। কাজ করতে করতে সেহের ক্লান্ত হয়ে বসে পরে। রোদের তাপ এখনো কমেনি। গরমে সেহের ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছলো।
★
—“স্যার আপনার কফি!”
সা’দ ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মাথা উঁচু করে কর্মচারীর দিকে তাকালো। কর্মচারীর হাতে কফি দেখে সা’দ ভ্রু কুচকে বললো,
—“আমি তো কফি চাইনি! তাহলে হঠাৎ?”
—“কারীব স্যারই তো পাঠালো।”
—“ওহ আচ্ছা। তাহলে সেন্টার টেবিলে রেখে চলে যাও।”
কর্মচারী মাথা নাড়িয়ে কফির মগটা রেখে নিজের কাজে চলে গেলো৷ সা’দ না চাইতেও কফিটা নিয়ে মুখে দিতে যেতেই তার হঠাৎ চোখ গেলো অদূরে দাঁড়ানো অভিনেত্রী সিনথিয়ার দিকে। সিনথিয়া রহস্যময় হাসি দিয়ে সা’দের দিকে তাকালো। সা’দ তার দিকে তাকাতেই সিনথিয়া জলদি হাসি থামিয়ে অন্যদিকে তাকালো আর এমন ভাব ধরলো যে সে খুব ব্যস্ত। সা’দের সন্দেহ হলো তাই সে সিনকথিয়ার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে সেন্টার টেবিলে একটা প্লেটে থাকা চামচ হাতে নিয়ে কফিতে ঢুকালো। কিছুক্ষণ আলতোভাবে নেড়ে চামচ উঠিয়ে দেখলো চামচে সাদা সাদা কিছু ছোট কণা। সা’দ ভ্রু কুচকে শব্দহীন হাসি দিলো। তখনই কারীব দৌড়ে এসে বললো,
—“স্যার কাল না আমাদের নরসিংদী শুটিং আছে! আজ রাতেই তো রওনা হতে হবে।”
কারীবের একটা কথাও সা’দের কানে ঢুকেছে বলে মনে হয় না। কারীবের আর কিছু বলার আগেই সা’দ এক কর্মচারীকে ডেকে কী যেন বললো। কর্মচারী মাথা নাড়িয়ে কফির মগটা নিয়ে চলে গেলো।
সিনথিয়া মেকাপ ঠিক করছিলো তখনই এক কর্মচারী তার সামনেই পা মচকে যায় যার ফলে সব কফি সিনথিয়ার ড্রেসে গিয়ে পরে। ভাগ্যিস কফিটা ঠান্ডা ছিলো। এই দৃশ্য দেখে সা’দ নিশব্দে হাসলো। সিনথিয়া সাংঘাতিক রেগে উঠে দাঁড়ালো। কর্মচারী তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে বারবার সরি বলতে লাগলো। অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়া পূর্বেই সা’দ সেদিকে গিয়ে সিনথিয়া আর কর্মচারীর মাঝে ঢুকে বললো,
—“মিস সিনথিয়া আপনার নেক্সট শিডিউলে তো ড্রেস চেঞ্জ করার কথা আপনি তা না করে এখানে দাঁড়িয়েছেন কেন?”
—“মিস্টার সা’দ দেখুন আপনার কর্মচারী কীভাবে আমার ড্রেসটা নষ্ট করলো! এদের তো ম্যানারলেস বলতে কিছুই নেই! আপনি কী এমন ভেবে এই মূর্খগুলোকে কাজে রেখেছেন!”
—“ড্রেসে কফি ফেলেছে সো হোয়াট? আপনিও যেমন মানুষ ওরাও তেমন মানুষ! আপনি যদি শুটিং এ গিয়ে মিস্টেক করেন তো ওরা এখানে ছুটাছুটি করতে গিয়ে মিস্টেক হতেই পারে সিম্পল। মানুষ মাত্রই ভুল! আর আপনি সেখানে ভালোভাবে ইটস ওকে না বলে লেইম ওয়ার্ড ইউস করে চলেছেন। আপনার অভিনয় যেমন পেশা তেমনই ওদের পেশা আছে। সো সব পেশাকে উঁচু নিচু না দেখে সমানভাবে রেসপেক্ট দিন। আপনাদের দৃষ্টির ছোটখাটো কর্মচারীর জন্যই আপনারা এতো উঁচুতে গিয়ে পৌঁছতে পারেন সো রেসপেক্ট দেম! নাও নো মোর ওয়ার্ড গো ফাস্ট এন্ড লিভ দিস টপিক!”
কর্মচারীসহ সকলে যে যার কাজে গেলো। সিনথিয়া নিজের ড্রেস ঝাড়তে ঝাড়তে সা’দের পাশ কেটেই যাচ্ছিলো তখনই সা’দ হালকা সুরে বলে উঠলো,
—“কফিতে আরও ভালো করে স্লিপিং পিলটা মেশানো দরকার ছিলো আপনার!” বলেই বাঁকা হাসল্প সা’দ। সিনথিয়া থেমে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে সা’দের দিকে তাকালো! পরে সা’দের কথার মানে বুঝতে পেরে মন খারাপ করে বলে,
—“একটাবার বেডপার্টনার করলে কী হয় সা’দ? জাস্ট ওয়ান নাইট!”
আবারও হাসলো সা’দ। হাসতে হাসতেই বললো,
—“আপনাদের মতো নিচ মানুষদের বেড পার্টনার বানাবো? হা হা নো ওয়ে! আমার বেড পার্ট অনলি আমার ফিউচার ওয়াইফ হবে।”
—“আমাকে কী সুযোগ দেয়া যায় না?”
—“একদমই না। আপনার মতো লুজার আর চিফ মাইন্ডেড মেয়েদের না কোনোদিন পাত্তা দিয়েছি আর না কোনোদিন দিবো। মাই জার্নি ফর অনলি ওয়ান পার্সন যার পুরোটা মন জুড়ে থাকবো আমি শুধু আমি! যার মনে থাকবে না কোনো নোংরামির চিহ্ন! আন্ডার্স্ট্যান্ড?”
সিনথিয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চেঞ্জিং রুমের দিকে হনহনিয়ে চলে গেলো।
★
রাফসান এসেছে মিনিট পাঁচেক হবে। সেহের কিচেনে হাতে চা আর বিস্কুটের ট্রে নিয়ে থরথর করে কাঁপছে। রাফসানের লালসার দৃষ্টি সেহেরের একদম পছন্দ নয়। রাফসান বারবার তাকে বিভিন্নভাবে বাজেভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করে কিন্তু সেহের বারবার তাকে এড়িয়ে চলে। সোফার ঘর থেকে সৎমার হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তখনই বিকট চিৎকার দিয়ে সৎমা বলে উঠে,
—“কীরে সেহের এতক্ষণ লাগে নাকি চা-বিস্কুট নিয়া আইতে?”
সেহের একটা লম্বা শ্বাস ফেলে আল্লাহকে ডেকে কিচেন থেকে বেরিয়ে আসলো। সামনের রুমে এসে দেখে তপা মা এবং রাফসান বেশ হেসে হেসে কথা বলছে। সেহেরের দিকে চোখ যেতেই কেমন বিশ্রীভাবে সেহেরকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখতে লাগলো। সেহের না তাকিয়ে বুঝতে পারছে রাফসান তার দিকেই তাকিয়ে। সেহেরের প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে তাই সে ট্রে-টা টি-টেবিলে রেখে চলে আসতে নিতেই রাফসান বলে উঠলো,
—“লেবুর শরবত হবে সুন্দরী?”
রাফসানের এমন কথায় সেহের থম মেরে দাঁড়িয়ে গেলো। সেহেরকে সুন্দরী বলায় তপা মুখ বাঁকা করে বিরক্তির সুরে বললো,
—“ওকেই তোমার সুন্দরী লাগে ভাইয়া। কই আমাকে তো কখনো সুন্দরী বললে না?”
রাফসান হেসে তপার গাল টেনে বললো,
—“তুই তো সুন্দরী বটেই তবে অল্প।”
—“কীরে সেহের এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ছেলেটা মুখ ফুটে শরবতের কথা বললো আর তুই দাঁড়িয়ে আছিস? যা গিয়ে শরবত বানা!”
—“জ্বী মা!”
বলেই দ্রুত সেই ঘর ত্যাগ করলো সেহের। ঘৃণায় সব কেমন তা গুলিয়ে যাচ্ছে। তার মন বারবার বলছে আজ খারাপ কিছু ঘটবে। সেহের মাথা উঁচু করে চোখ বুজে মনে মনে দোয়া করতে লাগলো,
—“হে মাবুদ আপনি আমার আগমন বিপদের হাত থেকে রক্ষা করুন। এই রাফসান ছেলেটার হাত থেকে আমায় বাঁচাও!”
#দখিনা_প্রেম
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ০৫ ||
সেহের এদিক সেদিক তাকিয়ে জলদি তার মায়ের ঘরে চলে গেলো। কারণ, সৎমায়ের ঘরে একটা ল্যান্ডলাইন টেলিফোন আছে। সেহের দরজা লাগিয়ে ওয়ারড্রবের উপরে থাকা ল্যান্ডলাইনের নাম্বার টেপ করে কানে লাগালো।
—“হ্যালো?”
—“আবিদ ভাই!”
—“ফুল তুই?”
—“হ্যাঁ ভাইয়া আমি। ভাইয়া প্লিজ তুমি এবাসায় আসো প্লিজ!”
—“কেন কী হয়েছে? তোর কন্ঠ এমন কেন লাগছে? কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি ফুল?”
—“বেশী কিছু বলতে পারবো না ভাইয়া। তপা আপু আর মা বাসায় নেই। ওই রাফসান শয়তানটা বাসায় আছে। ভাইয়া দয়া আসো ওই ছেলে একদমই সুবিধার না!”
—“আচ্ছা আচ্ছা আসছি। তুই সাবধানে থাক আমি সবটা সামলাচ্ছি!”
আবিদের কথায় সেহেরের মনের উপর থেকে যেন বড় একটা পাথর সরে গেলো। রাফসান উপরে শুয়ে আছে, যেকোনো সময়েই আশেপাশে ঘেঁষবে তা সেহের বেশ জানে। সেহের টেলিফোনটা ঠিকভাবে রেখে দরজার সিটকিনি খুলে সাবধানে বের হলো। ঘর থেকে বের হতেই শুনতে পেলো রাফসান উপর থেকে “সেহের” বলে তাকে ডাকছে! সেহেরের গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো ভয়ে। সেহের রাফসানের ডাকে সাড়া না দিয়ে নিজের ঘরে দরজা লাগিয়ে থম মেরে বসে রইলো আর মনের মধ্যে আল্লাহর নাম জোপ করতে লাগলো৷ সেহের বাসা থেকে বের হতে পারছে না কারণ এই বিকাল সময়ে সেহেরের বাসার বাইরে যাওয়া একদম মানা। আর সৎমা যাওয়ার আগে কড়া করে বলে গেছে সেহের যেন তার অনুপস্থিতিতে বাড়ির বাইরে পা না রাখে। তাই সেহেরের নিজের ঘরটাই ভরসা। রাফসান চরম রেগে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। এতক্ষণ এতো করে ডাকলো সেহের উপরে যাওয়া তো দূর সাড়াশব্দও করলো না। রাফসান এখন যা ভেবে রেখেছে তা করতে না পারলে তার মন শান্ত হবে না।
তাই সে দ্রুত পা চালিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো কিন্তু সেহেরকে পেলো না। রাফসানের আবার মেজাজ খারাপ হলো। সে চেঁচিয়ে হাঁক ছাড়লো সেহেরের নাম ধরে। কিন্তু তাও সাড়াশব্দ মিললো না। এবার রাফসান রান্নাঘরের দিক থেকে এসে সেহেরের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজা খুলতে গিয়ে দেখলো দরজা বন্ধ। দরজায় জোরে জোরে নক করতে করতে শান্ত গলায় বললো,
—“সেহের! সেহের! দরজা খুলো! এই অসময়ে ঘরে দরজা লাগিয়ে বসে আছো কেন?”
সেহের টুশব্দও করলো না। এবার সেহেরের চোখে পানি চলে আসলো। রাফসান কী করতে চাইছে সেটা সেহের ভালোভাবে বুঝতে পারছে কিন্তু নিজেকে এর হাত থেকে বাঁচাবে কী করে? আবিদই বা কোথায়? এতো কেন দেরী করছে সেটা সেহের বুঝতে পারছে না। এদিকে রাফসান ডাকতে ডাকতে হয়রান হয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে পারলো না। দরজা জোরে জোরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছে আর থ্রেড দিয়ে দরজা খুলতে বলছে নয়তো দরজা ভেঙ্গে সেহেরের অবস্থা খারাপ করে দিবে। এদিকে সেহের মুখে হাত দিয়ে নিশব্দে কেঁদেই চলেছে।
—“হে মাবুদ! আমাকে এই জানোয়ারটার হাত থেকে বাঁচান।”
—“মা*** এতিমের বাচ্চা দরজা খুল! তোর মা**বা***। আমি দরজা ভাঙলে তোরে গালতে গালতে মাইরাই ফেলমু দরজা খুল!!”
এদিকে আবিদ আর তার সাঙ্গপাঙ্গ তখনই দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। পিছে কিছু মুরব্বিরাও ছিলো। দরজা হালকা ভেঁজানো ছিলো বিধায় কলিংবেল বাজাতে হয়নি। তারা ভেতরে ঢুকতেই রাফসানের অকথ্য গালিগালাজ বেশ শুনতে পেলো। আবিদ এসব শুনে তো রেগে আগুন হয়ে গেলো। আবিদ তেড়ে গিয়ে রাফসানের কলার ধরে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে আনলো। রাফসান হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়ায় সেহের নিজের কান্না কিছুটা কমালো। হঠাৎ বিকট থাপ্পড়ের শব্দ শুনতে পেলো। এবার সেহেরের কান্না পুরোপুরি থেমে গেলো। সে চোখ মুছে মাথায় ভালোভাবে ঘোমটা দিয়ে নাক টেনে উঠে দাঁড়ালো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো বাহিরে ঠিক কী হচ্ছে। আবিদের কন্ঠ শুনতে পেতেই সেহের তৎক্ষনাৎ দরজা খুলে সামনে তাকালো। বাইরে এতো মানুষ দেখে সেহের অস্বস্তিতে পরে গেলো। আবিদ সকলের সামনে রাফসানকে আচ্ছাভাবে কেলাচ্ছে।
—“আমার বোনকে রেপ করবি তুই না? এতো সাহস? যার সিংহের মতো ভাই আছে তারে রেপ করার স্পর্ধা দেখাতে আসছিস? তোরে তো আজ মাটিতে পুঁতে রাখবো জানোয়ার! আর তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন মশলাপাতি দে আরও!”
আবিদের কথায় তার বন্ধু-বান্ধবরাও আবিদের সাথে যোগ দিলো। বেচারা রাফসানের তো পুরো আধমরা অবস্থা। মুরব্বিরা ক্ষীপ্ত দৃষ্টিতে রাফসানকে দেখছে। রাফসানের প্রতিটা কথাই সে শুনেছে। এই কয়েকটা কুলাঙ্কারের কারণেই গ্রামে দুদিন পর পর এই ধর্ষণের দুঃসংবাদ তারা শুনতে পায়! আর আজ তো নরখাদককে চোখের সামনে দেখলো। ভাগ্যিস তারা সময়মতো এসেছিলো নয়তো দরজা ভেঙ্গে আরও খারাপ কিছু করে ফেলতো। সেহের মুখে মুখোশ বেঁধে কাঁদতে কাঁদতে আবিদকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আবিদ রাফসানকে ছেড়ে সেহেরের মাথায় হাত দিয়ে আশ্বাস দিয়ে বলে,
—“কাঁদিস না বোন! দেখ আমরা চলে এসেছি। এই কুলাঙ্কার তোর কিচ্ছু করতে পারবে না। কাঁদিস না বোন কাঁদিস না!”
এক চাচা সেহেরের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
—“কেঁদো না মা। আমরা সবাই এই বিষয়টা সামলে নিবো!”
সেহের ছলছল চোখে মাথা নাড়ায়। তখনই সৎমা আর তপা হাতে বেশকিছু শপিং ব্যাগ নিয়ে বাসায় এসে হাজির হয়। বাসায় এতো মানুষ দেখে সৎমা জোহরা দৌড়ে ভেতরে এসে দেখলো তার আদরের ভাগনে আধমরা হয়ে পরে আছে। রাফসান আপাতত বেহুঁশ!এ দৃশ্য দেখে জোহরার মাথায় যেন বাজ পরলো। সে শপিংব্যাগ রেখে দৌড়ে রাফসানের কাছে এসে বলা শুরু করলো,
—“রাফসান এই রাফসান? কী হয়েছে তোর আর তোর এই অবস্থা কেন?”
—“তোমার এই ভাগনে আমাগো চেয়ারম্যানের মাইয়ারে ধর্ষণ করার তালে ছিলো হেই খবর জানো?”
এক মুরব্বি কথাগুলো বললো। জোহরা অবাক হয়ে মুরব্বির দিকে তাকালো। ভাঙ্গা গলায় বললো,
—“আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না!”
—“তা কেন বুঝবেন আপনি? আমার বোনকে এইসব জানোয়ারের কাছে একা ফেলে এদিক সেদিক ঘুরতে বের হোন! সামান্য জ্ঞান বিবেচনা নেই আপনার যে একটা মেয়েকে একটা ছেলের কাছে একা ফেলে গেলে ঠিক কী পরিস্থিতি হতে পারে? সারাদিন কামলার মতো খাটান, অত্যাচার করেন তা দিয়ে কী পেট ভরে না? আপনারা কী মানুষ?” পাশ থেকে আবিদ কথাগুলো বললো। আবিদের কথা শুনে জোহরা রক্তচক্ষু দৃষ্টি নিয়ে আবিদের দিকে তাকালো। জোহরা এই আবিদকে একবিন্দুও সহ্য করতে পারে না। তখনই জেঠু, দাদীমা আর চাচী ছুটে আসলো বাড়িতে। দাদীমা তো সেহেরকে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখলো। সেহের একদম চুপ হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জোহরা চাইলো তার ভাগনের দোষটা কাটাতে তাই সে সেহেরের ঘাড়ে দোষটা চাপাতে নিজেকে প্রস্তুত করলো।
—“আমার রাফসান যে ওকে কিছু করেছে তার প্রমাণ কী? ওই হারামজাদী তো গিরিঙ্গিবাজ! এ তো ক্ষণে ক্ষণে নিজের রূপ বদলায়। নিশ্চয়ই এই মেয়ে আমার রাফসানরে কালাযাদু করে বশ করসিলো আর খারাপ কাজে আসার জন্য অনুপ্রেরণা দিছিলো নয়তো আমার এতো ভালো ভাগনেটা এমন মাইর খায়? এই মেয়ের চরিত্রে দোষ নাই তার কী গ্যারান্টি আছে? আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি না আমার রাফসান এসব করতে পারে!”
জোহরা রাগে কী বলে ফেললো সে নিজেও ঠাহর করতে পারলো না। আবিদ এদিকে হাত মুঠিবদ্ধ করে রাগ দমানোর চেষ্টা করছে। এই মহিলা যে কতো নিচে নামতে পারে তা আবিদের জানা নেই। গিরিঙ্গিবাজ কে সেটা ভালোই বোঝা যাচ্ছে। সেহের ছলছল দৃষ্টিতে জোহরার দিকে তাকালো। শেষ অবধি নিজের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে সেটা যে সেহের ভাবতেই পারেনি। আপন মানুষগুলো ক্ষণে ক্ষণে কীভাবে রূপ পাল্টায় সেটা হয়তো সেহেরের চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। এক মুরব্বি তৎক্ষনাৎ জোহরার কথার প্রতিবাদ করে বলে,
—“আমরা না দেখে, যাচাই না করে কোনো কথা বলি না। নিজের চোখে দেখসি এই বেয়াদব, শুয়োর কীভাবে ফুলের মতো নিষ্পাপ মাইয়াটারে হুমকি দিয়াসে, অসভ্য ভাষায় কথা কইসে। এরে তো নাড়ু কইরা, মাথায় গোল ঢাইল্লা গাধার পিছে বসাইয়া গ্রাম থেকে বাইর করা উচিত। এদের মতো কীটের জন্য আমাগো ভালোবাসার গ্রাম আইজ ধ্বংসের পথে।”
এবার জোহরা মুরব্বিদের উপরে কথা বলার সাহস পেলো না। সে এক দৃষ্টিতে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার শরীর যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে। মুরব্বিরা কিছু কথা বলে চলে গেলো। তাদের পেছনে আবিদের বন্ধুরা মিলে রাফসানকে আলগা করে ধরে নিয়ে গেলো। তপা তৎক্ষনাৎ এসে সেহেরের গালে চড় লাগিয়ে দিয়ে বললো,
—“এই অপয়া মেয়ে আর কতো আমাদের সংসারে আগুন লাগাবি? এই পরিবারটা ধ্বংস করার জন্যে তো দেখছি উঠে পরে লাগছিস! কী চাস তুই স্পষ্ট করে বল তো? আর কতো খাবি এই পরিবারকে?”
এবার দাদীমা তপার গালে চড় লাগিয়ে দিলো। এতোই জোরে দিলো যে তপা তাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে বসে পরলো। সেহের নিশ্চুপ হয়ে কেঁদেই চলেছে। দাদীমা হুংকার ছেড়ে বলে,
—“নাগিন মাইয়া!! অপয়া তুই নাকি আমার ফুল? তোরা দুই মা মেয়ে এসেই তো আমার সংসারটারে নষ্ট করে দিছোস! দুইটা তো একই রক্তের বিষাক্ত ছোবলময়ী নাগিন! সাহস তো কম না আমার সামনে দাড়াইয়া আমার ফুলরে থাপ্পড় দেস! এমন মাইর মারমু না তোর ওই গিরিঙ্গিবাজ মায়ের নামও ভুইল্লা গিল্লা ফেলবি!”
তপা গালে হাত দিয়ে রেগে দাদীমার দিকে তাকিয়ে রইলো। জোহরা ছুটে এসে মেয়েকে উঠিয়ে দাঁড় করালো আর চরম রেগে বললো,
—“মা আপনি আপনার সীমানা পার করবেন না! আমার বাড়িতে এসে আমার মেয়েকে মারার সাহস কী করে হয়?”
—“আর তোর সাহস কেমনে হয় আমার ফুলরে কামের বেটির মতো খাটানের। শুধু কী খাটাস? আধমরা কইরা বাসা থেকেও বের করে দেস! মনে রাখিস এই বাড়ি আমার স্বামী নিজ হাতে তৈরি কইরা দিয়া গেছে তাই আমার তোর থেইকাও বেশি অধিকার আছে এই বাড়িতে। আগেই উচিত ছিলো এই চড় থাপ্পড়ের থেরাপি শুরু করা তইলে তোরা বেকটিনে লাডির মতো সোজা হইতি!”
—“মুখ সামলে কথা বলো বুড়ি! এক পা অলরেডি কবরের তলায় চলে গেছে তাও দেখছি তোমার তেঁজের শেষ নাই! আল্লাহ এতো ভালো ভালো মানুষরে নিয়া যায় আর এই কুটনি বুড়িরে নেয় না কেন?”
তপার কথায় দাদীমা চুপ করে থাকলো না আরেক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো তপার গালে। হয়তো চুপ থাকতো এই কথায় কিন্তু তপা যে তার রক্ত না তাই তপার তেজ সে নিজেই ঘুচাঁবে! অনেকদিন পর এই সুযোগ পেয়েছে সহজে হাতছাড়া করবে না।
★
সা’দ বারবার ঘড়ি দেখছে আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে৷ সকলেই বিরক্ত এখন। রাগে সা’দের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। কারীব দূরে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। কথা বলা শেষ হতেই কারীব দৌড়ে সা’দের কাছে আসলো। কারীব হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
—“তুষার নাকি নিজের গাড়িতে করে নরসিংদী যাবে আর আমাদের অপেক্ষা করতে না বলে চলে যেতে বলেছে!”
এবার সা’দ যেন আরও রেগে গেলো। কপট রেগে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
—“সেটা আগে বলে দিলে কী হতো? আমাদের রওনা হওয়ার কথা ছিলো ভোর সাড়ে পাঁচটায় আর ওই রাস্কেলটার জন্য ফুল ওয়ান আওয়ার লেইট! ফেমাস পাবলিক ফিগার বলে যা ইচ্ছা তা করবে নাকি? আমাদের কী মানুষ বলে মনে করে না? কীসের এতো অহংকার এর? রাস্কেল একটা!”
—“রিলেক্স স্যার! ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এমন দু-একটা ক্যারেক্টার থাকেই যারা পাবলিকের কাছে সৎ আর আমাদের মতো কর্মচারীদের সামনে ত্যাড়া! আমরা তো জানি এই মুখোশ পড়া মানুষগুলা কেমন ফাজিল!”
—“হয়েছে এখন সকলকে বলো যার যার গাড়িতে উঠতে, ২ মিনিটের মধ্যেই গাড়ি ছাড়বে। গো ফাস্ট!”
বলেই চোখে সানগ্লাসটা দিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে বসে পরলো। কারীব এক কর্মচারীকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে নিজে এসে সা’দের গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট বেঁধে নিলো। সা’দ একমনে বাইরের ভোরের শহরটা দেখছে ব্যস্ত। তুষার একজন প্রখর অভিনেতা। তরুণ প্রজন্মে তুষারের নাম যেন সকলের মুখে মুখে। তুষার সকলের সামনে ভালো ব্যবহার করলেও সে অতিরিক্ত অহংকারী এবং ঘাড়ত্যাড়া। এই ধরণের লোক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে না থাকলে যেন হয়-ই না। সা’দ তার বাবার মুখে শুনেছিলো তাদের সময়ে একজন আকবর নামের একজন অভিনেতা ছিলো। এর ভাষা এবং চরিত্র নাকি জঘন্য ছিলোম কিন্তু পাবলিকের সামনে সে ভালো মানুষ। প্রতিদিন স্মোকিং আর ড্রিংকস না করলে যেন তার হতোই না। তাও সে কীভাবে কীভাবে যেন অভিনিয় জগতে জায়গা করে নেয়। মাঝেমধ্যে মাতাল হয়ে অভিনয় করলেও কেউ ধরতে পারতো না সে আসলে স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক। আকবরের একমাত্র পাবলিসিটির জন্যেই প্রডিউসার, ডাইরেক্টররা তাকে ফিল্মে নিতে বাধ্য হতো। এদিকে আকবরের মতোই এই তুষার। যাকে সহজ ভাষায় বলে, “জাতে মাতাল তালে ঠিক!” এই তুষারকে যেমন সা’দ সহ্য করতে পারে না তেমনই তুষার সা’দকে পছন্দ করে না। তুষারের সা’দকে পছন্দ না করার কারণ অবশ্য আছে। তুষারের গার্লফ্রেন্ড ছিলো নাম তার রাজিয়া। সে পেশায় একজন মডেল। সে কীভাবে সা’দের প্রেমে পরে গিয়েছিলো যার ফলে রাজিয়া এবং তুষারের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এই একটা ঘটনার জন্যই তুষার সা’দকে সহ্য করতে পারে না। চাইলে বড়রকম শোধও নিতে পারতো কিন্তু পাবলিকের সিমপ্যাথির জন্য সে কিছুই করতে পারে না। তবে সে মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করেই স্টেপ ভুল করে। এতে করে সে পৈশাচিক আনন্দ পায়।
চলবে!!!
বিঃদ্রঃ রিচেক দেয়ার সময় হয়ে উঠেনি তাই ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।
চলবে!!!
বিঃদ্রঃ দুইদিন দিতে পারিনি তার জন্য দুঃখির।দুইদিনের জন্য আজকে অনেক বড় করে দিলাম পুরো ৩২৮৮+ শব্দের। আশা করছি গঠিনমূলক মন্তব্য পাবো। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আসসালামু আলাইকুম।