৬+৭
নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-৬
মুমু লাজুকলতা হয়ে বলল, “আমি মোটেও বাচ্চা নই”
আদিব মুমুর বেণি খুলতে খুলতে বলল,” বাচ্চা বলিনি বাচ্চা বউ বলেছি।”
মুমু বোকা বোকা চাহনিতে বলল,”বউ আবার বাচ্চা হয় কি করে? তাছাড়া আমার বয়স তো পনেরো প্লাস কিভাবে কি?” (ঠোঁট উলটিয়ে)
আদিব মুমুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,” এই যে বাচ্চা বউ মানে বুঝিস না, বরকে একটুও ভালোবাসিস না।বাচ্চা বউ না হলে তো এসব বুঝতি তাইনা??
মুমু ফট করে বলে, কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি”।বলেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায় মুমু, দৌড় দেবে ভেবে উঠতে গেলেই আদিব খপ করে ধরে মুমুকে বিছানায় ফেলে ওর উপর শুয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,’তাই বুঝি ‘মুমু লজ্জায় শক্ত করে চোখ বন্ধ করে বলল,”জানিনা”।
আদিবের ভালোবাসা মিশ্রিত শাসন, মুমুর অবুঝ ভালোবাসা সব মিলিয়ে খুব ভালো চলছিল আদিব – মুমুর চড়ুই প্রেম।মুমুর ইমমেচুরিটি’র কথা ভেবে আদিব ইনটিমেট হওয়ার চেষ্টা করেনি,মুমুর অবুঝ ভালোবাসাই যথেষ্ট তার কাছে। আদিব তার ভালোবাসার চাদরে মুড়ে রেখেছিল মুমুকে।দেখতে দেখতে মুমু খুব ভালো রেজাল্ট করে কলেজে ভর্তি হয়। আদিবও ব্যাস্ত হয়ে উঠে ফাইনাল ইয়ারের পড়াশুনা নিয়ে।আদিব-মুমুর স্বাভাবিক সম্পর্ক ও মুমুর আবদারে, ততদিনে মিমন ও আদিবের সম্পর্কও স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
মুমুকে নিজের কাছে রাখার জন্য ভার্সিটির পাশাপাশি একটি কলেজে ভর্তি করেছে। আদিব হল ছেড়ে বাসা নিয়েছে। মুমু চলে আসবে শুনে ছোট ভাই মুগ্ধ ( চাচার ছেলে) কেঁদেকেটে একাকার, সাথে মুমুও যোগ দিয়েছে।অনেক বুঝিয়ে মুমুকে নিয়ে আসে আদিব।
নতুন পরিবেশে, নতুন বন্ধু, দুজনের চড়ুই সংসার সব মিলিয়ে খুব ভালো কাটছে মুমুর জীবন। নিজেকে গিন্নি গিন্নি মনে হয়,যদিও রান্না পারে না তাই সোনা খালাকে ঠিক করেছে আদিব।তারপরও মাঝে মাঝে শখের বশে রান্না করে। নতুন বেস্টু রুপার সাথেই বেশি সময় কাটায়।আদিবের ফাইনাল ইয়ারের পেশারে মুমুকে ঠিক মতো সময় দিতে পারে না। রুপার বার্থডে উপলক্ষে এক সন্ধায় আটকে যায়। মুমুর ফোন না থাকায় আদিবকে জানাতে পারেনা। সেদিন আদিবের টিউশনি না থাকায় মুমুর জন্য গরম গরম জিলাপি নিয়ে বাসায় আসে। এসে মুমুকে না পেয়ে টেনশনে পরে যায়,মুমু খুঁজতে কোচিং-এ যেয়ে জানতে পারে অনেক আগেই ছুটি হয়ে গেছে।মিমনকে জানালে সেও খোঁজা শুরু করে।
রাত ৮:১৯ মিনিট
আদিব বাসায় এসে মুমুর বইপত্র পাগলের মতো ঘাটছে যদি কোনো কিছু জানতে পারে।কিছু না পেয়ে বের হতে যেয়ে দেখে মুমু কারো বাইক থেকে নেমে বাই জানাচ্ছে। আদিব রাগে হাত মুঠো করে ঘরে ফিরে আসে। মুমু রুপার ভাই রূপক এর থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় এসে দরজা খোলা দেখে একটু অবাক হয়ে যায়, আদিব টিউশনি শেষ করে আসতে সাড়ে আটটা বেজে যায় তবে কি আজ চলে এসেছে। ভয়ে ভয়ে দরজা লক করে ডাইনিং পেরিয়ে ঘরে ঢুকতেই কিছু বোঝার আগেই ঠাস করে একটা চড় দেয় আদিব। হঠাৎ এমন হওয়ায় মুমু তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়।সাথে সাথে মুমুর দুই কাধ শক্ত করে চেপে ধরে দাড় করায়।আদিবের লাল চোখ দেখে মুমু ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিব তার বাম হাত দিয়ে গাল চেপে ধরে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে মুমুর ঠোঁট থেকে লাল লিপিস্টিক ঘেটে দেয়।চিৎকার করে বলে “ছেলেটা কে”।
রুপা জোর করে তাকে সাজিয়ে দিয়েছিল।রাত হওয়ায় রূপক ভাইকে দিয়ে পৌঁছে দিয়েছে, যদিও মুমু বাইকে আসতে চাইনি। কিন্তু আদিবের রাগ দেখে কিছুই বলতে পারছে না ভয়ে থরথর করে কাপছে।মুমু কিছু না বলাতে আরো রেগে যায় আদিব।মুমুকে বিছানায় ছুড়ে ফেলে রুক্ষভাবে ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরে।মুমু বাধা দিলে আরো রুডলি আঁকড়ে ধরে,মুমু চোখের জলও আদিবকে দমাতে পারেনি। আজ প্রথম আদিবের অচেনা স্পর্শ গুলোতে মুমুর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বাধা দিয়েও কিছু হচ্ছে না। অন্যদিকে আদিব নিজের সমস্ত রাগ ফলিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যায়। ফোনের রিংটোনে আদিবের ঘুম ভেঙে যায়, হাতড়ে ফোনটা রিসিভ করতেই মিমন ব্যাস্তভাবে বলে উঠে,” আদিব আমাদের থানায় যাওয়া উচিত তুই তাড়াতাড়ি আয়”। মিমনের কথায় পাশ ফিরে মুমুকে দেখেই কলিজা কেপে উঠে আদিবের। মিমনকে কোনোমতে বুঝিয়ে ফোন রেখে দ্রুত মুমুর কাছে আসে।মুমু সেন্সলেস হয়ে গেছে, আদিব দ্রুত পানি নিয়ে এসে চোখে মুখে পানি দেয়।কিন্তু মুমুর কোনো সাড়া না পেয়ে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়,ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। দিশেহারা হয়ে কি করবে ভেবে না পেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুমুকে,বার বার ডাকতে থাকে।তারপর আবার চোখে মুখে পানি দিয়ে গালে আলতো করে চাপড় দেয়, কিছুক্ষণ পরে পিটপিট করে চোখ মেলে মুমু।আদিবকে সামনে পেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। মুমুর কান্না দেখে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে,আদিবও মুমুকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে নিরবে কেঁদে দেয়। মুমুর মাথার পাশে অজস্র চুমু দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,”আম সরি সোনা,আম রেলি সরি, আই’ল নেভার গনা হার্ট ইউ।”
মুমুও কেঁদে হেঁচকি তুলে রুপার বার্থডের কথা জানায়।কান্নার চোটে ভালোভাবে কথা বলতে পারছে না,নিজের থেকে ছাড়িয়ে মুমুর চোখ মুছে দেয় আদিব।গালে চড়ের দাগ বসে গেছে, ঠোঁট দুটো ফুলে আছে। ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে গালে হাত বুলিয়ে দেয়। হঠাৎ আদিবের কিছুক্ষন আগের করা ভয়ানক আচরণের কথা ভেবে নিজের দিকে তাকিয়ে চাদর টা শক্ত করে চেপে ধরে মুমু। আদিবের হাত সরিয়ে দিয়ে কেঁদে বলে উঠে, “আ…মি বাড়ি যাব,আম্মুর কাছে যাব”
আদিবের নিজেকে একদম শেষ করে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে, তার রাগের জন্য আজ মুমু তাকে ভয় পাচ্ছে শুধু ভয় না ভীষণ ভয় পাচ্ছে। দুই হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো জোরে চেপে ধরে বসে থাকে কিছুক্ষণ পরে আহত চোখে মুমুর তাকিয়ে বলে,”মুমুসোনা আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি সত্যি সরিরে পাখিটা।” বলে মুমুর হাত ধরতে গেলে মুমু পিছিয়ে যায়। আদিবের চোখ থেকে টুপ করে একফোঁটা পানি পড়ে যায়।”আই সোয়ার মুমুপাখি, আর কখনো কষ্ট দিব না,তাকা আমার দিকে প্লিজ আমাকে ভয় পাস না।” আদিবের চোখে পানি দেখে মুমুর ভয়টা কমে সে আদিবকে উদ্দেশ্য করে বলে”আমি পানি খাব” আদিব পানি নেওয়ার জন্য যেতে যেয়ে আবার মুমুর দিকে ফিরে বলল,”মুমুসোনা কোথায় কষ্ট হচ্ছে বল আমাকে” মুমু ফুপিয়ে কেঁদে দেয় ” আমি ওয়াশরুমে যাব” আদিব মুমুকে কোলে করে দিয়ে আসে। দ্রুত বেডশিট চেঞ্জ করে মুমুর জন্য দুধ গরম করে নিয়ে আসে।ততক্ষণে মুমুও ফ্রেশ হয়ে বেডে এসে বসেছে। মুমুকে দুধটুকু খায়িয়ে একটা পেনকিলার দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় আদিব।
পরদিন সকালে মিমন আসে মুমুর সাথে দেখা করতে।মিমনকে দেখে ভীষণ খুশি হয়ে যায় মুমু।সে তো ভাইকে পেয়ে একহাত জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো বসে আছে। ভাইয়ের সাথে থাকলে মুমু একদম বাচ্চা হয়ে যায় আর মুমুর এই বাচ্চামি স্বভাব খুব ভালো লাগে আদিবের। মুমুর ফোলা চোখ মুখ দেখে মিমনের মন খারাপ হয়ে যায়। সে আদিবের রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করে জানে। মুমুর সাথে অনেক সময় কাটিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আদিবকে সাথে নিয়ে বের হয়ে যায় মিমন।যদিও মুমুকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না তার, মিমনের জোরাজোরি তে বাধ্য হয়ে যাচ্ছে।
অনেকক্ষন হলো মিমন চুপচাপ বসে আছে,কিছু বলতে চাইছে হয়তো।নিরবতা ভেঙে আদিবই কথা বলে “কি বলবি বল এত হেজিটেট করছিস কেন?”
এতক্ষণে মিমন মুখ খুলে, “দেখ আদিব তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, কিন্তু এখন আমি মুমুর বড় ভাই হয়ে কিছু কথা বলবো প্লিজ কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করবি।” (আদিব মাথা নেড়ে জবাব দেয়)
“মুমু খুব শান্ত স্বভাবের,ও যাকে ভালোবাসে সে হাজার কষ্ট দিলেও একটা কথাও কাউকে বলে না।ওর আট বছর বয়স তখন, আমি রেগে ধাক্কা দিলে পড়ে গিয়ে পা কেটে দুটো সেলাই দিতে হয়। বাড়ির সকলকে বলেছিল দৌড়াতে গিয়ে পড়ে গেছে।মুমু যে সবার কত আদরের তাতো জানিসই, ও একবার বললেই বাবা চাচা আমাকে রাম কেলানি দিতো।”
আমি কথাগুলো বলছি তার একটাই কারণ মুমু তোকে খুব ভালোবাসে, ওকে কখনো কষ্ট দিস না।খুব আদরে বড় হয়েছে ও, অল্পতেই মন খারাপ করে তাছাড়া এখনো অনেক ছোট। কিন্তু একটু ভালোবাসা পেলে সব ভুলে যায়।তুই আমাকে কথা দে ওর গায়ে কখনো হাত তুলবি না প্লিজ।(লাস্ট কথাগুলো আদিবের হাত ধরে বলে)
আদিবের নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে মিমন মুমুর গালে দাগ দেখে কষ্টে কথাগুলো বলছে।আদিব সরি বলতে নিলে মিমন তার আগেই আবার বলে, “প্লিজ কথা দে”
চলবে
নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-৭
ব্যাস্ত শহরে ব্যাস্ত হয়ে ছুটে চলছে গাড়ি গুলো।সন্ধ্যার পর থেকে বাতাসটা একটু ক্ষেপেছে।এখন তার সাথে বৃষ্টি বৃষ্টি আভাস যুক্ত হয়েছে।অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে, ফুটপাত ধরে নিয়ন আলোর নিচ দিয়ে বাসার পথে এগিয়ে যাচ্ছে আদিব।
আজ একলা হাটতে বেশ ভালো লাগছে। একহাত পকেটে পুরে অন্য হাতে মুমুর পছন্দের পিংক কালারের হাওয়াই মিঠাই ও আইসক্রিমের প্যাকেট নিয়ে হেটে চলছে।আর ভাবছে মিমন ও মুমুর সম্পর্কের কথা।দুজনের প্রতি দুজনের টান দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে।মুমুতো ভাইয়া বলতে এমনিতেই পাগল,আর মিমন আজ যা করেছে।মুমু অন্যায় করলে সে যেন মিমনকে যেয়ে ইচ্ছে মতো মেরে আসে তবু মুমুর গায়ে আঘাত না করে, ছোট বাচ্চা ছেলেদের মতো আবদার করেছে। কথাটা ভাবতেই মৃদু হাসলো আদিব।
ফোনটা বের করে আনিয়াকে কল দিলো, কিছুক্ষণ পরে ফোনটা রিসিভ হয়,ফোনের ওপাশ থেকে আনিয়া ভীষণ রেগে চিল্লিয়ে বলে উঠে,”আমি মারা গেলে সবাইকে খবর দেওয়া হবে,তোদের খবর নিতে হবে না আর আমার ফোনও রিসিভ করতে হবে না”
আনিয়া আদিবের থেকে তিন বছরের ছোটো অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।ভীষণ রাগী কিন্তু মনটা খুব ভালো। আদিব ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,”থামবি নাকি ফোন রেখে দিব??”
“ভাইয়া তুই এমন কেন? ফোনটা তো এট লিস্ট রিসিভ করতে পারিস,গতমাসে বড় ভাইয়াও ব্যাংকক চলে গেল,মেজো ভাইয়া তো কথায় বলে না, বড় আপু তো তার সংসার নিয়ে ব্যাস্ত, আমাকে কেউ ভালোবাসে না।”অভিমান করে বলল।
“সামনের মাসে আমার ভার্সিটি এসে ফোন দিস আর বাড়িতে বলবি দুই দিন থাকবি আমার কাছে।তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে”
আনিয়া ভীষণ এক্সসাইটেড হয়ে বলল “সত্যি!!”আদিব হুম বলে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয়।
দুপুরে আদিবরা বের হওয়ার পরে ঘুম দিয়েছিল মুমু।কিন্তু ঘুমটা ভালো হয়নি, ঘুমের ভিতরে কোমড়ে ভোতা ব্যাথা হচ্ছিল। অনেক সময় হলো বিছানায় শুয়ে আছে, উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না।আজানের মধুর ধ্বনি শুনে অনিচ্ছা শর্তেও উঠে নামাজ পড়ে নেয়।দরজা নকের শব্দে উঠে দরজা খুলে দেখে আদিব মুখে লম্বা হাসি ঝুলিয়ে দাড়িয়ে আছে।দেখে বেশ খুশি খুশি মনে হচ্ছে।
মুমুর ফোলা ফোলা চোখ দেখতে বেশ লাগে আদিবের।ভিতরে ঢুকে মুমুর হাতে প্যাকেট টা ধরিয়ে দিয়ে গালে টুপ করে একটা চুমু খায়।মুমু প্যাকেটটা দেখে ভীষণ খুশি হয়ে বলে, ” আমার জন্য??”
“না আমার বউয়ের জন্য, বাচ্চা বউতো তাই নিয়ে এলাম।” (এক চোখ টিপে শয়তানি হাসি দিয়ে)
মুমু ঝটপট আইসক্রিম বের করে খেতে খেতে বলল “আচ্ছা আদিব ভাইয়া (বলেই দাঁত দিয়ে জিভ কাটে)মানে তুমি কি করে জানলে আমার পিংক কালারের হাওয়াই মিঠাই পছন্দ??”
আদিব মুমুর নাকটা টেনে বলল,”ম্যাজিক!! ম্যাজিক করে জানতে পারলাম বুঝলি আর কেন পছন্দ সেটাও জানি।”
মুমু উৎসাহ নিয়ে বলল,”কেন,কেন বলো?”
আদিব ভাব নিয়ে বলল,”এটা খাওয়ার পরে জিভ আর ঠোঁট লাল হয় তাই তোর পছন্দ”
মুমু চোখ ছোট ছোট করে বলল,”সত্যি বলো,ভাইয়া তোমাকে বলেছে তাইনা?
আদিব মাথা চুলকিয়ে ফিক করে হেসে বলল,”হুম”
রাতে খাবার শেষে মুমুকে একটা ইমার্জেন্সি পিল খায়িয়ে দেয়। আর নিয়ম মাফিক দমবন্ধ চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে যায়।মাঝরাতে বুকের টিশার্টে টান পরায় ঘুম ভেঙে যায় আদিবের,মুমু চোখ বন্ধ করে কাঁদছে আর টিশার্ট খামচে ধরে আছে।আদিব দ্রুত মুমুকে সোজা করে শুয়ে গালে হাত দিয়ে ডাক দেয়,”মুমু, এই পাখি তাকা,কি হয়েছে স্বপ্ন দেখছিস?” মুমু চোখ বন্ধ করেই দাত দিয়ে ঠোঁট চেপে মাথা নেড়ে না জানাই।”তাহলে কাঁদছিস কেন?” মুমু কোমরে হাত চেপে ভাঙা গলায় বলল, “কোমরে ব্যাথা করছে”
আদিব কী করবে বুঝতে পারছে না,নিজের উপর রাগ হচ্ছে।মুমু আন্ডার এইজ ওর উচিত ছিল ডক্টরের সাথে কথা বলা। ডক্টরের কথা মনে হতেই বড় আপুর কথা মনে পড়ে আদিবের।তার বড় বোন অনুপ্রিয়া একজন গাইনীকোলোজিস্ট।কিছু না ভেবেই দ্রুত ফোন করে, আপুর নির্দেশনা অনুযায়ী মেডিসিন বক্স ঘেটে পেইন কিলার নিয়ে খায়িয়ে দেয়।তারপর মুমুর জন্য কেনা হট ব্যাগটা খুজে বের করে। ঝটপট পানি গরম করে নিয়ে এসে কোমরের নিচে দেয়।মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারানোর চেষ্টা করে, আধাঘন্টা পরে মুমু ঘুমিয়ে যায়।
সকালে সোনা খালা রান্না করে গেলে মুমুকে দ্রুত খেয়ে তৈরি হতে বলে আদিব।সকাল থেকে আদিবকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে মুমুর। খাবার জন্য ডাকলে না বলে,ডক্টরের কাছে যাবে তাই মুমুকে তাড়াতাড়ি তৈরি হতে বলল।
অন্যদিকে আদিবের টেনশন হচ্ছে বড় আপুকে নিয়ে,রাতে মুমুর কথা সব বলেছে।কিন্তু আপু মুমুকে চেম্বারে না নিয়ে তার বাসায় কেন নিতে বলল বুঝতে পারছে না।বেশি না ভেবে মুমুকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আদিব।রিকশাটা একটা সুন্দর দোতলা বাড়ির সামনে থামতেই মুমু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আদিবের দিকে তাকায়,যার অর্থ এখানে কেন?আদিব কিছু না বলে মুমুর হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়।কলিং বেল চাপার কিছুক্ষন পরে একটা সাত আট বছরের ছেলে দরজা খুলে দেয়।”মনিমামা!!” বলেই আদিবের কোমর পেচিয়ে ধরে।আদিব হেসে বলল,”এই বাঁদর ভিতরে ঢুকতে দে আগে” আদিবকে ছেড়ে চেচিয়ে বলল,”আম্মু মনিমামা আমাকে বাঁদর বলছে।” মুমু দুই জনের কথাবার্তায় বুঝতে পারে ছেলেটা সম্পর্কে আদিবের ভাগিনা।এসব ভেবে সামনে তাকাতেই একজন শাড়ি পরিহিতা সুন্দরী মহিলাকে দেখতে পায়।মহিলাটি এসেই রেগে আদিবের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দেয়। ভয়ে আদিবের বা হাত নিজের দুই হাতে জাপটে ধরে মুমু।
চলবে