#প্রণয়
#পর্বঃ২৪
#তানিশা সুলতানা
তোহার অবুঝ মনটা ইমনকে নিয়ে ভাবছে। ইমন কি সত্যি বলছে? আবার কি ফিরে যাবে?
মন তো যেতে চাইছে। এখন কি করা উচিৎ?
মনের সাথে বেশ কিছুখন যুদ্ধ করে অবশেষে পাসওয়ার্ড দিয়ে ইমনের আইডিতে ঢুকেই পড়ে।
সত্যিই ইরা ছাড়া ফ্রেন্ড লিস্টে কেউ নেই। হয়ত কনভারসেশন ডিলিট করে দিছে।
তোহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সেই দীর্ঘ শ্বাসের সাথে ঠোঁটের কোনে একটু হাসির রেখা ফুটে ওঠে। এতোদিন অশান্ত ছিলো মনটা। খুব অশান্ত ছিলো।
দমে দমে কান্না পেতো। বুকের বা পাশটা ফাঁকা ফাঁকা লাগতো ভীষণ ভাবে।
এসবের মধ্যে আবারও ফোনটা বেজে ওঠে। স্কিনে ইমন নামটা জ্বলজ্বল করছে।
তোহা ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে কলটা রিসিভ করে নেয়।
“কি পেয়েছো কিছু?
ইমন জিজ্ঞেস করে।
” কি পাবো না পাবো সেসব ভেবে লগইন করি নি। আমি এখন আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই। আপনি শুনলে পারলে বা মানতে পারলে সম্পর্কটা ঠিক করে নেবো আমি।
নয়ত নয়।
শক্ত গলায় বলে তোহা।
“শুনি?
” আমাকে ভালোবাসতে হবে ইমন। আমাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সে আমি যেমনই হই। আপনার কথা বলতে ইচ্ছে হলে আমার সাথে বলবেন। আপনার ঘুরতে ইচ্ছে হলে আমাকে সাথে নিয়ে যাবেন। আপনার ইচ্ছে পূরণ করা আমার দায়িত্ব। আমার ছোট ছোট চাওয়া গুলোকে প্রধান্য দিতে হবে।
আমার কেয়ার গুলো মানতে হবে।
পারবেন?
সাথে সাথে ইমন খট করে ফোন কেটে দেয়। চমকে ওঠে তোহা। এভাবে কেনো কেটে দিলো? বলতে পারতো পারবো না?
ঠোঁট দুটো কাঁপতে থাকে। বুকের বা পাশের চিনচিনে ব্যথাটা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
শুয়ে থাকা সম্ভব নয় তাই উঠে বসে। দুই হাতে চুল খামচে ধরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়।
জানটা বে*রিয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।
চিৎকার করে কান্না করতে পারলে হয়ত মনটা শান্ত হতো। একটু শান্তি পেতো।
দুই হাতে মুখ আটকে ধরে কান্না করতে থাকে তোহা।
হ্যাঁ এটাকেই ভালোবাসা বলে।
🥀🥀
সূচক তানহাকে কোথায় নিয়ে এসেছে তানহা বুঝতে পারছে না। বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইকে উঠলো তারপর চোখের পলকেই বাইক কোথাও এসে দাঁড়ালো। সূচক তানহাকে নামতে বললো। তানহা নেমে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে জায়গাটা কোথায়?
ড্রেসটাও চেঞ্জ করতে দেয় নি সূচক। প্লাজু আর টিশার্ট পড়েছিলো তাই পড়ে চলে এসেছে।
ওড়নাটা ভালো করে মাথায় পেঁচিয়ে নেয় তানহা।
“তানহা চল।
সূচক তানহার হাত ধরে একটা এক তালা বাড়িতে ঢোকে। দরজায় হাত দেয়ার সাথে সাথে দরজা খুলে যায়।
” হ্যাপি বার্থডে ভাবি।
বাড়ির ভেতরে এক পা রাখতেই এতো এতো পার্টি স্পে এসে পড়ে সূচক আর তানহার মাথায়। দুজনই হাত দিয়ে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু পারছে না।
কয়েক মিনিট পরে পুরো বোতল শেষ করে থামে সবাই। সূচক তানহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
তানহা মাথা থেকে ফ্যানা ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
“Manny Manny Happy To you তানহা।
ইমন এক গাল হেসে বলে। তানহাও একটু হাসে। সবাই মিলে এতোবড় সারপ্রাইজ দেবে ভাবতেও পারে নি।
সূচক ইশারা দিতেই দুজন একটা টেবিলের ওপর কেক এনে রাখে। চকলেট কেক তানহার দারুণ পছন্দ।
” কেকটা কাট
সূচক ছুড়িটা তানহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে। সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যায়। হাত তালি দিতে দিতে বলতে থাকে
“Happy Birthday To U
তানহার কি যে ভালো লাগছে বোঝাতে পারছে না। দশ বারোটা ছেলে। সবার মুখে হাসি।
সূচক তানহার হাত ধরে কেকের সামনে নিয়ে যায়। ইমন মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়। তানহা আর সূচক দুজন এক সাথে ফু দিয়ে নিভিয়ে দেয়। তারপর দুজন মিলেই কেক কাটে।
তানহা সূচক কে খাইয়ে দেয় তারপর একে একে সবাইকে খাইয়ে দেয়।
ইমন তানহাকে খাইয়ে দেয়।
” এখন তোরা যা। ধন্যবাদ তোদের।
সূচক মুচকি হেসে বলে।
“তানহা তেল আমাদেরও বোন।ধন্যবাদ দেওয়া কিছু নেই।
একটা ছেলে বলে। তারপর তানহার থেকে বিদায় নিয়ে একে একে চলে যায়। তানহা এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।
আজকে ওর বার্থডে ছিলো? মনেই ছিলো না।
” আমি তাহলে এই রুমে যাই। প্রচন্ড টায়ার্ড লাগছে। এতোটা জার্নি আগে কখনো করি নি।
ইমন আড়মোড়া ভেঙে বলে।
“আচ্ছা
ইমন মুচকি হেসে চলে যায়। সূচকও রুমে চলে যায়। তানহা কিছুখন দুই রুমে দিকে তাকিয়ে থাকে। ইমন এখানে কেনো আসলো? এই বাড়িটা কার? এসবই ভাবছিলো।
” কি করে রুমে আসবি না?
সূচক গলা উঁচু করে বলে।
তানহা গুটিগুটি পায়ে রুমের দরজার সামনে যায়। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় তানহার। শুকনো ঢোক গিলে।
রুমে রুমটা গাঁধা গোলাপ বেলি আর রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধে ম ম করছে।
চারপাশে হাজারো মোমবাতি জ্বলছে। দরজা খেতে খাট ওবদি গোলাপ ফুলের পাপড়ি বিছানো।
খাটের মাঝখানে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে “সূচকের তানহা” লেখা।
“এখানেই দাঁড়িয়ে থাক। আমি কোলে করে আনবো তোকে।
তানহা রুমের মধ্যে এক পা ফেলতে গেলেই সূচক বলে ওঠে। থেমে যায় তানহা। বুকটা ধক করে ওঠে। একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরে ওকে। মাথাটা নিচু হয়ে যায়।
এটাই প্রথম হবে সূচকের কোলে ওঠা। ইসসস কতোদিনের ইচ্ছে তানহার।
মাঝেমধ্যে তো ইচ্ছে করেই সূচকের সামনে পড়ে যেতো যাতে কোলে তুলে নেয়। কিন্তু কখনো নেয় নি।
আজকেই সেই দিনটা এসেছে।
আচ্ছা সূচক কোলে নিলে কেমন অনুভূতি হবে? যদি ফেলে দেয়? অবশ্যই ফেলবে না? সূচকের নিশ্চয় খুব কষ্ট হবে? ৪০ কেজি ওজনের একটা মানুষকে কি করে কোলে নেবে?
তানহা তো তাজ যখন ছোট ছিলো তখনই ওজনের জন্য কোলে নিতে পারতো না।
তানহা এসব ভাবনার মাঝে নিজেকে শূন্যে অনুভব করে। চোখ মুখ খিঁচে সূচকের বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে।
” প্লিজ তাড়াতাড়ি নামাবেন না। আমি অনেকখন থাকতে চাই এভাবে।
লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সূচকের বুকের সাথে নিজের মাথাটা ঠেসে বলে তানহা।
“তুই চাইলে তো সারাজীবন ই এভাবে রাখবো তোকে।
সূচক গম্ভীর গলায় বলে। তানহা বিরক্ত হয়। এই সময় টা হলো কথার জালে ফালানোর সময়।
রোমান্টিক কথা বলার সময়। এখন হনুমানের মতো কর্কশ গলায় কথা বললে চলবে?
সূচক নিজেও নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। মানে এভাবেই কথা বের হতে হবে? চেয়েছিলো তো নরম গলায় মধুর সুরে বলতে। কিন্তু হলো না তো।
তানহা অনুভব করছে ভীষণ ভাবে।
বুকের কাছে দুটো বোতাম খোলা হওয়াতে বুকের লোম গুলো তানহাকে ভীষণ জ্বালাচ্ছে। তবুও ভালো লাগছে তানহার।
সময়টা এখানেই থামিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। মনের মধ্যে উঁকি দেওয়া অদ্ভুত ইচ্ছে গুলো সূচকের গলা জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে।
একটুখানি নিলজ্জ হতে ইচ্ছে করছে।
সূচক তানহাকে কোলে করে পুরো রুমটা দুইবার চক্কর দেয়। তারপর বিছানায় কোলে নিয়েই বসে পড়ে।
” আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি সূচক ভাইয়া। খুব ভালোবাসি।
মনে মনে বলে তানহা। মুখে বলতে পারে না।
“তানহা তোর থেকে কিছু চাইলে দিবি আমায়?
সূচক তানহাকে পাশে বসিয়ে দিয়ে বলে। তানহা চোখ খুলে তাকায় সূচকের দিকে।
চলবে
বানান ভুল হলে একটু মানিয়ে নেবেন প্লিজ। ১৭ তারিখে এক্সাম আমার। খুব তারাহুরো করে লিখছি।