ধূসর প্রেমের অনুভূতি পর্ব -১৯

#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_১৯
.
.
ফারহা মেঘের কথা লজ্জা পেয়ে বুকে মুখ লুকাতে ব্যস্ত৷ মেঘ ফারহার লজ্জা মাখা মুখ দেখে ফারহাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের উদ্দেশ্য হাটতে লাগলো৷ আজ রাতটা কারো জীবনে মধুময় রাত্রী হয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে মনের মনি কোঠায় মধুময় স্মৃতি হয়ে বন্দি হয়ে থাকবে তো কারোর জীবনে এই রাতটা নরক যন্ত্রনায় বিশাক্ত স্মৃতি হিসেবে মনের স্মৃতির কোণায় লুকিয়ে সারা জীবন যন্ত্রনা দিয়ে যাবে৷

(৩৮)
রক্তিম চোখ জোড়া মেঘের ঘুমন্ত আদলের দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারহা৷ ফারহা মেঘের শক্ত বাধণ থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে মুক্ত করে মেঘের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, ভালোবাসি মেঘরাজ৷ তোমার এই পাগলাটে রুপটার প্রেমে আমি বারংবার পরাজিত হয়ে তোমার আসক্তে আসক্ত হচ্ছি৷ ”

ফারহা মেঘের কপালের এলোমেলো চুল গুলো সরিয়ে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,” আজ তুমি আমায় তোমার ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করেছো মেঘরাজ৷ স্ত্রী হয়ে আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি তোমার প্রতি, এবার একজন বোনের দায়িত্ব পালন করার সময় হয়ে গেছে৷ আমি জানি ঘুম থেকে উঠে আমাকে না দেখতে পেয়ে তুমি রেগে যাবে কিন্তু আজ যে আমাকে ফারিহার কাছে পৌছাতে হবে নাহলে যে বড্ড দেরি হয়ে যাবে৷ ”

ফারহা ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ঝটপট রেডি হয়ে নিয়ে কাপর্বোড থেকে রিভালবার বের করে কোমরে গুজে নিয়ে ফোন বের করে কাউকে ফোন করে৷

” গাড়ি নিয়ে এখুনি খান মন্জিলের সামনে এসো৷ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি৷”

ফোনের ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনে ফারহা কল ডিসকানেক্ট করে৷ মেঘের জন্য ছোট্ট একটা চিরকুট লিখে সাইড টেবিলে মেঘের ফোনের নিচে রেখে মেঘের গায়ে ব্লাংকেটটা ঠিক করে দিয়ে নিঃশব্দে রুম থেকে বের হয়ে যায়৷

ভোর সারে পাচঁটায় খান মন্জিলের কেউ ঘুম থেকে উঠে না বিধায় ফারহা সাচ্ছ্যেন্দে খান মন্জিল থেকে বের হতে পারলো৷ ফারহা বাইরে বেরিয়ে দেখে একটা লাল রঙের গাড়ি দাড়িয়ে আছে৷ ফারহা গাড়িটা দেখে বাঁকা হেসে দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে৷ গাড়িতে উঠে বসতে গাড়ি চালক ফারহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয়৷

” আরু তুমি তো দেখছি আগের মতোই আছো৷” গাড়ি চালাতে চালাতে বলল আগন্তুক ৷ আগন্তুকের কথা শুনে ফারহা মেকি হাসি দিয়ে বলে,

-” কেন আমার বুঝি পরিবর্তণ হওয়ার কথা ছিলো?”

” উহু ঠিক তা নয় তবুও তোমাদের দুই বোনের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ ৷ একজন আগুন হয়ে সব জ্বালিয়ে ছাড়খাড় করে দেয় তো অন্যজন সে আগুন নিভিয়ে নতুন প্রানের সঞ্চালোন করার প্রাণপণ চেষ্টা করে ৷ ”

ফারহা কপোট রাগ দেখিয়ে আগন্তুকের উদ্দেশ্যে বলে,” এখন যদি তুমি চুপ না করো তাহলে আমি চিরদিনের জন্য তোমার মুখটা বন্ধ করে দিবো৷ আর গাড়ির স্পিড বাড়াও কিং ফায়ারের ঘুম থেকে ওঠার পূর্বে আমাকে ওখানে পৌছে সব কিছু কন্ট্রোলে নিতে হবে৷ ”

” ওকে আরুপাখি ৷”

মুহূর্তে গাড়ির হাই স্পিডে চালিয়ে একঘন্টার মধ্যে শহরের বাইরে চলে আসে৷

অন্যদিকে ফারিহার অবস্থা প্রচন্ড খারাপ৷ পোকামাকড়ে কামড়ে ফারিহার শরীর পুরো ফুলে গেছে৷ কোথাও কোথাও ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে৷ ফারিহার মনে হচ্ছে সে কোন জাহান্নামে আছে৷ এতো যন্ত্রনা এতো কষ্ট ফারিহার শক্ত শরীরটাও আর নিতে পারছে না৷ ফারিহা পুরো রাতে কয়েকবার জ্ঞান হারায়৷ এখন আবারও জ্ঞান হারালো ফারিহা৷

পুরনো বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে গাড়ি থামায় সেই আগুন্তক ৷ ফারহা খুব সাবধানে রিভালবার লোড দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আগন্তুককে বলে,

-” তুমি গাড়িতে থাকবে৷ আমি ফিরে আশা মাত্রই গাড়ি স্টার্ট দিবে৷”

” অলরাইট বাট সাবধানে যাবে৷ আর এই নেও মাক্স ৷ এটা পরে নেও ৷”

ফারহা মাক্সটা নিয়ে পরে খুব সাবধানে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়৷ সারা রাত কিং ফায়ার হ্যারি আর তার দলবল মদ খেয়ে এখন মরার মতো ঘুমিয়ে আছে৷ ফারহা সে সুযোগে ফারিহাকে খুজতে লাগলো ৷ পুরো বাড়ি খুজে শেষে একটা দরজায় তালা মারা দেখতে পেয়ে ফারহার সন্ধেহ হয় ফারিহাকে হয়তো এখানে তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে৷ ফারহা পাশে একটা পাথর দেখতে পেয়ে সেটার সাহায্য নিয়ে তালা ভাঙার চেষ্টা করে৷ কয়েকবার তালাটায় আঘাত করতেই তালা ভেঙে যায়৷ হঠাৎ ফারহা তার পেছনে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে রিভালবারে সাইলেনসার লাগিয়ে পেছনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে শুট করে দেয়৷

ফারিহার পাশের রুমে একজন ছিলো যে কিনা তালা ভাঙার শব্দ পেয়ে ছুটে আসে৷ ফারহা লোকটাকে মেরে তার কাছে থাকা রিভালবারটা নিয়ে নেয়৷ ফারহা লক করা দরজাটা খুলতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ফারিহাকে দেখতে পাচ্ছে না৷ ফারহা তার ফোন বের করে ফ্লাশ জ্বালিয়ে ফারিহাকে খুজতে ফারহা স্তম্ভিত হতবিহ্বল হয়ে যায়৷ ফারহা দ্রুত তার বোনের কাছে গিয়ে মুখে আস্তে করে থাপ্পর মারে৷ যাতে ফারিহার জ্ঞান ফিরে আসে৷ কিন্ত তারপরও ফারিহার জ্ঞান ফিরতে না দেখে ফারিহাকে কাঁধে তুলে নেয়৷ ফারহার এতোটুকু ক্ষমতা আছে ফারিহার ভার সহ্য করার৷ ফারহা ফারিহাকে নিয়ে গাড়িতে ব্যাকসিটে শুইয়ে দিয়ে ফারহা ফ্রন্ট সিটে বসতে আগন্তুক গাড়ি স্টার্ট দেয়৷
মেঘ

মিট মিট করে চোখ মেলে আশে পাশে তাকিয়ে ফারহাকে খুজে না পেয়ে মেঘের অটোমেটিক চোখ জোড়া সংকচিত হয়ে আসে৷ মেঘ অলসতা ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুম ব্যালকনিতে গিয়েও ফারহাকে না পেয়ে মেঘ প্রচন্ড রেগে যায়৷ মেঘ ফারহাকে কল করার জন্য নিজের ফোনটা খুজতে লাগলো৷ বিছানার পাশে সাইড টেবিলে ফোনটা দেখে মেঘ ফোন তুলতে একটা চিরকুট দেখতে পায়৷ মেঘ চিরকুটটা তুলে দেখে তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, ” গুড মরনিং মেঘরাজ৷ আমি জানি আমাকে দেখতে না পেয়ে তুমি এখন ভিষণ রেগে আছো৷ বাট ট্রাস্ট মি তোমাকে ছেড়ে আমার যেতে মটেও ইচ্ছে করছিলো না৷ কিন্তু কর্তব্য পালনে আমি কখনো পিছো পা হাটি না মেঘ তাই তোমাকে না বলে আসতে হলো৷ আই এম রেইলি স্যরি ফর দ্যাট এন্ড আই লাভ ইউ ৷ খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো কতর্ব্য পালন করে৷ ততোক্ষণ আবার গাল ফুলিয়ে রেখো না যেন তাহলে সবাই ভাবতে আমি তোমার উপর টর্চার করেছি৷ ফারুপাখি এসে না হয় তার মেঘরাজের রাগ ভাঙাবে৷
রাগ করে থেকো না নাস্তা করে নিও ৷ আর আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরবো৷ ”

❤️মেঘরাজের ফারুপাখি❤️

মেঘ চিরকুটটা ভাজ করে ড্রয়ারে রেখে আসলামকে ফোন করে৷ মেঘ আসলামকে আগে অফিসের কিছু পেন্ডিং কাজ দিয়ে রেখেছিলো ৷ আসলাম না ঘুমিয়ে পুরো রাত নিজের বাড়িতে বসে পেন্ডিং কাজ গুলো করে সবে মাত্র ঘুমিয়ে ছিলো তখনি আসলামের ফোনটা বেজে ওঠে৷ আসলাম বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে মেঘের কল দেখে উঠে বসে দ্রুত ফোন কল রিসিভ করে৷

” গুড মরনিং স্যার৷”

” আসলাম এ্যাজ সুন এ্যাজ পসিবল ফারুপাখির ফোন নাম্বার ট্রেস করে এক্সজেক্ট লোকেশন আমাকে ইমিডিয়েটলি জানাও৷”

” ও,,ওকে স্যার৷”

আসলাম কল ডিসকানেক্ট করে বিড়বিড় করতে করতে সাইড থেকে ল্যাপটপ নিয়ে ফারহার নাম্বার ট্রেস করতে লাগলো৷
পনেরো মিনিটের মাথায় মেঘের ফোনে আসলামের কল আসে ততোক্ষণে মেঘ শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে৷ মেঘ তার ফোন বাজতে দেখে ভেজা তোয়ালে বেডের উপর ছুড়ে মেরে কল রিসিভ করে মেঘ৷

” হ্যালো স্যার ফারহা ম্যামের লোকেশন খান মন্জিলের খুব কাছাকাছি দেখাচ্ছে৷ মে বি ফারহা ম্যাম বাড়িতে ফিরছে৷ ”

” ওকে ৷”

মেঘ কল ডিসকানেক্ট করে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো,” এমন কি হলো যার জন্য ফারুপাখি আমাকে না জানিয়ে এভাবে চিরকুট লিখেজ বেড়িয়ে গেল? সামথি ইজ ফিশি ৷ ফারুপাখি নিশ্চয়ই আমার থেকে কিছু লুকিয়ে যাচ্ছে৷ ” হঠাৎ মেঘের মনে হলো ফারিহাকে গতকাল থেকে একবারও এ বাড়িতে দেখেনি৷ আর ফারুপাখি গতকাল বার বার বলছিলো বোনের অনুপস্থিতিতে বিয়ে করতে পারবে না৷ তাহলে কি ফারুপাখি ফারিহাকে খুজতে গেল? নাকি অন্য কোন রহস্য আছে? ”

মেঘ ভাবতে ভাবতে দ্রুত চেন্জ করে নিলো৷ আইরিন বেগম আদিলকে দিয়ে গত রাতে মেঘের জন্য শপিং করে ড্রেস রেখে দিয়েছিলো৷ মেঘের যাতে কোন অসুবিধা না হয়৷ মেঘ রেডি হয়ে ড্রইংরুমে এসে দেখে সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে৷ আইরিন খান রান্না করছে আর সারভেন্ট টেবিলে বাকি খাবার টেবিলে সার্ব করে দিচ্ছে৷

আদিল তনু রাফি মেঘকে দেখছে কিন্তু ফারহাকে না দেখতে পেয়ে তনু মেঘকে বলে ওঠে,

-” জিজু আপনি একা আসলেন৷ ফারু কোথায়? ও নিশ্চয়ই রেডি হচ্ছে? আমি যাচ্ছি ওকে হেল্প করতে৷”

তনু উঠে যেতে নিলে মেঘ তনুকে বাধা দিয়ে বলে,” রুমে ফারুপাখি নেই তনু৷ ”

মেঘের কথা শুনে আদিল তনু রাফি আইরিন খান চোখ জোড়া বড় বড় করে বলে,” মানে?”(রাফি)

” ফারহা আপু রুমে নেই তাহলে কোথায় আছে জিজু?”(আদিল)

” মেঘ বাবা ফারহা নিশ্চয়ই ছাঁদে গিয়েছে দাড়াও আমি দেখছি৷” (আইরিন খান)

আইরিনকে বাধা দিয়ে তনু বলে,” আন্টি আপনি কাজ করুন আমি ছাঁদে গিয়ে দেখছি৷” তনু ছাঁদে যেতে নিলে মেঘ তৎক্ষনাৎ বলে ওঠে ,” তনু ফারুপাখি ছাঁদে কেন পুরো বাড়ির কোথাও নেই৷ ”

আইরিন খান মেঘের কথা শুনে বুঝতে পারলো ফারহা কোথায় গেছে৷ আইরিন খান স্বাভাবিক ভাবে মেঘকে বলল,” মেঘ তুমি নাস্তা করে নেও৷ ফারহা আসলে না হয় ওকে জেরা করা যাবে তোমাকে ফেলে ও কোথায় গিয়েছিলো৷”

” তার কোন প্রয়োজন নেই মামুনি৷ ফারুপাখির যখন বলতে ইচ্ছে হবে তখন না হয় বলবে৷ আর ও আসলে আমি নাস্তা করবো ৷ আপনারা খেয়ে নিন৷”

মেঘ থমথমে মুখ নিয়ে সোফায় বসে ফোন টিপতে লাগলো৷

(৩৯)

চোখ মেলে ফারহাকে দেখতে পেয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো ফারিহার৷ শরীরে আর আগের মতো ব্যাথা অনুভব হচ্ছে না ফারিহার৷ ফারিহা চোখ ঘুড়িয়ে আশে পাশে তাকিয়ে জায়গাটা পরিচিত লাগলো না ফারিহার৷ ফারিহা ফারহাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে ফারহা বলে ওঠে………..
.
.
.
#চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here