#দায়িত্ব
#পর্ব_৯
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
শায়েরি আজ নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে… আজ শ্রেয়ানের অফিস নেই আর বিন্দুর ও কোচিং নেই…তাই আরামছে ঘুমাচ্ছে…এদিকে যে ৯ টা বেজে প্রায় ১০ টা বাজতে চললো সেদিন কোনো খেয়ালই নেই… শ্রেয়ান ও বিন্দুর সকালের খাবার খাওয়ায় শেষ অলরেডি… শায়েরির মা শায়েরিকে ডাকতে চেয়েছিল কিন্তু শ্রেয়ান ডাকতে দেইনি… প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হয়তো ওদের জন্যই… আজ শায়েরি ঘুমাক ও যতোক্ষন না নিজে থেকে উঠে…
।
।
শায়েরি এপাশ ওপাশ করে চোখ ঢলতে ঢলতে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে… চারদিক দেখতে লাগলো… রুমের কোথাও বিন্দু বা শ্রেয়ানকে দেখতে পেলো না… ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া কারন ৯.৪৭ বাজে…. তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে আসলো….ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে টাওয়াল রেখে পিছনে ঘুরতেই খাবারের প্লেট সামনে দেখতে পেলো… শায়েরি অবাক হয়ে…
” আপনি…??
শ্রেয়ান মুচকি হেসে…
” হ্যাঁ আমি… কেনো অন্য কেউ আছে নাকি…?
” সব সময় ফাজলামি…??
” না একদম না…এখন তো আমি আমার বউ এর সেবায় নিয়োজিত…
“মানে..?
“মানে প্রতিদিন তো তুমি আমাদের ব্রেকফাস্ট তৈরী করে সার্ভ করো… আজ আমরাও তোমার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরী করেছি…
“আমরা মানে…?
“মানে আমরা বাবা আর মেয়ে মিলে তোমার জন্য স্পেশাল স্যান্ডউইজ আর ফ্রুটস জুস বানিয়েছি…
” এ্যআআআ জুস কেনো…? স্যান্ডউইজ ঠিক আছে… এটা আমার খুব পছন্দের খাবার..
” হুমমম জানি তো এ দুটোই তোমার প্রিয় খাবার…
” নাআআআআ…. একদম না…
শ্রেয়ান খুব ভালো করেই জানেই শায়েরি ও বিন্দুর মতো কোনো ফ্রুটস পছন্দ করেনা… তাই বিন্দু কে নিয়ে মাঠে নেমেছে… শ্রেয়ান এর কথা না শুনলেও বিন্দুর কথা ফেলতে পারবেনা…
“ওফফফফ এতো জোরে চিৎকার করছো কেনো..? কানটা তে ফেটে যাবে…
” আমার খুবব ক্ষিদে পেয়েছে..
” হুমমম খাও বারন করলো কে…?
“বিন্দু খেয়েছে…আর আপনি..?
” হ্যাঁ আমরা খেয়েছি ম্যাম..আপনি খাবারটা খেয়ে আমাদের উদ্ধার করেন… বিন্দু তোমার মাকে বলো তো আমরা কতো কষ্ট করে এসব বানিয়েছি… সব না খেলে আমরা খুবব কষ্ট পাবো….।
বিন্দু
” হ্যাঁ জানো এগুলো সব আমরা ইউটিউব থেকে সার্চ করে বানিয়েছি… তুমি সবটা খাবে কিন্তু…
” হুমমমম…
শ্রেয়ান
“তাহলে শুরু করো…কেমন….
শায়েরি মহাশান্তিতে স্যান্ডউইজ খেয়ে নিলো… কিন্তু জুস এর দিকে তাকাতেই কেমন শরীর গুলিয়ে আসছে…
শ্রেয়ান বিন্দুর দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই..
” একি তুমি জুসটা খাবেনা…?
“আমার তো পেট ভরে গেছে… এটা না খেলে হয়না….
” আমরা এতো কষ্ট করে তোমার জন্য বানালাম আর তুমি খাবেনা…
মুখটা ভার করে….।
শ্রেয়ান
” দেখেছো মেয়েটার মন খারাপ হয়ে গেলো….
শায়েরি শ্রেয়ান এর দিকে রাগান্বিত ভাবে তাকিয়ে জুস এর গ্লাস হাতে নিলো… এক চুমুক দিতেই বিন্দু
” এএএএএ কি মজা… দেখেছো পাপা মা জুসসস খেয়েছে খেয়েছে….।
শায়েরি তো স্তব্দ হয়ে গেছে… বিন্দুর কথায়.. শ্রেয়ান অবাক হয়ে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে… আসলে বিন্দু কথাটা খুশিতে বলে ফেলেছে… শায়েরি আর শ্রেয়ান এর এভাবে তাকিয়ে থাকাতে বিন্দু বুজতে পেরেছে… আসলে ও কি বলেছে…. বিন্দু আমতা আমতা করে…
” না মানে আসলে… এটা আমি মন থেকে বলতে চাইনি… ভুলে মুখ থেকে বের হয়ে গেছে….
বলেই বিন্দু রুম থেকে চলে গেলো…আর শায়েরির চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো… বিন্দুর বলা কথাটা বার বার কানে আসছে ” আসলে এটা মন থেকে বলতে চাইনি…
শায়েরি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না কেদেই দিলো…শ্রেয়ান শায়েরির চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে…
” প্লিজ শায়েরি এভাবে কেদো না… তুমিই তো আমার মনের জোর আর শক্তি… তোমার থেকেই তো আমি সব আলোর দিশা খুজে পাই… বৃষ্টিকে হারানোর পর থেকে আমার জীবনের সব আলোই তো হারিয়ে ফেলেছিলাম..জীবনের কাছে প্রায় হেরেই গিয়েছিলাম….. কিন্তু লাস্ট ছয় মাসে একটু একটু করে আমার সব স্বপ্ন আশা আবার নতুন করে জেগে উঠেছে…হারকে জয় করতে শিখেছি..আর তুমি হার মানতে পারো না.. তুমি দেখো বিন্দু তোমাকে খুববব তাড়াতাড়ি মা হিসেবে মেনে নিবে… ইনফ্যাক্ট মেনে নিতে শুরু করেছে….
” আমি সত্যিই পারবো তো ওর মা হয়ে উঠতে …?
” হুমম অলরেডি মা হয়ে উঠেছো…
।
।
বিকেলে তিনজন মিলে বেড়াতে গেলো… প্লেসটা খুব সুন্দর…লেকের উপরে ছোট্ট একটা হাউস যার নাম গ্রিনহাউস… গ্রিনসাউজ এর চার পাশে পানি… আর পানিতে নানা রকমের মাছ… সেগুলো একটু পর পর লাফিয়ে লাফিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করে…সেগুলো দেখে তো বিন্দু ও লাফিয়ে উঠে..।
বিন্দুর এমন খুশিতে শায়েরি ও খুশিতে মাতোয়ারা.. আর শ্রেয়ান খুশি শায়েরি আর বিন্দুর খুশিতে… তিনজনের মুখেই হাসি…।
আর কাল রাতে লুডু খেলায় হেরে গিয়ে পানিশমেন্ট হিসেবে শ্রেয়ানকে সব খেতে হবে.. যা যা বিন্দু আর শায়েরি খাবে ঠিক তাই তাই… বিন্দু আর শায়েরি তো সব বাচ্চাদের খাবার খাবে..আইসক্রিম চকোলেট ফোসকা ঝালমুড়ি… এই খাবার গুলো তো শ্রেয়ান এর একদম পছন্দের না… তবুও কিচ্ছু করার নেই.. হাসি হাসি মুখে একটু একটু করে সব খাচ্ছে…. শায়েরি আর বিন্দু দোলনায় বসে আছে.. আর শ্রেয়ান দোলনা দোলাচ্ছে…. শায়েরি উঠে গিয়ে শ্রেয়ান এর পাশে দাঁড়িয়ে দুজন একসাথে দোলনা দোলাতে লাগলো… একে অপরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে..।
সারাটা বিকেল তিনজন খুবব মজা করে কাটালো…এবার বাড়ি ফিরে আসার পালা… গাড়ি পার্কিং এর এখানে আসতেই শায়েরি চোখ পরলো রাস্তার উপর পাশ.. সেখানে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে… এখন শায়েরির বায়না ও ঝালমুড়ি খাবে.. শুধু ও না তিনজনেই খাবে… বেচারা শ্রেয়ান আর কি করবে..বাধ্য হয়ে…
” তোমরা এখানে দাড়াও.. আমি গিয়ে নিয়ে আসছি…
” হুমম যান…।
শ্রেয়ান ঝালমুড়ির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ঝালমুড়ির জন্য… আর বার বার শায়েরিকে ইশারা করছে… শায়েরি শ্রেয়ান এর এমন দুষ্টুমি উপভোগ করছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে… পাশে তাকিয়ে দেখে বিন্দু নেই… এদিক ওদিক তাকাতেই বিন্দুকে রাস্তার মাঝ বরাবর দেখতে পেলো… আর সামনে থেকে গাড়ি আসছে…এটা দেখে শায়েরির হাত পা বরফ হয়ে আসার উপক্রম কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা…মাথায় কিছুই কাজ করছে না.. শুধু বিন্দুকে বাচাতে হবে… শায়েরি দৌড়ে গিয়ে বিন্দুকে টান দিয়ে সাইটে নিয়ে এসে নিজের ব্যালেন্চ হারিয়ে পাশে পরে গেলো…. এক মূহুর্তে চোখের সামনে এসব ঘটে গেলো যে শ্রেয়ান কিছুই বুঝতে পারলো না…
চলবে…