প্রণয় পর্ব -০৬

#প্রণয়
#পর্বঃ৬
#তানিশা সুলতানা

তানহার হাত ধরে ক্লাস রুমে নিয়ে যায় সূচক। এখনো স্যার ক্লাসে আসে নি। পুরো ক্লাসের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে সূচকের দিকে। নিসন্দেহে সূচক একজন সুদর্শন পুরুষ। আগে কখনো তানহার সাথে ওকে দেখে নি কেউ। তানহার দারুণ লাগছে। সবাই নিশ্চয় ভাবছে তানহা সূচকের গার্লফ্রেন্ড।

একদম ফাস্ট ব্রেঞ্চে তানহাকে বসিয়ে দেয় সূচক।

“ক্লাস শেষে ডিরেক্ট বাসায় যাবি। একদম এদিক সেদিক যাবি না। ফুসকা খেতে ইচ্ছে করলেও খাবি না। আমি বিকেলে ফুসকা খাওয়াতে নিয়ে আসবো।

তানহার ব্যাগ থেকে বই খালা বের করে দিতে দিতে বলে সূচক।
তানহা হা করে তাকিয়ে আছে। চোখ সরছেই না।

” নুসু তানহার সাথে যাবে তুমি ঠিক আছে?
বাঁদরামি করলে আমাকে জানাবে। কেমন?

নুসরাতের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে সূচক। নুসরাত দ্বিতীয় ব্রেঞ্চে বসেছে। নুসরাত খুশিতে গদগদ হয়ে ওঠে। ইসসস সূচক কথা বলেছে ওর সাথে? তাও হেসে হেসে?
ও মা গো নুসরাতের নামটাও জানে?
এবার নুসরাত পাগল হয়ে যাবেই।

“ঠিক আছে।

মাথা নিচু করে লাজুক হেসে বলে নুসরাত। সূচক ভ্রু কুচকে তাকায়।এর আবার কি হলো?

” গুড গার্ল

বলেই চলে যায় সূচক। নুসরাত বুকের বা পাশে হাত দেয়। তানহা ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে। এতো ঢং করে কথা বলার কি হলো? তানহা তো একদম নুসরাতের সাথে যাবে না।

মুখ বাঁকিয়ে বইয়ের দিকে তাকায় তানহা।

স্কুলে তানহার বেস্টফ্রেন্ড হলো জিসান। এই একজন যার সাথে তানহার মনের মিল আছে। ক্লাস করতে একদম বোরিং লাগে তানহার। জিসানেরও সেম। চুরি করে খেতে দারুণ লাগে তানহার জিসানেরও সেম। জিসান টেন এ পড়ে।

সূচক তানহাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে গেছে। ক্লাসে স্যার ঢুকে গেছে। এখন কোনো মতে তানহাকে বের হতে দেবে না। এ আবার যেন তেন স্যার না টাকলু স্যার। সব কথা ইংরেজিতে বলবে।
ক্লাসে ঢুকে শুরু করবে ইংলিশ শেষ হতেও ইংলিশ ঝাড়তে ঝাড়তে চলে যাবে।
এখন স্টুডেন্টরা কিছু বুঝুক আর না বুঝুক।

জিসান মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত নারিয়েই যাচ্ছে। তানহা সেটা দেখেও না দেখার ভান করছে। ওই দিকে তাকালে যদি স্যার দেখে ফেলে তখনই দাঁড় করিয়ে ইংলিশ ঝাড়বে।
পুরো ক্লাসের সামনে অপমানিত হওয়ার একটুও ইচ্ছে নেই তানহার।

অবশেষে ক্লাস শেষ হয়। স্যার বের হতেই তানহা ব্যাগটা নিয়ে দৌড় দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তখনই নুসরাত তানহার ব্যাগ টেনে ধরে।

“এই নুসুর বাচ্চা ছাড় আমার ব্যাগ।

দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাগ টানতে টানতে বলে তানহা

” কিছুতেই ছাড়বো না। সূচক আমাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছে।

লাজুক হেসে বলে নুসরাত। তানহা ফোঁস করে শ্বাস টানে। এর থেকে যে সহজে নিস্তার পাওয়া যাবে না ভালোই জানা আছে।

“আমি তো ভাইয়ার কাছেই যাচ্ছি। তোকে নিয়ে যেতে বলেছে ভাইয়া।

এক গাল হেসে বলে তানহা। নুসরাতের চোখ দুটো চকচক করে ওঠে।

” কি বলছিস? আমাকে নিয়ে যেতে বলেছে?

অবাক হয়ে বলে নুসরাত।

“হ্যাঁ বললো তো। কি জানি বলবে তোকে।

তানহার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ব্যাগ ছেড়ে দেয় নুসরাত। সাথে নিজের বই চটজলদি ব্যাগে ঢুকিয়ে তানহার হাত ধরে দৌড় দেয়।
স্কুলের পেছনের দিকে জিসান ছিলো। গণিত টিচারকে দেখে এক দৌড়ে এই দিকে চলে এসেছে। ওই স্যার আবার আটও জল্লাদ। পালাতে দেখলেই মাঠের মাঝখানে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখবে।

এক সাথে দুজন বেরিয়ে যায় স্কুল থেকে। ঠিক ইমনের বাড়ির সামনে এস থামে তিনজন। কোমরে হাত দিয়ে দুজনই হাঁপাচ্ছে।
স্কুলের পেছনের দিকে ইমনের বাড়ি।

“আল্লাহ বাঁচাইছে

বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস টেনে বলে তানহা।
নুসরাত এদিকে সেদিক তাকাচ্ছে আর চুল ঠিক করছে।

” এই এখানে কেন?

জিসান তানহার কানে ফিসফিস করে বলে।

“বড্ড জ্বালাচ্ছিলো। ডপ দিয়ে নিয়ে এসেছি।

” এই তানহা উনি কোথায়?

ব্যাগ থেকে লিপস্টিক আর আয়না বের করতে করতে বলে নুসরাত।

“উনিটা আবার কে?

তানহা ভ্রু কুচকে বলে।

” উনি
সূচক ভাইয়া।

মাথা নিচু করে মিষ্টি করে হেসে বলে নুসরাত। মাথাটা গরম হয়ে যায় তানহা। কটমট চোখে তাকায় জিসানের দিকে। জিসান হাত দিয়েই তানহার মাথায় বাতাস করতে থাকে।

“কুল কুল
এতো হাইপার হওয়ার মতো কিছু হয় নি।

জিসান আস্তে আস্তে বলে। তানহা জিসানের পায়ের ওপর ধুপ করে নিজের পা রাখে। ব্যাথায় কুঁকিয়ে ওঠে জিসান।

” তোর উনি ওই আমড়া গাছটার পেছনে লুকিয়ে আছে তোর সাথে লুকোচুরি খেলার জন্য।

জিসান একটু হাসার চেষ্টা করে বলে।

তানহা মুখ ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকায়। দেখে সূচক আর ইমন কথা বলতে বলতে আসছে। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায় তানহা। এবার এখানে তানহাকে দেখতে পেলে আস্ত চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।
কোথায় পালাবে এখন?

এদিকে কেনো আসতে গেলো? জানাই তো আছে এখানে ইমনের বাড়ি।

তানহা শুকনো ঢোক গিলে জিসানের হাত ধরে এক দৌড় দেয় স্কুলের দিকে। নুসরাত হা করে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

সূচকের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারন করে। জিসানের হাতের মধ্যে তানহার হাতটা চোখের সামনে ভাসতেই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
দাঁড়িয়ে যায় সূচক।

“তোর আবার কি হলো? যাবি না?

ইমন বলে।

” বাড়ি যাচ্ছি আমি। পরে যাবো।

বলেই বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করে। নুসরাত সূচকে দেখে খুশি হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলো হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয় সূচক। সূচকের লাল লাল চোখ আর শক্ত চোয়াল দেখে কথা বলার সাহস হয় না নুসরাতের।

🥀🥀

তোহা খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তানহা আর তোহা দুজনকে ভাগে একটা ফোন কিনে দেওয়া হয়েছে। তানহা খুব একটা ফোনটা ধরে না। তোহা ধরতে দেয় না।
তোহা ভেবে নিয়েছে এবার থেকে ফোনটা তানহাকে দিয়ে দেবে। লাগবে না ওর ফোন।

ইরা জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি নীল আকাশের দিকে। কাঠফাঁটা রোদ উঠেছে আজ। পুরো আকাশটা নীল বর্ণ ধারন করেছে। ওই দুরে একটুখানি পাহাড়ের মতো সাদা আপ দেখা যাচ্ছে।

দেখতে মন্দ লাগছে না।

তোহা করার পাশে এসে দাঁড়ায়।

“আপু তুমি কি কাউকে পছন্দ করো?

তোহা কাচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করে। ইমনের থেকে ধোঁকা খাওয়ার পরে এই মনখারাপের কারণটা মুখস্থ হয়ে গেছে ওর।

ইরা তাচ্ছিল্য হাসে।

” পছন্দ করি না রে। অসম্ভব ভালোবাসতাম।

বলতে বলতে আবারও চোখের কোনে পানি চলে আসে ইরার। তোহার চোখ দুটোও ছলছল করে ওঠে।
একটা মেয়ে একটা ছেলেকে ঠিক কতোটা ভালোবাসলে তার গল্প অন্য কাউকে বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে?

“সে কি তোমায় ভালোবাসে না?

ধরে আসা গলায় জিজ্ঞেস করে তোহা।

এবার উওর দেয় না ইরা। চোখ দুটো বন্ধ করে ফ্লোরে বসে পড়ে। আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হয় না তোহার।
ইরাকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে নিজেও করার পাশে বসে বসে।

🥀

” আমি তানহাকে বিয়ে করতে চাই।

বাবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে সূচক। তমাল চোখ বড়বড় করে তাকায়। সাদিয়া বেগম বিছানা ঠিক করছিলো সূচকের কথা শুনে থমকে যায়।

“সাদিয়া একে এখান থেকে চলে যেতে বলো।

চোখ বন্ধ করে বলেন উনি।

“অবশ্যই চলে যাবো। এখানে থাকতে আসি নি। আমি আমার সিদ্ধান্ত জানাতে এসেছি।

হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে সূচক।

” তুমি যোগ্য না তানহার। তোমার সাথে ওর বিয়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

খাটের ওপর আরাম করে বসে বলেন উনি।

“আমি অনুমতি চায় নি। আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি।

হাতের কাছে থাকা টেবিলের বই গুলো ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে সূচক।

” এই ছেলে গলা নামিয়ে কথা বলো।

রেগে যায় তমাল। ধমক দিয়ে বলে।

“বাবু যা এখান থেকে।

সাদিয়া বেগম ছেলেকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে।

” যাবো না

মায়ের হাত ধরে মাকে এক পাশে দাঁড় করে বলে সূচক।

“অনুমতি দিয়ে দাও। নাহলে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।

বাবার চোখে চোখ রেখে বলে সূচক। সাথে সাথে কষে একটা থাপ্পড় মেরে দেয় সূচকের গালে। সাদিয়া বেগম আতঙ্কে ওঠে। সূচককে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে গালে হাত দিয়ে বাবার দিকে তাকায় সূচক।

“তোমার বেয়াদব ছেলেকে নিয়ে আমার চোখের সামনে থেকে বের হয়ে যাও তুমি।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে তমাল।

” বাড়ি আছে বলে খুব দাপট দেখাও। কথায় কথায় বের হয়ে যাও।।
মা তৈরি হয়ে নাও। আমরা এখুনি এখান থেকে চলে যাবো।

সূচক মাকে ছাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়।
তানহা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। বড় বাবা সূচকের গালে থাপ্পড় দিছে এটা শুনেছে তানহা। আগের টুকু শোনে নি। বড় মায়ের কাছে এসেছিলো গল্প করতে। ভেতরে চেঁচামেচি শুনে আর ঢোকে নি।

দুই চোখে পানি ভর্তি।
সূচক দরজা ঠেলে বের হতেই তানহার মুখোমুখি হয়।

“আপনার খুব লেগেছে ভাইয়া?

দুই পা উঁচু করে সূচকের গালে হাত দিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে তানহা।

সূচক তানহাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে হনহনিয়ে চলে যায়। দেয়ালের সাথে বারি খায় তানহা। ব্যাথায় কুঁকিয়ে ওঠে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here