#প্রণয়
#পর্বঃ৮
#তানিশা সুলতানা
তানহা খাটের এক কোনায় বসে রাগে ফুসফুস করছে। কিছুতেই রাগ কমছে না। রাগটা নিজের ওপর। এতো অন স্মার্ট কেনো ও? একটুও কি স্মার্ট হতে পারতো না? সূচকের সাথে ওকে একটুও মানাবে না।
কেউ যে দরজা আটকে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।
“এখানে কেনো এসেছিস?
চোয়াল শক্ত করে ধমক দিয়ে বলে সূচক। চমকে ওঠে তানহা। এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বুকটা ধুপ বুক করছে। মাথা নিচু করে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায় তানহা।
সূচক খাটের ডান পাশে থাকা টেবিলে ল্যাপটপ রেখে তানহার সামনে এসে দাঁড়ায়।
” কেনো এসেছিস?
সূচক বুক হাত গুঁজে গম্ভীর গলায় বলে।
তানহা জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
“বববড়মাকে দেখতে এসেছি।
আমতা আমতা করে বলে তানহা। সূচক চোখ পাকিয়ে তাকায়।
” তাই বলে পেতনি সেজে?
কপালে ভাজ ফেলে বলে সূচক। তানহা চট করে সূচকের দিকে তাকায়। সাজলে ওকে পেতনি লাগে?
“ভালো লাগছে না?
টলমল চোখে সূচকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে তানহা।
” না লাগছে না।
সূচক তানহার চোখের দিকে তাকিয়েই বলে। মনটা ভেঙে যায়। এতো আশা নিয়ে সাজা টাই মাটি। টুপ করে দুই গাল বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। চোখ নামিয়ে নেয়।
সূচক দুই হাতে তানহার চোখের পানি যত্ন করে মুছিয়ে দেয়। তানহা চোখ তুলে তাকায় না।
“সাজার সময় আছে। সব সময় লাগতে হয় না। আমার সাথে ঘুরতে যাওয়ার সময় যতখুশি সাজবি। তখন সুন্দর লাগবে। অন্য সময় সাজলে একদম যা তা লাগে।
সূচক তানহার চুল গুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলে।
তানহা ফুঁপিয়ে যাচ্ছে।
সূচকের ইচ্ছে করছে বুকের ভেতর জাপ্টে ধরে কান্না করতে বারন করতে। কিন্তু পারছে না। দুর্বল হওয়া চলবে না। কঠোর হতে হবে।
“আপনাকে সব সময় মেয়েদের সাথে কেনো দেখি? ওদের থেকো দুরে থাকতে পারেন না? বোঝোন না আপনাকে অন্য কারো সাথে দেখলে আমার ভেতরটা পুরে যায়?
তানহা মনে মনে বলে।মুখে বলার সাহস পাচ্ছে না। সূচক কি চোখের ভাসা পড়তে পারে না? চোখ দুটো দেখে কি বোঝে না?
” যা এবার এখান থেকে।
সূচক তানহার থেকে একটু দুরে দাঁড়িয়ে বলে। তানহা নাক টেনে চোখ মুছে এক পলক তাকায় সূচকের দিকে।
“একটু থাকি না।
বিরবির করে বলে তানহা। সূচক তানহার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। আবারও কান্না পাচ্ছে। এভাবে বের করে দেবে?
একটু থাকলে কি হতো?
ভালো করে চোখ মুছে অন্য রুমে চলে যায়। সেখানে গিয়ে গোছল সেরে সাদা টিশার্ট আর গোলাপি স্কার্ট পড়ে নেয়। তোহাকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। নিশ্চয় বৃষ্টিকে নিয়ে বেরিয়েছে।
চুল গুলো কোনো রকমে মুছে মুখে স্নো মেখে কিচেনে চলে যায়।
সাদিয়া বেগম একা একা রান্না করছে। রান্না প্রায় শেষের দিকে।
তানহাকে দেখেই এক গাল হাসে।
” তানহা যা তো এই কফিটা বাবুকে দিয়ে আয়।
তানহা মনে মনে খুশি হয়। যাক এই কফির ছুঁতোয় একটু কাছাকাছি থাকা যাবে।
চট করে মগটা হাতে নিয়ে সূচকের রুমের দিকে দৌড় দেয়।
“আস্তে যা পড়ে যাবি
পেছন থেকে সাদিয়া বেগম চেঁচিয়ে বলে। কে শোনে কার কথা?
একদম সূচকের রুমের সামনে এসে থামে। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নেয়। ওড়না ঠিকঠাক করতে গিয়ে দেখে ওড়নাটাই নেই। নিশ্চয় রুমেই রয়ে গেছে। নিজের মাথায় গাট্টা মেরে ওই রুম থেকে ওড়না এনে মাথায় পেঁচিয়ে আবারও চলে আসে সূচকের রুমের সামনে।
দরজা ভেরানোই ছিলো। তাই অল্প একটু ধাক্কা দিতেই খুলে যায়।
সূচক খাটের ওপর গোল হয়ে বসে বই পড়ছে গভীর মনোযোগ দিয়ে।
তানহা ধীর পায়ে সূচকের দিকে তাকাতে তাকাতে আসছে। নীল টিশার্টে দারুণ লাগছে। চুল গুলো চোখের ওপর এসে পড়েছে। নাকের পাশে একটা ব্রণ উঠেছে। একদম লাল হয়ে আছে জায়গাটা।
ইচ্ছে করছে টুপ করে একটা চুমু খেতে। ইসসসসস কি লজ্জা
মুচকি হাসতে হাসতে এগিয়ে যায় তানহা।
হঠাৎ করে পায়ের সাথে কিছু বেঁধে ধার করে উষ্ঠা খায় তানহা। কফিটা ছিঁটকে গিয়ে পড়ে সূচকের ওপর। আর তানহা ফ্লোরে পড়ে যায়। কোমরে বেশ ব্যাথা পায়। ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
সূচক বড়বড় চোখ করে তাকায়। এটা কি হলো? এ আবার কখন রুমে আসলো?
কফিটা একদম কোলের ওপর এসে পরেছে। ঠান্ডা হয়ে গেছে বলে বেঁচে গেছে।
তানহা দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ায়। সূচকের ওপর কফি পড়েছে দেখে আতঙ্কে ওঠে।
” সরি সরি আমি একদম খেয়াল করি নি। ব্যাথা করছে? জ্বলে যাচ্ছে?
তানহা উত্তেজিত হয়ে সূচকের সামনে বসে প্যান্ট আর টিশার্ট থেকে কফি ঝাড়তে ঝাড়তে বলে।
সূচকের চোখ দুটো আরও বড়বড় হয়ে যায়। কোনো কথা না বলে এক লাফে উঠে রুম থেকে চলে যায়। তানহা হতদম্ভ হয়ে যায়। এভাবে চলে গেলো কেনো?
খুব কি রেগে গেছে? এখন কি চলে যেতে বলবে?
একটু পরেই তানহার মনে পড়ছে ও কি করেছে?
লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেলে। চোখ দুটো খিঁচে ফেলে। ছি ছি ছি কি করলো?
এরপর সূচকের সামনে যাবে কি করে?
ভাগ্যিস থাপ্পড় মারে নি।
তোহা আর বৃষ্টি ছাঁদে এসেছে। এই বাড়ির ছাঁদটা খুব সুন্দর। আজকে রোদ নেই। আকাশ মেঘলা মেঘলা। এই ভর দুপুরেও মনে হচ্ছে পড়ন্ত বিকেল।
বৃষ্টি ছাঁদের রেলিং এর ওপর বসে। তোহা রেলিং এ পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়।
“ওয়েদারটা দারুণ।
তোহা বলে। বৃষ্টি আলতো হাসে।
” তোহা তোর ভাইয়ের কি অবস্থা?
“তুমি তো দেখলেই জিজ্ঞেস করো নি?
” আমার সাথে সেভাবে কথা বলে না। তোমরা আসার একটু আগে আমার সামনে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো আর আমাকে ওর পেইন্টিং দেখাচ্ছিলো। আর তোমরা আসতেই উঠে গেলো।
মন খারাপ করে বলে বৃষ্টি। তোহা বুঝতে পারছে না ভাই এমনটা কেনো করলো?
“আচ্ছা বাদ দাও।
এরই মধ্যে ইমন এসে গেছে। একদন তোহার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। তোহা এক গাল হাসে। বৃষ্টি ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে।
” ভাইয়া ভালো আছেন?
তোহা এক গাল হেসে বলে। ইমন চমকে ওঠে। এতোটা স্বাভাবিক কি করে মেয়েটা?
“চিনিস তুই ওনাকে?
বৃষ্টি জিজ্ঞেস করে।
” ও মা চিনবো না? উনি তো ভাইয়ের বন্ধু।
ইমন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে
এখন ঠিক কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছে না। হ্মমা চাইবে কি করে?
চলবে