নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৫৩+৫৪

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৩

আব্রাহাম-রাশেদ বাসায় এসে পরে এবং অয়ন কেও উকিলের কাছে না গিয়ে সোজা বাসায় চলে আসতে বলে। আব্রাহাম রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত বসে বসে ফোনে গেমস খেলছে। আইরাত দরজার দিকে তাকায়।

আইরাত;; এসেছেন আপনি?

আব্রাহাম আইরাত কে দেখেই হেসে দেয়।

আব্রাহাম;; কি করেছো তুমি এগুলো?

আইরাত;; কই! আমি আবার কি করলাম?

আব্রাহাম;; আহ সাধু। লয়ারের নাম্বার পেয়েছো কোথায় তুমি?

আইরাত;; পেয়েছি এক জায়গায়। খুঁজে খুঁজে বের করেছি।

আব্রাহাম;; কেনো?

আইরাত;; আজব তো! ওই শালা কেনো মামলা করবে!

আব্রাহাম;; আরে…

আইরাত;; না না ওই **** আমি ওই খা *******

আব্রাহাম ছুটে গিয়ে আইরাতের মুখটা চেপে ধরে।

আব্রাহাম;; হায়রে আল্লাহ কৈ যাই আমি। মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে রাখা উচিত তোমার। তোমার মুখ বড়ো সাংঘাতিক জিনিস, যে কোন জায়গায় যে কোন সময় খুলে যায়।

আইরাত;; হ্যাঁ তো খুলবে না। আমি তো পারলে ওই উকিলের মাথায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া….

আব্রাহাম;; এই চুপ চুপ চুপ হুসসসসস।

আইরাত;; আমার কি মনে হয় জানেন!?

আব্রাহাম;; কি?

আইরাত;; ওই উকিল ব্যাডার বউ না ওকে ভালোই বাসতো না। একদমই না, তাই হয়তো ওর বউ ওকে রেখে চলে গিয়েছে। তাই সে এমন হয়ে গেছে।

আব্রাহাম;; হুমম হতেও পারে।

আইরাত;; আরে মনে হয় বুড়া রে বুড়ি চুমা টুমা কিছুই দিতো না। পুরাই পানসে।

আব্রাহাম;; আরেএএএএএ আমার বাপ একটু অফ যাও না।

আইরাত;; আচ্ছা গেলাম।

আব্রাহাম আইরাতের কপালে চুমু খেয়ে দেয়। হাতের ঘড়ি টা খুলে একটা টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।


ইলা;; অবনি! অবনি!

অবনি;; হ্যাঁ দাদি।

ইলা;; কিগো শুনলাম তুমি নাকি চলে যাচ্ছো?

অবনি;; আব.. হ্যাঁ দাদি। ভাবছি বেশ দিন তো হলো এখানেই আছি। এখন না হয় এখান থেকে চলে যাই। আবার একদিন আসবো।

ইলা;; আরে মাত্র ২-৩ দিনই তো হয়েছে। বাসায় গিয়েই আর কি করবে। এছাড়াও তোমার আম্মুর সাথে তো আমার কথা হয়েছে তাই থেকে যাও। কাউকেই যেতে দিবো না। তোমাদের সবাই কে একসাথে পেয়ে বাড়ি টা তাও পূর্ণ মনে হয়। ফাকা ফাকা আর লাগে না।

অবনি বিনিময়ে মুচকি হাসে শুধু।

ইলা;; আচ্ছা শুনো আমার একটা কাজ করে দিবে?

অবনি;; হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই দাদি বলুন না।

ইলা;; এইযে এই আচার গুলো ছাদে রোদে দিয়ে আসবে একটু!

অবনি;; হ্যাঁ দিন।

অবনি ইলার হাত থেকে আচারের বয়াম নিয়ে চলে যায় ছাদে। ছাদে গিয়ে আচার গুলো শুকোতে দেয়। তখনই কৌশল ছাদে আসে দুহাত নাড়াতে নাড়াতে। এসেই দেখে অবনি নিচে হাটু গেড়ে বসে আচার শুকোচ্ছে। তাকে দেখেই নিজেকে সামলে ঠিকঠাক করে নেয়। গলা কিছুটা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। শব্দ পেয়ে অবনি একবার পেছন ঘুরে তাকায়। কৌশল কে দেখলে সে নিজেও একটু ঠিক করে বসে।

কৌশল;; কি করছো?

অবনি;; আচার শুকাচ্ছি।

কৌশল;; তা তুমি কেনো? বাড়িতে কি স্টাফ দের অভাব পরেছে নাকি!

অবনি;; তা না। দাদি নিয়ে আসতে বললো তাই নিয়ে এসেছি।

কৌশল;; ওহহ, আমি তো তোমাকেই খুঁজছিলাম।

অবনি;; কেনো?

কৌশল;; শুনলাম তুমি নাকি চলে যাচ্ছো!

অবনি;; যেতে চাইছিলাম।

কৌশল;; এখন?

অবনি;; চাইছি না।

কৌশল;; যাক বাবা বাঁচলাম। (ফিসফিসিয়ে)

অবনি;; কিছু বলবেন?

কৌশল;; আসলে হ্যাঁ।

অবনি;; তো বলুন।

কৌশল;; রাতে, রাতে বলবো।

অবনি কিছু একটা ভেবে বলে..

অবনি;; হুমম।

কৌশল নিচে চলে যায় দ্রুত পায়ে। তবে নিচে যেতেই আব্রাহামের সামনে পরে। আব্রাহাম কপাল কুচকে একবার ছাদের ওপরের দিকে তাকায় তো আরেকবার কৌশলের দিকে।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে রে? এভাবে ছুটে আসছিস কেনো?

কৌশলের কিছু বলার আগেই হাতে কিছু ঝুড়ি নিয়ে অবনি ছাদের ওপর থেকে নেমে আসে। আব্রাহামের বুঝতে আর বাকি রইলো না। অবনির চলে যাওয়ার দিকে কৌশল তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম মুচকি হেসে হুট করেই কৌশলের কাধে নিজের হাত রাখে।

আব্রাহাম;; শোন, বলে দে ওকে।

কৌশল;; হুমম।

ওদিকে অয়ন দিয়ার পিছন পিছন ঘুরছে শুধু। দিয়া যেদিকে যাচ্ছে অয়নও তার সাথে সাথে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই তার পিছে পিছেই যাচ্ছে। দিয়ার সাথে তার মাঝেমধ্যে চোখাচোখি হয়ে গেলে সে এমন একটা ভাব ধরে যেনো সে কিছুই বুঝে না। অবশেষে আর না পেরে অয়ন বলেই দেয়…

অয়ন;; দিয়া!

দিয়া;; বলুন।

অয়ন;; আই ওয়ান্ট টু সে সামথিং টু ইউ।

দিয়ার হাতে কিছু জিনিসপত্র ছিলো সে তা নিচে রেখে দিয়ে অয়নের দিকে দুহাত ভাজ করে তাকায়।

দিয়া;; জ্বি বলুন।

অয়ন;; দেখো আসলে আমি কীভাবে।কি বলবো বা কোথা থেকে কি শুরু করবো তা জানি না। সত্যিই জানি না। তবে কথা টা আমার বলতেই হবে। আসলে আমি ব…..

অয়নের পুরো কথা শেষ হতে না হতেই তার ফোন বেজে ওঠে। ফোনে নাম্বার দেখে অয়নের মাঝে একটু ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তা আবার দিয়া খেয়াল করে কিছুটা উঁকি দিয়ে অয়নের ফোনের দিকে তাকায়। অয়ন দিয়া কে বলে ফোন রিসিভ করে সেখান থেকে এসে পরে। দিয়াও ঘুরে এসে পরে সেখান থেকে। তবে অয়নের যাওয়ার দিকে পেছন ঘুরে একবার তাকিয়ে দেখে। অয়ন হেসে হেসে কথা বলছে। যাই হোক দিয়া এসে পরে।


বেলা গড়িয়ে রাত হয়। হলরুমের দরজাতে দাঁড়িয়ে ছিলো রাশেদ। আইরাত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখে তাকে। আইরাতের হাতে একটা গোলাপ ফুল। সে তা নিয়েই রাশেদের দিকে যায়।

আইরাত;; রাশেদ ভাইয়া!

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম।

আইরাত;; শুনেন একটা কাজ আছে।

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম কি কাজ বলুন!

আইরাত;; কাজটা যদিও আপনার নিজের জন্যই।

রাশেদ;; কি?

আইরাত;; এইযে এটা!

আইরাত গোলাপ ফুলটা রাশেদের দিকে এগিয়ে দেয়। আর রাশেদ কিছুই না বুঝে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; আরে নিন নিন।

রাশেদ;; কিন্তু এটা কেনো?

আইরাত;; কেনো মানে কি আবার রোদেলা কে দিবেন।

রাশেদ;; রোদেলা!

আইরাত;; না তো আর কাকে দিবেন পাশের বাড়ির ছকিনা কে নাকি!

রাশেদ হেসে দেয়।

আইরাত;; আরে জানি জানি সবই জানি। শুনুন যত দেরি করবেন তত আপনারই ক্ষতি। তাই জলদি জলদি সব বলে দিন।

রাশেদ;; বলবো?

আইরাত;; আরে আবার জিগায়! অবশ্যই।

আইরাতের কথা মতো রাশেদ হাতে একটা লাল টকটকে বড়ো গোলাপ নিয়ে চলে যায়। খেয়াল করে দেখে সবাই এখানেই অর্থাৎ দিয়া, অবনি সবাই এখানেই শুধু রোদেলা নেই। তার মানে রোদেলা রুমে। এইতো সুযোগ। রাশেদ চট জলদি সিড়ি বেয়ে ওপরের রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে রোদেলা নেই। তাহলে গেলো কোথায়! রুমের ভেতরে আসতেই ওয়াসরুম থেকে শাওয়ারের শব্দ শুনতে পায় রাশেদ। এই সুযোগে রাশেদ গোলাপের সাথে একটা ছোট চিরকুট বিছানার এপর রেখে দিয়ে যায়।


আর অন্যদিকে কৌশল কে ঝাপটে ধরেছে আব্রাহাম।

কৌশল;; ভাই শোন না!

আব্রাহাম;; কি হয়েছে? (চিল্লিয়ে)

কৌশল;; রাগিস কেনো?

আব্রাহাম ছাদে রেলিং এর ওপর বসে ছিলো। কৌশলের কথা শুনে সে যেনো জ্বলে যায়। এক লাফে রেলিং এর ওপর থেকে নেমে পরে।

আব্রাহাম;; না রাগবো না! শালার ব্যাটা তুই ভালোবেসেছিস তাহলে আবার বলতে ভয় পাস কেনো!

কৌশল;; মানে যদি অবনি মানা করে দেয় আরকি তখন কি হবে আমার?

আব্রাহাম;; কেনো তখন তোকে কাজের মেয়ে জরিনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।

কৌশল;; এইভাবে বলিস না ভাই 😩

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তাই এখন ভালোই ভালোই বলে দে।

কৌশল এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়। আর এদিকে আব্রাহাম বাকি সবাইকে ইশারা করে দ্রুত ছাদে আসতে বলে। সবাই এসে পরে। পুরো ছাদ ফাকা কেউ নেই। তবে ছাদের ঠিক মাঝখানে ছোট ছোট মোমবাতি দিয়ে লাভ স্যাপ করা। আকাশ টা স্নিগ্ধ, হাজারো তারা তাতে মিটমিট করছে। আশে পাশে সুমিষ্টি গন্ধ। পরিবেশ টা সুন্দর। আর সবাই জানে যে কৌশল অবনি কে পছন্দ করে। ছাদের পাশে সবাই গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দিয়া, অয়ন, রাশেদ, রোদেলা। তবে রোদেলা যেনো রাশেদের সাথে নিজের চোখ মিলাচ্ছে না। আর আব্রাহাম রেলিং এর ওপর দুপা ঝুলিয়ে বসে আছে। সামনে তার আইরাত। আইরাত কে জড়িয়ে ধরেই বসে আছে। কৌশল এখনো বেশ নার্ভাস। কিন্তু পাশ থেকে সবাই তাকে উৎসাহ দিচ্ছে। সিড়িতে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে কৌশল রেডি হয়ে দাঁড়ায়।

কৌশল;; আল্লাহ প্লিজ এবারের মতো বাঁচিয়ে নিও প্লিজ প্লিজ।

অবনি ভেতরে আসে এসেই দেখে কৌশল দাঁড়িয়ে আছে। সে এগিয়ে যায়।

কৌশল;; অবনি!

অবনি;; আব্রাহাম জিজু যে বললো সবাই নাকি ছাদে আড্ডা দিচ্ছে। তো কোথায় সবাই?

কৌশল;; আছে।

অবনি;; কৈ?

কৌশল;; অবনি আসলে আমিই ডেকেছি।

অবনি আরো একটু এগিয়ে এসে কৌশলের সামনে দাঁড়ায়।

অবনি;; জ্বি বলুন।

কৌশল;; আসলে কি বলছিলাম যে..

অবনি;; কি?

কৌশল;; আব, আব আসলে মানে…

অবনি;; আরে কি!

কৌশল;; আব…… “ডানে গরু বামে খাসি, মুই তুমারে ভালাবাসি” 😬।

কৌশলের এই কথা বলার সাথে সাথেই সোজা ঠাস করে সবার মাথায় হাত।

আব্রাহাম;; মন চাইতাছে এইডারে ধইরা উশঠা দেই একটা।

আইরাত;; আরে জামাইজান কুল কুল।

ওদিকে অবনি মুখ ভেটকিয়ে দেয়।

অবনি;; কিহ?

কৌশল;; আমি তুমারে অনেক ভালাপাই অবনি 😇

অবনি;; আরে ধুর…

এই বলেই অবনি ঘুরে চলে আসতে নিবে কিন্তু এবার কৌশল অবনির হাত ধরে আটকিয়ে দেয়। সে পেছন ঘুরে তাকায়। দেখে কৌশল এক হাটু গেড়ে নিচে বসে আছে। মাথা টা তার ঝুকানো। আস্তে করে মাথা টা ওপরে তুলে তাকায়। আর অবনিরও এবার টনক নড়ে৷

কৌশল;; এতোক্ষণ ফাইজলামি করেছি আমি। কিন্তু এবার অনেক বেশি সিরিয়াস। অবনি আমি, আমি তোমায় ভালোবাসি। অনেক ভালোবাশি। বিশ্বাস করো কথা টা কতোদিন কতোভাবে যে তোমায় জানাতে চেয়েছি। কিন্তু পারি নি আমি।সত্যি পারি নি। ভয় কাজ করতো যদি তুমি আমায় না বলে দাও এই ভয়। আমি জানি না তোমায় উত্তর কি হবে। হ্যাঁ নাকি না। তবে আমি তোমায় জোর করবো না অবনি। কেননা ভালোবাসা টা মন থেকে আসে। সেটা তোমার ইচ্ছে। তোমার ডিসিশন। তবে হ্যাঁ আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি অবনি। আই লাভ ইউ। তুমি হবে কি আমার!?

অবনি তায্যব হয়ে তাকিয়ে ছিলো। সে ভাবেই নি যে কৌশল তাকে এমন কিছু একটা এই মূহুর্তে বলবে। সে বেশ অবাক। কৌশলের জন্য সফট কর্ণার তো অবনির মনেও আগে থেকেই ছিলো কিন্তু তা প্রকাশ করে দিলে না জানি পরবর্তীতে কি না কি হয় এই ভয়ে সে নিজেও বলে নি। তবে আজ সব ভয় ভেঙে কৌশল নিজেই আগে বলে দিলো। অবনি এখন আর কি করে নিজের মনের ভাব দমিয়ে রাখবে। তাই অবনিও হ্যাঁ বলে দেয়। অবনির হ্যাঁ বলার সাথে সাথেই ছাদের এক পাশ থেকে সবাই জোর একটা চিল্লানি দিয়ে এগিয়ে আসে। আর এদের দেখে অবনি একটু চমকে যায়। সবাই যে এখানেই ছিলো তবে এক কিণারে তা অবনি খেয়ালই করে নি। আর ছাদের ওপর জোৎস্নার আলো পরেছে। আলো-আঁধারির সংমিশ্রণ তাই তেমন টা চোখে বাধার মতোও না। সবাই কে এভাবে দেখে অবনি কিছুটা লাজে লালই হয়ে গেলো। সবাই কংগ্রেচুলেশন বলে তাদের। আর আইরাত গিয়ে অবনি কে আরো কাঁচা শরম দিতে লাগলো। আব্রাহাম গিয়ে কৌশলের মাথায় এক গাট্টা মেরে কাধে হাত রাখে।

আব্রাহাম;; তোকে আগেই বলেছিলাম যে বলে দে বলে দে। দেখলি তো রাজি হয়েই গেলো।

কৌশলও ভাবে নি যে অবনি কে বলতেই সে রাজি হবে। খুশির বাঁধ নেই। সবাই মজা-মাস্তি করে সেখান থেকে এসে পরতে ধরে। সর্বশেষে রাশেদ রোদেলা ছাদ থেকে নেমে যেতে ধরলে রোদেলা হুট করেই রাশেদের সামনে এসে দাঁড়ায়। রাশেদ রোদেলার দিকে তাকায়। রোদেলা কিছুই না বলে রাশেদের হাতে শুধু আগের ন্যায় একটা ছোট চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। রাশেদ আর দেরি না করে তৎক্ষনাৎ চিরকুটের ভাজ টা খোলে। দেখে তারই দেওয়া চিঠি। ওপর পাশে ঘুরিয়ে দেখে রোদেলা তার প্রতিউত্তর দিয়েছে।

“” গোলাপ দিলেন তা বুঝলাম। সাথে ‘ভালোবাসি’ বললেন তাও বুঝলাম। তবে আমি তার বিনিময়ে কি দিবো তাই ভাবছি। কি দিবো বলুন তো! গোলাপের বিপরীতে কি দিবো গোলাপ নাকি কাঁটা? কাঁটা টা দিলাম না কারণ ভালো তো বেসেছি আমিও তাই আপনাকে কাঁটা দিলে বিধবে আমার নিজেরও। না ফুল নাই বা কাঁটা। বিনিময়ে শুধু ছোট্ট একটা ‘হ্যাঁ’ দিলাম””।

রাশেদের যা বুঝার তা বুঝে গেলো। সে সামনে তাকায়। রোদেলা তখনও দাঁড়িয়েই ছিলো। কিন্তু তারপর চলে যায়। রাশেদ তো খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো।

দিয়া আর আইরাত রান্নাঘরে চা বানাচ্ছিলো। চা বানানো শেষ হলে দিয়া সবাই কে এক এক করে দেয়। দেখে অয়ন সবার থেকে কিছুটা দূরে সরে ফোনে আলাপ করছে। দিয়া ট্রে থেকে একটা চায়ের কাপ নিয়ে অয়নের দিকে এগিয়ে যায় তাকে চা দিবে বলে। তার কাছে যেতেই বুঝে অয়ন তো বেশ গভীর আলাপে ডুবে আছে। তবুও দিয়া ইশারাতে অয়ন কে চা সাধে। অয়ন চা টা কোন রকমে দিয়ার হাত থেকে নিয়ে নেয়। আর কিছুই বলে না। দিয়াও সেখান থেকে এসে পরতে নেয় কিন্তু তখনই তার কানে আসে ওপর পাশ থেকে কেমন এক হালকা মেয়েলি কন্ঠ। বুঝলো অয়ন কোন এক মেয়ের সাথে কথা বলছে। দিয়া মুখ টা একদম বিষ বানিয়ে দিয়ে সেখান থেকে এসে পরে।

দিয়া;; হাহ গপ্পের যেনো আর শেষ নেই। যা ইচ্ছে করুক, যার সাথে ইচ্ছে গল্প করুক। আমার কি! হাহ ঢং।

এই বলেই দিয়া এসে পরে।

সেইদিন টা এভাবেই যায়। আইরাত তার কোলে টাফি & সফটি কে নিয়ে বসে আছে। তারা হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে তাও তাদের নরম গায়ের ওপর হাতিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আব্রাহামের দিকে তাকাচ্ছে। দেখে সে বেশ ব্যাস্ত। হাতে অনেক গুলো ফাইল। সব এক এক করে দেখছে।

আইরাত;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আমি একটু ব্যাস্ত গো।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; কিছু বলবে?

আইরাত;; নাহ।

আব্রাহাম;; রাগ করে না জান আমার। একটু কাজ আছে।

আইরাত;; ফাইল গুলো কি অনেক দরকারি?

আব্রাহাম;; তেমন আহামরি দরকারি না তবে হ্যাঁ দরকারি।

আইরাত;; আমি কি চেক করে দিবো কিছু?

আব্রাহাম;; না গো মহারাণী আমার। আপনি গিয়ে বরং পড়তে বসুন। আগামীকাল ভার্সিটি দিয়ে আসবো আপনাকে আমি। পড়তে বসো এবার আইরাত।

আইরাত;; ওইযে আবার শুরু হইছে মাস্টার গিরি।

আব্রাহাম;; পড়তে বোস জান।

আইরাত;; আরে ধুরু কাল ভার্সিটি নেই আমার।

আব্রাহাম এবার একটু গম্ভীর মুডে আইরাতের দিকে ফিরে তাকায়।

আব্রাহাম;; সত্যি তো!

আইরাত;; না বিশ্বাস হলে আপনি দিয়া আর অবনি কে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।

আব্রাহাম;; থাক লাগবে না। তবুও পড়তে বোস। আগের পড়াগুলো পড়ো যাও।

আইরাত;; নায়ায়ায়ায়ায়া, আমি পড়বো না।

আব্রাহাম;; কি বললা!

আইরাত;; আমার পড়তে ভালা লাগে না। আপনি এদিকে আসুন।

আব্রাহাম;; জান আর একটু সময় দাও প্লিজ৷ ফাইল গুলো দেখেই আসছি।

আইরাত;; আচ্ছা 😒।

আইরাত;; এহহ কি আমার ফাইল ডা রে। হায়রে গুরুত্বপূর্ণ আমার থেকেও বেশি তাই না! খুব তো ফাইল দেখেন। আচ্ছা আমিও দেখে নিবো। কাল সকালে কি করি দেখবেন। ওয়েট। বারো টা বাজাবো আমি আপনার। (মনে মনে)

এই বলেই আইরাত চিতপটাং হয়ে ঘুমিয়ে পরে।

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৪

ডার্ক ব্লেক কালারের কোর্ট টা নিজের ওপর জড়াচ্ছে আর পেছন ঘুরে ঘুরে একবার করে আইরাত কে দেখছে আব্রাহাম। সাদা চাদর টেনে আইরাত ঘুমাচ্ছে পরম শান্তিতে। আর আব্রাহামের অফিসে জরুরি মিটিং আছে। তাই তাকে তাড়াতাড়ি উঠতে হয়েছে। রেডি হয়ে আইরাতের কপালে একটা চুমু খেয়ে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়। আব্রাহামের রুম থেকে বের হতেই আইরাত প্রথমে এক চোখ খুলে তারপর আরেক চোখ খুলে। মুখে ঝুলছে শয়তানি হাসি। ঠাস করে উঠে বসে পরে। আড়মোড়া ভাঙছে। কিছুক্ষণ পর নিচে আব্রাহামের গাড়ি চলে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে আইরাত করিডরে গিয়ে নিচে তাকায়। চলে গিয়েছে আব্রাহাম।

আইরাত;; হিহিহিহিহি, একটা বার অফিসে যাও না চান্দু তারপরই বুঝবে মজা 🧛‍♀️।

এই বলেই আইরাত ফ্রেশ হতে চলে যায়। ওদিকে আব্রাহাম গাড়ি চালাচ্ছে আর কানে ব্লুটুথ লাগানো। তখনই অয়নের ফোন।

অয়ন;; তুই কোথায় ভাই?

আব্রাহাম;; আ”ম অন মাই ওয়ে।

অয়ন;; জলদি অফিসে আয়।

আব্রাহাম;; কেনো! কিছু কি হয়েছে নাকি?

অয়ন;; আশফাক আহমেদ তোর সাথে আবার নিজের পার্টনারশিপ শুরু করতে চায়।

আব্রাহাম;; কিন্তু একটা সময় সে নিজেই সবকিছু শেষ করে আরেক কোম্পানি তে জয়েন করেছিলো প্লাস আমার ক্ষতি করার জন্য উঠে পরে লেগেছিলো।

অয়ন;; আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি। এও বলেছি যে তুই জীবনেও আর ওর সাথে কাজ করতে রাজি হবি না। কিন্তু সে আমার কোন কথাই শুনতে রাজি নয়। বলেছে তোর সাথে কথা বলে তারপরই সবকিছু মিটমাট করবে।

আব্রাহাম;; আজ আমার সময় নেই। ওকে বল আমি এখন পারবো না। আমার কাছে ওকে দেওয়ার মতো এতো আজাইরা সময় নেই।

অয়ন;; আচ্ছা আমি দেখছি।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। তার বেশ সময় পর অফিসে এসে পরে। গার্ড রা অফিসের দরজা খুলে দিলে আব্রাহাম ভেতরে চলে যায়। সবাই মর্নিং উইশ করছে আব্রাহামও যেতে যেতে তাদের সবার উত্তর দিচ্ছে। নিজের কেবিনে গিয়ে রাশেদ কে ডাকে।

আব্রাহাম;; সবকিছু রেডি আছে তো?

রাশেদ;; একদম স্যার। কনফারেন্স রুমে সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে।

আব্রাহাম;; ওকে আমি আসছি।

রাশেদ চলে যায়। তার কয়েক মিনিট পর আব্রাহাম কনফারেন্স রুমে চলে যায়। সেখানে অয়ন-কৌশল সবাই আছে। তাকে দেখেই সবাই দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম তাদের বসে যেতে বলে। মনিটর সেট করে নেওয়া হয়। প্রেজেন্টেশন করবে আব্রাহাম।


ইলা-অনামিকা, দিয়া-অবনি-রোদেলা সবাই হলরুমেই বসে ছিলো। কাজ করছে আর আড্ডা দিচ্ছে।

ইলা;; কিরে সবাই এখানে আছি কিন্তু আইরু কোথায়?

এই কথা বলার সাথে সাথেই ওপরে আইরাতের রুম থেকে বেশ জোরে গানের শব্দ আসে। তাও আবার খাসা একখান গান। গান বাজছে…

“চান্দেও চিনে না, সূর্যেও চিনে না। টিং টিংটিং টিং টিংটিং টিং টিংটিং টিং টিং টিং টিং টিং।
চান্দের বাত্ত্বির কসম দিয়া ভালোবাসিলি, সূর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পোড়াইলি। এখন তো চান্দেও চিনে না, আমারে সূর্যেও চিনে না। চিনবো কেমনে যে চিনাইবো সেও তো চিনে না”।

এমন গানের জোর আওয়াজে সবাই অবাক হয়ে ওপরের দিকে তাকায়। আগা-মাথা কিছুই না বুঝে একে ওপরের দিকে তাকাতাকি করতে লাগে।

দিয়া;; এই সাজ-সকাল বেলা এ আবার কেমন তামাশা রে ভাই!

অনামিকা;; এটা নিশ্চয়ই আইরাতের কাজ। এভাবে কেউ এই সকাল বেলা গান বাজায়।

অবনি;; আবার কোন ভূতে ধরলো কে জানে!

তখনই আইরাত রুম থেকে বের হয়ে আসে কোমড়ে নিজের দুহাত রেখে। চোখে একদম কালা চশমা আর মুখে একখান ভেটকি। আবার গান শুরু। আর আইরাত উরাধুরা যা খুশি নাচ দিচ্ছে। আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। এসেই দিয়াকে বসা থেকে হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়। তারপর তাকে নিয়ে নাচতে শুরু করে। দিয়া তো শুধু ঘুরছে। একটা সময় দিয়ার হাত আইরাত ছেড়ে দেয়। এতে দিয়া গিয়ে ধিরিম করে সোফার ওপরে পরে। তারপর ইলার কাছে গিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তারপর আবার আইরাতের মন মতো নাচানাচি শুরু। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।


আব্রাহাম প্রেজেন্টেশন শুরু করবে সবই রেডি। রাশেদের হাতে সব ফাইল। সেই এক এক করে আব্রাহাম কে ফাইল আর যাবতীয় সব কিছু দেয়। আব্রাহাম কোর্টের হাতা গুটিয়ে নিয়ে রাশেদের দিকে তাকায়। দেখে রাশেদ হাবলার মতো সব ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম রাশেদের দিকে তুরি বাজায়। ইশারাতে ফাইল চায় তার কাছে। কিন্তু রাশেদ আসলে কি করবে সেটাই তার বুঝে আসে না। সে শুকনো কিছু ঢোক গিলে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়।

আব্রাহাম;; কি হলো ফাইল দিচ্ছো না কেনো?

রাশেদ;; স্যার এগুলো কি আসলেই ফাইল?

আব্রাহাম;; মানে?

রাশেদ;; স্যার এই দেখুন।

আব্রাহামের সামনে রাশেদ সব ফাইল গুলো রাখে। সেগুলো হাতে নিয়ে এক এক করে উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখতে লাগে। কিন্তু ফাইল উল্টিয়ে দেখতে দেখতে তো আব্রাহামের নিজেরই মাথা উল্টে গিয়েছে। আব্রাহামের কপাল ভাজ হয়ে আসে। রাগে মূহুর্তেই চোখ গুলো রক্তবর্ণ ধারন করে। কোর্টের হাতা গুলো আরো শক্ত ভাজে গুটিয়ে নেয়। রাশেদ সিচুয়েশন বুঝতে পেরে দ্রুত সবাই কে কনফারেন্স রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে। মিটিং হুট করেই ক্যান্সেল করে দেওয়া হলো। এখন এছাড়া আর কোন উপায় নেই। অয়ন আর কৌশলও কিছু বুঝে না। আস্তে করে চলে যায়। আব্রাহাম এক হাত তার কোমড়ে রেখে আরেক হাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে। রাগে শুধু ফুসছে। রাশেদ নিজেও আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে পরে। আসলে আব্রাহামের যে সমস্ত ফাইল ছিলো সেগুলোর সব কটাতেই আইরাত তার মহান কারুকাজ করে দেখিয়েছে। ফাইল গুলো সব ধবধবে সাদা আর তাতে একশ একটা কালারিং পেন দিয়ে যত্তসব আজগুবি ড্রোইং আঁকা রয়েছে। আব্রাহাম চেয়েও এখন রাগ দেখাতে পারছে না। কনফারেন্স রুমে কেউই নেই শুধু আব্রাহাম ছাড়া। সে আস্তে করে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। আস্তে করে গা টা এলিয়ে দেয়। আব্রাহাম বেশ ভালো করেই জানে যে এগুলো আইরাত ছাড়া আর কেউ করে নি। কারণ আইরাত ছাড়া বাসাতে কেউ আব্রাহামের এই জিনিস গুলো ধরবে তার প্রশ্নই আসে না। ফর সিওর আইরাত করেছে। আর আব্রাহাম তাকে হারে হারে চিনে। চেয়েও রাগ করতে পারছে না সে এখন। সকালে ফাইল গুলো আবার রিচেক করবে সেই সময় টুকু ছিলো না। আর রাতের অর্ধেক সময় পর্যন্ত তো কাজ করেছেই তাই আর সকালে চেক করে নি। ভেবেছে সবকিছু ঠিকই আছে। আব্রাহাম চেয়ারে বসে সব ফাইল গুলো দেখছে এক এক করে। এক ফাইলে হাতি, হনুমান, কুত্তা, ভেড়া, বিড়াল, আড়শোলা সবই আঁকা। আরেকটা তে একটা পালোয়ানের মতো মানুষ আঁকা। এটা কে প্রথমে চেনা যেতো না কিন্তু মুখে চাপদাড়ি, আর চুলের আকৃতি দেখে স্পষ্ট প্রমাণ যে আইরাত এটা আব্রাহাম কেই আঁকিয়েছে। খেয়াল করে দেখে আব্রাহামের পাশেই ছোট্ট করে একটা পুচকে মেয়ে কে আঁকিয়েছে। সেটাই হয়তো আইরাত। এটা দেখেই আব্রাহাম তাচ্ছিল্যের মতো হাসি হাসে। সে হাসবে নাকি কাদবে ভুলে গেছে। আরেক ফাইলে হয়েছে পুরো উল্টো কাজ। সেখানে একটা বিশাল আকারের মেয়ে কে আঁকানো হয়েছে আর মেয়ে টার পাশেই পুচকু করে একটা ছেলে কে আঁকানো হয়েছে। সেটা হয়তো আব্রাহাম কে আঁকিয়েছে আইরাত। আরেক ফাইলে ৩২ টা দাঁত বের করে, টাক মাথা সহ একটা দানব আকৃতির মুখমন্ডল এঁকেছে সে। আরো কতো শত কারুকাজ তার। আহা, এগুলো কে জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। আইরাতের ভয়ংকর প্রতিভা। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আব্রাহাম ফাইল গুলো সব রেখে দেয় টেবিলের ওপর। বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে আইরাত কে সময় না দেওয়ার ফল এটা। ওইযে একটু ব্যাস্ততা দেখিয়েছে তাই সে এমন করে রেখেছে সব ফাইল। এত্তো জেদ। যেটার জন্য রাত জেগে কাজ করলো সেটা আইরাত পুরো ভেস্তে দিলো।

অন্যদিকে ইচ্ছেমতো নেচে-টেচে ধুপ করে বসে পরে। মিটমিট করে হাসছে। অনামিকা বেশ ভালো করেই বুঝলো যে নিশ্চিত আইরাত কিছু উল্টা-পাল্টা একটা কাজ করেছে তাই এমন করে নাচছে।

অবনি;; ওই ওই

আইরাত;; কি হইছে?

অবনি;; সত্যি কইরা ক ত। কি করছোস তুই?

আইরাত;; আচ্ছা শোন শোন এদিকে আয় বলতাছি। কানে কানে বলি।

আইরাতের কথা মতো অবনিও আস্তে করে আইরাতের মুখের কাছে নিজের কান পেতে ধরে। আর আইরাত তার মুখের এক পাশে আলতো করে হাত এনে অবনির কানে কানে কিছু বলবে বলে এগিয়ে আসে।

আইরাত;; বলছিলাম কি যে…

এই বলেই আইরাত অবনির কানে দেয় এক ফাটা গলায় চিৎকার মেরে 📢। অবনি দ্রুত সরে এসে কানে হাত দিয়ে দেয়। এই মনে হয় কানের পর্দা টা ফেটে গেলো। শেষ শেষ কান পুরো শেষ।

অবনি;; হারামি মাইয়া।

আইরাত;; 🤪

ইলা;; আচ্ছা কি শুরু করেছিস কি তুই! কোন আজাইরা কাম-কাজ করিস নি তো আবার!

আইরাত ইনোসেন্ট ফেইস করে দুপাশে মাথা নাড়ায়। তার মানে সে ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে জানেই না। সেই সময় টুকু এভাবেই যায়। সকাল থেকে না আব্রাহাম আইরাত কে কোন ফোন করেছে আর না আইরাত ফোন করছে তাকে। সে শুধু থেকে থেকে ঘড়ি দেখছে। আইরাত ভেবেছে হয়তো আব্রাহাম ব্যাস্ত তাই ফোন দিচ্ছে না। তাই কৌশল কেই ফোন করে বসে আইরাত।

কৌশল;; হ্যালো।

আইরাত;; হ্যালো, কৌশল ভাইয়া!

কৌশল;; হ্যাঁ বউমনি বলো।

আইরাত;; আব্রাহাম কোথায়?

কৌশল;; সে তো কাজ করছে। তবে আজ যে মিটিং ছিলো তা ক্যান্সেল হয়ে গেছে।

এটা শুনেই আইরাত দাঁত দিয়ে জিভ কাটে।

আইরাত;; হ্যাঁ বুঝলাম। তো এখন কি করে?

কৌশল;; কেবিন রুমেই বসে আছে।

আইরাত;; দুপুর হয়ে এলো। খেয়েছে কিছু?

কৌশল;; না।

আইরাত;; ওহ আচ্ছা। ভাইয়া আমি রাখি।

কৌশল;; আচ্ছা বউমনি।

আইরাত ফোন কেটে দেয়। উঠে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়। গিয়েই ওরনা কোমড়ে গুজে বিরিয়ানি রান্না শুরু করে। ইলা একবার এসে উঁকি দিয়ে দেখে যায়। দেখে বেশ যত্ন সহকারে বিরিয়ানি রান্না করছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না যে আব্রাহামের জন্যই। দেড় ঘন্টার মাঝেই পুরো বিরিয়ানি তৈরি হয়ে এলো। একটা সুন্দর বক্সে তা বেশটুকু নিয়ে নেয়।

রোদেলা;; ম্যাম, আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন?

আইরাত;; এইযে শুরু হলো আবার। ম্যাম আর আপনি এই দুটো ডাক কি তুমি বাদ দিবে না। দিয়া আর অবনি যেভাবে ডাকে সেভাবে ডাকবে তা না পারলে তুমি বলে ডাকবে। সমস্যা কি!

রোদেলা;; আচ্ছা।

আইরাত;; আমি অফিসে যাচ্ছি আব্রাহামের কাছে। কিছু সময় পরই ফিরে আসবো।

রোদেলা;; আচ্ছা। ড্রাইভার কে বলে দিবো?

আইরাত;; না না আমি একাই যাচ্ছি।

আইরাত বের হয়ে পরে গাড়ির চাবি নিয়ে।

আর ওদিকে আব্রাহামের মেজাজ কিছুটা গরম। ফাইল গুলোর সব নাজেহাল অবস্থা আর তার ওপর মিটিং ক্যান্সেল। আবার আরেক নতুন আপদ এই আশফাক আহমেদ। কিযে ঝামেলা। এইসবের প্যারায় আজ বাসায় ফোন অব্দি দিতে পারে নি। কেবিনে বসে বসে কি যেনো লিখছিলো তখনই রাশেদ কড়া নাড়ে।

রাশেদ;; স্যার।

আব্রাহাম;; এসো রাশেদ।

রাশেদ;; স্যার একজন এসেছে বলছে আশফাকের লোক।

আব্রাহাম;; কেনো এসেছে?

রাশেদ;; আপনার সাথে কথা আছে নাকি।

আব্রাহাম;; পাঠাও দেখি, আবার কোন ঝামেলা এলো।

রাশেদ;; কিন্তু স্যার….

আব্রাহাম;; পাঠাও।

রাশেদ আর কিছু না বলে লোক টাকে পাঠিয়ে দেয়। কেবিনের দরজায় টোকা পরলে ভেতরে আসতে বলে।

আব্রাহাম;; জ্বি বলুন।

–;; স্যার আসলে আশফাক আহমেদ চাইছেন যে….

আব্রাহাম;; যাকে একবার না বলি তাকে না তেই টিকিয়ে রাখি আমি। এবার আপনি আপনার কথা বলতে পারেন।

লোকটি আর কিছু না বলে এবার তার হাত থেকে দুটো সিলভার কালারের বড়ো বড়ো ব্যাগ বের করে টেবিলের ওপর আব্রাহামের সামনে রাখে। দু ব্যাগ ভর্তি শুধু টাকা আর টাকা। যদিও সব ফরেইন কান্ট্রির ডলার।

–;; আপনি চাইলে এর থেকেও বেশি দিতে পারি কিন্তু বিনিময়ে…

আব্রাহাম;; আশফাকের সাথে পার্টনারশিপ করতে রাজি নই আমি।

–;; আপনি….

লোকটি আর কিছু বলতে পারে না। ওদিকে আইরাত প্রায় ত্রিশ মিনিট পর অফিসের সামনে আসে। গার্ডরা আইরাত কে দেখেই দ্রুত অফিসের দরজা খুলে দেয়। সবাই হেসে হেসে কথা বলছে আইরাতের সাথে। আইরাতের তো আর আব্রাহামের কেবিনে ঢোকার সময় পারমিশন লাগে না। আর লাগলেও আইরাত নিবে না। আইরাত তো সোজা কেবিনের দিকে যেতে লাগে। তবে বাইরে থেকেই ভেতরের দিকটায় কিছুটা শোরগোলের আওয়াজ পাওয়া যায়। আইরাত কপাল কুচকায়। সে দ্রুত কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পরে। তবে এখন যেনো সবই নীরব। একেবারেই শান্ত। আইরাত আশেপাশে চোখ বুলাতে থাকে। শান্ত পরিবেশে হঠাৎ কারো চাপা স্বর পেলে আইরাত আরো কয়েক কদম এগিয়ে যায় কিন্তু তখনই আব্রাহাম বের হয়ে আসে। সে যেনো কিছুটা হাপাচ্ছে এমন। অর্থাৎ জোরে দম ছাড়ছে। হুট করেই আইরাতের সামনে এসে পরাতে আইরাতও অবাক।

আব্রাহাম;; হে বেবিগার্ল!

আইরাত;; আপনি?

আব্রাহাম;; তো আমার কেবিনে আর কে থাকবে?

আইরাত;; না না তা না।

আব্রাহাম;; তুমি অফিসে এলে কখন? বললে না যে!

আইরাত;; না আসলে আমি কৌশল ভাইয়া কে ফোন করেছিলাম। আপনি নাকি কিছুই মুখে তুলেন নি তাই আমিই খাবার নিয়ে এলাম।

আব্রাহাম;; তাই কি এনেছো?

আইরাত;; গেস করুন!

আব্রাহাম;; আব….. কি?

আইরাত;; বিরিয়ানি।

আব্রাহাম;; ওয়াহহহহহ।

আইরাত;; কিন্তু আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?

আব্রাহাম;; কেমন?

আইরাত;; আপনি কি রেগে আছেন?

আব্রাহাম;; একদম না। এখন কিছুই করবো না তবে রাতে তোমার খবর আছে।

আইরাত বুঝলো যে আব্রাহাম ফাইলের কথাই বলছে।

আইরাত;; আচ্ছা শুনুন আমি বাড়ি যাই। আর এই রইলো আপনার বিরিয়ানি। এটাই দিতে এসেছিলাম। আপনি খেয়ে নিয়েন কেমন। তারপর না হয় গার্ড কে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েন।

আব্রাহাম;; আরে এতো তাড়াতাড়ির কি আছে!

এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের বাহু ধরে এক টান দিয়ে নিজের কাছে এনে পরে। হাত দিয়ে তার কোমড় প্যাচিয়ে ধরে। আব্রাহাম তার নাক দিয়ে আইরাতের গালে ঘষছে। কিন্তু তখনও আইরাত কারো চাপা স্বর শুনতে পায়। আইরাত কপাল কুচকে তার পেছন ঘুরে তাকাতে যাবে কিন্তু তখনই আব্রাহাম তাকে টান দিয়ে আবার অন্য পাশে ঘুরিয়ে ফেলে। অর্থাৎ আইরাতকে দেখার সুযোগ টুকুও দেয় না।

আব্রাহাম;; আই লাভ ইউ।

আইরাত;; টু (হেসে)

আব্রাহাম;; আচ্ছা শুনো বাড়ি যাও এবার। বাইরে এতো বেশি থাকতে হবে না।

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম আইরাতের সারা মুখে চুমু এঁকে দেয়। আইরাত চলে যেতে নেয়। তবে কেবিনের দরজাতে গিয়ে আইরাত একবার দাঁড়িয়ে পরে। ঘুরে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; হুমমম।

আইরাত;; সবকিছু ঠিক আছে তো?

আব্রাহাম;; টোটালি পারফেক্ট বেবিগার্ল। গো হোম।

আব্রাহাম মুচকি হেসে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আইরাতও এসে পরে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আর আইরাতের চলে যেতেই আব্রাহাম কয়েক কদম হেঁটে গিয়ে কেবিনের আরো ভেতরে যায়। একটু আগে যে লোকটা এসেছিলো আশফাকের বিষয়ে আব্রাহামের কাছে সুপারিশ করতে আর টাকা নিয়ে। বেশি কিছু না তবে আব্রাহাম শুধু তাকে মেরে ফেলেছে। এখনো মরছে সে। দুহাত একদম ওপর থেকে ভেঙে দিয়েছে। ঠিক গলার শ্বাসনালি বরাবর একটা চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে সূত্রপাত হয়েই রক্ত ঝড়ে পরছে সারা গা বেয়ে। আর জীবন তো এখনো পুরো যায় নি তার। গলাতে চাকু বিধে রয়েছে আর সেখান থেকেই তার চাপা স্বর বের হয়ে আসছে। আব্রাহাম খুব শান্ত দৃষ্টিতে তার কাছে যায়। লোকটি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে, কথা বের হচ্ছে না তার মুখ থেকে। একে তো এতো জরুরি মিটিং ক্যান্সেল হয়েছে তাই মাথা গরম। যদিও আইরাত ফাইল গুলো দুষ্টুমি করেই নষ্ট করেছে। আর আব্রাহাম চাইলেও আইরাত কে কিছুই বলতে পারবে না। আইরাত দুনিয়া উল্টে ফেলে দিলেও আব্রাহাম তাকে কিছু বলবে না। আর এই আশফাক সব মিলিয়ে আগে থেকেই বেশ রাগ উঠে ছিলো তার ওপর এই উটকো ঝামেলা সইতে না পেরে দিলো মেরে। আইরাতের নজরে যেনো এইসব খুন-খারাবা আর না পরে তাই আব্রাহাম খুব সাবধানেই এটা সামলিয়েছে। লোকটাকে দেখার অবকাশ টুকুও দেয় নি। আর আইরাত যখন আব্রাহামের কেবিনের ভেতরে আসছিলো তখনই তাকে আব্রাহাম নিজের কেবিনের ভেতরে থাকা লুকিং ক্যামেরা তে আগে থেকেই দেখে নিয়েছিলো। তাই সতর্কতা আরো বাড়ে।

আব্রাহাম;; গার্ড (জোর চিল্লিয়ে)

আব্রাহামের ডাকার সাথে সাথেই কেবিনের ভেতরে তিনজন গার্ড প্রবেশ করে।

আব্রাহাম;; এটাকে নিয়ে গিয়ে ওই আশফাকের ঠিক সামনে ফেলে দিয়ে আসবে।

এবার আব্রাহাম রাগে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আরেক দফা ঘুষি মেরে দেয় ওই লোকটির গলা বরাবর অর্থাৎ যেখানে চাকু আগে থেকেই বিধে ছিলো। গার্ডরা ওই লোকটার আধামরা দেহটা তুলে নিয়ে যায়। আর আব্রাহাম শান্ত হয়ে বসে। মুড খারাপ ছিলো তবে আইরাতের হাতে বানানোর বিরিয়ানির গন্ধে মুড অন। কোর্ট টা খুলে ফেলে। ভেতরের শার্টের হাতা গুলো ফোল্ড করে খেতে বসে। আগামী এক ঘন্টা কেবিনে প্রবেশ সবার নিষেধ করে দেয়।

আইরাত বাসায় চলে যায়। ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে বাড়িতেই ঘুরতে লাগে। এক সময় দিয়ার রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে দিয়া পেছনে দুহাত বেধে শুধু পায়চারি করে যাচ্ছে।

আইরাত;; কিরে!

দিয়া;; ওহ, আয় আয় ভেতরে আয়।

আইরাত;; কিছু কি হয়েছে তোর?

দিয়া;; কিছু না। তবে ভালো লাগছে না।

আইরাত;; হয়েছে কি?

দিয়া;; 😒

দিয়ার চাহনি দেখেই আইরাত যেনো কিছুটা টের পায়।

আইরাত;; আব…. অয়ন ভাইয়ার সাথে…….!!

দিয়া;; বাদ দে। অয়ন অনেক ব্যাস্ত থাকে। হয়তো ও অন্য কাউকে ভালোবাসে রে।

আইরাত;; আরে নাহ তেমন না।

দিয়া;; এমনই রে।

আইরাত;; আচ্ছা তোর এতো চিন্তা করতে হবে না। আমি সামলাচ্ছি সব।

দিয়া;; লাভ নেই রে। অয়ন অন্য কাউকেই ভালোবাসে।

আইরাত;; হ কইলেই হইলো। চুপ কর তুই।

তখনই আইরাতের ফোন আসে।





চলবে~~




চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here