#দুষ্টু_মেয়ে_যখন_পার্ফেক্ট_বউ
#লেখিকা_দিয়া_মনি
#পর্ব_৫
“কয়েকটা দিন বেশ ভালোই কাটলো।মেঘলার হাসিটা তূর্যকে এতটা কেন মুগ্ধ করে জানেনা সে। বিকালে আকাশের অবস্থা ভালো না দেখে ভাবল তূর্য মেঘলার সাথে আড্ডা দিবে।মেঘলার রুমের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল স্র।দেখল তূর্যের সাদা শার্টটা আইরন করছে। এই সময় যদি শাড়ি পরতো।আর শাড়ির আঁচল কোমরে পেঁচানো থাকতো তাহলে একদম তূর্যের বউ বউ লাগতো।তূর্য একটু কাশি দিয়ে মেগলার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল।
—- মেঘলা এই শার্টের বাটন তো ছেড়া। এইটা তুমি আইরন কেন করছো?(তূর্য)
—– চোখে ঠিকমতো দেখো না নাকি?(মেঘলা)
—– হ্যা দেখি তো…(তূর্য)
—– চোখে ঠিকমতো দেখলে তো এটাও দেখতে শার্টের বাটন লাগানো কানা এলিয়েন একটা।(মেঘলা)
—- বাহ বেশ তো।কিন্তু সুঁচসুতা কই পেলে?এই বাসায় তো এসব কিছুই নেই।(তূর্য)
—– ভাবীর কাছ থেকে এনেছি।(মেঘলা)
—– ভালোই…(তূর্য)
তূর্য বাসা থেকে বের হচ্ছিল দেখলো তার ভাবি সিঁড়ি দিয়ে উপরে আসছে..
—– কি খবর ছোট নবান?(ভাবি)
—– ভালো ভাবি।(তূর্য)
—– শুধু ভালো?(ভাবি)
—– হুম..(তূর্য)
—– মেয়েটা কিন্তু সংসারী..(ভাবি)
—– কোন মেয়ে বলো তো??মেঘ?( তূর্য)
—– হ্যা।ভালোই মানাবে তোমাদের।সময় থাকতে বলে দাও নয়তো অন্য কেউ নিয়ে চলে যাবে।তখন আফসোস করবে।( ভাবি)
—– আরে ধুরর ভাবী কি যে বলো না..(তূর্য)
—– কি যে না।যা বললাম ঠিকই বললাম।কোথায় যাচ্ছো তুমি?(ভাবি)
—— বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।(তূর্য)
—– আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরো..(ভাবি)
অর্ধেক রাস্তা যেতে না যেতেই বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গেল তূর্য।ভিজতে ভিজতে বাসায় ফিরতে লাগল।ফেরার সময় ভাবীর বলা কথাটা নিয়ে বেশ ভাবল।ভাবতেই মেজাজটা সকালের মত আবারও খারাপ হয়ে গেলো।
সকালের দিকে ঘুম থেকে উঠে ব্যাল্কনিতে দাঁড়িয়েছিল তূর্ক্স।নিচে তাকিয়ে দেখে মেঘলা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।বিষয়টা তূর্য কেন জানিনা মানতে পারছিল না।এই জন্য মেজাজ খানিকটা খারাপ ছিলো সকালে।
বাসায় ফিরে দেখে মেঘলা টিভি দেখছে।চেঞ্জ করে মাথা মুছতে মুছতে টিভির রুমে গেল তূর্য।তূর্যকে দেখে মেঘলা উঠে দাঁড়ালো।
—– এইভাবে কেউ মাথা মুছে??(মেঘলা)
—– কেন?(তূর্য)
তূর্যের হাত থেকে টাওয়েলটা নিয়ে তূর্যের মাথা মুছে দিতে লাগলো।আবারো তূর্যের বুকের বাম পাশটাতে মোচড় দিয়ে উঠলো।অন্যরকম একটা অনুভূতি অনুভব করতে লাগল যতটা সময় মেঘলা তূর্যের মাথা মুছে দিচ্ছিলো।
—– তূর্যভ আমার জবটা হয়ে গেছে।(মেঘলা)
কথাটা শোনার পরে তূর্য মুখে গুড নিউজ বললেও এটা ভেবে মনটা একটু খারাপ হলো।তাহলে কি ও চলে যাবে?
—– তোমার প্রব্লেম না থাকলে আর একমাস থাকতে হবে।প্রথম মাসে স্যালারি পেলেই বাসা নিবো।(মেঘলা)
—– আচ্ছা..(তূর্য)
মেঘলা যখন চলে যাচ্ছিলো মাথা মুছে দিয়ে তূর্য ওর হাতটা টেনে ধরলো।
ও দাঁড়িয়ে একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার তূর্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
—- তোমাকে কিছু বলার ছিলো।কথা গুলা আমি আজকে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ভাবলাম।( তূর্য)
—- হ্যা বলো।(মেঘলা)
—— আসলে..(তূর্য)
—– কি,,,,,,(মেঘলা)
—- ভাবী বলছিলো তুমি যদি আমার বউ হইলে আমাদের বেশ মানাইতো।(তূর্য)
—- ও এই কথা?ভাবী আমাকেও বলছিলো সেইদিন।(মেঘলা)
—- আসলে আ.. আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে..(তূর্য)
—- হ্যা বলো…(মেঘলা)
—- আসলে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।(তূর্য)
—— বুঝলাম তো যে কিছু বলতে চাও।তা কি বলতে চাও না বললে বুঝি কিভাবে?(মেঘলা)
—- আ… আমি চাই যে..(তূর্য)
—– কি.. কি চাও তুমি??(মেঘলা)
—– আ..আমি চা..চাই যে তো… তোমাকে..(তূর্য)
—– আ.. আমাকে কি??তোতলাচ্ছো কেন?(মেঘলা)
—– আসলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই..(তূর্য)
—– কেন??(মেঘলা)
—– তোমাকে খুব ভালো লাগে।তোমাকে হাসতে দেখলে অন্যরকম একটা অনুভূতি মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু করে দেই। এই অনুভূতির নাম আমি জানিনা।কিন্তু তখন মনে হয় তুমি শুধু আমার।তোমাকে আমি আমার করে চাই।তুমি জানো অন্য কাউকে তোমার সাথে দেখলে আমার সহ্য হয়না।(তূর্য)
—– হিহিহি ব্যাস এতটুকুই?(মেঘলা)
—– হাসছো কেন তুমি?এতে হাসার কি আছে হু…(তূর্য)
—- আচ্ছা আর হাসবো না।তুমি তো দেখি ঠিক মতো প্রপোজ ও করতে পারো না।(মেঘলা)
—- মনে যা আসছে তাই তো বললাম..(তূর্য)
—- হুম বুঝলাম।হাতটা ছাড়ো।(মেঘলা)
তূর্য হাতটা ছেড়ে দিলো।
—– স্যরি আসলে.. তুমি এখন বলো।আমার জন্য কিছু ফিল করো না??(তূর্য)
—– হুম করি তো।(মেঘলা)
—- কি ফিল করো?(তূর্য)
—– এটাই যে তোমার শার্টের বাটন লাগানোর রাইটটা শুধু আমার।তোমার আমার দিকে তাকানো দেখলেই আমি বুঝতে পারি যে তুমি আমার জন্য কি অনুভব করো।কেউ যখন কাউকে মন থেকে ভালোবাসে তখন তার চোখের ভাষা পড়ারও ক্ষমতা রাখে।বুঝলে বোকারাম এনাকুন্ডা?(মেঘলা)
—– তাই না?(তূর্য)
—– হুম..(মেঘলা)
—- তাহলে ভাইয়া ভাবি কে কাজী ডেকে বিয়েটা দিয়ে দিতে বলি??(তূর্য)
মেঘলা লজ্জা পেলো।এই প্রথম তূর্য ওকে লজ্জা পেতে দেখল।ওর লজ্জামিশ্রিত মুখটা দেখে বুকের মধ্যে আবারও সেই অনুভূতি নাড়া দিয়ে উঠলো তূর্যের..
আজকে সন্ধ্যায় তূর্য আর মেঘলার বিয়েটা হলো।বিয়েতে মেঘলার মামা উপস্থিত ছিলো।ওর মামি আসেন নি।খুব টায়ার্ড লাগছে।মেঘলা ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওর গহনা গুলা খুলছে।আর তূর্যের দিকে তাকিয়ে একটু পর পর মুচকি মুচকি হাসছে।ওর হাসি দেখে তূর্য ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়াল।তূর্যকে দেখে মেঘলা উঠে দাঁড়ালো।তূর্য মেঘলার কাধে হাত দিয়ে ড্রেসিংটেবিলের আয়নাতে ওকে দেখছে।বউ সাজে শাড়ী পরে ওকে সত্যিই অন্যরকম লাগছে।
—- এইভাবে কি দেখো?(মেঘলা)
—— তোমাকে না একদম বউ বউ লাগছে।(তূর্য)
—– আজব তো!!তুমি এত বোকা আগে জানলে তোমাকে বিয়েই করতাম না।(মেঘলা)
—- এহহ তুমি বিয়ে না করলে অন্য কেউ করতো।আমাকে দেখতে অনেক কিউট লাগে বুঝছো?কিন্তু তুমি আমাকে বোকা কেন বললে?(তূর্য)
—- ওলে আমার কিউত জামাইটা লে।বোকার মত কথা বললে বোকা তো বলবোই।সরো তো।ঘুমাবো।খুব টায়ার্ড লাগছে।(মেঘলা)
তূর্য সরে দাঁড়াল। মেঘলা খাটের একপাশে গিয়ে শুয়ে পরলো।
—— মেঘ,,,,, (বসতে বসতে বললো তূর্য)
—– বলো,,,,,(মেঘলা)
—- সত্যিই ঘুমাবে?(তূর্য)
—– হ্যা,,,,,নয়তো নাগিন ডান্স করবে কি।(মেঘলা)
—- রুমের লাইট অন করে ঘুমাবে?(তূর্য)
—– হ্যা..(মেঘলা(
—– কেন??আজকে আমি থাকতে কিসের ভয়??আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাইলেই পারো।তাহলে তো আর ভয় লাগবেনা।(তূর্য)
—- তুমিই তো সব থেকে বড় ভয়…(মুচকি হেসে বলল মেঘলা)
—– কি বলো!আমি?কিভাবে?(তূর্য)
—- হুম তুমিই।যদি ডাকাতি করো।সো লাইট অফ হবেনা।(মেঘলা)
—- তুমি এত বোকা জানলে আমিও তোমাকে কখনোই বিয়ে করতাম না…(তূর্য)
—- কিহহ!!কি বললে তুমি?(মেঘলা)
মেঘলা এবারে রাগে তূর্যের দিকে পাশ ফিরে তাকালো।
—— আমি বোকা??(মেঘলা)
—– হ্যা।না হলে তুমিই বলো নিজের জিনিস কেউ ডাকাতি করে??(তূর্য)
—— পাঁজি ছেলে।শুয়ে পরো।সারাদিন অনেক ধকল গেছে।(মেঘলা)
চলবে…….