#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (৯)
অনিকশা বাইরে দাড়িয়েই অন্ত্রীশাকে খুজছে। রুমে তো দেখতে পাচ্ছিনা,এতোরাতে গেলো কোথায়? আমি কি ভেতরে যাবো? নাকি চলে যাবো? কিন্তু অরিদ্রা??
অনিকশা অরিদ্রার দিকে তাকাতেই পালকের চোখে চোখ পড়ে গেছে। এখন এভাবে চলে যাওয়াটা খারাপ দেখাবে ভেবেই অনিকশা ভেতরে ঢুকে পড়লো। অরিদ্রাকে কোলে নেওয়ার উদ্দশ্যে হাত বাড়াতেই পালক ওর হাতের কব্জীর অংশটা চেপে ধরে বললো,
“” কেমন আছো,পত্রী কন্যা?””
অনিকশা পালকের দিকে তাকাতে গিয়েও তাকালোনা। ভয় হচ্ছে তার ভীষন ভয়! ঐ চোখে তাকালেই যে তার ভেতরটা অপরাধবোধে ফেটে যায়! অনিকশা অরিদ্রার দিকে তাকিয়েই বললো,
“” হাত ছাড়ো পালক!””
পালক হাত ছাড়ার বদলে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। অনিকশার দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে। ঠোটের এককোনটা বাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেঁসে বললো,
“” আগেতো হাত না ধরার কারনে আমার সাথে অসংখ্য ঝগড়া করেছো। আর আজ হাত ধরাতেও রাগ দেখাচ্ছো? তোমরা মেয়ে জাতিরা এমন কেন বলোতো? আমার তো মনে হয় তোমরা কি চাও সেটা তোমরা নিজেরাও জানোনা!””
অনিকশা নিজের অন্যহাত দিয়ে পালকের হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় বললো,
“” পালক আমার লাগছে,ছাড়ো। আমি তোমার তেতো কথা শুনার জন্য আসিনি। অরিদ্রাকে নিতে এসেছি। আর তুমি আসছো জানলে আমি আসতামও না।””
“” সত্যি আসতেনা?””
“” হুম!””
“” কিন্তু আমি যে চাই তুমি আসো!””
অনিকশা পালকের হাতের বাধন থেকে ছুটতে না পেরে পালকের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে বললো,
“” হাত ছাড়ো,প্লিজ! অন্ত্রীশা দেখলে ব্যাপারটা কত জগন্য হবে বুঝতে পারছো? অরিদও হয়তো এতক্ষনে এদিকে আসছে!””
অরিদ নাম শুনেই পালকের চোখমুখ শক্ত হয়ে এলো। অনিকশাকে টেনে নিজের কাছটাতে এনে বললো,
“”অরিদ তোমার কোন তৃষ্ণা মিটিয়েছিলো যে একদিনেই বিয়ে করে নিলো।””
“” পালক,ঠিকভাবে কথা বলো। ও আমার স্বামী!””
পালকের রাগ হচ্ছে! এতো বেশি রাগ হচ্ছে যে শরীরের প্রতিটা শিরাউপশিরা ফুলে ফেপে উঠছে। এই চার বছরের সবটা রাগ এখন ঢেলে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ কোনো নিয়ন্ত্রণের বাধা তার মানতে ইচ্ছে করছেনা। কার ভালো হবে,কার খারাপ হবে,কে কি ভাববে তার কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছেনা। নিজের রাগগুলোকে আর কত পুষে রাখবে? এবার কি তবে রাগ ঢেলে দেওয়ার সময় এসেছে??
“” পালক,আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? ছাড়ো বলছি। এতো রাতে এভাবে সিন ক্রিয়েট করোনা!””
অনিকশার কথা গায়ে মাখছেনা পালক। ওকে টানতে টানতে অন্ত্রীশার খোলা বারান্দায় নিয়ে এসেছে। যেখানে গ্রিল দিয়ে বন্দী করা হয়নি বেলকনির স্পেসটাকে। আশেপাশে তেমন গাছ না থাকায় এখান থেকে মেঘে ঢাকা পুরো আকাশটাকে দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির সাথে সাথে কালো মেঘেরাও আজ নিচে নেমে আসছে। পালকের ইচ্ছে হচ্ছে সেও আজ এই কালো মেঘের বৃষ্টির সাথে নিজের জমিয়ে রাখা সবটা রাগ ধুয়ে ফেলতে।
অনিকশাকে বেলকনির ঠিক কর্নারে দাড় করিয়ে ওর হাতটা ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“” আমার আজ সব প্রশ্নের উত্তর চাই পত্রীকন্যা। ইচ্ছে তো করছে নিজের সবটা রাগ আর অভিমান দিয়ে তোমাকে জ্বালিয়ে ফেলি। কিন্তু বেহায়া মন যে তার পত্রীকন্যাকে কষ্ট দিতে নারাজ। কেন সেদিন তুমি আমাকে ফেলে চলে এলে? কেন সেদিন অন্য কারো দখলে চলে গেলে? কি দোষ ছিলো আমার? অনিকশা আমার সব উত্তর চাই!””
পালকের হাত থেকে ছাড় পেয়ে অনিকশা পালিয়ে আসতে গেলে ওর হাতটা চেপে ধরে ফেললো পালক,,
“” সেদিন যদি বুঝতে পারতাম এই যাওয়াই তোমার শেষ যাওয়া তাহলে কখনোই তোমাকে পালাতে দিতাম না! আজ আমি আমার উত্তর না নিয়ে তোমাকে ছাড়বোনা।””
বাতাসের সাথে বৃষ্টির ফোটাগুলো বাড়ি খেয়ে পালক আর অনিকশাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। অনিকশা যাতে পালাতে না পারে তার ঠিক সামনেই পালক দাড়িয়ে রয়েছে। কিছুটা দুরত্ব রেখেই দাড়িয়েছে সে। অন্যের দখলধারীকে সে কখনোই ছুতে চাইনা। যখন নিজের দখলে ছিলো তখনই সে ছুয়ার সাহস পায়নি,তাহলে আজ কিভাবে পাবে??
বৃষ্টির পানি মুখ চুয়ে চুয়ে নিচে পড়ছেপালকের। পালকের চোখের দিয়ে তাকিয়ে অনিকশার গলা শুকিয়ে এলো। চোখগুলো লাল রক্তবর্নের আকার ধারন করে আছে। ঐ চোখ দেখেই বুঝতে পারছে আজ সে পালকের প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারবেনা৷ পালকের রাগ দেখার সৌভাগ্য তার কখনো হয়নি,আজ সেটাও হয়ে গেলো।
পালক বেশ তীক্ষকন্ঠে চিৎকার করে বললো,
“” কি হলো বলছোনা কেন? আমার কি দোষ ছিলো?””
“” এভাবে চিৎকার করছো কেন? আমি তোমার কোনো উত্তর দিতেই বাধ্য নই””
পালকের রাগ এবার আরো বেড়ে গেলো। অনিকশার দিকে রাগে ফুসতে ফুসতে এগুতেই অনিকশা বেলকনির অর্ধাংশ দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলো। কিছুটা বাহিরের দিকে বেকে গিয়ে,চোখ বন্ধ করে ফেললো,
“” পালক,তুমি ভুলে যেওনা অন্ত্রীশা আমার ছোট বোন।””
“” তুমিও ভুলে যেওনা তোমার বোন আমার বউ!””
“” মানে?””
“” আমার উত্তর চাই!””
“” তুমি অনতিকে কষ্ট দিতে পারোনা৷ এখানে ওর তো কোনো দেষ নেই। আমাদের মাঝখানে ওকে কেন আনছো?””
“” তুমিও তো আমাদের মাঝখানে অরিদকে এনেছো,কেন এনেছো?””
“” পালক তুমি এখন হুশে নেই,আমি রুমে যাবো। সরো এখান থেকে!””
“” তুমি কোথাও যাবেনা। আগে আমার উত্তর দিবে তারপর যাবে। নাহলে আজকে আমি সব ধ্বংস করে দিবো!””
“” আমি জানি তুমি এমন কিছু করবেনা।””
“” এতো কিছু জানো তাহলে এটা কেন জানলেনা তুমিহীনা আমি কিছুই না। বুকের ভেতরটা জ্বলেপুরে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে। আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। আমাকে একটু বিষ এনে দাও আমি খেয়ে মরে যাই। মনটা তাও এটাভেবে শান্তি পাবে সে তার পত্রীকন্যার হাতে জীবন বলি দিয়েছে!””
পালকের কথায় অনিকশার কান্না পাচ্ছে,চোখ ঠিকরে পানি বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে,হয়তো বেড়িয়েও এসেছে যা বৃষ্টির সাদাপানির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আমি তো এমনটা চাইনি। এই পৃথিবীতে হয়তো আমিই সবচেয়ে পাপী যে দুটো মানুষকে কাঁদিয়ে এখনো বেঁচে আছে।
“” পালক,এমন ছেলেমানুষি কথা কেন বলছো? সব ঠিক হয়ে যাবে। অনতি আর তুমি অনেক সুখী হবে। অনতি অনেক লক্ষী একটা মেয়ে।””
“” আমার লক্ষী মেয়ে চাইনা। আমার পত্রীকন্যাকে চাই। যদি সে অলক্ষী হয় হোক। আমিও ওর সাথে মিশে অলক্ষী হয়ে যাবো।””
“” এটা কখনোই সম্ভব না পালক! জীবনের অনেকটা পথ পেড়িয়ে এসে পড়েছো। সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার শুরু করো!””
পালক অসহায় সুরে বললো,
“” তাহলে তোমাকে ভুলে যাওয়ার ঔষধের নাম বলে দাও।””
অরিদ নিজের হাতে খায়িয়ে দিচ্ছিলো বলে অন্ত্রীশা মুখ বুঝে খেয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু তা বেশিক্ষন পেটে রাখতে পারেনি। পালকের দেওয়া ধোয়ার বিষগুলো কুন্ডুলী পাকিয়ে অন্ত্রীশার পেটে ক্ষনে ক্ষনে হামলা করছিলো। এই হামলার ফল হিসেবে সে বমি করে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছে। পর পর দুবার বমি করাতে শরীরটা অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে আসে অন্ত্রীশার। মাথাটাও ভারী হয়ে আসছিলো। শরীরটাকে ঠান্ডা করতেই অন্ত্রীশা দ্বিতীয়বারের মতো সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়েছে। মাথায় টাওয়ালটা বেধেই বারান্দার দিকের দরজাটা আটকাতে এগুলো। বৃষ্টির ঝাপটাই আর বাতাসের ধাক্কায় দরজা একটু পরে পরে বাড়ি খাচ্ছে দেওয়ালের সাথে। অন্ত্রীশা দরজার কাছে দাড়িয়েই অবাক।
“” আরে কি করছেন,আপু তে পড়ে যাবে!””
হঠাৎ অন্ত্রীশার কন্ঠ পেয়ে পালক অনিকশার থেকে সরে এসে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়েছে। অনিকশাও সে ফাঁকে পালকের কাছ থেকে ছুটে এসে বললো,
“” তোর বরটা তো আমাকে ভয়ই পায়িয়ে দিয়েছিলো। পালক যে আসবে অরিদকে বলিশনি? তাহলে তো আর অরিদ্রাকে রেখে যেতোনা। তোর কি বুদ্ধীসুদ্ধী কিছু হবেনা? আর অরিদটাও হয়েছে মাথামোটা!””
অনিকশা কাপুনি আর ভীত কন্ঠে অন্ত্রীশাকে দুচারটে কথা শুনিয়ে চলে গেলো।
অন্ত্রীশা পালকের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“” আপনি না বলেছিলেন আসবেননা,তাহলে আবার এলেন যে? আমাকে মিস করছিলেন?””
পালক অন্ত্রীশাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে ওর হাত চেপে ধরে ফেললো অন্ত্রীশা! দুজন দুদিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে।
“” ভিজেই তো গেছেন। থাকুননা কিছুক্ষন!””
“” আই হেইট রেইন।””
“” আপনাকে দেখে তা মনে হচ্ছেনা। আমার জন্য নাহয় অপছন্দ জিনিসটাকে একটু পছন্দ করলেন।””
“” অপছন্দ আর ঘৃণা দুটো শব্দ এক না অন্ত্রীশা! আমি চেন্জ করবো,হাত ছাড়ো।””
অন্ত্রীশা পালকের হাত ছেড়ে দিয়ে উল্টোদিকে ঘুরেই বললো,
“” আমরা কি বন্ধুও হতে পারিনা?””
“” না।””
“” কেন?””
“” সব কেন এর উত্তর হয়না।””
পালক সেখানে আর একদন্ডও দাড়ালোনা। রুমের দিকে পা বাড়ালো। অনিকশার কাছে থেকেও তার যতটা না অসস্থি হচ্ছিলো অন্ত্রীশার উপস্থিতিতে তা দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছে। মেয়েটার কথার মধ্যে কিছুতো আছে যা পালকের সব কিছুকে থামিয়ে দিতে চাই।
অনিকশা অরিদ্রাকে বিছানাতে শুয়িয়ে দিতেই অরিদ চেচিয়ে উঠলো,
“” তোমরা মা,বেটি কি বৃষ্টিতে ভিজে এলে নাকি? আমাকে কেন নিলেনা অনি? ইশ! তোমার সাথে সে কবে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম!””
অনিকশা অরিদের কাছে এসে ঝাপটে জড়িয়ে নিলো। ধরে আসা গলায় বললো,
“” একটু ভালেবাসবে অরিদ? একটু না অনেকখানি ভালেবাসতে হবে। যে ভালোবাসায় মনে হবে আমি এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো পৃথিবীতে চলে গিয়েছে। যেখানে অনুভূতি নামের কোনো শব্দ থাকবেনা।””
অনিকশা কথা শেষ করতেই অরিদ ওকে কোলে তুলে নিয়েছে। গুটিগুটি পায়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজের ভরটা ওর উপর ছেড়ে দিলো। কপালে অরিদের ঠোটের ছোঁয়া পেতেই অনিকশা আবেশে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।
অরিদ পলকহীনভাবে চেয়ে আছে। বৃষ্টির পানিগুলো এখনো বিন্দু বিন্দু জমে আছে অনিকশার মুখে। ঠোটজোড়াও ভিজে। চোখের পাপড়িগুলোও ভিজে একটা আরেকটার সাথে লেগে আছে। এরকম চেহারায় বেশ আবেদনময়ী লাগছে অনিকশাকে। যেকোনো ছেলেকেই কামুকতায় মাতিয়ে দিবে। তাকেও দিচ্ছে। তবে তারটা পবিত্র কামুকতা। কেননা সেতো তার বউ! তারা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ!
অরিদ্রা আসার পর অনিকশাকে এতোটা কাছে পাওয়া হয়নি অরিদের। আজ তার খুব লোভ হচ্ছে অনিকশার মধ্যে নিজেকে ডুবে দেওয়ার তার ইচ্ছেপুরনের অন্য পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়ার তবে সেটা অনুভূতিহীন নয়,অনুভূতির সাগরে ডুবে থাকা পৃথিবীতে। যে সাগরে শুধু তারা দুজন ডুবে ডুবে মিলিয়ে যাবে।
অনিকশার নাকে একটা চুমু খেয়ে অরিদ বললো,
“” কাউকে ভুলতে নয় আমার ভালেবাসার ক্ষুধা পাবে যেদিন সেদিনই তোমাকে ভালোবাসবো। আর সেদিন আসবে,খুব শিঘ্রই আসবে,আমিতো সেদিনের অপেক্ষায় আছি,অনি। আমি যে তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি। আমার নিজের ভালেবাসার উপর সম্পুর্ন আস্থা আছে। জামাটা চেন্জ করে ঘুমিয়ে পড়ো। ঠান্ডা লেগে যাবে!””
অরিদ অনিকশার উপর থেকে সরে এসে অরিদ্রার পাশে শুয়ে পড়লো। এই প্রথম সে তার ভালেবাসার মানুষটার অবাধ্য হলো। বেশ অভিমানও হচ্ছে। তবে অনির উপর নয় নিজের উপর! এই অবাধ্যটা তার আরো আগে হওয়া উচিত ছিলো। তাহলে হয়তো আজ তাকে এভাবে নির্ঘুমে রাত কাটাতে হতোনা। লোভ আসলেই মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। তাকেও দিয়েছে। ভালেবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার লোভে নিজের ভালোবাসাগুলে ধ্বংস করে ফেলেছে!
পালক চেন্জ করে এসেও অন্ত্রীশাকে রুমে দেখতে পায়নি। হয়তো বৃষ্টিতে ভিজছে। হয়তো তারও বৃষ্টি পছন্দ। পালক অন্ত্রীশাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অন্ত্রীশা আসলে নাহয় নিচে শুয়া যাবে! চোখ বুঝতেই পালক তার রঙিন অতীতে ডুবে যাচ্ছে।
পত্রীকন্যা তার তৃতীয় চিঠীও একটা বোরকা পরিহিত মেয়ের হাতে পাঠিয়েছে। সেই তাদের চিঠি আদান প্রদান করবে বলে চিঠীতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পুরো চিঠীতেই কড়া করে বলা হয়েছে তাকে খুজার কোনো চেষ্টা যেন না করে!
পত্রীকন্যা কড়া চিঠিতেও হাজার হাজার ভালোবাসার ঘ্রান পেলো পালক। সেই ঘ্রানে মাতাল হয়েই নিজেও চিঠি লিখতে বসে পড়লো।
***প্রিয় ডিস্টার্ভিং গার্ল,
এতো কেন ডিস্টার্ব করছেন আমাকে? আপনার জ্বালায় আমি ঘুমুতে পারছিনা,খেতে পারছিনা,পড়তে পারছিনা,গোসলও করতে পারছিনা। আমি আজ তিনদিন ধরে গোসল করছিনা। গোসল করতে গেলেই আপনি আমাকে ডিস্টার্ভ করছেন। আপনার নীল নকশা কি সিল মারা হয়েছে? আর কত সময় নিবেন সিল মারতে? আমি ঠিক করেছি আপনার সাথে আমিও আপনাকে কলংকিত করবো তারপর একসাথে দুজন গোসল করে সেই কলংকের দাগ ধুবো!
আপনি কি জানেন? এইবার আপনার হিংসে আমাকে এতোই প্রজ্বলিত করেছে যে আমি পরীক্ষায় সাদা খাতা জমা দিয়েছি। দুদিন পর নোটিশ বের্ডে টপ নোটিশ লেটারেই ফলা করে লিখে দিবে,প্রখর মেধাবী পালক প্রেমে কলংকিত হয়ে সবার মুখে ঝামা ঘসে দিয়েছে। সবাই কলংকিত পালকের থেকে দুরে থাকুন!
পত্রীকন্যা আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেননা। এই ভয়াবহ ডিস্টার্বে আমি খারাপভাবে আহত হচ্ছি! আমার উপর মায়া না হোক প্রিন্সিপালের উপর একটু মায়া করবেন। উনার হাসি হাসি মুখটা চুপসে দিবেননা।
ইতি
পত্র পুরুষ
ঘন্টাখানিক পার হওয়াতেও যখন অন্ত্রীশার আগমনের কোনো লক্ষন দিলোনা পালকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। এতক্ষনে বৃষ্টিরবেগও তো কমে এসেছে। ও এখনো বারান্দায় কি করছে? ও যা খুশি তাই করুক,আমার কি? পালক আবার চেখ বন্ধ করে ফেললো। কিন্তু কপালের ভাজটা কমার বদলে আরো বেশি কুচকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে বেশ কিছুক্ষন কাটানোর পর পালক উঠে বসলো। এই মেয়েটা করছে কি? এর জ্বালায় তো আমি অতীতে ডুবতেও পারছিনা। ধ্যেত!
পালক বিছানা ছেড়ে বিরক্ত নিয়েই বারান্দার দিকে এগুলো। দরজায় পা রাখতেই পালকের বুকটা কেঁপে উঠলো। অন্ত্রীশা ভেজা মেঝেতে পড়ে রয়েছে!
পালক দৌড়ে অন্ত্রীশার কাছে গেলো। এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে ফেলেছে,,
“” অন্ত্রীশা,কি হয়েছে তেমার? তুমি ঠিক আছোতো?””
অন্ত্রীশার গালে হালকা করে থাপ্পড় দিতেই অন্ত্রীশা কিছুটা নড়ে উঠলো,অস্পষ্ট স্বরে বললো,
“” সব কেনএর উত্তর হয় চুমুবাবু! আপনি আমাকে ভুল বুঝাচ্ছেন!””
পালক অন্ত্রীশাকে কোলে তুলে নিলো। বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে হাতের তালু মালিশ করতে করতে বললো,
“” তোমার তো জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বৃষ্টিতে ভেজার কি দরকার ছিলে? উফ! হাতটা এতো ঠান্ডা হয়ে আছে কেন?””
“” আমাকে বন্ধুও বানাবেননা তাও এতো অস্থির হচ্ছেন? বন্ধু বানালে না জানি কত অস্থির হতেন। আর বউ ভাবলে কি করতেন?””
“” এসব আজেবাজে কথা বাদ দাওতো। তোমার তো কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। নিশ্বাস নিতেও কি কষ্ট হচ্ছে?””
পালকের কথার জবাব দেওয়ার শক্তিটুকুও আর পাচ্ছেনা অন্ত্রীশা। কিন্তু তার যে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে। এই প্রথম উনি তাকে প্রশ্ন করছেন,নিজের ইচ্ছেই কথা বলছেন।
পালক অন্ত্রাীশাকে ছেড়ে পায়চারী শুরু করে দিয়েছে। কি করবে সে? ওর বড় কিছু হয়নি তো? ও কি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে? কথা বলছেনা কেন? আমি কি কাউকে ডাকবো? কিন্তু কাকে ডাকবো?
অন্ত্রীশার সাদা জামাটা ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে,শরীরের সাথে মিশে গেছে। মাথার চুলগুলোও ভিজে গলার সাথে অগোছালেভাবে ল্যাপ্টে আছে। এই জ্বরের মধ্যে এই অবস্থায় থাকলেতো শরীরের তাপমাত্রা হুড়হুড় করে বেরে যাবে। জামাটা চেন্জ করা দরকার! অন্ত্রীশাতো কথাই বলতে পারছেনা কিভাবে চেন্জ করবে? তাহলে কে করে দিবে? অনিকশাকে ডাকবো? না না ওকে ডাকা যাবেনা! ওর আম্মুকে ডাকবো? কিন্তু উনি যদি বুঝে যান আমাদের বিয়ের সম্পর্কটা অন্যদের মতো সাজানোনা। কষ্ট পেলে? উনাকে কেন কষ্ট দিতে যাবো? উফ! তাহলে কাকে ডাকবো? টেনশনে মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে পালকের।
যে মেয়েটাকে বউয়ের স্বীকৃতি দিতে পারবোনা সে মেয়েটার জামাতে হাত দেওয়া কি ঠিক হবে? পালক আর কিছু ভাবতে পারছেনা। সব ভাবনা দুরে ঠেলে অন্ত্রীশার গলায় পেচানো ভেজা ওড়নায় হাত দিলো!
চলবে