পদ্মপাতার জল পর্ব ৩+৪

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_৩_এবং_৪
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

#পর্ব_৩
ঘুমটা আজকে খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে গেল পদ্মের। তাই তাহাজ্জুদ নামাজের পর কিছুক্ষণ কোরআন শরীফ পড়ল। ফজরের নামায পড়ে বাইরের উঠানে গিয়ে বসল। বুকের ভেতর ভয়ে কাঁপছে। শাপলা পাশে পিঁড়ি নিয়ে বসে বলল, আপু, ঘুমাবি না?

পদ্ম- না রে বোন, ঘুম আসছে না।

শাপলা- খুব বেশি চিন্তা হচ্ছে ?

পদ্ম- হুম। তুই একটু ঘুমিয়ে নে। আজকে তো তোকেই মাকে সাহায্য করতে হবে।

শাপলা- তুই? এখন এভাবে বসে থাকবি?

পদ্ম- উঁহু। একটু পরে গোছগাছ করব। বাবা যে কেন মাহফুজ আঙ্কেলের বাড়ি যাবে। যা গিয়ে শুয়ে নে। আমি তোকে পরে ডেকে দেবো।

শাপলা উঠে ঘরের ভেতর চলে গেল। আকাশের আলো আস্তে আস্তে হালকা হয়ে গেছে। সূর্য উঠি উঠি করছে। পদ্ম সূর্য উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করল। তারপর ভেতরে গিয়ে গোছগাছ করে রেডি হতে লাগল।
.
.
.
.
ফরহাদ মিয়া আর পদ্ম গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হেঁটে মেইন রোডের দিকে রওনা দিয়েছে। পদ্ম একটা লম্বা লাল রঙের ফ্রক পরেছে। চুলগুলো অর্ধেক ঝুটি করে বাকিগুলো ছাড়া, কোমড় পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। ওর পায়ের পাতলা নুপুরগুলো হালকা আওয়াজ করছে। বাঁকা করে কাঁধে নেওয়া ছোট ব্যাগটা ডান কোমরের পাশে ঝুলছে আর কোমরের তালে নড়ছে। ফরহাদ মিয়া একটু হেঁটেই ঘেমে একাকার হয়ে গেলেন। পদ্ম হাতের ছাতাটা খুলে বাবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, বললাম সাইকেলটা আনতে। বললে শোনো না।

ফরহাদ- এটুকুন পথ। তার জন্য সাইকেলটা আনতাম? তার উপর মোফিজ মিয়ার আমার সাইকেলের দিকে নজর পড়েছে।

পদ্ম- কতবার বলেছি লোকটার সাথে কথা না বলতে। লোকটা ভালো না। আমার দিকে কেমন বাজে চোখে তাকায়।

ফরহাদ- কি করমু বল, এখনও কিছু টাকা বাকি। ওগুলা এক সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে।

পদ্ম- আমি ভর্তি হলে টিউশানি করে সব টাকা শোধ করে দিতাম। বাবা, দেখো তো একটু সময় বাড়ানো যায় কি না।

ফরহাদ মিয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালেন কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে বেশ চিন্তিত। কারণ কালকে রাতে মোফিজ মিয়া একটা ভয়ঙ্কর কথা বলেছে। মোফিজ মিয়া গ্রামের মহাজন। পদ্মের ভর্তি পরীক্ষার জন্য তার কাছ থেকে ফরহাদ মিয়া কিছু টাকা নিয়ে ছিলেন। এখন একটু একটু করে শোধ করছেন। ওরা দিনে আনে দিনে খায়। টাকা জমানোর সুযোগ হয়ে ওঠে না। তাই ধার করেই মেয়ের ভর্তির সকল কাজ করছে। আশা, মেয়ে পড়ে ওনাদের মুখ উজ্জ্বল করবে আর এই দুঃখের দিন শেষ করবে। কিন্তু কালকে মোফিজ মিয়া বলেছে যদি ঠিক টাইমে টাকা পরিশোধ করতে না পারে তবে পদ্মকে তুলে নিয়ে যাবে। এই ভয়ে এখন ওকে নিয়ে মাহফুজ আমানের বাড়ি যাচ্ছে। ওকে কয়দিন ওখানে রেখে আসবেন।

পদ্ম- বাবা, কি চিন্তা করছ?

ফরহাদ- কিছু না মা। ঐযে মেইন রাস্তা চলে এসেছে।

ওরা মেইন রাস্তায় ওঠার আগে হঠাৎ ধুলা উড়িয়ে ওদের পাশ দিয়ে একটা জিপ চলে গেল। ইয়াশের জিপ। খুব স্পিডে পাশ দিয়ে যাওয়ায় পদ্মের সামনের চুলগুলো উড়ে এসে ওর মুখের উপর পড়ল। ইয়াশ পদ্মকে দেখেই কিছুদূর গিয়ে জিপ থামিয়ে সাইড মিরর দিয়ে ওকে দেখতে লাগল। পদ্ম মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে কানের নিচে গুজে নিয়ে জিপের দিকে বিরক্তভাব নিয়ে তাকাল। ইয়াশের বেশ ভালোই লাগছিল ওর বিরক্তিমাখা মুখটা দেখতে। হঠাৎ মনিকা পাশ থেকে ডেকে বলল, কি হয়েছে, জানু?

ইয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল, কিছু হয়নি?

বলেই আবার আয়নার দিকে তাকাল। পদ্ম আর ফরহাদ মিয়া কথা বলছে। ইয়াশ ওখান থেকেই শুনতে পেল ওদের কথা।

ফরহাদ- এখনকার ছেলেমেয়েদের ভদ্রতাবোধই উঠে গেছে। ধুলে একাকার করে দিল।

পদ্ম- ঠিক বলেছ বাবা। একেবারেই অভদ্র। দেখছে রাস্তায় মানুষ তাও এভাবে ধুলা উড়িয়ে যাচ্ছে।

পদ্ম গতকালকেও ওকে অপমান করেছে। আজকেও করল। তাই হঠাৎ করেই মাথায় রাগটা নাড়াচাড়া দিয়ে উঠল। ও গাড়িটা খুব স্পিডে আবার পেছন দিকে ব্যাক করল। ওর বন্ধুরা ওকে চিৎকার করে মানা করছে। এভাবে স্পিডে ব্যাক করা খুবই বিপদজনক। যেকোনো সময় রাস্তা থেকে মাঠে পড়ে যেতে পারে জিপ। ইয়াশ ওদের কারো কথা শুনল না। ওর মাথায় রাগের ভুত চেপে বসেছে। ও ব্যাক করে পদ্মদের পেছনে চলে গেল। তারপর আগের চেয়ে দ্বিগুন গতিতে ওদের পাশ কাটিয়ে গেল। এত ধুলা উঠল যে পদ্ম আর ফরহাদ মিয়া ধুলায় কাশতে কাশতে প্রাণ বের হয়ে যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় পদ্ম আর ইয়াশের চোখাচোখি হয়ে গিয়েছিল। ইয়াশ ওর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে চলে গেল। যতক্ষন পর্যন্ত আয়নায় পদ্মকে দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত ইয়াশ তাকিয়ে রইল ঠোঁটে শয়তানী হাসি নিয়ে।

বাসে করে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে দেড় ঘন্টা লাগল ওদের। বাড়ি থেকে তাজা সবজি আর ফলমূল নিয়ে এসেছে মাহফুজ আমানের পরিবারের জন্য। একটা রেস্টুরেন্টের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বলল, বাবা, একটা চকলেটের বক্স নিয়ে যাই। ওখানে যদি বাচ্চা থাকে। আর আমারও তো রেজাল্ট দিবে। যদি ভালো করি তবে মিষ্টি মুখও করাতে পারব।

ফরহাদ- আচ্ছা মা। যা ভালো বুঝিস।

পদ্ম- তুমি এখানে থাকো, আমি যাব আর আসব।
.
.
.
.
পদ্ম রেস্টুরেন্টের ভেতরে গেল। রিসেপশানের শেলফে অনেক রকমের চকলেট বক্স আর আইসক্রিমের বক্স সাজানো। আর ভেতরে খাবার ব্যবস্থা। সেখানেই একটা কোণার টেবিল বুকিং করে বসে আছে ইয়াশ আর মনিকা। মনিকার জোড়াজুড়িতেই এই লঙ জার্নি করে এখানে খেতে এসেছে। পদ্ম ঢুকতেই ইয়াশের ওর দিকে নজর পড়ল। আসার সময় বাসে খোঁপা বেঁধে ফেলেছিল। মুখটা ঘামে হালকা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে। কিছু চুলও ঘামে লেপ্টে আছে গলায়। কেন যেন আজকে ওকে দেখতে ভালো লাগছে ইয়াশের। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

পদ্ম দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল কোন চকলেটের বক্স কেনা যায়। শেষে দুটো চকলেট বক্স পছন্দ করল। একটা চকলেট ফ্লেভারের আরেকটা দুধের। কোনটা নিবে ওটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মনে হল কেউ ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। পাশে তাকিয়ে পদ্ম শক খেয়ে দশ হাত দূরে সরে গেল। ইয়াশ ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে।

পদ্ম- আপনি এখানে?

ইয়াশ- কেন? এখানে কি আসা নিষেধ?

পদ্ম- না, নিষেধ নয়। কিন্তু আমার কেন মনে হচ্ছে আপনি আমার পিছু নিয়েছেন।

ইয়াশের রাগটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। মনে মনে ভাবল, মেয়েটা কি কখনও স্বাভাবিক ব্যবহার করতে জানে না। সব সময় ব্যাঁকাত্যাঁড়া কথা। ইয়াশ রাগ করে ওর পছন্দ করা দুটো চকলেট বক্সই কিনে নিয়ে চলে গেল। পদ্ম বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইল। ভেতরে রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই লোকটার সমস্যাটা কি! উপায় না দেখে পদ্ম ছোটখাট একটা চকলেট বক্স নিয়ে বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে।
.
.
.
.
ফরহাদ মিয়া ঠিকানার কাগজটা আর বাড়ির নেমপ্লটটা কয়েকবার মিলিয়ে নিল। পদ্ম কয়েকবার নিশ্চিত করল তাও তিনি বার বার চেক করে নিল। ঠিকমতো নিশ্চিত হওয়ার পর ফরহাদ মিয়া গেটের দারোয়ানকে ডেকে বলল, ভাই, মাহফুজ বাড়িতে আছে?

দারোয়ান- আফনারা ক্যাডা? দেইখা তো সুবিধার মনে হইতেসে না।

ফরহাদ- ভাই, আমরা মাহফুজের আত্মীয় হই। মধুপুর থেকে এসেছি।

দারোয়ান – এমন সবাই বলে যে আমি অমুক আমি তমুক। যতসব। যান তো এখান থেকে।

পদ্ম রেগে বলল, আপনার সমস্যাটা কি? বলছি আমরা ওনার আত্মীয় তাও এমন খারাপ ব্যবহার করছেন কেন আমাদের সাথে?
ফরহাদ মিয়া ওকে থামাতে চাইলে পদ্ম বলল, বাবা, ভালো ব্যবহার করার পরও যদি খারাপ ব্যবহার করে তবে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করাই উচিত না। উনি মনে করছে আমরা ফকির। হাত পেতে ভিক্ষা নিতে এসেছি।

এমন সময় একটা কালো কার এসে গেটের সামনে থামল।
…………………………♥
……………♥

#পর্ব_৪

এমন সময় একটা কালো কার এসে গেটের সামনে থামল। দারোয়ান সালাম দিয়ে গেট খুলে দিল। গাড়ি ভেতরে গেল না। গাড়ি থেকে একজন হাসিখুশি মানুষ বেরিয়ে এলো। মুখটা গোলগাল। মাথায় যা ক গাছি চুল আছে তাও কাঁচাপাকা। টাকটা ভালোই বোঝা যায়। তবে সবকিছু মানিয়ে গেছে ঐ মুখের হাসির সাথে। গায়ে কোর্ট প্যান্ট পরা। ফরহাদ মিয়া হেসে এগিয়ে গেলেন।

ফরহাদ- ভাই, ভালো আছিস?

মাহফুজ- তা তো ভালো আছি। তোরা এভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

পদ্ম- আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।

মাহফুজ – ওয়া আলাইকুম আসসালাম, এটা কে? পদ্ম মা? কত বছর পর দেখলাম। চল চল, ভেতরে চল।

মাহফুজ আমান গাড়িটা গ্যারেজে রাখতে বলে ওদের সাথে ভেতরে হাঁটতে লাগলেন। পদ্মর বাড়িটা খুব পছন্দ হয়েছে। বিশেষ করে বাইরের বাগানটা। তাই আসার সময় হা করে চারপাশে বাগানের সৌন্দর্য গিলছিল। মাহফুজ আমান বুঝতে পেরে বললেন, আমি ফরহাদকে নিয়ে ভেতরে যাচ্ছি। তুমি বাগানটা একবার ঘুরে এসো।

অনুমতি পেয়ে পদ্ম একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ছুটে গেল বাগানের দিকে। পুরো বাড়িটা বাগান দিয়ে ঘেরা। সেখানে কত রকমের ফুল। ও ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ কিছু একটার আওয়াজ পেল। কেউ কিছু করতে না পেরে বার বার বিরক্তির শব্দ করছে। পদ্ম শব্দ অনুসরণ করে গিয়ে দেখল বারো তের বছর বয়সী দুটো মেয়ে একটা পেয়ারা গাছের সামনে দাঁড়িয়ে ঢিল ছুড়ছে। কিছুক্ষণ ওদের পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে বলল, আমি পেড়ে দেবো?
মেয়ে দুটো পিছনে তাকাল। পদ্ম ওদের কাছে এসে বলল, অনেকক্ষণ থেকে দেখছি তো। তাই বললাম। পেড়ে দেবো? আমি গাছে উঠতে পারি। মলিন পোশাকপরা মেয়েটি পাশের মেয়েটিকে বলল, ইনু আপু, এ কে?

ইনু- আমি কি করে বলব? কে আপনি?

পদ্ম- আমি মাহফুজ আঙ্কেলের আত্মীয়। তোমরা যদি বলো তো আমি পেড়ে দিতে পারি।

ইনু- তুমি আব্বুর আত্মীয়?

পদ্ম- তুমি মাহফুজ আঙ্কেলের মেয়ে?

ইনু- হুম। তুমি পারবে পেড়ে দিতে?

পদ্ম- এক মিনিট দাঁড়াও।

পদ্ম চোখের পলকে গাছে উঠে গেল। উঠার সময় জামাটা টান খেয়ে অনেকটা বড়ো ছিঁড়ে গেল পিঠের দিকটা। কিছুক্ষণের মধ্যে সাত আটটা পেয়ারা নিয়ে নিচে নেমে এল। পেয়ারাগুলো ওদের হাতে দিয়ে ওড়নাটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বলল, ইনু, ও কে?

ইনু- কাবিল চাচার মেয়ে, রিনি। আমার সাথে একই ক্লাসে পড়ে।

পদ্ম কাবিল চাচাকে চিনে না। চিনবেই বা কি করে, মাত্রই তো এল। তাই বলল, ও।

ইনু- তুমি?

পদ্ম- আমি পদ্ম, মধুপুর গ্রাম থেকে এসেছি।

ইনু- দাদার বাড়ির ওখানে? ইস্, কতোদিন যাইনি। সেই ছোটবেলায় গিয়েছিলাম। দাদা মারা যাওয়ার পর আর নিয়ে গেল না আব্বু।
এক মিনিট, তুমি পদ্ম আপু! ঐযে একবার আমার লজেন্স পড়ে ময়লা লেগে গিয়েছিল আর তুমি আমাকে তোমারটা দিয়ে দিয়েছিলে। তারপর থেকে আমি যতদিন ছিলাম, তোমার পিছে পিছে ঘুরতাম।

পদ্ম- তুমি সেই ছোট ইনু! কত বড় হয়ে গেছো। চিনতেই পারিনি।

ওরা কথা বলতে বলতে দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকল। পদ্ম মাত্র একটা পেয়ারায় কামড় দিচ্ছিল, এত বড় বাড়ি দেখে গোটা পেয়ারা মুখেই রয়ে গেল। পাশ থেকে কেউ বলে উঠল, কামড় দিয়ে পেয়ারাটা নামা।
পদ্ম দৌঁড়ে গিয়ে বলল, ইরিনা আপু, কতদিন পর!

ইরিনা- মনে আছে তাহলে।

পদ্ম- তোমার এই মিষ্টিমুখটা কি করে ভুলি? মনিমা কই?

আয়েশা আমান রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। কাজের মেয়েকে নিয়ে নাস্তা এনে টেবিলে রাখলেন। পদ্ম দৌঁড়ে পেছন থেকে বলল,মনিমা।

আয়েশা- এতদিন পর মনি মা! একবারও তো আসলি না এখানে।

পদ্ম- এখন এলাম তো। বুঝেছি, রাগ হয়েছে বুঝি? নাও পেয়ারা খাও।

সবাই পদ্মর রাগ ভাঙানো দেখে হেসে ফেলল। মাহফুজ আমান আর ফরহাদ মিয়া সোফায় বসে হাসছেন। মাহফুজ আমান বললেন, মেয়েটা এখনও বাচ্চা রয়ে গেল।

ফরহাদ- তা যা বলেছিস। ভাই এখন এই বাচ্চাকে তোর কাছে গুচ্ছিত রাখতে হবে কয়দিন। বড় বিপদ যে।

মাহফুজ- কেন? কি হয়েছে?

ফরহাদ মিয়া সব খুলে বললেন। মাহফুজ আমান ফরহাদ মিয়ার পিঠ চাপড়ে বললেন, এটা কোনো ব্যাপারই না। তুই আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঐ মহাজনের মুখে ছুড়ে মেরে আয়। এত বড় সাহস! আমাদের পদ্ম মায়ের দিকে হাত বাড়ায়।

ফরহাদ- কিন্তু ……

মাহফুজ – কোনো কিন্তু না। তাছাড়া আরো একটা কথা তোকে বলা হয়নি। সময় আসলে বলব। কি গো, তোমার আরেকজন কই?

আয়েশা- তিনি তো এসেই নিজের ঘরে ঘুম দিয়েছেন। তার দেখা রাতে খাবার টেবিলের আগে পাবে না।
.
.
.
.
রিনি ইনুর সাথে থাকে তাই পদ্মের থাকার ব্যবস্থা ইরিনার সাথে করা হলো। সারা বিকাল পদ্ম উসখুস করল। সন্ধ্যায় ইরিনা টের পেয়ে জিজ্ঞেস করল, কিরে, আজকে সারা বিকাল এমন হাঁস ফাঁস করছিলি। কি হয়েছে?

পদ্ম- না মানে…… আমার পিঠে……

ইরিনা- কি হয়েছে পিঠে?

পদ্ম- আসলে জামাটার পিঠের দিকে ছিঁড়ে গেছে।

ইরিনা- কি? কখন, কিভাবে? আমাকে বলিসনি কেন?

পদ্ম- পেয়ারা পাড়ার সময়। ভেবেছিলাম বাড়ি চলে যাব। বাবা তো বলেনি আজকে থাকবো। আর আমি বাড়তি জামা আনি নি।

ইরিনা- তো কি হয়েছে? আমি নাই? আমি তো তোর বড় বোন, নাকি?

পদ্ম- না মানে……

ইরিনা- আর মানে মানে করতে হবে না। এদিকে আয়।

ইরিনা তার বিশাল আলমারির সব দরজা খুলে দিল। এক দেয়াল জুড়ে তার আলমারি। একটা লম্বা স্টেইন এক মাথা থেকে অপর মাথায় আটকানো। তাতে হেঙ্গার দিয়ে শাড়ি ঝোলানো। আর নিচে ভাজ করে তাকে সাজানো অনেক জামা। পদ্ম অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, এত বড় আলমারিও কারো হয়! ইরিনা ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, যেটা ইচ্ছে হয় সেটা নিয়ে পড়।

পদ্ম- এতোগুলো! আমি তো বাছাই করতে গেলে পাগল হয়ে যাবো। তার থেকে ভালো তোমার যেটা ভালো লাগে ওটা দাও।

ইরিনা- বেশ।

ইরিনা খয়রি রঙের হালকা কাজ করা একটা জর্জেটের শাড়ি নিল। তার সাথে ম্যাচিং সবকিছু নিয়ে পদ্মের সামনে দাঁড়াল।

পদ্ম- এই সন্ধ্যাবেলা শাড়ি পড়ব?

ইরিনা- আমার তোকে খুব শাড়িতে দেখতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ……

পদ্ম- আচ্ছা।

ইরিনা ওকে যত্ন করে শাড়ি পড়িয়ে দিল। চোখে হালকা শ্যাডো দিয়ে চিকন করে আই লাইনার আর মোটা করে আইলেসে মাশকারা লাগিয়ে দিল। ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক। কানে ম্যাচিং ছোট ঝুমকো। মাথার চুল ডান পাশে সিঁথি করে আচঁড়ে নিল। ছোট চুলগুলো খোলা রেখে ডান পাশের বড়ো চুলগুলো একটা ছোট গোলাপওয়ালা একটা ছোট ক্লিপ দিয়ে আটকে দিল। বাম পাশের বড়ো চুলগুলোও সাধারণ একটা কালো ক্লিপ দিয়ে আটকে দিয়ে ইরিনা আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল, কি যেন ম্যাচ হয়নি।

পদ্ম- কি যে বল না। এত কিছুর পরও ম্যাচ হয়নি?

বাইরে থেকে রিনি এসে বলল ইরিনাকে নিচে ডাকছে। ইরিনা আসছে বলে রিনিকে পাঠিয়ে দিয়ে বলল, দাঁড়া, এই নে। আজকে একজনে আমাকে এই চকলেট বক্সটা দিয়েছে। নে খা।
এই বলে ইরিনা চলে গেল। বক্সটা দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। আজকে একই রকমেরই একটা চকলেট ফ্লেবারের চকলেট বক্স ও আনার কথা ছিল। যা হোক, বক্সটা খুলে ও খাওয়ার শুরু করল। চকলেট গুলো হাতে নেয়ার একটু পরেই গলে যায়। তাই হাতে মুখে লেগে একাকার হয়ে গেল। হাত মুখ ধোঁয়ার জন্য দাঁড়াতেই আঁচলের বাড়তি অংশ কাঁধ থেকে খুলে হাতে পড়ে গেল। সেই অংশ সামলাতে সামলাতে পদ্ম মনে মনে বলল, ভাগ্য ভালো আঁচল সেইফটি পিন দিয়ে আটকানো।
.
.
.
.
ইয়াশ খেয়ে এসেই একটা লম্বা ঘুম দিয়ে উঠল। এখন মাথা ফ্রেশ করার জন্য লম্বা ঘুমের পর একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে নিল। টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ইরিনার রুমের দিকে এগোতে লাগল।

পদ্ম আঁচল নিয়ে বড়ো ঝামেলায় আছে। দুই হাতে চকলেট। আঁচলটাও সামলাতে পারছে না। ভয় হচ্ছে যদি শাড়িতে চকলেট লেগে যায়। তাই ডান দিকে ফিরে আঁচল সামলাতে লাগল। হঠাৎ কে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরল। পদ্ম আয়নার দিকে তাকিয়ে রোবটের মতো আটকে গেল। একটা ছেলে পেছন থেকে ওকে ঝাপটে ধরে আছে!
.
.
.
.
ইয়াশের ছোট থেকে অভ্যাস ঘুম থেকে উঠে বড় বোনকে জড়িয়ে ধরা। তাই এখনও এসে ইরিনাকে জড়িয়ে ধরল। ইয়াশ দেখল ইরিনার হাতে চকলেট। হেসে ইয়াশ বলল, তুমি আমাকে চকলেট না দিয়ে নিজে খেয়ে ফেলছো।

ইয়াশ ইরিনার হাতের আঙুল থেকে চকলেট চেটে নিয়ে বলল, কি রে আপু? কথা বলছিস না যে?

ইয়াশ ইরিনাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে চারশো বোল্টেজের শক খেলো। ইরিনা কোথায়? এতো পদ্ম!
চলবে……

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here