পারলে ঠেকাও পর্ব -২৫

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মধুজা সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে অক্ষরের বুকের কাছে আবিষ্কার করে। অক্ষরের গভীর নিঃশ্বাস এসে পড়ছিল মধুজার মুখে। মধুজা অনুভব করার চেষ্টা করে। অক্ষরের ঘুমও ভেঙ্গে যায়। অক্ষর মধুজাকে নিজের আরো বেশি কাছে টেনে নিয়ে বলে,
‘গতকাল রাতের আদর কি যথেষ্ট ছিল না? আজও কি তোমার আদর চাই?’

মধুজা মোলায়েম স্বরে বলল,
‘আপনি আদর দিতে পারলে আমিও আদর নিতে পারব।’

অক্ষর মধুজাকে বলে,
‘সময় দেখো ঘড়িতে। এখন তাড়াতাড়ি গোসল করে নেও। এত নির্লজ্জ হয়োনা হানি।’

মধুজার এবার বেশ রাগ হলো। রাগ করে উঠে যেতে লাগল। অক্ষর মধুজার হাত টেনে ধরল। মধুজাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
‘রাগ করোনা। তোমাকে আদর করে দিচ্ছি।’


ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট করে হসপিটালে চলে যায় অক্ষর চৌধুরী। মধুজা মনমরা হয়ে ঘরে বসে ছিল। আজ আবার তার অনেক কাজ। আগে যখন কোন কাজ করত না,কত ভালো দিনকাল ছিল৷ সারাদিন শুধু ফোনে মুভি দেখত, ইউটিউবে ভিডিও দেখত,টিকটক দেখত। আর এখন যেন জীবনের রুটিন হয়ে গেছে সাংবাদিকতা। সারাদিন ছোটাছুটির উপর থাকতে হয়। একটুও বিশ্রাম নেওয়ার সময় পায় না।

মধুজা নিচে নেমে এলো। স্যান্ডুইচ খেয়ে বেরিয়ে পড়ল নিজের কাজে। প্রথম আলো অফিসে পৌছেই অবাক হয়ে গেল লাবিব। অবাক হওয়ার কারণও আছে। সবাইকে আজ ভীষণ ব্যস্ত লাগছে। মধুজা সোজা লাবিবকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘সবাই এত ব্যস্ত কেন?’

‘কেন তুমি জানো না?’

‘উহুম।’

‘আজ তো ডাকসুর ভিপি ইলেকশন। এই নিয়ে তো এত ব্যস্ততা সবার মাঝে। প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে আপডেট দিতে হবে। এমনভাবে নিউজ করতে হবে যেন আমরা ভালো রেসপন্স পাই।’

মধুজা ছোট্ট করে বলল,
‘ওহ।’

মধুজা নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে পড়ল। কিছু প্রতিবেদন লেখা বাকি ছিল সেগুলোই এখন লিখছে। প্রতিবেদন লেখা শেষ করে দম ফেলে মধুজা।

একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস নেবে তার আগেই লাবিব এসে বলে,
‘চলো আমরা ঢাবিতে যাই। ওখানকার ক্যাম্পাস থেকে নিউজ কালেক্ট করা যাবে।’

মধুজা বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারে না। তার কাজই তো এটা৷ তাই মুখে কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,
‘চলো।’

৪৯.
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলকালাম কাণ্ড হয়ে গেছে৷ দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে গেছে। বর্ণও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এখানেই মূলত ডাকসুর এক প্রার্থীর সমর্থক সে। তাই বর্ণও এই লড়াইয়ের মধ্যে যুক্ত হয়ে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে এই হাতাহাতিতে বর্ণ অনেক আঘাত পেয়েছে।

মধুজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দাড়িয়ে ছিল। ভিতরে আপাতত কাউকে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। লাবিব আচমকা বলে ওঠে,
‘চলো না আমরা আরেকটা চেষ্টা করি ভেতরে যাওয়ার।’

মধুজা বিরক্ত হয়ে বলে,
‘দেখলেই তো ওরা যেতে দিচ্ছে না। এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া ভেতরকার পরিস্থিতিও বেশি ভালো না। এই অবস্থায় না যাওয়াই শ্রেয়।’

মধুজার কথার পরে লাবিব আর কিছু বলতে পারে না। মধুজা ফোন বের করে ঘাটাঘাটি শুরু করে দেয়।

বর্ণকে তার কয়েকজন বন্ধু করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল। কারণ তার অবস্থা বেশ গুরুতর। মধুজা বর্ণকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে আসে। বর্ণর বন্ধুদেরকে জিজ্ঞেস করে,
‘কি হয়েছে ওর?’

বর্ণর এক বন্ধু বলে,
‘ক্যাম্পাসে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যের লড়াইয়ে বর্ণ আহত হয়েছে। তাই আমরা এখন ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। আপনি চিনেন ওকে?’

‘জ্বি, আমি ওর ভাবি হই।’

‘তাহলে আপনিও আসুন আমাদের সাথে। আর পারলে আপনার পরিবারের মানুষদেরও খবরটা জানান।’

মধুজা তাদের সাথে বর্ণকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। বাড়িতে বললে সবাই টেনশন করবে জন্য আপাতত কিছু বলে না। হাসপাতালে পৌছে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল মধুজা। বর্ণকে বাজেভাবে আঘাত করা হয়েছে। এত আঘাত সইতে না পেরে বেচারা অজ্ঞান হয়ে গেছে।

আচমকা মধুজার ফোনে কল আসে। মধুজা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে আরহা কল দিয়েছে। কলটা রিসিভ করতেই আরহা বলে ওঠে,
‘কেমন আছিস মধুজা? বিয়ের পর কি আমাকে ভুলে গেলি নাকি? আগে প্রতিদিন আমার সাথে কত কথা বলতি। এখন আমার কথা কি মনেই পড়ে না?’

‘পরে কথা বলি আরহা। আমি আসলে এখন হসপিটালে আছি।’

আরহা চিন্তিত হয়ে বলে,
‘হাসপাতালে কেন? কারো কি কিছু হয়েছে?’

‘হুম। আমার দেবর বর্ণ ভার্সিটিতে মা’রামারি করে এখন হসপিটালে ভর্তি।’

বর্ণর ব্যাপারে এসব কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় আরহা। তার খুব চিন্তা হতে থাকে বর্ণর জন্য। তাই আরহা বলে,
‘কোন হাসপাতালে?’

‘ঢাকা মেডিকেল কলেজে আছি এখন।’

‘আচ্ছা তুই থাক ওখানে আমিও আসছি।’

‘তুই কেন আসবি?’

‘তুই একা সবকিছু সামলাতে পারবি না মধুজা। আমার তো বান্ধবী হিসেবে কিছু দায়িত্ব আছে তাইনা? সেই দায়িত্ব পালন করার জন্যই যাব।’

মধুজা যদিও ব্যাপারটা বুঝতে পারে যে, বর্ণর জন্যই আরহা আসতে চাইছে কিন্তু কিছু বলে না আর এই ব্যাপারে। আরহা কল কে’টে দিলে অক্ষরকে ফোন করে সব জানায়। অক্ষর আপাতত বাড়িতে কাউকে কিছু জানাতে মানা করে। বরং নিজে একসময় আসবে বলে জানায়।

৫০.
আরহা হাসপাতালে এসে গেছে। ততক্ষণে বর্ণর জ্ঞান ফিরেছে। তবে বেশ ভালোমতোই আঘাত পেয়েছে বর্ণ। তার শরীরের অনেক জায়গায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। বাম পায়ে অনেক বেশি আঘাত লাগায় অবস্থা বেশ জটিল।

আরহা মধুজার থেকে বর্ণর কেবিন কোনদিকে সেটা জেনে নেয়। মধুজা কিছু ওষুধ কিনতে বাইরে যেতেই আরহা চলে যায় বর্ণর কেবিনে। বর্ণর দিকে তাকিয়ে বলে,
‘গুন্ডাগিরি তো ভালোই করতে পারেন দেখছি। এখন কেমন লাগছে?’

আরহার প্রশ্ন শুনে বর্ণর ভ্রু কুচকে যায়। বর্ণ রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিজের শরীরের ব্যাথায় ‘আহ’ করে ওঠে। আরহা রাগী স্বরে বলে ওঠে,
‘এসব হাতাহাতি করে কি লাভ পেলেন? আমি মধুজার কাছে সব শুনেছি। একবার জেলে গিয়ে কি আপনার শান্তি হয়নি? এসব ছাত্ররাজনীতি ছাড়তে পারেন না?’

বর্ণ আর চুপ থাকতে পারে না। সেও বেশ রাগের সহিত বলে,
‘আমার ব্যাপারে নাক গলানোর আপনি কে? আমি যা ইচ্ছা হয় করব। আমার কথা না ভেবে আপনি নিজের কথা ভাবুন। রাস্তাঘাটে ভালো ভাবে চলাফেরা করতে পারে না আর এসেছে আমার দোষ ধরতে।’

আরহা দাত কটমট করতে করতে বলে,
‘আমি অন্তত আপনার মতো ঝামেলায় জড়িয়ে পরি না। কোথায় ভালো করে পড়াশোনা করে ভালো একটা জব পাবেন তা না রাজনীতি নিয়ে পড়ে আছেন। এভাবে চলতে থাকলে কোন মেয়েই আপনাকে বিয়ে করবে না।’

‘না করলে নাই। তাতে আপনার কি? আমি তো আর আপনাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি না।’

আরহা মুখ বাকায়। মধুজাও ততক্ষণে ওষুধ নিয়ে চলে আসে।


বিকেলের দিকে অক্ষর এসে বর্ণর সাথে দেখা করে। বর্ণকে অনেক বকাবকিও করে এসব নিয়ে। তবে বর্ণর উপর খুব বেশি প্রভাব পড়ে না।

অক্ষর মধুজাকে সাথে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়। বর্ণকে আপাতত কিছু দিন হাসপাতালেই থাকতে হবে। আরহাও নিজের বাড়ির দিকে রওনা হয়।

গাড়িতে করে অক্ষরের সাথে ফেরার সময় আচমকা রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। অক্ষর ও মধুজা বেশ বিপাকে পড়ে যায়। অক্ষর কিছু একটা ভেবে বলে,
‘চলো রিক্সায় করে যাই।’

মধুজা আর আপত্তি করে না৷ রিক্সায় উঠে পড়ে অক্ষরের সাথে। রিক্সায় দুজনে একে অপরের হাত ধরে বসেছিল৷ সে এক অন্যরকম সুন্দর অনুভূতি।

আচমকা মধুজার মোবাইলে একটি ফোনকল আসে৷ রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে মধুজার বাবা মিলন হাসানের সেক্রেটারি বলে ওঠে,
‘তাড়াতাড়ি সিটি হসপিটালে চলে আসুন। আপনার বাবার অবস্থা ভালো না। ওনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here